প্রবন্ধ
-
প্রবন্ধ- মায়ের আঁচল
অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার
প্রবন্ধ- মায়ের আঁচল
-সুমিতা দাশগুপ্তবাংলায় একটা কথা আছে “বন্যেরা বনে সুন্দর , শিশুরা মাতৃক্রোড়ে” । কোনও সন্দেহ নেই জগতের সমস্ত শিশুদের জন্যই এই কথাটি ধ্রুব সত্য। মানবশিশুর জন্য আরও একটি পরম ভরসাস্থল ধ্রুবতারার মতো চিরসত্য হয়ে বিরাজ করে , সেটি হলো মায়ের আঁচল।
এই জগতে মায়ের আঁচলের তুল্য আর আছেটা কী? ছেলেবেলায় স্নানের পর ভেজা চুল , খেলার মাঠ ফেরত ঘামে ভেজা মুখ,
অঙ্কের খাতায় কম নম্বর পাওয়ার চোখের জল , বাড়িতে আসা অচেনা অতিথির সামনে থেকে আড়াল খোঁজা , এইসব কিছুর জন্য , মায়ের আঁচলই তো চিরকাল শিশুদের একমাত্র ভরসাস্থল।
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও তাঁর “ছেলেবেলা”র
স্মৃতিচারণায় লিখেছিলেন সন্ধ্যাবেলায় গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে লম্বা অন্ধকার বারান্দা দিয়ে ”ভূতের ভয় শিরদাঁড়ার উপর চাপিয়ে চলে যেতুম মায়ের ঘরে”…., সেই মায়ের আঁচলের ভরসায়।
কালের নিয়মে বয়স বাড়ে। শিশু থেকে বালক, বালক থেকে কিশোর , তরুণ ,যুবক — ক্রমশ সে স্বাবলম্বী মানুষ , পা বাড়ায় মুক্ত জীবনের পথে। তখন তার আর ঠিক সেইভাবে মায়ের আঁচলের দরকার পড়ে না , আঁচলের আওতা ছেড়ে বহির্বিশ্বে পা রাখার জন্য সে উদগ্রীব।
” রইবো না আর বদ্ধঘরে দেখবো এবার জগতটাকে , কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে” —প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পক্ষে সেটাই তো স্বাভাবিক। মা-ও, সন্তানকে এগিয়ে দেন জীবনের যাত্রাপথে।
মায়ের আঁচলের ছায়া , কিছুটা নেপথ্যে রেখে তখন সে জীবন পথের পথিক।
পথ হাঁটতে হাঁটতে ক্রমে বেলা বাড়ে । অপরাহ্ণের আলো এসে পড়ে গায়ে মাথায়।জীবনের অতিবাহিত কাল ক্রমশ পিছে সরে সরে যায়। সংসারের নিত্য দিনের টানাপোড়েনে মায়ের ছায়া আবার মাঝে মাঝে মানসপটে উঁকি দিয়ে যায়, হয়তো বা সেদিন সে রৌদ্রদগ্ধ মানুষের মতোই ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত , কখনও বা অকূল পাথারে দিশাহারা । মনখারাপের দিনে যেদিন সে নিজের সঙ্গে নিজে একেবারে একা ,খুব ইচ্ছে যায় মায়ের আঁচলের তলায় স্নিগ্ধ শীতল পাটির স্নিগ্ধ আশ্রয়টুকু আরও একবার ফিরে পেতে। মধ্যরাতের একা বিনিদ্র শয্যায় , নিভৃতে গড়িয়ে পড়া অশ্রুবিন্দু মুছতে মায়ের অদৃশ্য আঁচলখানিই যে তখন একমাত্র সম্বল। পৃথিবীর সমস্ত আলো নির্বাপিত হলেও, মায়ের স্নেহপরশটুকু আঁধার ঘরের প্রদীপ হয়ে জ্বলতে থাকে , জ্বলতেই থাকে অনির্বাণ শিখায়। -
প্রবন্ধ- মূল্যবোধের অবক্ষয়
।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।
মূল্যবোধের অবক্ষয়
-শিলাবৃষ্টিআজকে বড়ই লজ্জার বিষয় এটাই যে — বর্তমান যুবসমাজের নৈতিক মূল্যবোধহীনতা!যে মানুষের মধ্যে আছে অনন্ত সম্ভাবনা,যা দিয়ে মানুষ পারে একটা স্বর্গ রচনা করতে– সেই মানুষই মনুষ্যত্বহীনতায়,মানহীনতায় ,হুঁসহীন হয়ে করছে একের পর এক জঘন্য অপরাধ।
পশুর সাথে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের আজ পার্থক্য কোথায়? লোভ তাদের গ্রাস করছে। মানুষ হয়ে উঠছে ক্রমশঃ স্বার্থপর। ভাবতে আজ অবাক লাগে — আমরা নাকি সেই বরেণ্য মহাপৃুরুষদের উত্তরসূরী! এই সেদিন যাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন –আমরা তাঁদেরই ঘরের ছেলেমেয়ে ! অথচ আমাদের দেশের একটি শিশুও আজ নিশ্চিত জীবন কাটাতে পারেনা — তাকেও পাশবিক বল প্রয়োগ করা হয়! সে হয় ধর্ষিতা।
ছোটরা শিখছে কথায় কথায় মিথ্যে বলতে,ভালো লাগা জিনিসটা চুরি করতে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে নানান কু কীর্তি করে বেড়াচ্ছে।
পণপ্রথা আইন করেও বন্ধ করতে পারেনি সরকার। বধূ হত্যা ,বধূ নির্যাতন সমাজে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।বিবাহ বিচ্ছেদ আজ তো কোন ব্যাপারই নয়! সম্পত্তি নিয়ে গৃহ বিবাদ, বাপ- ছেলের কলহ,খুনোখুনি লেগেই আছে। শিক্ষককে আজ সামান্য সম্মানটুকু দিতেও ছাত্রদের কৃপণতা। মানুষকে ঠকানোতেই মানুষের চরম আনন্দ লাভ।
আজ এই সবের কারণ খুঁজতে গিয়ে মনে হয়েছে — যুবসমাজের উপর এখন পড়েছে উগ্র আধুনিকতার প্রভাব, একান্নবর্তী পরিবারের অভাব, সুবিধাবাদী নীতির ছড়াছড়ি, আদর্শের অভাব,পাঁচমেশালি সংস্কৃতির প্রভাবে বেপরোয়া মনোভাব। আর এসব কিছু একদিনে হয়নি – একদিকে এগিয়েছে সভ্যতা আর অন্যদিকে অবনমন ঘটেছে মূল্যবোধের।
মনে হয় সর্বাগ্রে চাই মানুষের মনে ন্যায় বোধের জাগরণ, তাহলে মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটবে। মহাপুরুষদের জীবনীপাঠ এবং তাঁদের জীবন পথের অনুসরণ করা।ধ্বংসের পথে না এগিয়ে কিছু সৃষ্টির মনোভাব রাখা।কর্মমুখী চেতনা যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে না দিতে পারলে ভয়ানক এক দিনের মুখোমুখি আমাদের হতে হবে হয়তো।বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতিশিক্ষার বা আদর্শচর্চার ক্লাস অবশ্যই রাখা উচিত। প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে আজ শৈশব বিপন্ন। প্রতিযোগিতা আর প্রতিযোগিতা! তাই ছেলেবেলা থেকেই ছেলেমেয়েরা বড় নিঃসঙ্গ ,বড় একা ।
এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে ভয়াবহ এক সময়ের সামনে আসতে হবে। তাই চাই বিশ্বাস । মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস। কারণ মানুষের মধ্যেই আছে প্রকৃত সম্ভাবনা। মানুষের চারিত্রিক সম্পদের অনুসন্ধান মানুষকেই করতে হবে ।। -
প্রবন্ধ- খাদ্যরসিক বাঙালি
।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা ।।
খাদ্যরসিক বাঙালি
-সুমিতা দাশগুপ্তবাঙালি যে চিরকালের খাদ্যরসিক, সেকথা কে না জানে ! এই অবিসংবাদিত সত্যটি এক লহমায় জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায় সুরসিক সাহিত্যিক শ্রী সুকুমার রায়ের লেখা বিখ্যাত “খাই খাই” কবিতায়। বাঙালিকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন –“যতো কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে ,
জড়ো করে আনি সব ,থাকো সেই আশাতে” ।
এককথায় এইটিই হলো আমবাঙালির মনের কথা।
কথায় বলে রসে বশে বাঙালি। তাতে আর সন্দেহ কী! হাস্যরস আর খাদ্যরস উভয় ক্ষেত্রেই যে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার আমাদের কাব্য সাহিত্য ,গান চিরকাল তার সাক্ষ্য দিয়ে এসেছে।
প্রাণধারণের জন্য প্রাণীমাত্রেরই খাদ্যের প্রয়োজন , মানুষও ব্যতিক্রম নয় ,যেটা ব্যতিক্রমী সেটা হলো একদল খায় বেঁচে থাকার জন্য আর অপরদল খাওয়ার জন্যই বাঁচে। বাঙালিকে এই দ্বিতীয় শ্রেণীতেই মানায় ভাল। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথই তো বলে গিয়েছেন–বাসনার সেরা বাসা রসনায় “
প্রাচীনকাল থেকে বাঙালির খাদ্যাভ্যাসের মূল কাঠামোটি অপরিবর্তিত থাকলেও, তার খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েই চলেছে নিত্যনতুন রেসিপি।
বাংলাভাষায় রান্নাঘরের অপর নাম রসবতী কারণ এইখানেই বাঙালি,স্বাদের তিক্ত ,কটু ,কষায় , লবণ,অম্ল , এবং মধুর এই ষড়রস অবলম্বনে রসনা পরিতৃপ্তির, নিত্যনতুন ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’মেতে থাকে । তবে
যতোই আধুনিক হোক না কেন , বাঙালির আজও ভাত ছাড়া চলে না।ভেতো বাঙালি তকমাটি সে সানন্দেই বয়ে বেড়ায়, নইলে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ানো ,মুর্গমুসল্লম্, কাবাবে অভ্যস্ত শ্রী সৈয়দ মুজতবা আলী খোলাখুলি ঘোষণা করবেন কেন , একবার জাহাজে ভ্রমণকালে ‘চারটি আতপ চাল ,উচ্ছেভাজা, সোনামুগডাল , পটলভাজা আর মাছের ঝোলের’ জন্য তাঁর প্রাণ কেঁদেছিলো!
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক শ্রী নীহাররঞ্জন রায় বলেছেন ”ইতিহাসের ঊষাকাল হইতেই ধান যে দেশের প্রধান উৎপন্ন বস্তু, সে দেশে প্রধান খাদ্য হইবে ভাত ইহাতে আশ্চর্য কিছু নাই’।
দ্বাদশ শতকের কবি শ্রীহর্ষের নৈষধ চরিত গ্রন্থে ভাতের একটি অনবদ্য বর্ণনা মেলে।
‘পরিবেশিত অন্ন হইতে ধূম উঠিতেছে, তাহার প্রতিটি কণা অভগ্ন,একটি হইতে আর একটি বিচ্ছিন্ন ,সে অন্ন সুসিদ্ধ, সুস্বাদু শুভ্রবর্ণ ,সরু ও সৌরভময় ‘।
এমন চমৎকার অন্নসুবাসের আখ্যান, বাংলা ছাড়া অন্যত্র কোথাও সম্ভব কিনা জানা নেই ।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী তাঁর স্মৃতিচারণায় লিখেছেন,
সে যুগে কৃষি গবেষণাগার ছিলো না ,সম্পন্ন চাষীরা নিজেদের চেষ্টায় মাটি বদলে বদলে , নতুন ধরনের সার ও গন্ধদ্রব্য দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ধান চাষে ব্রতী হতেন। বংশানুক্রমে, সেই সব ধান চাষ করিয়ে ধান বীজ রক্ষা করা হতো ।তাঁর পিতামহের সৃষ্টি, সজনেফুলি ,বাসরভোগ , রাঁধুনিপাগল, নামের চালগুলি আজও সেই সাক্ষ্য বহন করে।
‘ধন্য ধন্য বলি তাঁরে’।
প্রাচীনকালে সম্পন্ন গৃহস্থের ভাতের থালায় নাকি চৌষট্টি পদ পরিবেশিত হতো।শেষ পাতে দই । এযুগেও বাঙালির পাতে পঞ্চব্যঞ্জনের সমাহার। অভিজাত সবজির পাশাপাশি খাদ্যগুণসমৃদ্ধ থোড় ,মোচা ,ডুমুরও পিছিয়ে নেই। রন্ধনপটিয়সীর হাতের গুণ ও মশলায় এগুলির স্বাদও যে অনন্যসাধারণ , বাঙালি মাত্রেই তা জানে। জানিয়ে রাখা ভালো এইসব রান্নায় ফোড়ন এবং মশলার আনুপাতিক হারটি পাটিগণিতের তেলচিটে বাঁশ আর অক্লান্ত বানরের , অঙ্কের চাইতে কিছু কম জটিল নয়!
কথায় বলে মাছে ভাতে বাঙালি।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের খালবিল যেন সোনালী, রুপালি আঁশে ভরা মছলি কাঁথার মাঠ, ফলে বাঙালি যে ‘ চিরকাল মৎস্য মারিবে খাইবে সুখে’ তা-তো স্বতঃসিদ্ধ।
বৈদিক যুগের মুণিঋষিদের ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে বঙ্গবাসী মাছকে বেশ করে তেলে মশলায় , কষিয়ে ঝালে, ঝোলে অম্বলে রসনার তৃপ্তি সাধন করে এসেছে, এমনকি কণ্টকের কল্পনাতে ম্রিয়মান না হয়ে,নির্দ্বিধায় মাছের মাথা এবং কাঁটাচচ্চড়িটুকুও সাপটে খেয়ে নিয়েছে।
প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে নাকি সরষের তেলের প্রচলন ছিল না , পর্তুগীজদের হাত ধরে সর্বপ্রথমে বাঙালিই তৈলবীজ থেকে ঝাঁঝালো সরষের তেল নিষ্কাশনের ব্যাপারটা চালু করেছিলো। ভাগ্যিস্ ! নইলে আমরা তেল কই ,ইলিশপাতুরি ,চিতলমাছের- মুইঠ্যার স্বাদ পেতাম কী করে! আর আলু ভাতে মাখতে কাঁচালঙ্কার সঙ্গে এক ফোঁটা সরষের তেল !!
মাংসেও বাঙালির অরুচি নেই। প্রাচীন গ্রন্থে শূল্যপক্ক মাংসের উল্লেখ তো মেলেই ,আধুনিক যুগে মোগলাইখানার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাও তার প্রমাণ। চপ কাটলেট, বিরিয়ানি- চাপ, ছাড়া আজ বাঙালির ভোজই অসম্পূর্ণ।
চা-স্পৃহ চঞ্চল, বাঙালির স্ট্রিটফুডে আসক্তির তুলনাও মেলা ভার। ফুচকা , সিঙারা, আলুরচপ, ঝালমুড়িই তার প্রমাণ।
বাঙালি সর্বদা
মধুরেণ সমাপয়েৎ-এ বিশ্বাসী।বাংলার পোশাকি মিষ্টির জগৎজোড়া সুনামের পাশাপাশি, ঘরোয়া নলেন গুড়ের পায়েস পিঠে, ,নাড়ু,মোয়া ,মুড়কিও কম আদরণীয় নয়!
এক কথায় পুরো বঙ্গসংস্কৃতিতেই জুড়ে রয়েছে সুখাদ্যের আঘ্রাণ।
এইখানে উল্লেখ করা ভালো , কোলোষ্টরেলের তোয়াক্কা না করা, শ্রমবিমুখ বাঙালির শরীর স্বাস্থ্য ,তাকে প্রায়ই বিপদে ফেলে।
এই রসগোল্লার আবিষ্কারক হিসেবে বাঙালি যতোই কৃতিত্বের দাবিদার হোক না কেন ,বহির্বাংলায় চিরকালই সে ‘বাঙালিবাবু’ নামে টিটকিরির পাত্র। তবে সুখের বিষয় আধুনিক বাঙালি এখন অনেক বেশী স্বাস্থ্যসচেতন , সুষমখাদ্য ও শরীরচর্চায় মনোযোগী।
বাঙালির সংগীত, শিল্প , সাহিত্য , ছেলেভুলানো ছড়া, ব্রতকথা– এককথায় সম্পূর্ণ জীবনচর্যায় নানাভাবে খাবারের প্রসঙ্গ,প্রমাণ করে দেয় বাঙালির খাদ্যরসিক তকমাটি কতোটা উপযুক্ত।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর মানসীর উদ্দেশ্যে
লিখেছিলেন ,
‘একালে চলে না সোনার প্রদীপ আনা
সোনার বীণাও নহে আয়ত্তগত ,
বেতের ডালায় রেশমি রুমাল টানা
অরুণবরণ আম এনো গোটাকত।’
এতেই পরিষ্কার, কবি মাত্রেই বায়ুভূক নয়। তাঁরাও দিব্যি রসে বশে জীবন কাটিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসতেন। তাঁদের বাড়িতে বিদ্বদজনসভায় প্রচুর সুখাদ্য পরিবেশিত হতো যদিও কবি স্বয়ং ভোজনরসিক হলেও ভোজনবিলাসী ছিলেন না।
সুকুমার রায়ের মন্ডাক্লাবেরও এই বিষয়ে যথেষ্ট সুনাম ছিল। অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিই এই সভার নিয়মিত সভ্য ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলামও কম যেতেন না। জেলবন্দী থাকাকালীন নিয়মিত মোগলাইখানা রেঁধে নিজে তো খেতেনই, সঙ্গে রাজবন্দীদেরও খাওয়াতেন। শিবরাম চক্রবর্তী যখন স্বদেশী আন্দোলনের জেরে জেলে গেলেন, নজরুল ইসলাম যারপরনাই খুশি হয়ে, তাঁকে খাইয়ে দাইয়ে, এমন একখানা মোগলাই চেহারা বানিয়ে দিলেন যে , সারা জীবনেও সেই চেহারা একটুও টসকায়নি।
সাম্প্রতিকতম উদাহরণ
জুনিয়র উইম্বলডন চাম্পিয়ান, আমেরিকাবাসী বঙ্গসন্তান সমীর ব্যানার্জি ।একটি সাক্ষাৎকারে,নিজেকে বাংলার বিরিয়ানি আর চাটের ভক্ত বলেই দাবি করেছেন । আরও অজস্র উদাহরণ পেশ করাই যায়, তবে মনে হয় তামাম বঙ্গসন্তানের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বাদটি বোধহয় দিনশেষে, শৈশবের নৈশাহারে, ঘুম জড়ানো চোখে মায়ের হাতের রূপকথার গন্ধমাখা গরাসখানাতেই মেলে। -
প্রবন্ধ- হিংসা
হিংসা
-শচীদুলাল পালষড়রিপুর মধ্যে মাৎসর্য এক রিপু। মাৎসর্য বিষে জর্জরিত হয়ে আসে পরশ্রীকাতরতা। পরশ্রীকাতরতা থেকে জন্ম নেয় ঈর্ষা। আর ঈর্ষা থেকে জন্ম নেয় হিংসা।
মানুষ সব সময় নিজেকে প্রথম স্থানে দেখতে চায়। এটা তার চাহিদা। কিন্তু যখন মানুষ এই স্থানে অন্য কাউকে দেখে তখন তার মনে একটা জেদ আসে। যতক্ষণ সে সেই জেদটা চেপে রাখতে পারে ততক্ষণ সেটা জেদ। আর যখন প্রকাশ পেয়ে যায় তখনই সেটা হিংসাতে পরিণত হয়।
লোভ থেকেও হিংসার জন্ম হয়। মানুষ অন্যকে একটা কিছু পেতে দেখে নিজেও সেটা পেতে চায়। অন্যের উন্নতি সে দেখতে পারে না।
সে বদলা নেবার প্রচেষ্টা করে। প্রথমে কারণে অকারণে তাকে অপমান করে নিচু দেখিয়ে মনের ঝাল, মনের জ্বলন মেটায়।
যে ব্যক্তি অপমানিত হয় সে যদি ভাবে। আমাকে কেন অপমান করলো! তাতে সে দেখবে সে আমার স্থানে কোনোদিন আসতে পারবে না। তাই তার মধ্যে হিংসার বহিঃপ্রকাশ।কিন্তু যখন সে সেইটা পায় না তখন যেই ব্যক্তি ওই জিনিষটা পেলো তাকে সে হিংসা করা শুরু করে।
মানবচরিত্রে যেসব খারাপ দিক আছে, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ মারাত্মক ক্ষতিকারক। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, ঈর্ষাকাতরতা, কলহ-বিবাদ প্রভৃতি মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনকে অত্যন্ত বিষময় করে তোলে। এতে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে অন্যের সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ বিনষ্ট বা ধ্বংস করে নিজে এর মালিক হওয়ার কামনা-বাসনাকে হিংসা বলা হয়।
হিংসা করলে যার প্রতি করা হয় তার কোনো ক্ষতি সাধারণত হয় না কিন্তু হিংসুক ব্যক্তি তার সমস্ত ধ্যানজ্ঞান এর পেছনে ব্যয় করে যে নিজেরই ক্ষতি সাধন করছে তা বোঝার
মত জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে।সুযোগ খোঁজে কি করে অন্যের অনিষ্ট করবে। তার ঈর্ষানল প্রজ্বলিত হয়। রাগে অন্ধ হয়। হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। সে আঘাত করে বসে। পরিণাম সংঘর্ষ হানাহানি লড়াই। যুদ্ধ হত্যা পর্যন্ত সংঘটিত হয়।
একটা দেশ একটা জাতি একটা গোষ্ঠী অন্য দেশ অন্য গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
বিশ্ব ইতিহাস আজ কলুষিত এই হিংসার কারণে।
ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার কুৎসা রটিয়ে নিজের জলন দূর করে হিংসার আর একটি বহিঃপ্রকাশ হলো ঠাট্টা বিদ্রুপ করা।প্রকৃত আদর্শবান ব্যাক্তি, মহান ব্যক্তি হিংসা দ্বেষ জলনকে উপেক্ষা করে।
একটা দেশ জাতি গঠনে হিংসাহীন মানসিকতা কাম্য।ঘরে ঘরে পাড়ায় প্রতিবেশীদের মধ্যেই দেখা যায় ভাইয়ে ভাইয়ে, জায়ে জায়ে প্রতিবেশীদের মধ্যেই হিংসা বেশি প্রকটিত হয়। কারোও ছেলেমেয়ে পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি করে উন্নতি করলে ভীষণ ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের হিংসা বেশি হয়।
ফলস্বরূপ জ্বলে পুড়ে মরে। এই যে জ্বলন সেখান থেকে হরমোনের ক্ষরণ হয়। ফলত এড্রিন্যাল গ্ল্যাড থেকে ক্ষরণ হয়। তাতেই ইন্ডাইজেশন, আলসার, ডায়াবেটিস, কিডনি লিভারের মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হয়।
হিংস্র প্রাণীরা বেশিদিন বাঁচে না। পরন্তু কচ্ছপ, শান্ত নম্র ধীর অহিংসক প্রাণী প্রায় তিনশ বছর বাঁচে।
ডাইনোসরাস হিংস্র প্রাণী লড়াই করে অন্যকে হত্যা করে নিজেদেরই ধ্বংস করেছিল।নারী সহীংসতা
———————-
সহিংসতাঃ সহিংসতা বলতে আমরা বুঝি অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন, অতিরিক্ত শাসন, যৌন হয়রানি বিবিধ। জন্মের পর থেকেই একটি শিশু বিভিন্ন ভাবে সহিংসতার শিকার হয়।নারীর প্রতি সহিংসতা বা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে সহিংস অপরাধগুলো যেগুলো প্রধাণত বা কেবলই নারী বা বালিকাদের উপরেই করা হয়। এরকম সহিংসতাকে প্রায়ই ঘৃণাপূর্বক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়,
যা নারী বা বালিকাদের উপর করা হয় কেননা তারা নারী। নারীর প্রতি সহিংসতার খুব লম্বা ইতিহাস রয়েছে, যদিও এরকম সহিংসতার মাত্রা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছিল, এমনকি আজও বিভিন্ন সমাজে এগুলোর মাত্রা ও ঘটনার ধরণ বিভিন্ন হয়। এরকম সহিংসতাকে প্রায়ই নারীকে সমাজে বা আন্তঃব্যক্তি সম্পর্কে অধীনস্থ করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি তার অধিকারপ্রাপ্তির বোধ, উচ্চস্থানের বোধ, নারীবিদ্বেষ, বা নিজের সহিংস প্রকৃতির জন্য নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করতে পারেন।নারী ও বালিকাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি পৃথিবীব্যাপী বিরাজমান সমস্যা। সমগ্র বিশ্বজুড়ে তিন জন নারীর অন্তত একজনকে মারা হয়েছে, জোরপূর্বক যৌনক্রিয়া করতে বাধ্য করা হয়েছে, বা অন্য কোনোভাবে তার জীবনে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে যেখানে নির্যাতনকারী কোনভাবে তার পরিচিত ছিল।
নারীর প্রতি সহিংসতাকে কয়েকটি বৃহৎ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলোর মধ্যে “ব্যক্তির” দ্বারা সহিংসতা ও “রাষ্ট্রের” দ্বারা সহিংসতা উভয়ই রয়েছে। সহিংসতার কোন কোন ধরন আছে যা ব্যক্তির দ্বারা ঘটে যথা – ধর্ষণ, গৃহ নির্যাতন, যৌনহয়রানি, প্রজননগত জোর-জবরদস্তি, কন্যাশিশুহত্যা, লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত, উচ্ছৃঙ্খলা জনতার দ্বারা সহিংসতা বা দাঙ্গা, রীতি বা আচারগত চর্চা যেমন সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বা অনর কিলিং, যৌতুক সহিংসতা বা পণ মৃত্যু, অপহরণপূর্বক বিবাহ বা জোরপূর্বক বিবাহ। আবার কিছু কিছু ধরনের সহিংসতার কর্তা হচ্ছে রাষ্ট্র, যেমন – যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা, সংঘর্ষের সময় যৌন সহিংসতা এবং যৌন দাসত্ব, বাধ্যতামূলক নির্বীজন, জোরপূর্বক গর্ভপাত, পুলিশ ও কর্তৃত্বকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর দ্বারা সহিংসতা, পাথর ছুড়ে হত্যা বা চাবুক মারা। আবার অনেক ধরনের যৌন সহিংসতা সংঘটিত সংগঠিত অপরাধ চক্রের দ্বারা, যেমন – নারী পাচার এবং জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি।
নারীর জন্ম থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সকল পর্যায়ে নারীর প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ধরন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে নতুন ধারা তৈরি হয়েছে যেখানে বিভিন্ন সম্মেলন বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন,বিভিন্ন ডিরেক্টিভ এর সাহায্যে আন্তর্জাতিক মাত্রায় এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চাচ্ছে, যেমন যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ডিরেক্টিভ, মানব পাচারের বিরুদ্ধে ডিরেক্টিভ।
উল্লেখ্য, এখানে ডিরেক্টিভ বলতে কোন আন্তর্জাতিক সংঘের একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি করা লক্ষ্যমাত্রাকে বোঝানো হয় যেখানে সংঘটির সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে সেই লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে কাজ করতে হয়, কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণের উপায় সেখানে বলে দেয়া থাকে না। -
প্রবন্ধ- অলসতার সপক্ষে
অলসতার সপক্ষে
-সুনির্মল বসুচলতি প্রবাদ আছে, অলস মস্তিষ্ক নাকি শয়তানের বাসা। কিন্তু মডার্ন টাইমস ছবিতে চার্লি চ্যাপলিন ক্রমাগত একটানা কাজ করলে, মানুষ কেমন যন্ত্র মানুষ হয়ে যায়, তাকে তির্যক হাসির মাধ্যমে উপস্থাপিত করেছেন। দই পাততে হতে হয় একটু আড়ালে গিয়ে। এই আড়াল টুকুকে মেনে নিতে পারলে, কখনো কখনো মহৎ সৃষ্টি সম্ভব। উন্নত মানের সৃষ্টির জন্য এই নির্ভৃত সাধনা জরুরী। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগুলি অলসতার স্বভাবে সৃষ্টি হয়েছে। বাইরে থেকে যাকে অলসতা মনে করা হয়েছিল, ভেতরের সৃষ্টিশীল মন তাকে বুদ্ধির নব নব উন্মেষ শালিনী প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নানা উপহারে পৃথিবীকে ভরিয়ে দিয়েছে।
হান্না নিউটনের ছেলে আইজ্যাক নিউটন নিরীহ ছাত্র হিসেবে প্রতিদিন সহপাঠীদের কাছে মার খেতেন। অলস ছাত্র হিসেবে তাঁর দুর্নাম ছিল। একদিন সহপাঠীদের পাল্টা মার দিয়ে তাঁর আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। অলস মানসিকতা তাঁকে উদ্ভট চিন্তা এনে দেয়। গাছ থেকে আপেলটা নিচে পড়ল কেন,
উপরে উঠে যায় নি কেন, এই সূত্র ধরে তিনি আবিষ্কার করেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। ততদিনে তিনি কেপলারের সূত্র এবং গ্যালিলিওর গতিসূত্র ও চলমান বস্তুর বল বিদ্যা শিখে নিয়েছিলেন।
টেলিফোনের আবিষ্কারক বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল জাতিতে ছিলেন স্কট। ছোটবেলায় ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি কানাডায় চলে যান।
ভগ্ন শরীরে তিনি বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
টেলিফোনে তাঁর প্রথম সংলাপ, মিস্টার ওয়াটসন, কাম হেয়ার প্লিজ, আই ওয়ান্ট ইউ।
টেলিফোন, গ্রামোফোন, চলচ্চিত্র, রেডিও, টেলিগ্রাফি, বৈদ্যুতিক আলো, সবখানেই অবদান রেখে গিয়েছেন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। অথচ, স্কুলে সবাই তাকে মাথামোটা ছেলে বলতো।
অর্থ ও সুনামে পৃথিবী বিখ্যাত হলে, তিনি একদিন নিজের ড্রয়ার খুলে দ্যাখেন, ছোটবেলায় স্কুলের প্রিন্সিপালের লেখা তাঁর মায়ের কাছে পাঠানো চিঠি। যেখানে তাঁকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, মাথামোটা ছাত্র হিসেবে। চিঠির নিচে এডিসন লিখলেন, একটি ব্যর্থ ছেলে টমাস আলভা এডিসনকে খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে গিয়েছেন, প্রেরণা দাত্রী জননী। তারপর নিজের নাম স্বাক্ষর করলেন।
অলস এবং মাথামোটা ছাত্র টমাস আলভা এডিসন পরবর্তীকালে আমেরিকার নৌবাহিনীর প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন।
বিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রই জানেন গ্যালভানোমিটার এবং ভোল্টমিটারের নাম। বিজ্ঞানী লুইজি গ্যালভানি এবং বিজ্ঞানী ভোল্টা দুজনেই ইতালির মানুষ। রঙ ঝরাই করাকে আমরা বলি গ্যালভানাইজ করা। প্রথম জীবনে রাজনীতির জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন গ্যালভানি। অলস ভাবে জীবন কাটছিল তাঁর। বিজ্ঞানমনস্ক মাথা সতত সক্রিয় ছিল গ্যালভানির । তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার গুলি পরবর্তীকালে মাইকেল ফ্যারাডের আবিষ্কারের পথ সুগম করে দেয়।জার্মানির দানিয়ুব নদীর তীরে উলম শহরে আইনস্টাইনের জন্ম। ছাত্র হিসেবে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমাগত ব্যর্থতা ছিল তাঁর। মহাকর্ষ, সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে একে একে বহু গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছিলেন তিনি। আইনস্টাইনের গবেষণার উপর থিসিস লিখেছিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। একদা অলসতার কারনে প্রাণিবিদ্যা এবং উদ্ভিদবিদ্যায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, সেই মহাবিজ্ঞানী স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯২২ সালে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
এবার অলসতার সপক্ষে সাহিত্যকারদের কথায় আসি। রাশিয়ান লেখক মিখাইল শলোকভ পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। ধীরে বহে ডন, উপন্যাস লিখে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। অলস মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। না লিখে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ফ্রান্সের লেখিকা গ্রাৎসিয়া
দেলেদদা। ইনি অসামান্যা সুন্দরী ছিলেন। দিদিমার বাড়ির পুকুরে স্নান করতে গিয়ে তাঁর পা ভেঙে যায়।
লোকলজ্জার ভয়ে তিনি বাইরে বেরোতেন না ।বাড়িতে বসে দিদিমার ছাপাখানায় উপন্যাস ছাপিয়ে ফেলেন। সেই উপন্যাসটি তাঁকে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়। তিনি কোনোদিন লেখক হতে চাননি। একবার আলজেরিয়াতে প্লেগ রোগ দেখা দিলে, শরীর খারাপ নিয়ে আলবেয়ার কামু চিকিৎসকের কাছে যান, চিকিৎসক তাঁকে জানান, তাঁর পরমায়ু অল্পদিনের। তিনি দ্য প্লেগ উপন্যাস লিখে নোবেল পুরস্কার পান,পরে গাড়ি দূর্ঘটনায় মারা যান।
প্রথম জীবনে মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। একসময় রিং এর মধ্যে প্রবল মার খাবার পর, তিনি মুষ্টিযুদ্ধ ছেড়ে দেন। অলস ভাবে সময় কাটাতে কাটাতে জীবনের প্রবল ব্যর্থতার কথা স্মরণ করে তিনি উপন্যাস লেখা শুরু করেন এবং নোবেল পুরস্কার পান ও লেখক হিসেবে বিশ্ব খ্যাতি অর্জন করেন।গন্ডগোল না হলে, জার্মানির লেখক পল হেইস লিখতেই পারতেন না, প্রবল আনন্দপ্রিয় অলস এই লেখক এভাবেই পৃথিবী কাঁপানো উপন্যাস লিখেছিলেন। রীতিমতো পার্টি দিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে তিনি লিখতেন।
ম্যান এন্ড সুপারম্যান এবং আর্মস এন্ড দ্য ম্যান, লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন ইংরেজি লেখক জর্জ বার্নার্ড শ। তিন মাসে তিনি উপন্যাস শেষ করতেন। পিচবোর্ডের কাগজে লিখে তিনি উপন্যাস শেষ করতেন। তাঁর সহকারী পাতা সাজাতেন। লেখা শেষ হলে, আড্ডাবাজ এবং অলসতা প্রিয় বার্নার্ড শ বাড়ির সামনের যেকোনো ট্রামে উঠে পড়তেন, এবং শেষ পর্যন্ত যেতেন। তারপর আবার বাড়ি ফিরে আসতেন।ফ্রান্সের গ্রামের ছেলে ছিলেন বালজাক। শহরে এসে ধনী সুন্দরী মহিলাদের সম্পর্কে আসেন। তাঁরা লেখকের দারিদ্র নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিলেন। এই সময় উপন্যাস লিখে বালজাক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখকে পরিণত হন।
অলস এবং আড্ডাবাজ ছিলেন রবার্ট ব্রাউনিং। বার বার প্রেমে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। জার্মানিতে এসে দেখা হল, প্রেমিকা এলিজাবেথ বারেট ব্রাউনিং এর সঙ্গে। কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেন কবি রবার্ট ব্রাউনিং।
যুদ্ধে গিয়ে পা খোড়া হয়ে গিয়েছিল কবি জর্জ গরডন লর্ড বায়রনের। ঘরে বসে তিনি চাইল্ড হ্যারল্ড কাব্য লেখেন। এবং বিশ্ব বিখ্যাত কবি হিসেবে স্বীকৃত হন।
সিক্স ক্যারেক্টারস ইন সার্চ অফ অন অথর, লিখে বিখ্যাত হন ইটালির লেখক লুইজি পিরানদেললো।তিনি উঁচু মাচায় বসে লিখতেন, সেখানেই ঘুমাতেন।
এই অলসতার সময়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্য রচিত হয়েছিল। কোনোদিনই লেখক হবার কথা ছিল না স্যার ওয়াল্টার স্কট এর। তিনি অলস ভাবে সময় কাটাতেন। প্রতিবেশী একজন বিশাল প্রাসাদ বানিয়ে অহংকার দেখান, তখন স্যার ওয়াল্টার স্কট দ্য রবিন হুড ,উপন্যাস লিখে লেখক এবং ধনী মানুষ হিসেবে বিখ্যাত হন। আড্ডাবাজ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন লেখক এইচ জি ওয়েলস। ট্রেনে ভ্রমণ করতে করতে তিনি উপন্যাস লিখে যেতেন।রাশিয়ান লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি মা উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। একসময় জীবনে চরম ব্যর্থতা এসেছিল বলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে নাম নেন, আলেক্সি ম্যাক্সিমোভিস পেসকভ। এই নামের অর্থ হলো, জীবন সম্পর্কে তিক্ত। পরে তিনি পৃথিবী বিখ্যাত হন। পরবর্তীকালে স্ট্যালিনের প্রধান বন্ধু হয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ছিন্নপত্র লিখেছিলেন, পদ্মা নদীতে বোটে চড়ে যাবার পথে অলস মুহূর্তে। এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পত্রসাহিত্য।
বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বহুবার চাকরি ছেড়েছেন, অথবা তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংবাদপত্র অফিসে কাজে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। সবরমতী, কাল তুমি আলেয়া, উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়েছিলেন। কবি সমর সেন ছাত্র হিসেবেও কৃতী ছিলেন। কিন্তু কোনো জায়গাতে বেশিদিন চাকরি করতে পারেননি। চড়া ব্যক্তিত্ব, স্বতন্ত্র ভাবনা, সৃষ্টিশীল অলস মানসিক চলন থাকার ফলে তিনি লিখেছেন কম।শ দেড়েক কবিতা কিন্তু তাঁকে বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত করে রেখেছে। বোম্বে প্রবাসী কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের প্রাক্তন ছাত্র লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় অলস অবকাশে একদিকে যেমন ব্যোমকেশ সমগ্র লিখেছেন, তেমনি অত্যন্ত সফল ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছেন, তুঙ্গ ভদ্রার তীরে।
সাংবাদিকতার অবকাশে লেখক নিমাই ভট্টাচার্য লিখেছেন মেম সাহেব এর মতো সারা জাগানো উপন্যাস। কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনের ছাত্র
প্রেমেন্দ্র মিত্র এক দুপুরে বেনারসের বাড়িতে বসে জীবনের প্রথম ছোট গল্প লিখেছিলেন, তেলেনাপোতা আবিষ্কার। প্রখ্যাত লেখক নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় এমএ পরীক্ষার পর দিনাজপুরের বাড়িতে বসে এক অনার্স মুহুর্তে জীবনের প্রথম গল্প লিখেছিলেন, বর আসিতেছে।গরীব চাষির ছেলে ছিলেন শিল্পী অগাস্তা রোদা। তিনি রাজা ভিক্টর ইমানুয়েলের কাছে প্রদর্শনী করবার জন্য সাহায্য চেয়ে ছিলেন। পাননি। পরবর্তীকালে রাজা তাঁর তৈরি ভাস্কর্য মূর্তি দেখে মোহিত হন। একটি মুহূর্তে ঢাকা ছিল। রাজা দেখতে গেলে, শিল্পী তাঁকে নামিয়ে দেন। বলেন, ওখানে একটা নাইটেঙ্গেল পাখি ডিম পেড়েছে। আমার শিল্পের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। রাজা শিল্পীর এই জীবন দর্শন শুনে আপ্লুত হন। সারা জীবন অলস ভাবনা থেকেই অগস্ত্য রোদা অসম্ভব সুন্দর ভাস্কর্য মূর্তি রচনা করে গেছেন।
চোখে দেখতেন না শিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। নন্দলাল বসুর কাছে আঁকা শিখতে গেলে, রবীন্দ্রনাথ তাঁকে উদয়নের বাড়ির সিলিং এ
ছবি আঁকতে বলেন, সেই ছবির সূত্রে তিনি নন্দলাল বসুর কাছে অংকন শিক্ষার সুযোগ পান। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায় তাঁকে নিয়ে তথ্য চিত্র তৈরি করেছেন। ইনার আই। শিল্পী নন্দলাল বসু, যামিনী রায়, রামকিঙ্কর বেইজ অলস মুহূর্তে বহু পৃথিবী কাঁপানো ছবি এঁকেছেন, মূর্তি গড়েছেন। বাইরে থেকে এইসব কাজের নেপথ্য লোক দেখা যায় না হয়তো, তবু সৃষ্টিশীল মন কোন্ এক বিশেষ মুহূর্তে সৃজনের পৃথিবী খুঁজে পেয়েছে।সঙ্গীত জগতে অনেক দুর্দান্ত গান লেখা ও সুর রচনা আর মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল অলস মুহূর্তে। একবার শচীন দেব বর্মন কিশোর কুমারকে বাড়ি থেকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে ফাঁকা ধানক্ষেতে ছুটতে বললেন। তিনি নিজেও তখন ছোটা শুরু করেছেন।
পরবর্তীকালে অমর প্রেম ছবি গানের সুর দিলেন, কুছ তো লোগ কহেঙ্গে, লোগো কা কাম হ্যায় কহেনা। ভি বালসারা ঘোড়ার খুরের শব্দ থেকে বহু নতুন নতুন গানের টিউন তৈরি করেছিলেন। গীতিকার গুলজার ওয়েল্ডিং মেশিনে কাজ করতেন এক সময়, পরবর্তীকালে তিনি অজস্র অসম্ভব সুন্দর গান লিখেছেন। আইপিটিএ তে যোগ দিয়েছিলেন এক সময়। পরবর্তীকালে গীতিকার শৈলেন্দ্র অলস মুহূর্তে হিন্দি ছবি গাইডের গানগুলি লিখেছিলেন। পূর্ববাংলার নদীতে সস্ত্রীক নৌপথে যাবার সময়, একটি গ্রাম্য মেয়েকে শচীন কর্তা দেখেছিলেন, মেয়েটি বিভিন্ন নৌকোর মাঝির কাছে তাঁর বাপের বাড়ির সংবাদ নিতে চাইছিল। শচীন কর্তা স্ত্রী মীরা দেব বর্মণকে এ বিষয়ে গান লিখতে অনুরোধ করেন। লেখা হয় সেই বিখ্যাত গানটি, সুজন মাঝিরে, ভাটি গাঙ বাইয়া।অলসতা সব সময় সমালোচনার লক্ষ্য হলেও, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি গুলি অলসতার মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান ই হোক, অথবা ভারতবর্ষের তাজমহল, বহু বছরের পরিশ্রম, বহু অলস সৌন্দর্য ভাবনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠশিল্প তৈরি হতে সাহায্য করেছিল।
অলসতাকে তাই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলে চলবে না, বাইরে থেকে অলসতা চোখে পড়লেও, ভিতরে ভিতরে মানুষের সৃষ্টি প্রেমী মন এই অবসরে নতুন আবিষ্কারের দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে রবীন্দ্রনাথ ভাগ্যিস জমিদারি দেখতে গিয়েছিলেন, তাই সৃষ্টির সোনার ধানে তাঁর তরী পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। অলস মনের অবসর না থাকলে, কবির সোনার কলমে এমন মহৎ সৃষ্টির রচিত হত কি।এই অলসতা টুকু না থাকলে, আমরা রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী নাটকের যন্ত্র সভ্যতা পেতাম। যেখানে মানুষের কোন নাম নেই। সাতচল্লিশের ক, ঊন চল্লিশের গ। এমন যান্ত্রিক কাজ কারবারে আর যাই হোক, মহৎ সৃষ্টি কখনোই সম্ভব নয়।
-
প্রবন্ধ- পাগলামি
পাগলামি
– শচীদুলাল পালঅল্পবিস্তর প্রতিটি মানুষই পাগল বা মানসিক রোগগ্রস্ত।
কেউ কম কেউ বেশি। পৃথিবীতে কোনো স্বাভাবিক মানুষ থাকতে পারেনা। প্রত্যেকের মধ্যে কিছু না কিছু অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করা যায়।
মন অমূর্ত। মনের কোনো অবয়ব নেই। সবচেয়ে দ্রুতগামী। এই মন যখন অত্যধিক চিন্তাগ্রস্ত হয় তখন মানুষ মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
আজ বিশ্বে মনোরোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
একদিন মহামারীর আকার ধারণ করবে।
আমাদের পুঞ্জীভূত ইচ্ছা কামনা বাসনা যখন চরিতার্থতার পথে বাধা পায় তখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। নির্জ্ঞান স্তরে জট পাকায়।এক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।
মনোরোগ সম্বন্ধে চিন্তাভাবনা প্রথম ভারতেই শুরু হয়েছিল। এর উল্লেখ আমরা পাই অথর্ববেদে।পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটেছিল আয়ূর্বেদে।
আয়ূর্বেদ মতে সত্ত্ব রজঃ তম এই তিন গুনের ভারসাম্যের অভাবের জন্যই মনো বিকলন ঘটে।
মনোবিজ্ঞানী মতে সাইক্লোজি। সাইকো অর্থাৎ আত্মা, লজি মানে বিজ্ঞান। আত্মা বিজ্ঞান।
ফ্রয়েড মতে মানুষের মন তিনটি উপাদানে তৈরি। ইদ( অদস) ইগো ও সুপার ইগো বিশষত যখন ইদ ও ইগোর মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় সমঝোতা সঙ্গতির অভাব ঘটলে মনোরোগ সৃষ্টি হয়।
মনোবিজ্ঞানের প্রবাদ পুরুষ স্যার সিগমু ফ্রয়েড যাবতীয় মনোরোগ সৃষ্টির মুলে সেক্সকেই দায়ী করেছেন ফ্রয়েডিয় সর্মকামবাদ বা প্যানসেক্সুলিজম এরই প্রতিচ্ছবি।
শরীরের ভিতর বিভিন্ন অন্তঃস্রাবি গ্রন্থি রস ( হোরমোন) ক্ষরণের বিশৃঙ্খলা ও মস্তিষ্কের ভিতর নানা ধরনের স্নায়ু প্রেরক রসের ভারসাম্যের অভাবেও মনোরোগ সৃষ্টি করে।
এছাড়া আর্থসামাজিক বিপর্যয়, র্নৈরাশ্য, অশিক্ষা, ভুল শিক্ষা, রাত জেগে পড়া, নানান সামাজিক চাপ, মানসিক চাপ, অন্তঃব্যক্তিত্ত্ব সংঘাত, যৌন বিকার, যৌন সংঘাত, যৌন সন্ত্রাস, অপসংস্কৃতি, হীনমন্যতা রেষারেষি, অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের নেশা, অতি উচ্চাকাঙখা, দিবাস্বপ্ন, অত্যধিক লোভ, লালসা, বিবাহিত জীবনে ছন্দ হীনতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বঞ্চনা, শোষণ, আকস্মিক কর্মহীনতা, বিবাহিতাদের অরগ্যাজম সুখ থেকে বঞ্চিতা ইত্যাদি মনোরোগ সৃষ্টির কারণ।
মনোরোগ দুপ্রকার। নিউরোসিস বা বায়ুরোগ,( হালকা ধরনের) সাইকোসিস বা উন্মাদ রোগ।( ভারী ধরনের)।
বিষন্নতা, হিস্টেরিয়া অত্যধিক টেনশন, শুচিবাইগ্রস্ত প্রভৃতি নিউরোসিস গ্রুপেই পড়ে।
উন্মাদ, স্কিজোফ্রেনিয়া, সাইকোটিক ডিপ্রেশন, ভ্রমবিকার, ম্যানিয়া, এপিলেপ্সি, ড্রাগ এডিকশন, জড়বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ত্বজনিত বিশৃঙখলা, যৌনবিকৃতি ইত্যাদি সাইকোসিস শ্রেণী ভুক্ত।
পাগলামি অনেক প্রকার। তার মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ —-টেনশন
————
টেনশন অল্পবিস্তর সব মানুষের মধ্যেই আসতে পারে।তবে যারা উদ্বেগপ্রবণ ব্যাক্তি তাদের মধ্যে এই টেনশন বেশি।
টেনশন অল্পস্বল্প থাকা দরকার আবার বেশি হলে মুশকিল।
যেমন সেতারের তার। টেনশান না দিলে তো স্বর আসবে না। আবার টেনশন বেশি দিলে তার ছিঁড়ে যাবে।
রাগ ঈর্ষা কাম লোভ লজ্জা ঘৃণা ভয় সেই সাথে অস্থিরতা বিরক্তি উদ্বেগ ইত্যাদির এক মিশ্র অনুভূতির নাম টেনশন।
কিন্তু টেনশন থেকে নানান উপসর্গ সৃষ্টি করে।
ছটফটে ভাব, মনঃসংযোগের অভাব, বিষন্নতা, মানুষজন এড়িয়ে চলা, অনিদ্রা, মেয়েদের ঋতুস্রাবে গন্ডগোল, ঘন ঘন তৃষ্ণা, মলত্যাগ, ঘাড়ে মাথায় যন্ত্রণা, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাঘোরা, ভার্টিগো, শ্বাসকষ্ট, যৌনবিষয়ে অনীহা, হাঁপানি, বদ হজম, পেপ্টিক আলসারএর মতো রোগ সৃষ্টি করে।
দীর্ঘকালীন টেনশনে স্বামী স্ত্রী বা প্রেমিক প্রেমিকার যৌন অনীহার সৃষ্টি হয়।প্রতিকার
————
অনিদ্রা হলে হাল্কা ডোজের ঘুমের অষুধ খাওয়া যেতে পারে। যা ঘটে গেছে তা নিয়ে বিলাপ বা অনুশোচনা করা উচিৎ নয়। হা হুতাশ করাও উচিৎ নয়।
উপনিষদ বলছে — আনন্দ থেকেই এই জগতের সৃষ্টি। আনন্দেই স্থিতি আনন্দেই লয়।
সুতরাং সর্বদা আনন্দেই থাকুন।
উদ্বেগ
———-
উৎকন্ঠা বা উদ্বেগ হলো অন্তর্মানস দ্বন্দের বহিঃপ্রকাশ । মানুষের নির্জ্ঞান মনস্তরের সঞ্চিত কামনা বাসনা ভীতি যখন অবদমনের বাধা ভেঙ্গে সজ্ঞান মনে চলে আসে তখনই মানসিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
উদ্বেগ সৃষ্টির কারন হলো বিবেকের চাপে অন্যায় বা পাপবোধ, দেহ সংক্রান্ত নানা ক্ষয়ক্ষতির আশংকা, প্রিয়জনের অমঙ্গল বা বিয়োগ আশংকা।আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা।বিষন্নতা
———-
এই রোগ সাধারণত হয় সাধারণত
প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথা, বিফলতা, অক্ষমতা, হীনমন্যতা, অপমানিত হওয়া, আশাভঙ্গ ইত্যাদি কারনে। কিছু ক্ষেত্রে এক শুন্যতা সৃষ্টি করে। যাকে ডিলিউশন বলে। রোগী মনে করে সব কিছু শুন্য।বিশ্ব ব্রহ্মান্ড শেষ হয়ে যাচ্ছে। কানের মধ্যে এক ধ্বংসের ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে।
বিষন্নতা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে।প্রতিকার – রোগীকে আনন্দময় পরিবেশে রাখা।
স্কিজোফ্রেনিয়া
————-
এই রোগ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। সাধারণত বয়ঃসন্ধির রোগ।
আমি ঈশ্বরকে দেখেছি। উনি আমার সাথে কথা বলেন। আমি এক অলৌকিক শক্তি সম্পন্ন মহাপুরুষ। বাস্তব জ্ঞান থাকেনা। অবাস্তব জগতে বিচরণ করতে থাকে।
কিছু অলীক লক্ষণ দেখা যায়। যেমন অলীক শ্রবণ। মনে হয় তার সাথে কেউ কথা বলছে। ধারে পাশে কেউ নেই তবুও সে কারো কথা শুনছে। তাকেই অডিটারি হেলুসিনেসান বলে।
কতক ক্ষেত্রে ভিসুয়াল হেলুসিনেসান হয়।অর্থাৎ সে অবাস্তব কিছু দেখতে পায়। আবার কেউ অবাস্তব কিছু ঘ্রাণ অনুভব করে।
কোনো যুক্তি দিয়েই এইসব ভ্রান্ত ধারণাকে খন্ডন করা যায়না।
স্কিজোফ্রেনিয়া রোগীদের নিদ্রাহীনতা থাকে। ভীষণ এগ্রেসিভ হয়। আক্রমাত্মক হয়। ক্ষেত্র বিশেষে হত্যা পর্যন্ত করতে পারে। রোগী আপন মনে হাসতে থাকে বা বিড় বিড় করে বলতে থাকে।এছাড়া মানুষের পাগলামির কারণ অনেক। সাধারণ থেকে বদ্ধ উন্মাদ হবার কারণ পরিবেশ।
ঠিক সময়ে ঠিকমতো চিকিৎসা না করার ফলে মানুষ বদ্ধ পাগল হয়ে যায়। তাদের পাগলা গারদেই দেওয়া উচিৎ।
কারণ অত্যধিক রাগবশতঃ আপনজনেরই ক্ষতি করে বসে।যেকোনো ধরনের পাগলামির লক্ষ্মণ দেখা দিলেই সাইক্রাটিস্ট দেখানো উচিৎ।
আবার কোনো মানুষকে সাইক্রাটিস্টের কথা বললেই সাধারণত বলে আমি পাগল নই তোমরা পাগল। তোমরা ডাক্তার দেখাও।
প্রতিকার- ঠিকমতো ঘুম। আনন্দময় পরিবেশে থাকা, আর ধ্যান ষৎচক্র ভেদ করে আজ্ঞা চক্রে ধ্যান না করে অনাহত চক্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেই যথেষ্ট। এ বিষয়ে প্রকৃত গুরুর প্রয়োজন।
রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবকে পাগল ঠাকুর বললে তিনি বলতেন তোরা পাগল। -
প্রবন্ধ- স্বপ্ন বিশ্লেষণ
স্বপ্ন বিশ্লেষণ
-শচীদুলাল পালমানুষের অবচেতন মন যখন অবচেতন মনের উপর প্রধান্য বিস্তার করে তখন মানুষ স্বপ্ন দেখে।স্বপ্ন মানে বিকল্প উপায়ে ইচ্ছাপূরণ। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতো।আমাদের মনের মধ্যে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষিত কামনা বাসনা অবচেতন স্তরে জমা থাকে সুযোগ পেলেই স্বপ্নের রূপ ধারন করে।
স্বপ্ন মোটামুটি তিনটি স্তর
১. ঘুমের প্রথম ভাগে যে স্বপ্ন দেখে তাতে নানান সমস্যার প্রতিফলন হয়।
২. ২ য় স্তরে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা।
৩. ঘুম ভাঙ্গার আগে যে স্বপ্ন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এই স্বপ্নে যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়।
মনোবিজ্ঞানী ইয়ুং এর মতে স্বপ্ন নিজ ব্যক্তিত্ত্বের প্রতিফলন।
ফ্রয়েডের মতে পুরুষ যদি কোনো নারী আর নারী যদি কোনো পুরুষকে স্বপ্নে দেখে সেটা যৌন সম্ভোগ ইচ্ছার প্রতীক হবে।
মনোবিজ্ঞানী এডলারের মতে স্বপ্নে ক্ষমতা ও ইচ্ছে-পূরণের ব্যাপারটা কে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
অবাধ যৌন সংসর্গের স্বপ্ন — অর্থাৎ কোনো নিকট আত্মীয় সাথে যৌনসুখ উপভোগ করছে মানে সে কোনো সামাজিক অপরাধ মূলক কর্মে যুক্ত হতে পারেন।
স্বপ্নের প্রতীক চিহ্ন গুলি বা দৃশ্য গুলির মধ্যে তার যাবতীয় গুনগুলি উপলব্ধি করা যায়।
একজন মানুষ একটি পরিমিত ঘুমে অনেক ভালো স্বপ্ন দেখতে পারেন কিন্তু শেষ স্বপ্ন অনেক সময় সত্যি হয়।ঘুমের চেয়ে স্বপ্নের প্রয়োজন অনেক বেশি। পরিবর্তিত মানসিক পরিস্থিতিতে মস্তিষ্ক ও অনান্য স্নায়ু যন্ত্রে জৈব রাসায়নিক নিঃসরণ ঘটে যা স্বপ্নকালে দেখতে পাওয়া যায় সেটা শরীর ও মন উভয়ের পক্ষে হীতকর।
সুতরাং দেহমনের স্বাস্থ্য রক্ষায় স্বপ্নের ভূমিকা অপরিহার্য।।
মনের ভারসাম্য রক্ষা আবিলতা দূর, অনভিপ্রেতের নিষ্কাসন ইত্যাদিতে স্বপ্নের ভূমিকা আছে উল্লেখযোগ্য ভাবেই।স্বপ্ন এক মানবিক বিকার। কিন্তু দুঃস্বপ্ন ছাড়া কোনো স্বপ্ন ক্ষতিকারক নয়।বরঞ্চ শরীর ও মনের জন্য খুবই প্রয়োজন।
ইচ্ছে করলে মানুষ স্বপ্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন । স্বপ্ন শরীর ও মনে প্রভাব বিস্তার করে।মনে স্ফূর্তি আনে।স্বপ্ন সুপ্ত শক্তিকে চেতনস্তরে আনতে সাহায্য করে।ফলে বুদ্ধিবৃত্তি ধীশক্তি ইত্যাদি বাড়ে।ভবিষ্যৎ দর্শন ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।
মনের মধ্যে জমে থাকা উদ্বেগ উৎকন্ঠা দুশ্চিন্তা ঘুমের মধ্যে অনুকুল পরিবেশে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে তখনই মানুষ স্বপ্ন দেখে।
আমাদের মনে যে সুক্ষ অবস্থা থাকে ঘুমের মধ্যে তা জেগে উঠে। স্বপ্ন সর্বসমক্ষে ভাসমান নয়।পর্দার অন্তরালে থাকে।সেজন্য স্বপ্ন কে ব্যখ্যা করা সহজ নয়।বিভিন্ন মানুষের কাছে বিভিন্ন রকম।
বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী মতে সাপের স্বপ্ন যৌনতার প্রতীক। পুরুষ যদি সুগন্ধি দ্রব্যের স্বপ্ন দেখে ব্যক্তিগত ভাবে সে কোনো ঝুট ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বে।কিন্তু একটা মেয়ে যদি সুগন্ধি দ্রব্যের স্বপ্ন দেখে তাহলে সে অচিরেই কোনো পুরুষের প্রেমে পড়বে।
স্বপ্ন বিশ্লেষণে গ্রীক দার্শনিক টলেমি থেকে শুরু করে ফ্রয়েড, ইয়ুং,এডলার কয়েকটি প্রতীক সম্বন্ধে একমত যে ত্রিকোনাকৃতি জ্যামিতিক ছক বা কোণ যৌনতার প্রতীক,স্ত্রী যৌনাঙ্গের সাথে সাদৃশ্য। আমাদের তন্ত্রশাস্ত্রে ত্রিকোণ যন্ত্রকে যৌনতা সূচক হিসাবে কল্পনা করা হয়।
সব মনোবিজ্ঞানীদের মতে স্বপ্নের গভীরে অন্তঃসলিলা চোরাস্রোত প্রবহমান। একথা অনস্বীকার্য।সাইকোএনালিষ্টদের স্বপ্ন বিশ্লেষণে কিছু প্রতীকের অন্তর্নিহিত অর্থ এইরকম।
ঘোড়া — সাদা ঘোড়া, সুখ আর অর্থ।কালো ঘোড়া — সাফল্য,
ছুটন্ত ঘোড়া — দ্রুতগামী জীবন যাত্রা।
সাপ– প্রেম, কাম, নানাপ্রকার যৌন সম্পর্ক। বংশবিস্তার।
জেব্রা – কাজে আগ্রহ
ভালুক – প্রতিযোগিতা
টিকটিকি– চারিদিকে শত্রুভাব
মাছ — বিত্তবান বন্ধ, আত্মীয় সজন।
ঈগল — অনেক বাধার পর বিজয়
বাদুড় — দুঃ খ ও বিপর্যয়।
ডিমপূর্ণ পাখির বাসা- কর্মে সাফল্য।
হাতি — প্রচুর স্থাবর সম্পত্তির মালিক।
আপেল — সুখ
চোখ — আশঙ্কা
ভূত– দুশ্চিন্তা বিবাদ অশান্তি
ষাঁড় – প্রেমে পড়ার তীব্র বাসনা
সমুদ্র — বিবাহিত জীবনে শান্তি
প্রজাপতি — প্রেম, যৌনতা, বিবাহের ইচ্ছা।
অভিনেতা অভিনেত্রী — আনন্দ যৌন সঙ্গম সম্পদ।
চিকিৎসক — সুস্বাস্থ্য প্রাচুর্য আনন্দ। -
প্রবন্ধ- অপমান প্রসঙ্গে
অপমান প্রসঙ্গে
-শচীদুলাল পালঅন্যকে অপমান করা এক মানসিক রোগ। যখন কেউ কাউকে অপমান করে কারণে অকারণে তখন বুঝতে হবে এর পিছনে কি কি বিষয় কাজ করছে।
আসলে অপমান করা বলতে কি বোঝায়?
কাউকে অপমান করার মানে হল তার সাথে অসম্মানজনক ভাবে কথা বলা বা খারাপ ব্যবহার করা।সাধারণত অপমান করার ধরণ দুই রকমের হতে পারে।সবার সামনে কাউকে মেরে অপদস্থ করা,বা মৌখিক অপমান।
মেরে অপমান করার অর্থ তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া। মৌখিক অপমান করা দু’রকম। তার অঙ্গভঙ্গি নকল করা বা তার দুর্বলতায় সরাসরি আঘাত করা।
জীবনের পথ চলায় আপনি কখনো একই সাথে সবাইকে ভালো রাখতে পারবেন না। এটাই স্বাভাবিক। কিছু মানুষ আপনাকে পছন্দ করবে এবং কিছু মানুষ আপনাকে অপছন্দ করবে।
যারা আপনাকে অপমান করছে তারা হতে পারে আপনার আপন জন প্রতিবেশী বা কলিগ।
মজা করার জন্য যদি করে থাকে তাহলে সেটা গ্রহনযোগ্য। কিন্তু কতক ক্ষেত্রে দেখা যায় আপনাকে কষ্ট দেবার জন্য করে থাকে।
জগতের প্রতিটি মানুষ কখনো না কখনো অপমানের সম্মুখীন হয়েছেন। তার হাত থেকে মহাপুরুষরাও রেহাই পায়নি।কেউ অপমান করলে কি করতে হবে জানা থাকলে এরকম সামাজিক পরিস্থিতি আপনিও ভালোভাবে সামলে নিতে পারবেন। পরিস্থিতি নির্ধারণ, সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নেওয়া ইত্যাদি আপনাকে সাহায্য করে।
মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় ঈর্ষান্বিত মানুষ যখন আপনার সঙ্গে সমতায় আসতে পারছে না, যশ মান মর্যাদায় আপনার সমকক্ষ হতে পারছে না তখন তার মানসিক বিকলন হয়। উপায়ান্তর না পেয়ে আপনাকে অপমান করে মনের ঝাল মেটায়।তার নিজস্ব ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ অন্যকে অপমান করা। অপপ্রচার করা।
আপনি কি তার অপমানের বিপরীতে তাকেও পাল্টা অপমান করবেন? নাকি মন খারাপ করে বসে থাকবেন? নাকি স্বাভাবিকভাবে সেখান থেকে চলে যাবেন এবং তাকে উপেক্ষা করবেন?
হেসে উড়িয়ে দিন। উপেক্ষা করুন। গায়ে মাখলে চলবে না। মনে করুন কেউ একটা কিছু উপহার দিল। আপনি তা গ্রহণ করলেনই না। হেসে উড়িয়ে দিলেন। সেক্ষেত্রে অপমানকারীর উদেশ্য সফল হলো না।
এভাবেই অবহেলা করলে অপমানকারী পরাজিত হবে। কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করা। নিজের মনকে শান্ত রাখতে হবে। সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। উপেক্ষা এমন ভাবে করতে হবে যেন আপনি শোনেনি তখন সে রণে ভঙ্গ দেবে।
আপনি শান্ত থেকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যাবেন।
আপনাকে তা সত্ত্বেও অপমান করে তাহলে তাকে বোঝাতে হবে এই ভাবে যে তার অপমানে আমার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, বরঞ্চ তার নিজেরই ক্ষতি হচ্ছে
মানুষ আপনার সম্বন্ধে ভুল বার্তা নিচ্ছে। তাতে আপনি নিজেকেই সমাজের কাছে ছোটো করছেন। সাময়িক হয়তো মনের ঝাল মিটাচ্ছেন পরিনামে সমাজ অপমান কারিকেই ঘৃণার চোখে দেখছে।
হাস্যকৌতুক এর জবাব হাস্যকৌতুকের দ্বারাই দিতে হবে। -
প্রবন্ধ- মানবিকতা
মানবিকতা
– শচীদুলাল পালআহার নিদ্রা আর জীবন চক্রে সীমাবদ্ধ সমগ্র প্রাণীজগৎ। কিন্তু মানুষই একমাত্র প্রাণী যার মধ্যে আছে নানান গুণ। তার মধ্যে মানবিকতা প্রধান।
মানুষ হয়ে জন্ম নিলে মনুষ্যত্ব বোধ থাকবেই। কিন্তু আজ নানান কারনে মনুষ্যত্ব বোধ ভুলুন্ঠিত।
ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা, বিবেক, মনুষ্যত্ব, মানবিক মূল্যবোধের মানসিকতাই মানবিকতা। অহিংসা পরম ধর্ম, সব ধর্মের মূলমন্ত্র। কিন্তু কালপ্রবাহে ধর্মের নামে হানাহানি খুনোখুনিতে যুগযুগ ধরে সমাজ কলুষিত। ধর্ম মানে ধারণ করতে শেখায়। মানুষকে ভালোবাসো মানুষের মধ্যেই দেবতা মানুষই ভগবান। বিবেকানন্দ বলেছেন “জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।”
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ”দেবতা নাই ঘরে তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙে করছে চাষা চাষ খাটছে বারোমাস।”
“গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে”
সনাতন হিন্দুদের কথায় যদি ধরা যায় তাহলে দেখা যায়। সত্য ত্রেতা দ্বাপর ও কলি এই চারযুগ। সত্য যুগে মানষের ছিল এক প্রকৃত আদর্শ মানবিকতা। অতিথি দেব ভবঃ। স্তন কেটে অতিথি সেবার কথা জানতে পারি।
মানুষ সৎ ছিল। বিবেক মনুষ্যত্ব মানবিক মূল্যবোধ প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বিরাজমান ছিল। ত্রেতা যুগে সত্যযুগের আদর্শ অনেকটাই ম্লান, মানসিকতার ধীরে ধীরে অবনতি হতে লাগলো।
কৈকেয়ী নিজ পুত্রকে রাজ সিংহাসন দেবার জন্য রামচন্দ্রকে বনবাসে পাঠাতে দ্বিধাবোধ করছেন না। গুরু গৌতম ঋষির পত্নী অহল্যাকে শিষ্য ইন্দ্র সম্ভোগ করছেন।
দ্বাপরে কৃষ্ণ ও শকুনি ছল চাতুরির গুরু। কৃষ্ণ ছল চাতুরী দ্বারাই যুদ্ধে জয়লাভ করিয়েছেন।
এবার আসি কলিযুগে তিন যুগে যা যা মানবিকতা বাকি ছিল সব ধীরে ধীরে লোপ পেতে পেতে প্রায় তলানিতে ঠেকেছে।
প্রাচীন কালে আর্যগণ হিন্দুজাতিকে চারটি ভাগে ভাগ করে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র।
নিয়মানুসারে ব্রাহ্মণ ছাড়া আর কারো বেদ পাঠের,বা
ওঁ শব্দ উচ্চারণ করার অধিকার নেই। কেউ যদি বেদপাঠ শ্রবণ করে ফেলে তাহলে তার কানে তপ্ত সীসা ঢেলে দাও। সমাজ সংস্কারক বিবেকানন্দ এই প্রথার বিলোপ ঘটিয়েছিলেন। বলেছিলেন এই নিয়ম কোথাও কোনো গ্রন্থে লিখিত নেই। এবং নিজে অব্রাহ্মণ হয়ে বেদ পাঠ করে বিশ্বের দরবারে হিন্দু ধর্ম প্রচার করেছেন।
সতীদাহ প্রথা রাজা রামমোহন রায় আইনবলে বিলুপ্তি করার
পূর্বে এক বাবা তার নয় বছর বয়সী কন্যাকে লালপাড় সাদা শাড়ি সিঁদুর আলতা পরিয়ে অশীতিপর বৃদ্ধ স্বামীর চিতার আগুনে ছুড়ে ফেলে সহমরণে পাঠাচ্ছেন। এ কোন মানবিকতা?
অন্তর্জলি যাত্রায় নাবালিকা সুন্দরী ব্রাহ্মণ স্ত্রী মরণাপন্ন বৃদ্ধ
সহ গঙ্গাতীরে সংসার পেতেছেন।
স্বামীর মৃত্যুর পর সহমরণে যাবে।
শবদাহের চন্ডাল তাকে ভালোবাসে। সে ইচ্ছা করলে চন্ডালের সাথে পালিয়ে যেতে পারতো।কিন্তু তা হয়না। চন্ডাল জলমগ্ন মেয়েটিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও গ্রহণ করছে না।জলে তলিয়ে যাচ্ছে।এখানে বউটির মানবিকতা ও সমাজের অমানবিকতা পরিস্ফুটিত।
অনিচ্ছাকৃত রেগে মেগে তিন তালাক দিয়ে ফেললে তালাক গন্য হবে। ঠিক আছে?
কিন্তু আবার যদি ভুল করে এ কাজ হয়েই থাকে পুনরায় যদি আবার মিলন চাইলেই হবেনা, আবার স্ত্রীকে অন্যের সাথে নিকা করে তালাক দিয়ে ফিরে আসতে হবে। এ কোন মানবিকতা?
কুমারী মেয়ের যদি ফাঁসির সাজা হয় পাকিস্তানে তাহলে তাকে ফাঁসির আগে কারারক্ষীরা ধর্ষণ করবে।পৃথিবীর সকল মানুষের যদি একটি ধর্ম থাকত তাহলে পৃথিবীতে এত ধর্মে ধর্মে যুদ্ধ, এত জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদিতা আর হত্যার মতো নির্মম ঘটনা ঘটতো না।
মানুষ জন্মগতভাবে একটি ধর্মে বিশ্বাসী হয়, কিন্তু সে যখন পরিপূর্ণ, বিবেকবান আর সভ্য মানুষ হয় তখন মানবিক ধর্মটাকে প্রাধান্য দেওয়া যৌক্তিক বলে আমি মনে করি।মানুষের ধর্ম যদি মানবিকতা হতো, তাহলে ক্ষমতার জন্য, দম্ভের জন্য মানুষে মানুষে যুদ্ধ হতো না। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র যদি একটি করে মানবিক রাষ্ট্র হতো তাহলে একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের অধিকার হরণ করত না, একটি রাষ্ট্র মানবিক হলে সে তার নিজের দেশের নাগরিকদের অধিকারও হরণ করে না। মানুষের মধ্যে যদি মানবিকতা থাকত তাহলে পৃথিবী আর স্বর্গের মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হতো। পৃথিবীর এক অংশে দুর্ভিক্ষ আর অন্য অংশে প্রাচুর্যের পাহাড় থাকত না। সাম্য আর মানবতার বাণী সারা বিশ্বে একসাথে ধ্বনিত হতো।
বর্তমান সমাজে সামাজিক অমানবিকতা অবক্ষয় সমাজ। যে পিতামাতা দেবতুল্য যাদের ছাড়া অস্ত্বিত্বই নেই সেই পিতামাতা আজ সন্তান দ্বারা নির্যাতিত। আপন সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আগের দিনে বৃন্দাবনে এখন বৃদ্ধাশ্রমে নির্বাসনে দিতে দ্বিধাবোধ করেনা।
স্ত্রী থাকতেও অন্য নারীর সাথে রাত কাটানো, স্বামী থাকতেও পরপুরুষের সাথে মিলনে এক বিষাক্ত অমানবিক অসামাজিক অবৈধতার বাড়বাড়ন্ত। সমাজ ও পরিবার ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিশু মনে এক মারাত্নক কুপ্রভাব সৃষ্টি করছে।ৎপরিবারে দু’ একটি বিবাহবিচ্ছেদ এখন জলভাত।
নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য আপনজনকে খুন করতে দ্বিধা করেনা।
একসময় ভারতবর্ষ পিতৃ সত্য পালনের জন্য রামের বনবাস, রাম লক্ষণের মতো ভ্রাতৃত্ব বোধের আদর্শ মেনে এসেছে। এখন সেই ভারতবর্ষে পিতামাতার কথামতো চলার বদলে জেনারেশন গ্যাপের দোহাই দিয়ে পিতামাতাকে অবজ্ঞা করা নিয়মে পরিনত হয়েছে। ভাই ভাইয়ের শত্রুতা এখন ঘরে ঘরের কাহিনী।
সিনেমা টিভির কুপ্রভাবেও সমাজ আজ মানবতা হীন।
আগে সিনেমায় একটা দৃশ্য কমন ছিল। একটা হিরোইনকে একা পেয়ে কখনো একা বা দলবল নিয়ে ধর্ষণ করতে উদ্যত হলে কোথা থেকে হিরো এসে উপস্তিত হয়ে মেয়েটিকে মারপিট করে নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে দুস্কৃতিদের হাত থেকে উদ্ধার করতো।
এখন সেখানে ইন্টারনেটের যুগে হট ফিল্ম, অপসংস্কৃতির শর্ট ফিল্ম কচি মনকে উত্তেজিত করছে। যার ফলে মেয়ে ধর্ষণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। যা খুব কমই সংবাদে প্রকাশিত হচ্ছে।
বাধা দিলে নির্ভয়া কান্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। আগে ডাকাতদেরও শপথ করতে হতো, নারীর গায়ে হাত দেবেনা। এখন পাশের বাড়ির কিশোর ছেলেটিও বিশ্বাস করা যায় না। মেয়েটির সর্বনাশ করছে তার সাথে নিজের ক্যারিয়ারও খতম করছে।
শিশু কন্যা ধর্ষণের মতো অতি জঘন্য ঘটনা ঘটে চলেছে। আদরের নামে আপনজন দ্বারাই ধর্ষিতা হচ্ছে।
আধুনিকতার নামে অনৈতিক অমানবিক কাজ চলছে।কাঁচা ফল কারবাইড দিয়ে পাকিয়ে, মাছে বিষাক্ত ফরম্যালিন দিয়ে তরতাজা করে সব্জি আলু প্রভৃতিতে রঙ মিশিয়ে তরতাজা দেখিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
ঘিতে মৃত পশুর চর্বি, তেলে দুধে চা পাতায় ভেজাল দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটছে।
রাস্তায় কোন এক মুমুর্ষ দূর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যাক্তিকে দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। হয়তো তাকে সময়মতো হাসপাতালে পাঠানো হলে সে বেঁচে যেতো।
যোয়ান ছেলে বউমা সুখে আছে অথচ মা দোরে দোরে ভিক্ষা করছে।অমানবিক মুখ আমরা দেখছি। ফুটপাত বাসী নাবালিকাকে গাড়িতে উঠিয়ে ধর্ষণ করে গলা টিপে খালের ধারে ফেলে দিয়েছে এই সব অমানবিক ঘটনার খবর শুনে আমরা শিউরে উঠি।
2018 সালের পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতে প্রতি ঘন্টায় ৫০ টি মহিলা ধর্ষিত হয়েছে। আর লজ্জা ও নিজেরই বদনাম হবে এই ভেবে অনেকেই পুলিশে জানায়নি, সংবাদেও আসেনি সেসব ধরলে প্রতি মিনিটে দুটি করে মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে।আশারাম বাপু ও রাম রহিম ইনসানের মতো ধর্ম গুরুরা তাদের প্রভাবে কোটি কোটি শিষ্য তৈরি করে জনবল বাড়িয়েছে।
আশ্রমে নির্দ্বিধায় মেয়েরা দিনের পর দিন ধর্ষিতা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যভিচার চলার পর ধরা পড়ে এখন জেলে।আজকের নির্বোধ বিবেকহীন স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক সমাজের বুকে দাঁড়িয়ে মূল্যবোধের আশা না করাই ভালো।
কোরোনা আক্রান্ত ব্যাক্তির, ডাক্তার স্বাস্থ্য কর্মী, সাহায্যকারী ব্যাক্তিদের সাহায্য সমীহ করার পরিবর্তে তাদের হেনস্তা নিগৃহীত করা হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত ব্যাক্তির মৃতদেহ সৎকারে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
তবুও মানবিকতা প্রদীপ শিখার মতো টিম টিম করে জ্বলছে। মানবিকতা আছে বলেই
সমাজ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়নি,য়টিকে আছে।
মানবিকতা আছে বলেই ঘর সংসার সমাজ দেশ টিকে আছে। নাহলে অরাজকতায় ভরে যেতো।খুনখারাবি, রাহাজানি, যুদ্ধ, জৈব অস্ত্র বা পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগ করে এক দেশ অন্য দেশকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে দিত।জীবকুলে মানুষ শ্রেষ্ঠ। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে থাকতে গেলে সামাজিক ও মানবিক গুন থাকতে হবে। চরিত্র গঠনে মানবিকতা প্রধান গুন। মানবিক গুনসম্পন্ন মানুষ সমাজে সেবা পায়।
নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় প্রকৃত ভালোবাসা। পরিবার, সমাজ দেশ জাতিকে নিঃস্বার্থ ভালোবেসে আত্মত্যাগের নাম মানবিকতা। মানবিক গুন সম্পন্ন সমাজ সংস্কারক মানুষ অবক্ষয় সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। তবেই আমূল-পরিবর্তন হবে।
গীতায় কৃষ্ণ বলছেন —“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্॥ পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশয় চ দুষ্কৃতাং। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে॥”
-
প্রবন্ধ- পরিবেশ ও পরিবেশ রক্ষা
পরিবেশ ও পরিবেশ রক্ষা
-শচীদুলাল পালপারিপার্শ্বিক ভৌত অবস্থা, জলবায়ু ও অন্যান্য প্রভাব বিস্তারকারী জীব ও জৈব উপাদান ইত্যাদির সামুহিক রূপই পরিবেশ।পরিবেশের উপাদান দ্বারা প্রাণী জগৎ, উদ্ভিদ প্রভাবিত হয়।
গাছপালা, নদীনালা,খালবিল, রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি, জল,সূর্য, মাটি, বায়ু,পশুপাখি, বিদ্যালয় ইত্যাদি। অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক সব কিছুই পরিবেশের অংশ।গাছপালা পাহাড় পর্বত ঝর্ণা নদী ইত্যাদি প্রকৃতির সৃষ্টি। আর ঘরবাড়ি নগরায়ন বন্দর কলকারখানা ইত্যাদি মানুষ সৃষ্টি করে। প্রকৃতি সৃষ্ট সুন্দরবন, সুন্দরী গাছ, ম্যানগ্রোভ ,অপরূপ তার শোভা। জলে কুমীর ডাঙ্গায় বাঘ। ফুলে ফুলে ভ্রমর প্রজাপতি দোল দিয়ে যায়।নদীর জলে কত রকমারি মাছ ও নানান জলজ প্রাণী স্বছন্দে করে খেলা।
সূর্যোদয়ে সূর্যাস্তের রক্তিম আভায় নৈসর্গিক শোভা।
বনে জঙ্গলে পশুপাখিদের বিচরণ ক্ষেত্র। “বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।”
সমুদ্রে অনন্ত জলরাশি ঢেউ হয়ে সৈকতে আছড়ে পড়ে। সূর্যের আলোয় মনে হয় অজস্র ফনি মনি মাথায় ফনা তুলে ধেয়ে আসে। আমাদের ঘরের সামনেও কত প্রাকৃতিক পরিবেশে মন ভরে যায়।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “বহুদিন ধরে বহু পথ ঘুরে বহু ব্যয় করে বহুদেশ ঘুরে, দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু, দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে শুধু দুপা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু।”
প্রকৃতি সৃষ্ট সাইক্লোন, আয়লা, আমফানের মতো ঝড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধূলিস্যাৎ, লণ্ডভণ্ড তছনছ হয়ে যায়।এবারে আমফানের ঝড়ে সুন্দরবনে ১০০০০ এর বেশি গাছ ভূপতিত ।অত্যধিক বৃষ্টির ফলে বন্যা এবং ফলস্বরূপ পরিবেশে অভিশাপ নেমে আসে।পরিবেশ দূষণ
———————–
এই পরিবেশ নানান ভাবে দূষিত হয়। আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্ভুত লাভা যেভাবে দূষিত হয় তা প্রকৃতির নিজস্ব সৃষ্টি। মানুষ দ্বারা বিভিন্ন কারণে দূষিত হয় সেটি ধ্বংসাত্মক। তার মধ্যে কীটনাশক গুলি খাদ্যে
প্রভাব ফেলে। অলড্রিন,ক্লোরোডেন,এন্ড্রিন,হেপাক্লোর,ডিডিটি, মিরেক্স,টক্সাফোন ক্যামিক্যাল।
শিল্পজাত হলো ডাইওক্সিন ফিউরান।
খাদ্যে বিষাক্ত পদার্থ গুলি ত্রুটি পূর্ন শিশুর জন্ম দেয়।ভ্রূণ বিকাশে নানান সমস্যার মূলে দায়ী।
পরিবেশ দূষণ বর্তমানে এক জলন্ত সমস্যা।দূষণের পরিনামে আজ মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিপন্ন।দূষণ বলতে মূলতঃ বায়ু দূষণ, জলদূষণ, শব্দদূষণ মাটিদূষণ প্রভৃতি।
সৃষ্টির সময় থেকে মানুষ ছিল পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। মানুষ ও পরিবেশ এক সূতোয় বাঁধা।কিন্তু যেমনি যেমনি সভ্যতার বিকাশ শুরু হলো তেমনি শুরু হলো বিশৃঙ্খলা। পরিবেশকে ইংরেজিতে বলা হয় Environment. (এটি একটি ফরাসী শব্দ।) মানে বেষ্টন বা ঘেরা।
মানুষের জীবন ধারনের জন্য প্রধানত প্রয়োজন বায়ুর অক্সিজেন আর পাণীয় জল।তাই মানুষ আজ এই দুটির সন্ধানে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে অনুসন্ধান করে চলেছে। তার মধ্যে বায়ুর অক্সিজেন ছাড়া প্রাণী এক মুহূর্ত বাঁচতে পারেনা। অক্সিজেন গ্রহণ প্রতিটি প্রাণীর জন্মসিদ্ধ অধিকার।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে এসেছে মোটরযান, কলকারখানা ইত্যাদি। আর এইসব থেকে বায়ু দূষণ ব্যপক হারে বাড়ছে।জালানি কয়লা থেকে,থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে, মোটরযান থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড বায়ু দূষণের অন্যতম কারন। মানুষকে স্বাভাবিক অক্সিজেন গ্রহণ করতে দিচ্ছে না।ফলস্বরূপ হাঁপানি,ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ব্যাধি, শ্বাসকষ্ট, ক্যানসারের মতো মারণ রোগের সৃষ্টি করছে। কলকারখানার চিমনি থেকে সালফার ডাইওক্সাইড সহ ৭০০ এর অধিক বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে। যেগুলি থেকে মারাত্মক সব ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে।দুরারোগ্য ব্যাধি ও অকাল মৃত্যুর কারণ।
২ রা ডিসেম্বর ১৯৮৪ ভুপালে,ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানায় যে গ্যাস কান্ড গ্যাস ট্র্যাজেডি ঘটেছিল তা আজও পৃথিবীর সেরা বায়ু দূষণ। মিথাইল আইসোসায়ানেট লিক থেকে গভীর রাতে কারখানা সংলগ্ন লোকালয়ে৫ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সরকারি পরিসংখান অনুযায়ী ২৫০০০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।আসল সংখ্যা আরও বেশি।
মশার উপদ্রব থেকে আমরা যেসব মশামারার বা বিতাড়নের কয়েল বা লিকুইড জালিয়ে থাকি সেগুলো থেকে বিষাক্ত গ্যাস বিভিন্ন রোগ ব্যাধির কারণ।বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণের হার বেড়েই চলছে। তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে জলবায়ুর ওপর। যার ফলে জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর তাপমাত্রা ব্যাপকহারে বাড়ছে যা গ্রিন হাউজ ইফেক্ট নামে পরিচিত। এক জার্মান গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৯০ সালের মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রিন হাউজ ইফেক্টের কারণে সমুদ্রের জল ২০ থেকে ১৪০ সে.মি বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার অনেক দেশই ডুবে যাবে।
বায়ুদূষণের ফলে বায়ুমন্ডলে যে ৩ কি. মি.পুরু ধোয়াশার সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে ভবিষ্যতে এসিড বৃষ্টি হবে।জল দূষণ।
গঙ্গার জল অত্যন্ত পবিত্র। পান করলে অনেক রোগ ব্যাধি দূর হয়। সেই গঙ্গার জল আজ প্রদূষিত।দেড় লক্ষের মতো জীবানুতে ভর্তি।পান করলে নির্ঘাত ব্যাধি। গঙ্গা যেখানে পাহাড় থেকে প্রথম সমতলে আসছে,সেটি হরিদ্বারের হর কি পৌড়ি।সেখানে জল পানযোগ্য। সচক্ষে দেখেছি অনেক মানুষ, তীর্থযাত্রী পান করছে। যেমনি ধীরে ধীরে সমুদ্রের দিকে বইয়ে চলেছে তেমনি প্রদুষিত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে। ভারতের সভ্যতার সাথে প্রথম শহর সব বড় নদীর ধারে গড়ে উঠেছিল। আর এখন সেই শহর থেকে বর্জ্য পদার্থ সব এসে গঙ্গা সহ নদ নদীতে এসে পড়ে দুষিত হচ্ছে।সেই জল আবার ফিল্টার করে শহরে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গ্রামে আগে যখন জৈব সার ব্যবহার হতো তখন চাষি বর্ষায় ক্ষেতের জল, পুকুরের জল খেত।
এখন রাসায়নিক সারের প্রয়োগের ফলে রাসায়নিক মিশ্রিত জল পড়ছে পুকুরে,ডোবায়,বিভিন্ন জলাশয়ে, অগভীর কূপে।সেই জলপানে নির্ঘাত রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু।জলই জীবন। আবার সেই জল থেকেই জলবাহিত নানান রোগ।মাটি দূষণ।
মাটি দূষণ এর মূল কারন রাসায়নিক সার,প্লাস্টিকের ব্যবহার।রাসায়নিক সার প্রয়োগে উৎপন্ন ফসলে পরীক্ষাগারে টেষ্ট করে দেখা গেছে। মারাত্মক বিষ আমরা নিয়মিত অজান্তে খেয়ে চলেছি।পরিনামে ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস, লিভার,কিডনি,অন্ত্রের রোগ,ক্যানসারের মতো মারণ ব্যাধি।প্লাস্টিক দূষণ এক জলন্ত সমস্যা।
প্লাস্টিক মাটির অভ্যন্তরে থাকলে সেটি হাজার বছরেও বিনষ্ট হয়না। প্লাস্টিক শুধু ফসল নয়, যেকোনো উদ্ভিদ জগতের হানিকারক।প্লাস্টিক বর্জ্য জলে নদীতে পুকুরে পড়ে। সেই জল মাছে খায়। সেই মাছ আমরা খায়। সুতরাং বিষগ্রহণ থেকে আমাদের রেহাই নাই।আমরা যে খাবার গ্রহণ করছি।
রাসায়নিক সারে উৎপন্ন ধান গম।কীটনাশক দ্বারা কীটহীন তরিতরকারি। কাঁচা ফল পাকা করার ওষুধ। সবই মারাত্নক বিষ।অর্থাৎ সভ্যতার সাথে সাথে সবই দূষিত।শব্দদূষণ।
শব্দদূষণ পরিবেশের এক গভীর সমস্যা।কলকারখানার উচ্চশব্দ, যন্ত্রচালিত গাড়ির হর্ন, বাজি-পটকার শব্দ মাইক্রোফোনের আওয়াজে মানুষের শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে । মানসিক বিপর্যয়, রক্তচাপ বৃদ্ধি, স্নায়বিক অস্থিরতা প্রভৃতি নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি করছে ।
নানান বিকট শব্দ আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে বধিরতার শুধু সৃষ্টি করেনা, উচ্চরক্তচাপ, হাইপারটেনশন,মানসিক রোগ, খিটখিটে স্বভাব সৃষ্টি করে।
আর এই শব্দদূষণ ঘরে বাইরে সর্বত্র। কানে হেডফোনে লাগিয়ে দীর্ঘক্ষণ থাকা মারাত্মক ক্ষতিকর।
ঘরের নির্মল শান্ত পরিবেশকে দূষিত করে জোরে জোরে টিভির আওয়াজ। ধ্যান প্রাণায়াম বিঘ্নিত করে। পড়াশোনার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে।সিরিয়ালের কলহ, উচ্চস্বরে ডায়লগ মনকে অশান্ত করে। বিপরীত পথে পরিচালিত করে।দাম্পত্য ও পারিবারিক কলহ,অসহিষ্ণুতার কারণ। ছাত্র ছাত্রীদের সহিষ্ণুতার অভাব উগ্র স্বভাব, গুরুজনদের কেয়ার করিনা র মতো স্বভাব সৃষ্টি করছে।
শব্দদূষণ মুনি- ঋষি, বিজ্ঞানী, গবেষক,বিদ্যার্থী,সাহিত্যিক, শিক্ষক প্রভৃতি বুদ্ধিজীবীদের উন্নতির অন্তরায়।খাদ্যদূষণ।
প্রতি পরিবারে আজ একটা করে ক্যানসার আক্রান্ত রোগী। এর মূলেও খাদ্যদূষণ। আজকাল মাছ মাংস ডিম সব প্লাস্টিকের তৈরিও পাওয়া যায়।এগুলি তৈরি হয় চীনে। অসাধু ব্যাবসায়ীদের হাত ঘুরে এই সব নকল জিনিস ঢুকে যাচ্ছে গৃ্হস্থের রান্না ঘরে। ঘীতে মৃত পশুর চর্বি।নকল তেল দুধ ও ফল। কাঁচা ফল গাছ থেকে পেড়ে ক্ষতিকারক রাসায়নিক দিয়ে পাকিয়ে বাজারে বিক্রি হয়।ভাগাড়ের মাংস বড় বড় হোটেলে সাপ্লাই হয়। মাছে ফরম্যালিন দিয়ে রাখলে মাছ তাজা দেখাবে কিন্তু এই ফরম্যালিন এক মারাত্মক বিষ।স্লো পয়জন। সুতরাং নিরামিষ ও আমীষ দুই ধরনের খাদ্যবস্তু বিষাক্ত। ধীরে ধীরে রোগাক্রান্ত করে আমাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
করোনা ভাইরাস, জীবানু স্প্রে, পঙ্গপাল ইত্যাদি পরিবেশ তথা মানব সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
অন্যদেশকে ধ্বংস করে নিজে সারা পৃথিবীর একছত্রপতি হবো এই ধারনায় সৃষ্টি করলো বিজ্ঞানীরা এক মারন ভাইরাস যার নাম কোভিন্দ 19 বা করোনা।যে হারে আক্রান্তের ও মৃত্যুর হার বাড়ছে তাতে মানব সভ্যতা বিপন্ন। উপযুক্ত চিকিৎসা বা ভ্যাক্সিন আবিস্কার না হলে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মানব সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে।
ইতিপূর্বে আমরা জানি চিকনগুনিয়া জীবাণু স্প্রে বা আনবিক বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক দেশকে ধ্বংস করার কাজে লাগিয়েছিল শত্রু দেশের সামরিক বাহিনী। জল বসন্ত কলেরা প্লেগ টিবি জীবাণু পরিবেশকে দূষিত করে মহামারী সৃষ্টি করেছিল।বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত ভ্যাক্সিন ও ওষুধই মহামারী প্রতিরোধ করেছিল।দাবানল
দাবানল পরিবেশ ধ্বংসের এক জলন্ত সমস্যা। দাবানলের কবলে এমাজনের মতো বিখ্যাত বনাঞ্চল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমাদের দেশেও দাবানলে বহু বনাঞ্চল পুড়ে গেছে।আমি সচক্ষে দেখেছি দলমার দাবানলের আগুন। দীর্ঘদিন ধরে জ্বলেছিল।পঙ্গপাল
———-
এক মারাত্মক কীট ঝাঁকে ঝাঁকে একসাথে আসে শস্য বা ফসল খেতে ঢুকে সব শস্য সাবাড় করে ফেলে। পঙ্গপাল মেরে ফেলার ব্যাবস্থা না করলে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।মানুষই খাবার পাবেনা। পঙ্গপাল যেমন কোটি কোটি এক দলে থাকে তেমনি এরা বংশবিস্তার করে অতি দ্রুত।সামাজিক পরিবেশও দূষিত হচ্ছে মোবাইলে। আগে ছাত্র-ছাত্রীরা যথেষ্ট সময় খেলাধুলা পড়াশোনায় ব্যয় করত।বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সাহিত্যিক সৃষ্টি হতো।কিশোর কিশোরী প্রেম প্রেমপত্রেই সীমাবদ্ধ থাকতো। এখন প্রেমের দ্বার উন্মুক্ত। পড়ার টেবিলে মোবাইলে চ্যাট। সেল্ফি পাঠানো চল।কিশোর কিশোরীর মনকে বিভ্রান্ত করছে। মনযোগ উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। মোবাইলে হট ফিল্ম দেখে উত্তেজিত হচ্ছে এবং আসক্ত হচ্ছে। তাদের ক্যারিয়ার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। অভিভাবক দেরীতে হস্তক্ষেপ করার ফলে এবং মোবাইল কেড়ে নিলে সুইসাইড এর মতো ঘটনাও ঘটছে।মানসিক রোগাক্রান্ত হচ্ছে।বহু ছাত্র ছাত্রী এই মোবাইলের কুপ্রভাবে কম বয়সে নিজের জীবনকে নষ্ট করছে। ( যদিও মোবাইলে ৯৯% শিক্ষনীয় বিষয় আছে।) অভিভাবক শিক্ষক সমাজ সংস্কারক দের এগিয়ে আসতে হবে শিশু কিশোর কিশোরীদের রক্ষার্থে।
প্রতিকার।
এই সব দূষনের হাত থেকে বাঁঁচতে হলে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে প্রচুর অক্সিজেন বায়ু মন্ডলে আমাদের সরবরাহ করবে।গাছপালায় ভূমিক্ষয় রোধ করবে।
কলকারখানা থেকে নির্গত জল ট্রিটমেন্ট করে যথাসম্ভব বিশুদ্ধ করে ছাড়বে।নদীজল দূষন রোধে যাবতীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে।নকল, ভেজাল আর রাসায়নিক প্রয়োগ বন্ধে সরকারকে টাস্ক ফোর্স গঠন করে অপরাধীকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে সেমিনার প্রচার করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জনচেতনা গড়ে তুলতে হবে।কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকদের বলিষ্ঠ কলমও অজান্তে নিত্য বিষ গ্রহনের হাত থেকে রক্ষা করে সুস্থ স্বাভাবিক ও দীর্ঘজীবন দান করবে। পরিবেশ রক্ষায়, বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ? যে বিজ্ঞানী করোনা ভাইরাসের মতো মারণ ভাইরাস আবিষ্কার করে মানবসভ্যতা ধ্বংসের সৃষ্টি করেছে। তেমনি একদিন বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন ও ওষুধ আবিষ্কার করে সফল হবে। মানবসৃষ্ট এই মারণ ভাইরাস এই বিশ্ব থেকে নির্মূল করবে।এই মারাত্মক পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করবে।