মুক্ত গদ্য
-
মুক্ত গদ্য- মনে মনে
মনে মনে
-সুমিতা দাশগুপ্ত
আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘ , তুমুল বষ্টি নেমেছে। দ্বিপ্রাহরিক অলস অবসরের নিরালা বেলায়, ভাতঘুমে মগ্ন সবাই, কেবল আমার চোখেই ঘুম নেই। কী করে থাকবে! আমার যে চক্ষু জুড়ে কেবলই তৃষ্ণা।বহু যুগের ওপার হতে অজস্র প্রাণের সম্ভার নিয়ে, “আবার এসেছে আষাঢ় ,আকাশ ছেয়ে।” ঝরঝর শব্দে বেজে ওঠা আষাঢ়ের সুর তাল ছন্দ,এখনই শুনে না নিলে ,আর কবে! আর কখন!
দোতলার বারান্দায় বসে, প্রবল ছাটে ভিজে যাওয়া আমি, একটুও নড়ি নে – সেই ছেলেবেলার মতোই বৃষ্টি- ফোঁটা হাতের তালুতে ধরার নেশায় বুঁদ হয়ে বসেই রই।কে জানে কবেকার কোন পুণ্যের ফলে , মহানগরীর ঘনিষ্ঠ এবং অন্তরঙ্গ এক উপনগরীর বাসিন্দা হয়েও,অজস্র গাছগাছালি ভরা, নিরিবিলি একটি পাড়ায় ঠাঁই মিলেছে আমার।
সন তারিখের হিসেব অতশত মনে রাখিনি, তবে ওই যে কবে যেন,জনবিষ্ফোরণে হাঁসফাঁস, কলকাতা মহানগরীকে একটু স্বস্তি দিতে, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নগরপরিকল্পকরা শহরের পুর্বপ্রান্তের জলাজমি ভরাট করে উঁচু রাস্তা বানিয়ে, পাশ বরাবর সুন্দর খাল কেটে এলাকার সৌন্দর্যায়ন সেরে,জায়গাটির ভোল বদলে ফেললেন,আর সেইখানে পাশাপাশি অনেক ক’টি প্লট বানিয়ে বেশ কিছু মানুষজনের আপন বাসা বানিয়ে ফেলার সুযোগ করে দিলেন, সেইখানটিতে আমাদেরও একটুকু ঠাঁই মিলে গেল। ওমা! কি ভাগ্যি! সঙ্গে জুটলো চমৎকার একখানা প্রশস্ত দক্ষিণের বারান্দা!
অলস অবসরে,বারান্দায় পেতে রাখা চেয়ারটিতে বসলেই নজরে আসে উদার উন্মুক্ত নীল আকাশের ইশারা। এইখানটিতে এসে বসলেই আমার কেন যেন মনে পড়ে যায় আশাপূর্ণা দেবীর গল্পের নায়িকা, ‘সুবর্ণলতার’ কথা। জীবনে বেচারি বেশি কিছু তো চায় নি, শুধু চেয়েছিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে, মাথার উপরের একটুকরো নীল আকাশ দেখতে দেখতে, খোলা হাওয়ায় প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে। সামান্য সেই চাওয়াটুকুও পূর্ণ হয় নি তার , তীব্র ক্ষোভে ছটফটিয়ে মরেই গেল বেচারি! আর আমার জন্যে কিনা এতোবড়ো একখানা সৌভাগ্যি অপেক্ষা করে ছিলো!
এসব কথা বলিই বা কাকে! বাড়ির সকলেই
সদা ব্যস্ত। তারা ভাবে সাধারণত ফ্ল্যাট বাড়িতে, ছোট, বড়ো যা হোক একখানা বারান্দা তো থাকবেই, আগেভাগে প্ল্যান দেখেই তো বাড়ি নেওয়া, তাহলে বারান্দা নিয়ে এতো আদিখ্যেতার কি আছে!
কী যে আছে,সেই কথাটাই তো মোবাইলে নিবদ্ধদৃষ্টির আধুনিক কর্মব্যস্ত মানুষজন, না নিজেরা বোঝে ,না আমি তাদের বুঝিয়ে উঠতে পারি।
তা বেশ, নাই বা বুঝুক বেবাক লোক, একান্তে আমার গোপন সম্পদ হয়েই থাকুক না হয় সেটি! চোখের সামনে থাকলেও ,স্রেফ বারান্দায় বসে বসেই, এমন নয়নাভিরাম পান্নারঙা সবুজের ঐশ্বর্য দেখতে পাওয়া কী এতোই সহজ! দেখার চোখ চাই, অনুভবের মন লাগে। কে না জানে “সবার তরে নহে সবাই।”এই পাড়ায় ষড়ঋতুর অনায়াস আনাগোনা। প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতি তার নিজস্ব রঙ রূপ মেলে ধরে ,পরিপূর্ণ মহিমায়, অকৃপণ দাক্ষিণ্যে। অকাতরে বিলিয়ে দেয় তার রূপ রস গন্ধ।
বাঙালি জীবনের প্রধান এবং সবচাইতে বড়ো শারদীয়া উৎসবের পালা ফুরোতে না ফুরোতেই, চলে আসে কুয়াশার ঘোমটা টানা হেমন্তকাল। খাস কলকাতায়, কোলাহল মুখর মহানগরীর আনাচে কানাচে, গরীব ঘরের পল্লীবধূটির মতো এতোই কুন্ঠিত চরণে তার আনাগোনা, যে ক’জনে তার খোঁজ রাখে সন্দেহ। এখানে কিন্তু সে বেশ স্বচ্ছন্দ, হিমের চাদর গায়ে, দিব্যি জানান দিয়ে সে আসে! ঘুরে ফিরে বেড়ায়। ভোরের বেলায় ঘাসের আগায় ছড়িয়ে দেয় হীরের কুচি সকালবেলার নবীন সূর্য খেলা করবে বলে। সন্ধ্যার কুয়াশায় পথ দেখাতে মিটমিট করে জ্বালে তারার আলোর প্রদীপখানি।
যদিও খুবই ক্ষণস্থায়ী তার অবস্থানকাল, তবু সে আসে।
তার বিদায়ের লগ্ন ঘনিয়ে আসতে না আসতেই শীতের হাওয়ায় নাচন লাগে। উড়িয়ে দেবার মাতন জাগিয়ে শীত সঙ্গে নিয়ে আসে পাতা খসাবার মরসুম।
একটা একটা করে পাতা ঝরে,ঝরতেই থাকে অহোরাত্র। শীর্ণ ডালপালা নিয়ে, বৃক্ষদল রিক্ত হাতে দাঁড়িয়ে থাকে বসন্তের দাক্ষিণ্যের আশায়। কিছুদিনের মধ্যেই শুকনো ডালপালায়, কচিপাতারা লাজুক শিশুটির মতো উঁকিঝুঁকি দেয়।বসন্তের আগমনী ঘোষণা করে কোকিলের কুহুতান।এইসব যে নেহাৎই কাব্যকথা, অথবা রচনা বইয়ের পাঠ্যবস্তু, নয় সেকথাটি বেশ বোঝা হয়ে যায় রসিকজনের।
এখানে জারুলে,কৃষ্ণচূড়ায়, বকুলে, কদমে গলা জড়াজড়ি ভাব। পেল্লায় বট আর নিমের নজরদারিতে বেঁচে বর্তে থাকে কাঠবিড়ালি, কাক কোকিল, ঘুঘু ,চড়াই পাখির দল।
কালবৈশাখীর ঝড় কেশর ফুলিয়ে তেড়ে এলে,কৃষ্ণচূড়ার ছেঁড়া পাপড়ি যেমন রেড কার্পেট অভ্যর্থনা জানায়,ঠিক তেমনই কদমকেশর শোনায় বর্ষার আগমনী গান। আর সামনের বিশাল বটগাছে সাঁঝের আঁধারে আশ্রয় নেওয়া বকের দল, ডালে ডালে কী চমৎকার যে থোকা থোকা ফুলের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারে, স্বচক্ষে না দেখলে কোনদিন জানাই হতো না।
আজ এই আষাঢ়ের ধারাবর্ষণে পল্লবে পল্লবে শিহরণ দেখতে দেখতে মনে বড়ো সাধ যায়, ভেজা মাটিতে করতল বিছিয়ে বসতে, অনুভব করতে মৃত্তিকার গভীর থেকে উঠে আসা “লক্ষ লক্ষ বীজের বলাকার” ডানা মেলার অশ্রুত ধ্বনি।
জানতে বড়ো ইচ্ছা করে মাতা বসুমতীর কোলে ঠাঁই পেয়ে এখন কেমন আছো সীতাদেবী ! মায়ের স্নিগ্ধ পরশে কি জুড়োলো তোমার মর্ত্যভূমির তীব্র অপমানের বহ্ণিজ্বালা!
ভাবতে সাধ হয়, এই ধারাবর্ষণেই বুঝি থাকে মায়ের হাতের পরশ। কতকাল হয়ে গেল , আমিও তো আর পাইনে আমার বৃদ্ধা মায়ের শিরা ওঠা হাতের ছোঁয়াটুকু ! আর ওই যে তরুণী মেয়েটা, এই তো সেদিন একমাথা সিঁদুর নিয়ে শ্বশুরবাড়ি গেল,তারপর উড়ে গিয়ে ঘর গেরস্থালি গুছিয়ে বসেছে পৃথিবীর অপর গোলার্ধে, তার পরশটুকুই বা মেলে কই!
বড্ডো মনকেমনের উথাল পাথাল ঢেউ আজ আপাদমস্তক ভিজিয়ে দিচ্ছে আমায়।
আচমকা কেজো পৃথিবীর তীব্রস্বর বেজে ওঠে —
“একী, এই ভরদুপুরে বসে বসে বৃষ্টিতে ভেজে কেউ! জ্বরজারি হলে—-”সত্যিই তো। ঘরে ফিরে এসে দুয়ার এঁটে বসি, ওদিকে ভুবন জুড়ে তখন প্রকৃতি মায়ের লীলাখেলা।
আমি তাহলে এখন কী করি!
আমার যতটুকু সম্বল তারই আশ্রয়
নিই তবে —কলম হাতে তুলে নিয়ে লিখে রাখি মনের কথা..
“ভিজছে শহর, ভিজছে পাড়া
ভিজছে কানাগলি,
মনখারাপের গল্পগুলো
তোমায় তখন বলি!” -
মুক্তগদ্য- চৈত্র মাস বাংলার লোকসংস্কৃতির মাস
চৈত্র মাস বাংলার লোকসংস্কৃতির মাস
-সুমিত মোদকচৈত্র মাস জুড়ে এক আলাদা মাদকতা আমাদের জীবনে। আমরা যারা মূলত গ্রামে বাস করি, সেই ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি বাংলার অন্য মাসগুলির তুলনায় চৈত্র মাসটি পুরোটাই লোকসংস্কৃতির মাস। আগুন ঝরা কৃষ্ণচূড়ার আড়াল থেকে ভেসে আসে কোকিলের কুহু তান। আর ঝাঁঝালো রোদ্দুর মেখে শিবের নাম- গান গেয়ে দলবদ্ধভাবে মেঠো পথে হেঁটে যাওয়া শিব সন্ত্রাসীদের দল।
চৈত্র মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে গ্রামে বেশ কিছু পুরুষ শিব-সন্যাস নেন। মূলত পাড়ার কোন মধ্যবয়স্ক একজন মূল সন্যাসী হয়। তিনি একটা সাদা ধুতি বা গামছা পড়ে থাকেন। গলায় ধারণ করেন সাদা সুতো- উত্তরি। আদুল গা, হাতে বেতের ছড়ি থাকে। সারা দিনে একবার হবিষ্যি খান। সংসার থেকে এই এক মাসের জন্য সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকেন। দুটো ইট দিয়ে তৈরি হয় উনান। সেই উনানে খড় দিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। উনানে মাটির মালসায় ফোটে চাল-ডাল-আলু-সবজি। সন্দক নুন, লঙ্কা দিয়ে কলা পাতায় খাদ্য গ্রহণ। এই এক মাস গ্রামের আটচালায় খড় বিছিয়ে থাকেন। সেখানে অন্য সন্যাসীরাও হাজির হন। ভোর থেকে শুরু হয় শিবের গীত। সকালে সে গীত সহকারে গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন। পিছনে পিছনে দল বেঁধে হাঁটে গ্রামের শিশু-কিশোররা। সন্ধ্যায়ও হ্যারিকিনের আলোতে জমে যায় আসর।গ্রামের কিছু ছেলেরা গাজন দল করে সে সময়। শিব-পার্বতীর কিছু পৌরাণিক কাহিনী, কিছু লোককাহিনী নিয়ে শুরু হয় গাজন। বাংলার লোকসংস্কৃতিতে গাজন দল ও গাজন গানের প্রভাব দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বিশেষ করে সুন্দরবন অঞ্চলে লক্ষ্য পড়ার মতো। সারাটা মাস চর্চা চললেও নীলের দিন প্রথম পালা শুরু করে। ও দিনটা মূল সন্যাসীর পাশাপাশি অন্য সন্যাসীরা শিবের ঘরে বাতি দেন। শিবের আরেক নাম নীলকন্ঠ। সে কারণেই নীলের ঘরে বাতি বলা হয়ে থাকে। গ্রামের বউ-ঝি, ছেলে-মেয়েরা ও শিবের গীত গাইতে গাইতে স্নান সেরে বাতি অর্থাৎ দীপ জ্বালায়।
নীলের পরের দিন ঝাঁপ। এখানে আরেক লোক সংস্কৃতি। সন্যাসীরা গ্রাম পরিক্রমা করেন। একটা কাঁসার থালায় করে হলুদ জল, তাতে দূর্বাঘাস দেন। প্রতিটি ঘরে উঠানের রোদে রাখেন। মূল সন্যাসীর হাতের বেত দিয়ে সে জল গৃহস্থের মঙ্গল কামনায় ঘরে ছড়িয়ে দেন। তখন বাড়ির সকলে এক সঙ্গে শিব ধ্বনি দেয়।
দুপুর থেকে ঝাঁপতলার মাঠে ঝাঁপ দেওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গাঁটওয়ালা দুটো বাঁশ পোঁতা হয়। ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় ছোটদুটো বাঁশ দিয়ে খাচা বাঁধা হয়। ওখানেই উঠে সন্যাসীরা ঝাঁপ দেন। নিচে পাতা থাকে খড়। তার উপর থাকে একটা লাল কাপড়। তার উপর বঁটি পাতা থাকে। কোথাও কোথাও আগুন জ্বালায়। সন্যাসীরা প্রথমে একটা ডাব ছুঁড়ে দেন শিবের উদ্দেশ্য। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শিব ধ্বনি। সেই ধ্বনি নিয়ে ঝাঁপ দেন সন্যাসীরা। তার পর অন্যরা।
এদিন থেকে গাজন দলগুলি জোর কদমে শুরু করে গাজন গান। এক গ্রামের গাজন দল আরেক গ্রামে গাজন গান করে। প্রতিটি গ্রামে প্রতি দিনই গাজন গান হয়ে থাকে। কোথাও আটচালার সামনে। কোথাও ঠাকুর দালানের সামনে। কোথাও খেলার মাঠে। কোথাও বা কারোর খামারে। এমন কিছু গ্রাম আছে যেখানে আছে গাজন তলার মাঠ। ছেলেরাই মেয়ে সেজে অভিনয় করে।
এ ছাড়া এ সময় গ্রামের পথে-হাটে দেখা মেলে বহুরূপীদের। বেশ কিছু পুরুষ শিল্পকে ভালোবেসে সাজে বিভিন্ন দেব-দেবী। পেটের তাগিদ দিয়ে বাড়ি বাড়ি ভিগ মাগে ।
ঝাঁপের পরেরদিন চড়ক। প্রায় গ্রামে একটি করে চড়ক মাঠ আছে। সেখানেই চড়ক মেলা বসে। মূলত ফাঁকা ধান জমিতে এই মাঠ। সেখানেই একটা চড়কগাছ বসানো হয়। ডালবিহীন মসৃন লম্বা একটা গাছ। তার মাথায় লাগালো হয় একটা বাঁশ। বা লম্বা একটা কাঠ। এমন ভাবে পেরেক পোঁতা থাকে যাতে কাঠটা বা বাঁশটা সহজে ঘুরতে পারে। তার দু’ প্রান্তে ঝোলানো থাকে মোটা দড়ি। এক প্রান্তে মূল সন্যাসীকে বেঁধে ঝোলানো হয়। আরেক প্রান্তে দড়িটা ধরে অন্য সন্যাসীরা বনবন করে চড়ক গাছটাকে প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। তখন মূল সন্যাসী চড়কগাছে ঝুলে ঘূর্ণাবত্যের মধ্যে। আশেপাশে তখনই একটাই ধ্বনি- হর হর মহাদেব…….
-
মুক্তগদ্য- মনসামঙ্গল কাব্য ও দক্ষিণবঙ্গের অরন্ধন উৎসব
মনসামঙ্গল কাব্য ও দক্ষিণবঙ্গের অরন্ধন উৎসব
গ্রাম বাংলার হিন্দু ঘরে ঘরে লেগে যায় উৎসবের মেজাজ। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। বিশেষ করে বাড়ির মেয়ে-বৌদের মধ্যে ঘরদোর পরিষ্কার করা, শুচিশুভ্র এক পরিবেশ তৈরি করা। লক্ষ্য, মাসের শেষে তাদের আরাধ্যা দেবী মা মনসা পূজা। দেখার মতো- মনসা পূজা নিয়ে এত উৎসাহ। এত শুচিতা। যে প্রতিপদে মনে করিয়ে দেয় এ পূজাতে ভক্তির থেকে ভয় বেশি।
দক্ষিণবঙ্গে সাপের দেবী মনসা। বাংলা নদীমাতৃক ভূমি। চারিদিকে জল-জঙ্গল। তার ফলে সাপের প্রাদুর্ভাব বেশি। আর এখানকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী। সে কারণে মাঠ-ঘাট, জল-জঙ্গল পদচারণ ভূমি। প্রতি বছর বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ মারা যেত সাপের কামড়ে আগে তো এতো উন্নত চিকিৎসা বিদ্যা ছিল না। সে কারণে সে সময় নির্ভর করতে হতো গুনিন ও ওঝার উপর। কিন্তু শেষরক্ষা হতো না। গ্রামবাংলার অন্তজ শ্রেণীর গৃহবধূরা পিঠে-পুলি, পঞ্চব্যঞ্জন, মাছ, চিংড়ি রান্না বসিয়ে দেয় সারারাত। রান্না চলে ভোর পর্যন্ত। সেই সকল খাবার নিয়ে পূজা দেয় মনসাকে। মনসা গাছ মনসা দেবী প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়ে থাকে। পূজার আরেক উপকরণ দুধ-কলা। মনসার বাহন সাপ নাকি তাতে সন্তুষ্ট হয়।
মনসা পূজা মূলত তখন অন্তজ শ্রেণীর মধ্যে দেখা যেত। যারা বাঁচতে চেয়েছিল অলৌকিক বা অতি ভৌতিক শক্তির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে। এমন এক শক্তির আধার তৈরি করে ফেলেছিল অবৈদিক মনসাকে ঘিরে। সেজন্য মনসা রূপ-গুণ ক্রোধ, হিংসা অধিকারের লড়াইটা অন্তজ শ্রেণীর নারীর মতো। বৈদিক দেব-দেবীর সঙ্গে কোনো মিল নেই। পুরোপুরি অবৈদিক সম্পন্ন। বাংলার লোকায়ত অন্তজ শ্রেণীর মহিলাদের মন থেকে সৃষ্টি। সেজন্য নাম মনসা। মনের আশা, মনসা। বাংলার পূর্ব ও দক্ষিণ প্রান্ত অর্থাৎ সুন্দরবন অঞ্চলের আরাধ্যা দেবী মনসা। মনসা কথা প্রথম পাওয়া যায় মনসামঙ্গল কাব্যগুলিতে। সেগুলিতে মনসার উৎপত্তি, পূজার প্রসার এমনকি তার চরিত্র জানা যায় মঙ্গলকাব্যগুলি থেকে। কাব্যগুলি প্রায় সাত শত বছর আগে রচিত হয়েছিল। সে দিক থেকে বিচার করলে মনসা দেবীর সৃষ্টি সাত শত বছর আগে। প্রথম দিকে মনসা দেবী কেবলমাত্র অন্তজ শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যাদের জীবিকা ছিল চাষবাস, মাছ ধরা, পশু শিকার প্রভৃতি। ধীরে ধীরে তা উচ্চবিত্ত উচ্চবর্ণের সমাজের নারীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। মনসামঙ্গল কাব্যের রচয়িতাদের জানা ছিল এই অবৈদিক আঞ্চলিক দেবীকে যদি না বৈদিক দেবদেবী বিশ্বাসের মধ্যে প্রভাব বিস্তার ঘটানো না যায়, তাহলে দেবীর বিস্তার ঘটানো সম্ভব হবে না। সে কাজ জোর কদমে চালিয়ে যায়। তাদের সাহিত্যে, তাদের গানে, তাদের পাঁচালীতে।
মনসামঙ্গল কাব্য কাহিনীতে এরকম:
চাঁদ সওদাগর শিবের উপাসক। মানে বৈদিক শাস্ত্রে বিশ্বাসী। তার স্ত্রী স্বামীর মঙ্গল কামনায় ঘরের মধ্যে লুকিয়ে ঘট বসিয়ে মনসা পূজা করছে। সেটা জানতে পেরে চাঁদ সওদাগর লাথি মেরে ঘট উল্টে দেয়। তাতে মনসা দেবী রুষ্ট হয় । প্রতিহিংসায় তার ছেলেদের খাবারের বিষ মিশিয়ে মেরে দেয়। এমনকি বাণিজ্যিক সপ্তডিঙা মধুকর ডুবিয়ে দেয়। সকলকে মেরে দিলেও চাঁদ সওদাগরকে বাঁচিয়ে রাখে। কারণ সে যদি বেঁচে না থাকে, পুজো যদি না দেয়াতে পারে তাহলে দেবীর মহিমা কেবলমাত্র অন্তজ শ্রেণীর মধ্যে থেকে যাবে। সেটা সে কোনোভাবেই মেনে নিতে রাজি নয়। তাকে যে উচ্চবিত্ত উচ্চবর্ণের পূজা পেতে হবে। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে চাঁদ সওদাগর বাড়ী ফিরে দেখে সনকার গর্ভে সন্তান বড় হয়ে গিয়েছে। বিয়ের উপযুক্ত। এদিকে মনসা প্রতিজ্ঞা করেছে বাসর ঘরের লক্ষিন্দরকে সাপের কামড়ে মারবে। সে কারণে ছেলের জন্য লোহার বাসর ঘর করেছে।
আর চাঁদ সওদাগর পাহারা দিচ্ছে। ঘরের বাইরে হেতাল বাড়ি নিয়ে। তবুও সাপের কামড়ে লখিন্দর মারা গেল। নববধূ বেহুলা কলার ভেলায় স্বামীকে নিয়ে গাঙ্গের জলে ভেসে চললো স্বামীর প্রাণ ফিরে পেতে। অবৈদিক দেবী মনসা ও বৈদিক দেবদেবীর তুষ্ট করে লখিন্দরের প্রাণভিক্ষা পায়। মূল কথা হলো, বেহুলার সঙ্গে চুক্তি হয় স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে শ্বশুরকে দিয়ে পুজো দিতে হবে। পুত্রবধূর অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বাঁ হাতে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে পুজো দিয়েছিল। তাতে মনসা খুশি যে বৈদিক শাস্ত্র বিশ্বাসী উচ্চবর্ণের উচ্চবিত্ত প্রতিনিধি তার পুজো দিয়েছে। তার ফলে উচ্চবর্ণের মহিলাদের হাত ধরে মনসার প্রবেশ ঘটে।উচ্চবর্ণের মহিলারা নিম্নবর্ণের মহিলাদের সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। পারস্পরিক মেলামেশা ও ভাব আদান প্রদানের মধ্যে সেটা গড়ে উঠেছিল। আর সেই নারী সমাজ পরবর্তীকালে সংসারের মধ্যে পুরুষ সমাজের মধ্যে মনসা দেবী প্রভাব ঘটাতে থাকে। তার ফলে বাংলায় বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে মনসা পূজার বিস্তার লাভ করে।
ভাদ্র মাসের শেষ দিনটা সুন্দরবন ও আশেপাশের জেলাগুলিতে মনসা দেবীর পূজাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় অরন্ধন উৎসব। মনসার পূজায় জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে ভেলা ভাসানো উৎসব লক্ষ্য করার মতো। পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয় পাঁচালী গান। মঙ্গল সুরে মনসা গান। সে কারণে মনসামঙ্গল কাব্য এক সংস্কৃতির সঙ্গে আরেক সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। তা প্রায় সাতশ বছর ধরে একটু একটু করে সমগ্র হিন্দু বাঙালি সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। মনসামঙ্গল কাব্য বাংলায় যেমন নিজস্ব সম্পদ, তেমনই মনসা দেবী হয়ে উঠেছে দক্ষিণবঙ্গের আরাধ্যা দেবী।
-
মুক্তগদ্য- নেকুমুনুপুষু
নেকুমুনুপুষু
-শম্পা সাহা“আমার বর না একদম মেয়েদের কাজ করা পছন্দ করে না, শ্বশুর বাড়ি ও তাই!”
“তা বলে এতো ভালো চাকরিটা ছেড়ে দিবি?”
“দেখ ভালো থাকার জন্যই তো চাকরি করা, তাহলে যদি ওর রোজগারে দিব্যি সংসার চলে যায় তবে আমি আর কেন বেরোতে যাবো? আর তাছাড়া আমি বেরিয়ে গেলে সংসার কে দেখবে?”
“কেন এতোদিন যারা দেখতো! তারাই দেখবে! তাছাড়া তোর শাশুড়িও তো চাকরি করতেন!”
“সেই জন্যই বিয়ের পর চাকরি ছাড়তে হবে বলেছিল সুব্রত। আসলে ও বলে, ‘মা বাড়িতে না থাকায় ওদের দু’ ভাইকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে!’ আর তাছাড়া শাশুড়িও হাউস ওয়াইফ বৌমাই চাইতেন।”
“তাহলে উনি কেন ছাড়েন নি?”
“বাদ দে তো, এই বেশ আছি! কেন ফালতু ফালতু খাটতে যাবো? অন্য কথা বল।”
সুনীতার কথায় এষা বেশ বিরক্ত। ওর বর ব্যাঙ্কের বড় চাকুরে আর ও তার আদুরে বউ।
সুনীতা একটু দূরে যাওয়াতে, এষা মুখ ব্যাঁকায়, “হুঃ,নিজের বরের মুরোদ নেই বউকে সুখে রাখার, আর বড় বড় নারীবাদী কথা!”
পার্লারে চেয়ারে শুয়ে রীণিতা! পাশে দাঁড়িয়ে অ্যাটেন্ডেন্ট মেয়েটি কাঁচি হাতে বিরক্ত, কারণ রীণিতা তখনও সুজয়ের কাছে ডিরেকশন নিচ্ছে,
“কি কাট্ করি বলো তো? লেয়ারে মানাবে আমাকে? ও আচ্ছা! যদি না মানায়! এ বাবা, যাঃ! আমার এই পাতলা চুলে স্টেপ মানাবে? আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক তো? আচ্ছা, রাখি? “
ফোন কেটে গেল। রীণিতা গদগদ মুখে জানায়, স্টেপই করো, ও বলেছে। বলার সময় মুখ থেকে একটা আদুরে জ্যোতি বেরোচ্ছে যেন!
মেয়েটি মনে মনে ভাবছে, এই পাতলা চুলে ভদ্রমহিলাকে মোটেই স্টেপে ভালো লাগবে না! ভদ্রমহিলা তো বেশ শিক্ষিতা বলেই মনে হচ্ছে, তবু?
পার্টিতে এসে শ্বেতা এক কোণে দাঁড়িয়ে। একটা স্লিভলেস গাউন পড়ে। ওকে দেখে হৈ হৈ করে ওঠে বৈশাখী। ওর নিজের পরনে একটা দারুণ সালোয়ার। ওকে মানিয়েছেও ভীষণ।
“কি রে, এভাবে দাঁড়িয়ে কেন?” ওরা কলেজে একসাথে পড়াশোনা করতো, এখন আবার সহকর্মীদের স্ত্রী। তাই বন্ধুত্ব বেশ গাঢ়।
“দেখ না, এই বিটকেল গাউন পড়ে একটুও নড়তে পারছি না!” শ্বেতা বিরক্তি প্রকাশ করে।
“তাহলে পড়েছিস কেন?”
“দেখ না কৌশিক এতো সখ করে আনলো!”
“ঢং, তোর ভালো না লাগলে পড়লি কেন?”“না, রে ও বললো, সোনা তোমাকে খুব ভালো লাগবে!”
শ্বেতা বেশ গর্বিত। বৈশাখী অবাক, “পছন্দ না হলে সাফ জানিয়ে দিবি।”
“না রে ওকে না বলতে আমার খারাপ লাগে!” শ্বেতা বেশ একটা শ্লাঘা বোধ করে কথাগুলো বলতে।এক গা গয়না, ভারী একটা বেনারসি পরে দেবযানীও বেশ জবুথবু। কিন্তু শাশুড়ির কড়া নির্দেশ, ননদের বিয়ে, সব বউরা যেন সব গহনা লকার থেকে বের করে পরে। মুখার্জী পরিবারের ঐতিহ্য বলে কথা!
নাকে নোলক পরে দেবযানী বেশ অস্বস্থিতে, তবু বেশ ভালো লাগছে, বেশ একটা আলাদা ফিলিং, বেশ রাণী রাণী লাগছে।
ছোট জা কলেজে পড়ান বলে যা ঘ্যাম! দেখো শাশুড়ির কথাও অমান্য করে! গহনা বলতে ওই গলায় একটা পাতলা টিং টিং এ হার, আর কানে ছোট দুল! ছোট লোকের মেয়ে কি বলে সাধে! যেমন ভিখিরি বাড়ির মেয়ে তেমন চাল। কুকুরের পেটে কি ঘি সয়?
জায়েরা- বড়, মেজো, সেজ, ছোট বৌকে তাদের দল থেকে বাদ দিয়ে নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত ছোট বৌ এর নিন্দা করতে।
এই চিত্রও আমাদের বেশ পরিচিত। আমরা যতই নারী স্বাধীনতা নিয়ে চিৎকার করি, যতই বলি পুরষরা আমাদের দমিয়ে রাখতে চায়, আমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সম্মান করে না, মূল্য দেয় না, আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ দ্বারা নিপীড়িত, সত্যি কি সব ক্ষেত্রে তাই? আমাদের এই বশংবদ হয়ে থাকার ইচ্ছেও কিছুটা দায়ী নয়?
আমি এক উচ্চ শিক্ষিতা মহিলাকে বেশ সুরেলা গলায়, ন্যাকা ন্যাকা সুরে বলতে শুনেছি, “আমার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট, এ টি এম কার্ড, স্যালারি অ্যাকাউন্ট নাম্বার সব ও জানে, আমি ওসব কিছুই বুঝি না?” এই কথা বলতে বলতে তিনি যেভাবে চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে সবার প্রতিক্রিয়া দেখছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল যেন তিনি বিশ্ব জয় করেছেন! বলতে ভুলে গেছি, তিনি একজন শিক্ষিকা!
আমাদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে কে দায়ী? কেন এ দেশে এখনো আমরা সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন, এ জন্য কারা প্রকৃত দায়ী এবং কতোটা, তা নিয়ে কি এখনো সন্দেহ আছে?
আমরা দোষারোপ না করে, পারি না কি নিজেদের মানসিক অবস্থাকে সুদৃঢ় করতে? এক দিনে হবে না জানি, কিন্তু চেষ্টা তো করাই যায়?
-
মুক্তগদ্য- কোন্দলপ্রিয়
কোন্দলপ্রিয়
– শম্পা সাহামানুষ বড় কাজিয়া কোন্দলপ্রিয় প্রজাতি। প্রজাতি বললে আবার রাগবেন না যেন! আমরা প্রাণীই, সে যতই ঐতিহ্য -টৈতিহ্যর বুলি কপচান! আমরা প্রাণীদের মধ্যে একটু উন্নত, হোমো সেপিয়েন্স আমাদের নাম। এর বেশি কিছু না।
আপনি যদি ভেবে থাকেন মানুষ হয়ে আপনি মাথা কিনে নিয়েছেন, ভুল ভাবছেন। আপনার মত দল বেঁধে সামাজিক জীবন যাপন ওই সামান্য উই পোকা, বোলতা বা মৌমাছিরাও করে। কিন্তু তারা ঝগড়া করে না, একে অপরকে লোভে পরে হত্যা করে না অকারণে যেমন আমরা করি।
যতই ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের গাত্র ব্যথা হোক লোকের উন্নতিতে গাত্রদাহ মাস্ট। আর ভাগাভাগিতে? ওরে বাবা শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাই সেখানে পি এইচ ডি।
আমরা প্রথমে দেশের বিরুদ্ধে লড়ি। এই যেমন ভারত পাকিস্তানের লড়াই, আমেরিকা ইরাকের ওপর বোম ফেলে, এইসব করতে করতে বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত আমরা করে ফেলেছি। ভাবখানা এমন যেন ওরা বিদেশি তাই শত্রু, ঘরের লোকদের মধ্যে গলায় গলায় ভাব!
তাহলে আর প্রাদেশিকতা শব্দটাই আসতো না? আমরা সীমান্তে লড়ছি বিদেশের বিরুদ্ধে আবার দেশের মধ্যে এক রাজ্য লড়ছি অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে। সেখানে লড়াইটা, ও বিহারী, ও বাঙালি, ও অসমিয়া, ও মারাঠি!
তাহলে শত্রু ভাবাপন্ন আমরা সীমান্তের বাইরের লোকেদের সম্পর্কে শুধু নই দেশের ভেতরেও শত্রু খুঁজে পাচ্ছি!
আচ্ছা তাহলে রাজ্যের মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা নেই? ও বাবা ওখানেও আছে! ও হিন্দু, ও মুসলমান, ও খৃষ্টান, ও শিখ, ও জৈন। সেই ভিত্তিতে বিভাজন, লড়াই, দাঙ্গা!
তাহলে কি এখানেই শেষ? তাহলে আর ও ব্রাম্ভ্রণ, ও কায়স্থ, ও উঁচু জাত, ও নিচু জাত কিসের? তাতে অনার কিলিং? হায় রে? কিলিং তাও অনার?
আর রাজনৈতিক তরজা, তা নিয়ে রং অনুযায়ী মার ধোর, খুন,জখম। এক দেশ, এক রাজ্য, এক ধর্ম হয়েও রক্ষা নেই। সেখানে আবার রাজনৈতিক রং দেখে আমরা লড়ছি একে অপরের বিরুদ্ধে!
এরপর লড়াই ভাইয়ে ভাইয়ে, ভাই বোনে, বোনে বোনে টাকার জন্য, জমির জন্য, সম্পত্তির জন্য।খুন খারাপি, জখম, ধর্ষণ কিছুই বাদ নেই।
আর শেষে লড়ছি নারী পুরুষের মধ্যে! নারী বড় না পুরুষ? নারী ভালো না পুরুষ?
আমরা শুধু লড়ছি, লড়েই যাচ্ছি আর ভাঙছি! পৃথিবী ভাঙছি দেশের নামে, দেশ ভাঙছি রাজ্যের নামে, রাজ্য ভাঙছি ভাষার নামে, সংসার ভাঙছি অধিকারের নামে!
এই ভাঙার খেলায় সামিল। আমরা সবাই, সব্বাই, প্রত্যেকে! কেউ জানে না এর শেষ কোথায় তবুও লড়েই যাচ্ছি! জানি না এতে কার ভালো হচ্ছে, তবে মানবিকতার যে ভালো হচ্ছেনা তা হলফ করে বলতে পারি!
-
মুক্তগদ্য- পরিহাস
পরিহাস
– পায়েল সাহুলোকটার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটা এসে দাঁড়ালো বেশ বড়ো একটা ঘরের দরজায়, মেয়েটাকে ঘরে ঢুকে দরজা আটকাতে বলেই লোকটা তাড়াহুড়ো করে চলে গেলো অফিসে।ঘরটায় দুটো চৌকি পাতা, পাশাপাশি। বিরাট মোটা মোটা দুটো তোষক গুটিয়ে রাখা, পাশে ওয়াড় | বালিশ, পাশবালিশ, সেগুলোর ওয়াড়, চাদর স্তুপ করে রাখা। মেয়েটার সঙ্গে আনা বেশ কয়েকটা ব্যাগ, তাতে মা বাবার ভরে দেওয়া প্রচুর জিনিস।
তেইশ পেরোনো মেয়েটা ওই লোকটার মাত্র এক মাস আগে বিয়ে করা বৌ, সদ্য কলেজ পাশ করে কম্পিউটার ট্রেনিং নিচ্ছিলো….. আর এই ঘরটা ওই লোকটার অফিসের কোয়ার্টার |
মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকে না, জীবনে প্রথমবারের জন্য সম্পূর্ণ একার চেষ্টায় মোটা তোষকগুলো খুলে ওয়াড় পরিয়ে পেতে ফেলে, চাদর পাতে, সুন্দর করে বালিশ সাজায় |
একটা একটা করে ব্যাগ খুলে জিনিস সাজাতে থাকে তার নতুন সংসারে, “সংসার” সেদিন হয়তো সে মানেটাও বুঝতো না শব্দটার। হয়তো সেই সুযোগটাই নিয়েছিল তার স্বামী, সমস্ত কাজেই হাত তুলে দিয়ে ওই ছোট্ট মেয়েটার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতো সমস্ত দায়িত্ব। এমন নয় যে স্বামী ভদ্রলোক জানতেন না যে মেয়েটি বাবা মায়ের একমাত্র ভীষণ আদুরে সন্তান, তার কোনো কাজ করার অভ্যাস নেই, সে কিছুই প্রায় জানে না, রান্নাটুকুও না, সব কিছু জেনেই তিনি বিয়ে করেছিলেন।
মেয়েটির বাবা মাও এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন কারণ ছেলেটি মেয়েটির থেকে বয়সে বেশ বড়ো, ভেবেছিলেন তাঁদের মেয়েকে সামলে রাখবে জামাই, যত্নে রাখবে।অফিস ক্যাম্পাসে ঘর হওয়ায় স্বামী ভদ্রলোকটি যখন তখন চলে আসতেন তাঁদের নিজের ঘরে, না না নতুন বৌয়ের টানে নয়, খাবার খেতে, তার না কি ক্ষিদে পায় বারবার, সদ্য বিবাহিতা মেয়েটি আতংকিত হয়ে পড়তো তার স্বামীর আচরণে, সারাদিনে কতবার কি কি রান্না করে তাকে খেতে দিতে হবে ভেবেই তার কান্না পেতো, readymade খাবার তার স্বামী খাবেন না, তাকে বেশ গুছিয়ে পরিবেশন করতে হবে। আর না দিলেই অপমানজনক কথা তার জন্য অপেক্ষা করতো, হ্যাঁ, যদিও বিয়ের বয়স মাত্র একমাস |
মেয়েটা ভাতের ফ্যান গালতে পারতো না, বেশিরভাগ দিন তার হাতে গরম ফ্যান, গরম ভাত পড়ে যেতো, বঁটি দিয়ে সবজি কাটতে পারতো না, তবু সময়ের মধ্যে ভাতের থালাটা তাকে সাজিয়ে দিতেই হতো।
“ভরা পেটে ফল ” তাই স্বামী ভদ্ৰলোকটি দুপুরে খাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে পা নাচিয়ে বৌকে আদেশ দিতেন তাকে ফল কেটে দেওয়ার। অবাক লাজুক মেয়েটি চুপ করে দেখতো তার স্বামীর ব্যবহার, প্রায় প্রতিদিন আঙ্গুল কেটে রক্ত বেরিয়ে গেলেও জানতে দিতো না সে তার স্বামীকে। তার মনে পড়তো মায়ের কথা, যিনি ফল কেটে মেয়ের মুখের সামনে ধরে সাধাসাধি করতেন খাবার জন্য। নাহ, মেয়েটি ভুল করেও স্বামীর জন্য কাটা ফল নিজে খেতো না, নিজে নিয়ে খাওয়ার অভ্যাস যে তার নেই, অবশ্য তাকে সাধবার কেউ ছিলোও না |
মাস তিনেক পর মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে, প্রচন্ড জ্বর আসে তার, সুদূর রাজ্য থেকে মেয়েটির বাবা গিয়ে তাকে নিয়ে আসেন নিজের কাছে, মা বাবার সেবা যত্নে মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠলেও স্বামীর কাছে আর ফিরতে চায় না, আতংকিত হয়ে পড়ে, যদিও ভুল করেও কখনো প্রকাশ করেনা মা বাবার কষ্টের কারণে |
তবু “সংসার” ছেড়ে থাকতে নেই তাই মেয়েটিকে আবার ফিরতেই হয় তার আশ্রয়ে। গর্ভবতী হয়ে পড়লেও যেখানে তার স্বামী চিকিৎসা করাতে চান না লোকলজ্জার ভয়ে। হ্যাঁ ওনারা বিবাহিত, তবু সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী অন্তসত্ত্বা, লোকে কি বলবে! তাই ডাক্তারের কাছে না নিয়ে গিয়ে লোকটি মেয়েটিকে তার বাপেরবাড়িতে রাখতে আসেন।
“কাঁচা নাড়ি” পথের ধকল সহ্য করতে না পেরে রক্তপাত শুরু করে, নতুন জীবনের সব আশা নিস্প্রাণ হয়ে পড়ে।মাঝখানে কেটে গেছে পনেরোটা বছর|
মেয়েটি এখন একটি সন্তানের মা। বিয়ের দু’ বছর পর গর্ভবতী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার স্বামী বিছানা আলাদা করে নিয়েছিলেন, সেদিনের সেই অল্পবয়সী মেয়েটির শারীরিক চাহিদার কথা বিন্দুমাত্র না ভেবেই। শারীরিক দূরত্ব শুরু থেকেই ছিলো, এই ঘটনায় মানসিক বন্ধনটুকুও কেটে গেলো। পুরো গর্ভাবস্থায় ভুল করেও স্ত্রীকে সময় দেওয়ার ভুল করেননি ভদ্রলোক |
অবলা লাজুক মেয়েটির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আজ সেই মেয়েটি বেশ জাদরেল গিন্নী। ভয়ংকর তার গলার জোর। নিজের চাহিদা, ইচ্ছে কিভাবে পূরণ করে নিতে হয় এখন সে বেশ ভালোই জানে এখন। পরিস্থিতি তাকে শিখিয়ে দিয়েছে। মানসিক শান্তি, শারীরিক তৃপ্তির জন্য সে এখন আর তার স্বামীর মুখাপেক্ষী নয় কোনোভাবেই।
গত দশ বছর আগেই তার সঙ্গে তার স্বামীর মানসিক বিচ্ছেদ ঘটেছে চিরতরে। পরিবর্তে সে শিখে নিয়েছে নিজের স্বামীকে ঘৃণা করতে, তাকে দমিয়ে রাখতে, শিখেছে দাপট দেখাতে |
সব ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলো শুরুতেই, চেয়েছিলো নিজের জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাতে, পারেনি, পারেনি নিজের মায়ের চরম শাসনে। দুর্ব্যবহারে, মানসিক আশ্রয়হীনতায় ভুগতে ভুগতে একের পর এক পুরুষের কাছে খুঁজে গেছে শুধু ভালোবাসা, মানসিক আশ্রয়।
“সংসার”টা আজ সে নিখুঁত ভাবে করে, এতটুকু ত্রুটি নেই কোথাও, রকমারি রান্নায় সে এখন একাই একশো।পাশের ঘরের বিছানায় লেপের ওয়াড় পরাতে পরাতে স্বামী ভদ্রলোকটি বলে ওঠেন, “খুব মুশকিলের ব্যাপার এটা, উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে।” মেয়েটি একবার উঁকি মেরে দেখে আসে পাশের ঘরে, স্মৃতির ঝলকানিতে তীব্র ঘৃণায় সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে মুচকি হেসে ফিরে যায় নিজের ঘরে, যেখানে শুধু মাত্র তার অধিকার, যেখানে সে তার সন্তানের সঙ্গে থাকে।
-
মুক্ত গদ্য- কিছু কথা ও চিন্তা
কিছু কথা ও চিন্তা
– মঙ্গল মন্ডলঅন্ধকারটা আলো হারা।সে কোনো দিন আলোর দেখা পায় না, আলোতে তার মৃত্যু।যেমন লবণ জলে মৃত্যু বরণ করে ঠিক তেমনি অন্ধকার আলোতে । কিন্তু ভেবে দেখো আলোর উৎসগুলো সব ফুরিয়ে গেলে পড়ে রবে ওই দৈত্য অন্ধকার ,যা কখনো ফুরাবে না।,আলো তাকে ক্ষণিকের জন্য মৃত্যু দিতে পারে ।ঠিক যেন কিছু ক্ষণের জন্য জ্ঞানহারা করে রাখার মতো।আসলে অন্ধকার অমর হয়।যদি জীবনটাও বর্ণনা করা যায় , দেখা যায় জড় পদার্থের থেকে সৃষ্টি এই শরীর ক্ষণিকের জন্য আলোকিত হয়ে সজীবতা ধারণ করে ।যেই তার মাঝে থেকে প্রাণটা চলে যায় সেই তার মাঝে পুনরায় পূর্বাবস্থা জড় পদার্থে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।মূল কথা হলো যে জড় স্থায়ী আর জীব ক্ষণিকের জন্য।অপরদিকে অন্ধকার স্থায়ী আর আলো ক্ষনিকের জন্য।
একটা নক্ষত্রের সব আলো ফুরিয়ে গেলে সে অন্ধকার জগতে প্রচন্ড দৈত্য হয়ে ওঠে,আর ব্ল্যাকহোলের রূপ নেয় ।নঞর্থক শক্তি চিরস্থায়ী ,সদর্থক শক্তি হয়তো বাঁধ হয়ে তাকে ক্ষণিকের জন্য আটকে রাখতে পারে মাত্র,যখনই সদর্থক শক্তি ম্লান হবে পুনরায় নঞর্থক শক্তি প্রকাশ পাবে।তাই যে কোনো মানুষের মধ্যে সদভাবনার চেয়ে অসদ ভাবনা প্রভাবিত হয়ে থাকে বেশি।
সততা অসততাকে কিছু ক্ষণের জন্য অস্বচ্ছ করতে পারে মাত্র, কিছু লোকের প্ররোচনায় হোক আর নিজস্ব ষড়রিপু বিঘ্নিত হওয়ার কারণেই হোক একটা মানুষ অসৎ হয়েই পরে কিন্তু তার কোনো দোষ নেই।অসততার মধ্যে ষড়রিপুর দুর্বলতা বাস করে, মায়াটা ওইখানেই বাঁধা পড়ে যায়।চিরসত্য কিছু কথা আলোচনা করে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে , সমস্ত সংসারে অন্ধকার লুকিয়ে থাকে শুধুমাত্র আলোর জন্য ।কিন্তু কেউ আলোকে সর্বদা ধরে রাখতে পারে না তাই পুনরায় অন্ধকারের জাগরণ ঘটে । যেদিন আলো আবার ফুটে ওঠে অন্ধকার আপনা আপনি হারিয়ে যায় , কিন্তু বিলুপ্ত কোনো দিন হয় না।তোমার মধ্যে আলো জাগিয়ে রাখো যতটা পারো।কিন্তু কখনো ভেবো না অন্ধকার শেষ হয়ে গেছে। তবে আলোই তার একমাত্র নিরাময়।
-
মুক্ত গদ্য- ভালোবাসার বৃত্ত
ভালোবাসার বৃত্ত
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়সবার মনের মধ্যে একটা বৃত্ত থাকে,জানো?
ভালোবাসার বৃত্ত।
বৃত্তের কেন্দ্র থেকে যত বড় ব্যাসার্ধ নেবে বৃত্তটা ঠিক ততটাই বড় হবে আর ভালোবাসা ঠিক ততটাই বাড়বে।যদিও জানি,তুমি ভালোবাসার বৃত্তের কেন্দ্রে রাখবে তোমার কিছু প্রিয় মানুষকে…তোমার পছন্দের।
তাদেরকে তুমি একটু বেশীই ভালোবাসবে।
প্রশ্রয় দেবে,আদর দেবে।তাদের দোষগুলোকেও ঢেকে দেবে ভালোবাসা দিয়ে।মুখে বলবে –কি আর এমন দোষ করেছে? সেই তাদের জন্যই তোমার যত পক্ষপাত। বাইরে থেকে লোকে কিন্তু ঠিক টের পাবে তোমার এই পক্ষপাতদুষ্ট ভালোবাসাকে।কেন্দ্র থেকে দূরে থাকা তাদেরকেও তুমি ভালোবাসবে…তবে একটু কম।এইভাবেই যত পরিধির দিকে যাবে ততই তোমার ভালোবাসা কমতে থাকবে।
হয়তো কিছু কিছু মানুষের সামান্য দোষত্রুটিও তুমি সহ্য করতে পারবেনা।
সামান্য মতের অমিল হলেই ধুন্ধুমার কান্ড বাঁধিয়ে বসবে, তারপর তাকে ছুঁড়ে ফেলতে চাইবে বৃত্তের বাইরে।কিন্তু জানো, পৃথিবী নামক বৃত্তটাও কিন্তু তার সমস্ত জিনিষকে কেন্দ্রের দিকে টেনে রাখে প্রবল আকর্ষনে। যদিও তুমি তা পারবেনা কারণ তুমি তো সর্বংসহা পৃথিবী নও। কিন্তু তাও জানি একটা টান কিন্তু থেকেই যায় আর সেটাই হলো ভালোবাসার টান…তা সে যতই অল্প হোক না কেনো।
আবার তুমি যখন কাউকে ফেলে দেবে,ভুলে যেতে চাইবে,অস্বীকার করবে,অগ্রাহ্য করবে, এড়িয়ে যাবে — সে তখন হয়তো তোমার বৃত্তের পরিধির বাইরের দেওয়াল ঘেঁষে বসে থাকবে শুধু তোমার একটা ডাকের অপেক্ষায়।।
-
মুক্তগদ্য- নস্টালজিক
নস্টালজিক
– অমিতাভ সরকারসুমনা তোর দ্বীপ আমি কবে দখল করতে চেয়েছিলাম সেই কিশোরী বেলায়। কস্তুরীর গন্ধ ছিল। পাগলামি ছিল কিনা জানি না। বাষ্প ছিল, নীল সমুদ্রের গহীন থেকে বাষ্প ছিল। চাপ চাপ লাভা নির্গত হয়ে গলে গলে সমুদ্রে পড়ছিল।
তীব্র যন্ত্রণায় পাহাড় থেকে ঝরে পড়ছিল জল। নাম পেয়েছিল ঝর্ণা। সুমনা তুই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তিস। নিস্পলক দৃষ্টিতে গ্রাস করতে চাইতাম। তীব্র গতি ছিল ঝর্ণার জলে। সমুদ্রের ডাকছিল। কলকলিয়ে নুপুর বাজিয়ে চলে গেলি।
নদীপারের গাছটা এখন বৃদ্ধ হয়েছে। বৈকালিক ভ্রমণে গাছটার নিচে এসে দাঁড়ালে কস্তুরীর গন্ধ আসে, ঝর্নার নৃত্য, কলকলানি, কৈশোর উত্তীর্ণ ছেলেমানুষি। নীল সমুদ্রের বাষ্প চশমা গলিয়ে দু’টো নয়ন ভার করে। দীর্ঘশ্বাস পড়ে। বিশ্বাস কর সুমনা।
-
মুক্ত গদ্য- ব্যথার সান্নিধ্য
ব্যথার সান্নিধ্য
– অমিতাভ সরকারমোমবাতি জ্বলতে জ্বলতে প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেল। এখনো টিপ টিপে আলো আছে। নিভে যাবে কিছুক্ষণ বাদে। এখন সে চাইছে পলতেটা উস্কে দেক কেউ; পৃথিবীকে আরো কিছুটা আলোময় দেখাই।
ব্যথা তোর অপেক্ষায় আমি আছি অন্তত এই মুহূর্তে তোকে দেখে যেতে চাই। প্রতীক্ষার হোক অবসান। তুই কি শুধু ব্যথা হয়েই থেকে যাবি।
তোর অস্তিত্ব দেখাবি না? তোর আভিজাত্য দিয়ে অন্তত একবার আমাকে মথিত কর।এভাবেই কাউকে চাইলে পাওয়া যায় না। তার দেয়া কষ্ট পেতে চাইছি সে কষ্ট দিতে চাইছে না।
কেউ ভালোবাসা দিতে চাইছে সেটাও নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। মোমবাতি আলো দিতে চাইছে সেও প্রায় নিভে যাবে কিছুক্ষণ বাদে।আলো দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা তার। জীবন এভাবেই রচিত হয়। চাওয়া না চাওয়ার দোলাচলে। অনেক কিছুই পাওয়া যায় জীবনে। আবার অনেক কিছু চেয়েও পাওয়া যায় না। তবুও ব্যথার প্রকট অনুভূতি চাই।