মুক্ত গদ্য

  • মুক্ত গদ্য

    মুক্ত গদ্য- বোবা সমাজ

    বোবা সমাজ
    – দেসা মিশ্র

     

     

    বোবা মেয়ে জন্ম নিলে, – কত দুঃখ, কত রাগ কত অভিশাপ।
    যে মা সেই বোবা মেয়ের জন্ম দেয়,
    তার দুঃখ কেউ বোঝে না, আবার তাকেই সবাই দোষারোপ করে

    আবার সুস্থ মেয়ে জন্ম নিলে আমাদের এই মুখোশ ধারি সমাজ জানে –

    ঠিক কতটা আঘাত দিলে একটি মেয়ে বোবা হয়ে যাবে।

    পরিস্থিতির চাপে মেয়েদের চুপ থাকতে হয়, তবে সে মেয়ে লক্ষ্মী হয়।
    মিথ্যেটাকেও সত্যি বলতে  হয় আর ভুলটাকে ও ঠিক।

    প্রতি নিয়ত আসে রাত।
    নিকষ কালো রাত।

    আমরা তুলসি তলায় শুদ্ধ বস্ত্রে প্রদীপ আলো জ্বালি।

    আমরা অন্ধকার ঘরে বৈদ্যুতিক আলো জ্বালি।

    আমরা কেন মনে আলো জ্বালাই না!

    আমরা এখনো অন্ধকারে আছি।
    খুব অন্ধকার।
    শুধু রাতে নয়, দিনের বেলাতেও মনে- গভীর অন্ধকার।

    সূর্যের তো দোষ নেই,
    সে তো পুড়ে পুড়ে সোনা হতে বলে।
    আত্মার শুদ্ধ করণ।

    আমরা আজ নীরব দর্শক।
    কাঠের পুতুল নাচ দেখতে ভালোবাসি।
    কাঠের পুতুল মতো নাচতে ভালোবাসি।

    আমরা প্রত্যেকেই প্রতি নিয়ত আত্মহত্যা করছি, কখনো শরীর কখনো মন।

    আমরা দুর্বল এর অস্ত্র হতে শিখিনি, কিন্তু আমদের দ্বারা খুব সুন্দর একটা বোবা সমাজের জন্ম হচ্ছে।

    এই চির অন্ধকার থেকে মুক্তি পেতে হবে।
    আলোর পথ খুঁজতে হবে।

    মানুষ – শ্রেষ্ঠ জীব, তবে
    আমরা কি একটা ভালো পৃথিবীর জন্ম দিতে পারি না?

    যেদিন এই কাঠের পুতুল গুলি সত্যি মানুষ হবে,
    যেদিন বোবা সমাজ মুখ খুলবে,
    অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
    অসহায়দের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেবে।
    সব পাপের বিনাশ হবে।
    মানুষ ভালোবেসে মানুষের পাশে দাঁড়াবে,
    সেদিন সৃষ্টি কর্তার তৃতীয় চক্ষু খুলে খুশির আলো বেরোবে।

    প্রতিটি শুদ্ধ আত্মার আহ্বানে আমদের নীল বসুন্ধরা হাসবে।

  • মুক্ত গদ্য

    মুক্তগদ্য- কার্তিকের সোনালী মেঘ

    কার্তিকের সোনালী মেঘ
    অমিতাভ সরকার

     

     

    মুখ নিচু করে হাঁটতে হাঁটতে মুখ তুলে দেখো,
    হালকা হাসি লেগে থাকে ঠোঁটে কি যেন বলতে চেয়েও বলা হয় না তোমার।
    কার্তিকের হিমেল সকালটা রেখেছিলাম তোমার জন্য;–শিশিরের মেঘ থাকবে পাকা ধানে, পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি, তোমার সোনালী চুল আর পাকা ধান একাকার হয়ে থাকবে। আমি হেমন্তের ভেজা চোখ দিয়ে তোমাকে দেখবো কত অপরূপ তুমি। রজনীগন্ধা ফুটতে শুরু করেছে, টগর তো আছেই, কাগজ ফুলের নকশী কাঁথা সেলাই হয়েছে চারিদিকে।
    এখন কার্তিকের অন্ধকার রাত। কার্তিকের পাকা ধানের ঘ্রান ম ম করছে। হাতছানি দিয়ে ডাকছে পরিযায়ী পাখির দল কে। আকাশ বিদীর্ণ করে ছুটে আসছে পাখির দল, ধীরে ধীরে নেমে পড়ছে কার্তিকের হিমেল মাঠে। রচনা করে ফেলবে অস্থায়ী বাসস্থান আশপাশের গাছপালায় পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে। আমি আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে ফুটন্ত তারাদের পাশে পাশে তোমাকে খুঁজে ফেলি। কখনো বা তোমার কথা ভেবে ভেবে পার করি রাত।
    হেমন্তের শিশির ভেজা সকালে কাক ডাক দেয় কাকা করে, হয়তোবা শিশিরকে মেঘভেবে ময়ূরের দল পাখনা তুলে নৃত্য শুরু করে। ধীরে ধীরে ভোর হয়। সূর্য ফলক হঠাৎ ধানে ছড়িয়ে পড়ে। ওপারে তুমি সোনালী চুল মেলে নিচু চোখের আড়াল থেকে দেখে যাচ্ছো, তোমার অবক্ত বাসনায় কি যেন মায়ার আকর্ষণ। নতুবা হেমন্তের মেঘ।

  • মুক্ত গদ্য

    মুক্তগদ্য- কানামাছি ভোঁ ভোঁ নেই আর…

    কানামাছি ভোঁ ভোঁ নেই আর…
    – সুমিত মোদক

     

     

    কানামাছি ভোঁ ভোঁ / যাকে পাবি তাকে ছোঁ — কথাগুলি ছড়িয়ে পড়ত খেলার মাঠ জুড়ে। সে সময়টা আমাদের। আমাদের ছেলেবেলায়। খেলাটির নাম- কানামাছি খেলা। তখন গ্রামে গ্রামে এ খেলাটি বেশ জনপ্রিয় ছিল শিশু-কিশোর ছেলে-মেয়েদের মধ্যে। ছোটদের সঙ্গে বড়রা কেউ কেউ এ খেলাতে অংশ নিতো। তার ফলে খেলাটি আরও আনন্দ মুখর হয়ে উঠতো। বিশেষ করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় এ খেলার প্রচলন ছিল। একেবারে গ্রাম্য খেলা। শিশুদের খেলা। আনন্দ উপভোগের খেলা।

    এ খেলাতে এক জন প্রথম কানামাছি হতো। সেটা ঠিক হতো ‘হে-এ-হে-তা ‘ পদ্ধতিতে। প্রথম যে কানামাছি হতো তার চোখ দুটি বেঁধে দেওয়া হতো গামছা দিয়ে। তারপর তাকে এক পাক ঘুরিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। একটু দূরে অন্যরা গোল হয়ে তাকে ঘিরে থাকতো। দু’ চোখ বাঁধা কানামাছি হাতড়ে হাতড়ে খেলার সঙ্গীদের ছোঁয়ার চেষ্টা করতো। কারণ, যাকে ছুঁয়ে তার নাম বলতে পারলে তার পর সে হবে কানামাছি। খেলার অন্য সঙ্গীরা কানামাছির পিছন থেকে, পাশ থেকে ছুঁয়ে পালাতো। সে সুযোগে কানামাছি কাউকে ছুঁয়ে তার নাম বলতে পারলে সে ‘মোর’ হয়ে যেত। তখন সে হতো কানামাছি।

    সে আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগের কথা। এখন গ্রামের খেলার মাঠ গুলি হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে গেছে শিশুর শৈশব। খেলার বেলা বিকাল বেলা। কানামাছি খেলা। গ্রাম্য শিশুর গ্রাম্য খেলা। আজ আমাদের কাছে থেকে গেছে কেবলই স্মৃতি হয়ে।

  • মুক্ত গদ্য

    মুক্তগদ্য- আলোকবর্তিকা

    আলোকবর্তিকা
    -সুজিত চ্যাটার্জি

     

    পাহাড়ের গুহায় নির্জনে গভীর সাধনায় সাধু সিদ্ধিলাভে মুক্তি প্রাপ্ত হলো। তাতে মানব জাতির কি এসে গেল? সে তো সাধুর নিজস্বতা। সেই জ্ঞান উপলব্ধি যদি বহু মানুষের হিতসাধন না করে, তবে তা মূল্যহীন। নিজস্ব সৃষ্টিধর্মী চেতনা যদি বহু মানুষের মধ্যে বিস্তারিত না হয়, তবে তা নিজস্ব হয়েই থাকে, তা নিয়ে জনমানস চিন্তিত হয়না।
    জগতের শ্রেষ্ঠ কবি, সাহিত্যিক লেখকগণ, যদি তাদের রত্নভান্ডার জগতবাসীকে বঞ্চিত করে নিজস্ব সিন্দুকে বন্দী করে রাখতেন, তাহলে কি মানবজাতি তাদের জানতে কিংবা চিনতে পারতেন। সাধক সূফীগণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাদের সুললিত সুচেতন বাণী, জগতবাসীকে শিক্ষিত দীক্ষিত করেছে। সভ্যতার বিকাশ সাধন সহায়ক হয়েছে।
    তাই লুকিয়ে থাকা বা লুকিয়ে রাখা নয়। মনের প্রদীপ মনে জ্বালিয়ে নিভিয়ে ফেলা নয়। প্রকাশ করো, আলোকিত করো, এ পৃথিবী তোমারও। এসেছো যখন, আলো জ্বেলে যাও।
    চলে যাবো শেষ কথা, এসেছিলাম, অনেক বড়ো কথা। সুচিহ্ন রেখে যাবো, এই হোক প্রতিজ্ঞা।

  • মুক্ত গদ্য

    অবাক পৃথিবী

    অবাক পৃথিবী
    -বিশ্বদীপ মুখার্জী

     

    স্বচ্ছ নীল আকাশের নিচে চারিদিকে সবুজে সবুজ মন্দ লাগছিল না দেখতে। সময়টা বিকেল, তাই সূর্যের কাজ শেষের দিকে। ইতি মধ্যেই সোনালী রং মেখে সে অস্তের পথযাত্রী। খোলা মাঠে বেছনো সবুজ ঘাসের ওপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য গাছ। কোনও গাছ পাতায় ভরা তো কোনও গাছ নিঃশব্দে নিজের দুর্দশার কথা বলছে। কোনও কোনও জায়গায় ঘাস প্রায় তিন থেকে চার ফুটের মতো উঁচু হয় গাছে। শহরের বাইরের এই প্রান্তকে লোকেরা জঙ্গল বলেই চেনে। জঙ্গলের পাশ দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। সারা দিন অজস্র গাড়ির যাওয়া আসা সেটা দিয়ে। রাস্তা দিয়ে পরিস্কার শোনা যায় জঙ্গলে বাস করা অসংখ্য পাখির কলরব। পাখিরা আসতে আসতে নিজের ঠিকানার দিকে ফেরত আসতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আজ তাদের কলরব অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি মনে হচ্ছে। কিছু পাখি তো নিজের বাসাতেও যায়নি। বাসার আশেপাশে উড়ে চলেছে এবং নিজেদের ভাষায় কী সব যেন বলছে। সেই নীল রঙের ছোট্ট পাখিটা এখনও নিজের বাসার ভেতরে ঢোকেনি। এক বার গাছের ডালে বসছে, পরক্ষণেই গাছের আশেপাশে উড়তে শুরু করে দিচ্ছে। গাছের নিচের দৃশ্যটা দেখে সে হয়তো ভয় পেয়ে গেছে। গাছের নিচে কেউ যেন শুয়ে আছে। এক নজর দেখে নির্জীব বলেই মনে হয়। গায়ের কাপড় এলোমেলো …. অর্ধনগ্ন বললেই বেশি ভালো হয়। গাল, ঠোঁট, গলা, স্তন এবং শরীরের নিম্নভাগে গভীর এবং টাটকা ক্ষতচিহ্নর দাগ। ছেঁড়া কাপড়ের ফাঁক দিকে রক্ত গড়িয়ে এক স্থানে জমা হয়ে গেছে। জমা রক্ত এবং নিথর শরীরের চারিপাশে ভনভন করছে অজস্র মাছি। দেহে বুকের ওপর শুয়ে আছে এক ছোট্ট শিশু। নিষ্প্রাণ দেহের উন্মুক্ত স্তন থেকে চুষে নিতে চাইছে অদৃশ্য দুধ। অদৃশ্য দুধ বলা কি ঠিক হবে? তার ছোট্ট-ছোট্ট দুটি ঠোঁট পাচ্ছে দুধের স্পর্শ। কিন্তু এ দুধের স্বাদ ও রং ভিন্ন। আঁশটে স্বাদ এবং রং গাঢ় লাল।
    হঠাৎ পাশের রাস্তা দিয়ে লোকের দল দেখা গেল। অনেকের হাতে একটা করে পতাকা। প্রত্যেকেই প্রায় চিৎকার করে বলছেন – ‘চলবে না, চলবে না। নারী নির্যাতন চলবে না।’

     

  • মুক্ত গদ্য

    কালো মেঘের আড়ালে

    কালো মেঘের আড়ালে
    -বিশ্বদীপ মুখার্জী

     

    আমি কবি নয়। শব্দের সাথে খেলতে পারি না। চিন্তা- ভাবনা সীমিত। কল্পনা শক্তির অভাব বোধ করি। হঠাৎ আকাশে কালো মেঘ, সাথে প্রলয়ংকরী ঝড়, তার পর বৃষ্টি। এই দৃশ্য কবি অথবা লেখক- এর চিন্তা – ভাবনাকে নিয়ে যায় বহু দূর। তাঁদের কলম থেকে বেরিয়ে আসে অসংখ্য অনবদ্য সৃষ্টি। কিন্তু আমার মধ্যে সেই গুণ কোথায় ? এখনও আকাশে কালো মেঘ দেখলে বুকটা ধড়াস করে ওঠে। সাথে যদি ঝড় ওঠে তাহলে তো কথাই নেই। মাথা ঝিমঝিম করে। চোখের সামনে অন্ধকার দেখি।
    মনে পড়ে যায় দু’বছর আগেকার সেই কাল- বৈশাখী । “কাল” নামটা চরিতার্থ করে, কাল হয়ে এসেছিল আমার জীবনে। অপয়া প্রমাণ করে দিয়েছিল আমার মেয়েকে? আমার মেয়ের চোখের জল কি কালবৈশাখীর সেই তুমুল বৃষ্টির থেকে কম ছিল? কাল বৈশাখীর কালো, বীভৎস মেঘের মত আমাদের শীর্ষে নেমে এসেছিল সংকটের কালো মেঘ। তছনছ হয়ে গিয়েছিল সব আয়োজন। কে জানতো, সকালের রৌদ্র দুপুর হতে না হতেই এমন পরিহাস করবে আমার সাথে? মেঘের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে দেখবে প্রকৃতির তাণ্ডব। অনেক কষ্টে উপার্জন করা অর্থ চকিতে মিশে যায় মাটিতে। একটি মাত্র মেয়ে, ভেবেছিলাম বিয়েটা ভাল করেই দেবো। কতই বা ক্ষমতা আমাদের? তাও কিছু অর্থ সঞ্চয় করে, কিছু ধার-দেনা করে বিয়ের আয়োজনটা মন্দ হয়নি।
    হঠাৎ দেখলাম, পরিবর্তন হতে শুরু হল আকাশের রং। কোথা থেকে অল্প-অল্প মেঘ এসে বাঁধলো জমাট। সব ঠিক ছিল। কী আর হত? খুব বেশি হলে বৃষ্টি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম এটা কালবৈশাখী। নিজের আসল রূপে এলে , এর থেকে সাংঘাতিক কিছু হয় কী? আকাশ হয়ে গেল কালো। যে হাওয়া এতক্ষণ দেহে স্ফূর্তি দিচ্ছিল, সেটা নিল নিষ্ঠুর রূপ ।
    এক দীনের স্বপ্ন- এর ইতি হতে এর থেকে বেশি কী প্রয়োজন ?
    নিজের ভগ্ন স্বপ্নের অবশেষ কুড়াবার সময় খবর পেলাম, বিকট ঝড়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে বরযাত্রীর বাহন । ঝড় যেন একটু শান্ত হল । খানিক পর কালো মেঘের আড়ালে সূর্য যেন উঁকি মারলো । মিটি-মিটি হাসছে সে ।
    গ্রাম-গঞ্জে এহেন ঘটনার পর আজেকের দিনেও মেয়ের ওপর দিয়ে বিকট ঝড় যায় । সেই ঝড় কালবৈশাখীর থেকেও বেশি যন্ত্রণাদায়ক। কিছু দিন আগে নিজের মেয়ের দেহকে অগ্নি দেবতার ক্ষুধার্তে সমর্পণ করি। ফেরার পথে আবার সেই কালবৈশাখী। কে জানতো, এই কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে ছিল আমার সর্বনাশ ।
    কালবৈশাখী কে নিজের কলমের ডগায় রেখে যে যাই অসাধারণ সৃষ্টি করুক না কেন, আমার জন্য কাল বৈশাখী শুধু মাত্র অভিশাপ ভিন্ন আর কিছুই না ।

     

     

  • মুক্ত গদ্য

    সিনিয়ার সিটিজেন

    সিনিয়ার সিটিজেন
    -শচীদুলাল পাল

     

    দৈনন্দিন জীবন বড়ো একঘেয়ে ।ভাবি কবে ষাট বছর পূর্ণ হবে।অবসর নেব। হেসে খেলে জীবন কাটাবো।সিনিয়র সিটিজেন ক্লাবে পা দেব। নামটাও বেশ ভালো ‘সিনিয়ার সিটিজেন’। ভারিক্কি একটা ইমেজ।বেশ আরামে থাকবো। পায়ের উপর পা তুলে , চোখ বুজে মেটাবো মনের আশা।বাসে ট্রেনে রাস্তায় পাবলিক প্লেসে বাড়ীতে যেথা সেথা দাঁড়াবো তাদের মাঝে তারা সমীহ করে সসম্মানে আসন ছেড়ে দেবে।আরও কত আশা মনে।অবশেষে একদিন ষাট পার হলাম। হয়ে গেলাম গ্লামারার্স সিনিয়র সিটিজেন।
    কিন্তু একি হলো?যেসব আমার কল্পনাতে ছিল বাস্তব কিন্তু অন্য কথা বলে।উল্টো হতে লাগল।
    প্রথমে ব্যাঙ্ক ঘোষনা করল অবসর। আমি হয়ে গেলাম পর।
    নিজেকে আমি উজাড় করে দিয়েছিলাম পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে,সামাজিকতায়।
    চল্লিশ বছরে ভেবেছিলাম শক্ত হয়ে গেছে গাঁট।কিন্তু অবসর ঘোষনার সাথে সাথে সব গুঁড়িয়ে গেলো।রাস্তাঘাটে কনিষ্ঠরা সম্মানের বদলে অবজ্ঞার চোখে দেখতে শুরু করলো।মনে হয় ওরা সিনিয়র দের সম্মানের বদলে অবজ্ঞা বেশী করে করে।মনে করে অপদার্থ অচল সমাজের এক বস্তু।বাসে ট্রেনে সিনিয়র সিটিজেন লেখা দেখে যদি দাঁড়াই, আমাকে দেখে ঘুমিয়ে পড়বে। যদি কেউ জেগে থাকে বলবে আপনার চেয়েও কেউ যদি বুড়ো আসে তাহলে ছাড়বো সিট।
    তর্ক করে কী হবে? তার চেয়ে ক্রোধটা দমন করে রাখি।
    বাড়ীতে গিন্নির কথাও গেছে পালটে।বলে “সারাদিন তুমি করোটা কী?বাড়ীর কাজগুলোতো সব নিজের হাতে করতে পারো।এতদিন আমি শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সংসারের ঘানিটা টানলাম। এখন যখন তোমার কাছে কাজকর্ম নেই তখন ঝাড়পোঁছ রান্নাবান্না টা তো করতে পারো।শরীরটা ফিট থাকবে মনটা সতেজ থাকবে সময়টাও কাটবে।আমি বরঞ্চ দুবেলা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াই।তবে দেখো দুবেলা যেন খেতে পাই! এতদিন ত ঘুরেই বেড়ালে এবার নাহয় আমিই ঘুরে বেড়াই।”
    আমই বললাম ” আমি ত এতদিন গাধার মত খেটেছি, টাকা জুগিয়েছি, বাইয়ের যতকাজ সবই তো করেছি, শারীরিক মানসিক চাপ তো আমিই সামলেছি।”
    কিন্তু বলে কী হবে?
    ছেলে মেয়েরাও কম যায়না। বলল”বুড়ো হয়েছো চুপচাপ থাকো,হাইটেক যুগ।তোমার পুরানো চিন্তাধারা এ যুগে অচল।আমাদের সাথে চলতে যদি না পারো ঠাকুরঘরে গিয়ে হরি নাম করো।”
    হে ভগবান। আজ নাহয় অবসর নিয়েছি। কিন্তু কর্মজীবনে? নামেই ছিল দশটা পাঁচটা। অনেকের কাজ সেরে উঠতে উঠতে বেরতে বেরতে হয়ে যেতো নটা দশটা। কাজের মেয়ে সেও বুঝে গেছে বাবু বুড়ো হয়ে গেছে। বাবুর এ বাড়ীতে কথার মর্যাদা কম। কোনো কিছু চাইলে বলে “মার কাজটা আগে তোমারটা পরে”।
    তখন ভাবি পুরানো চিন্তাগুলো সব ভুলে নতুনদের সাথে মিশে যাবো নতুনদের সাথে মিলে মিশে জগৎটাকে দেখব নতুন করে তাদের লেবেলে পৌঁছে। গতি শক্তিতে তারা জিতবেই এটা মেনে নিলাম একদিন বললাম “তোমাদের সাথে আমাকেও নিও গতি শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও অভিজ্ঞতার ঝুলি তো মিছে নয়!
    রামায়ণের যুগে সেই কাঠবিড়ালি যার ক্ষুদ্র অবদানে রাম সেতু বন্ধন করেছিল,তোমাদের গতিশক্তি আমার অভিজ্ঞতা মিলে একসাথে সময়ের মুলস্রোতে ভেসে গড়ি সমাজ। তোমরা আমরা গড়ি এক ভালবাসার সমাজ। “

  • মুক্ত গদ্য

    মধুর সাঁঝ

    মধুর সাঁঝ
    -অমিতাভ সরকার

    তুমি সময় দিলে না বলে মেঘগুলো গোমড়ামুখো থাকলো। নদী পারের শান বাঁধানো কেদারায় বসে মরাল মরালির জলকেলি দেখতে দেখতে সাঁঝ নেমে এলো। আকাশে আগাম পূর্ণিমার চাঁদ।

    চুপিসারে পিছন থেকে এসে চোখ দু’টি চেপে ধরলে। তোমার উষ্ণতায় উদাস থেকে সম্বিতে
    ফিরে হাত দু’টি চেপে ধরলাম, একরাশ হাসি অজান্তেই তোমার মুখটা আকাশের মত মনে হল।

    অবলীলায় তোমার ঠোঁট দু’টো আমার কামান গালে ছবি এঁকে দিল, মনে হলো দোলের প্রাক্কালে নিঝুম সাঁঝের মোহময় সময়ে তুমি নিঝুম প্রতীক্ষা-র সমাপ্তি ঘটালে।বললে ‘তুমি আমার’। জোনাক
    হাসলো।

  • মুক্ত গদ্য

    নান্দনিক অনিচ্ছা

    নান্দনিক অনিচ্ছা
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে কদিন আগে দেখা হয়েছিল অনিচ্ছার সাথে। ভুবন ডাঙ্গার অনিচ্ছা। বললে কেমন আছিস ,অনেকদিন দেখা হয়নি।
    -হ্যাঁরে ভালো, তুই কেমন?

    -ভীষণ তাড়া আছে। প্রকাশক অপেক্ষা করছে। প্রচ্ছদের ছবিটা দিতে হবে। বই মেলায় দেখা হচ্ছে, আমার ভীষণ দরকার আছে।

    -ঠিক আছে, কথা হবে। বাই ।

    অনিচ্ছা বিছানায় ছটফট করছে। তার প্রয়োজন গ্রন্থের প্রচ্ছদের জন্য আকর্ষণীয় ছবি । নিশ্চুপ এর সাথে দেখা হয়ে ভালই হল, ওর সাথে আলোচনা করা যাবে। আঁকিয়ে নেব। ভেবেছি ছবিটা যদি এমন হয়। কেমন হবে?

    টানা টানা আঁকা চোখ, আঁখির পাতা কালো ভ্রমরের মতো,প্লাকিং করা ভুরু, শুদ্ধ সোজা কেশ বিন্যাস, আলক্ত দু’টো ওষ্ঠ, ভেজা ভেজা, নখগুলো দামী নেল পালিশে সাজান। বাহুতল ইরেজ করা । আকাঙ্খিত অবয়ব। উড়জ যুগল প্রস্ফুটিত। বৃন্ত দুটি উদ্ধত থাকবে খয়রি বেষ্টনীর মধ্যে। নিতম্বে থাকবে আদিম আকর্ষণ। নাভিমূল শিশির সিক্ত, হীরক দ্যুতিতে ঝলমলে।নিম্নাঙ্গের খাঁজে থাকবে অনন্ত লালসা। কেশহীন, পরিচ্ছন্ন। নিশ্চুপকে এভাবে ছবিটা আঁকতে বলব বইমেলা থেকে আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে, বিয়ার খেতে খেতে। হঠাৎ আলো নিভে যাবে।

    হ্যাঁ আমি ,আমি অনিচ্ছা। খোলামেলা হয়ে আসবো নিশ্চুপের চোখের সামনে। আলো জ্বলে উঠবে, বলবো দেখতো কেমন লাগছে? এটাই আমার কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ হবে । এঁকে দে প্লিজ। পোজ কিভাবে নেব বল। নিশ্চুপ নিস্পলক, চরাই-উৎরাই এ হানা দিল।

  • মুক্ত গদ্য

    ভালো আছি

    ভালো আছি
    -পলি ঘোষ

     

     

    অনু পরমাণু বোমা হামলার ঘটনা থেকে ও আজ আলো আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে ভেসে উঠতে পারছি এটাই কম কি পাওয়া। আমি নিজেকে উড়িয়ে দিয়ে আবেগ হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে আসা প্রতিটি আবেগ ভরা চোখ দুটি কুসুম কুসুম কোমল মনের দিগন্তে মেঘ বালিকা হয়ে জ্বলছে। আজ হঠাৎ করে এমন হলো আমার যেটা ভালো সম্পর্ক ভালো সেটা বুঝতে না পারো কিন্তু নাড়ীর টানে আটকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে আলতো ছোঁয়ায় চোখের তারার আলোয় উদ্ভাসিত হোক আমার ক্লান্তিকর মুহূর্ত গুলো। আমি আপন মানুষ ভরা সুবাসমাখা জীবন তরঙ্গ বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দের মাঝে। আমি জানি আমার ছোট তরী বাইতে ঐখানে যাবে স্পন্দ নেই যেখানে আবেগের নীরব ছবি তুলে পাঠাও। আমি ঝরে পরি ভোরের অজস্র শেফালি ফুলের অগাধ সম্মান প্রদর্শন করতে করতে। আমি আজ হবো প্রিয় তোমার অনুভবে অনন্ত সুখের ভাগি।তাই তো আমি আজ শুধুই কল্পনা জুড়ে জোছনা রাতের অন্ধকারে মিশে থেকেছি আমার শুভ্র প্রাণের স্পন্দন ভালো আছি বলে। আজ এক অসহায় অবস্থা জোরদার কিছুই নেই শুধু নিজের জীবনের সবচেয়ে ভালো আছি। জানি না কোথায় শুরু আর শেষের পরিনয় কি। আজ আলো আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখিব হৃদয় জুড়ে মনের দিগন্তে উচ্চ আদালতে হাজির হবো আমি। তখন একাই চলে যাবো অনেক অনেক ভালো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাজের তাগিদে। আমি গর্বিত আমি নিজেই নিজের লড়াই এ সক্ষম এক ভূগর্ভস্থ ভূমীকা। পাশে কাউকে বিশ্বাস করে পাই নি। বদলে তিরস্কার আর অপমান। যা বলার জন্য আমি আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো আছি। আজ যারা আমাকে আশা দিয়ে নিরাশ করেছে তাদের উপর বসিয়ে দিলাম আমার সম্মান। আমার আলো আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখিব হৃদয় জুড়ে জোছনা রাতের অন্ধকারে ডুবে।

You cannot copy content of this page