রম্য রচনা

  • রম্য রচনা

    রম্য- “রাম চন্ডী’র মিত্তির”

    রাম চন্ডী’র মিত্তির
    প্রদীপ দে

    আজ আর কোন চেঁচামেচি কিছু নেই। বাপরে বাপ! আজ একেবারে গিন্নিকে মেরে দিয়েছি। বাজার করে দেখিয়ে দিয়েছি বাজার কাকে বলে?
    বাজার আনার ব্যাজার নেই। কিন্তু গিন্নির যা মুখ!
    একেবারে মাথা খারাপ করে দেয়। একটু এদিক ওদিক হলেই রাম রাবণের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আর আমি বেচারা রাম (?) চুপ করে নেতিয়ে থাকি। গিন্নি একেবারেই ক্রোধান্বিত রাবণ ফুঁসে ওঠে আর আমি রাম চুপসে যাই। নামটাও যে স্বর্গীয় বাপ মার দেওয়া রামদুলাল মিত্তির। গিন্নি চন্ডী ওঝা থেকে চন্ডী মিত্তীর।

    নামেও চন্ডী কাজেও তাই একেবারে রণং দেহী।
    তা আজ একেবারে চন্ডী লেজেগোবরে..
    হ্যাঁ হ্যাঁ – বলছি বাবা বলছি – আমি আবার একটু ভূমিকা করে দিই নাহলে ক্যামন যেন লাগে!
    আজ সকালে গিন্নিমার মুড ভাল ছিল। ঘুমচোখে আবদার করলে- কি চিংড়ি খেতে ইচ্ছা হচ্ছে!

    আমার বুকটা ধকপক করে উঠলো। গেলো রে আজ আমার বারোটা বাজবে। কারণ আমি যাই আনবো তাই চেঁচামেচি করার অজুহাত পেয়ে যাবে গিন্নি।

    ভয়ে ভয়ে বাজারে গেলাম। তারামা’কে কেবলই ডাকি- আয় মা আমায় বাঁচা।

    কপাল যে আজ আমার এত ভালো জানতেম না। তাহলে আগে লটারি কাটতাম। বিরাট ঝাঁকায় এক্কেবারে এক বেগোট লম্বা বাগদা কিলবিল করছে। খুঁজছিলাম কুঁচো তা পেয়ে গেলাম এই ধেড়ে ছুঁচো! গিন্নি কি খুশিই না হবে!

    -দাও ভাই, দাও দিকি এক কেজি।

    বাগদাগুলি আমার ব্যাগে ঢুকে গেল। কড়কড়ে চারশো টাকা ওকে গুনে বুঝিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলুম। প্রাণ আর মন সতেজ। বড়সাইজের বাগদা আমায় মন ভরিয়ে দিল। আরো মন ভরে গেল যখন দেখলাম আমার বাড়ির পিছনে থাকা ফ্ল্যাটের বউদি ওই বাগদাই কিনতেই ব্যস্ত। দু’ কেজি নিয়ে নিল। নিশ্চয়ই ভালো- না হলে নেবে কেন? সুযোগ এসে গেল। কথা বলার অভিপ্রায়ে প্রশ্ন করে বসলাম,
    -ওহঃ বউদি যে! মাছ নিলেন দেখছি। আমিও নিলাম। ভালোই হবে কি বলেন?

    -হ্যাঁ হ্যাঁ একেবারে টাটকা।

    -আহা। কি সুন্দর করে বললেন। আপনি যেমন সুন্দরী তেমনই আপনার কথা।

    -না না আমি তেমন সুন্দরী কোথায়? আপনার গিন্নি কি কম সুন্দরী?

    -আরে কি যে বলেন? চাঁদের সঙ্গে প্যাঁদের তুলনা করছেন? আপনি কত বুদ্ধিমতী।

    -আপনি একটু বেশি বেশি। আপনি কি কম ভালো? আমার তো খুব ভালো লাগে বিশেষত আপনি যখন আড়াল থেকে আমায় দেখেন। আপনার চোখ দুটি কি সুন্দর! আমাকে যখন দেখেন তখন আমার বুক ভরে ওঠে। লুকিয়ে দেখেন কেন? আপনাকে তো আমার খুব ভালো লাগে। আমি যদি আপনার হতাম কি সুখের হতো! কতো রোমান্টিক আপনি.… আপনার রান্নাঘরের জানালা দিয়ে দেখবেন আমি তো রান্নাঘরেই থাকি। এখন গিয়েই তো রান্না করবো।

    ওঃ তার মানে বউদিও আমায় দেখে? আর বলেই তো দিল আমাকে ওর ভালোই লাগে। সত্যি জগতে কত ভালো ভালো সুন্দর দেখতে সুন্দরী মেয়েরা রয়েছে। তারা আবার কতই না ভালোবাসতেও জানে। আর আমারটা দেখো? কি বাজে গিন্নিই না জুটেছে আমার কপালে? প্রেম ফ্রেম কিছু নাই একটা মুটকি। যাক আজ যখন আলাপ হয়েই গেল তখন আর এই সুযোগ আমি ছাড়বো না। আজই সুযোগ নিতে হবে। আমাদের রান্নাঘরের জানালা আর বউদির রান্নাঘরের জানালা একেবারে মুখোমুখি। আর একজন সুন্দরী রমণী যখন আমায় চাইছে তখন আমি পুরুষ মানুষ হয়ে একটা মুটকি গিন্নির ভয়ে সিঁটিয়ে যাবো? না না আজ আর ছাড়ছি না। এস্পার না হয় উস্পার! আর বউদির কি ফিগার! দেখলেই মন আর দেহ-আহা আহা — কি যে সুখানুভূতি হয় বারবার। ঘুরে ঘুরে দেখি। আমি ওকে আজ সব বলে দেবো। আমার সামনে আমার সেক্সি সুন্দরী। পরে কথা হবে এখন বাড়ি গিয়ে একটা কায়দা তৈরী করি আগে।

    -আচ্ছা। আচ্ছা। খুব ভালো। সময় পেলেই কথা হবে। এখন বাড়ি চলি। গিন্নি আবার নজর রাখে।

    -আচ্ছা আমিও আপনার অপেক্ষায় থাকবো। আপনি কত সুইট!
    টা -টা করে ও হাওয়া হয়ে গেল।

    আমিও হাই করে বাড়ির পথ ধরলাম। কিন্তু মন ওই সুন্দরী নিয়ে চলে গেল।

    বাড়ি ফিরেই একগাল হেসে গিন্নির হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিলাম। ব্যাগ খুলেই ও খুশিতে ভরে গেল- বাগদা এনেছো? আহাঃ কি যে ভালো লাগে!
    যাক অনেকদিন পর তোমার ঘটে বুদ্ধি হয়েছে।
    বসো বসো ঘেমে নেয়ে গেছো একেবারে -আমি জল বাতাসা নিয়ে আসছি।

    যাক আমি খুশি। গিন্নিকে খুশি করেছি। এবার নিজের খুশি হওয়ার পালা। গিন্নিকে আবদার করলাম- আজ বাগদাটা আমিই রান্না করি। মাছওয়ালা আমাকে একটা রেসিপি বলে দিয়েছে-খুব ভালো।

    -সে কি কথা? এরকম কথা কোনোদিন শুনিনি তো? তোমার কি ভীমরতি শুরু হলো?

    -আরে না গো না। একদিন দেখোই না কি হয়!

    সহজে হবার নয়। গিন্নিকে বোঝানো বড়ই মুশকিল ব্যাপার। তারপর গিন্নি খুবই চালাক। একটা সন্দেহ হলেই সব ভেস্তে যাবে। তখনও আমি এক বোকা বুঝিনি যে আমার গিন্নি আমার বাপ!

    অনেক কষ্টে গিন্নিকে ম্যানেজ করে রান্নাঘরে ঢুকলাম। গিন্নি নিজেই ছাদে গাছপালার কাজে চলে গেল। কপাল আজ আমার বড়ই প্রসন্ন। গিন্নিও ম্যানেজ হলো আর পাশের বাড়ির সুন্দরীও আমার প্রেমে পাগল হলো।

    রান্নাঘরের জানালায় সুন্দরী দাঁড়িয়ে। ওকে দেখবো আর ইশারায় বাগদা রাঁধবো- এই ছিল মোর সাধ। কিছুবাদেই ও একটা ফিনফিনে নীল নাইটি পড়ে রান্নাঘরে চলে এলো। আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কি সুন্দর ফিগার! এত লোভ হচ্ছে না কি বলবো মাইরি।

    তাড়াতাড়ি কড়ায় তেল ঢেলে এককেজি ধোওয়া বাগদা ছেড়ে দিলাম। গনগনে আঁচে বাগদা ভাজতে থাকুক। আমিও রুপসীর আগুনে জ্বলে যাচ্ছি। ওকে ইশারা করতেই ও মুচকি হেসে চোখ মেরে দিল। আমি মোহিত হয়ে গেলাম। দুনিয়া থেকে আমি বিছিন্ন হয়ে যেতে থাকলাম।

    ইশারায় কথা হচ্ছে। কত কথা। চোখ ধরে ওর রূপ আর দেহ দেখছি। ও আমার কি দেখছে তা আমার জানা নেই। শুধুমাত্র টানা চোখে আমায় মাপছে। আমার মাথার ঠিক নেই তবুও নাকে একটা বাজে পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম।

    এমন সময়েই তীরবেগে গিন্নি দৌড়ে চলে এল। একেবারে রণচন্ডী রূপে। কি তার গর্জন!

    -ওরে মুখপোড়া মিনসে ? তাই বলি এত আদিখেত্যা কেন।? কিসের রান্না? মুখপুড়ির সঙ্গে রান্নাবাটি খেলা চলছিল আর বাগদা পুড়ে ছাই হয়ে গেলো? আমি ঠিক ছাদ দিয়ে দেখছি বুড়ো বয়সে ছুঁকড়ির ছুঁকছুঁকানি। ভাবছে আমি ভিজে মাছটি উল্টে খেতে জানিনা। আয় মিনসে তোর বাগদা রান্নার নামে বাগদী ধরা আমি বার করছি।
    বলেই খুন্তি দিয়ে আমার পাছায় বার বার চপেটাঘাত করতে লাগলো। ধুতি খুলে যাওয়ার অবস্থা।

    ততোক্ষণে সুন্দরী কবে হাওয়া হয়ে গেছে। বিপদে পড়ে গেলাম বোকা আমিই। কি কপাল আমার? আর গিন্নিরও নজর বটে। ছাদ দিয়েই সব দেখে ফেলেছে। কি করি এবার? আমি চো চো দৌড়ে পড়িমড়ি করে পায়খানায় সেঁদিয়ে গেলাম। ভয়ে আমার সাদা ধুতির পিছন যে হলুদ হয়ে গেছিলো।

    –থাক গে আর এগিয়ে লাভ নেই। যেমন কর্ম তেমন ফল……

  • রম্য রচনা

    রম্য- রসভঙ্গ

    রসভঙ্গ
    -পায়েল সাহু

     

     

    দত্ত বাবুকে মনে আছে তো সবার?
    সেই যে আগের বার পাড়াতুতো ভায়রাভাইয়ের শালীকে নিয়ে সেই ঘটনায় সোনামনি বৌদির দাওয়াইয়ের পর আর ঘেঁষেন নি তার “মনি”র দিকে।
    তা যাকগে যাক, ওসব পুরোনো কথা। এখন আসি নতুন গল্পে।
    দত্ত বাবুর পাশের পাড়ায় নতুন একটি মেয়ে এসেছে, মনে মনে যাকে “ফুলঝুরি” বলে ডাকেন দত্তবাবু। তা এই “ফুলঝুরি” অবিবাহিত, স্মার্ট, বয়স যাই হোক না কেনো দেখে 26 এর বেশি মনে হবে না। একই বাসে রোজ যাতায়াতের সূত্রে দত্ত বাবু ইনিয়ে বিনিয়ে আলাপটা ঠিক করেই ফেললেন। তারপর কখনো রেস্টুরেন্টে, কখনো সিনেমা হলে দেখা যেতে লাগলো দুজনকে।
    এদিকে দত্ত বাবুর সেই পাড়াতুতো ভায়রাভাই বেণী বাবুর নজরে পড়তেই তিনি সটান চলে গেলেন দত্ত বাবুর স্ত্রী সোনা বৌদিকে এসব জানাতে।
    ব্যাস আর যায় কোথায়….
    সোনা বৌদি তো এসব শুনে হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে, রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বেণী বাবুকে এই মারে কী সেই মারে, মানে দত্তবাবুর ওপরের রাগটাই আর কী হাতের সামনে বেণী বাবুকে পেয়ে……
    অনেকক্ষণ শলা পরামর্শ করার পর দুজনে বেশ খানিক হো হো করে হেসে উঠলেন।
    ওদিকে দত্ত বাবু বাড়ি ফিরে দেখলেন তার বৌ বাপের বাড়ি গেছে, দুদিন পর ফিরবে, একটা কাগজে লিখে রেখে গেছে, একটু অবাক হলেও দত্ত বাবু আনন্দে লাফিয়ে উঠে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলেন তার “ফুলঝুরি”কে, রাতটা তার সাথে কাটানোর জন্য। “ফুলঝুরি”ও রাজি। কথা হলো রাত 12টা বাজলে দত্ত বাবু চুপিচুপি সদর দরজা খুলে দেবেন যাতে পাড়াপড়শী কেউ টের না পায়।

    রাত বারোটা নাগাদ হঠাৎ একটা আওয়াজ পেয়ে দত্ত বাবু ছাদে উঠে দেখেন সাদা শাড়ি পড়ে এলোচুলে দাঁড়িয়ে আছে একজন মহিলা, খানিকটা ঘাবড়ে গেলেও তিনি ভাবলেন তার আদরের “ফুলঝুরি” বুঝি তাকে surprise দিতে এসেছে এইভাবে।গদগদ হয়ে এগিয়ে যেতেই সে বলে উঠলো “কী রেঁ হ্যাঁরামজাদা, খুঁব যে দেখি তোঁর শখ, বৌ নেইঁ বলে ফুত্তির বাঁন ছুঁটেছে তাইইঁইঁ না… দাঁড়া আঁজ তোঁর এঁকদিন কি আঁমার এঁকদিন।”
    এই বলে যেই না সেই নারী মূর্তি দত্ত বাবুর দিকে এগিয়েছে দত্তবাবু “বাবাগো মাগো” বলে পেছন ফিরে ছুটতে গিয়ে দড়াম করে চাড্ডি কলার খোসায় আছাড় খেয়ে পড়লেন মুখ থুবড়ে। এর মধ্যেই শুনতে পেলেন বাইরের দরজায় কেউ খট খট আওয়াজ করছে। এদিকে ততক্ষনে নাটকের পর্দা পড়ে গেছে, সাদা শাড়ি পড়া মহিলা আর কেউ নয় দত্তবাবুর বিয়ে করা একমাত্র বৌ অর্থাৎ আমাদের সোনামনি বৌদি এবং বৌদির সহকারী দত্তবাবুর সেই পাড়াতুতো শালা বেণীবাবু, যিনি সময় মতো কলার খোসাগুলো দত্তবাবুর পায়ের কাছে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ছাদের অন্ধকারে লুকিয়ে থেকে।
    দত্ত বাবু আর কিছু ভাবতে পারলেন না, কলার খোসায় পিছলে গিয়ে যদিও বেশ লেগেছে কোমরে তবু টুঁ শব্দটি না করে মড়ার মতো পড়ে রইলেন ছাদে।
    ওদিকে নিচে সারা পাড়া জাগিয়ে সোনামনি বৌদি আর ফুলঝুরির তরজা চলছে….

    আপনারা কিছু খবর জানেন নাকি তারপর দত্ত বাবুর কি হলো? জানলে জানাবেন আমাকে কেমন!

  • রম্য রচনা

    রম্য- গ্যাসের কামাল

    গ্যাসের কামাল
    -পায়েল সাহু

     

     

    দত্ত বাড়ির কর্তার পেটে বড়ো গ্যাস হচ্ছে কদিন ধরে। পাড়াতুতো ভায়রাভাই বেণীচরণ বালার শালা নাকি নামকরা ডাক্তার, তা সেই ডাক্তারের ওষুধ খাচ্ছেন বটে তবে সেই ওষুধ খেয়ে কমা তো দূরের কথা আরো যেন বেড়ে যাচ্ছে। এক ঘরে গ্যাস ছাড়লে পাশের ঘর অব্দি গন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
    মহা মুশকিল…
    এদিকে ভায়রাভাইয়ের বৌ মানে শালী, সে যতই পাড়াতুতো হোক না কেন, তাকে রাগালে চলবে না। অফিস আসতে যেতে তার মিষ্টি মুখ আর “জিজু টাআআআ টাআআআ” না শুনলে সেদিন শালা বাস ট্রেন কিচ্ছু সময় মতো মেলে না। তার ওপর বসের ঝাড় উপরি।
    কিন্তু এখন কি উপায়, এই তো সেদিন অফিস যাওয়ার সময় “বেণী বাড়ি আছো নাকি?” একটু জোরেই বলে ফেলেছিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গে বেণীর স্ত্রী ‘মণি’ মানে ওই নামেই মনে মনে দত্তবাবু ডাকেন, আর কি একগাল হেসে বুকের কাপড়টা ঠিক করতে করতে বেরিয়ে আসছিলো, আর ঠিক…. ঠিকককক সেই মুহূর্তেই বিকট শব্দ করে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো পাড়াময়।
    দত্ত বাবুর আদরের মনি তো বমি করে ফেলে আর কি… আশেপাশের বাড়ির লোকেরা ছুটে এসে একজন বলে “এই বোম ফাটলো কোথায়? কেউ বলে নিশ্চয়ই কারো বাড়ি গ্যাস সিলিন্ডার burst করেছে তো কেউ বলে কবে ইঁদুর মরে পচে গেলো সেটা বুঝতেও পারলাম না?”
    দত্ত বাবু তো লজ্জায় লাল, কি করে যে পালালেন সেখান থেকে তিনিই জানেন।
    তার পরের দিন থেকেই তিনি নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলেছেন, এই গ্যাস সিলিন্ডার থুড়ি এই গ্যাসভর্তি ভুঁড়ি, ওহ্হো গ্যাসভর্তি পেট নিয়ে তিনি কিছুতেই যাবেন না তার মনির “টা টা” শুনতে |
    অবশ্য পরের দিন সকালে তাকে দেখতে না পেয়ে দত্তবাবুর ‘মনি’ নিজেই ছুটে এসেছিলো হাতকাটা নাইটিটা পরে, আসলে দত্তবাবুর চিন্তায় মাথার ঠিক ছিলো না তার।
    সব শুনে মুশকিল আসান ওষুধ সেই এনে দেয়।
    ওদিকে দত্তবাবুর স্ত্রী সোনামনিদেবী সব দেখে বুঝে একটা ভুরু কপালে উঠিয়ে ভাবতে বসেন এর উপায়, কিন্তু ঘন্টাখানেক বাদেও ভুরু নিচে না নামায় বাধ্য হয়ে ফোন করেন বেণীবাবুকে।
    বেণীবাবু যে কিছু বোঝেন না এমন নয়, তবু অপেক্ষা করছিলেন জল মাথার ওপর দিয়ে যাওয়ার, তা সে জল কিছুতেই মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছিলো না বলে তিনিও কিছু করে উঠতে পারছিলেন না।
    তবে এই সুযোগে তিনি বদলা নিয়েই নেবেন ভাবলেন।

    পর দিন থেকে সোনামনি দেবী সারাদিন বাড়িতে গুনগুন করে গাইতে লাগলেন “আমার যেমন বেণী তেমনি রবে বাল (চুল) ভিজাবো না” এই এক লাইনই গাইতে লাগলেন, তবে একটু জোরে হলো তখন, যখন দত্তবাবুর আদরের ‘মনি’ তার জিজুর খোঁজ নিতে এলো।
    আজও ভুল করে তাড়াহুড়োয় বাড়িতে পরা হাতকাটা নাইটিটাই পরে এসেছিলেন, তবে সোনামনিদেবীর গান শুনে বেশিক্ষণ এ বাড়িতে থাকার ভরসা পেলেন না। ওদিকে বেণী বাবুও বাড়িতে তখন চিৎকার করে গাইছেন “ও মেরি সোনা রে, সোনা রে, সোনা রে, দে দুঙ্গা জান জুদা মত হোনা রে..”

    এখন বেণীবাবুর স্ত্রী মানে দত্তবাবুর পাড়াতুতো শালী বেশ ভালোই বুঝে গেছেন “দামে কম মানে ভালো বেণী ফার্নিচার” নিজেকে সামলে নিয়েছেন খুব তাড়াতাড়ি।

    দত্তবাবুও আজকাল তার বৌ সোনামনি তার বাল মানে চুল ভিজিয়ে স্নান করছেন নাকি সেটা খেয়াল রাখছেন।

    তোমরাও একটু খেয়াল রেখো তো… যতই হোক দত্তবাবুর আমাদের লোক খারাপ নয়…. তাই না?

  • রম্য রচনা

    রম্য রচনা- একান্ত গোপনীয়

    একান্ত গোপনীয়
    – সুজিত চট্টোপাধ্যায়

     

     

    ঢেঁকি নাকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভাঙে।
    লাথি না খেলে ঢেঁকি কর্ম করে না। এটাই চিরাচরিত অপরিহার্য পদ্ধতি। অর্থাৎ স্বর্গে লাথালাথি করার নির্দয় বিধির প্রচলন আছে।
    না ভাই আমি নেই। মানে আমি স্বর্গে যেতে চাই না। লাথি খাওয়া আমার ধাতে সইবে না। কেন না, আমি নিশ্চিত জানি, আমি ঢেঁকি।
    মেজাজি সংসারের ম্যাও সামলাতে সামলাতে, এখন একটা পুরোদস্তুর জবরদস্ত জগদ্দল ঢেঁকি হয়ে গেছি। চাল কুটতে হলো বেলা।
    বেলা হোক কিংবা বেলা শেষ হোক। আমি নেই। স্বর্গ মাথার ওপর ছিল, আছে, থাকুক।
    তাহলে নরক?
    নরকভোগ ? প্রশ্ন-ই নেই । ওখানকার ব্যাপারস্যাপার নাকি অতি ভয়ংকর। বেধরক আড়ংধোলাই থেকে গরম তেলের কড়াইয়ে ছ্যাঁ কলকল ভাজা, কিছুই নাকি বাদ নেই। পাগলও নিজের ভালো বোঝে, আর আমি তো হাড় সেয়ানা।
    জেনেশুনে ননসেন্স হওয়ার প্রশ্ন-ই নেই।
    ভেবেই পাচ্ছি না, মরতে এই মর্তে জন্মের প্রয়োজন কী ছিল?
    খাওয়া, ঘুম, যেন-তেন প্রকারেণ উপার্জনের ফন্দিফিকির, আর বংশ বৃদ্ধি। এই তো আজীবনের কর্মসূচী। হ্যাঁ, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস বলতে, নির্বিচারে অন্যকে বিনামূল্যে বংশদণ্ড প্রদান।
    আচ্ছা..স্বর্গ, নরক, মর্ত্য, সব জায়গাই যদি গোলমেলে গোত্রের হয়, তাহলে থাকি কোথায়, যাই কোথায়? বাঁচি কোথায়, মরি কোথায়?
    এ-তো ভারি মুশকিলের ব্যাপার হলো দেখছি।
    সেই কারণেই মনের কোণায় শাঁকচুন্নির নাকে সুরের আগুন প্রশ্ন, জন্মালুম কেন?
    পাঁচুদা সবজান্তা সব্জিওয়ালা। বললো- দ্যাখ ভেলো, মেলা ফ্যাঁচফ্যাঁচ করিসনি। কেউ নিজের ইচ্ছেয় জন্মায় না। সব্বাই অন্যের ইচ্ছের ফসল। সেই ফসল ভালবাসার হতে পারে। স্লিপ ক’রেও হতে পারে। যেভাবেই হোক, যে জন্মালো তাতে তার কোনও হাত নেই। শুধু ভোগ আর ভোগান্তি আছে। লড়াই আছে। জোর সে বোলো..
    লড়াই লড়াই লড়াই চাই..
    লড়াই ক’রে বাঁচতে চাই।
    মোবাইল ফোনে রিংটোন বাজছে,
    ‘মনে করো আমি নেই, বসন্ত এসে গেছে..’
    স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে নাম, মিলি,
    ভেলোর আঠারো বছরের বসন্ত হৃদয়ে কোয়েল ডাকছে, ও আমার মিলি সোনা..
    স্পিকারে একরাশ পলাশ প্রেমের রঙ ছড়িয়ে ভেলো বললো, হ্যালো,
    ও প্রান্তের দখিনা বাতাস মেশানো মৃদু মিঠে স্বর,
    কী করছো?
    সিঁড়ির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নিয়ে, ভেলোর ফিসফিস উত্তর- কিছু না, ছাদে আছি,
    ওপ্রান্তে ব্যকুলতা ভরা মিঠে ধমকানি,
    -এমা কেন? সন্ধ্যেবেলা কেউ ছাদে থাকে ফাগুনের শিশির, ঠান্ডা লেগে যাবে তো !
    -লাগুক, কিচ্ছু হবে না। ঘরে বসে তোমার সঙ্গে কথা বলা যায় না। এই বেশ..কেউ নেই, নিরিবিলি। ভেলো আরও একবার ছাদের সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নিশ্চিন্ত হলো। নাঃ, কেউ নেই। বাবা এখনো অফিস থেকে ফেরেনি। মা রান্নাঘরে ব্যস্ত। একমাত্র ছোট বোনটা। মহা ফাজিল। যে কোনও সময় পা টিপে টিপে ওপরে উঠে আসতে পারে। যদি দেখে ফেলে টুক করে মা’কে লাগিয়ে দেবে। ব্যাটা চুকলি-খোর নম্বর ওয়ান।
    সত্যি, কী কপাল মাইরি। হায়রে স্বাধীনতা বলে কি কিছুই থাকতে নেই এই জীবনে ! কিছুই তো না। শুধু চুপিচুপি একান্তে নিজের প্রিয় মানুষের সঙ্গে একটু মনের কথা শেয়ার করা। গতানুগতিক কেতাবী ছকের বাইরে একটু অন্যরকম অনুভূতির ছোঁয়া। প্রাণ মন ভেজা আঁধারি সোঁদালি গন্ধ মেশানো স্বপ্ন সন্ধানী গল্প। সেখানেও কাঁটা ঝোপের জঙ্গল। দূর দূর এ-ই কী জীবন? সাধে কী আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না, অনেক জ্বালা রে ভাই।
    সেদিন কোচিং কেটে বিকেলবেলা মিলি আর আমি একটু নিউমার্কেটের আসেপাশে আঙুল ধরাধরি করে অকারণ হাঁটছিলাম। ব্যাস, পড়ে গেলাম ফ্ল্যাটতুতো কাকিমার চোখে। কী সাংঘাতিক দৃষ্টি মাইরি। অত ভীড়ের মধ্যেও ঠিক চোখ গেছে। দৃষ্টি তো নয় শ্যেনদৃষ্টি । ঠিক আছে বাবা। দেখেছিস বেশ করেছিস। মায়ের কাছে গিয়ে সাতকাহন গপ্পো মারবার কী দরকার ছিল ? মায়ের কানে খোড়কে গুঁজে, আমার সর্বনাশ না করলে চলছিলো না ?
    জানেন তো মিসেস মল্লিক, আজকে তো নিউমার্কেট গিয়েছিলাম। পরশু ননদের মেয়ের জন্মদিন, ওই কিছু উপহার টুপোহার নিলাম আর কি। ভেলোর সঙ্গে তো দেখা হলো, ও বলেনি কিছু? সঙ্গে তো একটা মেয়েও ছিল, ওরই বয়সী। কী যেন নাম? বলেছিল, ভুলে গেছি। বললো তো ওর বন্ধু। হাতে হাত রেখে দু’জন গটমট করে হেঁটে যাচ্ছিল। বেশ লাগছিলো কিন্তু ওদের।
    কী ডেঞ্জারাস মহিলা রে বাবা। ভাবা যায় না। অথচ ওনার সঙ্গে একজন পুরুষ ছিল, যাকে কস্মিনকালেও এই ফ্ল্যাটের আনাচে-কানাচেতেও কেউ দেখেছে বলে মনে হয় না। তার সঙ্গে গতরে গতর লাগিয়ে হ্যা হ্যা করে হাঁটছিলে, কই, সেকথা তো উচ্চারণ করলে না, বেমালুম চেপে গেলে।
    জিও কাকি জিও। যেদিন হাঁড়ি ফাঁসিয়ে দেবো না, সেদিন বুঝবে ঠ্যালা। সোজা কাকুর কাছে পর্দা ফাঁস করে দেবো। বদলা আমিও নিতে জানি , মনে রেখো।
    কী ভাগ্যি কথাটা বাবার কান পর্যন্ত পৌঁছোয় নি। মাই সুইটহার্ট মাদার, ব্যাপারটা বিশেষ গুরুত্ব দেয় নি, এই যা রক্ষে। শুধু তাই নয়- মা ওই মেয়ে বিভীষণ আমার বোনকেও বারণ করে করে দিয়েছিল, বাবার কাছে যেন এসব ফালতু কথা বলা না হয়।
    সেই থেকে মিলির সঙ্গে মেলামেশায় আরও গোপনীয়তা চালু করতে হলো। সন্ধ্যের ছাদ, সেই গোপনীয়তার মোক্ষম জায়গা ।
    অবিশ্যি অচিরেই বোঝা গেল, আমি একটি গোদা আহাম্মক। মিলির সঙ্গে প্রেমালাপ সাঙ্গ করে ফুরফুরে মেজাজে নিচে নামতেই, মা শান্ত গলায় বললো- শোন ভেলো, ফাগুনের চোরা ঠান্ডা। সন্ধ্যেবেলা ছাদে গিয়ে গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর করার দরকার নেই। যা বলবার, শোনবার এই ঘরে বসেই করবি। দ্বিতীয়বার যেন বলতে না হয়।
    আয়নায় নিজের মুখটা খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। লাল নাকি কালি বর্ণ ধারণ করেছিলো। তখনও একবার মরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল। হে ফ্ল্যাটের মেঝে দুফাঁক হও। আমাকে সপাটে গ্রাউন্ড ফ্লোরে আছড়ে ফেলো। থেঁতলানো তরমুজ হয়ে মাটিতে পড়ে থাকি।
    ধরণীতে কিছুই টেঁকসই নয়। সবই মায়ার খেলা।
    সময়ের সাথে সাথে মিলি মিলিয়ে গেল। রয়ে গেল স্মৃতি। কাউকে বলা যাবে না। রেখে দিতে হবে মন সিন্দুকের কম্বিনেশন চাবির গোপন অন্তরালে। নিঃশব্দে।

  • রম্য রচনা

    রম্য- শাকচুন্নির পরকীয়া

    শাকচুন্নির পরকীয়া
    -জয়তী মিত্র

    উঁরি বাঁবারে পাঁ’টা ভেঁঙে গেঁল রে, কিঁ যঁন্ত্রণা হঁচ্ছে, মঁরে গেঁলাম রেঁ, কিঁ কুঁক্ষণে এঁই শ্যাঁওড়া গাঁছে মাঁমদোটার সাঁথে প্রেঁমে মঁজে ছিঁলাম কেঁ জাঁনে, কেঁ জাঁনতো গাঁছের ডাঁলটা ভাঁঙা ছিঁল।
    বঁজ্জাতটা আঁমাকে পঁড়ে যেঁতে দেঁখে ঠিঁক কেঁটে পঁড়েছে, প্রেঁম দিঁবসে একখাঁনা নেঁকলেস আর একগুঁচ্ছ গোঁলাপ দেঁবে বঁলেছিল সেঁ তোঁ আঁজও দিঁলো নাঁ। মিঁথ্যেবাদী..এবার আঁসুক প্রেঁম কঁরতে হাঁড় ভেঁঙে গুঁড়ো কঁরে দেঁবো। কিঁ পীঁড়িত! আঁবার নাঁম দিঁয়েছে টুঁম্পা সোঁনা, আঁসুক হাঁরামজাঁদা ঝেঁটিয়ে বিঁদেয় কঁরবো। সঁব দোঁষ আঁমার, বুঁড়ো মিঁনসে ব্রঁহ্মদঁত্যিটাকে দেঁখলে আঁমার গা-পিঁত্তি জ্বঁলে, বুঁড়োটা এঁকটা ঘাঁটের মঁরা, রঁস কঁত..বঁলে কিঁনা, ‘শাঁকু রে তোঁকে আঁমি বঁড্ড ভাঁলোবাসি, তুঁই আঁমাকে ছেঁড়ে কোঁনোদিঁন চঁলে যাঁবি নাঁতো, যঁদি যাঁস আঁমি এঁই জীঁবন আঁর রাঁখব নাঁ।’
    কোঁথায় আঁমার মাঁমদো, আঁর কোঁথায় এঁই বুঁড়ো হাঁবড়াটা। সাঁরাক্ষণ গায়ের সাঁথে লেঁগে থাঁকে। তঁবে মাঁমদোর মঁতো পাঁজি নাঁ। তাঁও মাঁমদোটা কেঁমন যেঁন বঁশ কঁরে রেঁখেছে আঁমাকে।

    শাকুকে গাছের তলায় পড়ে থাকতে দেখে খুবই খুশি হল ব্রহ্ম, পা ভেঙেছে দেখে আরো খুশি হলো আর বললো, ‘দেঁখ কেঁমন লাঁগে, কঁদিন ধঁরে তোঁর চাঁলচঁলন আঁমার ভাঁলো ঠেঁকছিল নাঁ। মাঁমদোটা আঁমার সংসাঁরে নঁজর দিঁচ্ছিল। তোঁর মঁনও দেঁখলাম উঁরু উঁরু। ভাঁবলাম কঁর প্রেঁম, দুঁদিন বাঁদেই বাঁপ, বাঁপ বঁলে এঁই বুঁড়ো বঁরের কাঁছেই তোঁকে ফিঁরতে হঁবে। তাঁই তোঁকে ছেঁড়ে মঁজা দেঁখছিঁলাম। আঁরে ওঁই মাঁমদোকেঁ আঁমি খুঁব ভাঁলো কঁরে চিঁনি, এঁকটা চঁরিত্রহীঁন। সেঁদিন দেঁখলাম তেঁতুল গাঁছের মঁগডালে মেঁছোপেঁত্নীটাকে নিঁয়ে প্রেঁমে মঁজেছে। আঁবার আঁর এঁকদিঁন দেঁখলাম মেঁছোর বোঁনটাকে নিঁয়ে নিঁম গাঁছে পাঁ দুঁলিয়ে গাঁন গাঁইছে । দুঁশ্চরিত্র, লঁম্পট কোঁথাকার। তাঁরপঁর দেঁখি আঁমার ঘঁরেও হাঁনা দিঁয়েছে। যঁদি নাঁ পাঁলাতো, মেঁরে বঁদন বিঁগড়ে দিঁতাম। প্রেঁম কঁরা ঘুঁচে যেঁত চিঁরকাঁলের জঁন্য।’

    পায়ের ব্যাথায় শাকুর প্রাণ তখন ওষ্ঠাগত -‘নেঁ ওঁঠ চঁল, পাঁয়ে ওঁষুধ লাঁগিয়ে দিঁই। আঁর যঁদি গেঁছিস মাঁমদোর সাঁথে প্রেঁম কঁরতে চিঁরকাঁলের জঁন্য ঘাঁড় ধঁরে বিঁদেয় কঁরে দেঁব, আঁমার খাঁবি, আঁমার পঁড়বি, আঁবার আঁমার সাঁথেই বিঁশ্বাসঘাঁতকতা কঁরবি, এঁসব আঁর সঁহ্য কঁরবো নাঁ।”
    শাকচুন্নি ব্রহ্মকে আদর করে বললো, ‘আঁর কোঁনোদিঁন এঁমন কঁরবো নাঁ। তোঁমার সাঁথেই সুঁখের ঘঁর বাঁধবো ওঁই শ্যাঁওড়া গাঁছে।’
    শাকুর মুখে এই কথা শুনে আনন্দে ব্রহ্ম গান গাইতে লাগলো, ‘তুঁমি যে আঁমার, ওঁগো তুঁমি যেঁ আঁমার..’

  • রম্য রচনা

    রম্য- হাগ ডে

    হাগ ডে
    -জয়তী মিত্র

    পাড়ার মোড়ের মাথার দোকানে ডিম আনতে গিয়ে চম্পা শুনল আজ হাগ ডে। পাশের চায়ের দোকানে কিছু অল্পবয়সী ছেলে হাগ ডে নিয়ে কি সব বলছে। ওরা নাকি ওদের প্রেমিকাদের সাথে হাগ করবে মানে হাগবে।
    এইকথা শুনে চম্পা ভাবল, হাগার আবার কোনো দিন আছে নাকি। আমরা তো রোজ হাগি। ছেলেগুলো মেয়েদের সাথে হাগবে। জামা কাপড় খুলে? ছি!ছি! কি লজ্জা। কি দিন এলো, এইসব শোনা যে পাপ। ছি! এইসব শুনে আর কাজ নেই।

    ডিম নিয়ে চম্পা বাড়ির দিকে পা বাড়াল। চম্পার বর রতন শহরে ব্যাগ বিক্রি করে, ছোট একটা দোকান আছে। প্রত্যন্ত গ্রামে ওরা থাকে। হাতে সেই পুরোনো ছোট্ট একটা ফোন আছে শুধু কথা বলার জন্য। এইসব হাগ ডে, প্রপোজ ডে, রোজ ডে এইসব তার অজানা। তাছাড়া এই গ্রামটা এখনও সেই অর্থে উন্নত হয় নি। আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে অনেক দূরে।
    চম্পার স্বামী রতন বলে গেছে আজ ডিম কষা দিয়ে পরোটা খাবে, তাই চম্পা ডিম আনতে গিয়ে হাগ ডের কথা শুনে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
    সারাদিন মাথায় চলছে হাগার কথা। হাগার জন্য একটা বিশেষ দিন, নিজের মনেই হেসে কুটিপাটি চম্পা। চম্পাকে একা হাসতে দেখে পাশের বাড়ির লক্ষ্মী ভাবল, চম্পা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি, একা, একা হাসছে।
    লক্ষ্মী চম্পার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি রে, একা-একা হাসছিস, মাথাটা গেছে নাকি! চম্পা বললো, না রে, হাসছি কেন জানিস? পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে,শুনলাম, আজ নাকি হাগ ডে। আজ হাগার দিন। লক্ষ্মী বললো, কি যা তা শুনেছিস, আমরা তো রোজ হাগি। তার আবার কোনো দিন হয় নাকি? তুই এক পাগল আর ওই ছোকরাগুলো আর এক পাগল, যত সব মূর্খের দল, আমি চললাম, তোর সাথে কথা বললে আমার সময় নষ্ট হবে, আমি যাই।
    লক্ষ্মী চলে যাবার পর রান্না শুরু করল চম্পা, ডিমের কসায় নুন দিতে ভুলে গেছে। ভাবছে কতক্ষণে তার স্বামী আসবে তাকে হাগ ডে র কথা বলবে। সারাদিন হাগ ডে নিয়ে ভেবেই চলেছে।

    রাতে স্বামী ফিরলে তাকে যত্ন সহকারে খেতে দিয়ে বলল, জানো আমি শুনেছি আজ হাগ ডে, হাগার দিন। আজকের দিনে লোকে মনে হয় অনেকবার হাগে, ছেলেমেয়েরা, একসাথে হাগে। কথাটা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো, চম্পার স্বামী রতন। আরে হাগ করা মানে একে ওপরকে জড়িয়ে ধরা। আমি তো আজ দোকানে বসে দেখলাম, অনেকে অনেককে জড়িয়ে হাগ করছে। বিশেষ করে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েগুলো তো একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে।
    তারপর চম্পাকে হাগ করে রতনবললো, এই দেখো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরছি মানে হাগ করছি। বিদেশে সবাই আজকের দিনে হাগ ডে পালন করে। লজ্জায় লাল হয়ে চম্পা বললো, তাহলে হাগ ডে মানে হাগা নয়। এতক্ষণে বুঝলাম। সব বুঝে আবার হাসতে লাগল চম্পা।
    এদিকে আলু ডিম কষা খেয়ে রতন বললো, হাগ ডের কথা ভাবতে গিয়ে ডিমে নুন দাওনি সেই খেয়াল আছে? চম্পা তাড়াতাড়ি করে ডিমের বাটিতে নুন মিশিয়ে বললো, হাগ ডের জ্বালায় সব গোলমাল হয়ে গেছে রাগ কোরো না গো। এইবার খেয়ে দেখো ঠিক লাগছে কিনা?
    পরোটা দিয়ে ডিম কষা মুখে দিয়ে আবার চম্পাকে জড়িয়ে ধরলো রতন। সত্যিকারের হাগ ডে পালন করলো রতন আর চম্পা।

  • রম্য রচনা

    রম্য- ভন্ড ভন্ডুল

    ভন্ড ভন্ডুল
    – সুজিত চট্টোপাধ্যায়

     

     

    দেবতা বললেন, বৎস, তোমার সাধনায় আমি তৃপ্ত। বলো, কী বর চাও?
    সাধক নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললেন …. প্রভূ , আমি ট্রাডিশন ভাঙতে চাই ।
    দেবতা কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গিয়ে বললেন – মানে ?
    সাধক স্মার্টলি বললেন , দেখুন প্রভূ , ওসব বর ফর অনেক পুরনো রদ্দি ব্যাপার । অনেকেই আপনার থেকে ঐসব নিয়েছে টিয়েছে , কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও বরই টেঁকেনি। শুধু তাই নয় , যাকে বর দিয়েছেন সেও গল্প হয়ে গেছে। দেখুন প্রভূ , মুখের ওপর বলছি , রাগ করবেন না প্লিজ , আমার অভিজ্ঞতা বলছে আপনারা বহুৎ ধড়িবাজ ।
    বরের ভেতর কায়দা করে নানাভাবে নানান ফন্দিফিকির , ফাঁকফোকর ঢুকিয়ে রাখেন। গোড়ায় গোড়ায় কিচ্ছুটি বোঝা যায় না । বেশ ভালোই চলে । কিন্তু আল্টিমেটলি , নিটমুনাফা জিরো এবং নির্ঘাত অপঘাত মৃত্যু। তাই , আমি মনস্থির করেছি , কিচ্ছুটি নেবো না। উল্টে আপনাকে দেবো।
    দেবতা কিঞ্চিৎ হাঁ হয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন, দেবে ? মানে আমাকে দেবে ? খুবই ভালো কথা।
    কিন্তুু প্রশ্ন হচ্ছে , কী দেবে ? দেবার মতো কী আছে তোমার ? তুমি তো কপর্দকহীন অপদার্থ ভবঘুরে ,না চাল , না চুলো। দেহ আর ধুকপুকে প্রাণ টুকু ছাড়া তোমার আর আছে কী , দেবার মতো ? শোনো হে , তোমাকে আগেই জানিয়ে রাখছি । ঐদুটোর একটাও কিন্তু আমি নেব না। কেননা ওসবের দায়িত্ব যমরাজের। তুমি বসেবসে তাকেই ডাকো , আমি চললাম ।
    সাধক পথ আটকে দাঁড়িয়ে বললেন , তা বললে চলে প্রভূ। এতো সাধনা টাধনা করে , আপনার আসন টলিয়ে মর্ত্যে নিয়ে এলুম , সেকি শুধুমাত্র আপনার সুন্দরপনা মুখটা দেখেই ছেড়ে দেবার জন্যে?
    দেবতা ত্রিশূল ঠুকে দাঁড়িয়ে গেলেন । আস্পর্ধা কম নয়। মুখে যা আসে বলে । এইসময় একটা মোক্ষম অভিসম্পাত ঝেড়ে দিলে কেমন হয়? নাহঃ থাক , আর একটু দেখা যাক , লোকটা কতদূর যেতে পারে , দেখা নিতান্তই প্রয়োজন।

    আপনারা বড্ড ভোগী হয়ে উঠেছেন । অবিশ্যি , সেটা আপনাদের দোষ নয়। এই মর্ত্যবাসীরাই নানান দামী দামী উপঢৌকন দিয়ে দিয়ে আপনাদের স্বভাব খারাপ করে দিয়েছে। নইলে আগের কালে তো শুনেছি , একটু আধটু ভক্তি টক্তি পেলেই খুশী হয়ে যেতেন । কী, ঠিক কিনা?
    যাইহোক শুনুন প্রভূ, আমি আমার যত পাপপুণ্য , ভালমন্দ , ন্যায় অন্যায় , সুখদুঃখ , সব সবকিছুই আপনাকে নিবেদন করলাম।
    আপনি খুশী মনে আমার এই দান গ্রহণ করে আমাকে কৃতার্থ করুন প্রভূ ।
    দেবতা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ , ভাবগতিক বোঝবার চেষ্টা করলেন  তারপর বললেন ,
    এই প্ল্যান , আগে থেকেই ভেঁজে রেখেছ , সেটা বেশ বুঝতে পেরেছি । কিন্তু বাছাধন , এইসব উজবুক মার্কা পরিকল্পনা আমাদের কাছে নস্যি । যুগ যুগ ধরে তোমাদের দেখা না দিয়ে, মেলামেশা না করে , কোনও রকম পাবলিসিটি ছাড়াই তোমাদের বশে রেখেছি , সেকি মনেকরো এমনি এমনি ? যাক, সেসব তুমি বুঝবে না। অবিশ্যি যত না বুঝবে , ততই আমাদের পক্ষে মঙ্গল ।
    যতই জানবে , ততই অমান্যি করবে । ঠিক আছে , তুমি যা দিতে চাইছো , সবই নেবো। ভক্তের মনোবাঞ্ছা অপূর্ণ রাখবো না। কিন্তু , ওগুলোর সঙ্গে আরও কিছু নেবো।
    সাধক , আমতা আমতা করে ঢোঁক গিলে বললেন, আর কী? আরতো কিছুই নেই । আপনি অন্তর্যামী। আপনার কাছে তো কিছুই গোপন নেই প্রভূ।
    প্রভূ হেসে বললেন , সেই জন্যেই তো বলছি! দে.. তোর সবটুকু দে. ..  ষোলো আনা জ্ঞান অজ্ঞান , বুদ্ধি দুর্বুদ্ধি , চাতুরী বোকামি , শঠতা সত্যতা , সর্বোপরি তোর মুখোশ , সবই দিয়ে দিতে হবে, পারবি?
    সাধক ফ্যাকাসে মুখে বললেন – যাঃ চ্চলে! সবই যদি যায়, তাহলে থাকে কী? খাবো কীভাবে ?
    দেবতা মুচকি হেসে বললেন , কেন , মুন্ডু দিয়ে খাবি। যেমন খাস। ওটা তো চাইনি । সেটা তো রইল যথাস্থানে।
    সাধক , চোখ মুখ কুঁচকে হাঁ হাঁ করে উঠলো , না না প্রভূ, সে কথা নয়। বলি , খাওয়ার ব্যবস্থা হবে কীভাবে ?
    দেবতা ত্রিশূল ঠুকে এক কদম এগিয়ে গিয়ে , চোখ নাচিয়ে বললেন, কী ব্যাপার বলতো? তোর আসল মতলব খানা কী?
    প্রভূ, আপনার সঙ্গে জলের বোতল আছে ? বড্ড জল তেষ্টা পাচ্ছে ।
    দেবতা , তার হাতে ধরা কমন্ডলু বাগিয়ে ধরে বললেন, নে,, পান কর। গলা তো শুকোবেই। পেটে পেটে বজ্জাতি বোঝাই।
    স্বর্গের জল পান করে বেশ ঝরঝরে হয়ে সাধক হাত জোড় করে হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদোকাঁদো গলায় গদগদ হয়ে বললেন , প্রভূ সবই তো বুঝতে পারছেন , কেন মিছিমিছি এই অধমের সঙ্গে লীলা করছেন প্রভূ।
    দেবতা কিঞ্চিৎ নরম স্বরে বললেন , আচ্ছা বেশ , যা বলার আছে নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে বল। আমি কিচ্ছুটি মনে করবোনা।
    সাধকের মুখে চওড়া হাসি। বললেন , এইতো , এইনা হলে দেবতা। আহা! কী উদার , কী মহান ,
    কী প্রেম… 
    হয়েছে হয়েছে , ভেজাল মাখন মাখানোর দরকার নেই । মতলব খানা খুলে বল দেখি।
    তাহলে বলি, আপনি যেগুলো চাইলেন , তার মধ্যে কয়েকটি ছেড়ে দিন প্রভূ। কেননা ঐগুলা ভাঙিয়েই তো আমি ফুলেফেঁপে জয়ঢাক হয়ে উঠবো কিনা… 
    কোন গুলো ?
    আপনি সব নিয়ে যান। শুধু ঐ , দুর্বুদ্ধি , চাতুরী , শঠতা আর মুখোশ খানি আমার জন্যে ছেড়ে দিন প্রভূ।
    আর ছোট্ট একটি প্রার্থনা আছে প্রভূ।
    আবার কী ?
    মানে , এইযে আমার সবকিছু , মানে ঐগুলা বাদ দিয়ে আরকি , আপনার পায়ে নিবেদন করলুম , এই ব্যাপারটা আপনি একটু কায়দা করে লোকসমাজে যদি প্রচার করে দ্যান প্রভূ , বড়ই কৃতার্থ হই প্রভূ । মানে ,আপনাকে ব্র‍্যান্ডএম্বাসাডর বানিয়ে এগিয়ে যেতে চাই প্রভূ।
    দেবতা , ত্রিশূল দিয়ে বগল চুলকে , চোখ ছানাবড়া করে বললেন ,ব্র‍্যান্ড এম্বাসাডর , সেটা কী?
    সাধক, মাছি তাড়ানো ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বললেন, কিচ্ছু নয়। শুধু আমার যাবতীয় কাজে আপনার নাম আর ছবি ব্যবহার করবো। তাতে আপনারও প্রচার বাড়বে আর আমারও কেল্লাফতে হবে ।
    জনমানসে আপনার নাম , কী বলবো প্রভূ , এখনো একেবারে ম্যাজিকের মতো কাজ করে । দিব্যি করে বলছি প্রভূ , আপনার নামের তোড়ে , যদি একবার মন্ত্রী হয়ে বসতে পারি , আপনার নামে , পেল্লাই মন্দির , রাস্তা ঘাট এমনকি রেলস্টেশন পর্যন্ত বানিয়ে দেবো।
    ইস্কুল কলেজ হাসপাতালও বানানো যেতে পারতো। কিন্তু ওসব করা আখেরে ক্ষতিই হবে। ঐ-যে আপনি বললেন , সেইটাই মোক্ষম যুক্তির কথা । যত জানবে , ততই কম মানবে ।যদি মান্যতাই না পেলুম , মন্ত্রী হয়ে কী লাভ ? আপনিই বলুন প্রভূ….

    দেবতা বললেন,  ওরে শয়তান , তাই বলি বেটা মতলব বাজ , হঠাৎ কোথাও কিছু নেই , সটান গুহায় ঢুকে ঝপ করে বসে ধ্যান শুরু হয়ে গেল ? সাধনা ? ব্যাটা ভন্ড।
    আমার নাম ভাঙিয়ে , ঢং করে সঙ সেজে সাধাসিধে ভালো মানুষ গুলোকে বোকা বানিয়ে তাদের সর্বনাশ করবি ? নিজের আখের গুছোবার ধান্দা করবি ? তুই কী ভেবেছিস , আমি তোকে এই জঘন্যতম কাজে সহায়তা করবো ? মুর্খ । তোর মতো শয়তান গুলোর জন্যেই আমার সুন্দর পৃথিবীটা নোংরায় ভরে গেল।
    তুই জাহান্নামে যা। আমি চললুম । শোন , মানুষের জন্যে ভালো কাজ কর। তাদের পাশে অন্ধের যষ্টির মতো দাঁড়া। তাহলেই দেখবি , তুই মনে মনে যা চাইছিস , তারচেয়ে বেশী পেয়ে গেছিস।
    ভুলে যাস কেন , সেই অমোঘ বাণী …. 

    প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে
    যবে মিলি পরস্পরে ,
    স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন
    আমাদেরই কুঁড়েঘরে ।

     

  • রম্য রচনা

    রম্য- যুগের হাওয়া

    যুগের হাওয়া
    – সুজিত চট্টোপাধ্যায়

     

     

    অমন খেঁকিয়ে উঠছো কেন বাপু। তোমায় তো কিছু বলিনি। তোমার গায়ে ফোস্কা পড়ছে কেন?
    আকচার বুলি। কলতলার সকাল সাঁঝের মুখঝামটা ডায়লগ।
    আচ্ছা , গন্ডারের গায়েও কী ফোস্কা পড়ে?
    মুখপোড়া হনুমানের মুখ পোড়ে?
    দুর মশাই , প্রবাদবাক্য গুলো সব গুলে খেয়ে হজম করে ফেল্লেন?
    কানে দিয়েছি তুলো , পিঠে বেঁধেছি কুলো। মনে নেই ? সুতরাং কায়দা করে যতই গন্ডার , হনুমান বলে গালমন্দ করো , কিসসু হবে না।
    পাঁঠার কি’বা পায়েস , কি’বা খিচুড়ি । সবসমান।
    নদীর , সমুদ্রের জোয়ার ভাঁটা আছে।
    পানা পুকুরের সেসব থাকে কী ? পল্লীর বউ মেয়েরা দুবেলা সেই পুকুরের পাড়ে বসে বাসন মাজে। পি এন পি সি করে। সেই গরবেই সে ডগমগ। আমি ছাড়া গতি নেই। ভাব খানা এমনই।

    ভাবছেন কাদের কথা বলছি ? শুনুন,,,
    পাড়ার নেতা । গবা দা। আগে অন্য একটা দলের জার্সি গায়ে মাতব্বরি করতো। তাদের সূর্য বর্তমানে অস্ত গেছে । তাই উদিত সূর্যের কিরণ মেখে , নতুন দলের পাড়াপতি। পানাপুকুর ।
    জার্সির রঙ বদলেছে। কিন্তু স্বভাব ?
    আবারও সেই প্রবাদবাক্য । স্বভাব যায় না মলে।
    আচ্ছা , এইসব প্রবাদবাক্যের জন্মদাতা কে বা কারা বলুন তো ? যেই বা যারাই হোক , তাদের পায়ে , শতকোটি প্রণাম ।
    আজকাল নেতাদের বিশেষ পোশাক থাকে।
    এক এক দলের এক এক রঙের পোশাক। মুখে , প্যাকেটের পান জর্দার গন্ধ । কপালে রক্ত তিলক।
    হাঁটাচলা জিরাফের মতো । চোখে মুখে হামবড়িয়া ভাব। সবজান্তা কয়লা ওয়ালা।

    রাজনীতি বোঝবার দরকার নেই। দল বুঝলেই হলো। যখন যেমন তখন তেমন , ব্যস, এই একটিই নীতি। হাওয়া বুঝে দিক নির্ণয় করো। হাওয়া নিশান হও। মোরগের ঘুরপাক। গিরগিটির রঙ বদল।
    লজ্জা , ঘেন্না , ভয়, তিন থাকতে নয়।
    আবারও সেই প্রবাদবাক্য। কেয়াবাৎ,, কেয়াবাৎ।

    বুদ্ধি আর কূটবুদ্ধি কী একই কথা ? চালাক, চতুর, বুদ্ধিমান , এই কথা গুলোর কী একই মানে ? না কি প্রতিটি শব্দ আলাদা আলাদা অর্থ বহনকারী?
    বীরভোগ্যা বসুন্ধরা। এ যুগে বীর শব্দের অর্থই পাল্টে গেছে। জোর যার মুলুক তার। বুক ঠুকে জোরসে বলো , হাম হ্যায় রাজা। ব্যস, প্রজারা নতজানু। কিছু ঠুনকো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর মাতব্বরির সঙ্গে একটু ধর্মের সুড়সুড়ি। ভীড়ে ভীড়াক্কার। ধ্বজাধারী গড্ডালিকা প্রবাহ।
    চলেছে….চলেছে…. চলেছে…

    বিনা পুঁজির কারবার। দলের মাতবর দের গায়ে গা ঘষো। হ্যাঁ য়ে হ্যাঁ , আর না য়ে না মেশাও। লবিতে ভিড়ে যাও। গোষ্ঠীতন্ত্রের ঢালাও কারবার।
    এলাকা দখল করে দেদার জবরদস্তি অপারেশন চালাও।
    শ্রদ্ধা ভক্তি নয়। ভয় করুক অমায়িক ভদ্র প্রকৃতির নিরীহ জনগণ। যেখানে ভয়, সেখানে জয়।
    বোমা পিস্তলের যুগ। প্রতিবাদ করলেই লাশ ফেলে দাও। আইন রক্ষক নেতার চামচা। নেতা ই আসল বস। চেইন সিস্টেম। সর্বত্র রখরার নিপুণ বন্দোবস্ত।
    রায় বেরুতে আড়াই যুগ। সাক্ষীসাবুদ লোপাট। মরে হেজে ভূত। হাজার হাজার পাতায় তদন্ত রিপোর্ট। চার্জশিট উই পোকার প্রিয় খাদ্য। শেষমেশ বেকসুর খালাস।
    মার দিয়া কেল্লা। বোতল খোল। ধরা পড়লে তবেই চোর, নইলে সব ব্যাটাই সাধু। জয় হো ওওও।

  • রম্য রচনা

    রম্য- ভোজনে বাঙালী

    ভোজনে বাঙালী
    -রীণা চ্যাটার্জী

    বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাবার আগে হাবিজাবি, এঁচোড়-থোর, ওল-ঢোল, মোচা-ওঁচা, কচু-ঘেঁচু, শাক-ঢাক সময়ে-অসময়ে না বুঝে না দেখে কেনার সাবধান বাণী প্রায় সব বাঙালী ঘর থেকেই ভেসে আসে। সে কথা কানের পর্দা ভেদ করে মন-মস্তিষ্ক কোথাও ঢোকে বলে মনে হয় না। কারণ বাজার থেকে বিশাল বপুর থলিটি নিয়ে হৃষ্ট চিত্তে কর্তা বাড়িতে ফিরে আসেন। অবশ্য ফিরে এলে একচোট চেঁচামেচিও প্রায় নৈমিত্তিক ব্যাপার। তবে তাতে ভদ্রলোকটির কিছুটি যায় আসে না। কখনো হুঙ্কারে বা কখনো মৌন থেকে ছুটির দিনের মধ্যাহ্নের আহারের যোগাড়টি করে মহানন্দে থাকেন। তারপর কানে তুলো, পিঠে কুলো নিয়ে তাস-ঢিভি-মোবাইল- আড্ডায় যত্ন সহকারে মনোনিবেশ করেন। গৃহিণী মরুক তাপে-ভাপে, ফোড়নের ঝাঁঝে, বটির মাঝে, বাসনের খাঁজে। রান্নার গন্ধে কর্তার মনে পুলক। মাঝে মাঝে চোখের তারা আনন্দে নেচে উঠছে- ভাগ্যিস কিনেছিলাম, ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে হতো আর কি! আহা! কি তাজা, বড়ো খাসা। মধ্যাহ্নের আহার শেষে তৃপ্তির উদ্গারে নিশ্চিন্তে দিবানিদ্রা- আর কি চাই জীবনে! সব রসাতলে যাক.. বাঙালী ভোজনে-শয়নে বেঁচে থাক। বাঙালী বললাম আলাদা করে- কারণ ওই নামের সাথে ভোজন রসিক, পেটুক অনেক বিশেষণ জুড়ে আছে।
    এক পরিচিত বাঙালী ভদ্রলোকের কথায়- ছ্যা ছ্যা বাঙালীরা ছাড়া কেউ খেতে জানে না কি? বলেই সুস্বাদু বেশ কয়েকটি রান্না জিহ্বাষ্ঠ করে উচ্চারণ করে গেলেন। জিভে জল এলো বোঝাই গেল। কেন না তারপরেই সুরুৎ করে একটা আওয়াজ এলো- ঢোঁক গিললেন।
    প্রথম যৌবনে বৌয়ের হাতের কদু মুখে মধু লাগলেও, মধ্য চল্লিশে এসেই পাতের পাশে বসে, বা মজলিসে বসে মা-ঠাকুমার হাতের স্বাদু স্মৃতিতে কখনো বা চোখে জল কখনো বা জিভে জল নিয়ে সংসারে অবলীলায় আগুন ধরিয়ে দেন। নিত্যদিন পাতের পাশে অন্ন থেকে পরমান্ন সাজানো গৃহিণী তখন সেই আগুনের তাপে জ্বলতে থাকেন। কখনো সোচ্চারে কখনো নিরুচ্চারে বলতে থাকেন, ‘সোনার অঙ্গ কালি হয়ে গেল- হেঁশেল ঠেলতে আর চব্য চষ্য গেলাতে গেলাতে.. সব বেইমান, ঝাড়ে-বংশে বেইমান’। মনে কোনো আপশোষ না রেখে কর্তা কখনো আগুনে আপোষের জল ঢালেন, না হলে মৌনব্রতের ছাই চাপা দেন। ভাব খানা- সময়ের মলমে পোড়া ঘা শুকিয়ে সংসারের চাকা ঠিক ঘুরবে। অগত্যা চোখের জল আর দীর্ঘ নিঃশ্বাসের কেমিক্যালে অগ্নি নির্বাপন। এ অভিজ্ঞতা নিয়েই সংসার সমুদ্রে টিকে থাকা। এতো সহজে মুক্তি নেই- সাত পাকের বাঁধন। প্রতি পাকে অজস্র পাঁক- যত ঘাঁটবে, তত জড়াবে।

    এ তো সংসারের ভেতরের কথা। একটু বাইরে কান পাতলেই শোনা যায়, ‘বাঙালী লোগ ছাপ্পান ভোগ খাতে হ্যায়’। অথচ দুপুরে এসে বলতে ভোলে না, ‘মেরী ঘর মে আপকি বানায়ি সব্জি সব বহৎ পেয়ার সে খাতে হ্যায়..’ উদ্দেশ্য খুব সহজে বোধগম্য। গা জ্বলে যায়! দাও এক বাটি তরকারি হাসি হাসি মুখে, ভদ্রতার খাতিরে। বাঙালী খাওয়াতে আবার কবে ভয় পায়? বাঙালী খেয়ে-খাইয়ে ফতুর এই প্রবাদ তো অলঙ্কার করে নিয়েছে। তোমাদের কি বাপু খাও রোজ আচার আর পাঁপড়- আবার ঘটা করে বলা চাই, ‘হাম তাজা খাতে হ্যায়..’ তাজা খাবারের মেনু কি? ডাল, আচার, পাঁপড়, চাউল-রোটি.. আরে নাঙ্গা নাহাগে কেয়া অর নিচোরেগা কেয়া! ওদের বাড়ি থেকে বাজারে যাবার আগে সাবধান বাণীও আসে না, দিবানিদ্রার বালাই নেই, রসনার আক্ষেপ নেই.. কেমন যেন পানসে।

    বেঁচে থাক বাঙালি তেলে-ঝোলে-অম্বলে। শুধু ওই মধ্য চল্লিশের পুরুষগুলোর, ‘চেতনা চৈতন্য করে দে মা চৈতন্যময়ী..’ না হলে সংসারে গৃহিণীদের বলতে হবে, ‘তোর ভাবসাগরে ভেসে আমি, হবো মা তোর পদাশ্রয়ী..’ সাত পাকের ল্যাটা চুকে যাবে।

  • রম্য রচনা

    রম্য- যৌবনোঃ ভবঃ 

    যৌবনোঃ ভবঃ
    -সুজিত চট্টোপাধ্যায় 

     

     

    যেই না কিনা বয়স ঢললো, অমনি কিনা দেহ গললো। দেহ যেন মোমবাতি। যেই জ্বলা শুরু, সেই গলা শুরু।
    সারা গা বেয়ে এঁকেবেঁকে নেমে আসছে সরু  সরু শিরার মতো মোমের ঝর্ণাধারা। মোমবাতি গলছে, গলিত মোম, বাতির গা বেয়ে নামছে আর বাতি ক্রমশঃ পুড়ে পুড়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে ছোট হচ্ছে।
    ক্রমশঃ বিদিকিচ্ছিরি, কুৎসিত চেহারা পাচ্ছে
    মসৃণ নিটোল মোমের গা। তারপর একসময়,
    আয়ু শেষ। জ্বলে পুড়ে আলো বিতরণ খতম।

    সেদিন এক বিখ্যাত অভিনেত্রীকে টিভিতে দেখলাম। হায় হায়! এ কি হাল! প্রথমে তো চিনতেই পারিনি, পরে যখন লাইফ টাইম এচিভমেন্ট পুরস্কার হাতে তুলে দেবার সময় নাম ঘোষণা হলো, তখন কপাল চাপড়ালাম। গালেও চড় খেতে ইচ্ছে করছিলো।
    চোখ কপালে তুলে, মাথা চুলকোতে চুলকোতে ভাবছিলাম, হায়! মাগো, এই সেই নায়িকা। যাকে দ্যাখবার জন্যে, কলেজ কেটে, ব্ল্যাকে টিকিট কেটেছি। ওপেনিং ডে ওপেনিং শো মারবো বলে?
    হায় হায় রে…
    কোথায় সেই মনোমুগ্ধকর রূপ-লাবণ্যে আকৃষ্ট করা দেহ পল্লব, কাজল নয়না হরিণী!
    এ তো, বাসর শেষের বাসি ফুলসজ্জা।  রংবাহারি ফুলের ফুলস্টপ।
    দেহপট সনে নট, সকলই হারায়..
    আরে ভাই, নট হোক বা নটী। পরিণতি একই। শুকনো ফুল, গোলাপও যা গাঁদাও তা।
    টুসটুসে রসালো ঝকঝকে আঙুর, কালের নিয়মে শুকিয়ে কিসমিস।

    ঠিক এ-ই জায়গায় এসে, বিশ্বাস করুন, ঈশ্বরকে খুব অবিবেচক মনে হচ্ছে। কেন জানেন, আমার মনে হয় এই ব্যাপারটা সত্যিই বড়ো হৃদয়বিদারক।

    শুঁয়াপোকা প্রজাপতি হয়ে উঠলে প্রফুল্লতা জাগে। রত্নাকর দস্যুবৃত্তি ছেড়ে জ্ঞানী ঋষি হলে, মনে প্রত্যয় জন্ম নেয়।
    কিন্তু ব্যাপারটা যদি উল্টো হয়ে যায়, মানে- প্রজাপতি যদি শুঁয়াপোকা হয়ে যায়, তাহলে কেমন লাগবে?
    ঠিক তেমনই একটি লাস্যময়ী হার্টথ্রব, যখন, আম শুকিয়ে আমসি হয়ে যায়, বুক ভেঙে যায়।

    হে রূপ, তুমি কোথা হইতে আসো, কোথায় মিলাইয়া যাও? ঠিকানাটি দিয়া যাও।

    এই তো, আমাদের একজন অতি জনপ্রিয় সুন্দরী নায়িকা। ম্যাটিনি আইডল। দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে চার দেওয়ালের আড়ালে,  ইচ্ছাকৃত বন্দীত্ব স্বীকার করে আটকে রাখলেন। কেন?
    আমি বলবো, এটা ঈশ্বরের নির্দয় নিয়ম নির্দেশের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ নির্বাক প্রতিবাদ। একটাই জোরালো প্রশ্ন.. দিলে যদি কেড়ে নিলে কেন?

    সেই পুরাণকাহিনী মনে আছে?
    রাজা যযাতি এক ঋষির অভিশাপে যৌবনের চেকনাই হারিয়ে জরাগ্রস্ত বৃদ্ধতে রুপান্তরিত হয়ে গেলেন।
    নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠে, হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে করতে ঋষির কাছে বারংবার নিজের অপরাধের জন্য ক্ষমাভিক্ষা করে, পুনরায় লোভনীয় আনন্দদায়ক কাম উচ্ছ্বল যৌবন ফিরিয়ে দেবার কাতর প্রার্থনা করতে লাগলেন।
    অবশেষে ঋষির মন কিঞ্চিৎ নরম হলো। কিন্তু অভিশাপ ফিরিয়ে নেওয়ার জো নেই। তথাপি, তিনি এক উপায় বাৎলালেন-
    যদি কোনও যুবক, তার এই বার্ধক্য স্বেচ্ছায় নিজ শরীরে ধারণ করে, তাহলে রাজা পুনরায় যৌবন ফিরে পাবেন। অর্থাৎ এক্সচেঞ্জ পলিসি।
    ঋষি তো নিদান দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলেন। এদিকে মহা ফাঁপড়ে পড়লেন রাজা।
    কে এমন বোকার হদ্দ আছে! যে স্বেচ্ছায় নিজের যৌবনের বিনিময়ে জরাগ্রস্ত বার্ধক্য গ্রহণ করবে?
    নিজের যুবক পুত্রদের কাছেও লাজলজ্জার মাথা খেয়ে প্রস্তাব দিলেন।
    বুঝুন যৌবনের মায়া কী মারাত্মক।
    পিতা নিজের ঔরসজাত সন্তানের জরাগ্রস্ত বার্ধক্য কামনা করছে, শুধুমাত্র নিজে যৌবনের মিষ্ট রসাস্বাদন করবেন, সেই ইচ্ছায়।
    তারাও কম সেয়ানা নয়। স্বল্প আয়ুর মধুর সুখ হাতছাড়া করতে তাদের বয়েই গেছে।
    মজা লুটবে তুমি, আর আমরা মাথা গোঁজ করে বসে বসে খকখক করে কাশতে কাশতে হেঁপোরুগী হয়ে গলার কফ তুলবো?
    হাঁ করে ইল্লি বলো।
    সবাই মুখ ঘুরিয়ে কেটে পরলো। শেষে অনেক চেষ্টায় এক পুত্র রাজি হয়ে গেল। ব্যাস, চালাও ফুর্তির গড়ের মাঠ।
    যৌবনই উদ্দামতার উষ্ণ ফুয়েল। ফুয়েল শেষ লম্ফঝম্প শেষ। বেতো হাঁটুতে তাল ঠুকে গান ধরো.. ‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হলো..’

    যাই হোক, অনেকদিন যৌবনের চরম আনন্দ লাভ করে, একদিন তিনি পুনরায় নিজের সেই পুত্রকে তার দান করা যৌবন ফিরিয়ে দিয়ে, তার শাপগ্রস্ত জরাজীর্ণ দেহকে স্বীকার করে নিলেন।
    নিলেন বটে। কিন্তু তা স্ব-ইচ্ছায় এবং আনন্দ চিত্তে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে।

    এই জন্যেই বলছি, ঈশ্বর ইচ্ছে করলে, এই জায়গাটা নিয়ে আর একটু ভাবনা চিন্তা করে নিয়মটা চালু করলে, এইরকম বুকফাটা আফসোস কারুরই থাকতো না, একথা নির্দ্বিধায় হলফ করে বলা যায়।
    আসলে কী জানেন, মনের মৌবনে সদাই বসন্ত। সেখানে শীত ঋতু আসে না। হারামজাদা শরীর সেই সত্য বুঝতেই চায় না।
    আচ্ছা, কেমন নিয়ম হলে বুক ফাটতো না? সেলুউসন, আসুন দেখা যাক..

    প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মের পর থেকে পর্যায়ক্রমে শারীরিক পরিবর্তন অনিবার্য।
    ভালো কথা, হোক। কিন্তু এই পরিবর্তন একটি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে থেমে যাবে। সময়টা ধরা যাক ত্রিশ বছর।
    এইসময়ের পর থেকে শরীরের আর কোনও পরিবর্তন হবে না। বয়স বাড়বে। আয়ু কমবে। নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যুও হবে। কিন্তু ঐ রকম বদখদ চেহারায় নয়।
    যৌবনের জৌলুশ থাকুক আমৃত্যু।
    রাজপুত্র, অচেনা অজানা অনভ্যস্ত পথে বেরিয়ে দেখলেন  ব্যধি, বার্ধক্য, মৃত্যু।
    আশ্চর্য হলেন, ব্যথিত হৃদয়ে স্ত্রী, পুত্র, রাজপ্রাসাদ সবকিছু পরিত্যাগ করে চললেন বোধদয়ের সন্ধানে। হলেন বোধিবৃক্ষ এর নিচে বোধিসত্ত্ব। ভগবান বুদ্ধ।

    তাই বলি, ফুল ঝড়ুক, কিন্তু শুকিয়ে যাবে কেন? সে তার সৌন্দর্য নিয়েই যাক না। ক্ষতি কী?
    তাই, শুধু আয়ুষ্মান ভবঃ নয়, যৌবনোঃ ভবঃ
    এ-ই হোক  নব্য যুগের, নব্য আশীর্বাদ।

You cannot copy content of this page