সম্পাদকীয়
-
ভাবের ঘরে চুরি
ভাবের ঘরে চুরি
–রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
রোজ চলার পথে আজকাল মুর্তি বড়ো বেশি চোখে পড়ে। নানারকম প্রকল্পমূলক প্রতীকের মুর্তি- যেখানে উন্নয়ন দু’হাত বাড়িয়ে মুচকি হাসে। আছে পুরোনো দিনের বহুল পরিচিত মুর্তি- পুরোনো কলকাতাকে মনে রাখার, ধরে রাখার প্রয়াস। যদিও তিলোত্তমা রোজ ক্ষয়রোগের দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীরবে। আছে মনিষীদের পরিচিত ভঙ্গীর মুর্তি। ভাবগম্ভীর দু’হাত আড়াআড়ি, মাথার পাগড়ি ঘাড় দিয়ে সামনে এসে পড়েছে, সুদুর প্রসারিত পাথুরে দৃষ্টি। আছে টাক মাথা, হাতে লাঠি, চোখে চশমা, হেঁটো ধুতিতে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটার এক পা এগিয়ে রাখা মুর্তি। তারপর পুরানের রথী-মহারথী তাঁদের সারথী, হাতি, ঘোড়া সবকিছু নিয়ে যে যেমন জায়গা পেয়েছে, জাঁকিয়ে বসেছে ফুটপাতে, রাস্তার মোড়ে। কিন্তু বড়ো উঁচুতে, কাকপক্ষী নাগাল পায় অতি অনায়াসে। রোজ বাহ্যে-আহ্নিক সেরেও যায় সন্ধ্যায়-প্রত্যুষে। মানুষ শুধু মনে করে দিনক্ষণ দেখে। চাঁদা তুলে মালা, ধূপকাঠি জোগাড় করে ঝেড়ে, ফুঁকে পরিস্কার করে, অতিথি বরণে আর মাইকের অতিশব্দময় ব্যঞ্জনায় এলাকাবাসীর শান্তির দড়িতে টান দিয়ে মনে করিয়ে দেয় নির্জীব মুর্তির পিছনে তাদের সজীব অস্তিত্ব।
হঠাৎ মুর্তির কথা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতেই পারে। কিন্তু সত্যিই কি অপ্রাসঙ্গিক? এক একটা মুর্তি যেন কোনো কোনো সময় মনের গভীরে নাড়া দিয়ে যায়। স্বামীজির পাথুরে দৃষ্টি বলে দেয় অন্তঃসারশূন্যতার কথা। আমরা তাঁর কথা বুঝিনি, বুঝতে চাইনি, শুধু তাঁর অবয়বের প্রচার কাজে লাগিয়েছি, তাই তো তাঁর বাণী, তাঁর ভাবনা সব বিকাশের ভান করে দাঁড়িয়ে আছে, নাহলে হয়তো ওই দৃষ্টি পাথুরে প্রতীক না হয়ে যুবসমাজের চোখে ষ্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠতো। গান্ধীজির মাথাটা বাঁচাতে কবে যেন কে একটা ছাতা লাগিয়ে দিয়েছিল- ব্যস দায়িত্ব শেষ, ভুলে গেছে। তার বিবর্ণ শতছিন্ন অবহেলার নীচে গান্ধীজি- দৃষ্টিকটু? প্রথম প্রথম মনে হলেও এখন মনে হয় কি অদ্ভুত মিল, আমাদের তাপ্পি মারা মানসিকতার সাথে ওই মুর্তিটার। আমাদের হেরে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়ার জীবন্ত নিদর্শন। ব্যর্থতার পরিচয় দিতেই যেন দাঁড়িয়ে পড়েছেন রাস্তা ফুঁড়ে। দাঁড়িয়ে আছেন পরমহংসদেব, পাশে বসে মা সারদা, অন্য পাশে বসে স্বামীজি। তিনমুর্তি একসাথে- এরা বেশ নাগালের মধ্যে, ভালো ভাবে দেখাও যায়। কিন্তু বেমানান না! শুধু পরমহংসদেব দাঁড়িয়ে বাকি দুজন বসে.. মানীর মান! এ কিসের প্রতীক? যাই হোক শিল্পী বা পাড়ার দাদারা যেমন ভেবেছেন। আসি ভঙ্গিমার কথায়, আলোর বিকিরণ- বিচ্ছুরণ বোঝানোর মত দুই হাতে দুই ভঙ্গী রামকৃষ্ণের মুর্তিতে। ভাবখানা এই দিক দিয়ে এসে পড়লো, ওই দিকে বেরিয়ে গেল- চটজলদি। কি অদ্ভুত মিলে গেল আমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন ও ভাবনা। একটা বিতর্কের জন্ম হয়, চাপা দিতে আর একটা বিতর্কের সৃষ্টি করা হয়। আমজনতা মেতে ওঠে, একটার পর একটা ধরতে। বেশ ধামাচাপা পড়ে যায় আগের ঘটনা, নতুনটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি হলেই আরো একটা বিতর্ক বানাতে কতক্ষণ লাগে! আবার সময় মতো তুলে এনে তালুতে ফেললেই হল। সঙ্গে দোসর করোনা আর মিডিয়া- পরিস্থিতি হাতের বাইরে গেলেই করোনো বেড়ে যাবে, মিডিয়া ঘন্টায় ঘন্টায় ভয় দেখাবে “সীমা থেকে সীমানা” ছাড়িয়ে।
তাহলে কি আমরা মনীষীদের দেখানো পথেই চলেছি- নাহ্, শুধু ভান করছি আর ভাবের ঘরে চুরি করছি।বৃষ্টি হচ্ছে, বর্ষাও ঘন্টা নাড়িয়ে এসেও গেছে- কিন্তু রেহাই নেই অস্বস্তির আর্দ্রতা থেকে। ঝলমলে আকাশ জুড়ে শরতের বাড়াবাড়ি। তবুও বর্ষামঙ্গল উপেক্ষা করার সাধ্য নেই। পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা বৃষ্টির উচ্ছাস ও শুভেচ্ছা রইলো আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে সকল শুভানুধ্যায়ীদের।
-
প্রতিবাদের আড়ালে
প্রতিবাদের আড়ালে
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
কেমন যেন অদ্ভুত এক সময়! প্রতিবাদ, প্রতিবাদের ভাষা সবকিছুই কৌলিন্য হারিয়েছে, আমরা কি ফিরে যাচ্ছি সেই অন্ধকার যুগে? যেখানে হানাহানি, ছিনিয়ে নেওয়া ছিল জীবন জীবিকার শেষ কথা।
কিন্তু আমাদের জীবিকা তো সভ্যতার মুখোশে… তাহলে! মৃত্যু সবসময় স্তম্ভিত করে, স্তব্ধ করে দেয়, কিন্তু আমরা দেখলাম অসভ্যতামি। একদম সত্যি বলছি- আমার মনে হয়েছিল কি অসভ্য এরা এইসময় এতো কোলাহল, এতো অশ্রাব্য ভাষার প্রতিযোগিতা, কাদের মাঝে আছি? এই কি শ্রদ্ধা? এটাই ভালোবাসা? না কি সবটাই স্রোতের মুখে জনপ্রিয়তা কেনার সস্তা প্রচেষ্টা? তারপর মনে হলো ভেড়ার পাল আবার নতুন খবর পেলেই ভ্যা ভ্যা করে দৌড়ে যাবে, মৃত্যুর স্তব্ধতা ওদের স্পর্শ করবে কি করে? কিশোর বেলায় দেখতাম দুরদর্শনে পুনঃপ্রচার হতো “অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় দুঃখিত” এরা ঠিক সেই বিঘ্নকারক প্রাণী। তখন দুরদর্শন ছিল সাদা-কালোর যুগে, এরা বড়ো রঙীন- তফাৎ এইটুকুই বাকিটা বিঘ্নকারক।যে প্রতিবাদ আমার তিলোত্তমা নতুন দেখছে তা হলো "স্বখাত সলিল" ওখানেও একদল শুঁকছে, একদল ধুঁকছে- ভবিষ্যত জানা নেই। শুধু বুঝতে পারি এ তো আমাদের ভরসা ফল, বিশ্বাসের ফল, বাকিটা কারসাজি, তবু ডুবতে আমাদেরই হবে…
একটু অন্য কথা-
আলাপী মন ওয়েব ম্যাগাজিনের তিনটি মুদ্রণ প্রকাশ “প্রতিশ্রুতি”, “বোধন” ও “অবলোকন”। “অবলোকন” প্রকাশিত হবার পরেই অতিমারীর কবলে পড়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। স্তম্ভিত জীবন ধীর লয়ে স্বাভাবিকের পথে হাঁটলেও আশঙ্কার মেঘ এখনো মাঝে মাঝে ভয় দেখায়। ভয় যেমন আছে, ইচ্ছেগুলোও তো মনের কোণে বাসা বেঁধে আছে। ছাপা অক্ষরের ঘ্রাণে সিক্ত হয়নি আলাপী মন বেশ কয়েকটি ঋতু। ছাপা অক্ষরের ঘ্রাণ নিতেই আবার এক ছোট্ট প্রয়াস- শারদীয়া সংখ্যার মুদ্রণ প্রকাশ আলাপী মন-এর “স্বজন সাথী” সাহিত্যিকদের লেখনী সম্ভার নিয়ে।
নিত্য লেখনী সম্ভারে যাঁরা আলাপী মনকে ঋদ্ধ করেছেন তাঁদের অফুরান ধন্যবাদ জানাই। যথাশীঘ্র সম্ভব তাঁদের সাথে যোগাযোগ করা হবে, আনন্দ ভাগ করে নিতে। -
মুক্ত করো ভয়
মুক্ত করো ভয়
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
মাতৃভূমি, মাতৃদুগ্ধ, মায়ের আঁচল, মাতৃভাষা
সবকিছুতেই জন্মগত অধিকার। ছিনিয়ে নিতে হয় না, নিজে থেকেই ভরিয়ে রাখে জন্মক্ষণ থেকে প্রকাশে-অপ্রকাশে। এ তো অনুভব আর অনুভূতির কথা, বাস্তব! একটু আলাদা।
মাতৃভূমির নির্বাচিত জাঁদরেল, স্বশিক্ষিত, বিভিন্ন ধরণের ভূস্বামী (শাসক, প্রশাসন) বিরাজিত আছেন তাঁদের চেলা চামুণ্ডা নিয়ে স্বমহিমায়। আমি বা আমরা কেবল নাগরিক মাত্র, নাগরিকত্ব অধিকার ভোগ করি জন্মসূত্রের পরিচয়ে, মাতৃভূমি বলে গান গাইতে পারি, ভাবে আবেগে ভেসে যেতে পারি বিশেষ বিশেষ দিনে- তার বেশি কিছু নয়, এটা মনে রাখতে পারলে নাগরিকত্ব পরিচয়ের কার্ড আমার বা আমাদের পকেটে। মোদ্দা কথাটা মাতৃভূমিকে যতোই ভালোবাসো, ভূস্বামীদের ন্যায়-অন্যায় নিয়ে মুখ খুললেই তা কিন্তু মাতৃভূমির বিপক্ষে যাবে, তখন নাগরিকত্ব নিয়ে টানাটানি হতেই পারে। মাতৃভূমিতে জন্মগত অধিকার কতটুকু- প্রশ্নের মুখে!মাতৃদুগ্ধ, সেও বড়ো ক্ষণস্থায়ী। সেই কবে খেয়েছি জ্ঞানচক্ষু খোলার আগেই, সেই স্বাদে শুধুই স্মৃতি। কর্মব্যস্ততার মাঝে পড়ে জন্মের কিছু দিন পর থেকেই নিমপাতা, লঙ্কাবাটা সহযোগে স্তনবৃন্ত শিশুমুখ থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার নানারকম ফন্দিফিকির চলতেই থাকে। তারপর বিজ্ঞাপনের গুঁতোয় প্রোটিন-ভিটামিনের লোভনীয় তালিকা তো আছেই। অতএব… সুযোগের সদ্ব্যবহার, “আহা! দেখলেই বোঝা যায় __ বেবী” ছোটোবেলায় চেনা বিজ্ঞাপনী চমক।
নামে হয়তো অনেক বদল এসেছে, নতুন নতুন চমক এসেছে। তাহলে মাতৃদুগ্ধ! যার যেমন ভাগ্য তেমন মেলে। তবে “মাঈ কা লাল” কিন্তু মাতৃদুগ্ধ আষ্ফালনের এক আজন্মের বিজ্ঞাপন, প্রয়োজনে ঝুলি ছেড়ে বেরিয়ে আসে।মায়ের আঁচল- ওটাই শুধু বড়ো নিজের।
মা-সন্তানের সম্পর্কের একান্ত আপন। মায়ের আঁচল যেন গ্ৰীষ্মে শীতলপাটি, শীতে একমুঠো রোদ্দুর আর উষ্ণতা। সবসময় মাতৃস্নেহে ম ম করছে। চোখ বুঁজলেই সেই ঘ্রাণ যেন ঘিরে ধরে- গভীর, ভীষণ গভীর চাইলেই যতবার খুশী ডুব দেওয়া যায়।
এ স্বাদের ভাগ হবে না।মাতৃভাষা- “মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাঙলা ভাষা” ভাষার কথা এলেই তিনি এসে আগে হাত ধরেন। যদিও শুধু বাঙলা নয়, সবার কাছেই নিজের মাতৃভাষা বড়ো সুমধুর। শুধু মধুর নয় আবেগের, গর্বের।
মাতৃভাষায় কথা বলে সুখ, গল্প করে সুখ, পরনিন্দা-পরচর্চায় বড়ো সুখ। যদিও এক শ্রেণী আছে যারা ভাষাদিবসে আলাদা করে বিশেষ যত্নে মাতৃভাষা শেখে ও শেখায়, বাকিদিনে ভুলে যেতে পারলেই বাঁচে।
ভাষা নিয়ে বললে তো হাজার কথা, লক্ষ ব্যাখ্যা, তর্ক-বিতর্ক, তরজা, তর্জমা সবটুকু আর বুঝলাম কবে? শুধু মাতৃভাষার সান্নিধ্যে সুখে বিভোর হয়ে থাকলাম, মনের পাতায় আঁক কাটলাম। শ্রদ্ধায়, স্মরণে বেশ ছিলাম। কিন্তু ওই যে পুরস্কার! তা’ও তো অসুবিধা ছিল না- দৈ তো আর নেপোয় মারে নি, নিজের জিনিস ঘরে উঠেছে। তা বলে যা মুখে আসবে তাই বলে সাফাই!
এমন কি তাঁর জন্মদিনেই উদাহরণে তিনি উঠে এলেন অবলীলায়। হায় বুদ্ধিজীবী সাফাই গাওয়া বাঙালী… এতোটুকুও লজ্জা পেলে না? আপামর বাঙালীর গর্বের জায়গায় অবলীলায় হাত রাখলে! আর কতো? তোমাদের জ্বালায় তো সব জলাঞ্জলি গেছে, সব কেড়ে নিয়েছো সে কবে পুনরুদ্ধার হবে, আদৌ হবে কি না কে জানে! তবুও যে কটা পুরোনো কাঠামো এখনো সচল- তারা ভাবি আমাদের শৈশবের কথকতা, কৈশোরের কিশলয়, যৌবনের চঞ্চল চারুলতা, বার্ধক্যের ব্রতকথা আদৌ অক্ষুন্ন রাখতে পারবো তো?
আশার কথা গুরুদেব বলে গেছেন- “মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়…”এমন উষ্ণ দিনে উষ্ণ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।
-
ফিকে শুভেচ্ছা
ফিকে শুভেচ্ছা
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
পঞ্জিকা মতে বর্ষবরণের সূচনা হয়ে আজ দ্বিতীয় দিন। দিন পেরিয়ে রাত আসছে, রাত পেরিয়ে ভোর- ভয় ভোর। আবার কি অপেক্ষা করে আছে! নতুন খবর? না, তা নয়- বীভৎসতা কতোটা তীব্র, সেই খবরে আরো কতো উলঙ্গপনা!চাপান-উতোর, তর্ক-তরজা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে। তাঁরা সে গুরুভার অক্লেশে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এইসব- “চলছে… চলবে”
এরমধ্যে মাননীয় বাদী-বিবাদী পক্ষ আছেন তাঁদের যুক্তি-গপ্পো আছে। আর আছেন অতীতদ্রষ্টারা, যাঁরা অতীতের ঝুড়ি উপুড় করে একটা একটা করে পচাগলা উদাহরণ তুলে তুলে দেখাবেন। তাঁদের মনে হয় এটাই বক্তব্য অতীতে ওরা করেছে এখন আমরা করলে দোষ কি? বলছিলাম পরিবর্তনের অঙ্গীকার ভুলে গেলেন কি? আমরা পরিবর্তনের সভ্যতা-সংস্কৃতি দেখছি কি? না কি শেয়ালের কুমীর ছানা তুলে দেখানোর মতো পরিবর্তনের ছল দেখানোর কথা ছিল! তাহলে কুমীর ছানা শেষ হলে! ছলেবলে তখন পা’ বাঁচাতে পারবেন তো? আপনাদের অবশ্য চটি আছে- একটা ভরসা এই আর কি…আছেন ইতিহাস প্রাজ্ঞরা- যাঁরা এদেশ-ওদেশ-বিদেশ, একাল-ওকাল দেখিয়ে বলে দেবেন ইতিহাস সাক্ষ্য আছে ক্ষমতার পেশী প্রর্দশনীর। মন শান্ত হয় তো এইসব স্তোতবাক্যে? সভ্যতা কি? অবশ্যই আধুনিক শপিংমলে তা পাওয়া যায় না। সভ্য হলে তবে তো সভ্যতা। আপনারা ইতিহাসের উদাহরণ পাথেয় করলে প্রস্তর যুগে ফিরে যাওয়াই তো ভালো- আর যাই হোক শব্দের-বাক্যের ঝনঝনানি থেকে তো রেহাই পাব। কি বলেন প্রাজ্ঞজনেরা?
শব্দের ঝনঝনানি থেকে মনে পড়ে গেল সদ্য কথিত (সংস্কৃতিমনস্ক?) এক বুদ্ধিজীবীর বাণী। যদিও এর পূর্বে উনি একাধিক বাণীতে সরগরম ফেলেছেন- তবুও শেষোক্ত বাণী যেন অমৃত সমান। কানের ভিতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করলেই অজান্তেই হাতটা পাদুকাযুগল স্পর্শ করছে। নাহ্, ওনার নয়, নিজের, তারপর?
পাদুকাবন্ধনীর সদ্বব্যবহার করতে মনটা আনচান করছে, জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। ঠাণ্ডা হবার উপায় নেই কারণ উনি মমতাময়ীর আদর্শের আঁচলে সুরক্ষিত এক অদ্ভুত প্রাণী।
তবুও মনটা চীৎকার করে বলে উঠতে চাইছে- এমন প্রতিবাদী “নপুংসক” আরো শতসহস্র জন্ম নিক, আমরা মাতৃ জন্ম ধন্য মনে করবো এমন “নপুংসক” জন্ম দিয়ে, তবুও ওনার মতো বুদ্ধিজীবীর জন্ম দিয়ে গর্ভ কলঙ্কিত করতে চাই না, ওনার মা যেখানেই থাকুন (ওনার তো স্বর্গ-বেহস্ত ঘেঁটে আছে) একই কথা বলতেন মনে হয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে লজ্জাও পেতেন। সন্তানের গর্বে গরবিনী হওয়া যায় কিন্তু এমন কুপুত্র! ছিঃ…শুভেচ্ছা, শুভকামনা সব যেন কেমন ফিকে লাগে, এতো রক্তের বন্যায়। এ যেন রক্তসেচন হচ্ছে! এর ফসল কি হবে? কি হতে পারে? জানি না, জানতেও ভয় করে।
-
তিনটি মন্ত্র
তিনটি মন্ত্র
-রীণা চ্যাটার্জী“তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন… দুঃখের পৃথিবীটা তাদের কাছে এক আনন্দ আশ্রম’
বড়ো প্রিয় আর পরিচিত গানের কলি’র তিনটি মন্ত্রই আজ মিথ্যের জাদুকাঠিতে প্রায় অস্তাচলে। অবোধ বেলার আনন্দ আশ্রমটাও কেমন রূপ বদলাচ্ছে- অচেনা লাগছে।
আশৈশব চেনা পৃথিবীটা বদলে যাচ্ছে, বড়ো দ্রুত তার গতি। আগে বুঝতাম না?
না কি এখন তাল মেলাতে পারছি না?
আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছেও শুনেছি-
কি কাল এলো বাবা! ভালো-খারাপ বুঝতাম না তখন। এখন বুঝি ভাঁজগুলো বর্তমানের মতো এতো প্রকট ছিল না। যা ছিল তা বুদ্ধির সাথে মৃদূ চিন্তা বৃদ্ধি, আক্ষেপ, আশঙ্কা- কথার ছলে বলে যাওয়া এক প্রবাদ। আর এখন ঘুমন্ত অস্তিত্বের মাঝেও শুধুই প্রবল আশঙ্কা কড়া নাড়ে।
সত্যের জায়গায় মিথ্যার আষ্ফালন, ধর্মের নামে অসহিষ্ণু, সুন্দরকে সাজো সাজো রবে ঢেকে রাখা- এই কি অবশেষ?
“সত্যম শিবম সুন্দরম” মন্ত্রগুলো খুঁজতে থাকে মন, একটা আনন্দ আশ্রম ফিরে পেতে চায় জীবন শান্তিছায়ায়। আর উত্তরসুরীদের জন্য একটু নিরাপদ নির্ভরতার আশ্রয়। আশঙ্কার মেঘ ছেয়ে গেছে, ভয় তো ওদের নিয়েই। ভয় পেতে পেতে মরিয়া মনটা এক একদিন চীৎকার করে বলতে চায় মিথ্যে নির্লজ্জ ভাবে আঁধার নিয়ে আসতে পারে, কিন্তু সূর্যের মতো ধ্রুব, শাশ্বত হতে পারে না। সূর্যের তেজোদীপ্ত আলোয় মিথ্যাচারের আঁধার দূরীভূত হবেই। শঠতার আষ্ফালন মুখ লুকোবে সত্যের দৃঢ়তার কাছে। সুন্দর হয়ে উঠবে পৃথিবী- শত দুঃখ সয়ে ফিরে আসবে আনন্দ আশ্রম। অপেক্ষা কখনো অন্তহীন হতে পারে না, হয় না। তাই অপেক্ষায়, আশায় বুক বেঁধে রাখা।সকল শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রিয়জনের জন্য আবীর সুবাসিত ফাগুন শুভেচ্ছা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে। শুভ হোক আগামী।
-
প্রয়াণ… লহ প্রণাম
প্রয়াণ… লহ প্রণাম
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
সুন্দর, শাশ্বত, সমাহিত, পবিত্র- এই শব্দগুলো বারবার ভেসে উঠেছে মানসপটে গত কয়েকদিন ধরে। সত্য তো বটেই- কিন্তু কজন পায় এমন সমাহিত প্রয়াণ মুহূর্ত।
মৃত্যুকে ছুঁয়ে নতুন করে যেন মূর্ত হয়ে উঠলেন আরো আপনজন হয়ে গেলেন আত্মার। এ আত্মিক বন্ধন তো কোনোদিন আলগা হবার নয়। আসমুদ্র হিমাচল যেদিন এক সাথে অশ্রুসাগরে ভাসলো- সেদিন দূরে সরে গেল মনের সকল কলুষতা, ভেদাভেদ, জাতি, ধর্ম। প্রকৃত শিল্পীর কোনো জাতির নয়, কোনো বিশেষ ধর্ম, বর্ণের অধীন নয়, একটাই পরিচয় তাঁকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় তাঁর শিল্পসত্তা।
রাজনীতি ছুঁতে পারলো না তাঁকে- জীবনেও না, মরণেও না। ক’জন পারেন এমন জীবনাদর্শ তৈরী করে যেতে? স্বর্গীয় অমলিন হাসির ছবিটা যেন শিখিয়ে দেয়- জীবনের ছন্দ, বারবার দেখেও আশ মেটে না। না, তিনি আর ফিরে আসতে চান না, যদিও আসেন আবার “লতা মঙ্গেশকর” হতে চান না। তাঁর নিজের কণ্ঠেই এইরকম শোনা গেছে সাক্ষাৎকারে। তাহলে যদি পুর্নজন্ম বলে কিছু থাকে- তিনি হয়তো হবেন তাঁর নিজের কণ্ঠের অনুরাগী। আনমনে অবসরে শুনবেন তাঁর পূর্বজন্মের কণ্ঠস্বর। মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়ে হয়তো ভাববেন- “ইসস আমিও যদি এইরকম গাইতে পারতাম” যেমন আমরা সবাই এখন ভাবি। হয় না সবকিছুর পুনরাবৃত্তি হয় না- তাহলে মহিমা খন্ডিত হয়ে যায়। তিনি থাকুন একাধিপত্য নিয়ে সুরের জগতে স্বমহিমায় যতদিন পৃথিবীতে সুর থাকবে, থাকবে তাঁর গান।যখন লিখছিলাম, তখনো জানতে পারিনি গীতশ্রীও অমৃতলোকে। সুরের সন্ধ্যা অস্তমিত! গানে গানে আবার ফিরে পাওয়ার, অনুভব করার আপ্রাণ চেষ্টা…কৈশোর, যৌবনে সুরে সুরে হারিয়ে যাওয়ার সন্ধ্যা বেলা- “কিছুক্ষণ আরো না হয় রহিতে কাছে..” শোকার্ত বাঙলা আর বাঙালীর একটাই আর্তি আজ আকাশে বাতাসে।
সকালে আবার- বাপী লাহিড়ী না ফেরার দেশে… জীবনকে সচল রাখার, ছন্দে বেঁধে রাখার, সুরে সুরে মাতোয়ারা করে দেওয়া শ্রদ্ধেয় প্রিয় মানুষগুলো মুহূর্তের ব্যবধানে স্বর্গীয় হয়ে গেলেন।
জীবনের জৈবিক যন্ত্রণা থেকে দূরে, যান্ত্রিক পরাধীনতা ছিন্ন করে পরপারে। মৃত্যু শান্তি এনে দিয়ে গেল হয়তো। কিন্তু আমরা.. একসাথে এতো বিষাদ! কিভাবে দিতে পারি হৃদয়ের অঞ্জলী? বড়ো বেসুরো যে আজকের সকাল। সুর কতো দূরে.. “ইয়াদ আ রাহা হ্যায়…” -
অসঙ্গতিতে সঙ্গতি!
অসঙ্গতিতে সঙ্গতি!
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
কঠিন পরিস্থিতি। মনকে সান্ত্বনা দিতে সবসময়ের ভরসা বিশ্বকবি, “ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে/ অন্ধ সে জন শুধু মারে আর মরে।” কিন্তু তা’ও সান্ত্বনা মেলে না। ধর্মের বেশে ভিড়ের উদগীরণ দেখলো বিশ্ব, হয়তো বা খানিকটা স্তম্ভিত বিশ্ব। দোষ কার বা কাদের? শুধুই প্রশাসন! একতরফা আঙুল তুলে লাভ নেই। যারা এলো, ছড়ালো, মেলে ধরলো- তারাও তো দোসর। যারা দয়া করে মুখবন্ধনী পড়লো কিন্তু নাক খুলে রাখলো, থুতনিতে দাড়ির মতো শোভাবর্ধন করালো- জনে জনে দেখার দায় কার?
পুলিশ আছে, সেবাকর্মী আছে, পৌরসভার কর্মী আছে- ওদের দায়? ওদের জীবন এতো মূল্যহীন? চাকরি বাঁচাতে মহামারীর জঙ্গলে থাকতে হবে! প্রশ্ন মনে এলেও, উত্তর খুঁজতে নেই- তাতেই বিপদ ঘন্টা বাজবে। ক্ষমতার দাম্ভিক শিং বাগিয়ে আসবে ছিন্নভিন্ন করে দিতে- ওদের জন্য আইন যেন হাতের আঙুল, যেভাবে খুশি মুঠো করো, মুঠো ভরো।
আমাদের দেখতে হয়- বিক্রিত, বিকৃত আইন ব্যবস্থার প্রহসন। আদালতকে “মহামান্য” বলবো? থাক ওই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া ভালো, যতোই হোক আমরা সজ্জিত ও সুসজ্জিত নাগরিক। Decency and decorum রক্ষা করা আমাদের অবশ্যই কর্তব্য। তবুও মনের বুনোপনা যায় না- মনে হচ্ছে মাঝে মাঝে সব উন্মত্ত, উলঙ্গ, আধা উলঙ্গ, রাজনৈতিক ব্যাপারী, আইনের তথাকথিত শিরদাঁড়া বিক্রি করা রক্ষাকারী, সবকটাকে সাগরে চুবিয়ে দিতে পারলে শান্তি হতো খানিকটা- পৃথিবীর বুকে আর্বজনা হয়ে জমে আছে সব। আর্বজনা ধোয়ার বড়ো শখ কিন্তু ওই যে Decency and decorum বয়ে চলছে ফল্গু ধারায়-
অসঙ্গতিতে সঙ্গতি খুঁজে নিতে।নির্বাচন পিছিয়ে যারা মহৎ ও মহান হবার চেষ্টায় ব্রতী, তাদের মুখোশের আড়ালে কিন্তু অন্য গল্প। প্রচার করার জন্য লেজুরগুলো প্রায় সবাই আক্রান্ত। প্রচারের দাপাদাপি ছাড়া কি নির্বাচন মানায়! প্রচার ছাড়াও নির্বাচনী নানান কলাকৌশলের কুশীলব ওই দু’ পেয়ে লেজুড়গুলো ছাড়া যে অসম্ভব। তাহলে ফলাফলের দিন গলা উঁচু করে হাত জোড় করে বিনয়ের অবতার হয়ে মাথা পেতে জনগণের রায় মেনে নেওয়া নেতাদের কি হবে? অঙ্ককষাটা তো আগে ঠিক করে করতে হবে। তাই যে লেজুরগুলো খোঁয়াড়ে ঢুকেছে- সাত, দশদিন ঘরের খেয়ে পার্টির (নির্দেশ মানতে) হয়ে মোষ তাড়াতে ফিরে আসুক, সেই সময়টুকুতে যতটা দায়িত্বের মুকুটে মহান হওয়া যায়।
সাধারণ মানুষের কথা বা বিশেষজ্ঞদের কথা বা ডাক্তারদের মতামত এইসবের পরোয়া ক্ষমতাধারী শিং-গুলোর কোনোদিন ছিল না। কারণ এরা স্বশিক্ষায় অশিক্ষিত।
ভালো কথা আর যেন মনে ঠাঁই পায় না, ধুস…নিন্দেকুটে মন। শুধু শুধু নিন্দে করে মিছিমিছি- মানবসেবা ধর্মে ব্রতীদের এমন করে কি বলতে আছে!নলেন গুড়ের সুবাস বাঙলার ঘরে ঘরে এখন- সুবাসিত হিমেল শুভেচ্ছা, মিঠে শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে সকলের জন্য।
-
ভাবনায় ছেদ
ভাবনায় ছেদ
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
ভাবের ঘরে মশারি, বড়ো উৎপাত, রাতদিন ভনভন করছে। ভাবনায় ছেদ- নিজের মতো করে ভাবার উপায় নেই। পেয়াদা হাজির- শুরু হবে বিশ্লেষণ, বিচার। ওদের আবার বুদ্ধির গোড়ায় কুয়াশা- ধোঁয়া হলে না হয় সরে যাবার আশা থাকতো। কিন্তু কুয়াশা যে! যখন সরবে তখন বুদ্ধি ভিজে গোবর, বড়ো বেকায়দায়। যেমন শিখিয়েছে তেমন করবে, যা বলতে বলেছে তাই বলবে।
বর্তমান চলছে- সুবিধা মতো অতীতের অজুহাত আর বাজু ধরে। কখনো দায় চাপিয়ে বলছে অতীতে এমন হয়েছে, কখনো কৃতিত্বের দাবী নিয়ে অভূতপূর্ব খেতাব জিততে চাইছে। সব অজু-বাজু’র খেল- যেমন খুশি হাতটা ধরো, ক্ষমতায় থাকতে হবে, এটাই আসল কথা। ভবিষ্যত? ও তো ঝরঝরে করেই দেবে, কোনো অবকাশ থাকবে না শুধরে নেওয়ার।
অতীত-ভবিষ্যতের পাট মিটিয়ে বর্তমানেও কেউ কাউকে ছাড়তে নারাজ- আসল দোষ দেখতে নারাজ। কচুপাতার আড়ালে এক সুর- ওদের ধর্ম করেছে, ওদের রাজ্য করেছে, ওরা রাজনীতি করেছে। আমি, আমরা, আমাদের সব ধোয়া তুলসী পাতা। কচুপাতার চুলকানি কি তাতে কমে? যেখানে তেঁতুল জল দেওয়ার কথা সেখানে শাক ধোয়া জল, হড়হড়ানি বেড়েই চলছে। পাবলিক মুখ থুবড়ে পড়ছে, বয়ে গেল তাতে- “আমরা-ওরা” “আমাদের-ওদের” চালিয়ে যাবার লেজুর তো অভাব নেই। বিতর্কে গলা শুকিয়ে কাঠ- তবুও চালাতে হবে এটাই কর্তৃত্বের কৃতিত্ব। একমাত্র বিতর্ক পারে ঘটনার ঘনঘটা তৈরী করে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সরিয়ে আনতে, তারপর.. পরপর.. অভাব কিছুই নেই।
লেজুর-খেজুরের ভনভনানি থেকে বাঁচতে পথ একটাই ভাবের ঘরে আড়ি আর মশারি, সাজতে হবে আনাড়ি।
হেমন্তের শেষ বেলায় বর্ষার অসময়ের হানা হয়তো নতুন গল্প, নতুন আবহাওয়ার ইঙ্গিত। আপাতত হিমেল আমেজে বারো মাসের তেরো পার্বণে বাঙলা মজে, ইতুলক্ষ্মীর ব্রত সেরে পৌষলক্ষ্মীর আরাধনায় উদগ্ৰীব।
পৌষালী শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।
-
সম্পর্কে
সম্পর্কে
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
সম্পর্ক বহুরূপে বহুরূপী। কণ্ঠে তার নানান সুর- মিঠেকড়া, কড়ামিঠে, কড়া, মিঠে, তিক্ততা সেও এক অবশ্যম্ভাবী সুর।
একটা জীবন আয়না যথেষ্ট নয় সব রূপ দেখার জন্য, অভিজ্ঞতার পলেস্তরায় সেই আয়নাও ক্রমশঃ ধূসর হয়- অস্পষ্ট ছায়া সব। বাইরেটা দেখা গেলেও ভেতরটা বোঝা বড়ো দুষ্কর- সব জট জড়িয়ে আছে, খোলার বা বোঝার সাধ্য সরল মনের কর্ম নয়। যেন এক নদী- কখনো নাব্যতা দোষে দুষ্ট, কখনো বা আগল ছাড়া স্রোতস্বিনী, কখনো অচেনা ঘুর্ণনে চোরাবালির ফাঁদ। পাড় ভাঙাগড়া খেলায় মেতে সম্পর্কের বুনন আলগা- ভীষণ জটিল, হয়তো গভীর।
তবে তার মধ্যেই তারা জিতে যায়, যাদের ভাবখানা “আমার যেমন বেণী তেমনি রবে, চুল ভেজাবো না..” সংসার-সরসীতে গা ভিজিয়ে শীতলতা, স্নিগ্ধতা সব নেবে, কিন্তু পাঁক জমলে দায় নেবে না- জমা পাঁকের দুর্গন্ধে যে তার মালিন্য মিশে আছে, তা মানতে নারাজ। শুধুমাত্র সুখ-সুযোগ সন্ধানীর বাজিমাত । জিতে যায়.. এরাই হাসি মুখে জিতে যায়। চারপাশে এমন মানুষের ভীড়ে ব্যতিক্রমী চরিত্রগুলি সমর্পণের সর্পিল বাঁকে নিঃশ্বাস নিতে চায় একটু শান্তি খুঁজতে- তাও জোটে না। শুধু বাহারি সম্পর্ক টিকে থাকে জাঁকজমকের কেতাদুরস্ত স্বার্থের হাটে আত্মার অবনমন ফেরি করে।সম্পর্ক বলিয়ে নেয় অনেক কথা- জীবনের প্রতি পলে কখনো নীরবে, কখনো সোচ্চারে। তবুও অধরা সব শব্দ, সব অনুভূতি- জীবন সায়াহ্নের ম্রিয়মান আলোয়। “পরিবার” শব্দটা ব্যঙ্গের মুকুটে শোভিত থাকে সমাজের বুকে।
উৎসবের মরশুম প্রায় শেষ- হেমন্তের বিন্দু বিন্দু শিশির হিমেল বার্তা নিয়ে প্রায় দোরগোড়ায়, হৈমন্তী শুভেচ্ছা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে সকল শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুদের।
-
ত্রাহি মাম…
ত্রাহি মাম…
–রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
উৎসব আবহে কিছুটা হলেও উদ্বেগের ছবি- কেন, কি জন্য সবটুকু বিতর্ক। কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এই বিতর্ক চান না, এই পরিস্থিতি কাম্য নয় কারো কাছেই- তবুও ফিরে ফিরে আসে পরিক্রমণে। প্রতিবাদী ঝড়, প্রতিবাদে শাণিত কলম গর্জে ওঠে। তারপর… শুধুই পর পর, আবার..
দেবীর আহ্বানে বড়ো পরিচিত সুর-
“আয়ুর্দ্দেহি যশোদেহি ভাগ্যং ভগবতী দেহি মে। ধনং দেহি পুত্রান্ দেহি সর্ব কামাংশ্চ দেহি মে..” দেহি দেহি রবে আলোড়িত হয়ে ওঠে।
আরো এক পরিচিত সুর- “হর পাপং হর ক্লেশং হর শোকং হরাসুখম্। হর রোগং হর ক্ষোভং হর মারীং হরপ্রিয়ে…”
আহ্বান করে দেহি দেহি রব, আর সব কিছু ছেড়ে ফেলে চাপিয়ে দেওয়ার “হর..হর” আকুল আকুতি বৈদিক মন্ত্রের কোন যুক্তি প্রমাণ করে! এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম না, তবে আজকের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে হয়তো মনে হয় এই হিংসা, বর্বরতা চিরকালীন- আমরা হয়তো উর্বর হতে পেরেছি, তবে বর্বরতা ছাড়তে পারিনি।
তাই জানতে-অজান্তে আমরা নিস্তার পেতে চাইছি নিজেদের কৃতকর্মের থেকে ও কর্মফল থেকে। আমরা কর্ম করে শেষে শুধু বলবো- “ত্রাহি মাম…ত্রাহি মাম..” আর কিছু হোক না হোক ছলনার আশ্রয়ে শান্তির অন্বেষণ।
আগামী শুভ হোক, এর বেশী বলার ভাষা নেই।
শুভেচ্ছা, শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।