স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- ঝরা পাতার কান্না

    ।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    ঝরা পাতার কান্না
    সুনির্মল বসু

     

     

    বর্ষায় জল থৈ থৈ নদী দেখলে, দ্বীপের মধ্যে পলাশ-বনে অজস্র আগুনরঙা ফুল ফুটে উঠলে,
    আম গাছে নতুন মুকুল এলে, সোমলতা, তোমাকে মনে পড়ে,
    খুব ভোরে শিশির ভেজা ঘাসে তোমার সঙ্গে হেঁটে যাবার স্মৃতি মনে পড়ে,

    নদীতীরে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় কত বিকেল কেটেছে আমাদের,
    এখন আমি একলাই যাই,
    নদী আকাশ সঙ্গীহীন নৌকা চেয়ে দেখি,
    ভাগ্যিস তোমাকে পাইনি, তাই ভালোবাসা জেগে আছে, নিউল্যান্ডের দুর্গা পূজার প্যান্ডেল, জনতা রেস্টুরেন্ট,

    সু তৃপ্তির মিষ্টির দোকান, নদীর ধার সে কথা জানে,
    তোমাকে পেলে, প্রতিদিনকার ধূলিমলিনতায় এভাবে তোমাকে পেতাম না,
    এখন যখন খুশি, তখন তোমাকে পাই,
    স্বপ্নে কতদিন তোমার সঙ্গে হেঁটে যাই, নীল জ্যোৎস্নায় তোমার সঙ্গে নদীর তীরে এসে দাঁড়াই,

    মধ্যরাতে তোমার সঙ্গে আকাশের তারা গুনি, গম্বুজওয়ালা প্রাসাদের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পায়রা ওড়াই,

    তোমাদের নীল কাচের বাড়ির বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার গাওয়া রবি ঠাকুরের গান শুনি,
    দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় তোমার সঙ্গে প্রতিমা দেখতে বের হই,

    রাতে স্বপ্নে তুমি আমার কাছে জ্যোৎস্নায় ভিজে আসো, চারদিকে উদাস হাওয়া বয়ে যায়,

    স্বপ্নে নীল সমুদ্র সৈকতে তুমি আর আমি জল ছুঁয়ে ছুঁয়ে হেঁটে যাই,
    সোমলতা, তুমি এখন পরস্ত্রী, তোমাকে পাইনি বলে আজ আমার মনে কোনো গোপন কষ্ট নেই,
    আমার ভালোবাসায় অবিকল তুমি আগের চেয়ে অনেক বেশি করে বেঁচে আছো,
    শুধু বসন্তের দিনে কৃষ্ণচূড়া গাছ লালে লাল হলে, চোখে জল আসে,
    হেমন্তে পাতা-ঝরার কালে আমার ভারী কান্না পায়,
    আসলে, জীর্ণ পাতার মতো আমিও যে তোমার জীবন থেকে ঝরে গেছি।

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প- সাপ লুডো

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।

     

    সাপ লুডো
    -সুতপা মন্ডল

     

     

    কোর্ট থেকে বেরোনোর পর অনীক বুঝে উঠতে পারে না তার এখন কি করা উচিত। আজ ফাইনালি ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর সে খুশি হবে না দুঃখ পাবে।
    তবে একটা কথা ঠিক, সুচেতনাকে নিয়ে তার আর কোন দায়িত্ব রইল না।
    শুধু বাচ্চাগুলোর জন্য খারাপ লাগলেও কে জানে বাচ্চাগুলো আমার তো! নিজের মনে নিজেই হেসে ওঠে অনীক।
    সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একটা ট্যাক্সি ধরে বলে বাবুঘাট।
    নদীর ধারে সিঁড়িতে বসে থাকে চুপচাপ।
    এই জায়গাটা তার প্রিয় ছিল একসময়, মন খারাপ হলেই চলে আসতো এখানে।
    অবশ্য সুচেতনাকে নিয়েও বহুবার এসেছে এখানে বিয়ের আগে।
    সুচেতনার সাথে বিয়েটা প্রেম করেই হয়েছিল। সত্যিই প্রেম!
    এক বন্ধুর মারফত আলাপ হয়েছিল। স্মার্ট সুন্দরী সুচেতনা কে দেখলে যে কোন ছেলেই প্রেমে পড়তে বাধ্য।

    অনীক তখন ডিপ্লোমা পাস করে একটা এমএনসি তে জুনিযার হিসেবে ঢুকেছে। মধ্যবিত্ত ঘরের সাদামাটা ছেলে কি করে একটু বেশি টাকা রোজগার করবে সেটা নিয়েই ভাবতো অন্য কিছু নিয়ে ভাবার অবস্থা তার ছিল না।
    আর মেয়েদের ব্যাপারে তার একটু অনীহায় ছিল স্কুল-কলেজও খুব একটা মেয়ে বন্ধু নেই শুধু ‘ শ্রী’ ছাড়া, পাশাপাশি একসাথে বড় হয়েছে তারা।
    ওই বন্ধু একদিন বলেছিল চল তোকে, আজকে একটা জায়গায় নিয়ে যাব , ‘আমি একজনকে বুক করেছি’। খুব খারাপ লেগেছিল অনীকের।
    মন সায় দেয়নি ওর সাথে যেতে তবু বন্ধুর পীড়াপীড়িতে একরকম বাধ্য হয়েই সঙ্গী হয়েছিল।
    সেই মেয়েটি ছিল সুচেতনা যে প্রফেশনালি একজন কল গার্ল।
    অনীকের ব্যবহারে সে বুঝে গিয়েছিল তথাকথিত কাস্টমার আর অনীক এক গোত্রের নয়।
    একটা অন্যরকম বন্ধুত্বের শুরু হয়ে গিয়েছিল সেদিন।
    এরপর ওরা মাঝে মাঝে দেখা করতে থাকে, না ক্লায়েন্ট হিসাবে নয় একজন আরেকজনের বন্ধু হয়ে। ওদের মেলামেশায় ওরা অনুভব করতে থাকে অন্য টান।
    একদিন অনীকই বলেছিল কথাটা ” সু, তুমি এই জীবনটা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারো না”!
    -তোমার ভালো লাগে রোজ রোজ অন্য মানুষ।
    -কি করবো বলো? আমি তো কোন চাকরি পাব না আমার মত মেয়েদের ঘর সংসারের স্বপ্ন দেখতে নেই।
    সব কথা জেনে কোন সুপুত্তর বিয়ে করবে বলো?
    -ধরো আমি যদি বলি আমার সাথে বাকি জীবনটা কাটানোর কথা।
    – পারবেনা সু সবকিছু ভুলে আমার সাথে একটা সংসার গড়তে।
    – অনি তুমি যা বলছ ভেবে বলছো তো!
    তোমার মা-বাবা কেন মেনে নেবে আমার মত মেয়েকে তাদের ছেলের বউ হিসেবে।
    -তুমি রাজি কিনা বল মা বাবার সাথে আমি কথা বলবো।
    সুচেতনা হাতটা অনীকের হাতের উপর রাখে।
    মা বাবা সব শুনে বলেছিলেন কোন মেয়ে এই জীবনটা চায় না নিশ্চয়ই অনেক যন্ত্রণায় বাধ্য হয়েছে এরকম একটা জীবন বাছতে। ” তুমি যদি মন থেকে মেনে নিতে পারো আমাদের কোন অসুবিধা নেই”।

    আমাদের কোনো মেয়ে নেই আমরা ওকে নিজের মেয়ের মতো করেই রাখবো।
    -অনীকের বন্ধুরা অবশ্য বারবার বারণ করেছিল সে শোনেনি, তার মনে হয়েছিল একটা মেয়ে শুধুমাত্র পরিস্থিতির শিকার কেন সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবে না নিশ্চয়ই পারবে।
    -তারপর চার হাত এক হতে বেশি দেরি হয়নি।

    বিয়ের পর প্রথম দু’বছর শত্রুদের মুখে ছাই দিয়ে খুব সুখে কাটে।
    কিন্তু তারপর থেকে হঠাৎ হঠাৎ দুপুর বেলা একটু ঘুরে আসি করে বেরিয়ে পড়তে থাকে সুচেতনা কোথায় যাবে কাউকে কিছু বলে না, তারি মাঝে আসে সুখবর।
    অন্তঃসত্ত্বা বৌমাকে যত্ন করা দেখে পাড়া-প্রতিবেশী অনেক কথাই বলত কিন্তু অনীকের মা বলতেন ও তো আমার মেয়ে, ছেলের বউ নয় গো।
    ওর দেখা শোনা করবো না তো কার দেখাশোনা করব!
    দুটি ফুটফুটে যমজ সন্তান হয় ওদের। বেশ কিছুদিন সুখেই কাটে। বাচ্চা গুলো একটু বড় মানে এক বছর, আবার বেরিয়ে পড়তে থাকে সুচেতনা, দুধের শিশু গুলো কাঁদতে থাকে কিন্তু তবু সে বেরিয়ে পড়ে।
    অনিকের মা অনেক বারণ করেছেন তোমার কি চাই বল আমরা এনে দিচ্ছি নয়তো বাবুকে বলো সে এনে দেবে, নয়তো বাবু ফিরলে একসাথে বেরিয়ো। তুমি এই সময় বাইরে বেরিও না, কিন্তু কে শোনে কার কথা, সে রোজ বেরিয়ে পড়তে থাকে ।
    একদিন একটি ফ্লিম ম্যাগাজিনের কভার ফটোতে সুচেতনার আবেদনময়ী ছবি দেখে অবাক অনীক।
    এ কোন সুচেতনা! অনীক তো এ ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গও জানেনা।
    এই ম্যাগাজিন যদি তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেখে, পাড়া-প্রতিবেশী দেখে তাদের যে বদনাম হবে, কেউ সহজভাবে নিতে পারবেনা, আর কিছু নয় তারা তো মধ্যবিত্ত।
    সুচেতনাকে জিজ্ঞাসা করতেই রেগে ওঠে বলে তোমার যা রোজগার তাতে তুমি আমার কোন শখ-আহ্লাদ মেটাতে পারবে বলে মনে হয় না।
    – তাই যা করেছি বেশ করেছি।
    – ভালোই হলো তুমি জেনে গেলে আর লুকোচুরি দরকার হবে না।
    তোমার এই মধ্যবিত্ত জীবন মানতে আমি পারবো না।
    সুচেতনা ব্যবহারে কষ্ট পায় অনীকের মা-বাবা।
    পাড়া-প্রতিবেশীর চোখের চাওনি রাস্তাঘাটে চেনা মানুষের ব্যবহার প্রতিনিয়ত মানুষ দুটো কে কুরে কুরে খাচ্ছিল তবে বেশিদিন সহ্য করতে পারেননি ওনারা। এক মাসের মধ্যেই মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে ওনারা চলে যান ‘না ফেরার দেশে’।
    মা বাবা চলে যাওয়ার পর আরও অশান্তি বাড়তে থাকে।
    কোন কোন দিন রাতে বাড়ি ফেরে না সুচেতনা।
    কোন কোনদিন মাঝরাতে আকণ্ঠ পান করে ফেরে বাড়ি।
    অনীক মানতে পারছিল না তবুও চেষ্টা করছিল, বোঝাতে চাইছিল সুচেতনাকে।
    কিন্তু সে তখন টাকার নেশায় বুঁদ।
    একদিন নিজেই বলে অনী আমার মনে হয় আমাদের আলাদা থাকাই ভালো তাতে তোমার শান্তি আর আমার মুক্তি।

    আজ ফাইনালি ডিভোর্স হয়ে গেল।
    বাচ্চা দুটিকে কাস্টডিতে নিয়েছে সুচেতনা।
    অনি জানেনা তাকে বাবা বলে ডাকা বাচ্চা দুটোর সত্যিই সে বাবা কিনা!

    পুরনো কথা ভাবতে ভাবতে একদম অন্যমনস্ক হয়ে গেছিল অনীক হঠাৎ কাঁধে একটা আলতো স্পর্শ তাকিয়ে দেখে ‘ শ্রী,’ এখন ওর একমাত্র বন্ধু, অনীকের যন্ত্রণার দিনেও সব সময় পাশে থেকেছে।

    শ্রী বলে জানতাম তুই এখানেই থাকবি তাই সোজা চলে এলাম এখানে।
    এবার ওঠ বাড়ি চল, কাল থেকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে যে।

    ………. সমাপ্ত…………

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- রঙ

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    রঙ
    -সোহিনী সামন্ত

     

     

    অন্তর্নিহিত মন থেকে প্রেম কি কখন বাষ্পায়িত হয়!
    নাম না জানা রঙ লেপ্টে থাকে মনের দুর্গম কোণে,
    কত বহুরূপী রঙ খেলা করে চলে নির্ভেজাল অবয়বে…
    নতজানু হয়ে স্বীকার করি, রঙ যে হৃদয়ের একমাত্র প্রেম,
    তুলির টানে কত রূপ পায় হরেক বাহারি সৌন্দর্য,
    মনের রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে যায় রঙের উজ্জ্বল দুনিয়ায়…
    যেখানে প্রেম আছে, যেখানে সুখ পাখি উড়ে চলে নতুন দিগন্তে…
    আহামরি যে কিছু চাই না, তবে রঙিন হতে চাই রঙের খেলায়…
    প্রাণ থাকতে, মন থাকতে, উজ্জ্বলতার খোঁজে ছুটে বেড়াই…
    এ বেড়ান বৃথা না, এর সুগন্ধি লেগে থাকে মন আধারে…
    রঙের প্রাণ আছে, রঙের সুগন্ধি আছে এক নিশুতি মনের মননে…
    তাই কলম ধরেছি, নানা রঙের গোধূলি লগ্নে মিলে যাব বলে…
    তোমরা কি দেখতে পাও, সুদূর জীবনে হাসি কান্নার খেলা…
    তাতেও যে রঙ আছে, তাই তো চাই সবাই মিলে রঙিন হয়ে উঠি।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- সাঁঝবেলা

    ।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    সাঁঝবেলা
    -শ্যামল কুমার রায়

     

     

    সময় গোনার , হায় ,
    সময় নাই যে আর ,
    পড়ে এলো ওই বেলা ;
    পাখিরা ফিরছে নীড়ে ,
    বসে পারাবার তীরে ,
    হিসাবের খাতাখানি খোলা ।

    কতো কে যে এসেছিলো ,
    কতো কেউ চলে গেলো ,
    দিয়ে গেলো ওরা কে কি ?
    সিন্দুক রয়েছে ফাঁকা ,
    ঘর দোর সাদা মাটা ,
    বুকেতে দিয়েছে কি খুঁজি ।

    কেউ বা দিয়েছে ফাঁকি ,
    কেউ মনে মেরেছে উঁকি ,
    বদল করেছে ঘর সুখে ।
    সে তো ছিলো না তেমন ,
    দিয়েছিল পবিত্র মন ,
    উন্মন আজ তাই দুখে ।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- মাঙ্গলিক

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    মাঙ্গলিক
    -কাজল দাস

     

     

    নতুন কোনো কাব্যের অধিকারে
    রঙ ছুঁয়ে যাক আমাদের অন্তরে
    আকাশ পেরিয়ে সন্ধ্যে ফিরুক ঘরে
    রঙ ছুঁয়ে যাক আমাদের অন্তরে

    রাঙিয়ে তোলো শহরের ধূসরতা
    জীবন ফিরুক ঘাস ফড়িং এর রঙে
    উচ্ছলতায় মেতে থাক সভ্যতা
    আগামী আসছে চেয়ে দেখ সঙ্গোপনে
    আলোর চিঠি রঙিন স্বপ্ন ভোরে
    রঙ ছুঁয়ে যাক আমাদের অন্তরে

    আগমনী সুর সময়ের রঙ মেখে
    আবার আমরা গাইব সব্বাই
    মুখোশের ঋণ অনায়াসে ভুলে থেকে
    জীবনের রঙে আবার ফিরতে চাই
    আবার কোনো একতার মন্তরে
    রঙ ছুঁয়ে যাক আমাদের অন্তরে।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- না পাওয়া কিছু

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    না পাওয়া কিছু
    -শৌভিক মন্ডল

     

     

    আমাকে তুমি যদি ভালবাসতে,
    বুকে তোমার পদ্ম ফুল ফুটত।
    অজানা সৌরভ সেতু-বন্ধন করত আমার মনে।

    তুমি যদি আমায় ভালবাসতে,
    না-দেখা ভোরে ,শিউলি ফুল ঝরে পড়া শব্দের শিহরণে….
    আমার ঘুম ভেঙে যেত ,আকুল চোখ তৃষ্ণার্ত হত একটিবার তোমায় দেখব বলে।

    তুমি যখন আমায় ভালবাসবে, বেপরোয়া কইমন হয়ে ,

    তুমি তোমার নখে রক্তাক্ত করবে আমার শরীর,

    – যার বিন্দুরক্তে তোমার সোহাগ শুধু মাখা থাকবে।

    তোমার জ্বলন্ত ঊরুর মাঝে, মহাকাব্য লেখার কলমে, এতটুকুও ক্লান্তি লেগে থাকবে না।
    যদি তুমি আমায় ভালবাসতে।

    আক্ষেপের জ্বলন্ত শিওরে, নিজেকে দাঁড় করিয়ে ,এই চিঠি আমি আজ উড়িয়ে দিলাম !
    যদি কোনদিন হাতে পৌঁছায় একবার শুধু ভেবো…..
    আমি তোমার স্বামী নই প্রেমিকও!

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- নষ্ট প্রেমিক

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    নষ্ট প্রেমিক
    -তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

     

     

    সে ছিলো এক সস্তা প্রেমিক,
    নষ্ট প্রেমিক, ভ্রষ্ট প্রেমিক।
    ছদ্মবেশী, মুখোশ ঢাকা, অবিশ্বাসী।
    বেয়াক্কেলে ঘনিষ্ঠতায় বাড়ানো হাত।
    কিন্তু সে মেয়ে তার চোখে
    নিজেকেই খুঁজতে থাকে।
    পায়নি খুঁজে — অনুভবী,আবেশী মন
    থমকে থাকে।

    সময়ও তো পাল্টে গেছে
    প্রতিদিনের জীবন খাঁজে।
    শর্তবিহীন ভালোবাসা গুমড়ে মরে।

    ভালোবাসা,এতই কি আর সস্তা না’কি?

    ভালোবাসা অনেক দামী।
    তাইতো সে মেয়ে বিকোয় না প্রেম সস্তাদরে।
    চায়ওনা সে সস্তা সে প্রেম হাতটি পেতে।

    সে মেয়ে যে নিজের মত —
    বাইরে কঠিন, ভিতর কোমল।
    তার হৃদয়ও কাঁদে বসে খুব একাকী।

    পাহাড় চিড়ে ঝর্ণার কল-কলধ্বনি।
    তার হৃদয়ে লুকিয়ে থাকে
    ভালোবাসার হীরের খনি।।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- কবির হৃদয়ের কথা

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    কবির হৃদয়ের কথা
    -অমর দাস

     

     

    আমি কবি হবো শোষিত নিপীড়িতের ,
    আমি কবি হবো যত গৃহহারা পথিকের।
    বেকার যুবক পথহারা যতো আছে
    হবো কবি আমি তাদের তরে।
    আমি রচিব কাব্য আজ তাদের জন্য,
    যারা আজো থাকে নিরন্ন ।
    আমি কবি হবো ওদের জন্য ,
    যারা পায়না শিক্ষার আলো সামান্য।
    যারা পায়না চিকিৎসা বাঁচার জন্য
    অসহায় মানুষ যারা চিকিৎসার লাগি
    ঘোরে দ্বারে দ্বারে,চিৎকার করে কাঁদে,
    তবু তো পায়না কোনো চিকিৎসা,
    অকালে ঝড়ে পড়ে সে প্রাণ পথের ধারে।
    ধর্ষিতার চোখের জলে আমি লিখি কাব্য,
    আমার কলমে জ্বলে প্রতিবাদের আগুন।
    আমার কবিতায় কাঁপন ধরাতে চাই
    যারা অসহায় নারী কে করে পণ্য।
    আমি কবি হবো তাহাদের লাগি
    যারা স্বাধীনতা ছিনিয়া আনিল দেশের তরে।
    আমি হতে চাই কবি শুধু সাম্যের জন্য ।
    স্বাধীনতা রক্ষার তরে যারা দিলো রক্ত,
    তাদের রক্তে রচিতে চাই দেশপ্রেমের কাব্য।
    যারা দেশ কে হিন্দু মুসলিমুসলিমে করে ভাগ,
    আমার কলমে গর্জে ওঠে তাদের সর্বনাশ।
    আমি কবি হবো অসহায় কৃষকের ,
    আমি কবি প্রেমিক, কবি আমি প্রেমের ,
    আমি রচিতে চাই প্রেমিকার কবিতা,
    আমার কাব্যের লেখনীর প্রেমের ধারায়।
    আমি কবি সন্তানের তরে, পত্নীর লাগি।
    আমি কবি হবো বন্ধুর প্রেমের হৃদয়ে
    বন্ধুর প্রেমরসে সিক্ত কলমে লিখে যাবো কাব্য।
    আমি হবো সবার কবি হবো সকলের তরে।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- স্নেহময়ী মা

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    স্নেহময়ী মা
    -অনিমা দাস

     

     

    মা বলতেই প্রথম ছোঁয়া আলতো হাতে
    ভালোবাসায়।
    যত্ন করে আগলে রাখা বুকের মাঝে
    স্নেহ মায়ায়।
    মা বলতেই দিবা রাত্রি কাজের মাঝে
    হারিয়ে যাওয়া ।
    সারা দিনের পরিশ্রমে নিজের খুশি
    খুঁজে পাওয়া ।
    মা বলতেই শীতল পরশ ভালোবাসা
    আদর মাখা।
    শত কষ্টের মাঝেও হাসি মুখে সব কিছু কে
    মানিয়ে  নেওয়া ।
    মা বলতেই আদর আবদার খুনসুটি আর
    চাওয়া পাওয়া ।
    যথাসাধ্য ভালো রাখার চেষ্টা চলে মনে মনে
    যায়না বোঝা ।
    মা বলতেই প্রথম শেখা মায়ের কাছে
    প্রথম বুলি ।
    মায়ের হাতে হাতটি ধরে এক পা দু পা
    এগিয়ে চলি।
    মা বলতেই দুঃখ হলেও ভালো থাকার
    কঠিন প্রয়াস ।
    এভাবেই তো চালিয়ে যাওয়া যতক্ষণ
    থাকবে নিঃশ্বাস ।
    মা বলতেই তেল কালি আর মলিন শাড়ী
    ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ।
    হাজার কষ্টের মাঝেও তাকে থাকতে হয় যে
    একটু খুশি ।
    মা বলতেই শান্তির সেই আচল খানি নিরাপদে
    বেঁচে থাকা ।
    সারা জীবন সহজ ভাবে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে
    চলা ।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- কবিতা নিয়েছে ছুটি

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    কবিতা নিয়েছে ছুটি
    -তমাল হাইত

     

     

    কবিতা নিয়েছে ছুটি, নীল রঙা মলিন খামে
    লিখে রেখে গেছে বার্তা তার ,
    বিকোয় নাকি আজকাল রদ্দি দামে।

    সেই যে তুমি আকাশ নীলের স্বপ্নে বিভোর ছিলে,
    ছুঁতে চাওয়ার বাসনা প্রবল; কষ্ট কি পাওনি মোটেও ,
    যখন সে স্বপ্ন বিসর্জন দিলে!

    লোকে বলে কবি নাকি বাস্তবে না, কল্পনায় বাঁধে সুর
    মাগগি গন্ডার বাজার সে বোঝে নাকি,
    কলমের আঁচড় কেটে জীবন চাকা গড়াবে কতদূর!

    তাই কবিতা নিলো ছুটি, মলিন নীলচে খামে
    বার্তা দিয়েছে স্পষ্ট, ফেরার আশা নষ্ট
    বিকিয়ে দেবে না সে আর নিজেকে রদ্দি দামে।

You cannot copy content of this page