-
ঠাকুমার মুখে শোনা
ঠাকুমার মুখে শোনা
-অঞ্জলি দেনন্দীভারতের, বাংলার, হুগলী জেলার, একটি গ্রাম। নাম, চৈতন্যবাটী। দামোদর নদের তীরে। তার পাশের গ্রামের নাম, নিশ্চিন্তপুর। নদের বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দু’ গ্রামের সংযোগস্থলে একটি মাটির বাঁধ। এটিকে আমরা বড় বাঁধ বলেই ডাকি। আমাদের গ্রামে আসার ঠিক একটু আগেই, নিশ্চিন্তপুরের ওপরে, একটি বিরাট মা শ্রী মনসা দেবীর গাছ। প্রতি আট – ই আশ্বিন, এখানে ” বাঁধের মনসার ঝাঁপানের ” মেলা হয়। খুব ধুমধাম করে, আমরা কয়েকটি গ্রামের মানুষজনমিলে, এখানে পূজো করি। অনেক পুরোনো আমলের এই পূজো। এই মনসা গাছটি বাঁধের এক ধারে। সবাইই পাশ কাটিয়ে, ওই পথটুকু পার হয়ে। অতি সম্ভ্রমের সঙ্গে, মাকে স্মরণ করেও সকলেই। মা খুব জাগ্রত!
আমার ঠাকুমা আমাকে একদিন গল্প বলেছিল, এই মা মনসার অস্তিত্ব কত সত্য, তা নিয়ে। তিনি বলেছিলেন , ” তখন এই জায়গাটায় কোনও বাঁধ ছিল না। একটু দূরে যে উঁচু পোড়ো, অব্যবহার্য রাস্তাটা এখন দেখতে পাস, ওখান দিয়ে মার্টিন ট্রেন চলত। এখন তো তা আর চলে না, তাই ওখানটা পড়ে আছে। এখনের বড় বাঁধের জায়গায়, ইংরেজ বাঁধ সাহেব, দেখতে এসেছে। দেখেটেকে বলে জানিয়েছেন যে, ওই বিশাল মনসা গাছটা কেটে ফেলে, বাঁধ তৈরী করতে হবে। না হলে অসুবিধা হবে। সব ভারতীয়রা বারণ করেছিল। কিন্তু সাহেব কোনও কথায় কর্ণপাত না করে, ওই আদেশ দিয়ে চলে যাচ্ছেন। হল কী? একটু দূরে যেতেই অনেকগুলি সাপ ফণা তুলে সাহেবের পথ আটকালো। সাহেবের সঙ্গে যে সব ভারতীয়রা ছিল, তারা তখন সাহেবকে বলল যে, তিনি মা মনসার গাছটিকে কেটে ফেলে দিতে বলেছেন বলে, মা মনসা তাঁর রাস্তা ঘিরে রেখেছেন। আর যদি তিনি মত পরিবর্তন না করেন তবে দংশনও করতে পারে, ওই সর্পের দল। তখন, সেই সাহেব আবার ফিরে এসে, গাছটি না কাটার আদেশ দিয়ে গেলেন। বাঁধ হল, কিন্তু মা মনসা বাদ পড়লেন না। ”
আমার ভাই তখন বেঁচে, একদিন রাত্রে কোলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ক্লাস করে ফিরছে। রাস্তায় গাড়ীর গোলযোগ থাকায় বেশ অনেকটাই রাত হয়ে গিয়েছিল, ওর বাড়ী, চৈতন্যবাটীতে ফিরতে। ও এসে বলেছিল যে, সে মা মনসার দেখা পেয়েছে। লাল পাড়, সাদা, শাড়ী পড়ে, একগলা ঘোমটা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তখন সেই সময় আমার ভাইয়ের কথায় কিছু বলিনি। কিন্তু, আমি বহু পুরোনো মানুষদের মুখে শুনেছিলাম যে, অনেকেই, রাত্রে, যারা ওখান দিয়ে আসা-যাওয়া করত, তারা আমার ভাইয়ের মতোই মা মনসার ওই রূপ দর্শন করেছে, কিন্তু তারা কেউই আর বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে নি। আমি তখন মা মনসাকে মনে মনে স্মরণ করে বললাম যে, তিনি যেন আমার ভাইকে দীর্ঘ আয়ু দেন। কিন্তু মুখে কিছুই বললাম না। আমার ভাইও কিন্তু, ওই মায়ের দর্শন পাওয়ার পরে, আর বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে নি।
এখনোও প্রতি ৮ই আশ্বিন, ওখানে, মায়ের পূজো ও ঝাঁপান হয়……. -
জন্তুম্যানড্যাডের মুখোশের আড়ালে
জন্তুম্যানড্যাডের মুখোশের আড়ালে
-অঞ্জলি দে নন্দী
একটি জন্তু-ম্যান, ড্যাড হল। শিশুটি হামাগুড়ি দিচ্ছে….. মেঝের ওপরে, কখন লুকিয়ে, ছুঁচ ফেলে রাখলো। মাটি খুবই ঈশ্বর নির্ভর! সদা সর্বদা ঈশ্বরকে বলে যে তিনি যেন তার পুত্রকে রক্ষা করেন। তাই, তার নজরে এলো, ঠিক সময়ে ছুঁচটি। আর একটু দেরী হলেই, ছেলের কচি হাতে গেঁথে যেতো। মা তুলে নিল। ছেলেটির হামাগুড়ির পথ থেকে।
এবার হামাগুড়ির পথে T V এর, ফোনের তার টানলো। শিশুটির পায়ে, হাতে, জড়িয়ে যেতে লাগলো। মাটি চেষ্টা করলো, ওগুলিকে ওপর দিয়ে টানার। কিন্তু তার ওপরে নির্যাতন করলো। তাই মাটি তা করতে পারলো না।
বাচ্চাটি ডাস্ট এলার্জির জন্য তখন চিকিৎসাধীন। ডাক্তার বলেছেন যে, ট্রিটমেন্ট করালে, কয়েক বছর পর, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে। রাতে, একটি মশারীর মধ্যে, তিনজনে সুতো। এতো নিচু যে, হাঁটু মুড়লে, শুয়ে শুয়ে, মশারীর ওপরটা, হাঁটুতে ঠেকে যায়। কারেন্ট অফ হয়, রোজ রাতে, কয়েক ঘন্টা, নিয়মিত ভাবে। অনেক করে, পায়ে ধরে, বলা স্বত্বেও মশারীটিকে, কিছুতেই, উঁচু করতে দিল না। এরপর, উচ্চ শব্দে নাক ডাকা। বাচ্চা ছেলেটি, চমকে উঠে, কেঁদে উঠতো। মা, অনেক অনুনয় বিনয় করেও ড্যাডকে অন্য রুমে শোয়াতে পারলো না। বেশি জোর করলে, মায়ের হাত ঘুরিয়ে পিছন দিকে করে, চেপে ধরে রাখতো। মাটি বলতো, ” ছেড়ে দাও! আর বলবো না! লাগছে! ” আর এমন ঘুমোত যে, পাশ ফিরে যেই শুতো, মাটি বিছানা থেকে, নিছে পরে যেতো। আর শিশুটির গায়ে মোটা ভারী ড্যাড-এর পা-তোলা – সে স্বাস নিতে না পারায়, ছটপট করছে। মা পা সরিয়ে, ছেলেকে কোলে নিয়ে সারারাত জেগে কাটিয়ে দিতো। মাথায় মশারীর ছোঁয়ার জন্য, নিচু করেই থাকতো। হাতে হাতপাখা চলছে।
আর বাইরের পরিচিত সবার কাছে এমন বলতো, যেন পুত্র তার অতি প্রিয়। মাটি চুপ করে শুনতো। মুখ খুলেই অত্যাচার যে! ……… -
বর্ষা যখন জীবনজুড়ে
বর্ষা যখন জীবনজুড়ে
-অঞ্জলি দে নন্দী
বর্ষার জল ঝরে, সারা জীবনজুড়ে, দুনয়ন থেকে। বিয়ে হল। কলকাতার, ধনী ব্যবসায়ী বাবার, সুন্দরী কন্যা। পাত্র বি কম পাস। বেসরকারী চাকুরীরত। হুগলীর, কিন্তু ভাড়া থাকে দুজনে হাওড়ায়। চার বছরে, প্রথমে একটি মেয়ে, বিয়ের এক বছর পরে, ও তার তিন বছর পর আর একটি ছেলে হল। এদের মাঝে হুগলীর, চৈতন্যবাটী, গ্রাম থেকে পড়তে এল ভাই। দাদাবৌদির মাঝে ভাঙ্গন এল। ভাই রয়ে গেল। বউ ও সন্তানরা চলে গেল সেই গ্রামে। এর আগে বউটি কখনও গ্রাম দেখে নি। পরে আর এক ভাই গেল দাদার কাছে থেকে পড়তে, হাওড়ায়। এখানে গ্রামে, শাশুড়ি, শ্বশুর, তিন ননদের নির্যাতনে কাটে বউটির জীবন। এরপর, …….প্রথম মেয়ে, তার তিন বছর পর ছেলে, এরা তো হাওড়ার, সালকিয়াতে থাকার সময়ই হয়েছিল, এবং তার তিন বছর পর, গ্রামে থাকতে থাকতে আর এক মেয়েরও মা হল, সেই কোলকাতা নগরীর মেয়ে, হুগলীর গাঁয়ের বধূটি। হ্যারিকেনের আলো। ইলেক্ট্রিক ফ্যান নেই। ওঃ কি কষ্ট! হাত পাখায় হাওয়া করে করে, গরমে মেয়েদের ও ছেলেকে রাতে ঘুম পাড়ায়। সারারাত চলে, মায়ের ডানহাত। কয়েক বছর পর তাই সে হাত যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো। তবুও টিউব অয়েলে পাম্প করে করে দশ মিনিট হেঁটে রোজ সকালে ও বিকালে, বড় বড়, লোহার দশ বালতি করে জল তোলে, এইই ডান হাত। স্বামী প্রতি শনিবার রাতে আসে আর রবিবার বিকালে চলে যায়, হাওড়ায়। পায়খানা নেই, তাই, পত্নী রাতে খায় না। একা রাতে দূরে মাঠে মল ত্যাগ করতে যাবে কি করে? কেউ তো তাকে সাথে করে নিয়ে যাবে না! সে যেখানে শোয়, সে ঘরটি, বেশ অনেকটা দূরে। ও বাড়িতে, বাড়ির অন্য সবাই শোয়। দিনে বউটি সেখানে রান্না করে। সবাইকে খেতে দেয়। আর রাতে দূরে শুতে যায়, বাচ্চাদের নিয়ে। বর্ষায় ছাতা মাথায়। বালতি করে জলও বয়। বাচ্ছাদেরও কাদায় নামায় না। কোলে করে নিয়ে যায়। বিছানায় ছাদ থেকে বর্ষার জল পরে। কড়ি, বর্গার, চুন, সুরকির, চৌকো চৌকো টালি সেট করা, ছাদ তো। অনেক কালের পুরোনো বাড়ী। জোড়া-তক্তপোষের বিছানার ওপরে, জলে ভেজা থেকে রক্ষা করতে, পিতলের কলসী বসিয়ে রাখে, মা-টি, তাই। এতে জল জমে। তিনটে কলসী রাখতে হয়। তিন জায়গায় জল পরে যে! ……. দুচোখ মায়ের জলে ভরে। এভাবেই, সেই সে মা, তার তিন সন্তানকে বড় করতে থাকলো। …….বাবার বাড়ীতে কখনও ভাবে নি, জানেও নি, এ সব, বিয়ের আগে। যাই হোক! …… সন্তানেরা তার সকলেই লেখাপড়াতে খুবই ভালো। মা তাই, আর কষ্টকে মনে করেই না! ……ছেলেটাতো খুবই ভালো পড়া লেখায়! কোলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পেয়ে এম কম পাস করল। আই সি ডব্লিউ এ তেও ফার্স্ট হল, হাওড়ার মধ্যে। গ্রাম থেকেই যাওয়া আসা করে, পড়ে। দু কাকার জ্বলন হল। মানসিক অত্যাচার করে করেও যখন পারল না, তখন দাদাকে, অর্থাৎ বাবাকে ছেলের বিরুদ্ধে লাগল। তাও ছেলেটি এগিয়ে চলেছে….. হঠাৎ সাইনাস হল। অপারেশন হল। নার্ভের রোগ হল, তাই। কিছু বছর পর, নিজের গ্রামের শোবার ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেল। মা-টি অর্ধ পাগলিনী। চির বর্ষা তার দু আঁখিতে…
গ্রামের নামটি, চৈতন্যবাটী, জেলা, হুগলী। বাংলা। ভারত। ছেলেটির নাম, আশিস নন্দী। মায়ের নাম, সবিতা নন্দী। যদি পার, সেখানে গিয়ে দেখে এসো, সেই সে ছেলে ও মায়ের শোবার ঘর। মাও এখন আর নেই। ছেলের কাছেই চলে গেছে, স্বর্গে। ঘরটি কিন্তু ঠিক আগের মতোই আছে। ছেলেটি যে মৃত্যুর আগে মায়ের কষ্ট দূর করার জন্য সারিয়েছিল। এক বছর তাই আর ছাদ থেকে বর্ষার জল, বিছানায় পড়ত না। আর সারানোর এক বছর পরই সেই সে ঘর হল তার, শেষ শোবার ঘর। তার স্কলারশিপের পাওয়া টাকা মায়ের নামে নমিনি করে, পুত্র রেখে গেছে। মায়ের চক্ষে এক বিন্দুও আর জল নেই। বাবা তো ছেলের মৃত্যুর পর ও চাকরী করত। কারোর বারণ শুনত না। আর মা তো রান্না করে করে গ্রামের সবাইকে নিজের হাতে বাড়ীতে বসিয়ে খাওয়াতো। ছেলের মৃত্যুর সাত বছর পরে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল পিতা। ছেলের মৃত্যুর দশ বছর পর মাও ক্যান্সারে মারা গেল। বেঁচে থাকতে ওরা, কত মানুষকে ক্যান্সারের জন্য নিজেদের খরচায় চিকিৎসা করিয়েছে। আর ছেলেটি তো কত ছাত্রকে বিনা খরচায় নিজে নিজের ঘরে বসিয়ে বি কম-এর পড়া পড়িয়েছে। তাদের জীবন গড়ে দিয়েছে। আর সেই সে ঘরেই সে নিজের হাতেই আপন জীবন শেষ করল…………আজও সেই সে ঘরটি তার কমার্সের বইয়ে ভরা আছে……
-
সত্যই শিক্ষা বটে
সত্যই শিক্ষা বটে
-অঞ্জলি দে নন্দী
বউটি উত্তর প্রদেশে থাকতো, তখন। ছোট ননদের বিয়েতে, গিয়ে পৌঁছল, স্বামীর সাথে, গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে। আগে থেকে চিঠিতে পাঠানো, ননদের লিষ্ট অনুযায়ী, প্রায় দশ হাজার টাকার জিনিস কিনে নিয়ে, ওরা এলো। বউটির উত্তর প্রদেশে টাকার অভাবে, কষ্টে কষ্টে, রোগ হয়ে যেত। তবুও বিয়ের পর থেকেই সে, টাকা জমিয়ে রাখতো। কারণ, সে অনেক আগে থেকেই বুঝেছিল যে, ননদের বিয়েতে টাকা চাইবে, আর তা দিতে হবে। আর যদি টাকা না জমায়, আরও দুর্দশা ভোগ করতে হবে। কেন? বিয়ের আগে বউটির ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছে, পাকাকথার সময়, ওরা বলেছিল, বিয়ের পরেই, তাদের ছেলে, বউকে নিয়ে উত্তর প্রদেশে নিয়ে চলে যাবে। আর এজন্যই মেয়ের বাবামা ওই পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল। তারা কন্যাকে অনেক যত্নে, কোলকাতার হোস্টেলে রেখে মানুষ করেছিল। তাই গ্রামে থাকা পাত্রকে কখনোই জামাই করবে না। কিন্তু, যেই না বাসর ঘরে ঢুকলো, ওমনি, মেজননদ, বেশ কায়দা করে বলল যে, বউটিকে ওই গ্রামেই থাকতে হবে। আর বর থাকবে উত্তর প্রদেশে। সবাই ভেঙে পড়ল, একী? প্রতারণা! স্তব্ধ হয়ে গেল বাবা মা ভাই বোন……..এরপর শুরু হল ছোট ননদের জ্বালানো…. আইবুড়ো বরের গায়ে হেলান দিয়ে বসে বসে, নব বিবাহিতা বৌদির আনন্দ শেষ করে দিল। এবার কনের ছোট পিসি, অর্থাৎ, তার মায়ের ছোট ননদ, এসে বাসর ঘরে বিছানায় শুয়ে পড়ে, বলল, যে, তার চোখে আলো লাগছে, তাই আলো অফ করে দিল। জীবনের বাসর অন্ধকার। সে দুপুরেও গায়ে হলুদের সময়, তার মেয়েকে, অর্থাৎ, নিত কনেকে, শিখিয়ে দিয়েছিল, যে, কনের শাড়িটি পড়ে গায়ে হলুদ করবে, বাচ্চা মেয়েটি। সে তো বায়না ধরে রইল। উপায় কি? নিত কনের শাড়ি পড়ে, কনে, আর কনের শাড়ি পড়ে নিতকনের গায়ে হলুদ হল। আবার রাতে নিজে এই করল।…..দু ছোট ননদ মিলে ছোট কাজ করল। যাক…….যা বলছিলাম….. বউটি কেন ছোট ননদের বিয়ের জন্য টাকা জমাচ্ছিল? হ্যাঁ…..তার স্বামী বিয়ের পর বউকে নিয়ে উত্তর প্রদেশে আসবে বলে বিশ হাজার টাকা জমিয়ে রেখেছিল। কিন্তু যেই বিয়ে করতে এলো, ওমনি, ছেলের বাবা সে টাকা চেয়ে নিল। বললো, ইনকামট্যাক্স দিতে হবে। সে স্কুলের টীচার। এত ইনকাম করে যে ট্যাক্স দিতে হয়। অথচ সে ট্যাক্স দেবার টাকা নাকি তার নেই। আবার কনের বাবার কাছ থেকে কুড়ি হাজার টাকা নিয়ে দুতলা করল। যদিও বৌছেলে সেখানে স্থান পেল না। সেখানে সে নিজে থাকত, আর থাকত তার আইবুড়ো দু জামাই ও দু আইবুড়ি মেয়ে। তারাও আবার টীচার। হ্যাঁ, তাই, ছেলেটি টাকা না থাকার জন্য বউকে ফেলে রেখে চলে গিসলো। আর বউটিকে তার কাছে আনতেও চায় নি। কারণ, সে তিন মাসের মাইনে, ধার করে, নিজের বিয়ের খরচ করেছিল। একথা বউটি তার পতির কাছেই শুনেছে। তাই ভয়ে ভয়ে টাকা জমাচ্ছে। হ্যাঁ, অনেক পরে, বউটির বাবামা, খরচ করে, টাকা দিয়ে, মেয়েকে, জামায়ের কাছে, উত্তর প্রদেশে পাঠিয়েছিল। এবার, এলো ছোট ননদের বিয়ের এতো জিনিস কিনে নিয়ে। সে জানত, আবার টাকা চাইবে, আর তার স্বামী আবার ধার করে, বাড়িতে দেবে, আর বউকে টাকার অভাবে, ছেড়ে আসবে। তাই ভবিষ্যত আন্দাজ করেই সে টাকা জমিয়েছিল, বউটি। তাও অনেক যুঝতে হয়েছিল তাকে! কারণ, তার স্বামী, টাকা জমাতে দিত না। বন্ধুদের বাহাদুরী দেখানোর জন্য অকারণ টাকা উড়িয়ে দিত। কিন্তু সে পেড়েছিল, তাও। এবার তো গ্রামে এলো। বিয়েও হল। কোনে বিয়ের পিঁড়িতে দাঁড়িয়েও বড় বৌদিকে অপমান করছে। আর সে উপবাস করে সব নিয়ম পালন করে, ননদের বিয়ের এও হয়ে সব কাজ করছে। শুধু কি তাই। মাকে দিয়ে, অর্থাৎ, বউটির শ্বাশুড়ীকে দিয়েও অপমান করিয়ে চলেছে, সবার সামনে। বিয়ের রাতে, নিজের খাট, ঘর ছেড়ে দিল বউটি, ননদ ও নন্দাই-এর বাসর করার জন্য। আর নিজের কোনও শোবার জায়গা সে পেল না। বসে বসে, এক কোণে, বাড়ির দালানে, রাত কেটে গেল। আর ওই ননদই, বউটির নিজের বাসরের আনন্দ নষ্ট করেছিল। এবার, সেখানে, ফুলশয্যার রাতে, ছোট ননদের বাড়ি গেল, বউটি, সেখানেও নন্দাই ও ননদ খুব অপমান করল। যাক……. এবার অষ্ট মঙ্গলায় ছোট ননদ ও নন্দাই এল। বউটি এবার কথা বলছে। ছোট নন্দাই বলল যে, সে কেন ননদকে তার মত শিক্ষা দিয়ে পাঠাইনি, কোনও কিছুই বড়দের কথা মানছে না! ? ….. আর, সে যেন ছোট ননদের নাক বিঁধিয়ে পাঠায়। সবাই বলেছে। নাক না বেঁধান থাকলে, বরের গায়ে, বৌ-এর নিঃশ্বাস লাগলে অমঙ্গল হয়, তাই। সে বললাম, যে, হ্যাঁ, এরকম কিছু সেও বিয়ের আগে, তার ওখানে শুনেছিল। আর তাই, তার মা, তার নাক বিঁধিয়ে দিয়েছিল। যাক, একমাস পরে আবার উত্তর প্রদেশে চলে এল। ব্যাস! …..হল কি? ! …… এরপর প্রায় দেড় বছর পর, স্বামীটি জব ছেড়ে, বউকে, নিয়ে, উত্তর প্রদেশ থেকে সেই গ্রামের বাড়িতে এল। ততদিনে, তার মিস্ক্যারেজ হয়ে গেছে। অপারেশন ও হয়েছে। টাকা নেই তাই, বিনামূল্যে, হাসপাতালের ট্রিটমেন্টের অবহেলায়, তার বাঁচারও আশা ছিল না। সারা দেহ তখন ফুল হয়ে আছে। যাইহোক করে বেঁচে গিসল। কারণ তার মা মেয়েকে সেবা করে, বাঁচিয়ে ছিল। তার জন্য ও বড় ননদ চিঠি পাঠাল, কেন বউটির মা তার ভাইয়ের ওখানে গেছে? …… আর স্বামী তার বন্ধুদের নিয়ে, টাকা ধার করে মাংস ও ভাতের ফিস্ট করছে। আর বউ মিস্ক্যারেজ হওয়ার জন্য, বিনা চিকিৎসায়, সেপটিক হয়ে গিয়ে, খেঁচছে। যাক, যেদিন এল, সেইরাতে, প্রায় আট ঘণ্টা, শীতের দিল্লীর রাতে, ট্রেন প্ল্যাটফর্মে বসে বসে কেঁপে কেঁপে কাটিয়ে তারপর ট্রেনে এসে বসল। এবার, হাওড়ায় এসে, একটি লরিতে তুলে দিয়ে, চললো, বউকে নিয়ে ওই অত দূরের গ্রামে। বউটি প্রায় আধ জ্ঞানহীনা। এবার গ্রামের বাড়ির সামনে আসতেই শুরু হল, স্বামী, ননদ, শ্বাশুড়ির নির্যাতন। আড়াই দিন ধরে রাস্তায় আসার ফলে সিঁদুর হালকা হয়ে গেছিল। আর ছোট ননদ বলল যে, তার দাদার মঙ্গল করতে হবে না, সিঁদুরের এরকম অবস্থা কেন? ! …..শ্বাশুড়ি, ধাক্কা মেরে উঁচু দুয়ার থেকে নিচু উঠোনে ঠেলে ফেলে দিল। বলল, ” তুই পাপী, তাই পেটের প্রথমটাকে খেলি! আর আমার পেটেরটার মঙ্গল করতে পারছিস নি? ! ….. ” বউটির কোমড়ে, মাথায় খুব জোরে আঘাত লাগল। আর ছোট ননদ, সে তো থামছেই না…. ওরা মা, মেয়ে মিলে, বউটির স্বামীকে টেনে ধরে রেখে, যত খুশি অত্যাচার করে চলল, বউটির ওপরে। পতিদেব চুপ। এবার বাইরে থেকে শ্বশুর এল। সে বাড়িতে ছিল না। মামা স্বশুররা ও এল। স্বামী সবার, মায়ের, বাবার, ছোট বোনের, মামাদের সবার পায়ে ধরে, বউকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়া করাল। বউটি ভাবছে যে, সে কি দোষ করেছে? ! …. এরপর ছোট ননদ ও শ্বাশুড়ি তার বাবাকে, তার স্বামীকে বলে বউটিকে তার বাবা মায়ের বাড়িতে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিল। আর বউটির পতিদেব ও বউকে রেখে এল। বউটির মাথা তখনও ফুলে আছে। পরে, সেখানে যখন আছে, তখন, বউটার বাবা ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনকে শ্বশুর ডেকে পাঠাল, কারণ তার স্ত্রীকে তার ছেলের বউ অপমান করেছে। বউটি তখন নিজের বাবার ভিটার, বাবার বাড়িতে বসে বলল, হ্যাঁ, নিজের বাবাকে বলল, ” সব মিথ্যে কথা বাবা! তোমরা কেউই যাবে না । আমি চাকরী করব। ডিভোর্স করে দব। বাবা! ” বাবা বোঝাল, মেয়েকে। মাও। মেয়ে বুঝল। পরে শুনল যে, ওদের প্ল্যান করা ছিল যে, যেই বউ ঘর ঢুকবে, তাকে তাড়িয়ে দিয়ে, ছেলের সব টাকা নিয়ে, বড় জামাইকে দিয়ে দেবে। হ্যাঁ, এরা সবাই শিক্ষা দেয়……………স্কুলে…….হ্যাঁ…