-
কবিতা- চেয়ে দেখো
চেয়ে দেখো
-অযান্ত্রিক
আমার প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে তুমি বললে ভালো আছি,
অথচ,তুমি মিথ্যে বলতে শিখলে না তো কোনো দিনই।
ভালো আছি বললে কিন্তু তোমার সবুজ শিফন শাড়ির আঁচল থেকে ,
ভেসে আসছে ভেঙে পরার শব্দ, কোথাও যেনো নামছে ধ্বস।
তোমার উজ্জ্বল কালো কাজলের আঁধারের মাঝে দেখা যাচ্ছে ,
বিনিদ্র রাত, একলা ছাদে পায়চারী, সুঠাম বিছানার চাদরের অতৃপ্তি।
নিলোফার, তুমি ভালো আছো মিছে আয়নায়,
বাস্তবে ভালো নেই।
তোমার গোলাপি ঠোঁটে ধরে রেখেছো যে বাসন্তিক হাসি,
তার নীচে উঁকি দিচ্ছে বিমর্ষ গ্রীষ্ম।
তোমার কপালের উপর আশ্রয় করেছে যে বলিরেখা,
তার প্রতিটা খাঁজে অকাল সন্ধ্যার অস্তরাগ, না না বয়সের নয়।
ক্লান্তির!,অবসাদের,
যার কোনোটার নাম ব্যাস্ত স্বামী, বড় হয়ে যাওয়া সন্তান।
তোমার চুলে হালকা হয়ে আসা কলপের বাদামী রং,
আসলে বিবেকের জং, মরচে পরা বিরহ নিঃশ্বাস।
তোমার কথায় যে উচ্ছলতা গোলাপ ফুঁটছে, তাও,
যেনো ঢেকে ফেলতে চাইছে একাকিত্বের কান্না।
দীর্ঘশ্বাসের কুয়াশা।
ধীরে ধীরে ছেড়ে যাওয়া ভালো থাকা গুলো ,
দায়িত্বের কার্ফুতারিত মুখোশের আড়ালে সামলাচ্ছে ধুলিঝড়।
নিলোফার তুমি ভালো আছো বলছো ,কিন্তু ভালো নেই,
চেয়ে দেখো। -
কবিতা- দিশাহীনতাও পাপ
দিশাহীনতাও পাপ
অযান্ত্রিক
তাহলে আমি কার কাছে যাবো? কত দূর যাবো?
আমার কোনো সংঘে বিশ্বাস নেই, কোনো গোষ্ঠীতে আস্থা নেই,
চলতে চলতে দীর্ঘায়িত হয়েছে চুলের জট, দাঁড়ির জঙ্গল।
পথ চলতি শিশুদের মনে জাগে ভয়, কিশোর যুবকেরা জানে,
আয়ের উপায় নেই, জড়া পূজিত হন ভৈরবজ্ঞানে।কোনো গ্রামে পৌঁছালে বসলে গাছের নীচে, তাকিয়ে দেখলে পিছে,
মেকি সত্যের জন্ম শঙ্খের স্বরে জড়ো হয় উপাচার।
কত বর্ধিষ্ণু মহাজনী মাথা,নত হয়, সংহ আচার জানতে চায়।
বোঝেনা আড়াল, বোঝেনা ক্ষীপ্ত তীর্থিক আমি, কোনো বিগ্রহ নই,
অর্থাচারী নপুংসক শুধু বুঝতে পারে ভেক, বলে ওই শ্রমনেরা অলস,
পরান্নভোজী, অবধুৎ নয়, চোর, তস্কর , সময় সম্ভ্রম লুটেরা।
আমি শুনি , উত্তর করিনা, হেঁটে চলি।মধ্য রাতে জ্যোৎস্নার বৃদ্ধা রূপে মননে উঠে আসে তরুণ ,
বহুকাল আগে যার পায়ের ছাপ হারিয়েছে সংঘের কিনারায়।
সে, হেসে উঠে বলে, কেন যে ঠকাও নিজেকে, কি চাও?
দিশাহীন, আর দৃষ্টিহীনতার ফারাক মাত্র এক চুল।
আমি শুনি না, আশীর্বাদকের সারিতে দাঁড়িয়ে ,
বলে যাই “মঙ্গল হোক,ভালো থেকো’
অস্ফুটে আর যা বলি সেটা মন্ত্র নয়, সংঘ বিরুদ্ধাচারী চটুল খেউর,
আমি আয়নায় দেখতে নিজেকে কার কাছে যাবো? কত দূর যাবো? -
কবিতা- বাই (Bye)
বাই (Bye)
-অযান্ত্রিক“আচ্ছা, আসি তাহলে, আবার দেখা হবে, ভালো থেকো”
বললেই কেউ, বুকের ভিতরটা কেমন হু হু করে ওঠে।
দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হয় পৃথিবী টলে গেলো, বোধহয়,
এইবুঝি ভেঙে পরলো, মাথার উপর ভাবনার ঝাড়বাতি।
চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো ভাললাগার টুকরো শ্বাস।
কোনো একটা টুকরো ফুটে যাবে পায়ে, হাতে,
কষ্ট পাবো, কাতরাব, ছটফটাবো যন্ত্রনাতে।
বুকের মধ্যে হু হু করে ঢুকে পড়ে বেনো জল,
কানের পাশে লক্ষ অযুত পা মাড়িয়ে চলে,শুকনো পাতা।
নতজানু অনুরোধ, আরেকটু বসে যাও, যে এড়িয়ে যায়,
দরজার কাছে, যেন ওপারেই কলকাতা দিল্লী দুবাই,
এমন কোনো গ্রাম শহর যেখান থেকে ফিরে না সবাই,
কেউ পাশ থেকে সরে গেলেই মনে হয়, ফিরবে তো?
আচ্ছা, আসি তাহলে, আবার দেখা হবে,ভালো থেকো”
বললেই কেউ, বুকের ভিতরটা কেমন হু হু করে ওঠে। -
কবিতা- আলোচনার বিষয়
আলোচনার বিষয়
অযান্ত্রিক
অনেকটা পথ বিভিন্নভাবে পেরিয়ে এসে আমরা,
যেকোন সুন্দর বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারতাম।
মুখোমুখি চায়ের ভার হাতে ,বলতেই পারতাম ভ্রমন,
কিংবা জঙ্গলে রাত্রি যাপনের অভিজ্ঞতার কথা।
আমাদের চায়ের চুমুকের সাথে সাথে ,ধোঁয়ায় ভাসত,
সকালের ইস্কুলের দিদিমণি,তার আলগোছে খোঁপা,
অথবা ,পাশের টেবিলে মুখ চুন করে বসে থাকা ছেলে,
যার সাথে গত দুদিন তার প্রেমিকার কথা হয়নি,
অভিমানের মেঘ জমেছে তার মুখে ,কানের পাশে, চুলে।
তুমি বলতেই পারতে তোমার পাশের ফ্ল্যাটের জানলায়,
একলা যুঝে যাওয়া অর্কিড,সবুজ বনসাই। আর জল,
দিতে আসা বৃদ্ধা,যার ছেলে বিদেশে থাকে টাকা পাঠায়।
কলেজ ফেরত তরুণী ,তার স্কুটি গাড়ি,চিবুকের তিল।
বিস্কুটের টুকরো ছুঁড়ে দিতে রাস্তার নেড়ি কুকুরের দিকে,
শোনাতে লেংটা না খেতে বাচ্চাটার কথা ,যার দিকে
লোলুপ দৃষ্ট্রির চুমু। ছুঁড়ে দিচ্ছিল একটা ক্ষুধার্ত শকুন।
কোনো বিখ্যাত ছবিতে। আর জোড়ায় জোড়ায় হাততালি।
কিংবা
আমরা দুজনেই দূরের কোনো সদ্য বিবাহ বিচ্ছিন্ন বান্ধবীর,
নিঃসঙ্গতার কথা ভেবে চুপচাপ চা খেয়ে যেতে পারতাম।
কিন্তু ,ওসব আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের কি,
আদৌ মানায়?না কোনো দিন মানিয়েছে?
তারচেয়ে ,
বরং আমরা লাল রঙের শুকিয়ে যাওয়া রক্তের কথা বলি,
শ্রমের বিনিময় মূল্যের বিবৃতিতে ভাতের উপযোগিতা,
আলোচনা করি।সাদা ভাতের চেয়ে সুন্দর জুঁই ফুল ,
আমার তো কোনো দিন দেখিনি। -
কবিতা- কেউ শেখায়নি
কেউ শেখায়নি
-অযান্ত্রিকযুদ্ধ আর ভুমিকম্পকে দেখে ভয় পেতে শিখেছি,
কেউ শেখায় নি,
হয়তো ধূসর কোনো অতীতে,
কোনো রাজার রাজকন্যাকে বাঁচাতে যুদ্ধে,
প্রেমিকের সেনার তীক্ষ্ণ বর্শা ফালা করে দিয়েছিলো,
আমার পাঁজর, সেই থেকেই হয়তো।
অথবা কোন আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠার জন্য,
ভূমিকম্পে, শেষ হয় গেছিলো আমার সব,
সেই জন্যও। হয়তো ভয় পেতে শিখে গেছি। এজন্মেএসব খবর কেউ জানে না শুধু আমি আমার মনের ভিতর,
উঁকি দিলে জানতে পারি।
যেখানে সারারাত, পূর্ব পশ্চিমে পায়চারি করে বিষণ্ণ চাঁদ,
ছিঁড়ে ফেলা আমের বোঁটার থেকে বিন্দু বিন্দু ঝরে পড়ে,
জলের মতো রক্ত।
জানলায় জানলায় অস্থির নিঃশ্বাসের উঁকি ঝুঁকি।
কুকুরের রাত টহলের শেষে, ভেজা নাকের উপর,
জেগে ওঠে অস্পষ্ট ধূসর প্রজন্ম স্মৃতি। ভয়!
যুদ্ধ আর ভুমিকম্পকে দেখে ভয় পেতে শিখেছি,
কেউ শেখায় নি, -
কবিতা- লুটের মাল
লুটের মাল
অযান্ত্রিক
খিদে আর যন্ত্রের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে যারা ,মানচিত্র তৈরি করলো,
তাদের মাঝখানে একটা মনবাতি আর কিছু শেফালীর মালা রেখে আসি।
যদি বুঝতে পারে শিখাও নিরপেক্ষ নয়।হাওয়ার দিকেই সম্মতি রাখে।
এতেও যদি না বোঝে তাহলে একটি কার্যকারণ সমেত বিবৃতিতেই শেষ।তারপর ,তাদের মধ্যেই মিশে যেতে হবে ,চাকরের মতো,
ছোটো ছোটো করে ছেটে ফেলতে হবে চুল,
বোঝা যাবে না বিলকুল।
এগিয়ে দিতে হবে জলের গ্লাস,চা দোক্তা পাতা,
টিপে দিতেহবে পা,কাঁধ ,ক্লান্তি ভরা মাথা।
বাজারের থেকে এনে দিতে হবে সব্জী সবচেয়ে দরাদরি করে।
হুঁ হুঁ ,বিশ্বাস বড় অমোঘ,বড্ড আসতে আসতে বাড়ে।তারপর,কোনো একরাতে ঘুমের পাড়ায় হেসোর সমর্থনে কার্য হাসিল,
এক পছে, নামাতে হবে মাথা,নিঃশব্দে ,বিনা বাধায়,-করা যায়।
অথবা ,গামছার প্যাঁচ, কাঁপা কাঁপি না থামা অবধি।
না না খুনী নয়,নিজেকে ভাবতে হবে জেহাদী।
তাহলেই ,লোকে ভয় পাবে,মানচিত্র ভয় পায় না। -
কবিতা- প্রলাপ অক্ষর
প্রলাপ অক্ষর
-অযান্ত্রিক
লিখতে চাইলেই কি লেখা যায়? কলম কি চাকর বাকর নাকি?
কতবার লিখবো ,মানুষ মরণশীল জানি ,
দেয়ালে রুমা অশোক যোগ দেব।
চারপাশে চেনা বেকার যুবকদের ভিড় ,কি লিখবো ,চাকরীর দরখাস্ত?
যারা কোনো ঝান্ডা ধরে না,
নাকি তাদের হাতে চাকরীর রেখা দেখে নেবো।লিখতে ইচ্ছে করলেও লিখিনা
,যেমন কেলাতে ইচ্ছে করলেও কেলাতে পারিনা ।
মেরে ছাল চামড়া তুলেই দেয়া যায় ঠুটো,জগন্নাথ সার্ভিস কমিশন,
টেনে কামড়ে ছিঁড়ে ফেলাই যায় উপর থেকে নীচু তলার একধারসে।
কিছু যদি লিখতেই হয় ,তাহলে লিখবো কনিষ্ঠ কেরানীর প্রেমে পাগল পিওন।
অথবা ,বিদেশী শাদা চামড়ার গল্প নীল ছবি ইতিহাস বিক্রেতা।
যদিও তাতে কিছু এসে যায় না ,বাদামী হলদেটে কালো মানুষের কথা,
কেউ শোনে না,পড়ে না।। -
কবিতা- বিস্মৃতির কথা
বিস্মৃতির কথা
-অযান্ত্রিক
সবাই বেশ মনে রাখতে চায়,জন্ম থেকে মৃত্যু।
বৃষ্টিতে পার্কে অপেক্ষা রত প্রেমিক মনে রাখে,
কবে প্রথম দেখা হয়েছিলো।
প্রথম চুমু,অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ,এই সব।
কলেজ পড়ুয়া মেয়েটা মনে রাখে প্রথম স্কুলের দিন।
প্রথম বার শাড়ি,স্বরস্বতী পুজো।
স্কুল ফেরত ক্লাস নাইনের ছাত্র, মনে রাখতে চায়,
ফর্মুলা ,রাসায়নিক বিক্রিয়া।
বিয়ে করতে বসা অনিচ্ছুক যুবতীর শুধু ছেড়ে আসা প্রেমিক।
মানুষ অতীত মনে রাখে,ইতিহাসের মতো।
কত পাক ধরা চুল,দেখি মনে রেখেছে প্রথম মাইনে,
আর সেই মাইনের টাকায় মায়ের শাড়ি,মায়ের হাসি।
সবাই খুব মনে রাখে।মানে অন্তত মনে রাখতে চায়।
শুধু,
আমার মতো কিছু মুখ,যারা অপমানিত হয়েছে,
তারাই শুধু ভুলে যেতে চায় ,কালো দিন,
অথচ কিছুতেই পারে না। -
কবিতা- আলট্রা ভায়লেট
আলট্রা ভায়লেট
-অযান্ত্রিকভয়টা আসলে আল্ট্রা ভায়লেট, ভয়টা আসলে ভয়,
হাতের মধ্যে হাত থাকলেও চেপে রাখতে হয়।
ঘেন্না হয়তো ঘুম ভাঙ্গানো ঘেন্না যেমন মাজন বিলাস,
কলেজে পরা টাটকা মেয়ে, দেখছে এঁটো চায়ের গ্লাস।ভয়টা আসলে মিছিল প্রবণ, ভয়টা হয়তো সঙ্গদোষ,
আঙ্গুল তুললে ভেংচি কাটে নিজের কিছু নীল আপস।
ঘেন্না কিন্তু ঠিক হেটে যায়, মিছিল ভেঙে শেষ রাতে,
বিনিময়তো সুযোগ শুধু, বিক্রি জমায় বিছানাতে।পিছনে কেউ আসছে বোধয়, সামনের শুধু এটাই ভয়,
সন্ধে হল পাড়া জুড়োলো, একটা মুখও চেনার নয়।
ছুঁতে চাইছে চামড়ার হাত, জিভের থেকে ঝরছে লাল,
ঘেন্না আসলে অনিচ্ছেকে দিচ্ছে হাওয়া বেসামাল।ভয় আসলে নিজের কাছে, ঘেন্না যেমন নিজেরই হয়,
পিঠের কাছে ঠেকলে দেয়াল, উল্টো কিছু জবাব চায়।
ছায়ার মধ্যে জাল ফেলেছি উঠবে কিছু রাঙানো চোখ,
হাঁটতে হাঁটতে পিছনে ফেরে কাদা বাঁচানো একটা লোক। -
কবিতা-মিউচ্যুয়াল
মিউচ্যুয়াল
– অযান্ত্রিকবাচ্চারা শান্ত হও, গোল করোনা, “সর্ব কায়া-মন-বাককে কর শ্রবণ”,
আগামীতে তোমাদের জন্য আমরা রেখেছি অন্ধকার প্রসূতি সদন।
রেখে যাচ্ছি আশীর্বাদী পুঁজ রক্ত, মাসি মেসোর ভাষা, রঙিন মাছের ঝাঁক,
ছিটে বেড়ার ঘর, যাতে উঁকি মারে পড়শীর ঈর্ষা, চোখ রাঙানো কথার বাঁক।
আড্ডায় রেখে যাচ্ছি, রাম মন্দির, মসজিদ, চাকরীর জন্য পতাকা,
শোনো, গোল করো না, তোমরা সাবধানে রেখো।
জেনো, নিশ্চিত গঠিত হবেই নরম কশেরুকা।জানি ,খুব সহজেই কান্না বলতে তোমরা শিখে যাবে মিষ্টি, গ্লিসারিন,
হাতের মুঠোয় মোবাইলে জ্বেলে সোনালী আলো কাটাবে উৎসবের দিন।
বুঝবে ভালোবাসা মানে বিছানা আর, সুগন্ধি বেলুনের বিজ্ঞাপন,
মুখ নয়, সৌন্দর্যতা বলতে বুঝতে পারবে বুকের অসমতল জমি,
বাচ্চারা ঝামেলা করোনা, আমরা ভালোবাসার মানে অভিধানে রাখিনি।
তোমাদের কেতাবের সপ্তম পরিচ্ছদে শিখবে, লাইন মারা, ছাম দেখা,
অনুশীলনী ষোলোয় হাতের কাজ, ছোট্ট হয়ে আসা আয়ু রেখা,
মিউচুয়াল বিচ্ছেদ, তাও আছে, এক কথায় প্রকাশে রাখা।বাচ্চারা গোল করো না, যেটুকু উত্তরাধিকার যে টুকু শিলালিপি,
সেগুলো ভাঙা ইঁটের নীচে, এসো আমরা প্রতিদিন সভ্য হতে শিখি।