• কবিতা

    কেন এমন হয়

    কেন এমন হয়
    – প্রীতি মান

     

     

    দারোগাবাবু, দারোগাবাবু কেন এমন হয়,
    নিজের জিনিস থাকতে সবাই চুরি করে রয়।
    কম পয়সা, দারিদ্রতা,
    কীসের এতো মাথা ব্যথা —
    এক গাল মুখ ছেড়ে হাসি
    পরতে যায় যে মরণ-ফাঁসি ।
    এর থেকে তো ভালোই হতো,
    যদি তারা কাজ করতো,
    খেটে-খুটে মাইনে পেয়ে,
    থাকতো মুখে হাসি ছেয়ে।
    তবুও কেন এমন হায় !
    চুরি করে মরতে যায়।

    দারোগাবাবু, দারোগাবাবু কেন এমন হয়,
    মানুষ হয়ে মানুষ মারে, এটা তো তার ধর্ম নয়।
    কীসের এতো লুকোচুরি,
    চোর-ডাকাতি মারামারি,
    ভদ্র মানুষ সমাজ মাঝে
    আঘাত হানে নানান সাজে;
    মানুষ হলো সবার বড়ো, সত্যিই কি তাই —
    মনের দিকে ছোটো কত, সুখ তো কভু নাই।
    মানলাম তাদের টাকাই সব, তবুও সেতো মানুষ,
    মুখের হাসি কেড়ে নেয়, করেনা তবু আপোষ।
    নিজের গায়ে বোম লাগিয়ে মানুষ মেরে গেল
    কী লাভ এতে, নিজেকেই যেতে হলো।

    বললে হেথায় দারোগাবাবু, শুন সত্যি কিছু কথা,
    মানুষ মেরে কখনও তারা পায় না কোনো ব্যথা,
    এটাই তাদের রোজগার,
    টাকা-পয়সা, ঘর-বার,
    দেশের কথা ভাবে না তারা তোমার-আমার মতোন,
    লোক মেরে চুরি করে নিজের দেশের ধন।
    দেশের কথা ভাবো যদি কোরো না কভু ভয়,
    এই দেশেরই নাম তোমাকে করতে হবে জয়।
    রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, বীর সুভাষের মতো,
    তুমি হবে দেশের ধন রইবে অবিরত।
    চলার পথে থাকবে হাসি, থাকবে মুখে গান
    মরে গেলেও রাখবে মনে সারা হিন্দুস্তান॥

  • কবিতা

    বসন্ত

    বসন্ত
    -প্রীতি মান

     

     

    এসো বসন্ত, এসো বসন্ত
    এই ধরনীর বুকে,
    স্নেহ মাখাময় রৌদ্র-ছায়ায়
    সবাইরে রেখো সুখে ।
    শুষ্ক মাটি, রুক্ষ ধরায়,
    দাও ফুল-ফল ভরিয়ে,
    জীর্ণ প্রদীপখানি নিভেছে কখন্
    দাও ফিরে তারে জ্বালিয়ে ।
    রঙ ছড়িয়ে পাখনা মেলে
    পাখির কলরবে,
    হল ভোর, ভাঙল ঘুমের ঘোর
    ভাবছি মনে সবে ।
    রাজার আসন পেলে তুমি
    সেরা ঋতুর মাঝে,
    পাচ্ছি যেন এই ধরাকে
    মায়ের মতোন সাজে ।
    শিশির ঘেরা সবুজ ঘাসে,
    শুভ্র মেঘের চাদর,
    বসন্ত হাওয়ায় দুলছে মন,
    যেন পাচ্ছি মায়ের আদর ॥

  • কবিতা

    হারিয়ে গেছি

    হারিয়ে গেছি
    – প্রীতি মান

     

     

    আমি হারিয়ে গেছি, হারিয়ে গেছি এক অজানা দেশে,
    নাম জানিনা, ধাম জানিনা, থাকছি ছদ্মবেশে।
    কী পরিচয়, কী সংশয় কিছুই বুঝি নাকো,
    এমন দেশে, বলছে কে সে নিজেকে গোপন রাখো।
    শুধুই দেখি গাছ-গাছালি, নেইকো কোনো জন —
    আমায় দেখে, আদর করে, করছে স্বাগতম ।
    পাখ-পাখুরি পাখ ছড়িয়ে অশ্বত্থ আর বটে
    বলছে যেন “এসো, এসো মোদের দেশের তটে”।
    পাহাড় চূড়া নৌকোখানি, সূয্যিমামা পালে,
    সুকুমার মেঘগুলিতে তরল স্বর্ণ ঢালে।
    নীল দিঘি, ঝিকিমিকি করে সারাক্ষণ,
    স্রোতের ধারা, পাগল পারা করছে যেন মন ।
    কালের ছায়ায়, ঘুমের মায়ায়, খেলছে রবি-শশী,
    ভাবছি আমি হারিয়ে গেছি স্বপ্ন দেশে বসি॥

  • কবিতা

    কিছুক্ষণ

    কিছুক্ষণ
    -প্রীতি মান

     

     

    কিছু ঠিক হারিয়েছে দিক,
    কিছু ভুল গুনেছে মাসুল ।
    কিছু সুর পেরিয়েছে দূর,
    ঝরেছে ঝরাপাতা ফুল ॥
    কিছু দিন ভুলেছে সেদিন,
    কিছু রাত এসেছে হঠাৎ ।
    কিছু রঙ হয়েছে বেরঙ,
    ছুঁতে চায় আজ দুটি হাত ॥
    কিছু স্মৃতি পাঠিয়েছে চিঠি,
    কিছুক্ষণ হারিয়েছে মন ।
    কিছু গান দিয়েছে যে টান,
    যেন এক মধুর মিলন ॥
    কিছু কিছু কথাতে,
    কিছু ভালোবাসাতে —
    কিছু স্বপ্ন দেখাতে,
    কিছু সুর মেলাতে ॥
    কিছু ভোর খুলেছে যে দোর,
    কিছু শেষ হয়েছে বিশেষ ।
    কিছু কাল হয়েছে সকাল,
    যেন এক স্বপ্নের দেশ ॥
    চেনা পথ মেঘে ঢাকা রথ,
    ভুলো মন করেছে যে ভুল —
    কিছু ঠিক হারিয়েছে দিক,
    কিছু ভুল গুনেছে মাসুল ॥

  • কবিতা

    তুমি বলেছিলে বলে

    তুমি বলেছিলে বলে
    – প্রীতি মান

     

     

    তুমি বলেছিলে বলে সেদিন রাত হয়েছিল,
    তুমি বলেছিলে বলে তারারা খুঁজেছিল নিবিড় অন্ধকার,
    তুমি বলেছিলে বলে, আকাশটা ছিল বেশ থমথমে,
    তুমি বলেছিলে বলে সেদিন খুলে রেখেছিলাম দ্বার।
    তুমি বলেছিলে বলে, সেদিন ছিল পূর্ণিমা,
    এক মহা অমাবস্যার বুক চিরে যখন
    বেরিয়ে এসেছিল জোৎস্না —
    তোমার সেই অদ্ভুত হাসির কারণটা না ঠিক এখনও
    বুঝে উঠতে পারিনা।
    ঠিক সেই দিন থেকে যেন তোমার জেতার অহংকারে
    পরাজয় স্বীকার করে হার
    অন্ধকার,
    বিদ্রুপ করেছিল তোমায় —
    দিয়েছিল অভিশাপ।
    আর ঠিক সেই রাত থেকেই কমে
    এসেছিল তোমার জ্যোতি, তোমার দম্ভ,
    তোমার জেতার উল্লাস।
    পরাস্ত হলে এক গহীন অমাবস্যায়,
    তোমার অহংকারের বশে ।
    সেদিন ছিলে তুমি চুপ একদম চুপ

  • কবিতা

    পাল্টা জবাব

    পাল্টা জবাব
    -প্রীতি মান

    অন্দরমহলে থাকতে থাকতে প্রায়
    হয়ে গেছি অন্ধকার —
    এভাবেই কি লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখতে হবে
    এ জগৎ-সংসার।
    আমাদেরও মান আছে, মর্যাদা আছে —
    আছে কিছু স্বপ্ন দেখা ভোর,
    পূূরণ হলে তো হতেও পারে
    দেখিনা একবার চেষ্টা করে,
    ভাঙলেও তো ভাঙতে পারি এ কারার দোর॥
    কাঠগোড়াতে দাঁড়িয়ে আছি
    ভাবছি মনে মনে,
    ঈশ্বর কি নেই নাকি আছেন
    কোনোখানে —
    দোষ কি আমাদের আদৌ কি আছে
    কোন দোষ?
    বলতে পারো আছে বুকের পাটা
    যত নিষ্ঠুর জাতির দল,
    মুখ বুজে সব সই বলে কি
    ভেবেছো মোদের দূর্বল।
    না আমরাও সবল
    আমরাও স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারি।
    তোমাদের এরা রেখে
    এগিয়ে যেতে পারি।
    দেখোনা একবার মুক্ত করে
    পায়ের শিকল খুলে,
    দেবো তোদের জব্দ করে
    পাল্টা জবাব তুলে॥

  • কবিতা

    সময়

    সময়
    -প্রীতি মান

     

     

    দিন থেকে রাত হয়, রাত থেকে দিন,
    সময়ের মায়াজালে কত কী রঙীন।
    তখনই সবে শুরু তখনই তো শেষ,
    সময় পাল্টে দেয় গোটা পরিবেশ।।

    কখনও হাসির খেলা কখনও বা নয়,

    একি খেলা খেলে যায় জীবনে সময়।

    ইতিহাসে যা যা আছে অক্ষয়,
    ভদ্র মানুষ সে যে কী তার পরিচয়॥
    ভালো থেকে মন্দ হতে কতক্ষণ,
    কিংবা লুকোনো ব্যথা ভালোবাসা মন।
    কত কি যে হয় দুনিয়াতে অবিরল,
    সময়ই চিনিয়ে দেয় আসল-নকল॥
    সময়কে বুঝে নিতে পারবে যে জন,
    সময় অসময় জিতবে সে রণ।
    যে জন বুঝিতে না পারে তাকে ধিক্ শত ধিক্,
    সময়ের চাকা বলে টিক্ টিক্ টিক্ ॥

  • কবিতা

    বাক্যহারা সবুজেরা

    বাক্যহারা সবুজেরা

    -প্রীতি মান

     

     

    ওহে নিষ্ঠুর..!

    নিষ্ঠুর মানুষের দল
    তোমরাই নাকি শ্রেষ্ঠ দান এই বিশ্ব মাঝারে,
    তোমাদের চোখে সমান সবাই
    আপন ভাবো সবাই রে,
    সত্যিই কী তা করো ?
    আমরা যদিও ক্ষুদ্র, অতি নগন্য
    তবুও তো জীব, দেহে আছে প্রান,
    তবে কেন এ তাচ্ছিল্য অবহেলা,

    অপমান  , বলতে কী তা পারো ?

    আমরাও তো সবুজ-শ্যামলে ভরে তুলি বসুন্ধরা,
    কষ্ট হয় , জানো কী তা….
    হাওয়ার তালে তালে মাথা মোদের দোলে,
    দুঃখ হয় হারা ।
    চাইনি তো বেশি কিছু
    এর পরেও মোদের ভাগ্যে জোটে জুতোর ফোয়ারা ।
    কেন ? এ বিচার কেমন তরো
    বলতে কী তা পারো ?

You cannot copy content of this page