• কবিতা

    কবিতা- প্রশ্ন

    প্রশ্ন
    – সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    প্রশ্ন তুমি কোরো নাকো আর–
    যদি চাঁদ ডুবে যায় যাক–
    অদ্ভূত আঁধারের গ্রাসে ধ্রুবতারা যদি পড়ে খসে
    ছায়াপথ যতদূরে সরে যায় যাক।
    কৃষ্ণগহ্বর যদি সব কিছু গ্রাস করে তার,
    আলো আর আঁধারের যা কিছু ভ্রুকুটি থাকে থাক
    সবকিছু আঁধারেই ডুবে যাবে নাকি?
    এক জীবনেই দেখি বারবার কতো অন্ধকার!
    কে আছে বাঁচাবে বলো কোথা আছে সে দুনিয়াদার।

    অপেক্ষায় থাকি আরবার–
    সূর্যোদয়ের ভোর দিগন্তের পার হতে দেখা দেবে নাকি!
    বিস্ময়ে তাই জেগে থাকি।
    যে মহাসাগর পারে যত আশা ডুবে যেতে দেখি,
    বিরহ দগ্ধ দিন অপেক্ষার মায়াজালে
    তবু বেঁচে থাকবেই যদি–
    ফুরাবে কি চাওয়া পাওয়া আর !
    মেরু রেখা আরবার বদলাবে কি?
    পৃথিবীর উষ্ণায়ন থেমে যাবে নাকি”
    সুশীতল জলবায়ু পাবো কি আবার?

    জীবনের যত গান প্রাণ পায় অফুরান
    প্রখর দিনের তাপে তা শুকাবে নাকি?
    প্রশ্ন তুমি কোরো নাকো আর–
    ভালোবাসা যদি দরকার প্রাণে প্রাণ মেলাও আবার।
    হাওয়ায় হাওয়ায় প্রাণে সাড়া জাগবে কি?
    কেউ ফিরে তাকাবে কি আর?
    সময় আসবে যবে দিনকাল পাল্টাবে
    সুদিন দুচোখ ভরে দেখবো আবার।
    ভয় কেটে ঘুঁচে যাবে সকল আঁধার
    এসো করি জয়ধ্বনি তার।

  • কবিতা

    কবিতা- ছবি

    ছবি
    – সঞ্জিত মণ্ডল

     

    অনন্ত আকাশ জুড়ে কত রঙ তুলি দিয়ে যত ছবি আঁকো দেখি ভুবনে,
    এক জনমে তো নয় বহু জনমের সাধে সেই ছবি দেখে যাই জীবনে।
    কত রঙ জানো তুমি কত বর্ণচ্ছটা,
    সৃষ্টি যেন লহমায় সুখের কবিতা,স্বপ্নপারাবারে,
    ছবি এঁকে রাখো তুমি মেঘের মিনারে।
    উদাসী অন্তরে সেই মুগ্ধ ছবিখানি হাতছানি দেয় বারেবারে।
    কখনো মেঘের ফাঁকে সোনা রোদ্দুরে
    রাশি রাশি বর্ণচ্ছটা উছলিয়ে পড়ে মায়াময় ধরণীর বুকের ভিতরে।
    সে আলোর রৌদ্রছায়া ধরা দেয় ছবির আকারে, কবির অন্তরে।
    কখনো নাবিক দেখি পালতোলা নাওয়ে
    কখনো বা ঘোড়সওয়ার পাগলা ঘোড়া নিয়ে
    কখনো বা দুর্নিবার সৃষ্টির টানে
    উদভ্রান্ত প্রেমিক এক ভেসে যায় প্রেমিকার টানে!
    কখনো বরাহ দেখি কখনো অসুর
    কখনো সুবেশা নারী আনমনে চলেছে বিধুর।
    রোজ দেখি নীলাকাশে মেঘেদের ভেলা ভাসে
    রোজ দেখি কত ছবি আঁকো ভরপুর,
    সব ছবি তোমারই তুলির টানে হয় সুমধুর।
    তুমি ছবি আঁকো কবি কথা আর কাব্য দিয়ে
    জানিনাতো কটা পায় মেঘের উচ্চতা,
    স্রষ্টার এঁকে দেওয়া আকাশের ক্যানভাসে
    ছবি যেন মেঘের কবিতা।
    আরও আছে স্রষ্টার খাতা খুলে দেখিবার কতশত ছবি তা ঠিক যেন কবিতা,
    নদী নালা ঝর্ণার, ফুল পাখি পর্ণার মরুভূমি, হিমগিরি, সবিতা।
    হার মানি সবই তা যত লিখি কবিতা নয় ছবি নয় তারা কবিতা।
    হার মানা হার তাই মনে মনে লিখে যাই স্রষ্টার ছবি হলো কবিতা।

  • কবিতা

    কবিতা- অন্য সময়

    ” অন্য সময়”
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

    তোমার গমনপথে অতলান্ত আঁখি মেলে দেখি
    কেমন সবুজ আছ তুমি!
    এই ভরা নিদাঘের প্রতপ্ত বেলায়
    তোমার গহন মায়া সারাটা আকাশ জুড়ে
    অদ্ভুত ক্লান্ত চোখে চায়।
    কাকেদের জলসায় কৃষ্ণচূড়ার ডাল
    হিন্দোলিত হয় বুঝি তোমার আশায়।

    তবু তুমি চলে গেলে হায়,
    অদ্ভুত অনুভূতি মনের গভীরে বিস্তারিত হয়,
    ঠিক যেন স্পর্শসুখ বেদনার মতো,
    কোনো এক বিপন্ন বিস্ময় ছায়া ফেলে যায়,
    জীবনের আঙিনায়
    দুপুরের বাতাসের ক্লান্ত এক নিঃশ্বাসের মতো।

    তার কাছে আরো যদি কোনো এক বিপন্ন সময়,
    ঋণ করে পাওয়া যেত, তবু সেই দুপুর বেলায়
    মধুর ঘুঘুর ডাক ঝিম ধরা দুপুরের
    সে প্রিয়ার সে আমার ক্লান্ত এক দীর্ঘশ্বাস মতো
    সঞ্চারিত হত বুঝি মন আঙিনায়
    সৃষ্টিসুখ উত্তাপের স্পর্শসুখ মতো।

    হয়ত উদাসী মন থমকাতো কিছুক্ষণ
    উদাসী সে দুপুরের উষ্ণতার পারাবারে
    প্রিয়ার আদরে।
    কখনো বা হৃদয়ের অমোঘ গভীরে
    একান্ত আপন করে, সময় ভাসিয়ে দিত
    অন্তহীন মিলনের আনন্দ মেলায়।

    কখনো হয়না সে তা, তোমার মিলন গাথা
    শেষ হয়ে যায়।
    তোমার গমনপথে যেতে যেতে থমকানো
    কিছু পিছু টান, আর মায়া শবরীর গান
    তবু ফিরে আসা যেন হয়না কো আর।

    দুপুর গড়িয়ে যায় বিকেল বেলায়
    সন্ধ্যার মায়াদীপ অনির্বাণ জ্বলে ওঠে
    তারায় তারায়।
    রাত বুঝি ভোর হয়ে যায়,তোমার প্রতীক্ষায়।
    আশা তাই নিরাশার মতো সুদূরে মিলায়,
    যেন সেই তারাদের গায়।
    প্রভাত রবির ছবি, মহাকাল যাত্রাপথে
    কখনো বা কোনো এক উদাসী হাওয়ায়
    কেন জানি ম্লান হয়ে যায়—-
    নেভাদীপ আরবার জ্বলে ওঠে তারায় তারায়।
    তবু সে আবার বুঝি ভোর হয়ে যায়।

    জীবনের মরণের যত টানা পোড়েনের
    মহাকাল গতিপথে ক্ষুদ্র বুঝি মানব-বেদনা!
    নিয়মের নিষ্পেষণে দাগ দিয়ে যায়
    যেন সেই অন্তহীন কালের মায়ায়।
    তবু মন ডেকে বলে
    যেতে আমি দেব না তোমায়।
    সময়ের কালস্রোতে ভেসে চলে যায়
    জীবন যৌবন ধন মান
    আরো কিছু ব্যথিত বিস্ময়!
    স্রোতের আবর্তে হায়, সবই যেন ভেসে চলে যায়
    যত কিছু মায়া আর আশা ভালোবাসা
    সবই যেন পিছু ডাকে শেষের বেলায়
    তবু চলে যেতে হয়,
    হে বন্ধু, বিদায়,হে বন্ধু, বিদায়।

  • কবিতা

    কবিতা- আমি রূপ দেখাব না

    আমি রূপ দেখাব না (বাউল)
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

    আমি রূপ দেখাব না–
    যতই করো আনাগোনা, রূপ দেখাব না।

    রূপে আমি রূপসী হলাম,
    কাঞ্চনজঙ্ঘা হল আমার নাম,
    ওরে সেই নামেতে খুঁজলে মোরে
    পুরবে রে তোর পুরবে মনস্কাম।

    নিবাস আমার মেঘের ওপারে
    বৃষ্টি ধোয়ায় পা বারে বারে,
    সেই পা ধোয়া জল নদী রূপে
    যায় সাগর পারে।
    তবু রূপ দেখাব না —

    দেবতা থাকেন মাথার উপরে
    দিনমনি আলোর মালায় রোজ পূজা করে।
    সেই প্রভাত আলোর সোনার কিরণ
    যায় ভুবন ভরে, কোনো বাধা মানে না।
    তবু রূপ দেখাব না—

    চেনা অত সহজ নয় আমায়,
    আমায় চিনতে গেলে লাগে গো সময়,
    সাধক বন্ধু ঋষি মুনি, আরো যে সব নামে চিনি,
    হাজার বছর যাতায়াতে চিনতে পারে না।
    আমার সে রূপ দেখতে যে পায় না।
    আমি রূপ দেখাব না–

    মেঘে ঢাকা অঙ্গ যে আমার,
    অনিন্দ্য সেই রূপের বাহার।
    উঁকি ঝুঁকি মারলে তবু দেখতে পাবে না।
    সাধন বিনে সকল কামে দেখা দেবো না।
    আমি রূপ দেখাব না–

  • কবিতা

    অমর কবিতা

    অমর কবিতা
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

    তখনও কবিতা লেখা হবে যবে বাতাসে ভাসবে ছাই,
    তখনও কবিতা লেখা হবে যবে ধূলো ঝড়ে ভরে যাবে এ আকাশটাই।
    তখনও কবিতা লেখা হবে যবে শিশিরের রেখা মুছে যাবে ঘাসে ঘাসে,
    তখনও কবিতা লেখা হবে যবে মরচে ধরেই যাবে সব বিশ্বাসে।

    যখন দেখেছি নির্মম ক্রোধ বুলেটে আগুনে ত্রাসে,
    তখনও কবিতা লেখা হবে তবে মুমূর্ষু নিঃশ্বাসে।
    ছড়িয়ে যখন যাবে সে আগুন ধূমকেতু উল্লাসে,
    তখনও কবিতা দেখা যাবে লেখা নিঃসীম মহাকাশে।

    যুদ্ধ-দামামা থেমে গেলে কাক শকুনের উল্লাসে,
    ক্ষয়ে যাওয়া মেয়ে বিবর্ণ শিশুরা বেয়নেটে মুখ ঘসে।
    শ্মশানে শৃগাল হানাদার আর রক্ত চোষারা আসে,
    কবিতারা জানি থেমে থাকে নাকো সব ছবি ধরে রাখে।

    বাউলের গানে ভাটিয়ালি সুরে রবি নজরুল সাথে,
    খেটে খাওয়া জন মজুরের ঘামে কবিতারা বাসা বাঁধে।
    ছাতি ফাটা রোদে তপ্ত দুপুরে কাস্তে কোদাল হাতে,
    কবি সুকান্ত, সুভাষ যেখানে প্রতিবাদ লিখে রাখে।

    অমর কবিতা প্রেমে নির্জনে কবিতারা হাটে মাঠে,
    পথিকের পায়ে ধূলিকণা সাথে কবিতারা পথ হাঁটে।
    হত্যা যখন হয়েছে তখন কংসের কারাগারে,
    কবিতা সেখানে আকাশবাণীতে মহাকাল লিখে রাখে।

  • কবিতা

    ক্ষিদে মরে গেছে

    ক্ষিদে মরে গেছে
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

    যে ভ্রমর সময়ের ধারাপাতে উড়ে এসে জুড়ে বসে,
    কাল কেন আসে নাই সে!
    যে মধুর অফুরান উৎসবে সোনাঝুরি ঝরে পড়ে বৈশাখী ঝড়ে
    তাণ্ডব এমনই মাতালো সব বুঝি পথ হারালো!
    তুমি চেয়ে দেখেছিলে, আমিও দেখেছি তারে-
    যে নদীর বালুচরে তরমুজ ভরে গিয়েছিল
    তারও কিছু অবদান ছিলো, ফুটিফাটা রোদ্দুরে তৃষ্ণার জল দিয়েছিল।
    চাতক পথিক যদি তৃষ্ণার জল খোঁজে এদিক ওদিক
    পান্থপাদপ হয়ে দাঁড়াবে কি?
    শুনেছো কি বাতাসের কান্না–
    একমুঠো ভাত নয় রুটি
    মুঠোমুঠো আশ্বাস রাশি, অন্ন ভেবে তাই মুখে ঠাসি,
    ক্ষিদে মরে নাই।
    চর পড়া নদীটার মতো বুকে নিয়ে অনন্ত বালুকা রাশি
    হাপিত্যেশ চেয়ে আছি জঠরের প্রত্যন্ত গভীরে
    ক্ষিদে মরে নাই।
    বিষমদে যে গলা ডুবেছে অতলে জ্বলে গেছে নাড়ী- উপনাড়ী,
    হৃদয়টা বাঁচিয়েছি খেলোয়াড়ী চালে–
    ক্ষিদে মরে গেছে, তবু হুঁশ ফেরে নাই।

  • কবিতা

    সুদিন

    সুদিন
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

    হয়তো আকাশে ডানা ভাসাবে না চিল
    মনের আগুন ফাগুনের দিনে নেভানো যাবে না আর,
    ভালোবাসা সে তো হারিয়েছি বহুদিন-
    সোহাগ রাতের তারা খসে পড়ে যায়!

    আর দেরী নয় অস্ত্রতে শান দাও;
    ঘরেই রয়েছে শত্রু শিবির কি করে তা ভুলে যাও
    স্বর্গের লোক নামবে কি পৃথিবীতে,
    আকাশ কি হবে আবার জ্যোৎস্নাময়!

    বিভেদের ডাকে কত লোকে কত বলে
    পুরানো সুহৃদ হারানো পথের ধারে-
    চোখে চোখ রেখে পা মিলিয়েছি সেই কবে,
    বাঁকা চাঁদ হাসে দূর আকাশের গায়।

    তুমি আমি নয় আমরা বলোনা ভাই
    বেশী কিছু নয় একটু আদাব চাই,
    মিছে রঙ মেখে কত কিছু সাজা যায়
    আসেনা ফাগুন আগুন যে দেশময়।

    ভাগাভাগি করে মরেছি তো সেই কবে,
    শতাব্দী ঢেউ গায়ে মাখে নাতো কেউ-
    বিবেকের ডাক শুনতে চাইলো কে
    কাঠ ফাটা রোদে ভাবনা কি মরে যায়!

    আসুক না ঝড় ঝঞ্ঝায় নেই ভয়,
    দুচোখে আগুন বিপ্লব চেতনায়-
    বিভেদকামীরা দূর হঠো হেথা নয়,
    ভারত আমার ভারতবর্ষ একতার হবে জয়।।

  • কবিতা

    জীবন সেতু

    জীবন সেতু
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    জীবন ভ্রমণ শেষে দেখা হয়ে গেলো এসে রেলের সেতুতে। সেদিন তোমার হাতে ছিল নাকো ফুল,
    বিদায়ের মিলনের চেনা সম্ভাষণ।

    আধো আলো আঁধারির সেই সন্ধিক্ষণ কেমন বিষণ্ণ হল, আলো ছায়া সরে গেলে আরক্তিম হল সেই জ্যোৎস্নাসিক্ত মন।

    রেলের সেতুতে জীবনের সেতু হতে দূরে বহুদূরে দেখা দিল যেন এক অতীত বুদ্বুদ!

    কোনোটায় হাসি আছে, কোনোটায় গান, কোনোটায় মুগ্ধ প্রেম, কোনোটায় কেবলই দোটান!

    সংসারের রক্তচোখ, নিষেধের বেড়াজাল, কখনো বা শুধুই আক্ষেপ!

    সাঁতার না জানা নদী সংসার স্রোতের মত ধায় খরবেগ। দুজনের হাবুডুবু, জলরাশি চারিধার, কূলে ওঠা হয় নাকো আর-
    সময়ের সন্ধিক্ষণে ভেসে যায় সমাজ সংসার।
    এপারে দাঁড়িয়ে তুমি ফেল দীর্ঘশ্বাস,
    ওপারে একেলা আমি দিয়ে গেছি বাঁচার আশ্বাস।

  • কবিতা

    নৈঃশব্দের সন্ধানে

    নৈঃশব্দের সন্ধানে
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    শহর ছাড়িয়ে কিছু দূরে গিয়ে পুরানো নদীর বাঁকে
    গাছ গাছালির ফাঁকে, শুধু পাখিরা যেখানে ডাকে
    শব্দরা যেথা কথা খুঁজে ফেরে নৈঃশব্দের কাছে।
    যাব আমি সেথা দেখে নিও তুমি তোমাদেরও নেবো সাথে।
    সে এক বনের পার, শাল পিয়ালের পাতায় পাতায় ভরানো সে চারিধার।
    শিমূলের ডাকে মৌমাছি ছোটে মৌ জমা করে চাকে,
    গাঁয়ের বিধুরা বধুকে ডেকেছে ভালোবাসা এক ফাঁকে।
    প্রজাপতি আজও ভোলেনি সে পথ উন্মনা হয়ে থাকে,
    যে ফুলের প্রেমে এখানে ওখানে ভ্রমর মহুয়া নাচে।
    দোয়েল পাপিয়া কয় কথা যেথা বউকথা কয় কানে,
    চুপকথারাও মৃদু ঈশারায় ডাক দিয়ে যায় মনে।
    আকাশ পারের নীল সাগরের মেঘভেলা কারে টানে,
    সোনা রোদ্দুরে ডানা মেলে দিয়ে সোনাচিল ভাসে গানে।
    জোরালো বাতাস ফেলে নিঃশ্বাস শব্দরা কথা শোনে,
    ফলের বাগানে হাওয়া দোলা দেয় তালপাতা দিন গোনে।
    আম,জাম, লিচু, কলা, জামরুল যত আছে সে বাগানে,
    হৃদয়ের কথা বলে বুঝি গাথা কে যে পাকে কোন দিনে।
    বাঙালির প্রাণ আনচান করে ফসল পাকার দিনে,
    চোত-বোশেখের জৈষ্ঠের দিনে গরমে কিংবা ঘামে।
    বাঙালির প্রাণ আজও তাজা জান, বিভোর হয় সে গানে,
    আহার না থাক বেঁচে থাকে তারা বাংলার গানে গানে।

  • কবিতা

    সৃষ্টি কল্প

    সৃষ্টি কল্প
    -সঞ্জিত মণ্ডল

     

     

    পূবে যখন আঁধার এলো ছেয়ে, শুধাই তারে তুমিই কি সেই মেয়ে!
    অবাক চোখে আমার দিকে চেয়ে লজ্জা রাঙা মুখটি তাহার নিয়ে,
    শুধায় আমায় পথিক কোথায় যাবে, আমার কুটির ওই সে বনের ছায়ে।
    ঘন বাদল আসলো আরো ধেয়ে ত্রস্তে বলি চলো আমায় নিয়ে।
    তোমার কুটির সেই সে বনের ছায়ে সে বুঝি ওই কাজলা নদীর বাঁয়ে।
    দুলিয়ে মাথা অবাক বলে মেয়ে, চেনো বুঝি গেছো অচিন গাঁয়ে।
    খেলি মোরা অশোক তরুর গায়ে আরো কতই শিমূল বকুল ছায়ে।
    সবাই সেথায় আছে পরম সুখে মোদের গরব কাজলা নদী নিয়ে।
    ভাবতে বসি যখন সকল দিয়ে পড়শীরা সব আসে খবর নিয়ে।
    যাবে তুমি আমার সঙ্গ নিয়ে যে পথ গেছে গাঁয়ের উপর দিয়ে।
    এ পথ গেছে কোন সুদূরের পানে আকাশ যেথায় মেশে মাটির সনে।
    চলো পথিক আর কোরো না দেরী আকাশে আজ বিজলি দেখি ভারী।
    আমি বলি চলো সোনার মেয়ে চলো তোমার স্নিগ্ধ কুটির ছায়ে।
    এমন সময় চমকে উঠি কি যে বিজলী হানে কালো মেঘের মাঝে।
    আচমকা সেই বজ্রপতন শুনে ভয়ে আমায় বুকে জড়ায় মেয়ে।
    অমন মধুর সুবাস যে তার দেহে আনমনা হই মাটির গন্ধ পেয়ে।
    বলল আমায় দৌড়ে চলো ধেয়ে বৃষ্টি পড়ে সারা শরীর দিয়ে।
    আনন্দে কি অধীর হয় সে মেয়ে হঠাৎ করে বৃষ্টি ধরে ছোট্ট আঁচল দিয়ে।
    আমি বলি কি আশ্চর্য! কি হবে ও দিয়ে বৃষ্টি তুমি ধরবে বুঝি তোমার আঁচল দিয়ে?
    খিলখিলিয়ে হাসলো যে সেই মেয়ে মুক্তো ঝরে তার সে হাসি দিয়ে।
    চোখের কাজল কখন গেছে ধুয়ে ডাগর চোখে তাকালো সেই মেয়ে।
    বলল আমায় নাচতে তুমি পারো এসো আমার হাতটি এমন ধরো।
    তোমায় নিয়ে খেলবো এমন খেলা দেখবে দুলে উঠবে মনের দোলা।
    প্রলয় নাচন নাচবো যখন দুয়ে দেখবে তখন ক’জন আছে চেয়ে।
    পাতার কুটির কাজলা নদীর বাঁয়ে সৃষ্টি সুখে মাতবো সেথায় গিয়ে।
    সাক্ষী থাকবে বনের হরিণ পাখি সাক্ষী থাকুক চাঁদ তারা আর নদী।
    বৃষ্টি যদি যায় গো তখন থামি সৃষ্টি সুখের উল্লাসে গাই আমি।
    ফুল-নদী-জল শুনবে সে গান মুগ্ধ চোখে চেয়ে
    দেখবে তুমি নতুন সৃষ্টি আনবো সে গান গেয়ে।
    জানো কবি আমিই বৃষ্টি মেয়ে কবে থেকেই চাইছি তোমায় বৃষ্টির গান গেয়ে।
    এতোদিনের পর পেয়েছি ব্যাকুল মনটা নিয়ে
    আকুল হিয়ার সৃষ্টি ধারা ঝরুক বৃষ্টি দিয়ে।।

You cannot copy content of this page