-
আধুনিক কবিতা এবং দুর্বোধ্যতা
আধুনিক কবিতা এবং দুর্বোধ্যতা
-সঞ্জিত মণ্ডলএ প্রবন্ধের সামগ্রিক প্রেক্ষিতটা দু রকম দৃষ্টি কোন থেকে দেখতে চাই, প্রথমত, নিজে পাঠক হিসাবে। দ্বিতীয়ত, নিজে কবিতা লেখার চেষ্টা করি সেই হিসাবে।
মূল আলোচনায় ঢোকার আগে যেটা আমাদের জানতে হবে তা হচ্ছে, কবিতার সংজ্ঞা কী। কবিতা কাকে বলে?
কবিতা হচ্ছে কাব্য, যা ছন্দোবদ্ধ রচনা বা শ্লোক, কবিতা হচ্ছে পদ্য বা ছন্দিত মাধুর্য। তাহলে একটা ব্যাপার পরিস্কার হল যে,কবিতায় ছন্দ থাকতে হবে, আর কবিতাকে মাধুর্য মন্ডিত হতে হবে। আধুনিক পাঠক যদি আধুনিক কবিতায় এই ছন্দ ও মাধুর্যের অভাব দেখে সে তো দুর্বোধ্যতার দোহাই দিয়ে কবিতাকে পাশ কাটিয়ে যাবে। তাকে দোষ দেওয়া যায় না। রসকষহীন শুষ্কং কাষ্ঠং যেমন কবিতা হতে পারেনা, তেমনই কুবাক্য, কুকথা, বিভৎস, ভয়ংকর, আর দুর্বোধ্য শব্দও কবিতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনা। শুধু তাই নয়, অর্থহীন ছান্দিক বাক্যসমষ্টি ও একই কারণে কবিতা পদবাচ্য নয়। পাঠকের অপছন্দের কারণ দুর্বোধ্য শব্দের সমাহারে দুর্বোধ্য বিষয়ে ঘোলাটে কবিতা, অজস্র মাথা ঘামানোর পরেও যার অর্থ উপলব্ধি করা যায় না। আমি নিজে পাঠক হিসাবে স্বচ্ছ মাধুর্য মন্ডিত সুললিত ছন্দোবদ্ধতা পছন্দ করবো। সেখানে শুষ্কং কাষ্ঠং নয়, বরং নীরস তরুবরঃ চাইবো। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য কবিরা যে সমস্ত গদ্য কবিতা লিখেছেন সেই গদ্য কবিতারও একটা অন্তর্নিহিত ছন্দ রক্ষা করেছেন, যতিচিহ্নর সঠিক ব্যবহার করে পাঠ করলে সে ছন্দের মর্মবাণী বর্ণে বর্ণে উপলব্ধি করা যায়।কবিতার কালকে যদি চর্যাচর্যবিনিশ্চয় যুগ, রবীন্দ্র যুগ, কল্লোল যুগ আর বর্তমান যুগের প্রেক্ষিতে বিচার করি তাহলে একটা জিনিস আমাদের কাছে পরিস্ফুট হয় যে ছন্দিত বাণীর লালিত্য সমৃদ্ধ মাধুর্য মন্ডিত কবিতাই পাঠকের মনে দোলা দিয়েছে সব থেকে বেশী। বর্তমান যুগে আধুনিক কবিতা লিখিয়েরা কত জন সত্যিকারের কবি এবং কতজন ছন্দিত মাধুর্য মন্ডিত সুললিত কবিতা লেখেন সে সম্বন্ধে কোনো সমীক্ষা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।কাজে কাজেই পাঠক হিসাবে আমার অত্যাধুনিক দুর্বোধ্য কবিতা পছন্দ না ও হতে পারে, আর যথারীতি এইভাবেই কবির সাথে পাঠকের একটা দূরত্ব তৈরি হয়।
এবার আসি সামান্য একটু আধটু লেখা লেখি করি বলে সোসাল মিডিয়ার পাঠকের কাছে পৌঁছাতেই হয়।কারণ তারাই কবিতার মানদণ্ড বিচার করে। এখানেই আমার প্রশ্ন ঠিক কতজন কবিতা পড়েন সেই সঙ্গে ভালো মন্দ লাগার মন্তব্য ও করেন, আর কতজন না পড়েই মন্তব্য করেন। বহুসংখ্যক গ্রুপের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে বেশ কিছু বিষয় না পড়া মন্তব্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছি। সামান্য কিছু নমুনা পেশ করতে চাই, যেমন, বেশ, ভালো, সুন্দর, খুব ভালো, চমৎকার, ইত্যাদি। এই মন্তব্য গুলো কবিতা না পড়েই করা যায়, এগুলো আসে প্রধানত এডমিনদের চাপে, কেননা এতো গুলো মন্তব্য করতে ই হবে, ছাড়া যাবে না।কেউ কেউ আবার অতিরঞ্জিত একই মন্তব্য বহু কবির কবিতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন, সে কবিতার বিষয় বস্তু যতই ভিন্নতর হোকনা কেন। আর এক ধরনের পাঠক আছেন যারা পাশ কাটিয়ে যান। বিভিন্ন আলোচনা সভায় তাদের বক্তব্য শুনেছি, কেন তারা মন্তব্য না করে পাশ কাটিয়ে যান। তাদের উত্তর শুনে অবাক হয়েছি। তাদের একদলের বক্তব্য, কেউ বলেছেন, কবি যদি কিছু মনে করেন, আর একদলের বক্তব্য, কি বলতে হবে বুঝতে পারি না বলে মন্তব্য করি না।
আমি নিজে লিখি তাই আমাকে তাদের বলতেই হয়েছে যে, আপনি কষ্ট করে পড়েছেন, যদি কি পড়েছেন তা বুঝতে না পারেন, সেটাই কবিকে সরাসরি বলুন, যে আপনার কবিতা দুর্বোধ্য তাই কিছু মন্তব্য করলাম না। তাহলে কবি অন্ততঃ পক্ষে সম্বিত ফিরে পাবে যে লেখা আরও সরল ও হৃদয়গ্রাহী করতে হবে। আর সব থেকে কষ্ট হয় যখন দেখা যায় কোনো ভাল লেখার কমেন্ট এসেছে গুড মর্ণিং, শুভ দুপুর বা গুড ইভিনিং ইত্যাদি বলে। হে পাঠক আমি মনে করি আপনি শুধু ই পাঠক নন আপনি কবির শিক্ষক ও বটে। আপনার ও কবির সুন্দর মেল বন্ধনের ফলে কবিতার উন্নতি হবে, আর সামগ্রিক ভাবে সাহিত্যের উন্নতি হবে।
উপসংহারে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে দুর্বোধ্যতার দায় শুধু মাত্র কবির ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে চলবেনা, কবিতা বোঝার জন্য পাঠককে ও যথেষ্ট দায়িত্ব নিতে হবে। কবিতা না পড়েই কবিতার বোধ্যতা দুর্বোধ্যতা বিচার করা যায় না। কবির যেমন দায়িত্ব আছে তার কবিতা সাধারণ্যে সমাদৃত হোক এমন লেখনী লেখার তেমনি পাঠকের ও দায়িত্ব থেকে যায় কবিতা পাঠ করার আর তার গুণাগুণ সম্বন্ধে কবিকে অবহিত করার।
আগেকার মতো এখন কবিতার বই কিনে কবিতা পড়তে হয় না, এখন কবিই কবিতার সম্ভার নিয়ে সরাসরি পৌঁছে যান পাঠকের দরবারে, সোস্যাল মিডিয়ার হাত ধরে। কবিতা যদি সুখপাঠ্য হয় কবি নিশ্চিত ভাবেই সুমন্তব্য তো পানই বিভিন্ন ধরণের সম্মাননা ও পান। পাঠকের করা মন্তব্য ও এডমিন দের সুবিবেচনার সৌহার্দ্যে কবিরা সম্মানিত হন। এতে একদিকে যেমন কবি আরও ভালো লেখার জন্য উৎসাহ পান তেমনি বাংলা সাহিত্যের ও কিছুটা সেবা করা হয়। কবিতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়।
বাঙালী অত্যন্ত আবেগ প্রবণ জাতি, আবেগ আছে বলেই কবিতাও আসে বাঙালির ই বেশী। সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন যত কবিতা লেখা হয় তার অর্ধেকই লেখে বাঙালিরা। আর সোস্যাল মিডিয়ার দৌলতে সে কবিতা পৌঁছে যায় পাঠকের ঘরে ঘরে। তাই লেখক লিখবে আর পাঠক তা পড়ে তার মতামত জানাবে এটাই হবে কবি ও পাঠকের সঠিক মেলবন্ধন। কবির দায়িত্ব যেমন পাঠককে কাছে টেনে নেওয়া, তেমনি পাঠকের ও দায়িত্ব কবিকে উৎসাহিত করা। -
হাতছানি
হাতছানি
-সঞ্জিত মণ্ডলদিও তোমার আশিস খানি,
শুনবো তোমার সে সুর বাণী,
তোমার রঙে রাঙিয়ে আকাশ
মনের সুবাস প্রাণের শ্বাসে ভরবো তোমার ইচ্ছা খানি।আমার প্রাণের গানের কথা
পাখির কথা তৃণের ব্যথা
শিশির জলে ভেজা যে তা
আকাশবীণার তারেতারে যে সুর বাজে, বাজাও তোমার ইচ্ছাখানি।ডাক দিয়েছ সাগর পারে
বটের ছায়ে নদীর ধারে
সঘন সেই মেঘের পারে
তোমার দ্বারে বারেবারে ইচ্ছাকরে সোহাগ ভরে বৃষ্টি হয়ে নামি।মনের প্লাবন শ্রাবণ হয়ে
পড়বে ঝরে অঝোর ধারে
সে দূরদেশে ডাকো কারে বারে বারে
কেমন করে ভুলব ওরে অরূপ রতন সে হাতছানি। -
জীবনের হাট হতে
জীবনের হাট হতে
-সঞ্জিত মণ্ডলজীবনের হাট হতে বিকেলে হেঁটেছি বহুদূর —
জীবনের হাট হতে পালাতে চাইনি বুঝি তাই
ফিরে ফিরে আসি আর যাই।
সময়ের তাল গুণে, গুনে গুনে পা ফেলে যাই।
বাড়ছে কত না হয়রানি —
সৃষ্টি করেছ সে তো মানি, আনাগোনা তাই এতো দামী।
দুহাতে সরাবো জঞ্জাল, যতো দিন এপারে তে আছি। পারাপার করবে যে মাঝি
তাকে আমি খুঁজি মিছা মিছি ।
কি আছে কোথায় থেমে যাই, ব্যথা বাজে মনেতে সদাই
কি আছে পথের শেষে তাই, বৃথা ভাবি শেষ কথাটাই।
প্রাণ যদি দিলে দেহটাতে, চিন্তা তো দিলে মাথাটায়,
হেড অফিসে কত কি যে হয়, সব তুমি জানো নিশ্চয়।
বৃথা ভেবে মরি আমি মিছে চিন্তা সে তো শুদ্ধ সাধনায়।
কবে থেকে সর্বহারা সাজে ভিক্ষা পাত্র লয়ে তব কাছে
ভোর থেকে সন্ধ্যা হয়ে আসে, তবু তুমি হলে না সহায়।
দিলে নাতো পথের সম্বল, দেখো আমি কত অসহায়।
তবুও তোমার দ্বারে আসি, যা দিয়েছ তাই নিয়ে ভাসি
এ জীবন আশার স্বপন,তোমাকেই ভেবে বাঁচা যায় । -
এখন তুমি
এখন তুমি
-সঞ্জিত মণ্ডলজীবনের গ্রীণরুমে তোমার পিছনে পিছনে,
যেতে যেতে একবার ভাবি,সোনামন বলে যদি
ডাকি, থমকে দাঁড়াবে তুমি নাকি!
জেনেছ কি জানো নাই, সাড়া দেবে ভাবি নাই
তাই ডাকা হয় নাই সেদিনে।৷
তুমি ঘেমেছিলে, চড়া রোদ্দুরে, পিঠে হাত
দিই নিকো তাই। সংসার মেরেছে কত ছ্যাঁকা
তাই তুমি একা একা, দগদগে দাগ নিয়ে ঘুরেছ সদাই ।
এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সংসারের যত ক্লান্তি যত অবসাদ, তোমার শরীরে ফেলে যায় দীর্ঘশ্বাস।
তোমার লালিম ঠোঁটে কত রক্ত জমে আছে
পুরানো দিনের কথা করে হাহুতাশ।
হাতের তালুটা শক্ত, নেই কোনো তুলতুলে ভাব
কী কঠিন লড়েছ লড়াই হাতে সেই কষ্টের দাগ।
যত বোঝা নিয়েছ পিঠেতে, শিরদাঁড়া তাই
গেছে বেঁকে, তবু মুখে হাসিটি সলাজ।
সব বুঝি তবুও অবুঝ হয়ে যাই,
হাত পা রয়েছে বাঁধা,কোনো কিছু করার যে নাই
কত ফাঁকি পড়েছ জীবনে, হাড়ভাঙা খাটুনির গানে, বোঝা বয়ে মরেছ সদাই।
কষ্ট হলেও প্রতিরাতে কামক্ষুধা মিটিয়েছ
অগৌরব সাথে,প্রেমহীন নগ্ন বলাৎকারে
কষ্টটা সয়েছ একাই।
তবুও তোমার হাসি মুখ, পৌষের মিঠে রোদ্দুর
দূর থেকে তাই চেয়ে রই, মুখফুটে বলিনা কিছুই।
ভালোবাসা সেই কবেকার,
হঠাৎ দেখায় জন্ম নেয় সে আবার।
সেই প্রেম জেনো মিছে নয়,সেই ছিল প্রথম প্রণয়। পরকীয়া জানিনা কেমন
কিশোর বয়সে তুমিই ছিলে যে প্রথম।
কত ডাক ডেকেছি তোমাকে,
ঝড় ওঠেনি কোনো, সেই দাগ পড়েনি মনেতে,
চোখে চোখ রেখেছিনু তাই ,
ঝাঁপিয়ে পড়নি আজও বুকে।
আমি খুঁজে খুঁজে ফিরি তাই, আছোটা কেমন,
কথা তুমি দিয়েছিলে পরে, তবু পর হয়েছ এখন।। -
বিসর্জন
বিসর্জন
-সঞ্জিত মণ্ডলশোভনা বাড়ির বড় বউ। যেমন স্নেহময়ী তেমনই সুন্দরী, মুখশ্রী যেন সত্যিকার দেবী প্রতিমার মতন। বছর দশেক আগে পাবনার জমিদার সোমেশ্বর চৌধুরীর সাথে বিয়ের পর সংসারের সর্বময় কর্তৃত্ব তারই হাতে। বিশাল একান্নবর্তী পরিবারে শোভনাই রাণী। শোভনা এখনো সন্তানহীনা। এবার জমিদার বাড়ির পুজো একশ বছরে পড়বে। শহর থেকে মান্যগণ্য আর সাহেবসুবো অতিথিদের আমন্ত্রণ করা হবে। তাই বিশিষ্ট মৃৎশিল্পী রুদ্রমঙ্গলকে আনা হয়েছে। শিল্পীকে যেমন দেখতে তেমনি তার সুন্দর স্বাস্থ্য, তাকিয়েদেখার মতো। পুজোর তিন মাস আগে এসে সে ঠাকুর দালানে তার কাজ শুরু করে দিয়েছে। অপূর্ব তার কাজ, সবাই দিনে একবার হলেও উঁকি দিয়ে যায়, বড় বউও বাদ থাকেনা। এসে গেল সেই পূণ্য লগন, বোধনের দিনে হলো প্রতিমার আবরণ উন্মোচন। সবাই অবাক হলো, এতো জীবন্ত মমতায় উদ্ভাসিত প্রতিমার আনন ঠিক যেন বড়ো বউ শোভনার মুখের মতন। ক্রুদ্ধ জমিদার ঈশারায় ডেকে নেয় পালোয়ান বদনকে। মন্ত্রণাঘরে চলে নিভৃত কথন।রুদ্রমঙ্গলের গুম ঘরে হারিয়ে যাওয়ার কথা কাকপক্ষীতে টের না পেলেও শোভনার অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠে, সে জানে তার গর্ভে মাস দুই হল সন্তান এসেছে। মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় সে। পরদিন শোভনার ঠাকুরঝি সুমনা ভোরে নাইতে গেছিল খিড়কি পুকুরের স্নানের ঘাটে। নাওয়া হলো না, দৌড়ে এসে চীৎকার করে সবাইকে ডেকে জানালো ওগো, বড় বউদি আর নেইগো, দেখে এলুম খিড়কি পুকুরের জলে তার দেহ ভাসছে, একি করলে বউদি, বোধনেই যে তোমার বিসর্জন হয়ে গেলো।
-
জুড়াইতে চাই
জুড়াইতে চাই
-সঞ্জিত মণ্ডলকত যে অভিজ্ঞতা হয় জীবনে, বয়স যত বাড়তে থাকে অভিজ্ঞতার সীমানাও বাড়তে থাকে নানান ঘাত প্রতিঘাতে। জীবনের ব্যাপ্তি বুঝে অভিজ্ঞতারা হানা দেয় কখনো সাধুর ছদ্ম বেশে, কখনো মোহিনী বেশে, কখনো বা ঝেড়ে কেশে, কখনো বা বেশ হেসে হেসে। কেউবা প্রথমে আসে বন্ধুর বেশে শত্রুতা করে পরে, কেউ বা শত্রু হয়ে এসে বন্ধুত্ব মেনে নেয় শেষে। পোড় খাওয়া মানুষ পুড়ে পুড়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে বেশ হিসেব করে। আর বেহিসেবী লোক ভেসে যায় অনভিজ্ঞতার বন্যায়, খরায়, কিংবা খারাপ হাওয়ায়।
অমল, বিমল, কমলরা সব এক লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে, ইন্দ্রজিৎ কেবল একা হয়, মেঘের আড়ালে থেকেও সে যুদ্ধ চালায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়, নবকুমারের মতো অন্যের জন্যে কাঠ কাটতে গিয়ে নদীর চরে জঙ্গলে হারিয়ে যায়। এদিকে নেপোরা সব লুটে পুটে খায়, খোলা হাওয়ায়। বলবার কেউ নেই, প্রতিবাদীর মাথা উড়ে যায় নয়তো চিরতরে নিখোঁজ হয়ে যায়।ভালো কাজের বিপদ অনেক, ঘরে বাইরে শত্রু তৈরি হয়, ঈর্ষান্বিত হয় বন্ধুরাও, আত্মীয়েরাও ছেড়ে কথা বলেনা, অথচ ক্রুর অসামাজিক দৈত্য হলে রা কাড়েনা কেউ, সবাই ভয়ে সরে যায়, পাছে ঝাড় খেতে হয়। লোটালুটি চলতে থাকে কত অনায়াসে! মানুষ জানে খারাপ কাজের শাস্তি আছে, আজ নয় কাল তাকে শাস্তি পেতেই হবে, ধরা সে পড়বেই, তবুও সে সাময়িক লাভের আশায় গর্হিত অসামাজিক কাজ করে বসে। যখন সে শাস্তির কাঠগড়ায় দাঁড়ায়, তাতেও কি সে সম্বিত ফিরে পায়! অপরাধীরা দেখেও শেখেনা ঠেকেও শেখে না, জানিনা এর শেষ কোথায়। পাপের পথ এমনি করেই মসৃণ হয়, কেউ বাধা মানে না ।
নৃশংসতা দেখলে লোকে শিউরে ওঠে, ভীরু লোকে ভিরমি খায়, সাহসী চটপট সরে যায়, দায় এড়ায়, সমাজ সংসার এগিয়ে চলে সৃষ্টির বদান্যতায়। ভাবি এক আর হয় আর এক। শান্তি চাই, কোথায় পাই, জুড়াতে চাই, কোথায় জুড়াই, পৃথিবী তো একটাই! একটাই চাঁদ একটাই সূর্য। কেউ হাতে চাঁদ নিয়ে জন্মায়, কেউ হাতে চাঁদ ধরতে চায়। কার কপালে যে কি আছে হায়!
সকাল বেলায় অন্ন চিন্তা, দুপুরে আহারের চিন্তা, রাতে শুতে যাবার চিন্তা, জীবন কাটে, জীবন বৃথা, জীবন ধন্য কার যে কোথা!
তাই আজ মনে হয়,”পথের শ্রান্তি ভুলে, স্নেহভরা কোলে তব, মা গো বল কবে শীতল হব। কতদূর, আর কত দূর বল মা-“—তাই আরো মনে হয়,
“যেদিন হবে তোমার প্রকাশ আমার মনের মাঝে,
দেখবো তখন কেমন তোমার দূরে থাকা সাজে।
তাই তোমার গানে মনে প্রাণে চিত্তে জাগাই সাড়া,
এমনি করে বিশ্বলোকে দাও গো তুমি নাড়া।
তোমার নামে ঋদ্ধ হব মানুষ হব আমি,
দাও আমারে বিশ্বলোকের অমর সুর ও বাণী।”কবিগুরুর যে গান গেয়ে জুড়াইতে চাই সেই গানের সুর ও বাণী :–
“সীমার মাঝে, অসীম, তুমি বাজাও আপন সুর–
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।
কত বর্ণে কত গন্ধে কত গানে কত ছন্দে
অরূপ, তোমার রূপের লীলায় জাগে হৃদয়পুর।
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর।
তোমায় আমায় মিলন হলে সকলই যায় যে খুলে,
বিশ্বসাগর ঢেউ খেলায়ে উঠবে তখন দুলে।
তোমার আলোয় নাই তো ছায়া,
আমার মাঝে পায় সে কায়া,
হয় সে আমার অশ্রু জলে সুন্দরবিধুর।
আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর।”যেদিন সত্যিই মানুষের মধ্যে পরম ঈশ্বরের শোভা বিমূর্ত হবে, সেদিন চিত্তে জাগবে সাড়া, সেদিন বোধহয় মানুষকে অন্য কোথাও “জুড়াইতে” যাবার জন্যে চিন্তা করতে হবে না,আমাদের এই পৃথিবীই হবে সকলের বাসযোগ্য পিতৃভূমি তথা মাতৃভূমি, তথা জন্মভূমি স্বদেশ আমার, তোমারে করি নমস্কার।।
-
খোঁজ
খোঁজ
-সঞ্জিত মণ্ডলদেবী মুখ খুঁজে ফিরি এখানে ওখানে,–
কখনো ভীড়ের মাঝে রবীন্দ্র সদনে,
মোহরকুঞ্জে নয়, নয় নিধু বনে
খুঁজেছি আপন মনে এ তিন ভুবনে।
তুমি কি শর্মিষ্ঠা সীতা,ভারতী না বিষ্ণু প্রিয়া
গার্গী মৈত্রেয়ী কুন্তি অম্বা অম্বালিকা
অহল্যা দ্রৌপদী আদি তারা দেবযানী তথা।
দেবী মুখ খুঁজে ফিরি এখানে ওখানে।
একাডেমিতেও নয়, নয় সে নন্দনে
তারামণ্ডলে নয়, রবীন্দ্র কাননে
গঙ্গা-পদ্মা পারে খুঁজি, খুঁজি মেঘ পানে,
যেখানে বসতি করো খুঁজেছি সেখানে।
যদি খুঁজে পাই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রবো তব মুখ পানে।
সেই তব রূপ, সেই আশ্চর্য দেবী মুখ,
নিভৃতে বাজুক যত ব্যথা সে গভীর সুখ,
শান্ত করে দেয় তব স্বপ্নময় মুখ একান্ত গোপনে।
কিসে প্রসন্না দেবী, মহামিলনের জয়গানে,
দেবী মুখ খুঁজে ফিরি আমাদের জীবনে জীবনে।
না হয় না হবে কথা, শুধু বুক ভরা ব্যথা
বয়ে নিয়ে চলে যাই সুদূর বিজনে।
যত আমি ভালোবাসি রূপ রস গন্ধ সবই
সেটুকু সঞ্চয় বুকে থাক না গোপনে
ভালোবাসি বলি মনে মনে
জানুক বা না জানুক যত অন্যজনে। -
মন কি বাত
মন কি বাত (রম্য)
-সঞ্জিত মণ্ডলঅত্যন্ত ভয়ে ভয়ে আছি। যে ভাবে ব এ শূন্য র, ড এ শূন্য ড় আর চন্দ্রবিন্দু চাঁদ রা চোখ পাকিয়ে ঘুঁসি বাগিয়ে তাকিয়ে আছে তাতে সহজে শ্বশুর বাড়ির রাস্তা মাড়াবনা ঠিক করেছি। কিন্তু কপালে সুখ সইলেতো।
কোত্থাও কিছু নেই, হঠাৎই আমার গিন্নী ককিয়ে উঠে বলল, শুনছো—-?
আমি পড়ি কি মরি করে ছুটে এসে বলি, শরীর টরীর খারাপ নয়তো?
গিন্নী ঝাঁঝিয়ে ওঠে, বলে, মরণ! শরীরের দিকে তো খুব নজর, বলি মনের খবর কিছু রাখো?
বললাম, অপরাধ নিয়ো না, মনকে তো চোখে দেখা যায়না তাই —
কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝঙ্কার! কত দিইইন বাপের বাড়ি যাইনি বলোতো?
আমি হিসেব করে বলি এইতো জামাইষষ্টির পরে তেরাত্তিরও পোহায়নি!
গিন্নীর উত্তর,আমার মাথা আর তোমার মুণ্ডু, পাক্কা তিন সপ্তাহ হল, কালকেই আমাকে বাপের বাড়িতে নিয়ে চলো।অবসর প্রাপ্ত আদর্শবাদী শিক্ষক শ্বশুর মশায়ের মুখোমুখি হওয়ার থেকে বাঘের গলায় মালা পরানো অনেক সহজ। কিন্তু গিন্নীর আবদার বলে কথা। বডি ফেলতেই, মানে আত্মত্যাগটা করতেই হল, এবং গিন্নীর পিছু পিছু শ্বশুর বাড়ির চৌকাঠ ডিঙোতে হল।
ভয়ে ভয়ে আছি। অটো,বাস,ট্রেন,ভ্যানরিক্সা ইত্যাদি ঠেঙিয়ে শরীর ক্লান্ত, এক্ষুণি না ওনার মানে শ্বশুর মশায়ের মুখোমুখি হতে হয়। শাশুড়ি পেল্লায় এক গ্লাস জল হাতে ধরিয়ে দিলেন। বিশাল জার্নি করে গলা শুকিয়ে কাঠ, চুমুক মারতে যাচ্ছি, শাশুড়ি হাঁ হাঁ করে উঠলেন, খেও না খেওনা। আমি হকচকিয়ে যেতে উনি বললেন,ওটা দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেল। তোমার জন্যে ডাব পাড়িয়েছি। তা ডাবের জল আসলো। একটা ডাবে যে এত জল হতে পারে! পুরো পেট ভরে গেল। কিন্তু চমকের বাকী ছিল। ডাবের জলের পিছু পিছু পেল্লায় এক ফলের পাহাড়। কি নেই তাতে, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, সবেদা, আঁশফল আর ফলসা। দেখে আমার ভীরমি খাওয়ার যোগাড়। খুব ভয়ে ভয়ে ছোট একটা আমের টুকরো মুখে ফেলেছি কি ফেলিনি এমন সময় জা– মা– ই–। এইরে, শ্বশুর মশায় ডাকছেন।ভয়ের চোটে আমের টুকরোটা গলা আর বুকের মাঝখানে এমন ঘুলঘুলিতে লুকিয়ে পড়ল যে তাকে এপার ওপার করে সাধ্য কার!
আবার গম্ভীর নির্ঘোষে শব্দ ভেসে আসে, জা– মা– ই–। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয়। দুরু দুরু বুকে সাড়া দিই, আ—জ্ঞে —- এ।
উনি বললেন, কি করছো?
ভয়ে ভয়ে বলে ফেলি আজ্ঞে ফেসবুক করছিনা।
এবারে কিন্তু ওদিকের গলার স্বরে বেশ ঝাঁজ, বললেন,কি করছো না সেটা জানতে চাইনি, কি করছো সেটা বলো।
ভয়ের চোটেই বলে ফেলি, আজ্ঞে ফেস বুক করছি।
উনি বললেন, সত্য বলতে শেখো জামাই, ভাবের ঘরে চুরি কোরো না।
দোষটা আমারই, স্লিপ অব টাং না হলে এমন করে ভাবের ঘরে চুরির কথা উঠতো না। মাথা নিচু করে চুপ করে আছি দেখে ওনার কিঞ্চিৎ দয়া হয়ে থাকবে।বললেন, তোমাদের ফেসবুকে তো দেখি জ্যোতিষী, গুরু আর জ্ঞানদাতে ভরে গেছে।
আমি মিন মিন করে বলি, জ্যোতিষীরা তো নানারকম ঠাকুর-দেবতার ছবি দেখিয়ে বলে, এক্ষুণি শেয়ার করুন আপনার আজকের দিনটা ভালো কাটবে, কেউবা আবার অতিরিক্ত সাহসী হয়ে বলে, আপনার হাতে দুসেকেন্ড সময় আছে? তাহলে এক্ষুনি শেয়ার করুন, আপনার আগামী একমাস ভালো কাটবে।শ্বশুর মশায় বললেন, তা তোমার কি এমন ভালো কেটেছে?
মাথা নত করেই জবাব দিই, আজ্ঞে, আমি মহা মুখ্যু, তাই আচ্ছেদিন ভালোকরে বুঝতে পারিনি। মনে হল, উনি একটু খুশি হয়েছেন। বুকে বল নিয়ে তাই বলি, গুরুরা কিন্তু বেশ ভালো ভালো কথা বলে। উনি একটু অন্যমনস্ক ভাবে বললেন, হাঁ, গায়ে নামাবলি আর গলায় কুঁড়োজালি। উনি আবার রেগেছেন দেখে আমার সাহস উবে গেল। উনি বললেন, জানো জামাই এক গুরু লিখেছেন, এতো মানুষ মন্দিরে যায় কিন্তু তারা কেউ দেবতা হতে পারেনা, আর দেখ, পাথর মন্দিরে গিয়ে দেবতা হয়ে মানুষের পূজো পায়।
আমি তেল দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি,বললাম, আপনি দেখে শুনে চুপ করে রইলেন?
উনি বললেন, আমি কি ছেড়ে দেবার মানুষ? আমিও লিখে দিলাম, মানুষ মন্দিরে যায় নিজে দেবতা হবার জন্যে নয়, বরং দেবতার কাছে প্রার্থী হয়ে প্রার্থনা করে ও দেবতার আশীর্বাদ চায়। আর পাথর নিজের পায়ে হেঁটে মন্দিরে যায় না,কোনো ধান্দাবাজ মানুষ পাথর কুড়িয়ে এনে তেল সিঁদুর মাখিয়ে মন্দিরে বা বটতলায় রেখে দিয়ে লোক দেখিয়ে ডুকরে ওঠে, বলে,তুমি পাথর নাকি প্রাণ—-। আর ধর্মভীরু মানুষ পটাপট পয়সা ছোঁড়ে। ইমোশনাল এক্সপ্লয়টেশন। গুরুজীর ধান্দাবাজী সার্থক হয়। ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে।
দীর্ঘ ভাষণের পর শ্বশুর মশায় তৃপ্ত হয়েছেন। ওনার তৃপ্তিটাকে দীর্ঘায়িত করার জন্যে আমি বলি, আপনি জ্ঞানিদা না কি বলছিলেন? উনি আমাকে শুধরে দিয়ে বললেন, জ্ঞানিদা নয় জ্ঞানদা! মনে রেখ, ইনি শরৎ বাবুর অরক্ষণীয়া নন এবং এনার কোনো লিঙ্গ নেই, এনার কাজ শুধু বড় বড় বুকনি মারা আর লম্বা চওড়া জ্ঞানের ফুলঝুরি ছোঁড়া।
বাঘের সামনে বেশীক্ষণ বসে থাকা যায় না। আমার অস্বস্তি হচ্ছে। আমের টুকরোটা বেয়াড়া জায়গায় আটকে গিয়ে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। মাঝে মাঝেই বুকে হাত বোলাচ্ছি দেখে উনি বললেন, কী ব্যাপার, বুকে হাত বোলাচ্ছ কেন? ফোঁড়া টোঁড়া উঠছে নাকি?
লজ্জিত হয়ে বলি, না না, আমার ওসব ওঠেনি। তাছাড়া আমি অন্যের নয় আমার নিজের বুকে হাত বোলাচ্ছি, সবে বলতে যাচ্ছি তাতে কার কি কিন্তু, ধমকের চোটে বলে ফেলি আজ্ঞে, বুকে পাথরকুচি।
উনি বললেন, এইতো দিব্যি কথা বলছিলে, তা পাথরকুচি খেলে কখন?
আমি বলি, আজ্ঞে, আমের পাথরকুচি!
উনি অট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন, বললেন, তাই বলো! আমের পাথরকুচি! তুমি কি কবিতা টবিতা লিখছো না কি?
আমি ভয়ে ভয়ে বলি, না না আমি ওসব লিখি টিখি না।মনে পড়ে ছোটো বেলায় বাবা একটা নীল খাতা বাঁধিয়ে দিয়েছিল। তাতে সবে কবিতার মত কিছু লেখার চেষ্টা করছি এমন সময়ে উকিল মেজদির চোখে পড়ে গেলাম। মেজদি আমায় ডেকে বলল, দেখ ভাই, আর যাই করিস কবিতা যেন লিখিস না। মনে হয়েছিল, কবিতা লেখা হয়তো জামিন অযোগ্য অপরাধ। তাই ভয়ে ভয়ে বলি, কেন দিদি?
মেজদি বলেছিল,কবিরা খুব দু:খী হয় জানিস, যারা কবিতা লেখে তারা সারাজীবন কষ্ট পায়। কষ্ট পেতে আমার খুব ভয় লাগে। সেই যে কবিতা লেখা ছেড়েছি আর ও পথ মাড়াইনি। এখন শ্বশুর মশায় আমাকে কবিতা লেখার দোষ দিচ্ছেন, তাই শোধরানোর জন্যে বলি, আপনার কি কবিদের উপর কোনও রাগ আছে?শ্বশুর মশায় একটু গম্ভীর হলেন, বললেন, আধুনিক কবিতার তুমি মানে বুঝতে পার?আমি তাড়াতাড়ি বলি, আমিতো কবি নই, আমি কবিতা লিখিও না। শুনে বোধহয় উনি খুশি হলেন, বললেন, দেখ জামাই, কবিতা হচ্ছে গভীর জীবনদর্শন, ভাবসমৃদ্ধ অনুভূতির সংপৃক্ত বহি:প্রকাশ। ছন্দোময় ব্যঞ্জনার দ্যুতিতে আলোকোজ্জ্বল সুখ পাঠ্য এক সমৃদ্ধ লেখনী। মুশকিল কি জানো জামাই, আজকালকার কবিতা পড়ে তার মানেই উদ্ধার করতে পারিনা রসাস্বাদন করব কি করে! মাঝে মাঝেই দেখি পাতার পর পাতা শুধুই ব্যঞ্জনাময় শব্দের যাদুকরীখেলা – কবিতার নামে আসলে নেহাৎই একটি অশ্বডিম্ব!
শ্বশুর মশায়ের কঠিন কঠিন বাংলা শব্দবাণে আমার বুকের পাথরচাপা সরি, পাথরকুচির ব্যথাটা ক্রমশ বাড়ছে,আমি ঘন ঘন বুকে হাত বোলাচ্ছি দেখে উনি অন্দরের দিকে মুখ করে গর্জন করে উঠলেন, শু– ন– ছো ও ও।
অন্দর থেকে শাশুড়ী ঠাকরণের গলা ভেসে আসে, এখন রান্না বান্নার তদারকি করছি, পড়া ধরলে পারবোনা কিন্তু উ উ।
বউয়ের কাছে কত জজ ব্যারিষ্টার জব্দ, আর সামান্য শিক্ষক মশায়!
আর এমন মওকা কেউ ছাড়ে? তড়িঘড়ি করে বলি, উনি রান্নাঘরে, আমার মাথায় দারুণ একটা রেসিপি এসেছে, যাই ওনাকে এক্ষুুুুণি বলি, নইলে মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে। বলেই কারো সম্মতির অপেক্ষা না করেই এক লাফে অন্দর পেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াই।পিছন থেকে বাঘের অট্টহাসি শুনতে পাই, হা: হা: হা:! য পলায়তি স জীবতি!
মনে মনে বলি, আমারওতো কিছু বলতে ইচ্ছা করে, মন কি বাত তো আমার ও আছে। আমিও বলব, নিয়ম করেই বলব।শ্বশুর বাড়িতে না এলেও বলব।