-
কবিতা- নীড় হারা
নীড় হারা
– সীমা চক্রবর্তীনীড়ের টানে ফিরতে হবে সন্ধ্যা নামার আগে
নীড় হারা পাখি ফিরবে কোথা সংশয় মনে জাগে।
নামলে আঁধার ফেরে সবাই আপন আপন কুলায়
একলা পাখি নীড়ের খোঁজে যাবে রে কোন চুলায়।
মেঘ জমেছে আকাশ জুড়ে নামবে বুঝি ধারা
কিছুটা মেঘ পাখির চোখের দিচ্ছে কপাট নাড়া।
একলা যাপন করছে জীবন সঙ্গী গেছে চলে
বিষন্ন পাখির ছায়া ভাসে নীল সাগরের জলে।
একটা দু’টো যাচ্ছে দিন যাচ্ছে সময় বয়ে
পাখিরও বুঝি বিদায় নেবার টসময় এসছে হয়ে। -
কবিতা- হেমন্তের সুর
হেমন্তের সুর
– সীমা চক্রবর্তীশরৎ চলে গেলো বড় ব্যস্ততা দেখিয়ে
হেমন্তের আগমনে ছাইছে লাজুকতা
উৎসবের রাত্রি শেষে গর্বাচৌএর চাঁদ
একরাশ বিষন্নতা নিয়ে…।হিম ধরা রাতে আকাশ প্রদীপ জ্বালতে চেয়ে ছিলাম
তাদের আত্মার মঙ্গল কামনায়
যারা নীল কন্ঠ হয়েছিল।আমার সে দীপ জ্বলে উঠতেই
পাতা ঝড়ার দিন আগত হলো।
ঝাপসা কুয়াশায় ডুবে থাকে সূর্যটা
রোজ ভোরে…..আরক্তিম বেদনায়।কখন যে এসে চলে গেলো শান্তি-পারাবত!
এ ভাবে হেমন্তও যাবে চলে
চলে যাবে শীত…. বসন্ত…
অথচ কি আশ্চর্য
পৃথিবীর বুকে কোনো দাগ কাটবে না… !শুধু বে-হিসাবির বুকে
পাওয়া না-পাওয়ার হিসেব কষে যাবো
কোনও এক বিষন্ন, বিমর্ষতার গোধূলিতে…. -
কবিতা- প্রথম অধ্যায়
প্রথম অধ্যায়
– সীমা চক্রবর্তীতোমাকে একবার দেখা,
যেন জীবনদায়ী ওষুধ
পিপাসিত মন-মরুতে
বারিধারা এক বুঁদ।
তুমি আজ আকাশের চাঁদ
যায় না তো ছোঁয়া
অপ্রাপ্তির অন্তরালে
সঞ্চিত স্বপ্ন গেছে খোয়া।
তোমার ভালোবাসা আজ
নিঃশ্বাস সম প্রয়োজন
কতো তার পরিমাণ কখনো তা
জানতে চায় না মন।
তোমার পরশ আকাঙ্খা জলে
ভাবনায় তোলপাড়
তোমার অভাব গোপন ক্ষতে
রক্ত ক্ষরণ বার বার।
তোমাকে চাওয়া তৃষ্ণার রাজ্যে
স্বর্গের অমৃত সম
সহস্র প্রেমিকের ভিড়ে শুধু
তুমিই অন্যতম।
তুমি আমার অভ্যাস
দিন যাপনের প্রতিক্ষণে
দেনাপাওনার সাত কাহনে
জর্জরিত করেছো ঋণে।
স্বপ্নে তোমাকে অনিবার্য
রাত্রি শেষের নিদ্রা কালে
তোমার চিন্তা অনল মনে
তন্দ্রা আনে সোনালী জালে।
প্রতিটি বাঁকে তোমাকে পাওয়ার
অনুভবে কাটাই প্রহর
প্রত্যাশার নেই যে শেষ
জিজ্ঞাসারও হাজার বহর।
প্রাণ-ভ্রমরা রাখতে চাই
তোমার বুকের পিঞ্জর মাঝে
এটা আমার প্রথম অধ্যায়
আরও গল্প বাকি আছে। -
কবিতা- কিছু বাকি থাকে
কিছু বাকি থাকে
– সীমা চক্রবর্তীমনে হয় সেদিনের ঘটনা…
তবুও স্বীকৃতির সাক্ষর রেখে
কেটে গেলো অগণন বছর।
ভালোবাসার পথ টা বড্ড পিছিল….
পায়ের তলায় গভীর খাদ।
সময়ের শরীর জুড়ে ছেনির ঘায়ে
সৃষ্ট অজন্তা… ইলোরা… খাজুরাহো…
সাফল্যের উষ্ণ স্রোতে ভেসে যায়
জীবনের পাপ পূন্য বোধ।
সময় যায়… মরুভূমিটাও বৃদ্ধি পায়
উত্তপ্ত হয় পরিধি।
ভিতর সমুদ্র পাগলামি করে যখন তখন
ঢেউয়ের অভাবে…।
একদিন যা আমার ছিল মনে হয়
তা যেন আজ হয়ে গেছে কার।
প্রতিটি দিনের শেষে পরে থাকে নির্জনতা।
শব্দের ভিতর শব্দ আঁকা থাকে অনেক…
এটুকু সত্য… প্রত্যেক প্রাণীর মনেই
আকণ্ঠ তৃষ্ণার নদী নিত্য বহমান। -
কবিতা- এবার……..
এবার…
– সীমা চক্রবর্তীবুকের মাঝে জমা ছিল
মনের দহন যতো
উড়িয়ে দিলাম আজকে সব
শেষ বারের মতো।
কান্না কাটি, হল্লা হাটির
দিন হয়েছে শেষ
আধ পোড়া মন নিয়েই
থাকবো আমি বেশ।
অনেক শিখা পুড়েই তবে
কনক রতন হয়
আমার শিখা তেজের দম্ভে
ব্রাত্য হয়ে র’য়।
এই পৃথিবীর ধুলো বালি
মাখবো সারা গায়ে
মনের পাখা মেলে দেবো
ডায়ে কিম্বা বাঁয়ে।
স্পৃহার মেঘে আক্ষেপের ঝড়
তোলেও যদি মাথা
লাগিয়ে অনল ব্যাকুল চিত্তে
জ্বালিয়ে দেবো ব্যথা।
কাব্যিক মনের ভাবনাতে
প্রশান্তি খুঁজি তাই
কল্পনার লেখনীতে থাক
কায়িক শব্দরাই। -
কবিতা- রাত
রাত
-সীমা চক্রবর্তীভালোবাসা যখন অনুভবে স্পর্শ পায় না মন
কিছু রাত অজান্তেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে যায় অকারণ।রাতের গভীরতায় ভাবনারা এলোমেলো ধায়
ঘুম ব্রাত্য হয়ে পরে থাকে জানলার কিনারায়।মন মরে অবহেলায়, ভালোবাসা কেন মরেনা
সময় সারণীতে স্বপ্নরা হারায়, আর ফেরে না।ভালো লাগে নিজেকে জড়াতে রাতের আড়ালে
লজ্জা সংকোচ নেই, দু’চোখ জলে ভিজে গেলে।কত আর তারাদের সাথে নিয়ে শুধু তারা গোনা
ঝরে পরা নক্ষত্রদের নীরব মৃত্যু- ক্রন্দন শোনা।বুকের ভিতর যন্ত্রণারাও নিভৃতে অন্ধকার খোঁজে
এক জন্মই কাটেনা, পুনর্জন্মের অপেক্ষা কি সাজে ?নির্ঘুম রাত আপন সত্ত্বা হয়ে বোঝায় বারবার
সব হারানোর মাঝেও যেটুকু প্রাপ্তি, সেটাই অহংকার।জানি, রাত এভাবেই শেষ হবে ভোরের আলো ছুঁয়ে
নতুন প্রাতে উঠবে নবারুণ, রাতের বিষন্নতা ধুয়ে। -
কবিতা- চলে যাই..
চলে যাই..
– সীমা চক্রবর্তীকখনো যদি চলে যেতে হয়
একেলার পৃথিবী থেকে
ভুল করে পিছু থেকে আমায়
দিওনা কেউ ডেকে।ঝরিও না অশ্রু কেউ একটুও
বেদনার কারাগারে
শুধু মনে রেখো আমি ছিলাম
তোমাদের সমাহারে।ভালো থেকো সবাই
যতটুকু ভালো থাকা যায়
আমার বেদনার নীল রঙ
যেন তোমাদের ছুঁতে না পায়।জানি তারাদের মাঝে কখনো
হবে না এতোটুকু ঠাঁই
তবু যাওয়ার আগে বিদায় নিয়ে
যাই…. চলে যাই…। -
কবিতা- কথা ছিল
কথা ছিল
– সীমা চক্রবর্তীকথা ছিল তুমি আর আমি একসাথে জোড়ে
হেঁটে যাবো বহুদূর নিভু নিভু ছায়া পথ ধরে।প্রভাত পাখিদের জেগে ওঠার অনেক আগে
শিশিরে ডুবিয়ে পা, মন ভেজাবো পূর্বাশার রাগে।কথা ছিল বালুচরে বসে গুনে যাবো তটে ভাঙা ঢেউ
শুধু তুমি আমি, আমাদের মাঝে থাকবে না কেউ।ভেজা মিহি বালি থেকে ঝিনুক কুড়াবো দু’জনায়
আদরের নৌকায় ভেসে ঠেকে যাবো দূর মোহনায়।কথা ছিল পাহাড়ের বুকে লিখে যাবো স্বপ্নের কথা
জীবনের কোলাহল শেষে যখন নামবে মৃত্যুর নীরাবতা।শেষ টুকু পথে মায়াবী জ্যোৎস্না শোনাবে গান
সে আলোয় ধীরে ধীরে মিশে যাবে এই দু’টি প্রাণ।কথাগুলো আজও সেরকম নিশ্চল আছে অবিকল
তবু গল্পের শেষ অধ্যায়টা রয়ে গেলো অসফল।সেই নিভু নিভু ছায়া পথে চলেছি একা ক্লান্তিভারে
সবই আছে তেমন, শুধু তুমি নেই উপসংহারে। -
কবিতা- ফেসবুক জানালা
ফেসবুক জানালা
– সীমা চক্রবর্তীএকটা প্রশ্ন মনের ভিতর
পাক খাচ্ছে রোজ
জানি না প্রশ্ন টা আমার
কঠিন না সহজ …?তোমার সাথে কখনোই কি
হবে না দেখা আমার….
চা’এর আসরে একসাথে
অবসরে একটু খানি থামার….?প্রতিদিন কতো কথার ফুলকি
ফেসবুক জানালায়
কিছু ভালো লাগা, কিছু চঞ্চলতা
একলা নিরালায়…।জানি….
তোমার সাথে এক কাপ চা
কখনোই হবে না খাওয়া
মুখোমুখি বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি
হবে না এ জীবনে পাওয়া।বুঝতে পারি ততটুকুই অপরের
যতটা মন বোঝায়
সত্যি হোক বা মিথ্যা, যাই হোক
একাকীত্বটা মোছায়….।এই জানালা দিয়ে কতো ভোর এসে
রাঙিয়ে দেয় মন।
খুঁজে যাই শুধু আলোর রোশনাই
খুঁজে যাই প্রাণপণ।বুঝি…
তোমার সাথে এক কাপ চা
কখনোই হবে না খাওয়া
হবে না জানি, একসাথে বসে
ভুল সুরে গান গাওয়া।ফেসবুকের খোলা জানালায়
ভাসে কতো বন্ধু’র মুখ
কতো গল্প, কতো ভাগাভাগি
কতো কথা দুঃখ সুখ।এও জানি এটা পরম পাওয়া
শুধুই আনন্দময়
আজ আছি কাল থাকবো কি না
হচ্ছে জীবন ক্ষয়।সত্যি….
তোমার সাথে এক কাপ চা
কখনোই হবে না খাওয়া
র’য়ে যাবে শুধু ফেসবুক জানালায়
শব্দের আসা – যাওয়া। -
কবিতা- উন্মনা মন
উন্মনা মন
-সীমা চক্রবর্তীআমার বুকের ভিতর মরুভূমি
চক্ষু মাঝারে এক মহা সাগর
উদভ্রান্ত দিক-বিদিক
নোনা বালু ঢাকা হৃদয় চরাচর।যা কিছু আছে, সবই ব্যার্থ
প্রখর দহনে কেবলই চিতা ভষ্মরাশি
নিয়তির ঝঞ্ঝায় কাঁপে বনভূমি,
অগ্নিশিখার কুটিল হাসি।শীতের নগ্ন শাখের
শেষ পাতাটির মতো কম্পিত ভীরু অন্তর
ঝলসানো দিনে একফোঁটা
শিশিরের প্রত্যাশায় মন-প্রান্তর।এখনই যদি ধ্বনিত হতো
এই অন্তিম বাতাসের বিজয়তূর্জ
বে-হিসাবি সময় থাকতো পরে,
অগ্নিবীণায় ঝংকৃত হতো চন্দ্র – সূর্য।শেষ লগ্নে হবে শেষ কথা
জীবনের পরিণতি একমুঠ ছাই
ফেরা যাবে না আর এই ধরণীতে
মহাকাশের মহা শূন্যে হবে ঠাঁই।