• কবিতা

    কবিতা- ভালবাসার গান

    ভালবাসার গান
    – সীমা চক্রবর্তী

     

    অনেক লিখেছি আমি
    তবু তোমায় হয়নি লেখা
    একটা জীবন পেরিয়ে এলাম
    আজও তুমি অ-দেখা।
    চৈত্রদিনের ঝরা পাতায় যখন
    বনপথ যায় ঢেকে
    সূর্য যখন আপন খেয়ালে
    আলপনা যায় এঁকে
    তখন মনের কোনায় মেঘ জমে
    উদাস বাউল সুরে
    তোমার কথারা ভেসে যায়
    চোখ যায় যতদুরে।

    অনেক ভাবনারা আসে যায়
    তবু তোমাকে কখনো ভাবিনি
    তাই তোমার মাঝে আমার চিহ্ন
    রাখতে চেয়েও পারিনি।
    শুকনো পাতার মতোই
    মড়মড়ে কিছু শব্দ দিয়ে
    লিখবো তোমাকে আদিম পাথরে
    ভিন্ন উল্লাস নিয়ে।
    আকাশ যখন সাঁঝের লগনে
    তারায় তারায় সাজে
    তখন তোমার নামে দূরের পথে
    মঙ্গল শঙ্খ বাজে।

    কতোকার কথা শুনি
    শুধু তোমাকে হয়নি শোনা
    জীবনের এক পাকদণ্ডী বেয়ে
    তুমি এক খেয়ালী উন্মনা।
    বুঝতে চেয়েও পারিনি বুঝতে
    তোমার নীরব অভিমান
    এবার তোমায় নিয়ে লিখবো আমি
    ভালবাসার গান।

  • কবিতা

    কবিতা- চিঠি

    চিঠি
    -সীমা চক্রবর্তী

     

    বুকের ভিতর কান্না চেপে
    লিখেছি চিঠি তোমার নামে
    ঠিকানাটাও মুক্তাক্ষরে
    দিয়েছি লিখে চিঠির খামে।

    ডাক – বাক্সে ফেলতে চিঠি
    যাচ্ছিলাম ঐ পথের বাঁকে
    আজকে দিলে পেয়ে যাবে
    কাল বিকেলের প্রথম ডাকে।

    মনের যতো কথা ছিল
    লিখে ছিলাম উজাড় করে
    হয়তো ভীষণ অবাক হবে
    আমার লেখা চিঠি পড়ে।

    পথের মাঝে হটাৎ এলো
    কালবোশেখির দমকা হাওয়া
    ভীরু চোখে দেখলাম চিঠির
    হাত ফসকে উড়ে যাওয়া।

    খোঁজাখুঁজি করেও চিঠি
    পেলাম না তো আর
    কার ঠিকানায় চলে গেলো
    হায়, কি হবে এবার !

    ভেজা চোখে বিষন্ন মনে
    ফিরেই এলাম ঘরে
    কাটলো পরের দু’টো দিন
    প্রবল মন-খারাপের ঝড়ে।

    শেষ বিকেলে দরজায় দেখি
    দাঁড়িয়ে আছে রানার
    হলুদ খামে যে চিঠি দিলো
    প্রেরক নামটি তোমার।

    চিঠি খানি খুলে আমি
    অবাক হলাম পড়ে
    হারিয়ে যাওয়া চিঠি গেছে
    তোমার কাছেই উড়ে !!!

    লিখেছো তুমি, ” এভাবেই তুই
    চিঠি লিখে আমার খেয়াল নিস
    হটাৎ তোর কান্না পেলে
    আমায় খবর দিস। “

    খুশিতে মন উঠলো নেচে
    প্রথম দিনের মতো
    ভুলিয়ে দিলো এক পলকে
    মন খারাপের ক্ষত ।

  • কবিতা

    কবিতা- প্রেম-হীনতা

    প্রেম-হীনতা
    -সীমা চক্রবর্তী

     

    আমারও ছিল বুকের ভিতর সূর্য রঙা আলো
    একটু খানি আমায় তুমি বাসতে যদি ভালো।

    যতো প্রেম ছিল মননে, ভুবন টা যেতো ভরে
    সবটা ছিল তোমার জন্য, তোমায় দেবার তরে।
    আজও বুঝিনি, তোমার এতো কিসের অহংকার
    কেন দম্ভ ভরে ভাঙলে মন, করলে চুরমার।

    জীবন তরী জোয়ার-ভাটায় করতো না টলোমলো
    একটু খানি আমায় তুমি বাসতে যদি ভালো।

    আমারও ছিল কিছু সম্পদ, তোমায় দেবো বলে
    অনেক যত্নে সাজিয়ে ছিলাম হৃদয়ের উপকুলে।
    সে উপকুলে বিপর্যয়ের গভীর এক ফাটল
    সাবধানি পা পদ্ম পাতার একটি ফোঁটা জল।

    দূর্বিপাকে ছাইতো না জীবনে কৃষ্ণ গহ্বর কালো
    একটু খানি আমায় তুমি বাসতে যদি ভালো।

    তোমার স্বপনে ভরে ছিল মনের আনাচ-কানাচ
    ভালবাসার ফুলদানি আর সঙ্গে রঙ্গিন কাচ।
    ছিল না চাহিদা আর শুধুই তোমায় ছাড়া
    শূন্য চোখ, দশদিক আজ শূন্যতায় ভরা।

    ছোট্ট এই জীবনটা কখনো হতো না অগোছালো
    একটু খানি আমায় তুমি বাসতে যদি ভালো।

    সময়টা কবেই গেছে চলে, কিছুই হবার নয়
    তোমার আমার এখন শুধু হচ্ছে আয়ু ক্ষয়।
    শুকনো হয়ে ঝরে গেছে ভালবাসার ফুল
    জীবন নদীও বাঁক নিয়েছে স্রোতের প্রতিকূল।

    আর তো কখনো হবেনা বলা, “আমার সাথে চলো”
    একটুও তো আমায় তুমি বাসোনি কখনো ভালো।

  • কবিতা

    কবিতা- তোমাকে চাই

    তোমাকে চাই
    -সীমা চক্রবর্তী

    নিশিদিন আমি তোমাকে চাই
    আমার অন্তরের বাগিচায়
    রঙের মেলায় তোমাকে চাই,
    চাই সুনীল আকাশের গায়ে।

    তোমাকে চাই নির্জন গিরিপথে,
    গগন চুম্বি পর্বত মালায়
    তোমাকে চাই বনে – বনান্তরে
    সবুজ রঙা সাগর – বালুকায়।

    তোমাকে চাই পূর্ণিমা লগ্নে
    রজত – কান্তি চাঁদের আশেপাশে
    তোমাকে চাই রাত্রি দিনের সন্ধিক্ষণে
    মাতাল করা পূর্বাকাশে।

    তোমাকে চাই মুঝে যাওয়া পথে
    শ্যামল সবুজ দূর্বাঘাসে
    তোমাকে চাই প্রেমে – অপ্রেমে
    অঙ্গীকারের গভীর আশ্বাসে।

    তোমাকে চাই মহা সাগরের
    ঢেউয়ের সাথে উল্টো টানে
    স্বরলিপি হীন সুরের সাথে
    তোমাকেই চাই নষ্ট গানে।

    তোমাকে চাই পশ্চিমাকাশে
    শেষ বেলাকার অস্তরাগে
    জীবনে মরণে তোমাকেই চাই
    সুখে – দূঃখে, রাগে – অনুরাগে।

    তোমাকে চাই অলিতে গলিতে
    শয়নে স্বপনে, প্রথম জাগরণে
    তোমাকে চাই আমার কন্ঠে
    ছন্দ – সুরের নিবিড় আলাপনে।

    তোমাকে চাই আমার সত্ত্বায়
    একান্তই নিজের করে
    চেয়েছি গত জন্মেও….
    আগামীতেও চাই, জন্ম-জন্মান্তরে।

  • কবিতা

    অস্থির চিত্ত

    অস্থির চিত্ত
    -সীমা চক্রবর্তী

     

    কিসের নেশায় ছুটে বেড়াই কি যে চাই আমি
    তীব্র এই অস্থিরতা যায়না কেন থামি।
    ভাঙছে আকাশ মাথার প’রে ভূমিও যাচ্ছে ফেটে
    লাভার মতো গলছে পা, তবুও যাচ্ছি হেঁটে।

    এরপরেও প্রবলতার হানছে বুকে ঢেউ
    হাতটি ধরে রুখবে আমায়, এমন নেই তো কেউ।
    থামতে গেলেই বুকের ভিতর উষ্ণ মেঘে ভরে
    বিভীষিকার করাল গ্রাস নিচ্ছে আমায় ঘিরে।

    ফাটছে যেন কানের কাছে শব্দ অনর্গল
    নামছে বেয়ে চক্ষু হতে তরল হলাহল।
    রক্তশীরাও দিচ্ছে টান দেহের কোষে কোষে
    তবুও এই অস্থিরতা যাচ্ছে না তো ধসে।

  • কবিতা

    বিদায়

    বিদায়
    -সীমা চক্রবর্তী

     

    এবার যাওয়ার সময় হলো
    দাও তবে বিদায়
    বেদনা বিদুর স্মৃতির বোঝা
    কেমনে বহিব হায়।

    স্রোতস্বিনীর দু’কুল যেমন
    মিলন নাহি তো তার
    তোমার আমার তেমনি সখ্য
    দুইজন দুই ধার।

    অনন্ত কালের বাহিত নদী
    গেয়ে যায় কতো গাঁথা
    তারই ভেজা তটে খোদিত
    কতো শত উপকথা।

    অবিদিত এই যাত্রা পথের
    হবে বুঝি চির অন্ত
    আর দূর নেই….
    আকাশ মাটি ঐ চুমিছে দিগন্ত।

    বৃথাই হলো জন্ম আমার
    বৃথাই এ জীবন
    কাটলো দিন প্রতিটা দিন
    আঁকড়ে ঘরের কোণ।

    কতো সরব যন্ত্রণা নত মুখে
    নীরবে করেছি পান
    অনাকাঙ্ক্ষিত বিরহ জ্বালায়
    থাক দুজনারই অবদান।

    শেষ বার তাই অনভিলাষে
    বলে যাই অকাতরে
    দাও গো বিদায়
    বেঁধোনা আর অদেখা প্রেম ডোরে।

  • কবিতা

    অ-প্রেম

    অ-প্রেম
    -সীমা চক্রবর্তী

     

    বড় অসময়ে এলে গো ফাগুন
    জ্বালাতে চাহ এ মনে আগুন
    কি উপচারে করিব বরণ
    আসিছো নিয়া এ কোন সমীরণ।

    দগ্ধে দগ্ধে গলিত এ হিয়া
    বাজালে বাঁশি মরমে পশিয়া
    চারিদিকে এতো উল্লাস কেন
    গুনগুন অলি গাহিছে যেন।

    কোকিলাও সাথে উঠিলো ডাকি
    প্রজাপতি মনের লাজুক উঁকি
    রামধনু রঙ আকাশের গায়ে
    ঝিকিমিকি হাসি তারায় তারায়।

    মহুয়ার নেশা লাগিছে মনে
    শিমূল পলাশও ডাকিছে সনে
    কৃষ্ণচুড়ার ঐ হাতছানি
    উপেক্ষা করা যাবে না জানি।

    হৃদয়ে দিয়াছি আসন বিছায়ে
    তনু মন যেন আবেশে ছায়ে
    যতো দূর চাহি খুশির তুফান
    একি হলো আজ হায়রে পরাণ।

    ডাকিলো বাতাসে এ কোন মরমি
    কুন্ঠিত মন উঠিলো শরমি
    আসিলো বেগে দুয়ার খুলিয়া
    শত প্রদীপ যেন উঠিল জ্বলিয়া।

    বে-নামী এক উড়ো চিঠি আজ
    ভুলিয়ে দিলো সকল কাজ
    কেন এ অসময়ে এলে গো ফাগুন
    ভাঙা এ কুটিরে লাগাতে আগুন।

  • কবিতা

    যদি মনে পরে

    যদি মনে পরে
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    আমায় যদি কখনো মনে পড়ে
    চিলেকোঠায় একটা প্রদীপ জ্বেলো,
    নিত্যদিনের হাজার কাজের ফাঁকে
    মিথ্যে করেই একটু বেসো ভালো।

    হলোই বা তোমার অন্য কেউ প্রিয়
    স্বপ্নে না হয় আমায় সাথে নিও,
    আছে যতো রোজের বাস্তবতা
    ক্ষণিকের তরে ভুলেই না হয় যেও।

    দেখিনি তোমায় বহু যুগ হলো
    তবু বন্ধ চোখে তোমার মুখটা ভাসে,
    তোমায় ঘিরে আমার অনুভূতি
    সবুজ হয়ে লুটায় নরম ঘাসে।

    প্রথম যখন তোমায় দেখি আমি
    তখন তুমি কলম নিয়ে হাতে
    কাটছিলে দাগ হাজার হিজিবিজি
    একা তুমি কেউ ছিলো না সাথে।

    হয়তো ছিলো অশান্ত তোমার মন
    একবার শুধু দেখলে নয়ন তুলে,
    সেই ক্ষণটা ভাবলে পরে আজও
    নশ্বর এই জীবনটা যাই ভুলে।

    এক দেখাতেই অনেক প্রতিশ্রুতি
    পাঠিয়েছিলে পাখির ঠোঁটে ভরে,
    নামটা জানার হয়নি তো অবকাশ
    হারিয়ে গেলে কোথায় হঠাৎ করে।

    তোমার সাথে চাঁদের কথা হতো
    মেঘ বৃষ্টিও তোমায় ভালোবাসে
    আজও যখন তাকাই আকাশ পানে
    দেখি তোমার মুখ চাঁদের ঠিক পাশে।

    তোমায় ভেবে কবিতা লিখি রোজ
    হোক না তোমার অন্য কেউ প্রিয়,
    বাস্তবে তুমি নাই বা থাকলে কাছে
    স্বপ্ন রাজ্যে আমায় সাথে নিও।

  • কবিতা

    বদলে গেছি

    বদলে গেছি
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    সত্যি তো আমি বদলে গেছি
    আগের মতো নই
    তাই চেতনা গুলোর মৃত্যু দেখেও
    উদাস হয়ে রই।
    বহুদিন আমার হয়না দেখা
    নিঝুম রাতের আকাশ
    পূর্ণ শশীর জ্যোৎস্নায় ভেজার
    পাই না তো অবকাশ।
    কাব্য ছন্দের মিলন তরে
    ব্যাকুল নইতো আর
    আঁকার খাতাও মলিন হয়েছে
    লুপ্ত রঙের বাহার।
    ধূলোয় ঢাকা “সঞ্চয়িতা”
    তেমনই থাকে পরে
    মাকড়সা সেথায় মনের সুখে
    আলপনা যায় গড়ে।
    অপ্রাপ্তির বেড়া জালে
    সত্যিই বদলে গেছি কতো
    বইয়ের ভাঁজে পিষ্ট হওয়া
    শুকনো গোলাপের মতো।
    জ্বালাতে দীপক নিজেই জ্বলে
    ঘর করেছি আলো
    অস্থিরতার এই অসময়ে
    বুঝি বদলে যাওয়াই ভালো।

  • কবিতা

    ব্যবধান

    ব্যবধান
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    এ জীবনে কখনো দেখা হবে না তা জানি
    তোমার আমার মধ্যে বাতাস করবে কানাকানি।
    তুমি হলে অঝোর ধারা চাতক পাখির প্রাণে
    আমি এক রুক্ষ মরু, শুষ্কতার টানে।
    সাগর ঢেউয়ের শুভ্র সফেন তোমার হাসির ঝলক
    বিবর্ণতার ধূলায় আঁকা আমার মাথার তিলক।
    দিগন্ত নীল আকাশ তোমার মুক্তির হাতছানি
    তপ্ত ভূমি শয্যা আমার, প্রতিপদে হয়রানি।
    উদ্দাম স্রোত তোমার শরীর, অটুট তবু পার
    ঝড় ঝঞ্ঝার নিঠুর আঘাতে আমি ভঙ্গুর চুরমার।
    আমার লেখা কাব্যে তুমি স্বপ্ন জল ছবি
    তোমার তরে হয়েছি আমি কলম ভাঙা কবি।
    আমারই র’চা কবিতা তুমি, আমার বিরহী গান
    তোমার আমার মধ্যে তবু বিস্তর ব্যবধান।

You cannot copy content of this page