-
কবিতা- ভ্রান্ত বিলাস
ভ্রান্ত বিলাস
-অমল দাস
সাঁঝের অবহেলিত আঁধারে দু-চারটি মশা হত্যায়
বীরত্বের ছাপ দেখি হাতের তালুতে,
পার্শ্ববর্তী গৃহের সন্ধ্যারতির গম্ভীর শঙ্খনিনাদে
কলিঙ্গ জয়ের কেতন, দিগন্তে মিলিয়ে যাওয়া –মনমাঠে।
মাটি পথে ভাঙা মালসার মর্মর ধ্বনিতে
অভিমানী ঢেউ উতলে ওঠে দু’ধারে,
-গুঁড়িয়ে দিতে পারি সব!
শব হয়ে পড়ে থাকা মূষিক ভাবতে পারেনা
তবু পদ কম্পনে নিথর দেহ ভাবে মুনিব বুঝি!
অভ্যার্থনায় উগ্র আতর ছড়ায় বাতাসে।
মাথার উপর কালপুরুষ আর ধ্রুবতারার স্বীয় দ্বন্দ্বে
হুতুমের দল শিকার খোঁজে পরিচিত আঙিনায়।
শহরতলীর শেষ ট্রেন হুইসেল দিয়ে ফিরে আসে,
একদল পরিযায়ী পাখি তখনও ঝিল পাড়ে কাঁদে!
চপ্পল পায়ে ধূমায়িত সুখটানে কলমির ডাল ভাঙি
আর আত্মতৃপ্তির উৎসুক কাঁসি দিয়ে ভাবি -পথ চিক্কণ।
-
কবিতা- অধোগতি
অধোগতি
-অমল দাস
রজনীর বিস্ময় আকাশে উজ্জ্বল তারাদের ভিড়ে
খুঁজি কোথায় মুলত আশ্রয়? পৃথিবীর নীড়ে
এ তো আমাদের অবৈধ বসবাস।
যতখানি হওয়ার ছিল প্রতি অঙ্গীকার আশ্বাস
বিপরীতে আঘাতের পেয়ালা সাজিয়েছি বেশি
চির নবীন প্রলেপের গায়ে ধর্ষিত চুমুকে প্রবাসী-
পরগাছার মত দোদুল দোলাতে ফাগুনী ঘোল খাই,
ফিডিং বোতলে। চাহিদার সীমানা ভেঙে আরও চাই..
আরও! তাই মরমের বসন্ত শরতে
এঁটে দিতে আলপিন পুঁতি নির্বাক বধির ধরাতে।
দিনলিপির যত পাতা ছিঁড়ে যায়, সৌরালোর মতো-
ক্ষত ভয় জেগে ওঠে, যদি প্রতিঘাতে হতে হয় সম্মত
ছেড়ে যেতে। অসংখ্য তারার তরীতে কোথায় আশ্রয়?
কোথায় স্বীকৃত এতো ঔদ্ধত্য এতো প্রশ্রয়?
হয়তো একদিন ঠিক মাস্তুল ডুবে যাবে বরফ সাগরে!
অসমান্তরাল যত দগ্ধ রেখা পৃথিবীর হৃদয় গভীরে
কর্তন করেছি, একদিন উলঙ্গ স্রোত রূপে
ধুয়ে নেবে জবর দখলের তট। সুপেয় তরল সূপে
গিলে খাবে আবক্ষ বিষাক্ত বিষ।
এমনিই বার্তা বয়ে কক্ষের অক্ষ পাশে নিয়ত বায়ু অহর্নিশ।
-
কবিতা- তোমার নামে..
তোমার নামে..
-অমল দাস
আমি ভুলে যাওয়া অতীত পথে,
আবার একবার ফিরতে চাই!
যদি পথ দেখিয়ে আমার হাত ধরো!
আর যদি বলো ‘তোমাকে চাই…’
আমি অনন্ত পথ কবিতা লিখবো তোমার নামে,
পথিকের তরে ছায়া রেখে যাবো এই সংগ্রামে!
আমি মেরু বৃত্তীয় বলয় হয়ে-
হিমশৈলের সাগর ছাড়িয়ে,
গঙ্গার কিনারে এসে থামতে চাই!
যদি কলসি কাঁখে দাঁড়াও এসে,
অছিলায় ভিজে যাও প্রেমের বশে;
আমিও শূন্য পাত্র ভরিয়ে দেবো তোমার নামে,
স্বাদু জলের এক হ্রদ রেখে যাবো তৃষিত গ্রামে!
আমি মৃত্যু নিয়ে এ গ্রহের ’পরে
জাতিস্মর রূপে জন্ম নেবো!
আবর্তের এই চক্র যানে-
যদি তুমি আমায় চিনতে পারো,
যদি শুরুর চেয়েও গভীর ভাবে
আমার স্পর্শেন্দ্রিয়ে বসত গড়ো!
আমি নীলাম্বরে পুষ্পতরীর ছন্দ ভাসাবো তোমার নামে,
জীবিতের তরে জীবন রেখে যাবো এই সংগ্রামে।
-
কবিতা- শহরের বুকে
শহরের বুকে
-অমল দাস
পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী কৌণিক মাত্রায় চেয়ে দেখি
লুটেরার দল কি মেঘ জমিয়েছে, আকাশের কোণে!
নাকি ডাকাতির আগে-ই বন্দী সাগর গভীরে;
রোদেলা দুপুর- ভীত পরিবেশ- ফাঁকা সমাগম।
ঘামেদের উৎসুক প্রবাহ শরীর চেটে চেটে নামে
পায়ের পাতা ছুঁয়ে মাটির গ্রথনে মিশে যায়।
ঠাণ্ডা পানীয় বোতলের মত লাবণ্য নেই আর।
আজ শ্রাবণের বৃষ্টিও আসবে না বার্তা এসেছিলো
শুধু লবণের চরে আমি কংক্রিট তাওয়ায় তাপ পোহাই।
আমি যেন মরিয়া হয়ে খুঁজি অহরহ!
কাকে ? – জানে না এ রোদাক্রান্ত মন ..
জানে আকাশে বাতাসে বিষাদ -বিবাদ এখন!
মেঘের পর্দা ফেলে সৌর আভার মত-
তুমি মিষ্টিমুখ নিয়ে এসেছিলে খোলা জানলায়।
গৌরীয় কায়া, দীঘল নয়নে -আমার অনতিদূরে
অতিমারী রঙ লেগে আছে দেয়ালে দেয়ালে,
আমি কবিতার দেশে কবর খুঁড়তে চলেছি…
যে অভিজাত হাওয়া তোমায় ছুঁতে পারে
সে দোলা দিয়ে গেলো তোমার অগোছালো ঝুলে পড়া চুলে
তুমি চেয়ে চেয়ে দেখলে বিষাক্ত শহরের বুকে
একা একা হেঁটে যাই আমি…
-
গল্প – পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
-অমল দাস
মেডিকেলের দোকানে যাবো। তাই সাত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েছি সকালেই। বাড়িতে বাবা মা অসুস্থ, আমারও একটা ওষুধ লাগবে। বাড়ির কাছে যে দোকানটি আছে, সে জানিয়ে দিল সাপ্লাইচেন নষ্ট হয়ে গেছে। তাই অর্ডারের মাল আসছে না। সব দিতে পারবে না। কিন্তু আমার সবধরনের ওষুধই লাগবে, জীবনদায়ী কিনা তাই। অগত্যা সাইকেল নিয়ে মেইন রোড ধরে একটু দূরে চললাম। শুনশান রাস্তার পাশে একটু ফাঁকা ফাঁকা দু’একটা ঝুপড়ি আছে। কিছুটা যেতেই দেখি দু’টি ছেলে মেয়ে খালি গায়ে রাস্তার উপর খেলা করছে নিশ্চিন্তে। ওদের ঠাকুমা দরজার পাশে বসে সব্জি কাটছে। ছেলেটি এই পনেরো আর মেয়েটি বছর আটেক হবে। ওদের বাবা মা নেই। বাপ মারা যাওয়ার পর মা উধাও। ঠাকুমার কাছেই মানুষ। বুড়ির চিন্তা হয় ওদের নিয়ে, ‘আমি কতদিনই বা থাহুম কি জানি! এই পোলা মাইডারে দ্যাকপে কেডা হেই চিন্তা মাতাডায়। বাড়ি ঘরও নাই যে থুইয়া যামু! এই চালাকুডা কবে ঝড়ে উড়াইয়া লইয়া যায় হেয়াওবা কেডা জানে’!
বুড়ির একমাত্র ছেলের মারণ রোগের চিকিৎসায় ভিটে বাড়ি বেচতে হয়। ছেলে বাঁচেনি কিন্তু সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছে। আমি ওদের জানি এই পথে যাওয়া আসার সুত্রে। তাই যাওয়ার সময় হাঁক দিয়ে গেলাম ‘এই, তোরা রাস্তা থেকে নেমে খেলা কর, গাড়ি এসে পড়তে পারে’।
ছেলেটি বলল- ও কাকু লক ডাউন, লক ডাউন গাড়ি নাই রাস্তায়।
খুব আনন্দ মনে, বুঝলাম। হাঁক দিয়ে বুড়িকে বললাম, ও মাসি খেয়াল রেখো কিন্তু…
-আর কি রাখুম বাপু? পোয়া মাইয়া দুইডা কতাই হোনে না।
আমি সাড়া না দিয়ে চলে গেলাম। ওষুধ নিয়ে ফেরার পথে দেখি, ঝুপড়ির সামনে কয়েক জন লোকের জটলা। একটু কাছে আসতেই দেখি একটি পুলিশ সমানে ছেলেটিকে লাঠি দিয়ে মারছে। বুড়ি মাসি পুলিশের পায়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে- ওরে ছাইড়া দাও সার, তোমার পায়ে পড়ি, পোলাডা মইরা যাবে।
বলে হাউ হাউ করে কান্না করছে। ছোট বোনটাও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। পুলিশ ছেলেটিকে মেরেই যাচ্ছে অবিরাম। দু’এক জন দাঁড়িয়ে দেখছে! কেউ কিছুই বলছে না। আমি সাইকেল থেকে নেমে, ভয়ে ভয়ে, স্যার ওভাবে মারবেন না স্যার, বাচ্চা ছেলে হিতে বিপরীত হয়ে পারে! ছেড়ে দিন না…
আমাকে এক রকম ধাক্কা দিয়ে বললো –এই সরে যা! দরদ দেখাতে হবে না! যা হবে বুঝে নেবো। এমন ইতর ছেলেকে দু’চার ঘা না দিলে শুধরাবে না।
আমি তাও এগিয়ে অনুনয় করলাম, স্যার প্লিজ ছেড়ে দিন! বাচ্চা তো অন্যায় করে ফেলেছে।
আমাকে রক্তচোখ দেখিয়ে সরে যেতে বলল। আমিও ভয় পেলাম। শালা আমাকে না দু’চার ঘা লাগিয়ে দেয়। পাশের একজনকে জানতে ছেয়েছিলাম কি ব্যাপার? সে যা সংক্ষেপে বলল তা এইরকম, পুলিশটি যাওয়ার সময় ওদের ঘরে ঢুকতে বলেছে। আসার সময় আবার রাস্তায় খেলতে দেখে বাইক থেকে নেমে কষিয়ে এক চর। ছেলেটি গালি দিয়ে ফেলেছে। ব্যাস, তারপর শুরু অকথ্য অত্যাচার।
এরই মধ্যে পুলিশটি ছেলেটিকে জোরে লাথি মেরে পাশের নয়ানজুলিতে ফেলে দেয়। ছেলেটির সারা গায়ে লাল দাগ জেগে উঠেছে। কয়েক জায়গা থেকে রক্তও ঝরছে। জলে পড়ে কোঁকড়াচ্ছে।
পুলিশটি হাঁফিয়ে উঠেছে। বাইকে স্টার্ট দিতে যাবে ঠিক সেই সময়। ছেলেটি নয়ানজুলি থেকে একদলা কাদা ছুঁড়ে মারে পুলিশের গায়ে। কতকটা ছিটে আমার প্যান্টেও পড়ে। পুলিশটি তেড়ে গিয়ে জলের মধ্যে নেমে ছেলেটিকে চেপে ধরে। আমরা সবাই উপর থেকে চেঁচাতে লাগলাম, স্যার ছেড়ে দিন মরে যাবে, মরে যাবে ছেলেটি… ছেড়ে দিন স্যার…
কে কার কথা শোনে? বিপদ হয়ে যাবে বুঝে বুড়ি আর আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কিন্তু ওই কাদার ভিতর থেকে পুলিশটিকে টেনে তুলতে পারলাম না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দেখি জলের থেকে বুদবুদ ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। বুড়ির কান্না আর রাখা যায় না! সে উচ্চ স্বরে কাঁদতে লাগলো, শেষ হইয়া গেলো রে… আমার নাতিডারে ওই শুয়ারডা শেষ কইরা দিল রে… শেষ হইয়া গেল রে…
পুলিশটি প্রচণ্ড ক্লান্তে হয়ে ওই জলের মধ্যেই মাথা নিচু করে বসে আছে। ওঠার শক্তি নেই, না অনুশোচনায় ডুবে গেল বোঝা গেল না। বুড়ি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। মেয়েটির গলা বসে গেল, তবু কান্না আর থামে না। আমি জবুথবু কাঁপছি। কি করব দিশাজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি।
এমন সময় দেখি নয়ানজুলির একপাশ থেকে ছেলেটির মাথা ভেসে উঠেছে। তারপর আস্তে আস্তে দেহও উঠেছে। বাউন্ডুলে ছেলে তো, মনে হয় দম আছে! ঘাপটি মেরেছিল। আমরা উপরে যারা দাঁড়িয়ে, কেউ বুড়িকে সামলাতে, তো কেউ মেয়েটিকে সামলাতে ব্যস্ত।
আমি বলতে যাবো ওরে.. ও মরে নি বেঁচে আছে কাঁদিস না..! হঠাৎ দেখি জলের মধ্যে বসে থাকা পুলিশের ঘাড়ের দিক থেকে গলাটা দু’হাতে জড়িয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে মাথা জলের মধ্যে চেপে ধরেছে। পা দুটি কাদায় গেঁথে থাকায় পুলিশ জোর খাটাতে কেমন যেন অপারগ। হাত দিয়ে ছাড়াবার জন্য ছটপট করছে। এতো দ্রুত ঘটনা ঘটতে লাগলো কি করবো দিশে পাচ্ছিলাম না। একলাফে এবার কাদার মধ্যে নেমে গেলাম। পিছন দিক থেকে পুলিশটিকে টেনে তোলার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু সেই শক্তি পাচ্ছিলাম না। ভয়ে কেমন যেন সিধিয়ে গেছি। কাঁপছে থরথর করে শরীর। যতক্ষণে উপর থেকে এক জন নেমে আসছে ততক্ষণে সব শেষ। শেষ বুদবুদটা ছেড়ে কেমন নিথর হয়ে গেল। ছেলেটি সর্বশক্তি দিয়ে এভাবে চেপে ধরবে আর সে নড়তেও পারবে না স্বপ্নেও ভাবিনি। কাদার মধ্যে আমি যেন কেমন জ্ঞান হারনোর মত অবস্থায়, চোখে সামনে অসংখ্য কালো কালো তারা। উপরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকের হৈ হট্টগোলে সম্বিৎ ফিরে পাই। কাদা থেকে কোন মতে উঠেই আমার দৌড় শুরু। পাছে খুনের দায় কিনা আমাকেই নিতে হয়। ওষুধ, সাইকেলের কথা মনেই পড়ল না। আমি আজও দৌড় কালও দৌড়। হঠাৎ হুমড়ি খেয়ে সামনে পড়লাম মুখ থুবড়ে। মাথা ফাটলো, দাঁত দু’খান পড়ল। ঝা চকচকে মেইন রোড আছাড় খেলেম কীভাবে ভেবেই সার। কোন মতে পিছনে ঘুরে দেখি বিরাট এক গর্ত। যাওয়ার সময় ছিল না। এখন কোথা থেকে এলো, অবাক! আবার দৌড়াবো ভেবে একবার উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করলাম! না.. পা ভেঙেছে, যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে আঁতকে উঠলাম। বুকের ভিতর যেন ডঙ্কা বাজছে! কি হলো ভেবে অনেকক্ষণ থ মেরে বসে রইলাম। তারপর বোতলটা কাছে নিয়ে ঘটঘট করে গিলে নিলাম জল। একটু জল হাতে নিয়ে ঘাড়টা ভিজিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। তারপর সকাল।
-
কবিতা- ওদের খাদ্য দাও!
ওদের খাদ্য দাও!
-অমল দাস
পুরনো মন্দিরে ঈশ্বর জাগ্রত খবর রটেছে,
লম্বা লাইন গলি পথ ধরে রাজপথের দিকে।
শেষের পরে আবার শুরু
শেষ নেই যেন তার।
শত সহস্র জয়ধ্বনি আর শঙ্খ নিনাদের কোলাহল।
যে যতটুকু পারে ঈশ্বর ভাগ করে নিতে ছুটে আসে-
সাজানো নৈবেদ্যর থালিতে, ফুল-চন্দনে।
ঈশ্বর… তুমি কার?
কতোটা পাওনায় কতো অংশ বরাদ্দ কারোও জন্যে?
ভিড় ক্রমশ বাড়ে, ক্রমশ শ্লথ পড়ে যায় গতি
যেখানে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে জল আসে,
সেখানে পয়সায় সম্মতি।
হে ঈশ্বর তুমিও বিক্রিত,
বিকৃত মননে।
ঈশ্বর জাগ্রত খবরে লম্বা লাইন গলি পথে ধরে রাজপথের দিকে।
হে, ঈশ্বর তুমিও কি মন্বন্তরের রুগ্ন ছায়ায় শ্বাস নাও?
ক্ষুধায় তুমি জাগ্রত?
এতো ভোজের সংগ্রহশালা কোথায়?
লাইনের শেষ প্রান্তে একবার চেয়ে দেখো!
একটি অভুক্ত দেশ দাঁড়িয়ে আছে কোটি কোটি মৃত কোষের দেহে
ওরা মরে যাবে! ওদের খাদ্য দাও!
তুমি তো ঈশ্বর!
নিজের উচ্ছিষ্টাংশ খাওয়াতে পারো না ওদের?
ওরা মরতে মরতে বেঁচে যায় তাহলে…
ওদের খাদ্য দাও….
-
কবিতা- জীবন
জীবন
-অমল দাস
গাছের আড়ালে জানলা দিয়ে চাঁদ লুকোচুরি খেলছে,
ফুরফুরে হাওয়ার মশকরায় মশগুল
পাতাদের সমূহ!দু-একটি জোনাকি মশারির আনাচে কানাচে হোঁচট খায়;
ভগ্নাংশের আলোতে অন্ধকারের ভয়!
একদিকে ঘররঘর ফ্যানের কোষ্ঠকাঠিন্যঅন্যদিকে আর্দ্রতা ভদ্রতা শেখেনি আজও!
এই দুইয়ের যৌথ প্রচেষ্টা -অবৈধ প্রজননেনোনা জলের স্রোত পিঠের তলে।
একশ দিনের কাজে মাতোয়ারা পিঁপড়ের দল
নদীর উপত্যকা গড়ছে হাজার শতাব্দীর পথ ধরে।
রাতে বৈঠার সহজে ঘুম আসে না; তবুও-সূর্যের অনুপস্থিতিতে নৌকাও এগোয় না
রোম সাম্রাজ্যের খোঁজে।
বন্দী আছি ইটের প্রতিটি খাঁজে বালির কণায় কণায়দিবালোকে বাইরে ‘নট’ উঠোনে নিষেধাজ্ঞার ঘট,
পৃথিবীর এখন কঠিন অসুখ।
অনেক ভেবে দেখেছি আঁধারের কোলে মাথা রেখে
এভাবে ভেসে থাকার লড়াইটাই আসলে জীবনমরণ তো হাত বাড়িয়েই আছে দুয়ারে…
-
কবিতা- নিস্পলক রাতে…
নিস্পলক রাতে…
-অমল দাস
আমি এ গভীর রাতে নিস্পলক চেয়ে আছি খাতায়,
আশা নিভু নিভু চাঁদ যদি ধরা যায় সাদা পাতায়!
ঝিঁঝিঁদের শোকের চিৎকার -কবে চলে গেছে কেউ,
জানি না কেন পূর্ণিমায় মরা গাঙে জেগে ওঠে ঢেউ।
আমার পূর্বপুরুষদের তরে জোয়ার আসেনি কোনো,
ফিরে চায়নি তাঁরা কেউ- আজও গোপনে ঘুমানো।
ঈশান কোণে এক চামচিকা উড়ে যায় কিসের সন্ধানে,
কলা পাতায় হাওয়া দোলে যেন কিছু বলে মনে মনে।
শুনতে পারি না! আমি ডুবে আছি একার গভীরে,
শিশিরের দুঃখ জমে রাত জাগা যত ঘাসের উপরে।
বাতিহীন গেঁয়ো পথে নেই আমাদের জোনাকির আলো
যেভাবে রাত নামে- দিন চলে ফলাফল দেখি কালো।
আঁধার গহ্বরে বসে আছি অথচ আঁধার ঘিরেছে আমায়,
দেখি নির্ভীক কান্ডারী বৈঠা লয়ে ছোটে রুজির আশায়।
পথ-পিছে মৃদু পায়ে ছায়া রূপে কে যায় তার সাথে,
আমি চিনি-না চিনতেও চাইনা তাকে কোন অজুহাতে।
আম কাঁঠালের পাতাঝরা মর্মর ধ্বনিতে শিহরণ জাগে
এই রাতে। অজানা প্রাণীর ডাক -তারা ডেকেছিল আগে?
প্রশ্নেরা বাসা বাঁধে যেমনই দেয়ালে বাঁধা মাকড়ের জাল,
সবুজ মাঠের দুগ্ধধানের গন্ধ এসে অংশত মৌন মাতাল
করে যায় আমায়। আমি শুধু চিরদিন খুঁজেছি তোমাকে
আপনার মনের গহীনে। তুমি আড়ালেই রেখেছ নিজেকে,
আসোনি আজও ক্যানাভাসে। আমাদের মাঠ ঘাট খালে
সেগুনের বনে তোমায় খুঁজে নেব হয়তো কোন এক পলে।
-
গল্প -মৃত্যুর ওপারে
মৃত্যুর ওপারে
-অমল দাস
কোলকাতার চেনা ছকে রোজকার মতো যদি একটু রোড জ্যাম থাকতো, যদি ঘণ্টা খানেক অন্য কোথাও সময় কেটে যেত বা পিঠপিছে কেউ ছুরিকাঘাত করার জন্য তৈরি না থাকতো, তাহলে মোহিত উপাধ্যায়ের জীবনে হয়তো এমন অভিশাপের কালো দিন নেমে আসতো না, যা চিরতরে যন্ত্রণার কোটরে বদ্ধ করে তিল তিল করে অবক্ষয়ের পর্যায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল।
রাজ্য সরকারের বদান্যতায় অর্ধ-দিবস ছুটি পেয়ে বেলা একটার সময় সরকারী অফিস থেকে বেরিয়ে ধর্মতলার ‘ক্যাথে বার কাম রেস্টুরেন্ট’ থেকে বাটার নান্ ও চিকেন তন্দুর নেয় এবং ওয়াইন সপ্ থেকে দুটি বিয়ার ক্যান নিয়ে বালিগঞ্জের সার্কুলার রোডের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মোহিত। ইচ্ছে ছিল স্ত্রী সানন্দাকে একটা সারপ্রাইজ দেবে। কিন্তু সারপ্রাইজ যে তার জন্যই অধীর আগ্রহে পথ চেয়ে বসে আছে, তা হয়তো মোহিত কস্মিনকালেও ভাবেনি।
কোনোরকম আওয়াজ না করেই পকেট থেকে চাবি বার করে দরজা খোলে সে। আস্তে আস্তে বেডরুমের দরজায় দাঁড়াতেই চক্ষু চরকগাছ! সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। স্ত্রী সানন্দা এক যুবকের সঙ্গে যৌন জ্বালায় নগ্ন হয়ে আষ্টে পৃষ্টে একাকার তারই ঘরে তারই বিছানায়। মোহিত নিমেষে জ্ঞান শূন্য ভাবলেশহীন নির্বাক হয়ে বসে পড়ে। তার নিজে হাতে সাজানো সোনার সংসার এক অকল্পিত আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে। চোখের সামনে শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া। সমস্ত শরীর জুড়ে যে রানীর বসবাস, তার বাসর ঘরে অন্য ভ্রমরের আনাগোনা ।
মোহিতের হাতের থেকে খাবার পড়ে যায় মেঝেতে। সেই শব্দে নজর ঘোরাতেই সানন্দার মাথায় অকাল বজ্রপাত। সারা শরীর হতে আকস্মাৎ উত্তেজনার উত্তাপ উধাও হয়ে মেরুদেশীয় শীতলতা ছেয়ে যায়। বিছানা ছেড়ে একলাফে দাঁড়িয়ে পড়ে নির্বোধ ভাবে। সে যে উলঙ্গ, কাপড়টি টেনে জড়াবে সেই হুঁশও নেই। শান্ত সমুদ্রে ছিদ্র পথে জল ঢুকে নৌকা ডুবির মতো হারিয়ে গেছে। সে সম্পূর্ণ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। যুবকটি কোনমতে পোশাক পরতে পরতে মোহিতকে ডিঙিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে। তাকে আটক করার কেউ নেই, তাকে প্রশ্নে জড়ানোরও কেউ নেই, মোহিতের এতই দুরাবস্থা!
জ্ঞান ফিরলে মোহিত বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে তার তলায় চুপ করে বসে থাকে। পড়ন্ত বেলায় এক বিধ্বংসী কাল বৈশাখী ঝড় যেন তার সমস্ত অস্তিত্ব চুরমার করে ধুলোয় মিশিয়ে গেছে। বুকের ত্বক ছিঁড়ে যেন হৃদয়ের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ঝরে পড়ছে। এই দগ্ধ যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেতে, মস্তিস্ক শান্ত করতেই হয়তো সে জলের তলায় বসেছে। সেই সুযোগে খোলা দরজা দিয়ে পথের কুকুর ঘরে ঢুকে খাবারের প্যাকেট মুখে নিয়ে বেরিয়ে গেল। কোথাও সর্বনাশ তো কোথাও পৌষমাস।
গত দুবছরের বিবাহিত জীবনে বিনোদন থেকে আভিজাত্য, কেনাকাটা থেকে ঘুরতে যাওয়া, ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে ভালোবাসা দেওয়া কোন কিছুরই অভাব বোধ করতে দেয়নি, কোন অভিযোগেরও সুযোগ দেয় নি। তবু মোহিতের হৃদয়ে সুনন্দা বিশ্বাসঘাতকতার শাণিত ছুরি কি ভাবে পুঁতে দিলো তা ভাবাই দুষ্কর।
মোহিত এ বিষয়ে আর একটি কথাও বলেনি। এমন কি কিছু জানতেও চায়নি। সানন্দা অন্তঃস্বত্বা তাই তার কাজের সুবিধার জন্য একজন মহিলা রাখা হয়েছে। মোহিত পূর্বের মত সানন্দার সমস্ত প্রয়োজনীয়তা মেটাতে থাকে। সন্তান গর্ভে তার কোন সমস্যা না হয় সে বিষয়ে মোহিত যথেষ্ট যত্নবান। কেবল তার নিত্যনিয়মে কিছু বদল হয়েছে। সে রাতের বিছানাটি আলাদা করে নিয়েছে , খাবার বাইরেই খেয়ে আসে, প্রায় প্রতি রাতেই মদ্যপান করে। সে আর প্রয়োজন ব্যাতীত কথা বলেনা। অফিস ফিরে কখনো চপ, কখনো চাউমিন আর ঠাণ্ডা পানীয়তে ডুবে দুজনার হাসি ঠাট্টায় মসগুল হয়ে সান্ধ্য-আসর জমানো দিনগুলি আজ প্রায় ইতিহাস। ইতিহাস রবীন্দ্র সুরে সুর মিলিয়ে একই সুরে তাদের গেয়ে ওঠার সোহাগী মুহূর্তেরা। কল্পকাহিনীর চাদরে মুড়ে অযত্নে তুলে রাখা হয়েছে তাদের সুখ-দুঃখ, মান-অভিমানের বিগত দিনের ইতিবৃত্ত।
সানন্দা অনুতপ্ত! অপরিচিত যুবকের সাথে পথের আলাপে ক্ষণিকের মোহে সে যে ঘৃণ্য অপরাধ করেছে তার কোন মাফ নেই ক্ষমা নেই। তবু সে চায় মোহিত তাকে শাসন করুক, তার সমস্ত ক্ষোভ উগড়ে দিক সম্মুখে। সে অন্তরে ক্ষতের দাগ আরও দৃঢ় না করে, যেন মানসিক ভাবে একটু হালকা হয়। দিনদিন মোহিতের শারীরিক অবক্ষয় সে ভালোই উপলব্ধি করছে। তাই সে অনুশোচনায় মর্মাহত। সানন্দা বহু চেষ্টা করে ক্ষমা প্রার্থী হয়ে এই যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে। কিন্তু মোহিত যে পাষাণ। তাকে কোন ভাবে তুলে এনে আর সমান্তরাল পথে বসানো গেলো না। একই ছাদের তলায় থেকেও দুটি মানুষ একে অপরের যদি উপস্থিতি অনুভব না করতে পারে, তার থেকে কঠিন যন্ত্রণা যে আর কিছু নেই তা ভুক্তভোগীরাই জানে।
সানন্দা মোহিতের জীবনে আর অভিশপ্ত হয়ে থাকতে চায় না। সে চলে যেতে চায় সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূরে। কিন্তু তার গর্ভের সন্তান বাধ সাধে। যে আগন্তুক, তার তো কোন দোষ নেই? তার উপর তো মোহিতেরই অধিকার। তাই মোহিতকে এই উপহার দিয়ে তার জীবন আঁধারে একটু আলোর সঞ্চার করে দিয়ে সে চলে যেতে চায় চিরতরে চির বিলীনের পথে।
সানন্দার গর্ভধারণ আজ প্রায় ন’মাসে পড়েছে সকাল থেকেই একটু হালকা ব্যথা ছিল। বেলা বাড়তেই তা বেড়ে যায়। অফিসে মোহিতের ফোন বেজে ওঠে, ওপ্রান্ত থেকে সানন্দার যন্ত্রণাদায়ক কণ্ঠস্বর “তুমি একটু তাড়াতাড়ি আসো, আমি আর পারছিনা কষ্ট হচ্ছে”।
মোহিত দেরি না করে তৎক্ষণাৎ একটি ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।বাড়ি থেকে সানন্দাকে নিয়ে সোজা শিশুমঙ্গল মাতৃসদন হাসপাতালে পৌঁছে যায়। আজ মোহিতের জীবনে এক কাঙ্ক্ষিত প্রতীক্ষার অবসানের দিন। সে যেন এই দিনটার জন্যই অপেক্ষারত। তার চোখে মুখে পিতৃ স্নেহের উজ্জ্বল আভা ফুটে উঠছে। সমস্ত আঁধার কেটে যেন এক আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে হৃদয়ে জুড়ে। কখন সেই শুভ সংবাদ এসে পৌঁছবে তার কানে… কখন..
নার্স এসে বলে গেল “আপনার পুত্র সন্তান হয়েছে, সানন্দার জ্ঞান ফেরেনি তবে চিন্তার নেই ভালো আছে”।নিমেষে এক আত্ম উৎফুল্লের প্রবাহ বইতে লাগলো মোহিতের সমস্ত শরীর জুড়ে। সে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যেতে থাকে আপনার মনে। কখন সে পুত্রের কোমল হাতের স্পর্শ নেবে, কখন সে দুধের শিশুকে কোলে নেবে, কখন সে তাকে সোহাগ দিয়ে ভরিয়ে দেবে…
গত কয়েক মাসের ক্ষোভ বিক্ষোভ যেন আজ মলিন হয়ে গেছ। সমস্ত অনুরাগ ভুলে যেন আজ সে সানন্দাকে নিজের করে নিতে চাইছে। কিন্তু বিধাতা কি চায়, সে খবর কেই-বা জানে। দীর্ঘ দিনের জমে থাকা যন্ত্রণা আগ্নেয়শিলার মতন স্তরে স্তরে চাদর বিছিয়ে রেখেছিল হৃদয়ে। সে আবরণ ভেদ করে খুশির আনন্দে আপ্লুত হয়ে উজ্জীবিত হওয়ার ক্ষমতা হয়তো তার আর অবশিষ্ট ছিল না। সে হৃদাক্রান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়ে। তড়িঘড়ি লোকজন ডাক্তার ডেকে আনলেও শেষ রক্ষা হল না। যে বিরহের কালি সে আজ মুছে ফেলতে চেয়েছিল তার ঔরসজাতের আগমনে, তা আর পূর্ণতা পেলো না বিদায়ী দিনের আঙিনায়। কালের দোষের কাছে পরিণতি পরাজিত! সে আজ দৃশ্যের বাইরে।
সানন্দার যখন জ্ঞান ফেরে পাশে শুধু তার ফুটফুটে সদ্যজাত শিশু। সানন্দার চোখ মোহিতকে খুঁজে চলে এদিক সেদিক চাতকের মতো। না! কোথাও নেই…
“সেকি তবে আজও বিরহ ত্যাগ করতে পারেনি। পারবে না আমায় ক্ষমা করতে? সে কি একটিবারও তার সন্তানকে স্নেহ দেবে না?” এই ভাবনারা যখন তাকে ঘিরে ধরেছিল তখন সেই বিদীর্ণ দুঃসংবাদটিও কানে পৌঁছাতে আর দেরি সইল না। বেডেই কান্নায় ভেঙে পড়লো সানন্দা গভীর ভাবে। সে যে আজও শাপ মুক্ত হল না। এই সন্তান মোহিতের হাতে তুলে সে যে মুক্তি কামনা করেছিল তা অধরাই রয়ে গেল। নবজাতক বুকে সানন্দা একা, অপরাধী মেঘে ঢাকা।মোহিতও যেন তাকে এ-জীবনের মত দায়ী রেখে চলে গেল অলিখিত দেশে।
-
কবিতা- নির্জনে
নির্জনে
-অমল দাস
তুমি ভেবেছো আমি ভাবিনি এমনটা তো নয়,
তুমি জেগেছো আমি জাগিনি তেমনটাও নয়!
তবুও যেন কেমন তোমার অভিযোগের স্বর,
একই ঘরে, তাও আমাদের পৃথক পৃথক ঘর।
তুমি ভাঙবে আমি ভাঙব না তেমন ঝড়ও হয়?
তুমিই বলেছ! আমি বলিনি এমন কথাও নয়।
তবুও তোমার চোখের কোণে অভিমানের জল
দুইটি মনের একটি নদী, একটি মরুর তল!
তুমি করেছো আমি করিনি তেমন প্রেম তো নয়!
তুমি আমার আমি তোমার- এমনটাই তো হয়।
তবুও যেন তোমার কেমন বিষাদ বিরূপ মন
একটি ঘরের দুটি জানলা -আঁধার সারাক্ষণ।
তুমি এসেছ আমি আসিনি, সেই কি দেখা হয়?
তুমি চেয়েছ, চাইনি আমি এমন চাওয়াও নয়!
তবুও তোমার অঙ্গ জুড়ে অনিশ্চয়ের ঢেউ,
একটি দ্বারে দুটি পথ, এক পথে নেই কেউ।
তুমি ব্যথায়, আমি আনন্দে- এ দেহ তে নয়!
তোমার রক্ত আমার রক্ত একই শিরায় বয়।
তবুও তোমায় প্রশ্নে ঘেরে নিদ্রা খুনীর রাত।
বলো! আমরা কবে নির্জনে রাখব হাতে হাত?