-
বসন্ত কবিতা
বসন্ত কবিতা
-অমিতাভ সরকারআমার কবিতা রং তুলি নিয়ে বসেনি।
আমার কবিতা তো এখনো দোল খেলে উঠতে পারেনি।
তুমি সেই প্রভাত সকালে সূর্যটাকে ধরে রাখলে মন্দার মনির সমুদ্র থেকে উঠে এসে অনাবিল পরীর সাজে সমুদ্র কন্যা হয়ে।
আমার কবিতা তখন দোল খেললো ।
আমার কবিতা তখন রং মেখে একাকার।
আমার কবিতা পৌঁছে গেছে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ রাধিকার দোল খেলা দেখতে। আকাশ ঢেকে গেছে আবিরে আবিরে রামধনু রঙে।
আমি কিন্তু তোমায় দেখে চলেছি হে মন্দার কন্যা, হে সমুদ্র কন্যা, হে সূর্য প্রিয়া।
নীলাম্বরে অশোক ঝাঁপি, পলাশের আলপনা, শিমুলের নকশি কাঁথা আর আমার হয়ে আছো তুমি চৈতি সেজে। -
রেশমি ডায়েরি
রেশমি ডায়েরি
-অমিতাভ সরকারকত বিকেল তো নষ্ট হয়েছে। আজকের বিকেলটা নষ্ট হওয়াতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ,কারন এ বিকেলটা বসন্তের রাঙানো বিকেল। পশ্চিমী ঝঞ্জা এসেছে,
সারাদিন সারারাত ধরে চলেছে অঝোরে বৃষ্টি।জানালায় হাত বাড়িয়ে বসন্ত বৃষ্টির ছোঁয়া নিলাম, মনে মনে ভাবলাম এই দ্বিপ্রহরে তুমি যদি কাছে থাকতে। দু’জনেই খিচুড়ি রান্না করতাম আর চেটেপুটে খেতাম, কত গল্প হত।
আমি অনুভব করতে পারছি এই ঝড়ো হাওয়ায় পলাশ, শিমুল, অশোক ঝরে পড়েছে সিক্ত মাটিতে। বসন্তে ভেজা বর্ষার অনুভূতিতে প্রজাপতি, ভ্রমর শুঁকছে নব পল্লবে ঘেড়া আদিম কুসুমিত বিছানাকে।
রেশমি। তুমি অন্তত আজকের দুপুরের অনুভবটা তোমার ডাইরিতে লিখে রেখো প্লিজ। কোন এক এই বসন্তের পাতা ঝরা দুপুরে তোমার ডায়েরিটা
খুলে পড়বো, সাক্ষী থাকবে সেই চাঁপা গাছ।আমিও লিখে রাখছি ক্লান্ত-অবসন্ন সিক্ত দুপুরের
গল্প। আমার সেই ছেঁড়া ডাইরিতে যেটা তুমি আগলে রাখতে বলেছিলে। বলেছিলে, এটাই তোমার একসময়ে কাব্যগ্রন্থ হয়ে উঠবে। -
পিছুটান
পিছুটান
-অমিতাভ সরকারকোন অভিমানে একা চলে যাও,
নিশ্চুপ রাজপথ ধরে।
বেশিদূর যেও না একা,
একরাশ সবুজের বুক চিরে।শিশিরের আবেশ মুখে তোমার,
কুন্তলে সর্বাঙ্গে ফোঁটা ফোঁটা বিন্দু।
ভালোবাসার নিটোল তমাস,
মনে হয় যেন এক রাশ সিন্ধু।আর যেও না আরো গভীরে,
নীরব ভালোবাসা নীল নীলিমায়-
প্রজাপতি ভ্রমরের আবেশ আছে,
কুঞ্জ থেকে পিছু নেবে অনাবিল ভালোবাসায়।রাশ রাশ ভালোবাসা কোলাহলহীন এক নেশা,
তোমাকে ফেরাবে না কোন প্রতিধ্বনি।
বিহঙ্গের কলতান গাংচিলের ভোরের আকাশে
ঘোরাঘুরি, অদূরে হলদি নদী স্রোতস্বিনী।তোমাকে নিজেই ফিরতে হবে,
ওই মায়াজাল ছিন্ন করে।
অফিসের রান্না স্কুলের ঘন্টা-
তোমার আবেগ ভরা সংসার পিঞ্জরে! -
মধুর সাঁঝ
মধুর সাঁঝ
-অমিতাভ সরকারতুমি সময় দিলে না বলে মেঘগুলো গোমড়ামুখো থাকলো। নদী পারের শান বাঁধানো কেদারায় বসে মরাল মরালির জলকেলি দেখতে দেখতে সাঁঝ নেমে এলো। আকাশে আগাম পূর্ণিমার চাঁদ।
চুপিসারে পিছন থেকে এসে চোখ দু’টি চেপে ধরলে। তোমার উষ্ণতায় উদাস থেকে সম্বিতে
ফিরে হাত দু’টি চেপে ধরলাম, একরাশ হাসি অজান্তেই তোমার মুখটা আকাশের মত মনে হল।অবলীলায় তোমার ঠোঁট দু’টো আমার কামান গালে ছবি এঁকে দিল, মনে হলো দোলের প্রাক্কালে নিঝুম সাঁঝের মোহময় সময়ে তুমি নিঝুম প্রতীক্ষা-র সমাপ্তি ঘটালে।বললে ‘তুমি আমার’। জোনাক
হাসলো। -
বেলডাঙা এক্সপ্রেস
বেলডাঙা এক্সপ্রেস
-অমিতাভ সরকারআজও খুঁজে চলেছে মধুমিতা সেই বুড়ি মাকে,
হ্যাঁ মা তো বটেই। বেলডাঙ্গা এক্সপ্রেস। দৈনিক রেল যাত্রীরা এ নামে ডাকে। নটা কুড়ির ট্রেন, রোজ এই ট্রেনে যায় মধুমিতা তার অফিস করতে। যাতায়াত করতে করতে অনেকের মুখ চেনা হয়ে গেছে। অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে, গল্পগুজব ঠাট্টা মজা সব রকমই হয়।
একদিন অফিসে প্রচুর কাজ ছিল। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীর এক ডেপুটেশনে অফিস ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অফিস থেকে বের হতে দেরি হয়ে গেছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। দু’টো ট্রেন বেরিয়ে গেছে। স্টেশনে পৌঁছে পেয়ে গেল এক লেট ট্রেন। বিশেষ পরিচিত কেউ কেউ ছিল না স্টেশনে। শরীরটা ভীষণ খারাপ করছে মাথা টনটন করছে। কামরায় উঠে সিট পেয়ে গেছিল মধুমিতা। অল্প স্বল্প চেনা দু’একজন যারা ছিল তারা পরের ষ্টেশনে নেমে গেল। তীব্র মাথার যন্ত্রণায় মধুমিতা হঠাৎ করে পড়ে গেল । মাথায় চোট খেয়ে ভীষণভাবে ফুলে গেল, অসম্ভব যন্ত্রণা। কোনুইএর পাশে কেটে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। আশেপাশে যারা ছিল তারা শুধু দর্শনার্থী হয়ে বসে থাকলো। নিচে বসে ছিল এক শাক বিক্রেতা মাসি ঝুড়ি নিয়ে। সে এদিক ওদিক দেখে নিয়ে এগিয়ে এলো। এসে বললে মা দেখি দেখি তোমার হাতটা। অনেকটা কেটে গেছে। ইতস্তত না করে তার কাপড়ের আঁচল ছিঁড়ে, সেই কাপড় দিয়ে তার ক্ষত বেঁধে দিল। সেই সময় এক হকার মাথা ব্যথার মলম বিক্রি করতে কামরায় এসেছিল। তাকে ডেকে মাসি তার কোমরের খুঁটে বাঁধা পয়সা বার করে একটা মলম কিনে নিল এবং তার মাথায় মলম ঘষে দিতে লাগল। মধুমিতা একটু সুস্থ বোধ করল। মাসির পরের স্টেশনে নেমে যাওয়ার কথা ছিল। সে নামলো না বহরমপুর স্টেশন পর্যন্ত মধুমিতাকে পৌঁছে দিল। জিজ্ঞেস করল
মা তুমি যেতে পারবে তো? মধুমিতা সম্মতি জানাল হ্যাঁ পারব। মাসি বহরমপুর স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকলো ফেরার ট্রেনের জন্য। মধুমিতা টোটো ধরে বাড়ি পৌঁছে গেল। সেই অবস্থায় মধুমিতা মাসিকে মলমের দাম জিজ্ঞেস করতে পারেনি, সে কৃতজ্ঞতায় বিনীত হয়েছিলো। ভেবেছিল পরে মাসির সাথে দেখা হলে তার হাত ধরে কিছু টাকা গুঁজে দেবে এবং সেদিনের কথা স্মরণ করিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাবে।
বছর পেরিয়ে গেছে মধুমিতা আজও খোঁজ করে চলেছে বুড়ি মাকে, তার সেদিনের সাহায্যের কথা ভেবে। -
নান্দনিক অনিচ্ছা
নান্দনিক অনিচ্ছা
-অমিতাভ সরকারকলেজ স্ট্রিটের মোড়ে কদিন আগে দেখা হয়েছিল অনিচ্ছার সাথে। ভুবন ডাঙ্গার অনিচ্ছা। বললে কেমন আছিস ,অনেকদিন দেখা হয়নি।
-হ্যাঁরে ভালো, তুই কেমন?-ভীষণ তাড়া আছে। প্রকাশক অপেক্ষা করছে। প্রচ্ছদের ছবিটা দিতে হবে। বই মেলায় দেখা হচ্ছে, আমার ভীষণ দরকার আছে।
-ঠিক আছে, কথা হবে। বাই ।
অনিচ্ছা বিছানায় ছটফট করছে। তার প্রয়োজন গ্রন্থের প্রচ্ছদের জন্য আকর্ষণীয় ছবি । নিশ্চুপ এর সাথে দেখা হয়ে ভালই হল, ওর সাথে আলোচনা করা যাবে। আঁকিয়ে নেব। ভেবেছি ছবিটা যদি এমন হয়। কেমন হবে?
টানা টানা আঁকা চোখ, আঁখির পাতা কালো ভ্রমরের মতো,প্লাকিং করা ভুরু, শুদ্ধ সোজা কেশ বিন্যাস, আলক্ত দু’টো ওষ্ঠ, ভেজা ভেজা, নখগুলো দামী নেল পালিশে সাজান। বাহুতল ইরেজ করা । আকাঙ্খিত অবয়ব। উড়জ যুগল প্রস্ফুটিত। বৃন্ত দুটি উদ্ধত থাকবে খয়রি বেষ্টনীর মধ্যে। নিতম্বে থাকবে আদিম আকর্ষণ। নাভিমূল শিশির সিক্ত, হীরক দ্যুতিতে ঝলমলে।নিম্নাঙ্গের খাঁজে থাকবে অনন্ত লালসা। কেশহীন, পরিচ্ছন্ন। নিশ্চুপকে এভাবে ছবিটা আঁকতে বলব বইমেলা থেকে আমার ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে, বিয়ার খেতে খেতে। হঠাৎ আলো নিভে যাবে।
হ্যাঁ আমি ,আমি অনিচ্ছা। খোলামেলা হয়ে আসবো নিশ্চুপের চোখের সামনে। আলো জ্বলে উঠবে, বলবো দেখতো কেমন লাগছে? এটাই আমার কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদ হবে । এঁকে দে প্লিজ। পোজ কিভাবে নেব বল। নিশ্চুপ নিস্পলক, চরাই-উৎরাই এ হানা দিল।
-
গল্পের কাব্য
গল্পের কাব্য
-অমিতাভ সরকারইচ্ছে ছিল গল্পটা শেষ করে ফেলি।
হলদি নদীর পারে কেদারা ছিল ফাঁকা,
নিয়ম মতন ফাঁকা ছিল।
জাহাজটা ধীরে ধীরে প্রকট হল।তুমি বলেছিলে গল্পটা শেষ হবে না?
আমি থাকবো না ,আমার কথা না শুনলে
তুমি গল্প লিখবে কি করে?
আমি না হাসলে তুমি হাসবে কি করে?আমি কেঁদেছিলাম বলে তুমি আমাকে নিয়ে
সেই কান্নার কথা গেঁথে ছিলে।
মানিকজোড় দু’টোকে দেখেছিল বলে,
তুমি আমাকে উষ্ণ চুমুটা দিতে পেরেছিলে।আমি পারিনি যেতে তোমাকে ছেড়ে,
আমি চলে গেলে তোমার গল্প হবে না শেষ।
সাদা সবুজ মাখা মগ ডালে বসে থাকা:–
কর্কশ শব্দ করা বক দুটোকে দেখতে থাকবে।আকাশে আঁধার নেমে এলো গোধূলি বেলা,
ঘরে ঘরে সাঁঝ বাতি জ্বলে উঠেছে। পারলাম না,
যেতে পারিনি । চাইছি তোমার গল্পের শেষ লাইনে তোমার দেয়া চুম্বনের শেষ স্বাদটুকু।আমি বিদেশে চলে গেলেও ফিরে আসবো,
এই কলকাতার বইমেলায় স্টলে স্টলে ভিড় ঠেলে
খুঁজতে থাকবো, তোমার লেখা কাব্যগ্রন্থ,
পাতার গন্ধে থাকবে চুম্বনের এর শেষ মাধুর্য। -
জীবন স্টেশন
জীবন স্টেশন
-অমিতাভ সরকারবাধ্যবাধকতায় শব্দ হারিয়েছে,
কলম হয়েছে স্তব্ধ।
হৃদয় মোচড়ে ব্যাকুলতা,
নয়নের ভাষা লব্ধ।নীল আকাশ মেঘে ঢাকা,
পাখিরা রয়েছে নিরব।
ধূসর বালুকা নদী নয় আজ,
সূর্য্য নয়তো প্রখর।গোধূলির সাঁঝে ঠিক কথা হবে,
বাজবে গোঠের বাঁশি।
নয়নের ভাষা মুখেতে আসবে,
নাব্যতাই থাকবে হাসি।জীবন মাধুরীর রচনা সরণি,
পৌঁছে যাবে সেথায়।
ডুব সাঁতারের ঘর বাঁধা আছে,
জীবন বাঁধবে যেথায়। -
সময় যখন এলো মেলো
সময় যখন এলো মেলো
-অমিতাভ সরকারসব ভাবনা কবিতা হয় না
সব কবিতা সবার হয়না
তুমি শুধু তোমার হইও না
আমি শুধু আমার হব না।তোমার জীবন কি শুধু তোমার জন্য
আমার জীবন নয় শুধু আমার জন্য
ভাবনাগুলো তো নিজস্ব থাকে না
সব কল্পনা আকাশ ছোঁয় না।প্রকৃতি পেয়েছে অনন্ত গরিমা
নানান চোখে নানান পরমা
তুমি তো দেখে আমায় দেখনি
আমি তো তোমায় কখনো ভাবি নি।নকশী কাঁথায় পালঙ্ক সাজাবে
জোনাক আলোয় তুমিও সাজবে
নিশির আলোয় আমিও আসবো
রজনীগন্ধায় তোমায় ভাসাবো।সাঁঝের নদীতে তরি থাক বাঁধা
আঁধার আকাশে চাঁদ রয়েছে বাঁধা
ও ঠিক সময়ে দিয়ে যাবে ইশারা
আমরাও সেই সময় ভাসাবো পসরা। -
একি যাতনা
একি যাতনা
-অমিতাভ সরকারনিত্য নতুন ভাবনাগুলো যখন তখন আসে।
কোনটা ধরি কোনটা ছাড়ি মনের মাঝে ভাসে।তোমার হাসি আমার হাসি সব হাসি কি এক!
ভাবনাগুলো যাক না চলে থাকার যেটা থাক।আমার কথা বলবো বলে ভেবেছিলাম সাত সকালে।
বলবো তোমায় বিকেল বেলায় কথায় কথায় কথারচ্ছলে।কত কথা এলো মনে কত কথা গেল।
ফাগুন মাসটা শনির খেলায় অনেক ব্যথা পেল।ফাগুন ফাগুন খেলব মোরা অশোক বনে গিয়ে।
অশোক বনে সীতা ছিল অনেক দুঃখ নিয়ে !!