-
প্রচ্ছন্য
প্রচ্ছন্য
-অযান্ত্রিকআজ নিজেই খুললেন দরজাটা, বললেন ভিতরে আসুন,
আসুন, জুতো খুলুন বসুন যাহোক কিছু কথা হয়ে যাক।
বললেন ভালো আছি,ভালো আছি আধার কার্ডের মতো ,
দরজায় ঘোড়ার নাল, যদিও তিনি নিজে বিজ্ঞান মনস্কই।
উনি বোঝালেন যা দেখছো যাচাই করে নিও,
আমার বিশ্বাসটা ঝাপসা হয়ে এলো।বহুদিন কোট প্যান্ট পরে যেতে দেখি বাড়ির সামনে দিয়ে,
দামী সুগন্ধির রেশ থেকে যায় চলে যাওয়ার পরেও,
কোনো কোনোদিন চোখাচোখি হলে বলেন, কি ভালো আছেন?
কুশল বিনিময় হয়, সৌজন্য কোটের অস্তিনের মতো সুঠাম।
গলায় তাবিজ, হাতে আংটির বাগান তাতে অনেকে রঙিন প্রজাপতি,
বললেন অনেক পরিশ্রম করেছি তাই আজ আমি সফল।
আমার হাতের রেখাগুলো ঝাপসা দেখায়।মাঝে মাঝে গঙ্গার ধারে যাই, সেখানে অনেক গাড়ির ভিড়,
তাদের তাড়া থাকে না, কিন্তু কালী শিব থাকে গাড়িতে,
রাস্তায় বেড়াল পার হলে নমস্কার করেন, দাঁড়ান ,একটু পিছিয়ে,
আবার চলে যান , গন্তব্যের দিকে, বিভিন্ন ধারণার বাখ্যায়।
সকলেই আধুনিক ,প্রযুক্তিগত সভ্য এবং শিক্ষিত।
আমার শিক্ষাও কেমন যেন ঝাপসা মনে হয়। -
প্রাপ্তবয়স্ক
প্রাপ্তবয়স্ক
-অযান্ত্রিকমাঝে মাঝে আমার খুব গরম লাগে, ঘাম হয়,
চারিদিক থেকে পুড়তে থাকে চামড়া, রাবনের চিতায় রয়েছি মনে হয়
বড়ো বড়ো কাঠ আগুনের শাড়ি পরে ,জড়িয়ে ধরতে চায় প্রেমিকার মতো,
গলার কাছে ধূসর বিরক্তিবোধ, ঝাঁঝালো ধোঁয়ার মতো দলা পাকিয়ে ওঠে।
পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে মনে হয় শ্মশান যাত্রী ,নিজেকে জ্বলন্ত শব।
কেউ আসেনা সে আগুনে নেভাতে,কেউ আসে না জল দিতে,
শুধু নীরবে পাশাপাশি শুয়ে থাকি আমি আর তীব্র লিঙ্গহীন যন্ত্রণা।
বোধগুলো হঠাৎ করে পরিণত হয়ে ওঠে, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে।কোনোদিন দিন খুব সকালে ঘুম ভাঙলে , স্নানঘরে আয়না বিদ্রুপ করে,
আমি ,আয়নায় দেখি আমাকেই, কিন্তু চিনতে পারিনা
অবিকল আমার মতো কিন্তু আমায় দেখে আর হাসে,বিদ্রূপে।
আমার বিছানা ছুঁয়ে সদ্য ভাঙা ঘুম আমায় জেগে ওঠার বানান শেখায় ,
বোঝায়,আলোর প্রতিফলন বা প্রতিসরনের সংজ্ঞা খুব কঠিন,
পাথরের মত কঠিন।
আমার ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা আমি’র ঘুমও ভাঙে না প্রতিদিন।
তাই আজকাল সকালে আমি আর আয়না দেখি না।
প্রাপ্তবয়স্করা নিজেদের আয়নার বিদ্রূপে দেখতে ভয় পায়, বিরক্ত হয়।মাঝে মাঝে বুকের ভিতর একটা নোনতা কুন্ঠাবোধ ,জেগে ওঠে, ডালপালা নারে,
যেভাবে, আমিও গাছের মতো বেড়ে উঠছি আমার মায়ের বুকের ভিতর,
স্ত্রীর বিছানার পাশে, মেয়ের নিষ্পাপ হাসিতে,
মৃত্যুর জন্য জন্মেছি ,একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি চিতার দিকে।
বুকের ভিতর অবিরাম রক্তিম ক্ষরণ,মানসী রজঃস্বলা নিয়মমাফিক।
আস্তিনে লুকিয়ে রাখি নিজের না পারাগুলো,
প্রাপ্তবয়ষ্করা প্রকাশ্যে জামা পাল্টাতে লজ্জা পায়, কুন্ঠাবোধ হয়। -
জনৈক ঘটনা
জনৈক ঘটনা
-অযান্ত্রিকসেই মেয়েটা গান জানে না । রান্না ভালো,
ঘর জুড়ে বেশ পাখির মতো উড়তে পারে।
মুখখানায় বেশ লক্ষী আভা। রংটা কালো,
বালিশ চেপে কান্না লোকায়, অন্ধকারে।মা মাসীদের গঞ্জনা সে, রোজ মেখে নেয়,
কাঁধ কাঁপে না। একলা হাতেই সামলে চলে।
যৌবন তবু, প্রতি বসন্তে ঠিক ছুঁয়ে যায়,
কৃষ্ণকলী , নাম ভেবো না বলছি বলে।প্রেম জানে না । কিন্তু যে তার স্বাস্থ্য ভালো,
খিদের সময় ,খুব চেনা চোখ নজর বোলায়।
ভয়তে থাকে এই বুঝি লোভ। ঝাঁপটা দিলো,
বাড় থেকে ঘর একলা কোনো ফেরার সময়।ঠিক জানি না।নিয়তি বোধহয় বুঝতে পারে,
ভয় গুলো সব, ঠিক একদিন শরীর জোটায়।
খিদের শরীর। ওৎপাতা জিভ সুযোগ করে ,
হামলে পরে । হঠাৎ করে সে শরীরখানায়।তারপরে সব দোষের কত মহুজুরি ।উড়িয়ে ধুলো,
কোট কালোতে তদন্তভার, শরীর খোঁজে সভ্যসময়।
প্রমাাণ তাগিদ। খুঁচিয়ে চলে কাপড় ঢাকা দগ্ধগুলো,
শুধু পথে নয় আইন মেনে,কাঠগড়াতেও ধর্ষণ হয়।সেই মেয়েটা গান জানে না । কবিতা পড়ে
সমাজ লোটে। দোষীর ফায়দা , লেহ্যপেয়ো।
সেই মেয়েটা। বিচার চেয়েই ভুলটা করে,
একলা ঘরে পায়না বিচার। ঝোলায় দেহ। -
দুর্ঘটনা
দুর্ঘটনা
-অযান্ত্রিকপ্রতিটা মুখ নিশ্চল, রক্তাক্ত এবং সাদা,
থেঁতলেছে তবুও মাটিতে মিশছে না।
যেটা জোড়ে, সেটাই ভেঙে হয়েছে কাদা,
যোগাযোগ, কিন্তু মোটেও ভাঙছে না।ভাঙে বিশ্বাস প্রতিদিন, বছরে একটা সেতু,
মাঝেরহাট কিংবা পোস্তা তো বলছিনা।
বেঁচে থাকাটাই অপরাধ ,মৃত্যু নেই যেহেতু,
দেদার বিকোবে খবর, দুঃখ সস্তায় যায় কেনা।দোষ কার, দায়হীন দোষারোপ,তবুও বাঁচবে পিঠ,
জন্মের সূত্রেতে লেখা ছিল কিনা ধ্বংসের রক্তবীজ।
কার দায়,কে বা কারা,দিয়ে যেতে থাকে খেসারত,
গাফিলতি ভারী পরিচিত,তাতেই কি ভেঙে ব্রীজ।নিশানিরা জানায়,প্রতিকার চাই ,জবাব দিতে হবে,
রঙে রঙে লড়াই, শেয়ালিয়া খবর খুঁজছে সারাক্ষণ
যারা চলে গেলো, তাদের কি ভাবে ফেরানো যাবে?
কটা টাকা,আদৌ কি মেটাবে আগামীর ক্ষতিপূরণ।জানিনা , কার্য কারণ, হারানিয়া সূচিতেই বসবাস,
প্রতিবার নিয়তিই জিতে যায় অদৃশ্য পাশাখেলায়।
দুর্ঘটনা দিয়ে যায় ধ্বংসাবশেষ ,প্রশ্নিতো দীর্ঘশ্বাস,
উন্নয়ন,প্রতিবার একরাশ মৃত্যু উপহার দিয়ে যায়। -
গোপাল
গোপাল
-অযান্ত্রিকপাথরের গায়ে দুধের গন্ধ মাখামাখি,
খিদেগুলো কিন্তূ জানেনা যুদ্ধের কথা।
অচেনা মুখগুলো, গোপাল বলে ডাকি,
খাদ্য চায় না, সব খাদকের নৈতিকতা।পালনেতে আছি, তিথি মেনে উদযাপনে,
মালপোয়া ,যেভাবে মেটাতে পারে না ঋণ,
কিছু জন্ম যেন অযথা শরীরের প্রয়োজনে,
করে যায় তেজারতী, বলে জন্মাষ্টমীর দিন।ওরা জানে খিদে, পেট ভরাতেই হবে প্রতিদিন,
মন্ডা মিঠাই ,কে আর সাজাবে ওই থালায়,
উপলক্ষে উদযাপন হয়, আদপে দৈবতাহীন,
বৈষম্য ,ছেড়া জামা পরে দরজায় দাঁড়ায়।রোজকার কত শত কচিমুখ, দেখছি পথপাশে,
ওরাও হাসে, ওরাও কাঁদে, যেভাবে খিদে পেলে,
দু হাতে আঁকড়ে ভালোবাসা পাঁচ কিংবা পঞ্চাশে,
সব শিশু জানি আসলে দেবদূত, বিধাতার ছেলে।হোক না এবার,কিছুটা অন্য তিথি যাপন,
হোক না এবার মানুষ বিধাতার জন্মদিন।
একবার করে শিশুদের মুখগুলোকে আপন,
গোপাল বলে একবার বুকে জড়িয়ে নিন।জানি না তাতে বিধাতা হবেন কিনা তুষ্ট,
জানি না অপার করুণা পড়বে কিনা ঝরে!
জানি ,আমি ,তুমি ,ওরা সকলেই তার সৃষ্ট,
যদি পারি ,মানুষ বলে মাথা তুলতে অহংকারে।