• কবিতা

    কবিতা- আব্বুলিশ

    আব্বুলিশ
    – উজ্জ্বল দাস

     

     

    চোর পুলিশ আর বাবু খেলায়
    হইনি কখনো ক্লান্ত।
    হলুদ নিয়ে হারতে হবে
    কেউ কখনো জানতো?
    মোড়ের বাঁকে লাল ঘুঁটি তোর
    যেই দাঁড়ালো এসে,
    ছক্কা চারে দিলাম কেটে
    খিলখিলিয়ে হেসে।
    রাগ দেখিয়ে হাত পা ছুঁড়ে
    ভেস্তে দেবার ছলে-
    পাকা ঘুঁটি খেলাম সে এক
    মেজাজি কৌশলে।।

    চাইনিজ আর চেকার খেলে
    হতো বাজি মাত।
    সকাল বিকেল চার প্রহরই
    মায়ের মাথায় হাত।
    ক্যারাম পিটে, মিঠে মিঠে
    দুপুর রোদে চড়ে
    বিকেল সন্ধ্যে সারাটা দিন
    কাটতো বিষম ঘোরে।।

    লাট্টু, পিট্টু, ক্রিকেট-লাটাই
    ফুটবল বা ডাংগুলি চাই
    শীতের দিনে ব্যাডমিন্টন-
    খেজুর গুড়ের যখন যা চাই,
    সদ্য পাওয়া ব্যাগাডুলি
    পৌষ মাসের পিঠে পুলি
    এসব চোখে পড়ায় ঠুলি
    শুধুই গল্প মিথ্যা বুলি।

    উবু দশ কুড়ির সাথে
    আপন বপন চৌকি চাপন।
    ছোয়া ছুঁয়ি -আইস বাইশ
    ধাপ্পা থুড়ি হুস আব্বুলিশ।
    রুমাল চুরির গল্প খানা
    আজকে সবার বেশ অচেনা।
    কুমির ডাঙ্গা শুকনো বড় আজ।।

    নটে গাছটা মুড়িয়ে গেছে
    গল্প দাদু ফুরিয়ে গেছে।
    পাকা চুলের ঠাম্মা দিদান
    গল্প বাড়ির মিষ্টি দালান,
    আজকে সে সব রূপকথারা-
    এদেশ ছেড়ে চলে গেছে।
    শিশুরা সব ব্যস্ত সবাই
    বিরাট ব্যাগের চাপে।
    মাঠের ঘাসে পা পড়েনা
    ফিঙে পাখি আর বলে না,
    বুলবুলিও বেবাক বোকা
    গান পাখিরা থেমে গেছে।

    ফিরতে যে চাই শৈশবেতে
    রঙ্গিন চোখের স্বপ্ন মেখে,
    দাও ফিরিয়ে মিষ্টি সময়
    সরল চোখের চাহনিতে।।

  • গল্প

    গল্প- স্বপ্ন সন্ধানী

    স্বপ্ন সন্ধানী
    – উজ্জ্বল দাস

     

     

    – কিরে কখন বেরোবি বললি না যে…
    – হ্যাঁ এবার বেরবো, তুই কোথায়..
    – আরে ছাড় তো তখন থেকে বলছিস এই বেরোচ্ছি, এই বেরোচ্ছি। আর কত বৌ এর কোলে বসে আদর খাবি বলতো…
    – আরে হ্যাঁ আসছি, তুই টিকিট পেয়েছিস..
    – সে তো কখন কাটা হয়ে গেছে, লাইন বেশী ছিল না..
    – আচ্ছা দাঁড়া তেল মাখছি, স্নান করেই বেরবো এই আর একটু..
    – তাড়াতাড়ি কর আমি ঠিক ফুড স্টলটার পাশেই থাকবো।

    সাড়ে বারোটা বাজে এখনো মৌ অভিরূপের দেখা পেলো না, কখন যে আসবে মালটা কে জানে? শালা এক সপ্তাহ আগেই প্ল্যানটা করা ছিল, যে অফিস না গিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে দু’জনে, তার ওপর এতোগুলো বছর পরে দেখা, তার উত্তেজনাই আলাদা। এদিকে ১ টার শো শুরু না হয়ে যায়! অবশ্য শ্যামবাজার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই অভিরূপের বাড়ি।

    প্রায় বছর দশেক আলাপ দু’জনের। প্রেমটাও বেশ গাঢ়, কিন্তু হঠাৎ একটা ছোট্ট ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গেছিলো অভিরূপ আর মৌ এর সম্পর্কের এতোগুলো বছর। সাত বছর আগে ডিসেম্বরের ঠিক এই দিনটাতেই ওদের বিয়ে করার কথা স্থির হয়েছিলো।

    কিন্তু বনেদী বাড়ির বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলের বিয়ে কিছুতেই কোনো নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ের সাথে হতে দেবেন না অভির বাবা, সেটা আগেই বলে দিয়েছিলেন। এদিকে নাছোড় মৌ আর অভির প্রেমের বয়স প্রায় বছর তিনেক। অথচ বাবার অ-মতে বিয়ে করার সাহসও অভির নেই সেটা মৌও বিলক্ষণ জানতো।

    শীতের এই মিষ্টি রোদ্দুরের দুপুর বেলা গুড়াপের এক কালী মন্দিরেই ওরা বিয়েটা সেরে ফেলবে ঠিক করেছিল। সেই মতো মৌ ও তার পিসিকে রাজি করে সেখানে দিন দশেক কাটাবে বলে গুড়াপে চলে আসে, সঙ্গে শর্মিলা, মৌটুসী আর দু’জনের কমন ফ্রেন্ড সুজাতা ও শুভ। ভেবে ছিলো বিয়েটা একবার হয়ে গেলে বাড়িতে হয়তো মেনে নেবে সবাই।

    দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ, চারদিকে গুটি কয়েক মাটির বাড়ি, তার ওপর গোবর লেপে ঘুঁটে দিয়ে যাচ্ছে একদল বৌ, হাঁটু পর্যন্ত আটপৌরে শাড়ি। পুকুরে জেলেরা মাছ ধরছে। গোটা দশ দিন সবার একটু আনন্দেই কাটবে তার ওপর প্রিয়বন্ধুর বাড়িতে না জানিয়ে পালিয়ে বিয়ে। উফফ যেন রোমাঞ্চটাই আলাদা। নতুন নতুন শাড়ি, জামাকাপড়, পুরুত, টোপর,ঘি, মধু, হলুদ, কুলো, পান, সিঁদুর সবই কেনাকাটা হয়ে গেছে। শুধু বরের আসার অপেক্ষা। সবাই একটা টান টান উত্তেজনায় এই শীতেও যেন ঘেমে যাচ্ছে, আদৌ অভি আসছে তো! এই সমস্ত সাতপাঁচ ভেবেই চলেছে মৌ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, সত্যি তো আজ কি অভি আসবে!

    না সবার আশঙ্কাই সেদিন সত্যি হয়েছিল। অভি সেদিন আসেনি এমনকি অনেক চেষ্টা করেও অভিকে আর ফোনেও পাওয়া যায়নি, ব্যাস ঐ টুকুই। তারপর আর অভির সঙ্গে যোগাযোগ করার মনপ্রবৃত্তি হয়নি কারুর।

    সদ্য তিরিশের এক সন্তানের জননী এই সুন্দরী কিছুদিন আগে ফেবু মেসেঞ্জারে হঠাৎ একটা টেক্সট পেয়ে চমকে উঠেছিল, চোখের ভুল নয় তো, তাহলে।
    এতদিন খুঁজেছি! কোথায়! ফেবুতে পাইনি তো অভিকে। তাহলে আজ হঠাৎ!!

    –কেমন আছো মৌ? উত্তর দিও, পারলে

    তিন চার দিন পর মৌ উত্তর দিয়েছিলো,

    – Doing well, wht abt u অভি, হঠাৎ!!
    – নাহ্, যাতে আমায় কেউ খুঁজে না পাও তাই প্রোফাইল creat করিনি এতো দিন, হঠাৎ খুব মনে পড়ছিল তোমার কথা, কদিন আগেই FB তে Account করলাম। ভাবলাম যদি তোমায় খুঁজে পাই, তোমায় একটা টেক্সট করব। তুমি কি কথা বলবে না আমার সাথে!!

    – কেন বলবো না, বলতেই পারি, তবে হ্যাঁ…
    – কি..
    – যদি আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের হয়, সহজ হয় তবেই।
    – আমার কোনো অসুবিধা নেই মৌ, কেমন আছো তুমি…
    – আমি, হা হা হা, কেন! খারাপ থাকার কথা ছিলো বুঝি। তবে হ্যাঁ অভি যদি বন্ধু হই তুই তুই করে কথা বলতে পারো তবেই আমায় টেক্সট করো, নাহলে….
    – পারবো মৌ পারবো, I need a friend, trust me, m not well….

    এভাবেই শুরু হয়েছিল ওদের সম্পর্কের দ্বিতীয় ইনিংস।
    এতোশত ভেবে ভেবে প্রায় ঘড়ির কাটা ১ টা ছুঁই ছুঁই, কাঁধে আলতো ছোঁয়া..

    – চল পাগলি এরপর পর তো সিনেমা শেষ হয়ে যাবে, চল চল..
    – অভি….তুই এসেছিস, আমি তো ভাবলাম আজ ও তুই…আচ্ছা চল, সব কথা পরে হবে। কি হ্যান্ডু হয়েছিস তুই….আরো অনেক কিছু বলার আছে আগে ঢোক।

    আজ অভি খুঁজে পেয়েছে মৌকে এটা সত্যি, কিন্তু গত দু’মাস ধরে প্রায় দু’জন দু’জনকে নতুন করে আবার চেনা শুরু করেছিল। মৌপিয়া সেনগুপ্তের সেপারেশন হতে চলেছে, ও ওর বরের সাথে ছ’ মাস হলো থাকে না। অতি আধুনিক কায়দা দুরস্থ মিঃ নির্মাল্যের সাথে কিছুতেই বনিবনা হচ্ছিলো না মৌ এর। রোজ রোজ এক অশান্তি, বন্ধু বান্ধব নিয়ে ড্রিংক করে ঘরে ফেরা আর ছেলেটাও তো বড় হচ্ছে, আর মানিয়ে নিতে না পেরেই এই সিদ্ধান্ত। নির্মাল্যকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে ছিলো, কথা দিয়েছিলো নিজেকে শুধরে নেবার। না সব মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, পারেনি নিজেকে পাল্টাতে, সেই একই নির্ভেজাল মাতলামি, অসহ্য।

    আর স্বপ্ন সন্ধানী অভি!…

    (দুই)

    মৌয়ের সঙ্গে সম্পর্কটা ভেঙে যাওয়ার পর অভি প্রায় বিছানা নিয়েছিলো মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। না খেয়ে না ঘুমিয়ে শরীরটাই খারাপ হয়ে গেছিলো। বছর খানেক পর অভির দাম্ভিক বড়লোক বাবা খুব বড় ঘরে অভির বিয়ে দিয়েছিলেন বটে, ভীষণ জাঁকজমক করে। কিন্তু অভি খুশি কিনা একটুও জানার ইচ্ছে প্রকাশ করেননি কোনোদিন।

    টায়ে টুয়ে কোনো রকমে মাধ্যমিক পাশ করা উঠতি বড়লোক বাপের একমাত্র মেয়ে অদিতির সঙ্গে অভির পরিণয় হয়েছিল। কিন্তু একাধিক অবৈধ সাম্পর্কের বীজ বোনা, ছিলো অদিতির রোজকার প্যাশন যাকে বলে হাল ফ্যাশন এর বেশ্যা। পয়সার নেশায় সারাদিন মত্ত থাকতো, শ্বশুর শাশুড়িকেও বিন্দু মাত্র পরোয়া করতো না অদিতি। এক সময় পারিবারিক অশান্তি চরমে পৌঁছেছিলো। অসহায় অভি, বৌয়ের দেমাক আর বেল্লালাপনায় অসহ্য হয়ে বার দুই আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছিল কিন্তু সাহসে কুলায়নি। এই অমানুষিক বাড়ির পরিবেশ সহনশীলতার বাইরে চলে যাচ্ছিল দিনের পর দিন, বাবার বয়সটাই বারবার জানান দিছিলো যে। হঠাৎ একদিন ভোর বেলা খবরের কাগজ পড়তে পড়তে বনেদী বৌমার মায়া কাটিয়ে চলে গেলেন অভির বাবা।

    সংসারের বাঁধন শুধু আলগাই হলো না, দড়ির ফাঁসটাও একেবারে খুলে গেল। অদিতি চলে গেছে নিজের সাউথ কলকতার ফ্ল্যাটে, সে আজ প্রায় ১৭/১৮ মাস হলো। বৈবাহিক সম্পর্কেরও কোনো ছিঁটে ফোঁটা নেই।

    সিনেমার ক্লাইম্যাক্স বোঝার আগেই সিনেমাটা শেষ করে বেরিয়ে এলো দু’জনে। অন্ধকারে দু’জনে অনেকক্ষন কাছাকাছি, কথা নেই মুখে। হাত দু’টো অজান্তেই ধরে ফেলেছিল একে অপরের, যেন কত দিনের এক না পাওয়ার অনুভূতি, ভেতরে জমে থাকা কত দিনের চাপা দম বন্ধ করা ফাঁস, শুধু কেটে বেরিয়ে আসা।

    আজ মৌ যেন অসম্ভব রূপসী, সবুজ লেগিংস আর সুতোর কাজ করা চকলেট রঙের কুর্তিতেও শরীরের প্রত্যেকটা বিভাজিকা স্পষ্ট। আর বরাবের হ্যান্ডসাম অভি- ডার্ক নেভি-ব্লু জিন্স সঙ্গে ধপধপে সাদা টিশার্ট আর রোদ চশমায় চোখগুলো ঢাকা। যত কথা সব ফেবু মেসেঞ্জারেই, সামনা সামনি কথা বলার যেন সাহসই হচ্ছে না কারুর।

    হঠাৎ নীরবতা ভাঙলো মৌ,
    – কিরে চল কিছু খাই…
    – হাঁ চল, কি খাবি?
    শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁয় ঢুকে একটু হালকা হলো মুখোমুখি বসে।

    এরপর..
    এরপর থেকে দু’জনে দু’জনকে চোখে হারাতে থাকলো, কথা না হলে অভিমান যেন আছড়ে পড়তে থাকে সারাদিন, দোষারোপের পর দোষারোপ। এতো আরো কাছাকাছি আসারই ইঙ্গিত। দু’জনেই তো একা, প্রাণপণ খুঁজে চলা জীবন সঙ্গীর অপেক্ষায়। দেখাও হতে থাকলো প্রায় প্রত্যেক দিন, কখনো রেস্তোরাঁ, কখনো বাড়ি। শুধুই দিন গোনা, কে আগে ভাঙবে। না এবারেও মৌ….

    – কিরে অভি, একটা বিয়ে কর না….
    – করবো তোর মত মেয়ে পেলেই (বলেই হাসতে থাকে)
    — মৌ সিরিয়াস) করবি? যদি পাস!
    – করবো যদি….পাই, তুই ও তো বিয়ে করতে পারিস….
    -করবো যদি তোকে পাই..
    – চল….
    – কোথায়….
    – গুরাপ….
    — অভি…. প্লীজ…ইয়ার্কি মারিসনা, আর কষ্ট পেতে চাইনা…. প্লীজ..
    –আই এম সিরিয়াস মৌ…

    বলেই দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে যেন ১০ বছরের নীরবতা ভেঙে চরম গভীরতায় চিনতে শুরু করলো নিজেদের। কেউ কারুর দিকে তাকাতে পারছে না, বাকরুদ্ধ, দম বন্ধ। সারা বাড়ি জুড়ে একরাশ নীরবতা।

    নতুন প্রেমে পরার মজাই যে আলাদা, তার ওপর সে যদি হয় একটু জানা, কিছুটা চেনা। সত্যি জীবনে বারবার প্রেমে পরা যায়….বার বার। জীবনের প্রতিটি বাঁকে যদি নিজের মানুষটাকে নতুন নতুন ভাবে চেনা যায়– জানা যায়–মন্দ কি- সত্যি এতো আরো কাছে পাওয়ারই ইঙ্গিত বয়ে আনে। কোথাও কারুর ওপর অধিকার আরেকটু বেশী… যেন মন বলতে থেকে…

    – আজ তো লিপস্টিকটা একটু গাঢ় লাগালেই পারতে
    – তুমিও তো চুলটা আরেকটু ছোট করোনি, বললাম আজ ব্ল্যাক শার্টটা পরতে….
    – যেন কাজলটা বেশি হালকা না হয়…
    – চলো না একটু হেঁটে আসি….
    বর্ষায় দু’টো হাত এক করে হাঁটা, ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে সারা শরীর ভিজিয়ে, ভেজা চুলে আলতো বিলি কাটা। আর তা যদি হয় পালিয়ে — সেতো একটা গোটা প্রেম ভেজা দিন। দু’জনে দু:জনের হাত ধরে সারা জীবনের পথ চলতে চাওয়ার আশ্বাস।

    ঠিক হয়ে গেছে দিনক্ষণ। যেন হাত ছানি দিচ্ছে সেই গুড়াপের মন্দির, সেই গ্রাম, মোরাম করা লাল মাটির রাস্তা। গরুর গাড়ির দাগ যেন চিহ্ন রেখে যাবে ওদের গান্তব্যে। যেখানে মৌ হয়েছিলো লগ্নভ্রষ্টা। এবার ওরা একদম একা। নিজেরাই যাবে, আবদ্ধ হবে প্রজাপতি ঋষির আশীর্বাদ নিতে। বেঁধে ফেলবে নিজেদের বিবাহ বন্ধনে।

    দাম্ভিক বাবা আজ নেই, থাকলে হয়তো অভি আজও পারি দিতে পারতো না গুরাপের মায়ের মন্দিরে নিজের গাঁটছড়া বাঁধতে। ভোর বেলা হাওড়া পৌছে ট্রেনে উঠে বসেছে। সঙ্গে রয়েছে ধুতি আর গরোদের পাঞ্জাবি। না না সিঁদুর নিতে ভোলেনি অভি। কয়েক ঘন্টা ট্রেন সফর, ব্যাস!! তারপরেই এ জীবনের অতি আকাঙ্খিত জীবন সঙ্গিনীটি তার হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে ট্রেন অনেক দূর পৌছে গেছে। এবার নামার পালা।

    একটা ছোট সাঁকো পড়িয়ে গরুর গাড়ি করে অভি পৌঁছে গেলো তার হারিয়ে যাওয়া সাত সাতটা বছর পেছনে, মৌ তার পিসি আর পুরুত মশাইকে নিয়ে আসছে একটু আগেই ফোনে জানালো।

    সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো মনের ভেতর থেকে হাতড়ে বার করে ভেবে চলেছে অভি। কই, কোথায় গেলো রে বাবা, আর কতক্ষণ অপেক্ষা করাবে মৌ। আরেকটা ফোন করেই দেখা যাক।

    ক্রিং…ক্রিং….ক্রিং….
    রিং হয়ে চললো, উফ্ফ ফোনটা তো তোল…

    আবার…. ক্রিং….ক্রিং…ক্রিং…

    আবার…..ক্রিং…….ক্রিং…..ক্রিং….

    আবার…ক্রিং….ক্রিং….

    কি হলো কোনো অঘটন নয় তো। মৌ তো কালকেই চলে এসেছে, সারাক্ষণ কত ফিরিস্তি দিলো হোয়াটস আ‍্যপে। তাহলে আজ কি হলো। একটাও উত্তর নেই কেন। পিসি অন্তত ধরবে তো ফোনটা। আবার…

    ক্রিং…..ক্রিং…..ক্রিং…….

    ওপাস থেকে উত্তর এলো…গম্ভীর পুরুষ কন্ঠ!!

    “বলুন অভিরূপ, নির্মাল্যা হেয়ার, মৌপিয়ার হাসবেন্ড বলছি। সরি অভিরূপ বাবু মৌ একটু ব্যস্ত আছে!”

    অভির সারা শরীর নিথর পাথরের মতো দাঁড়িয়ে, যেন ধরিত্রী বিভাজিত হয়ে গিলতে আসছে। হে ভগবান, এও প্রাপ্য ছিলো। এতো ভয়ঙ্কর প্রহসন। এতো ভীষণ প্রতিশোধ স্পৃহা, এতো বড় অভিনেতা তুমি? তার মানে সবটাই মিথ্যে!! সেপারেশন!! তুমি কি করলে মৌ- আমি তো তোমায় ঠকাইনি, তবে কোন জীবনের পাপের এতো বড় সাজা। হে ভগবান!! হে ভগবান!!

    ফোনটা হাত থেকে পরে গেলো। মান্দিরের লাল মেঝেতে সারা শরীর এলিয়ে দিলো স্বপ্ন সন্ধানী অভিরূপ!! ধপ করে অন্ধকার নেমে এলো মন্দির চৌহদ্দিতে । কিচির মিচির শব্দে পাখিরা বাসায় ফিরছে যেন। নিস্তব্ধ ঝিঝি পোকারা ডেকে চলেছে আপন খেয়ালে। চামচিকেরা চিক চিক করে সজরে লাথি মেরে কানের পাশ দিয়ে উড়ে যেতে যেতে যেন বলে গেলো,

    “ভালো থেকো অভি, আমি তোমারই ছিলাম, আমি তোমারই ছিলাম। আমি আছি আমি আছি আমি আছি……ফিরে যাও অভি….ফিরে যাও….ফিরে যাও…. ফিরে যাও”

    পাঠকরা বিচার করবেন অভিরূপকে আমি অতিরিক্ত বঞ্চিত করলাম কিনা….

    -সমাপ্ত-

  • কবিতা

    কবিতা- অসমাপ্ত

    অসমাপ্ত
    – উজ্জ্বল দাস

     

    হেমন্তের হিমেল পরশ লাগছে সারা গায়ে-
    সন্ধ্যের ঘড়ির কাঁটাটা ঠিক চারটে যখন ছোঁয়-
    মোচড় দেওয়া ইচ্ছেগুলোকে হত্যা করি রোজ।
    সিরিয়াল কিলার হয়ে যাই আমি-
    জেগে ওঠে এক পৈশাচিক বর্বরতা।
    বিন্দু বিন্দু রক্ত এসে পড়ে,
    ঠিক বুড়ো আঙুলের গায়ে।

    হতে পারিস তুই এক ফোঁটা রক্তের লাল
    হতে পারিস তুই মৃত্যুর পরোয়ানা পাওয়া যাত্রী
    হাতে পারিস তুই সিরিয়াল কিলারের অবজেক্ট-
    হতে পারিস তুই বাতাসের একটা ধূলিকণার ধাক্কা-
    হতে পারিস তুই সফল না হওয়া স্বপ্নের আভিজাত্য-
    হতে পারিস তুই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া রাত্রি-
    এক অচেনা অভিযাত্রী।।

    শান্তি কিসে?

    না পাওয়ার আনন্দ নাকি পেয়েও হারানোর যন্ত্রণা-
    না পেলেই মনে হয় “হয়তো বা পেতে পারি”
    আর পাওয়া হলেই থাকে তুমুল হারিয়ে ফেলার ভয়।

    কিন্তু হারিয়ে ফেলাটাও কখনো কখনো খুব সুখের।

    বলতো কখন?

    এই যে, যেমন হিমেল পরশ লাগা হওয়া,
    কখনো পাওয়া কিংবা না পাওয়া।

  • গল্প

    গল্প- যাহা বলিব সত্য বলিব

    যাহা বলিব সত্য বলিব
    – উজ্জ্বল দাস

     

    ভাবতে ভাবতে গোটা একটা লম্বা বছর কেটে গেলো সায়নীর। অরিন্দমের সাথে ব্রেকআপটা হয়ে গেছে মনে মনে। কতোদিন মাঝ রাতে প্রবল অনিদ্রায় ঘুম ভেঙে অরি-অরি বলে চিৎকার করে উঠেছে সায়নী। না, অরিন্দম ফিরে আসেনি আর। ছোট্টো দুধের শিশুটাকে সায়নীর কোলে রেখে অরিন্দমের আর ফেরা হয়নি সেদিন। আজ মেয়ের বয়স মাত্র ষোলো মাস।

    সায়নী বাবা মায়ের কাছে চলে এসেছে মেয়েকে নিয়ে। ছোট্ট মেয়ে সৃজা। বুঝতেও পারবে না বাবাকে দেখতে কেমন হয়, তারা সন্তানের জন্য কতখানি। বিকেল বেলা বাড়ির সামনেটায় বসে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে দু’ গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল সৃজার মায়ের।

    বাবা মা দু’জনেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তারা অর্থনৈতিক ভাবে খুব দুর্বল না হলেও বেশ স্বচ্ছল তাও নয়। দাদু দিদা মিলে নাতনির দায়িত্ব নিতে হিমশিম খাচ্ছেন দু’বেলা। শুভময় বাবু পেশায় অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। সুতরাং তার পেনশনের টাকায় এতোগুলো পেট। রোজই এটা নেই সেটা নেই-এর ঘরে মেয়ে আর নাতনি ও বড়ো বালাই। এককালীন অবসরের টাকায় বাড়িটা কোনো রকমে হয়েছে। বয়সের সাথে সাথে বাড়িতে ওষুধের ব্যবহার ও যথেষ্টই বেড়েছে।

    মা সন্ধ্যা বেলা সন্ধ্যাহ্নিক সেরে সদরে ধূপ দেখতে আসছিলেন। মেয়েটা আপন মনেই মাটিতে হাত ঠুকে ঠুকে খেলছিলো সায়নীর পাশে। চুল বাঁধা হলে সায়নী মেয়ের নরম নরম গালটা একটু কষে টিপে দিয়ে আদর করে উঠে গেলো রান্না ঘরের দিকে। আর যেতে গিয়েই

    ক্যাঁচ…. চ….চ..চ…চ…ঘ ট ঘট ঘ ট ঘ ট ঘ ট ঘট…

    করে কানের কাছে আওয়াজটা হতেই মাথা ঘুরে পরে গেলো মেঝেতে। ব্যাস অজ্ঞান। প্রায়ই যা হয় আরকি।

    পাড়ারই ডাক্তার গোপাল সরেন মশাই এসে বলেছিলেন।

    – এটা মানসিক ট্রমা। কখনোই ঠিক হবে না। আগেও বলেছিলাম।

    -উপায়! (অবাক বিস্ময়ে বাবা জানতে চেয়ে ছিলেন)

    -দেখুন উপায় কিছু নেই তবে…

    -তবে!!

    -দক্ষিণে একবার নিয়ে গিয়ে দেখতে পারেন। ওরা অনেক কিছু পারে বলে শুনেছি।

    -ডাক্তার বাবু, এতো পয়সা কোথায় পাবো, তার চেয়ে থাক। বাড়িতেই যা করার আপনিই করুন।

    – সবই তার ইচ্ছে।

    কথা কটা বলে শুভময় বাবু ভেতর ঘরে চলে এসে ছিলেন চোখের জল ফেলার তাগিদেই। মেয়েটার দিকে আর তাকানো যায় না ইদানিং। অনেক কষ্টে খুঁজে খুঁজে আই.টি’তে চাকরি করা ভালো ছেলে, অরিন্দমের সাথে বিয়ে দিয়ে ছিলেন মেয়ের। কপালে যে এত কষ্ট জুটবে তা কি আর জানতেন।

    (দুই)

    চরম রাগ রাগ মুখ নিয়ে গজ গজ করতে করতে সেদিন মেয়েকে কোলে করে অরিন্দমের হাত ধরেই ফিরছিলো সায়নী। অনেক কিছু কেনা কাটা হয়েছে আজ, কিন্তু সবই মেয়ের জন্য। সায়নীর দোকান থেকে বেরোনোর আগে একটা কুর্তি পছন্দ হয়েছিলো। অরিন্দম নাকি বলেছে আবার পরে কিনে দেবে। অন্ধকারও হয়ে আসছিলো বেশ। মেয়েকে নিয়ে অন্ধকার দিয়ে ফেরাও সমস্যার। এই সব নিয়ে গজরাতে গজরাতে বাড়ির আগে তিন মাথার মোড়ের সামনেটা আসতেই ….

    ক্যাঁচ…. চ….চ..চ…চ…ঘ ট ঘট ঘ ট ঘ ট ঘ ট ঘট…

    পাশে গা ঘেঁষেই একটা ধূসর গ্রাফাইট রঙের আর্টিগা এসে দাঁড়িয়ে ছিলো। চোখের পলকে সবেগে অরিন্দমকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে নিমেষে চোখের আড়াল হয়ে গেছিলো। সায়নী জড়িয়ে ধরতে গিয়েছিলো অরিন্দমকে কিন্তু মেয়েকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে চম্পট দিয়েছিলো কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা দুষ্কৃতির দল। সায়নী মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলো বেশ খানিকক্ষণ। তারপর জ্ঞান ফিরতে দেখেছিল সামনে বয়স্ক শ্বশুর শ্বাশুড়ি দাঁড়িয়ে। দু’জনেরই অসুস্থ শরীর। ডাক্তার কাকু মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত। আর জনা কয়েক প্রতিবেশী যারা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আসে মা আর মেয়েকে। সায়নীর মাথায় কালো হয়ে কালশিটে পরে গেছে। মেয়েটার কিছু হয়নি ভাগ্যিস।

    দিনের পর দিন এ থানা ও থানায় ঘুরে ঘুরেও কোনো সুরাহা তো দূর, আস্তে আস্তে ব্যাপারটাই ধামা চাপা পরে গেছে। কোলের একরত্তিটাকে নিয়ে যতটা সম্ভব লড়াই করে চলেছে সায়নী। তাবড় তাবড় বড়ো মাপের সব অফিসারেরাও নাকি একবছর ধরে তদন্ত করেই চলেছেন।

    (তিন)

    অরিন্দম এখন কোথায় কেউ জানে না কোনো হদিসও নেই। এমনকি অরিন্দম নিজেও জানে না যে সে কোথায় আছে। দু’বেলা শুধু কে একজন এসে ডাল আর রুটি দিয়ে যাচ্ছে গত একবছর ধরে ব্যস। তার মুখও দেখার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। শুধু কিডন্যাপ হয়ে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় আছন্ন অবস্থায় যে কথাগুলো ওর কানে আসছিলো সেগুলো আজও ভয়ঙ্কর। আজও ভীষণ টাটকা স্মৃতি ….

    -পৌলমি কেমন দিলাম, শালা অনেক দিন পরে মালটাকে পেয়েছি নাগালে। পুরো মুঠোয় যাকে বলে। বহুত বার বেড়েছিলো। কি ফিজিক দেখেছিস। নিত্য নতুন রেপ মারাচ্ছিলো বল। কি করি দেখ এবার!

    -হ্যাঁ রে বৈশাখী ঠিক বলেছিস। শালা। বুঝতে পারেনি আসলে কাদের সাথে পাঙ্গা নিতে গেছে। চার জনে মিলে টেনে আমরা ওঠাতে পারছিলাম না গাড়িতে, এতো লম্বা। কি বল অদৃজা।

    -হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিকই বলেছিস। চল শালা, এখুনি জিন্সটা খুলে এখানেই হয়ে যাক একবার কি বল। ঠুসে দি শালাকে।

    -এক্ষুনি! দাঁড়া একটু। সামনের পেট্রোল পাম্প থেকে তেলটা নিয়ে নিই। আমারও আর তর সইছে না। সামনেই একটা নতুন খালি বাড়ি পড়ে আছে না। কেউ থাকে না ওখানে।

    – খাচ্ছিলো তাঁতী আইটিতে, রেপ করতে গিয়ে নিজের লাইফটাই নষ্ট করলো। আরো যে চারটে মালকে আটকে রেখেছি আমরা, কেউ টের পাইনি তো বল।

    -আরে ধুর, কোথায় রেখেছি। মশা মাছিও জানে না মাইরি। কি প্ল্যান করেছিলাম বল, সৃজনী তোর মনে পরে- যেদিন তোকে এই পাঁচজন মিলে খেয়েছিলো।

    -পরবে না আবার। সেদিন বাবার ওষুধটা আমার ব্যাগেই পড়েছিল, আর বাবা নার্সিংহোমে কাতরাতে কাতরাতে ওষুধটা না পেয়ে সোজা ওপরে। ছেড়ে দেবো ভেবেছিস। ওষুধটা পেয়ে গেলে বাবাও বেঁচে যেত আর মা’ও অসময়ে বাবার কথা ভেবে ভেবে বিছানা নিতো না। আর আমার বর! সেও তো হারামি। আমায় বের করে দিয়েছে বাড়ি থেকে। আমি কি স্বেচ্ছায় রেপ্ট হতে গেছিলাম! ছিঃ, থু…. থু শালা।

    -বুঝলি বৈশাখী তেলটা নিয়ে সামনের বাড়িতে লাগিয়ে দিস গাড়িটা। সিগারেটও শেষ। দু’টো বোতলও তুলতে হবে রাস্তায়। তার পর সারা রাত ধরে মালটার রোস্ট করবো আর খাবো।

    -ঠিক বলেছিস অদৃজা। এখনো ঘোর কাটেনি মনে হয়। তল পেটে একটা লাথি কষিয়ে রাখ। আমার ছেলেটার সেদিন জন্মদিন ছিলো। তাড়াতাড়ি করে অফিস থেকে ফেরার সময় আমায় তুলে নিয়ে গিয়ে রেপ করেছিলো বোকা** গুলো। চিৎকার করতে গিয়ে তলপেটের লাথিটা বাঁ* আজও মনে পরে। আর ঠিক তখন পৌলামিও আমার সঙ্গে ছিলো। ওকেও ছাড়েনি কুত্তার বাচ্চারা। আমার আর ছেলের জন্মদিনটাই হয়নি। একমাস হাসপাতালে কেটেছিলো আমার।

    -হ্যাঁ ভুলবো কি করে বলতো। আমার ওড়নাটা টেনে গলায় চেপে পেঁচিয়ে রেখেছিল। চিৎকার ও করতে পারিনি। কিছু বোঝার আগেই আমাদের গাড়িতে উঠিয়ে দরজাগুলো টেনে আটকে দিয়েছিলো। সারা রাত ধরে অত্যাচার করেছিলো। সব জানাজানি হওয়াতে আমার বিয়েটাই হয়নি আর। সবচেয়ে প্যাথেটিক তো অদৃজার। কিরে বল, তাই না।

    -কুত্তার জাত! শালা কাপুরুষের বংশধর! আমার পেটের বাচ্চাটা যে এভাবে নষ্ট করে দিতে পারে কেউ আমি তো ভাবতেই পারিনা আজও। এরা মানুষ!! আমি প্রায় ছ-ছটা মাস বিছানা থেকে উঠতেই পারিনি। বাঁচবো কিনা জানতাম না। আমার মুখ বন্ধ করতে গিয়ে আমার পেটেই ওরা সপাটে লোহার রড কষিয়ে দিয়েছিলো। সব চেয়ে বড় কথা আমি ওর বৌ সায়নীর বান্ধবী। সেটাও ও জানতো আর আমায় যে টার্গেট করেই রেখেছিলো এটা পরিষ্কার। আমার অর্গান ফেলিওরের দিকে যাচ্ছিলো। কি ভাবে বেঁচে গেলাম জানি না।তবে ওরা আমাদের চার জনকে রোজ ফলো করতো। নাহলে আমরা চারজন যে একই জায়গায় চাকরি করি, কার কখন ডিউটি, কখন ছুটি সব ওদের মুখস্থ ছিলো একেবারে। দেখ বৈশাখী, সৃজনী, পৌলমী – আমরা এই পাঁচটাকেই শেষ করে দেবো। আইন এদের শাস্তি দেবে না। দিলেও ওদের সঙ্গে প্রমাণ করতে দৌড়োতে হবে। উকিলের পেটও ভরাতে হবে। এমনিতেই কয়েক লাখের ওপর কেস জমে আছে। তোরা কি বলিস?

    -আমিও তোর সঙ্গে একমত। রোজ রোজ আমরা কোর্ট- আদালত-থানা-পুলিশ করতে পারবো না। আমরা আমাদের কোর্টেই ওদের বিচার চালাব।

    তারপর পুলিশরাও জানতে চাইবে “ঠিক কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিল! কি কি করে ছিলো! কি পরে ছিলেন! কেনই বা পরে ছিলাম! প্রথমে কি করলো! তারপর কোনটা খুললো!”

    আমরাই বিচার করবো এই সব অমানবিক, কাপুরুষ কুত্তাগুলোর। তারপর যদি আমাদের ধরা পড়তে হয় তাই সই। কিন্তু ওদের সারা শরীরে আমরা কেটে কেটে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিতে দিতে নুন ছড়াবো। মাঝে মাঝে আকন্ঠ গিলে যার নেশায় ওরা মাতাল হয়েছিল, যার নেশায় বুঁদ হয়ে ওরা আমাদের জীবনগুলো শেষ করেছে সেই মদের বোতলও উপুড় করে দেবো ওদের মুখে। কাঠগড়ায় গিয়ে সবাই মিলে ধর্মগ্রন্থের ওপর হাত রেখেই নাহয় স্বীকার করবো..

    “যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব না”

    এই ভাবে কথা বলতে বলতে বৈশাখী গাড়িটা দাঁড় করালো নতুন তৈরি হওয়া খালি বাড়িটার সামনে….

    ক্যাঁচ…. চ….চ..চ…চ…ঘ ট ঘট ঘ ট ঘ ট ঘ ট ঘট…
    ~সমাপ্ত~

  • কবিতা

    কবিতা- আঁধার রঙের বাড়ি

    আঁধার রঙের বাড়ি
    -উজ্জ্বল দাস

     

    কি নাম দিলো একটা পাগল হাওয়া-
    তুই বললি, এ নাম টা বেশ ভালো,
    যদিও আমার রং টা একটু চাপা,
    অল্প হলেও কালো।।

    পাগল হাওয়া নাম কি দিলো বল না?
    থাক সে কথা,
    ব্যাথা পাওয়ার ছল চতুরির ডালি
    নাহয় যেন আমার ভাড়ার ফুটো,
    এক্কে বারে খালি।।

    পাগল হাওয়ার নামের দু অক্ষরে
    জানিয়ে দেনা, একটু সময় করে।
    ভাবতে ভাবতে পাবো আমি ঠিক খুঁজে
    সইবো খানিক তোকে, দুচোখ বুজে।।

    শোন তাহলে,
    পাগল হাওয়া দৌড়ে এসে আমায়
    দু এক কথা বললো কানে কানে।
    যদিও মানে বোঝার উপায় নেই
    আমায় কে আর এমন ভাবে জানে!

    তখন আমি শুধাই পাগল হাওয়ায়,

    পরে যখন ভোরের ফোঁটা শিশির
    কানে কি তার শব্দ আসা মানা,
    কেমন করে পরে চুপি চুপি-
    কে রাখে এই ছোট্ট খবর খানা।
    রাতের তারা ফোটে কখন জানো?
    কখনই বা নিদ্রা তাদের আসে।
    শিশিরে রা কি তারা’দের কথা জানে?
    কখন তারা ছড়ায় ঘাসে ঘাসে?

    এসব কথায় মাতাল পাগল হাওয়া।
    পিছু ফিরেই নিকোটিনে এক টান-
    ধাওয়া ছাড়াই রূদ্ধশ্বাস ছুট
    রূপকথারা- নিমেষে দলছুট।।

    ~~~~~~

    মাঝ রাতে রুপ কথাদের সঙ্গে হঠাৎ কথা
    কেমন এ রাত, ওদের আলোয় আমি-
    ব্যালকনিতে একা।

    চতুর্দিকে ঝুপ করা এক আঁধার রঙের বাড়ি
    কলঙ্ক যা ছিলো চাঁদে, ঠিক যেন এক নারী।
    ঠিকড়ে পড়া আলোর ছটায় তুমুল অট্টহাসি
    খিলখিলিয়ে কে যায় চলে, চাঁদের প্রতিবেশী।

    সে এক রাতের গপ্প তোমার
    নাম যে পাগল হাওয়া,
    শুনলে না আর পেছন ফিরে তুমি-
    রূপকথারা ক্লান্ত ভীষণ, বই গুলো ঝুল পড়া।।

    পাগল হাওয়া নাম কি দিলো আমায়!!
    এই টুকু আজ–
    হয়নি জানা, অজানা নাম থাক।

You cannot copy content of this page