• কবিতা

    কবিতা- নেই

    নেই!
    -উজ্জ্বল সামন্ত

    নারীর অতীত থাকতে নেই,
    অতীত হয়তো বিশ্বাসের প্রশ্নে চিহ্নিত?
    বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সামাজিক সম্পর্কের বাঁধনে
    বৈধ অবৈধ স্বীকৃতির অভাবে সম্পর্কও কলঙ্কিত!

    নারীকে ভালবাসতে নেই, নিজের পছন্দে।
    স্বপ্নের রাজপুত্তুর!, স্বপ্নেই মৃত্যু ঘটে ইচ্ছের ।
    “না” এর শৃঙ্খল আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধে, পথে হোঁচট খায়
    স্বাধীন চিন্তাধারার মৃত্যু জীবনের পথ চলতে।।

    যাবতীয় দায়ভারও নারীর
    সে সংসার হোক বা সমাজ জীবনে।
    সিঁথির সিঁদুর শাঁখা পলায় শাড়ির মোড়কে
    যাবতীয় ইচ্ছে অনিচ্ছার মৃত্যু, সহ্যের সহনে।।

    নারীকে একা থাকতে নেই, জীবনে
    সঙ্গীহীন নারীর চরিত্র নিয়ে কাঁটা ছেড়া, সমালোচনা!
    স্বাধীন থাকার অধিকারে, প্রশ্ন তোলে,
    বাঁধ সাজে সামাজিক নিয়মকানুন, জোটে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা।।

    নারীর স্বপ্ন থাকতে নেই, সাবলম্বী জীবনের
    তাকে রোজগার করতে নেই, যোগ্যতার নিরিখে।
    স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছের টুটি টিপে ধরে নিজেই
    ইচ্ছের মৃত্যুর হয় সংসারের ঘেরাটোপে।।

    নারীর স্বাধীনতা থাকতে নেই ,
    স্বাধীনতা থাকলেই নাকি ,নারী স্বেচ্ছাচারী হয়!
    নারী তার যোগ্যতায় যদি এগিয়ে যায় জীবনে
    হয়তো পুরুষ শাসিত সমাজের এটাই ভয়!!

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প- ফেরিওয়ালা

     

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।। 

    ফেরিওয়ালা
    -উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    স্টেশনে দাঁড়ায় ছুটে এসে, বাড়ি থেকে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটেই আসতে হয়। একটা ভাঙা সাইকেল ছিল কিন্তু সেটা বয়সের ভারে অকেজো হয়ে গেছে। সেই ভোর বেলায় উঠে নানা রকম কাঁচামাল কেটেকুটে রেডি করে মালপত্র গুছিয়ে ব্যবসায় বের হতে হয়, অনেকদিন ধরেই এই রুটিন চলছে। সকালের প্রথম ট্রেনটা মিস হয়ে গেল। ওখানে অনেক ডেলি পেসেঞ্জার যাতায়াত করে। বেশ কিছু বিক্রি হয় । মদন মজুমদারের মসলা মুড়ি খাইনি এমন কোন ডেলি প্যাসেঞ্জার নেই ওই ট্রেনে।

    শিয়ালদায় নেমে আবার এ লোকাল সে লোকাল ট্রেন ধরে সারাদিন বিক্রি করে। দুপুরে এক ফাঁকে শিয়ালদার স্টেশন সংলগ্ন রাস্তার হোটেলে ভাত খেয়ে নেয় । সবজি ভাত। প্রতিদিন তো আর মাছ ,মাংস ,ডিম জোটে না। কতটুকুই বা বেচাকেনা হয়। বাড়িতে দুটো বাচ্চা মেয়ে আছে । ওদের জন্য সপ্তাহে একদিন একটু মুরগীর মাংসের ছাঁট নিয়ে যায়। মেয়ে দুটো বড্ড ভালোবাসে খেতে। স্কুলের মিড ডে মিলে একটা করে ডিম দেয়। দুটো ডিম মেয়েরা লুকিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসে আধখানা করে চারজন মিলে খায় রাত্রে । ওইটুকু মেয়েও বোঝে তারা গরীব।

    মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, এক পিস চিকেন, ভাত খাওয়ার সময়। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনা। কোনরকমে ভাতগুলো মুখে ভরে। মুড়ির বাক্স সমেত ঝোলা নিয়েই স্টেশনের বাইরে ৪/৫ জন হকারকে মসলা মুড়ি বানিয়ে দিয়েই স্টেশনে ছোটে লোকাল ধরতে। স্টেশনের বাইরে ওই হকার গুলো প্রতিদিন ওর কাছে মসলা মুড়ি কিনে খায় দুপুরে। অনেকদিন হয়ে গেল একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে ওদের মধ্যে। পুজোর আগে স্টেশনের বাইরে ১জন হকার মেয়ে দুটোর জন্য জামা দেয় বিনামূল্যে। বেশ কয়েক বছর দিয়ে আসছে। ‌

    আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। কাল রাতের ঝড়ে ঘরের টালির ছাদে কটা টালি ভেঙেছিল। প্রচুর বৃষ্টি তে ঘর প্রায় জলে ভেসে গেছে। সারারাত চারটি প্রাণীর কোন ঘুম নেই। কোথাও বালতি কোথাও হাড়ি কোথাও থালা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। তাই বুঝি নিজেই ওদের বস্তি থেকে একটা মই জোগাড় করে টালি গুলো বসাবে। ধার করেই টালি লাগাবে এখন। অমর দা বলেছেন পরে টাকা দিলেই হবে।

    অন্য মনস্ক হয়ে ট্রেন থেকে রানিং অবস্থায় নামতে গেলে বৃষ্টিভেজা প্লাটফর্মে পা হড়কে ট্রেনের স্লিপারের নিচে পা আটকে যায়। ফাস্ট প্যাসেঞ্জার স্টেশনে থামলে ,প্ল্যাটফর্মে মদন অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছে। বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ মারাত্মক জখম হয়েছে। হাড় ভেঙে মাংস ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে। আরপিএফ বা অন্যান্য হকাররা ছুটে আসে। মদন কে সরকারি হসপিটালে ভর্তি করা হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও অপারেশন করে মদনের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে বাদ দিতে হয়। এর কিছু দিন পরই অতি মারির প্রকোপ শুরু হয়। লকডাউন চলতে থাকে। বাস-ট্রেন সব বন্ধ। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। বাড়ি ফিরে এসে মদন বিছানায়। সুস্থ হতে মাস খানেক সময় লাগবে।

    সংসারের বেহাল অবস্থা। দুবেলা দুমুঠো ভাত জোটানো এখন চিন্তার। ওর স্ত্রী দু বাড়ির ঝিয়ের কাজ করতো। কিন্তু ছোঁয়াচে রোগের কারণে বাড়ির মালিক বারণ করেছে কাজে আসতে। ওর মধ্যে এক বাবু বলেছেন তোকে কাজে আসতে এখন হবেনা । আমি মাস মাইনে দিয়ে দেবো। ওর অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়ে বস্তির আরো তিন চার জন হকার বন্ধু এসেছিল, যে যা পেরেছে কিছু কিছু অর্থ সাহায্য করেছে। কিছুদিন আগে একটা এনজিও এসে চাল ডাল তেল নুন দিয়ে গেছিল। ওই কটা দিন মোটামুটি চলেছে। রেশনের ফ্রী চাল ও গম পেয়েছে তাই এক বেলা কোন রকমে কিছু মুখে তুলতে পারছে। কিন্তু তারপর কি হবে , এই ভেবে ভেবে মদনের রাতের ঘুম উড়ে যাচ্ছে। একটা কৃত্রিম পা লাগাতে গেলেও অনেক খরচা। কোথায় থেকে পাবে এত টাকা!

    হকার বন্ধু অজয় আজ সন্ধ্যায় এসেছিল মদনের সঙ্গে দেখা করতে। লকডাউনে তার ও তাদের মত হকারদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। বস্তির কয়েকজন ছোঁয়াচে রোগের কারণে মারা গেছে। ওদের এক হকার বন্ধু গতকাল রাতে হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। অবস্থা খুব একটা ভাল না। মদন ক্র্যাচ নিয়ে ওকে এগিয়ে দেয়। বলে লকডাউন উঠে গেলে আর ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করতে পারবে না। অজয় বলে স্টেশনের বাইরে তুই একটা ব্যবসা কর। হকার ইউনিয়নের সেক্রেটারিকে বলে একটা জায়গার ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে। আমি অশোকদা কে বলে দেব।মহাজনকে বলে ব্যবসার কিছু মালও বিনা অ্যাডভান্সে করে দেবো। তুই এত চিন্তা করছিস কেন ? মদন। আমি তো তোর বন্ধু, এখনো বেঁচে আছি !…..

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প- সাংসারিক (দ্য স্টোরি অফ এ ফ্যামিলি ভায়োলেন্স)

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।

     

    সাংসারিক (দ্য স্টোরি অফ এ ফ্যামিলি ভায়োলেন্স)
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    সংসার একসাথে থাকার অঙ্গীকার। সং এবং সার শব্দের গভীর‌ অর্থ রয়েছে। সেই সত্য যুগ থেকে চলে আসছে সাংসারিক নিয়ম। পরিণত বয়সের পর একটি যুবক যুবতী বিবাহবন্ধনে ,সামাজিক জীবনে আবদ্ধ হয়। দাম্পত্য জীবনে কলহ কখনো কখনো গার্হস্থ্য অশান্তির সূচনা হয়।

    ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স তিন ধরনের হতে পারে ১) শারীরিক ২) মানসিক ৩) অর্থনৈতিক।

    শুধুমাত্র পণ নয়, কোনও অভিসন্ধি বা স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে কিংবা কোনও অপরাধ প্রবণতাকে তৃপ্ত করতে গিয়ে কেউ যদি কারও উপরে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ভাবে অত্যাচার চালান বা কেউ যদি কোনও রকম যৌন হিংসার শিকার হন অথবা তাঁর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে কোনও অপরাধমূলক কাজে লাগানো হয়, তাহলে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতাকে গার্হস্থ্য হিংসা বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হিসেবে গণ্য করা হয় Domestic Violence Act 2005 অনুসারে। ঘটনা কখনো চোখের সামনে আসে, কখনো আসে না।

    আদালত চত্বরে অন্যমনস্ক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে অনির্বাণ। মনটা ভারাক্রান্ত আজ তার জীবনের একটা অধ্যায় শুরু বা শেষ হবে। নিজেকে সামলে নিয়ে অতীতের কিছু স্মৃতি ভিড় করে মনে। অনির্বাণ সৎ নির্ভীক পেশায় চাকুরীজীবী , বয়স বছর তিরিশের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।

    ৪ বছর আগের কথা, অনির্বাণ বিবাহের জন্য অনলাইন ম্যাট্রিমনিতে একটি আইডি খোলে। ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট থেকে একজন যুবতী বারবার ফোন করে। স্যার অফার চলছে। আপনি ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে ভিজিট করেছিলেন। কিছুক্ষণ কথোপকথনের পর ৫০০০ টাকায় আপনার আইডিটি খুলে দিতে পারব যদি আপনি রাজি থাকেন। পুজোর পরে এরকম অফার আর থাকবে না। ‌ বাবা ৩০ বছর আগে মারা গেছেন , ওর তখন মাত্র ২ বছর বয়স ছিল। বর্তমানে সংসারে দুটি মানুষ মা ও ছেলে। আত্মীয়-স্বজন থাকলেও দূরে থাকে , তাই আত্মীয়তায় অনেক ব্যবধান থেকে গেছে।

    অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসে মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে। দিন দুই পর ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট এ আইডি খুলে নেয়। ছবি কন্টাক্ট নম্বর সমেত অনেক বিবাহযোগ্যা মেয়ের প্রোফাইল দেখতে পায়। দিন সাতেকের মধ্যে একটি প্রোফাইল দেখে পছন্দ হয়, ফোন করে। ফোনে প্রাথমিক কথাবার্তা বলে । ব্যস্ততার কারণে রবিবার দেখে মেয়ে দেখতে যায়। দু’পক্ষের আলোচনার পর কিছুদিনের মধ্যেই মধ্যবিত্ত ওই পরিবারে বিবাহ হয়। স্ত্রী শিক্ষিতা, সুন্দরী।

    অনির্বাণ মনে মনে খুব খুশি। কিন্তু তাঁর সুখ স্থায়ী হল না। বিবাহের বর কনে বিদায়ের সময় সামান্য কারণে কিছু অশান্তি হয় অনির্বাণের আড়ালে। বিবাহের এক মাসের মধ্যেই সংসারের চরম অশান্তিতে তাসের ঘরের মতো স্বপ্নগুলো ভেঙে যায়। ওর স্ত্রীর আচার-আচরণ খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না। সংসারের কোনো কাজকর্ম করত না। সারাদিন ঘন্টার পর ঘন্টা কার কার সঙ্গে যেন ফোনে কথা বলতো । সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও ব্যস্ত থাকত। ফোনে কার সাথে কি কথা বলতো পাশ থেকে শোনা যায় না।বিয়ের আগে একটি ছেলের সঙ্গে ৪ বছরের বেশী সম্পর্ক ছিল নন্দিতার । ছেলেটির বাড়িতে যাতায়াত ছিল। বিয়েও ঠিক ছিল ওই ছেলের সাথে এমনকি বিয়ে বাড়ি ভাড়াও হয়েছিল। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বিবাহটি ভেঙে যায়।

    সন্দেহবাতিক ,বদমেজাজী, স্বার্থপর,লোভী, কোন বিশেষণ ই যথেষ্ট ছিল না নন্দিতার জন্য।তাহলে কি মানসিক অসুস্থতা ছিল নন্দিতার?

    সম্পর্কের কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ পায় নন্দিতার কটূ কথায়। তার বয়স্কা শাশুড়িকে নখের আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করে একদিন। রক্ত বের হয়ে আসে। অনির্বাণ থানায় এফ আই আর করতে পারতো । কিন্তু বাড়ির বউ , মান-সম্মান ইত্যাদি চিন্তা করে পিছিয়ে যায় পরিবার। হাসপাতালে মায়ের প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরে আসে ।

    এরপর অনির্বাণ স্ত্রী শুরু করলো মানসিক অত্যাচার । অনির্বাণ কে ভয় দেখাত , ৪৯৮ এ মামলা করবে, জেলে পুড়বে।‌‌ কিন্তু কোনো দিন এমন কোনো আচরণ করেনি অনির্বাণ ,যে তাকে হাজতবাস করতে হয়। স্ত্রীর নিত্যনতুন আবদারে বিলাসিতায় অনির্বাণের হয়তো আয়ের থেকে ব্যয় বেশি হচ্ছিল। কিন্তু তাও কোন রকমে এডজাস্ট করে সংসার করছিল। সাধ্যমত স্ত্রী দাবি দেওয়া মেটানোর চেষ্টা করছিল। তুচ্ছ কারণে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত। অনির্বাণ এর সব থেকে প্রিয় ছিল মান সম্মান।

    নন্দিতা চেয়েছিল শাশুড়ী মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে। সংসার তাহলে পিছুটান বলে কিছু থাকবে না। ও স্বাধীন থাকবে নিজের মত। ইচ্ছে মত অনির্বাণ কে চালনা করবে। সংসারের মাথা হয়ে ছড়ি ঘোরাবে । কোন দায় দায়িত্ব নেবে না সংসারের। ইচ্ছে মত ঘুরতে যাবে, শপিং এ যাবে। যা খুশি তাই করবে। কিন্তু অনির্বাণ শিরদাঁড়া নোওয়া বার পাত্র নয়।

    সম্মানহানি ও তাকে বিপদে ফেলতে নন্দিতা ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন সব রকম চেষ্টা করতে লাগল। ফ্যামিলি কাউন্সেলিং সেন্টার এ অভিযোগ করলো। নির্দিষ্ট দিনে সেখানে উপস্থিত হয়ে ঘন্টাখানেক সেশন শেষ করে বাড়ি ফিরে এলো। কিন্তু আবার সেই এক ঘটনা। একদিন কথাকাটিতে নন্দিতা অনির্বাণকে এক চড় মারল। অনির্বাণ হতভম্ব কি করবে বুঝতে না পেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। ঘন্টা ২ পর বাড়ি ফিরল। কয়েকদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বাক্যালাপ থাকলো না। যোগাযোগ নেই এরকম আগে প্রায়ই হয়েছে । মাসে একবার করে বাপের বাড়ি যেত নন্দিতা। কখনো ১৫ দিন কখনো একমাস টানা থাকতো।

    ১ বছর এরকমই চললো। অবশেষে নন্দিতা থানায় মিথ্যা অভিযোগ করলো। এক সন্ধ্যায় থানা থেকে ফোন এলো, ইনভেস্টিগেশন অফিসার ডেকেছেন অনির্বাণকে ওর স্ত্রী অভিযোগে । প্রাথমিক কথাবার্তার পর কিছু তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষী সামনে রাখলো অনির্বাণ । তদন্তকারী অফিসার তখন বললেন , মশাই আপনি কি অন্ধ হয়ে বিবাহ করেছিলেন? আপনার স্ত্রী অভিযোগ জানাতে এসেছিল।‌ কয়েকমিনিট তাকে দেখে কথাবার্তা বলে তো সুস্থ মনে হলো না। অনির্বাণ বলল আমাকে গোপন করা হয়েছিল। কয়েক মিনিট দেখে আমরা কিছু বুঝতে পারিনি যখন মেয়ে দেখতে যাই। সরল বিশ্বাসে ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন এর কথাবার্তায় আচার-আচরণে বিশ্বাসই করতে পারেনি যে ঐরকম একটা মেয়ে ও জঘন্য পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক হবে।

    অনেক এডজাস্ট করার পরেও নিতান্তই নিরুপায় হয়ে অনির্বাণ এক সময় সম্পর্ক বিচ্ছেদের মামলার আবেদন করে এই মিথ্যা সম্পর্কের ইতি টানতে। বিগত কয়েক মাস হল ব্লাড প্রেসারের পেসেন্ট। । অনির্বাণ মন থেকে নন্দিতা কে ভালবেসে ছিল ,নন্দিতা ছিল তার স্ত্রীর থেকেও বেশি কিছু।

    হঠাৎ অনির্বাণ সম্বিৎ ফেরে আর্দালির ডাকে, কেস নাম্বার… হাজির হো… কাঠগড়ায় উঠলো। মাননীয় বিচারকের সামনে দুপক্ষের উকিলবাবু জোরদার সওয়াল জবাব করলেন।‌‌

    এর পর প্রায় তিন বছর যাবৎ বিবাহবিচ্ছেদের মামলার চললো। একসময় নন্দিতা মিচুয়াল ডিভোর্সে রাজি হয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করলো খোরপোষ এর নামে। অনির্বাণ দাস ওর পৈত্রিক সম্পত্তি, বাড়ি বন্ধক রেখে টাকা ধার নিয়েছিল চড়া সুদে।

    এই সমাজে নারীদের উপর শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের ঘটনা অনেক শোনা যায় । সংবাদ পত্রিকায় ও টিভিতে বধূ নির্যাতনের নানা খবর প্রকাশ হয়। কিন্তু পরিহাস এটাই যে স্ত্রী ইচ্ছা করলেই যখন তখন স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ (৪৯৮) কেস আনতে পারে। কিন্তু যদি উল্টোটা ঘটে স্বামী কিন্তু তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারে না। কিন্তু এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেখানে নিরীহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ওপর বৌমা অত্যাচার করে । স্বামীকে বাধ্য করে সম্পর্কের ইতি টানতে। খোরপোষ নিয়ে হয়তো কিছু অর্থ আদায় হয় ঠিকই কিন্তু সম্পর্ক ? সম্পর্কে তো আর ফিরে আসা যায় না? ভবিষ্যতেও হয়তো কারো সঙ্গে কারো দেখা হয় না। সম্পর্ক ভেঙে অচেনা হয় দুটি‌ মানুষ চিরদিনের জন্য আর এটা চলতেই থাকে আধুনিক সমাজ জীবনে…

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প- কেয়ার অফ ফুটপাথ

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।। 

     

    কেয়ার অফ ফুটপাথ
    -উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    প্রতিদিনের ন্যায় ভোরের সূর্যের আলো ফুটে উঠেছে। শহরের শুনশান পাকা রাস্তার তেমাথা মোড়ের ধারে একটা বড় ডাস্টবিন দেখা যাচ্ছে। জমাদার হয়তো আজ আসেনি । পৌরসভার ট্রাকের ও দেখা মেলেনি। তাই দুর্গন্ধ দূর থেকে নাকে আসছে। ডাস্টবিনের আশেপাশে খাবারের অনেক প্যাকেট এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কয়েক লক্ষ মাছি ভ্যান ভ্যান করছে। পাশের ফ্লাটবাড়িতে কারও বিয়ে ছিল, হরেক আলোর রোশনাই এখন মিট মিট করে জ্বলছে । সংক্রমনের আশঙ্কার ভয়ে হয়তো অনেকে নিমন্ত্রণ খেতে আসেননি ।খাবার বেড়ে গিয়ে অগত্যা ঠাঁই হয়েছে ওই ডাস্টবিনে। ডজন খানেক কুকুর সেগুলো নিয়ে টানাটানি করছে রাস্তা জুড়ে। লকডাউনে তাদেরও উপবাস চলছে বেশ কয়েকদিন। মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে ঘেউ ঘেউ করছে। মারামারিও করছে কে আগে খাবে। রাস্তার ব্রিজের নিচে থাকা ভিখারিনী ও তার ছোট্ট মেয়েটি ভোর থেকে একদৃষ্টে সেই দৃশ্য দেখছে । ব্রিজের নিচে তার স্বপ্নের অট্টালিকা। বস্তা ও ছেঁড়া চটের আস্তরণে দেওয়াল চারদিকে চারটি বাঁশের লাঠি পোঁতা আছে। পাশে একটি বহু পুরনো ভাঁজ করে রাখা পিচ বোর্ডের পেটি। তিনটি পোড়া কালো ইট ,উনুন হবে হয়তো । দুটি ভাঙ্গা টিনের থালা একটি গ্লাস, একটা দড়িতে টাঙ্গানো একটি শাড়ি ও দুটি নোংরা বাচ্চাদের জামা। ব্যস এই তার সংসার। পরনে শতচ্ছিন্ন শাড়ি । আংশিক লকডাউনে ট্রেন বন্ধ। স্টেশন ও বাস স্ট্যান্ড প্রায় ফাঁকা।অতি মাড়ির প্রকোপে এই ছবি প্রায় সকলেরই চেনা। আগে সারা দিনে ভিক্ষে করে যদি একশো টাকা রোজগার হতো এখন তা একটাকা ও হয় না। দুজনের গত দুইদিন ধরে উপবাস চলছে। দু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসেছিল সামান্য চাল ডাল তেল নুন আলু দিয়ে গেছিল। ওই দিয়ে গত তিন-চার দিন চলেছিল। কিন্তু এখন তীর্থের কাকের মতো রাস্তার দিকে দুজনে চেয়ে আছে করুণ দৃষ্টিতে। অপেক্ষা করছে কখন কুকুরগুলো পেট ভরে গেলে এখান থেকে চলে যাবে। উচ্ছিষ্ট কিছু যদি পাওয়া যায়। এখন এই ডাস্টবিনের খাবারই দুজনের বেঁচে থাকার রসদ । ছোট্ট মেয়েটি কাল রাত থেকে খাবারের জন্যে কেঁদে কেঁদে উঠেছিল। মেয়েটির হালকা জ্বরও রয়েছে। ভোরবেলায় ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে দু-একজন হেঁটে যাচ্ছে। মেয়েটির মা হাত বাড়ালেও মুখ ফিরিয়ে চলে গেল। ভিক্ষা দূরের কথা কেউ কাছেই এল না । মেয়েটি আবার বলল মা আমি যাব ওই কুকুর গুলোর কাছে যদি ওদের তাড়িয়ে দু একটা খাবারের প্যাকেট পাওয়া যায়। ওর মা নিষেধ করলো, একদম না। কুকুরগুলো হিংস্র তোকে কামড়ে দিতে পারে। ভুখা পেট তো আর লকডাউন মানে না। মেয়েটি বলল: মা একটু জল খাব ,জল দেবে। বালতির দিকে চেয়ে দেখল জল নেই। তুই একটু এখানে চুপ করে বসে থাক। আমি দেখি আশে পাশের কলে কোথাও জল পড়ছে কিনা। মেয়েটির মা বালতি নিয়ে চলে গেল। এবার মেয়েটি ছুটে গিয়ে হাাঁপাতে লাগল কুকুর গুলোর কাছে। একটি খাবারের প্যাকেট নিতে যাবে অমনি একটা কুকুর ওর দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করলো। হঠাৎ গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। লড়াই মানুষ বনাম পশুর। খাবারের জন্য লড়াই। বাঁচার লড়াই । কয়েক সেকেন্ডের লড়াইয়ে মেয়েটির হাত থেকে রক্ত ঝরছে। কুকুরটি তীক্ষ্ম দাঁত বসিয়েছে। মেয়েটির কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই । মেয়েটির মা দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে এক ছুটে সেখানে পৌঁছয়। রাস্তার ধারে পড়ে থাকা কয়েকটি ইটের টুকরো নিয়ে ছুুঁড়ে মারে। মেয়েটিকে রাস্তা থেকে কোলে তুলে নেয়। প্রচন্ড চেঁচামেচি করে মেয়েটিকে বকতে থাকে। তোকে বারণ করলাম এখানে আসতে। তুই শুনলি না আমার কথা। মেয়েটি এবার সজোরে কাঁদতে থাকে। মা খুব খিদে পেয়েছিল যে। মা লক্ষ্য করে খাবারের প্যাকেটটি মেয়েটির হাতে। সেটি তার কচি হাতের ছোট্ট মুুুঠোয় শক্ত করে ধরে রেখেছে। ওখান থেকে মেয়েটিকে কোলে করে কোনরকমে ছুটে চলে আসে নিজের আশ্রয়ে। মেয়েটির হাত থেকে রক্ত ঝরছে এখন কি করবে? কিভাবেই বা হাসপাতালে যাবে ? মা কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটিকে কোলে নিয়ে দৌড়ায় বড় রাস্তার দিকে। সামনে দেখে একটি বাস আসছে কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়। হাত দেখালেও বাসটি না থেমে প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে যায়। বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে মেয়েটির মা পিছন পিছন ছোটে । হঠাৎ রাস্তার ক্রসিং এ ছুটে আসা একটি গাড়ি সজোরে ধাক্কা মারে। বাচ্চাটিকে নিয়ে মেয়েটির মা ছিটকে পড়ে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। রাস্তার কালো পিচ লাল ।ওই রাস্তায় সকালে দু একজন লোক দাড়াল হাতে বাজারের ব্যাগ, মুখে মাস্ক ঢাকা। কাছে এসে কেউ কেউ মোবাইলে ছবি তুলছে। বাচ্চাটি ফুটপাতে পড়ে রয়েছে। ভদ্রমহিলার কোনো সাড়়া শব্দ নেই। বাচ্চাটির চোট লেগেছে। দুটি বৃহন্নলা দূর থেকে এক্সিডেন্টটা দেখে ছুটে আসে। একজন জলের বোতল খুলে মেয়েটির মায়ের মুখে জল দেয়। নাকের কাছে হাত রেখে দেখে নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা। না তার কোনো লক্ষণ নেই। সাহায্যের জন্য দু একজন কে এগিয়ে আসতে বললে জায়গাটা দ্রুত ফাঁকা হয়ে যায়। ১০০ ডায়ালে ফোন করলে ফোন রিঙ হয়েই যায়। বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে দ্রুতপায়ে হন হন করে হাসপাতালের দিকে এগিয়ে চলে আরেকজন। একটা জীবন শেষ হয়ে গেল চোখের সামনে, যদি এই নিষ্পাপ শিশুটি কে বাঁচানো যায় সেই প্রত্যাশায়।

  • গল্প,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    গল্প- ট্রাপ

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।

     

    ট্রাপ
    -উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

     

    অনন্যা সুন্দরী ও আধুনিকা। নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ফটোশুটের অ্যালবাম একজন স্বনামধন্য ডিরেক্টরের কাছে পাঠায়‌ বন্ধুর পরামর্শে। ডিরেক্টর ফোন করে ডেকে পাঠায় ঘরে। অনন্যা পৌঁছায়। কথাবার্তা হয়।

    মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা: আপকো মে জরুর চান্স দুঙ্গা। লেকিন এক বাত হে

    অনন্যা: জরুর স্যার। আপ জো বলো গে মে করুঙ্গি।

    মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা: সোজ সমঝকর বোল রহি হো না ।

    অনন্যা: হ্যা স্যার।

    মিস্টার ঝুনঝুনি ওয়ালা : আপ 30 অক্টোবর কো ইস পতে পর পহুচ জানা । আপকা ফাস্ট স্যুট হ্যায়।

    অনন্যা: ঠিক হে স্যার। মে চলতি হু।

    নির্দিষ্ট দিনে সময় মতো শুটিংয়ের ফ্লোরে পৌঁছায় অনন্যা।

    অনন্যা দেখে শুটিংয়ের জন্য সেট রেডি। মেকআপ সেরে তিন ঘন্টায় তিন চারটি শর্ট হয়।
    প্রথম দিনের প্রথম সুট ভালো ভাবেই শেষ হয় নায়িকার ভূমিকায়।

    মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা: আপকা নেক্সট সুট ফরেন মে হো হোগা।

    আপকে পাস টিকিট, ভিসা অর কুছ ডলার পহচ জায়েগা।

    অনন্যা খুব খুশি। নির্দিষ্ট দিনে এয়ারপোর্টে পৌঁছে ফ্লাইট ধরে গন্তব্যে পৌঁছেয়।

    মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা এয়ারপোর্টে রিসিভ করে ওকে একটা হোটেলে নিয়ে যায়। ড্রিংস এর সঙ্গে কিছু নিয়ে মিশিয়ে খাইয়ে দেয়।অনন্যা বুঝতে পারে না যে এটা একটা ট্রাপ।

    নেশার ঘোরে অনন্যা বুঝতে পারে কেউ ওর মর্যাদা হানি করছে। তার শরীরে তীব্র যন্ত্রণা র অনুভব করছে। কিন্তু বাধা দিতে পারছেনা। নেশার ঘোরে বারবার বলতে থাকে মুঝে ছোড় দিজিয়ে । মেরে সাথ আপ ইয়ে কিউ কর রহে হে। যন্ত্রণায় কাতর হতে হতে একসময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

    অনন্যা জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারে যে ও অন্য একটা ফ্ল্যাটে আছে। একজন ফিমেল সার্ভেন্ট রয়েছে। আর কেউ নেই। অনন্যা অনুভব করে একটা ট্রাপ পড়ে গেছে। এত তাড়াতাড়ি ওর মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা কে বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি। বিদেশে একা আসাও ঠিক হয়নি ।নায়িকা হওয়ার লোভ তাকে এত বড় বিপদে ফেলবে, এটা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি।
    অনন্যা অনেক চেষ্টা করে বাড়ি সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কিন্তু প্রতিবার বিফল হয়।
    লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যার চেষ্টা করতেও যায় কিন্তু এখানেও বিফল হয় মেড সার্ভেন্ট এর কড়া নজরদারিতে।

    মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা ওকে এইভাবে আটকে রাখে বেশ কয়েক মাস। অনন্যা মুক্তির জন্য কাতর প্রার্থনা করলেও কেউ আমল দেয়নি। সার্ভেন্ট সব সময় ওর পাশে থাকে । অনন্যা গর্ভবতী হয়েছে। যদিও এই সন্তান অবাঞ্চিত অনন্যা চায়ও নি। কিন্তু কিছু করার উপায় নেই সারাক্ষণ নজরবন্দি। বিদেশি ডাক্তার এসে নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান। অনন্যার প্রেগনেন্সিতে বেশকিছু কম্প্লিকেশনস রয়েছে। ডাক্তার ফোনের অপর দিকের ব্যক্তি কে বলেন। মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা দ্যা লেডি হ্যাভ কম্প্লিকেশনস।

    প্রসব বেদনা উঠলে ডেলিভারি টাইমে ওটি থেকে ডক্টর এসে জানায় যেকোনো একজন প্রাণে বাঁচবে! মা অথবা সন্তান।
    ডক্টর: মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট
    বেবি অর মাদার?
    মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা: অফকোর্স বেবি।

    কিছুক্ষণ পর একটি বাচছার কান্নার আওয়াজ শোনা যায়। নার্স এসে বাচ্চাটিকে ঝুনঝুন ওয়ালার কোলে দেয়।
    এবং জানায় যে তাঁর স্ত্রী মারা গেছে। অনন্যা কে স্ত্রী ভেবেছিল।

    একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিল অনন্যা।

    মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিতে পারেনি। মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা নবজাতককে কোলে নিয়ে খুব খুশি।

    মিস্টার ঝুনঝুনওয়ালা স্ত্রী বিয়ের দু বছর পর অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ঝুনঝুন ওয়ালার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তার প্রেমিকের সঙ্গে। সেই থেকে ঝুনঝুনওয়ালা কোন মেয়েকে বিশ্বাস করে না। তাঁর স্ত্রী পালিয়ে যাওয়ার খবর কেউ জানেনা, গোপন রাখেন তিনি।
    কিন্তু তার এই অগাধ সম্পত্তি ও বংশ রক্ষা কে করবে? অথচ তিনি পুনরায় বিয়েও করতে চান না। উপায় সারোগেট মাদার। কিন্তু ঝুনঝুনওয়ালার একটা সামাজিক স্ট্যাটাস আছে।
    তাই তিনি মনে মনে প্লান করেন…
    শেষমেষ ঝুনঝুনওয়ালার ইচ্ছা এতদিনে পূর্ণ হয়।

    আর অনন্যা!

    ওর মৃত্যুতে হয়তো এই অভিশপ্ত জীবন, ঝুনঝুনওয়ালার ট্রাপ থেকে থেকে চিরমুক্তি পায় …

  • কবিতা

    কবিতা- জামাইষষ্ঠী

    জামাইষষ্ঠী
    – উজ্জ্বল সামন্ত

    সংসারে আজ সাজো সাজো রব, যে গৃহে আছে বিবাহিত কন্যা,
    বছরের এই একটি দিন, বাঙালি পরিবারের নিয়ম নীতির নেই তুলনা।
    শাশুড়ি মা আজ ব্যস্ত ভীষণ উঠেছেন সেই কোন ভোরে।
    কখন না জানি মেয়ে জামাই এসে, কড়া নাড়বে ঘরের দুয়ারে।।

    শ্বশুর মশাই চা মুখে দিয়ে ছুটেছেন বাজারে সকালেই,
    ইলিশ, পাবদা, খাসির মাংসের ছ্যাঁকায় চোখে জল আসে অচিরেই।
    ব্যাগভর্তি বাজারে গলদঘর্ম, গিন্নির আদেশে যেন না হয় ত্রুটি!
    না হলে আর আস্ত থাকবে না কর্তার, চটকাবে গুষ্টির পিন্ডি।।

    জামাইয়ের ভুরিভোজ, শাশুড়ি তৃপ্ত নতুন গয়না বা শাড়িতে,
    মেয়ের মুখ আহ্লাদে আটখানা জামাইয়ের প্রাপ্তিতে।
    সদ্য বিবাহিত বা পুরোনো জামাই, আপ্যায়নে খামতি হয় না,
    মেয়ের সুখে বাবা-মার সুখী হওয়া, কার না মন চায়না।।

    ষষ্ঠীর ফোঁটায় বেঁচে থাক শাশুড়ি জামাইয়ের সম্পর্ক,
    শাশুড়ি মা-ই আসল এখন, নিজের মায়ের খোঁজ না নিলেও।
    বৌমা যদি কন্যা হয়ে, বৌমা ষষ্ঠী পালন হয় ঘরে ঘরে।
    সংসারের সব অশান্তি মুছে, সংসার আবার সুখের হবে।।

  • গল্প

    গল্প- ইনকাম

    “ইনকাম”
    -উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    আয় বা রোজগার একটা মানুষের ব্যক্তিত্ব, মনুষ্যত্ব, দায়িত্ব বা কর্তব্য নির্ধারণের মাপকাঠি ঠিক করে কি?

    পেশায় ব্যবসাদার অবনী বাবু তার একমাত্র কন্যা অহনার বিবাহের জন্য খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কন্যা কলেজ পাশ করেছে। মধ্যবিত্ত পরিবার তাই মেয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য আর খরচ করতে রাজি হননি আত্মীয়দের পরামর্শে। মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে এবার বিয়ে দিয়ে দাও। না হলে, আবার মেয়ে প্রেম ভালোবাসা করবে, না হয়তো কোথাও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে বংশের মুখে চুনকালি দেবে। এই কথা শুনে অবনীবাবুই সত্যিই খুব চিন্তিত। তার আর্থিক সঙ্গতিও খুব একটা নেই। দাবিহীন পাত্র, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনেই দেখতে পাওয়া যায়। পরে ফল হয় অন্য।

    অবনীবাবুর একটি‌ সম্ভ্রান্ত পরিবারের উচ্চ পদে সরকারী চাকুরীরত পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিবাহ দেওয়ার জন্য হন্যে হয়ে পাত্র খুঁজছেন। প্রায় জনা কয়েক ঘটকের সঙ্গে দেখা করে মেয়ের উপযুক্ত পাত্র খুঁজে দিতে বলেছেন। অনেক খোঁজাখুঁজি চলছে কিন্তু মনের মতো পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। অবশেষে শহরের কোন এক বনেদি পরিবারের একমাত্র ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিবাহ হয়। পাত্র উচ্চ পদে চাকরিরত। একটু বয়স্ক, মেয়ের থেকে প্রায় বছর পনেরো বড়। কিন্তু তাতে কি, পাত্র সরকারি চাকরি করে, সোনার আংটি আবার বাঁকা। ঘটক যোগাযোগ দিলে মেয়ের বাবা পাত্রের বাড়িতে দেখা করে মেয়ে দেখতে আসতে বলেন।

    প্রথা বা রীতি অনুযায়ী ছেলেরাই মেয়ে দেখতে আসে। কয়েক যুগ ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। পাত্রপক্ষ কন্যাকে পছন্দ করলো। দেনাপাওনা মোটামুটি দাবি দেওয়া যা ছিল অনেক আলাপ আলোচনার পর ঠিক হলো। একটি শুভ দিন দেখে মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন হল।

    শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অহনা কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারলো না। কারণ তার শাশুড়ির আরো অনেক পণ বা আরো উচ্চবংশের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে হতো এই প্রত্যাশা ছিল। সংসারের নানা খুঁটিনাটি নিয়ে কথায় কথায় কথা শোনাতো। মহিতোষ বাড়ির একমাত্র ছেলে একরোখা জেদী প্রকৃতির। কারো কথা কোন আমল দিত না কোনোদিনই। বাবা মা’রও অবাধ্য ছিল। এছাড়াও তার নানাবিধ চারিত্রিক দোষ ছিল। অফিস থেকে রোজ দেরি করে বাড়ি ফিরতো আকণ্ঠ মদ্যপান করে। কখনো কখনো বাড়ি ফিরতো না কাজের অজুহাতে।
    প্রথম প্রথম অহনার খুব রাগ হতো। মহিতোষের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলেও যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করতো। কখনো কখনো অশ্রাব্য গালিগালাজ বা গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করত না। যেন সংসারের নিয়মে একটু একটু করে অহনা শেষ হয়ে যাচ্ছিল মনে মনে। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে একথা বলতে পারছিল না।

    কিছু মাস পর কানাঘুষো শোনা যায় অফিসের এক কলিগের সঙ্গে মহিতোষ দীঘা মন্দারমনি এসব জায়গায় ঘুরতে যায়। কখনো কখনো এসকর্ট গার্ল কল করে নিয়ে যায়। সন্দেহ হয় একদিন, যখন ফোন আসে মহিতোষের মোবাইলে, তখন মহিতোষ বাথরুমে ছিল। ওপাশের নারীকন্ঠে‌ জানতে চাইছিল স্যর আপনি মন্দারমনির হোটেলে কখন চেক-ইন করবেন। অহনা কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেয়।
    মহিতোষ বাথরুম থেকে বের হলে‌ অহনা জিজ্ঞেস করে আজকে কখন বাড়ি ফিরবে? আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী, তোমার মনে আছে মহিতোষ?
    মহিতোষ তখন বললো, চেষ্টা করছি তাড়াতাড়ি ফেরার।
    এই কথা শুনে অহনা মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু তার খুশি দীর্ঘস্থায়ী হলো না মহিতোষের ফোনে। রাত্রি তখন দশটা, মহিতোষ ফোনে বলে বাড়ি ফিরতে পারছি না। অফিসের কাজ পড়ে গেছে পরশু ফিরবো।
    অহনার বিশ্বাস এক নিমেষে ভেঙে যায় তাসের ঘরের মতো।

    তারপর দিন ওর বাবা মাকে চিঠি লিখে জানায় যে তাকে যেন এসে নিয়ে যায়। দিন সাতেক পর অবনীবাবুই এসে মেয়েকে নিয়ে যান। অবনীবাবু স্ত্রী মেয়ের চোখ মুখ দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেন। একান্তে মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানেন যে তার বিবাহিত জীবন সুখী নয়। “মা আমার পক্ষে আর সংসার করা সম্ভব নয়। তোমরা তোমার মেয়েকে চাও না আমার সংসার চাও?” অহনার মা অনন্যা আর কোন উত্তর দিতে পারেননি।

    বছর দুয়েকের মধ্যে মেয়ের মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে যায়। অহনা এই দু’ বছরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি জুটিয়ে নেয়। অবনীবাবু ও অনন্যা দেবী খুবই চিন্তিত মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে। ভবিষ্যতে একা একা মেয়ে কি করবে, তাদের অবর্তমানে! মেয়ের মন বুঝতে চায়। অহনা বলে ওসব পরে হবে।

    মাসখানেক পর অহনা ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট ও খবরের কাগজ একটি বিজ্ঞাপন দেয়।
    বিজ্ঞাপনটি এরকম ছিল:
    শিক্ষিতা, স্লিম, ফর্সা, ৫’৩”, বয়স২৭+, কন্যা রাশি, মিথুন লগ্ন, ব্লাড গ্রুপ এ +পাত্রীর জন্য উপযুক্ত সুশিক্ষিত সরকারি/বেসরকারি উচ্চপদে আসীন (বেতন ন্যূনতম মাসিক ৫০০০০/-) পাত্র কাম্য। নিচের মোবাইল নাম্বারে *******যোগাযোগ করুন!

  • কবিতা

    কবিতা- বৃষ্টি ভেজা

    বৃষ্টি ভেজা
    -উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    উষ্ণতম দিনে মুষলধারে বৃষ্টিতে ভেজা দুজনে,
    ঠান্ডা হাওয়ায় জুড়িয়ে মন কোমল ছোঁয়া পেয়ে,
    ছাতা নাই বা থাকুক আমার বুকে মাথা রাখবে,
    বৃষ্টিতে প্রেম ভিজবে আরো একটু সময় অবসরে।

    বৃষ্টির ধারা ছুঁয়ে যাবে তোমার ঠোঁটের উষ্ণতা,
    ভিজে শাড়ির আঁচলে ঢাকো নিজেকে লজ্জায়,
    বর্ষার সঙ্গে প্রেম কেন নিবিড় সম্পর্কে জড়ায়,
    বৃষ্টির ফোঁটা আগুনের ফুলকি বুকে জ্বালা ধরায়।

    মেঘের গর্জন বিদ্যুতের ঝিলিকে এলে কাছাকাছি,
    বৃষ্টির সন্ধানে সুখী যেমন সাধের চাতক পাখি,
    দমকা হাওয়ায় এক লহমায় বুজে এলো বুঝি আঁখি,
    নিশ্চিন্তে ভালোবাসার আশ্রয় খোঁজে সুখানুভূতি।

    বৃষ্টি ভেজা বিকেলে গোধূলির আলো ছায়া,
    চোখের কালো কাজল ধুয়ে অন্ধকার ঘনায়,
    ঝিঁঝিঁ পোকা আর জোনাকিদের আনন্দ উল্লাস,
    মুহূর্তরা প্রহর গোনে মনে মেঘবালিকার নিঃশ্বাস…

  • কবিতা

    কবিতা- আঙুল

    আঙুল
    -উজ্জ্বল সামন্ত

    যার দিকে তুলছো আঙুল একটি সোজা দোষ ঢাকতে
    তিনটি আঙুল তোমার দিকে একটি দেখো ওপরে আছে
    তোমার দিকের তিন আঙুল দিক দর্শনে বলতে চায় কি?
    ঠিক- ভুল যাই হোও ওপরে ঈশ্বর দেখছেন তা ঠিকই

    আঙুল তোলা খুব সহজ স্বার্থে যখন আঘাত লাগে
    নিজের দোষ কেউ দেখেনি অপরকেই দোষী ভাবে,
    ঠাকুরের নামেও রাজনীতি রঙ মাখে শ্লোগানের বুলি
    আমজনতার দুঃখ কষ্ট ভবিষ্যতেও থাকবে এড়িয়ে চলি।

    মানুষ মানুষের জন্য, সমাজের দায়বদ্ধতা ভুলে গেছি
    সমাজ যদি স্বার্থপর হয় মানবিকতার ঠাঁই কোথায়, বলো দেখি ?
    হাতের আঙুল পাঁচটি যেমন সমান নয় তাই মুঠোয় শক্তি
    নীতি বাক্য বইয়ের পাতায় বিবেক কি কখনো দেয় উঁকি?

    একটা আঙুলের চাপে ভোট পড়ে একটা আঙুলেই টিপছাপ
    একটা আঙুল বডড বোকা প্রতিশ্রুতিতে করে বিশ্বাস
    একটা আঙুলের নির্দেশেই নির্ভর ভবিষ্যত নীতি জীবন জীবিকা
    একটা আঙুলের বিশ্বাসেই লুুুকিয়ে আগামীর ইতিকথা…

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- আয়না

    আয়না
    – উজ্জ্বল সামন্ত

     

     

    আয়নার সামনে ব্যক্তিটি উপস্থিত হয়েছেন। নিজের মনে কি যেন বিড়বিড় করছেন। যেন, ঠিক ও ভুল পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়া চলছে। কখনো ব্যক্তিটি হাসছেন সদর্পে বুক ফুলিয়ে। আবার কখনো মুখ বিকৃত করে কিছু আড়াল করতে চাইছেন, বা মেনে নিতে অস্বীকার বা কুন্ঠিত বোধ করছেন, যখন আয়না চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কার কাছে? কেনই বা করছেন? লড়াইটা তো একান্তই ব্যক্তিগত। বিবেক এমনই এক অদৃশ্য আয়না, যার কাছে কোন কিছুই লুকানো যায় না। সত্যিই বোধহয় তাই! আমরা বোঝাতে ব্যস্ত, বুঝতে নয়।

You cannot copy content of this page