• অণু গল্প

    অণু গল্প- মুক্তি

    মুক্তি
    – জয়তী মিত্র

    আমার ভুল শুধরে নেবার একটা সুযোগ আমাকে দাও তিথি আর এই জীবনে তোমাকে আমার থেকে আলাদা করবো না, কথা দিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আমার অন্যায়ের জন্য খুব লজ্জিত, তৃষার মোহে অন্ধ হয়ে আমি আমার নিজের চরম সর্বনাশ করেছি আর এমন হবে না, কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো রাহুল।
    রাহুল আর তিথির এক বিয়ে বাড়ীতে আলাপ। তিথির বান্ধবী মিলির মাসতুতো দাদা রাহুল। মিলি সুন্দরী, শিক্ষিতা, স্মার্ট। অপরদিকে রাহুলও সুদর্শন, জিম করা পেটানো শরীর। প্রথম দেখাতেই দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে। তারপর ফোন নম্বর আদান, প্রদান হবার পর বছর খানেক চুটিয়ে প্রেম পর্ব চলে দুজনের। তারপর দুই বাড়ির উপস্থিতিতে দুজন সাত পাকে বাঁধা পড়ে।
    রাহুল একটি বেসরকারি কোম্পানিতে উচ্চপদে চাকরী করতো, তিথি স্কুল শিক্ষিকা, দুজনের বিয়েতে কোনো বাড়ি থেকেই আপত্তি ছিল না।
    বিয়ের পর বেশ সুখেই চলছিল তাদের জীবনযাত্রা। বিদেশে গিয়ে দুজনে হানিমুনও সেরে এসেছে। দুজন, দুজনকে একবারে চোখে হারাতো।
    এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তিথির কপালে। বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যেই রাহুলের জীবনে প্রবেশ করে তৃষা। তৃষা রাহুলের কলিগ। আধুনিকা, সুন্দরী। ভীষণ গায়ে পড়া মেয়ে। সারাক্ষণ রাহুলের গায়ে এটুলির মত লেগে থাকতো। তার রূপে ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে রাহুল।
    ক্রমশ তিথির সাথে রাহুলের দূরত্ব বাড়তে থাকে। প্রায় দিন রাহুল দেরি করে বাড়ি ফেরে। তিথি জিজ্ঞাসা করলে দায় সারা উত্তর দেয়। তিথিকে আর আগের মত ভালবাসে না। তিথির সন্দেহ ক্রমশ বাড়তে থাকে। একদিন সকালে রাহুলের ফোনে মেসেজ এলো, ডার্লিং আজ তাহলে আমরা দুদিনের জন্য বেড়াতে যাচ্ছি বলো, আমার গোছগাছ সব হয়ে গেছে, আমি রেডি, তাহলে তুমিও রেডি হয়ে চলে এসো, অফিসে দেখা হচ্ছে।
    রাহুল তখন স্নান করতে গিয়েছিল। মেসেজটা দেখে তিথি চুপ করে রইলো, কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলো না। রাহুল অফিস যাবার সময় বলে গেল দুদিন অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছে। শুনে তিথির মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। রাহুল চলে যাবার পর কিছু জিনিস নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল।
    রাহুল ফিরে এসে তিথিকে নিতে এলো। তিথি আর রাহুলের কাছে ফিরে যেতে চাইলো না। তিথি যে সব জেনে গিয়ে ছিল সেটা রাহুল ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। তিথি মেসেজের সব কথা রাহুলকে জানিয়ে বললো, একজন প্রতারকের সাথে জীবন কাটানোর চাইতে একা থাকা অনেক ভালো। তোমার সাথে আর এক মুহূর্তও আমি থাকতে চাই না। আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়ে দেব। আজ এই মুহূর্ত থেকে আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম। এখন এসো, আমার কিছু কাজ আছে, বলে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল তিথি। দু’চোখে তিথির শ্রাবণের ধারা নামতে লাগল, বুকের ভিতরে একটা চাপা কষ্ট তিথিকে দুমড়ে, -মুচড়ে দিতে লাগল। রাহুলকে যে তিথি ভীষণ ভালোবাসে।

  • গল্প

    গল্প- পুনর্মিলন

    পুনর্মিলন
    – জয়তী মিত্র

     

     

    আজ রঞ্জন আর তানিয়ার ডিভোর্স হবে। সকাল সকাল দুজনেই হাজির আদালত কক্ষে। তানিয়ার সাথে তার মা আর ছেলেও আছে। ছয় বছরে সম্পর্কটা এতটাই তিক্ত হয়েছে যে কেউ কারোর মুখ পর্যন্ত দেখছে না। এতদিন ছেলের মুখ চেয়ে সব সহ্য করেছে তানিয়া, আর নয়।

    অথচ ভালোবেসে দুজনে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর মোটামুটি ভালোই চলছিল দুজনের জীবন যাত্রা। তারপর শুরু হয় দুজনের মনোমালিন্য। তানিয়া চেয়েছিল ছোট্ট একটা বুটিক খুলবে, সেটা রঞ্জনের পছন্দ নয়। বুটিকে মন দিলে সংসার,সন্তানের দিকে ঠিক মত নজর দেওয়া যাবে না।
    সেই নিয়েই শুরু দুজনের ঝগড়া। এমনিতেই তানিয়া খুব অগোছালো, জিনিসপত্র ঠিক ভাবে গুছিয়ে রাখে না। তাতে রঞ্জন কটূক্তি করে বলতো, একটা সংসার ঠিক মত গুছিয়ে রাখতে পারে না সে করবে ব্যবসা। মাথায় আগুন জ্বলে যেত তানিয়ার। শুরু হয়ে যেত ঝামেলা।
    আগের সেই প্রেমিক রঞ্জন আর স্বামী রঞ্জনের মধ্যে অনেক তফাৎ। প্রেম করার সময় কত মিষ্টি কথা, আর এখন মিষ্টি কথাগুলোই ভীষণ কর্কশ লাগে শুনতে।
    চাকরী সূত্রে রঞ্জনের সাথে প্রবাসে থাকত তানিয়া। সেখানে মাঝে মাঝেই গিয়ে থাকত তাদের বাবা-মায়েরা। শাশুড়ি মায়ের সাথে একদম বনিবনা ছিল না তানিয়ার। উনি আসার কথা শুনলেই তানিয়ার মেজাজ উঠত সপ্তমে। আসলে তানিয়ার শাশুড়ি মা-র খুব পরিষ্কার বাতিক আছে। উনি এসে তানিয়ার কাজের খুঁত ধরতেন। শুরু হতো দুজনের মনোমালিন্য। আবার তানিয়ার মা-ও মেয়ের সংসারে খুব নাক গলাত। তাই নিয়ে রঞ্জনের সাথে ঝামেলা লাগত তানিয়ার। তারপর আরো নানা রকম খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে দুজনের গন্ডগোল লাগত। তানিয়া বলতো, তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমার বান্ধবীরা কত স্বাধীন ভাবে রয়েছে, আজ এর বাড়ি পার্টি,‌ কাল ওর বাড়ি। কত আনন্দ করে ওরা। আর আমি কোথাও যাবো বললেই তোমার মুখ হাঁড়ি হয়ে যায়।
    ওদিক থেকে রঞ্জন বলে, গেলেই পারো কে বারণ করেছে?
    সত্যি প্রেম করা এক জিনিস আর এক ছাদের নিচে সংসার করা খুব কঠিন বিষয়।
    স্বামী-স্ত্রীর এইসব ঝগড়ার মাঝে পড়ে তাদের একমাত্র সন্তান অর্ণ-র খুব খারাপ অবস্থা। ওইটুকু ছেলে পাঁচ বছর বয়স। দুজনকে বলে, তোমরা কেন চিৎকার করছো, আমার ভয় লাগছে.. বলে কান্না শুরু করে দিত।
    ছেলের মুখ চেয়ে দুজনেই চুপ করে যেত। ছেলে তাদের প্রাণ ছিল। একদিন ঝগড়া হতে হতে গায়ে হাত তুলেছিল রঞ্জন। আর আর এক মিনিটও দেরি করেনি তানিয়া। পরদিন ছেলে নিয়ে বাপের বাড়ি পৌঁছে গেছিল। শ্বশুর বাড়ির লোক তানিয়াকে দোষ দিয়েছিল, আর বাপের বাড়ির লোক জামাইকে দোষারোপ করেছিল। দুই বাড়ির মধ্যেই সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

    যথা সময়ে বিচার হয়ে রায় বের হলো। বিচারক বললেন- ‘ছেলে তার মায়ের কাছে থাকবে, আঠেরো বছর বয়স হলে তারপর ছেলে ঠিক করবে সে কার কাছে থাকবে?’

    রায় শুনে ডুকরে কেঁদে উঠেছিল রঞ্জন। ছেলেকে ছেড়ে কিছুতেই সে থাকতে পারবে না। ওদিকে ছেলেও কান্না জুড়েছে বাবা-মা দুজনের কাছেই সে থাকবে। বিচারক তখন দুজনকেই বললেন, সম্পর্ক নষ্ট হতে এক মিনিটও লাগে না, কিন্তু সেটা টিকিয়ে রাখাটাই কঠিন। আমার মনে হয় আপনাদের সন্তানের জন্য সব ভুলে আবার একসাথে সংসার করা উচিত। বিচারকের কথা শুনে তানিয়ারও চোখে জল। সত্যি তো তাদের মধ্যে যত ঝগড়া থাক, তাদের ছেলের তো কোনো দোষ নেই। তাদের দুজনের তো ছেলের জীবন নষ্ট করার অধিকার নেই।। রঞ্জন তানিয়াকে বললো,‌ ছেলের জন্যই না হয় আবার একসাথে মিলে মিশে থাকব, আর কখনো ঝগড়া করব না।
    তানিয়ার চোখেও জল, রঞ্জনের কাছে গিয়ে বললো, চলো বাড়ি যাই, নিজের ঘরে, তোমাকে ছাড়া আমি যে আর থাকতে পারছি না। ছেলের হাত ধরে তখন দুজনেই বাড়ির পথে রওনা হলো। বিচারকের মুখে হাসি, যাক একটা পরিবারকে তো বাঁচানো গেলো। একটা ভেঙে যাওয়া সংসার আবার জোড়া দিতে পেরে বিচারকও ভীষণ খুশি হলেন।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- ভাত ডে

    ভাত ডে
    – জয়তী মিত্র

     

     

    পাড়ার সবাই ওদের রকবাজ ছেলে বলেই জানে। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে সব বেকারের দল। বাপের হোটেলে খাচ্ছে আর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু এই ছেলেগুলোই পাড়ার সকলের অপদে-বিপদে হাজির হয়।

    এবার সরস্বতী পূজোতে বেশ ভালো রকম চাঁদা উঠেছিল। রাজু, সুনু, বুবাই, রনি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে পুজোর দায়িত্ব নিয়ে বেশ ভালোভাবেই পুজোর আয়োজন করে। রাজুর কাকা বাইরে চাকরী করে, অনেকদিন বাদে বাড়ি ফিরেছে, তার থেকে একটা মোটা টাকা চাঁদার আবদার করছে তার ভাইপো। কাকাও খুশি মনেই সেই আবদার রেখেছে। পাড়ার সব বাড়ীতে ঠাকুরের ভোগ প্রসাদ বিতরণ করেছে। পাড়ার,কাকু, কাকিমারা তাতে বেশ খুশী হয়েছে।
    বেশ কিছু টাকা বাঁচিয়ে সবাই মিলে ঠিক করে খাল পাড়ের যে বস্তিটা আছে সেখানে একদিন গরীব মানুষগুলোকে খাওয়ানো হবে। মেরে কেটে সেখানে গোটা চল্লিশ জন লোক হবে।
    একটা দিন গরীব মানুষগুলোকে ডিমের ঝোল আর ভাত খাওয়ালে খুব খুশি হবে বস্তির মানুষগুলো। ওরা তো ঠিক মত খেতে পায় না।
    রাজু সকলের উদ্দেশ্যে বললো, শোন আজকাল কত ডে পালন করা হচ্ছে, যতসব বড়লোকি চাল, আর আমরা ভাত ডে পালন করে গরীবের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি, ,চল সবাই বাজার করতে যেতে হবে।
    তাদের আয়োজিত এই মহৎ উদ্দেশ্য দেখে পাড়ার সকলে খুশি হয়ে বেশ কিছু আরো টাকা দিল। ছেলের দল দ্বিগুণ উৎসাহে রান্নার তোড়জোড় করতে লাগল। তারপর বস্তিতে গিয়ে সবাইকে বসিয়ে ডিমের ঝোল, ভাত খাওয়াল। পাড়ার এক বয়স্কা ঠাকুমা মিষ্টির টাকা দিলেন। শেষ পাতে মিষ্টি পেয়ে বস্তির বাচ্চাগুলোর চোখে, মুখে খুশির ঝলক ছড়িয়ে পড়লো।
    গরীব মানুষগুলো এক বেলা পেট ভরে খেতে পেয়ে দু’ হাত তুলে ছেলের দলকে আশীর্বাদ করলো।
    পাড়ার সবাই ছেলেগুলোকে জড়িয়ে আদর করে বললো, তোরা আমাদের পাড়ার গর্ব, চিরকাল এমনি থাকিস তোরা।
    ‘ভাত ডে’ পালন করে গরীব মানুষ মানুষগুলোর একটা দিন খাওয়াতে পেরে ভীষণ আনন্দ পেল ছেলের দল।

  • গল্প

    গল্প- কুঁড়ে ঘরের বিবাহ বার্ষিকী

    কুঁড়ে ঘরের বিবাহ বার্ষিকী
    – জয়তী মিত্র

    চারশো টাকা দিয়ে ফুটপাত থেকে একটা ছাপা শাড়ি কিনে চাঁপাকে দিয়ে দুলাল বললো, এই শাড়িটা তোমার জন্য নিয়ে এসেছি দেখ তো পছন্দ হয়েছে কি না। স্বামীর হাতে হলুদ রঙের ছাপা শাড়িটা দেখে আনন্দে জড়িয়ে ধরলো দুলালকে।গায়ে ফেলে শাড়িটা উল্টে পাল্টে দেখে খুব খুশি হয়ে চাঁপা বললো, খুব পছন্দ হয়েছে। দুলাল বললো, আজকে আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আজকের দিনে তুমি আমার এই কুঁড়ে ঘরে এসেছিলে।
    দুলাল একজন দিন মজুর। দিন মজুরী করে দিনের বেলায় আর রাতে খাবারের দোকানে কাজ করে কিছু রোজগার করে তাই দিয়ে ডাল, ভাত জুটে যায়। আর চাঁপা খুব লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে। ঘর সংসার সুনিপুণ হাতে সামলে রাখে। অভাবের সংসারে টাকা না থাকলেও ভালোবাসার অভাব নেই।
    এত ভালো একজন ভালোবাসার মানুষ আসবে তার জীবনে একথা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি চাঁপা। সেই ছোট বেলায় বাবা, মাকে হারিয়ে মামার বাড়িতে ঠাঁই হয়েছিল। মামা মানুষটি খুব একটা খারাপ ছিল না। চাঁপাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসতো। কিন্তু মামী তাকে কোনোদিন মেনে নেয় নি। দিনের পর দিন মামীর লাঞ্ছনা, কটূক্তি সহ্য করতে না পেরে একদিন চাঁপা জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে নিজেকে শেষ করে দিতে গিয়েছিল।
    দুলাল সেই সময় সেখানে স্নান করতে গিয়ে চাঁপাকে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচায়। তারপর সুস্থ হলে চাঁপার জীবনের দুঃখের কাহিনী শুনে তাকে বিয়ে করতে চায়। দুলালও খুব একা ছিল বাবা, মা কেউ ছিল না। এক দিদি ছিল, সে ভাইয়ের কোনো খোঁজ নিত না।

    মন্দিরে গিয়ে চাঁপাকে বিয়ে করে নিয়ে এসে তার ছোট কুঁড়েঘরে তোলে দুলাল। দুলালের শূন্য জীবনটাও ভালোবাসায় ভরিয়ে দেয় চাঁপা।

    শাড়িটা হাতে নিয়ে আলনায় গুছিয়ে রাখলো চাঁপা, তারপর একটা পাঞ্জাবী স্বামীর হাতে দিয়ে বললো, এটা তোমার জন্য কিনেছি, তুমি পাঞ্জাবী পড়তে তো খুব পছন্দ করো তাই আজ এটা তোমার উপহার।
    কিন্তু চাঁপা তুমি টাকা কোথায় পেলে?
    চাঁপা বললো, পাশের বাড়ির বৌদির কাছে কদিন হোম ডেলিভারির রান্নার কাজে সাহায্য করে দিয়েছি, বৌদির রান্নার লোক ছুটি নিয়েছিল। বৌদির কাছে কাজ করে টাকা পেয়ে কিনেছি। দুজন দুজনের কাছে উপহার পেয়ে ভীষণ খুশি হল। এই ভালোবাসা টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
    চাঁপা বললো, উপহার তো হলো,তাহলে খাওয়া কি হবে? ঝোলা থেকে বেগুনি, আলুর চপ আর এক প্যাকেট মুড়ি বের করে চাঁপার হাতে দিয়ে বললো, তোমার পছন্দের আলুর চপ আর বেগুনি।
    চাঁপা একবাটি মুড়ি মেখে নিয়ে এলো, সাথে দু’কাপ চা। দুলাল বললো, তোমার হাতে যাদু আছে, এত সুন্দর চা বানাও তুমি, এক কাপেই সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। স্বামীর প্রশংসায় চাঁপার চোখে মুখে খুশির রেশ ছড়িয়ে পড়লো।
    কুঁড়ে ঘরের ফাঁক দিয়ে তখন এক টুকরো চাঁদের আলো ঘরে ছড়িয়ে পড়লো। চাঁদের আলোয় দুজনের বিবাহ বার্ষিকী যাপন একটা আলাদা আনন্দের রেশ এনে দিল দুজনের মনে।

  • রম্য রচনা

    রম্য- হাগ ডে

    হাগ ডে
    -জয়তী মিত্র

    পাড়ার মোড়ের মাথার দোকানে ডিম আনতে গিয়ে চম্পা শুনল আজ হাগ ডে। পাশের চায়ের দোকানে কিছু অল্পবয়সী ছেলে হাগ ডে নিয়ে কি সব বলছে। ওরা নাকি ওদের প্রেমিকাদের সাথে হাগ করবে মানে হাগবে।
    এইকথা শুনে চম্পা ভাবল, হাগার আবার কোনো দিন আছে নাকি। আমরা তো রোজ হাগি। ছেলেগুলো মেয়েদের সাথে হাগবে। জামা কাপড় খুলে? ছি!ছি! কি লজ্জা। কি দিন এলো, এইসব শোনা যে পাপ। ছি! এইসব শুনে আর কাজ নেই।

    ডিম নিয়ে চম্পা বাড়ির দিকে পা বাড়াল। চম্পার বর রতন শহরে ব্যাগ বিক্রি করে, ছোট একটা দোকান আছে। প্রত্যন্ত গ্রামে ওরা থাকে। হাতে সেই পুরোনো ছোট্ট একটা ফোন আছে শুধু কথা বলার জন্য। এইসব হাগ ডে, প্রপোজ ডে, রোজ ডে এইসব তার অজানা। তাছাড়া এই গ্রামটা এখনও সেই অর্থে উন্নত হয় নি। আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে অনেক দূরে।
    চম্পার স্বামী রতন বলে গেছে আজ ডিম কষা দিয়ে পরোটা খাবে, তাই চম্পা ডিম আনতে গিয়ে হাগ ডের কথা শুনে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
    সারাদিন মাথায় চলছে হাগার কথা। হাগার জন্য একটা বিশেষ দিন, নিজের মনেই হেসে কুটিপাটি চম্পা। চম্পাকে একা হাসতে দেখে পাশের বাড়ির লক্ষ্মী ভাবল, চম্পা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি, একা, একা হাসছে।
    লক্ষ্মী চম্পার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি রে, একা-একা হাসছিস, মাথাটা গেছে নাকি! চম্পা বললো, না রে, হাসছি কেন জানিস? পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে,শুনলাম, আজ নাকি হাগ ডে। আজ হাগার দিন। লক্ষ্মী বললো, কি যা তা শুনেছিস, আমরা তো রোজ হাগি। তার আবার কোনো দিন হয় নাকি? তুই এক পাগল আর ওই ছোকরাগুলো আর এক পাগল, যত সব মূর্খের দল, আমি চললাম, তোর সাথে কথা বললে আমার সময় নষ্ট হবে, আমি যাই।
    লক্ষ্মী চলে যাবার পর রান্না শুরু করল চম্পা, ডিমের কসায় নুন দিতে ভুলে গেছে। ভাবছে কতক্ষণে তার স্বামী আসবে তাকে হাগ ডে র কথা বলবে। সারাদিন হাগ ডে নিয়ে ভেবেই চলেছে।

    রাতে স্বামী ফিরলে তাকে যত্ন সহকারে খেতে দিয়ে বলল, জানো আমি শুনেছি আজ হাগ ডে, হাগার দিন। আজকের দিনে লোকে মনে হয় অনেকবার হাগে, ছেলেমেয়েরা, একসাথে হাগে। কথাটা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো, চম্পার স্বামী রতন। আরে হাগ করা মানে একে ওপরকে জড়িয়ে ধরা। আমি তো আজ দোকানে বসে দেখলাম, অনেকে অনেককে জড়িয়ে হাগ করছে। বিশেষ করে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েগুলো তো একে অপরকে জড়িয়ে ধরছে।
    তারপর চম্পাকে হাগ করে রতনবললো, এই দেখো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরছি মানে হাগ করছি। বিদেশে সবাই আজকের দিনে হাগ ডে পালন করে। লজ্জায় লাল হয়ে চম্পা বললো, তাহলে হাগ ডে মানে হাগা নয়। এতক্ষণে বুঝলাম। সব বুঝে আবার হাসতে লাগল চম্পা।
    এদিকে আলু ডিম কষা খেয়ে রতন বললো, হাগ ডের কথা ভাবতে গিয়ে ডিমে নুন দাওনি সেই খেয়াল আছে? চম্পা তাড়াতাড়ি করে ডিমের বাটিতে নুন মিশিয়ে বললো, হাগ ডের জ্বালায় সব গোলমাল হয়ে গেছে রাগ কোরো না গো। এইবার খেয়ে দেখো ঠিক লাগছে কিনা?
    পরোটা দিয়ে ডিম কষা মুখে দিয়ে আবার চম্পাকে জড়িয়ে ধরলো রতন। সত্যিকারের হাগ ডে পালন করলো রতন আর চম্পা।

  • গল্প

    গল্প- স্বপ্নভঙ্গ

    স্বপ্নভঙ্গ
    -জয়তী মিত্র

     

     

    বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই যে স্বপ্নভঙ্গ হবে একথা স্বপ্নেও ভাবেনি নীলা। দেখাশুনা করেই তার সাথে রজতের বিয়ে হয়।
    নীলা বি,এস,সি অনার্স পাশ করে এম.এস.সি. পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে নীলার বিয়ের সম্বন্ধ আসে। নীলা পড়াশুনা করে নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করবে না ঠিক করেছিল, কিন্তু বাবা মা তাকে বলেছিল, বিয়ের পরও সেটা করা যাবে। আগে বিয়েটা হোক। পাত্র রজত বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে, সরকারী চাকরী করে, দেখতে সুদর্শন, এমন পাত্র হাতছাড়া করা মানে বোকামি।
    নীলা সুন্দরী, শিক্ষিতা, গান জানে, প্রথম দেখাতেই নীলার প্রেমে পড়ে রজত। রজতের বাবা, মা তো নীলার গান শুনে খুব খুশি। নীলাকে রজতের বাবা বলে, বিয়ের পর আমাকে রোজ একটা করে গান শুনিও মা আর তোমার পড়াশোনা আমার বাড়ীতে গিয়েই শেষ করবে, চাকরীও করতে পারো, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। রজতের বাবার মুখে এইসব কথা শুনে খুব খুশি নীলার পরিবার। নীলার’ও রজতকে বেশ পছন্দ হয়।
    তারপর শুভ দিনে নীলা আর রজত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। প্রথম কদিন বেশ ভালই কাটলো শ্বশুরবাড়িতে। তারপর একদিন শাশুড়ি মা ভোর পাঁচটা বাজতেই ঘরে টোকা দিয়ে বললো, এই যে নবাব নন্দিনী ঘুম থেকে উঠে চা বানিয়ে সবাইকে দাও, তারপর বাসনগুলো মেজে, রান্নাঘরে যাও। কাজের মাসি, রান্নার মাসী সব ছাড়িয়ে দিয়েছি। এখন তোমার সংসার কাজকর্ম সব বুঝে নাও। বিয়েতে আমার প্রচুর ধকল গেছে আমি আর কিছু কাজ করতে পারবো না।
    শাশুড়ি মায়ের মুখে এইসব কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল নীলার। এক মেয়ে হবার কারণে খুব আদরে মানুষ হয়েছে নীলা। বাসন মাজা, রান্না এইসব তো জীবনে করেনি। রজতকে মায়ের কথাগুলো বলতেই রজত বললো, এইসব মেয়েলি কথা আমাকে বলবে না, এটা তোমার আর মায়ের ব্যাপার। আর মায়ের কথাই এই বাড়ীতে শেষ কথা। মায়ের কথা শুনে চলো, ভালো থাকবে, আর না হলে মায়ের মুখ ঝামটা শুনতে হবে। আমি তোমাদের মধ্যে নেই। আমাকে কোনোদিন নালিশ করবে না মায়ের নামে।
    নীলার দু’চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো,নীলা বললো, তোমরা তাহলে আমাকে কাজের লোক হিসাবে নিয়ে এসেছো? রজত বললো, বিয়ের পর সব মেয়েই নিজের সংসারে কাজ করে। সবাই কি তাহলে কাজের লোক? আমার মা তো ভোর বেলা উঠে আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে সবার সাথে মিলে সংসারের যাবতীয় কাজ করতো, তাহলে আমার মা কি কাজের লোক?
    -থাক রজত আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে, আর কিছু বলতে হবে না। স্বামীর বাক্যবাণ শোনার পর শুরু হলো শাশুড়ির বাক্যবাণ। রান্নাঘরে গিয়ে রান্না না করতে পারার কারণে শুনতে হলো, মা কি কিছুই শিখিয়ে পাঠায় নি। চুপ করে রইলো নীলা। শ্বশুর বাড়িতে কম বেশি সব মেয়েদেরকেই এমন কথা শুনতে হয় শাশুড়িদের মুখে। অবশ্য তার ব্যাতিক্রমও আছে। সবাই একরকম হয় না। তবে তার সংখ্যা খুব কম। রজতকে একদিন এম,এ-তে ভর্তি হবার কথা বলতেই রজত বললো, আর কি দরকার পড়াশোনা করার, চাকরী আমি তোমাকে করতে দেব না, তাছাড়া মাও রাজি হবে না। আমাদের তো যথেষ্ট সচ্ছল অবস্থা। তোমাকে বাইরে বেরিয়ে টাকা রোজগার করতে হবে না। নীলার আবার স্বপ্নভঙ্গ হল। নীলা বললো, বাবা যে বলেছিল আমাকে পড়াবে?
    – ও সব কথার কথা। মন দিয়ে সংসার করো। এরপর আমাদের সন্তান আসবে, তাদের মানুষ করো। পড়াশোনা আর চাকরীর ভূত মাথা থেকে তাড়াও।
    নানা রকম বিধিনিষেধ নীলার ওপর আরোপ করলেও নীলাকে ভালোবাসতো রজত। নীলার কখন কি দরকার মুখ ফুটে বলার আগেই সব হাজির। সেই ভালোবাসার টানেই সব স্বপ্নভঙ্গের পরও সংসার করে চলেছে নীলা। নীলাও রজতকে ভীষণ ভালোবাসত।
    অনেক বছর কেটে গেছে। শ্বশুর শাশুড়ি আজ কেউ বেঁচে নেই। নীলারও একটি মাত্র মেয়ে। নীলা মেয়েক নিজের মনের মত মানুষ করেছে। নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাই মেয়ের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি ছিল নীলার। কোনো অবস্থাতেই মেয়ের স্বপ্নভঙ্গ হতে দেয় নি। রজতকে সাফ জানিয়েছিল, মেয়ে নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবে না।
    মেয়ের খুব ইচ্ছা ছিল আইন নিয়ে পড়ার। সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে মেয়ের। মেয়ে আজ একজন আইনজীবী।
    নিজের স্বপ্নভঙ্গ হলেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, এটাই আজ নীলার একমাত্র ভালোলাগার জায়গা।

  • গল্প

    গল্প- প্রতিদান

    প্রতিদান
    – জয়তী মিত্র

     

     

    মাঝ রাতে বুকে ব্যথা উঠেছিল রঞ্জনার। স্বামী অশোক তৎক্ষণাৎ রঞ্জনাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। নার্স এসে বলেছিল, এই কাগজটা নিন, একটা ইনজেকশনের নাম লেখা আছে, এক্ষুনি নিয়ে আসুন, ওনাকে দিতে হবে না হলে ওনাকে বাঁচানো যাবে না। কি করবে ভেবে না পেয়ে একমাত্র ছেলে শুভ্রকে ফোন করেছিল তার বাবা। না ছেলে ফোন তোলে নি। রিং হয়ে ফোন কেটে গেল। ওষুধের দোকানে গিয়ে দাম জিজ্ঞেস করাতে দোকানদার বললো, ইনজেকশনের দাম দুই হাজার টাকা। কিন্তু এত টাকা তো তার কাছে নেই,মাত্র পড়ে আছে এগারশো টাকা। ওষুধের দোকানদারকে অশোক বললো, এই টাকাটা রাখুন, আমি বাকিটা পরে দিয়ে যাবো, কিন্তু ইনজেকশনটা এখুনি দরকার, না হলে আমার স্ত্রী বাঁচেবে না। দোকানদার কিছুতেই বাকিতে দিতে রাজি হলো না।
    কোনো উপায় না দেখে অশোক ছেলের ফ্ল্যাটে গেল, গিয়ে দেখলো, ছেলে তার বউ আর বাচ্চাকে নিয়ে দামী গাড়ী চড়ে বেড়াতে বের হচ্ছে। ছেলেকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়ল অশোক বললো, তোর মা মৃত্যুশয্যায় এক্ষুনি টাকার দরকার। দু’হাজার টাকা দে, ইনজেকশন কিনতে হবে। ছেলের পাশে তখন তার কোম্পানির বস বসে। ছেলে তার কোম্পানির ম্যানেজার। দুই পরিবার তখন পিকনিক যাচ্ছে।
    শুভ্রর বস বিক্রম বাবু বললেন, ইনি তোমার বাবা? পরনে ময়লা পোশাক, মাথার চুল উস্কো খুস্কো। চোখের নিচে কালি পড়া। শুভ্র বললো, না না, ইনি আমার বাবা নন, কোনো পাগল হবে হয়তো আমাকে ওনার ছেলের মত দেখতে তাই এই সব ভুল বলছে। ছেলে গাড়ির কাঁচ নামিয়ে পিকনিকের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
    অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছে রঞ্জনা আর অশোক। অশোক কাজ করতো একটা ছোট কারখানায়। ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় কারখানা বন্ধ হয়ে যায় অশোকের। পাড়ায় পাড়ায় সব্জি বিক্রি করে সংসার চালিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছে। রঞ্জনা রাতে বাড়ির সামনে রুটি, তরকারি, ডিম কষা এইসব বিক্রি করে অনেক কৃচ্ছসাধন করে ছেলেকে শিক্ষিত করেছে। ছেলে পড়াশুনায় খুব মেধাবী ছিল। রেজাল্টও খুব ভালো ছিল। চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই ছেলে চাকরী পেয়ে গেছে খুব তাড়াতাড়ি। প্রেম করে বড়োলোকের মেয়েকে বিয়ে করে ঘরজামাই হয়েছে শুভ্র। গরীব বাবা, মা জানতেও পারেনি ছেলে কবে বিয়ে করেছে। খুব একটা যোগাযোগও রাখত না বাবা মায়ের সঙ্গে। পাছে তার সম্মান নষ্ট হয়। মা রঞ্জনা ছেলেকে দেখার জন্য মাঝেমাঝেই আকুল হতো। চোখের জল ফেলত। ফোন করলে ছেলে বলতো, ব্যস্ত আছি। তাই তারা ছেলের সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টাও করতো না। ছেলেকে এত কষ্ট করে মানুষ করে এই প্রতিদান পাবে, স্বপ্নেও ভাবে নি অশোক আর রঞ্জনা। রঞ্জনা ভাবতো, এর থেকে নিঃসন্তান হলেই ভালো হতো। ছেলের চিন্তা করতে করতে দিন-দিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ছিল রঞ্জনা। অশোক বলতো, ছেলের কথা না ভেবে, আমরা নিজেদের মতো করে বাঁচব, মনে করো তোমার কোনো ছেলে নেই।

    ইনজেকশনের ব্যাবস্থা করতে না পেরে যখন হাসপাতালে পৌঁছালো অশোক তখন রঞ্জনার দেহটা ঠান্ডা হয়ে গেছে। নার্স এসে জানালো, উনি আর নেই।
    কান্নায় ভেঙে পড়ল অশোক। বাচ্চাদের মত কাঁদতে, কাঁদতে বললো, তোমার এই হতভাগ্য স্বামীকে ক্ষমা করে দিও, আমি পারলাম না তোমাকে বাঁচাতে। অশোকের কান্না দেখে সেদিন অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারে নি।

  • গল্প

    গল্প- পরশ্রীকাতর

    পরশ্রীকাতর
    – জয়তী মিত্র

     

     

    পরশ্রীকাতর একটা কঠিন রোগ। আজকাল বেশিরভাগ লোকের মধ্যে এই রোগটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে। এর থেকে পরিত্রাণের কোনো ওষুধ আজ অবধি আবিষ্কার হয়নি, যদি নিজে না তার থেকে বেরিয়ে আসা যায়।
    পরশ্রীকাতর লোকের সংখ্যা আজ খুব বেশি পরিমাণে দেখা যায় আমাদের সংসার তথা সমাজে। কিছু লোক আছে যারা পরের ভালো দেখতে পারে না। লোকের ভালো দেখলে মুখে অমাবস্যার কালো অন্ধকার নেমে আসে। শরীর, মন জ্বলে যায় অন্যের সুখ, শান্তি দেখে। মুখে তাদের মিষ্টি কথা মনের ভিতর থেকে বিষে ভরা। অন্যদের আঘাত করে এরা খুশি হয়। এই ধরনের মানুষরা কখনো শান্তিতে থাকতে পারে না।
    আজকাল ঘোষ গিন্নি সুমিতা প্রচন্ড ডিপ্রেসনে ভুগছে, তার মানসিক স্ট্রেস ক্রমাগত বাড়ছে। এই নিয়ে তার স্বামী রজতের চিন্তার শেষ নেই। কি করে গিন্নির ডিপ্রেশনের অবসান ঘটাবেন সেই চিন্তাতেই তিনি রাতদিন চিন্তিত। গিন্নির ডিপ্রেশনের কারণ পরশ্রীকাতরতা। সুমিতা কারোর ভালো দেখতে পারে না। ইদানিং সুমিতার প্রিয় বান্ধবী রুমেলার বাড়ীতে বিদেশি ফ্রিজ এসেছে। ওনার ছেলে বিদেশে চাকরী করে, সেই কারণে বিদেশ থেকে কাড়ি কাড়ি ডলার আসছে। এই দেখে সুমিতার ব্লাড প্রেসার ক্রমশ বেড়ে চলেছে, ফ্রিজ আর ডলারের কথা শুনে।
    আজকাল রূমেলার সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিয়েছে সুমিতা। রুমেলাকে একটু এড়িয়ে চলে আজকাল। একই রামে রক্ষা নেই তার ওপর সুগ্রীব দোসর। সেদিন সুমিতার বান্ধবী রুমির সাথে রাস্তায় দেখা হল। রুমি বললো, জানিস সুমিতা আমাদের পুরোনো বাড়িটা ভেঙে আবার নতুন করে তৈরি করলাম। পুরো বাড়িটা মার্বেল দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছি, মডিউলার কিচেন করলাম, ছাদে আর্টিফিসিয়াল ঘাস বসালাম। খুব সুন্দর লাগছে এখন ছাদটা। সামনের রবিবার দাদাকে নিয়ে আসিস আমার বাড়ি দেখে, রাতের খাবার খেয়ে তারপর বাড়ি যাবি। সুমিতা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেল।
    বাড়ি গিয়ে বরের সাথে তুমুল অশান্তি শুরু করে দিল। বর রজতকে বললো- “কতবার বললাম, বাড়ীতে একটু মার্বেল বসাও, এই লাল রঙের মেঝে এখন আর চলে না। কিন্তু তুমি তো কোনো কথাই কানে নাও না। সবার বাড়ীতে মার্বেল বসছে আর আমার বাড়ি সেই আদ্যিকালের।”
    রজত বললো- “দেখো আমার বেসরকারি চাকরী, এত টাকা নেই, মেয়ে রয়েছে দুটো, তাদের পড়ার খরচ, তার পর মায়ের জন্য মাসে ওষুধের খরচ, কিছু ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়, এত কিছু সামলে আমার পক্ষে বিলাসিতা করা সম্ভব নয়। আর শোনো তোমার বান্ধবীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার আর্থিক সামর্থ্য দেখেই তোমার বাবা বিয়ে দিয়েছিলেন আমার সাথে। তোমাকে বড়োলোকের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারতেন তোমার বাবা, তাহলে তোমার আমাকে নিয়ে এত হীনমন্যতা থাকত না।” এই ঝগড়ার মাঝে ফোন এলো সুমিতার ছোট বোন নন্দিতার। নন্দিতা একজন উঠতি লেখিকা। তার লেখা ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছে। সেই ম্যাগাজিনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নন্দিতাকে সম্মাননা, আর মেমেন্টো দেবার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কোনো এক সাহিত্য গ্রুপ থেকে।এই খবরটা দিদিকে জানানোর জন্য নন্দিতা ফোন করেছে। বোনের উন্নতি দেখে হিংসায় জ্বলে ফোনটাই কেটে দিল সুমিতা। মুখ বেঁকিয়ে বললো-“বুড়ো বয়সে সাহিত্য চর্চা করছে। সংসারে কাজ নেই, একগাদা কাজের লোক, সারাদিন খাতা কলম নিয়ে বসে থাকে। আমার মত সংসার নাকি, একটা কাজের লোক নেই, খাটতে,খাটতে হাড়, মাংস ভাজা ভাজা হয়ে গেলো।”
    সুমিতার বর রজত বললো- “শোনো, হাজারটা লোক রাখলেও তোমার হাত দিয়ে লেখা বের হবে না, গল্প কবিতা লেখার জন্য প্রতিভা দরকার, যেটা তোমার নেই। আর ছি! শেষ কালে ছোট বোনটার সাথেও হিংসা। তুমি পাগল হয়ে যাবে সুমিতা।”
    রজত আরো বললো- “শোনো সুমিতা হিংসা করলে তোমারই শরীর খারাপ হবে। অন্যের ভালোটা ভালোবেসে গ্রহণ করতে শেখো তাতে তোমার শরীর, মন দুটোই ভালো থাকবে। অন্যের ভালো দেখে নিজের ব্লাড প্রেসার, ডিপ্রেসন বাড়িয়ে তো তোমারই ক্ষতি হচ্ছে। তাই না বলো।অন্যের জন্য নিজের ক্ষতি না করে সহজে সব কিছু মেনে নিতে শেখ, মনটা পরিষ্কার রাখো তাহলে দেখবে তোমার জীবনটা কত সুন্দর হয়ে উঠেছে। নিজের যা আছে সেটা নিয়ে সুখে থাকার চেষ্টা করো, তাহলে মানসিক শান্তি পাবে। নিজের মানসিকতা বদলাও দেখবে তোমার মত সুখী আর কেউ নেই।”
    স্বামীর কথা শুনে সুমিতা বললো-“আজ থেকে ডিপ্রেসনকে উড়িয়ে দিয়ে নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করবো আর নেই,নেই বলে কোনো অভিযোগ তোমার কাছে করব না,আর তোমাদের ও ভালো রাখার চেষ্টা করব। “
    রজত বলল” সেটা আজ থেকেই শুরু হোক কি বলো? আর কথা নয়, এবার এক কাপ ব্ল্যাক কফি দাও দেখি, সুমিতা হাসিমুখে দিচ্ছি বলে রান্না ঘরের দিকে গেল কফি বানাতে।

  • গল্প

    গল্প- সম্পর্কের জটিল সমীকরণ

    সম্পর্কের জটিল সমীকরণ
    – জয়তী মিত্র

     

     

    ভোরবেলা উঠেই তানিয়া কালী মন্দিরে শাশুড়ি মায়ের সুস্থতা কামনা করে পূজো দিতে গেল। জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে গিয়ে এক পথ দুর্ঘটনার আহত হন তানিয়ার শাশুড়ি মা সুমনা দেবী। এই দুদিন নাওয়া, খাওয়া ভুলে হাসপাতালেই পড়ে ছিল তানিয়া। যতই তার সাথে শাশুড়ি মায়ের সম্পর্ক খারাপ থাক, তবুও তিনি মা তো।
    হাসপাতাল থেকে ছেলে প্রকাশের সাথে বাড়ি ফিরে বৌমার খোঁজ করতে থাকেন তার শাশুড়ি মা। ঠিক তখনই পূজো দিয়ে বাড়ি এসে ঠাকুরের ফুল শাশুড়ি মায়ের মাথায় ঠেকিয়ে, মুখে একটু প্রসাদ তুলে দেয় তানিয়া। সুমনা দেবীর চোখ জলে ভরে যায়। যে মেয়েটাকে তিনি কখনও আপন বলে ভাবতে পারেন নি, সেই মেয়ে তার জন্য এত করছে। নিজের মনেই নিজেকে বললেন, “ছি! আমি নিজের কাছের মানুষদের আপন ভাবতে পারি নি। নিজের বিবেকের কাছেই যে নিজে ছোট হয়ে গেলাম। ছোট্ট মেয়েটা যে সংসারের জটিল খেলায় আমাকে হারিয়ে দিল।”

    প্রকাশ আর তানিয়া সেই কলেজ জীবন থেকে পরস্পরকে ভালোবাসে। তানিয়া ছোট বেলায় বাবা মা-কে হারিয়েছে। মামার বাড়িতে অতি অবহেলায় মানুষ হয়েছে। একমাত্র দাদু দিদা ছাড়া তাকে কেউ কোনোদিন ভালোবেসে নিজের করে নেয়নি। ওনারা বেঁচে থাকতেই বি এ পাশ করে তানিয়া, না হলে কলেজের মুখই তার দেখা হতো না। মামা মামী তাকে বেশিদূর লেখাপড়া শেখানোর পক্ষপাতী ছিল না।
    তানিয়ার খুব ইচ্ছা ছিল এম এ পড়ার। প্রকাশ কথা দিয়েছিল তানিয়াকে, তার ইচ্ছা প্রকাশ পূরণ করবে। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয় নি।
    এই বিয়েতে মায়ের একদম মত ছিল না। সুমনা দেবী তার ছোটবেলার বান্ধবীর মেয়ে পৌলমীর সাথে বিয়েটা দিতে চেয়েছিলেন। শহরের বিখ্যাত বস্ত্র ব্যাবসায়ীর মেয়ে পৌলমী। আর্থিক স্বচ্ছলতাও ছিল প্রচুর। এমন বাড়ির মেয়েকে বউ মা করে আনা তো লটারি পাওয়ার সমান। অন্যদিকে তানিয়ার দাদু তার শেষ জীবনের সম্বল টাকা দিয়ে যেটুকু সাধ্য নাতনীর বিয়েতে খরচ করেছেন। তাতে সুমনা দেবীর মন ভরে নি। ছেলের জেদের কাছে হার মেনেই এই বিয়েতে সুমনা দেবী রাজী হয়েছিলেন। ছেলে তার ভালোবাসাকে হারাতে চায়নি। মাকে সে সাফ জানিয়ে ছিল, “তানিয়া ছাড়া সে কাউকেই বিয়ে করবে না।” নিজের মন মতো ছেলের বিয়ে দিতে পারেন নি সুমনা দেবী, তাই প্রথম থেকেই তানিয়াকে ভালো ভাবে গ্রহণ করতে পারেন নি। উঠতে বসতে নানা রকম কাজের ত্রুটি ধরতেন। বৌমার কোনো কিছুই তার পছন্দ হতো না। তানিয়া অনেক চেষ্টা করতো শাশুড়ি মায়ের মন পাবার কিন্তু সেটা আর হতো না। একটা, না একটা খুঁত তিনি ধরবেনই। তানিয়া খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল। তাই মুখে কিছু না বললেও শাশুড়ি মাকে একদম পছন্দ করত না। দুজনের মধ্যে সবসময় একটা ঠান্ডা লড়াই চলত।

    তানিয়াকে বুকে জড়িয়ে সুমনা দেবী বললেন, “তোকে আমি এত অবহেলা করি আর তুই সব কিছু ভুলে আমার এত সেবা করলি, আমি তো তোকে কোনোদিন ভালোবাসতেই পারিনি, অথচ তুই আমাকে এইভাবে কাছে টেনে নিয়েছিস, তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।”
    তানিয়া বললো, “ছোটবেলায় নিজের মাকে হারিয়েছি তো তাই দ্বিতীয় বার আর মাকে হারাতে চাইনি। তোমাকেও আমি নিজের মায়ের আসনে বসিয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করতে পারোনি। তুমি যতই আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করো তুমি আমার মা হয়েই থাকবে চিরকাল।”
    সুমনা দেবী বললেন- “আমি আমার ভুল স্বীকার করলাম মা, আমার অন্যায় হয়ে গেছে। আর এমন হবে না। আজ থেকে তুই বৌমা থেকে আমার মেয়ে হলি। তানিয়া শাশুড়ি মা-কে জড়িয়ে ধরে বললো-“আজ আমি আমার নিজের মাকে ফিরে পেলাম।”
    ছেলে প্রকাশ দুজনের মিলন দেখে টিপ্পনী কেটে বললো- “যাক বাবা, বাঁচা গেলো, বউ আর মায়ের মাঝখানে পড়ে তাকে আর স্যান্ডউইচ হতে হবে না।” মা আর বউয়ের মুখে তখন চওড়া হাসি।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- বিয়ে বাড়ির সেকাল আর একাল

    বিয়ে বাড়ির সেকাল আর একাল
    – জয়তী মিত্র

     

     

    দাদু আজ বিয়ে বাড়ি যাবে না? ঠামমু তো সেই সকাল থেকে শাড়ি গহনা বার করে একদম রেডি। শুধু এবার গেলেই হয়। বাবা অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এলে সবাই মিলে যাবো।

    না রে দাদু ভাই, এখনকার বিয়ে বাড়িগুলোতে কোনো প্রাণ নেই। কেমন যেনো মেকি। চারিদিকে খাবার সাজানো আছে। নিজে নাও আর খাও। অ্যাপায়ন করার কেউ নেই। দেখারও লোকজন নেই। সব আসছে নতুন বউকে উপহার দিচ্ছে, তারপর প্লেটে খাবার নিয়ে সব খেয়ে চলে যাচ্ছে।এখন খালি লোক দেখানো ব্যাপার বেশি। কে কত খাবারের স্টল দিল, কে কত খরচ করে বিয়ে বাড়ি সাজালো এই সব নিয়ে সব ব্যস্ত। অতিথিরা ঠিক মত খেল কিনা এইসব আর কেউ দেখে না। আর ওই বুফে সিস্টেমে খাওয়া আমার পোষাবে না। প্লেটে করে একটু একটু করে নিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাওয়া যায় নাকি? কিছু জায়গায় বসার ব্যাবস্থা থাকলেও সব জায়গায় থাকে না।
    এই তো সেদিন সেন বাবুর ছেলের বৌভাতে গিয়ে কি বিপদে পড়েছি জানিস, খাবার জায়গাটা খুব ছোট, একগাদা লোক সেখানে ভীড় করেছে। একজনের ঘাড়ের কাছে আর একজন, এইভাবে কি খাওয়া যায়? কোনরকমে একটা প্লেটে একটু খাবার নিয়ে কোনায় দাঁড়িয়ে খেয়ে সোজা সেখান থেকে বিদায় নিয়েছি। দু’ চারটে টেবিল পাতা ছিল, কিন্তু সেগুলো ভর্তি ছিল। আমার এখন বয়স হয়েছে, আর এইভাবে দাঁড়িয়ে খেতে পারি না। দাদুভাই তোমরা ঘুরে এসো, আমি যাবো না। দশ বছরের নাতি রণর তো মন খারাপ হয়ে গেলো দাদু যাবে না শুনে।

    রণ দাদুকে বললো- বাবার কাছে শুনেছি তুমি নাকি বিয়ে বাড়িতে খেতে খুব ভালোবাসতে। দাদু বললেন- সেকালের মানে আমাদের সময়কার বিয়ে বাড়ীতে কত আনন্দ হতো। সারাদিন বিয়ে বাড়িতে বিসমিল্লা খানের সানাই বাজত। বাড়ির উঠোনে, বাগানে বড়ো প্যান্ডেল হতো। কত খাওয়া দাওয়া হতো। ভাত, লম্বা বেগুন ভাজা, ঘি, ডাল, ঝিরিঝিরি আলুভাজা, দই কাতলা, কচি পাঁঠার ঝোল, চাটনি, পাঁপড়, দই, রসগোল্লা, যে যত পারো খাও। চেয়ার, টেবিলে বসে জম্পেশ করে খাওয়া হতো। রসগোল্লা তো কম্পিটিশন করে খাওয়া হতো। জানিস দাদুভাই আমি একবার রসগোল্লার কম্পিটিশন এ জিতেছিলাম। বর যাত্রী গিয়েছিলাম বন্ধুর বিয়েতে। নতুন বউয়ের পিসতুতো দাদা, রসগোল্লা দিয়ে যাচ্ছে,আমি খেয়ে যাচ্ছি। বাজি লড়ে ছিলাম যে, তাই আর লজ্জা পাইনি। কি যে মজা হয়েছিল কি বলবো তোকে। আর বাড়ির প্রতিটা লোক কত অ্যাপায়ণ করলো। অনেকদিন মনে ছিল সেই বিয়ে বাড়ির কথা। তখনকার দিনে বিয়ে বাড়ি গেলে যে আপ্যায়ন পাওয়া যেত, এখন সেই জিনিস আর দেখা যায় না। অবশ্য এটাও ঠিক এখন লোকের হাতে সময় কম, বিয়ে বাড়ি এসে আগেকার দিনের মত থাকার ব্যাপারটাও এখন নেই,কাজ করার লোকের অভাব, তাই সবাই বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়ে দেয় কাজ উৎরে দেওয়ার। যখন যেমন, তখন তেমন আর কি?।
    নাও দাদু ভাই যাও তুমিও এইবার কোন পোশাক পরে যাবে সেটা ঠিক করে নাও, বিয়ে বাড়ি থেকে এসে আমাকে সব গল্প শুনিও কিন্তু।
    নিশ্চয় শোনাবো দাদু। যাই মা আমাকে ডাকছে। বাবার আসার সময় হলো। এইবার রেডি হতে হবে।

You cannot copy content of this page