• গল্প

    গল্প- মানস ভ্রমণ

    মানস ভ্রমণ
    – জয়তী মিত্র

     

     

    জানিস দিদি, বাবা বলেছে, আসছে রবিবার বাবা এসে আমাদের সবাকে চিড়িয়াখানা নিয়ে যাবে। সারাদিন কত পশু,পাখি দেখব, তারপর সেখানে কিছু খাবার খেয়ে বাড়ি ফিরে আসব, খুব মজা হবে বল। আট বছরের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া ভাই রনির মুখে এই কথা শুনে বেজায় খুশি তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়া দিদি রিমি। রিমি বললো, আজ তো বুধবার, রবিবার আসতে তো আর বেশি দেরি নেই। কি মজা হবে বল ভাই..মাকে বলবো লুচি-আলুরদম, আর মিষ্টি কিনে নিয়ে যেতে। গাছের তলায় বসে সবাই খাব। বেশ পিকনিক এর মত হবে বল ভাই। সেই কবে চিড়িয়াখানা গেছিলাম, আমি তখন অনেক ছোট্ট জানিস ভাই, আর তুই তখন মায়ের কোলে। ঠিক মত হাঁটা শিখিস নি। তারপর এতদিন বাদে আবার যাব, ভাবলেই ভালো লাগছে। নে চল, ভাই অনেক গল্প হলো এবার পড়তে বসি, না হলে মা রাগ করবে। তারপর দুই ভাই-বোন পড়তে বসলো। মা তাদের জন্য সকালের জলখাবার বানাতে ব্যস্ত, এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে দরজা খুলল রিমি। বাবাকে এই সময় দেখে বলেই ফেললো- বাবা, তোমার তো শনিবার আসার কথা ছিল, আজই চলে এলে? বাবা বিকাশ বাবু বললেন- কেন রে মা, নিজের বাড়িতে কি যখন তখন আসতে পারি না বল? -না,না বাবা, তুমি যখন খুশি আসবে, তুমি এলে আমরা কত খুশি হই বলো। বিকাশ বাবু মনে মনে ভাবলেন- এইবারে আর খুশি হবি না রে মা, কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, আর আমার চাকরিটাও চলে গেছে। ভাবতে ভাবতে দু’ চোখ নোনা জলে ভরে উঠল বিকাশবাবুর। উনি কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। সপ্তাহে একদিন বাড়ীতে আসেন। বউ-ছেলে-মেয়ের সাথে একদিন কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে যান।

    স্বামীর মুখ ছোট দেখেই রিমির মা বুঝেছে কিছু, একটা ঘটেছে, না হলে কোনো খবর না দিয়ে তো এইভাবে আসে না। বিকাশ বাবু স্ত্রীকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বললেন- আমার চাকরিটা চলে গেছে। ছেলে-মেয়ে দুটোকে আর চিড়িয়াখানায় নিয়ে যেতে পারলাম না, ছোট ছেলেটা কত আনন্দে ছিল। ওদের আমি কি জবাব দেব? বলে কান্নায় ভেঙে পড়ল রিমির বাবা। দরজার আড়াল থেকে রিমি সব কথা শুনে ভাইকে বললো- ভাই বাবার শরীর খারাপ তো তাই আমরা এইবার চিড়িয়াখানা যাবো না। পরে কোনোদিন যাবো। এইবার আমরা মানস ভ্রমণ করব, মানে, মনে মনে চিড়িয়াখানা ঘুরে আসবো বুঝলি। ছোট ভাইটা কি বুঝলো কে জানে! একদৃষ্টে দিদির দিকে চেয়ে রইলো। ভাইকে আদর করে বললো- বাবা পরে একসময় আমাদের ঠিক নিয়ে যাবে বুঝেছিস। মেয়ের কথা শুনে বাবা ভাবলো, মেয়েটা আমার কত বড় হয়ে গেছে, দুঃখ আড়াল করতে এখনই শিখে গেছে। মনে মনে মেয়েকে আশীর্বাদ করে বললো- জীবনের কঠিন সময়কে ঠিক এইভাবে কঠোর হাতে মোকাবিলা করার শক্তি যেন তোকে ভগবান দেন। পারলে এই হতভাগ্য বাবাকে ক্ষমা করিস মা। রিমির মা এসে স্বামীর চোখের জল মুছিয়ে বললো- এত ভেঙে পড়লে চলবে কি করে? তোমাকে আমাদের মুখ চেয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। আজ আমাদের খারাপ দিন, কাল আবার নতুন সূর্যের মত ভালো দিন আসবে।
    নাও এইবার হাত- মুখ ধুয়ে জলখাবার খেয়ে নাও। তার আগে আমি চা বসাই। এই দুর্দিনে পরিবার তার পাশে আছে এই ভেবে মনটা ভরে গেল বিকাশ বাবুর।

  • গল্প

    গল্প- দাদুর জন্মদিন

    দাদুর জন্মদিন
    – জয়তী মিত্র

     

     

    আজ রমেন বাবুর একশত বছর পূর্ণ হল। সেই আনন্দে ওনার নাতি, নাতনি, ছেলে, বৌমারা একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বেশ কদিন আগে রমেন বাবুর বড়ো ছেলে বিকাশের একমাত্র ছেলে সৌরভ তার বাবাকে বলে, সবার জন্মদিন হয় এইবার আমরা সবাই মিলে যদি দাদুর জন্মদিন পালন করি তাহলে কেমন হবে বাবা? দাদু সেঞ্চুরি করলো, আর সেলিব্রেশন হবে না সেটা কি করে হয়? কথাটা শোনা মাত্র সৌরভের বাবা বললেন, “খুব ভালো হবে তাহলে, সবাইকে বলি কথাটা।” যা ভাবা,তাই কাজ। বাড়ির সবাইকে ডেকে বিকাশ বাবু বললেন,”সৌরভের খুব ইচ্ছা দাদুর একশত বছরের জন্মদিন পালন করবে।” সবাই শুনে খুব খুশি হয়ে তাতে সম্মতি জানালো। সৌরভের বাকি খুড়তুতো ভাই বোনেরা রাজী হয়ে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু করে দিল।

    রমেন বাবুর তিন ছেলে, বিকাশ, প্রকাশ আর সুভাষ। বিকাশের এক ছেলে-সৌরভ। প্রকাশের এক মেয়ে তিন্নি আর সুভাষের দুই ছেলে রনি আর রানা। রমেন বাবুর স্ত্রী দুই বছর আগে গত হয়েছেন। নাতি, নাতনিরা সকলেই বিবাহিত আর নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। রমেন বাবুর একান্নবর্তী পরিবার। আজকের দিনে যখন সব জায়গায় নিউক্লিয়ার পরিবার সেখানে মাথা উঁচু করে আজও দাড়িয়ে আছে সৌরভদের একান্নবর্তী পরিবার। সেখানে যতো না ঠোকাঠুকি তার থেকে মিল বেশি। রমেন বাবু আর ওনার স্ত্রী খুব যত্ন করে এই সংসার তৈরি করেছেন। রমেন বাবুর তিন বৌমা, আর তিন ছেলের মধ্যে খুব মিল। তাই বলে কখনো যে মতের অমিল হয় না সেটা নয়। সেইরকম সমস্যা হলে রমেন বাবু সকলকে ডেকে সেইখানেই সমস্যার সমাধান করতেন। বড়দের মধ্যে এত সুন্দর মিল ছিল বলে সৌরভদের ভাইবোনদের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক ছিল।

    সকালে উঠেই নাতি-নাতনিরা সবাই মিলে দাদুকে সাজাতে বসলো। রমেন বাবুর তিন বৌমা মিলে সুন্দর পাঞ্জাবি, নতুন কাঁসার থালা কিনে এনেছে। নতুন পাঞ্জাবি পড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে একবাটি নলেন গুড়ের পায়েস দেওয়া হলো খেতে। নাতনি এসে দাদুর মুখে পায়েস তুলে দিল। রমেন বাবুর দু’চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু ঝরতে লাগলো। তিনি বললেন,”আমি যে এখনও সুস্থ ভাবে বেঁচে রয়েছি এইটাই ভগবানের আশীর্বাদ।” পায়েস খেয়ে দাদুর কি আনন্দ। মুহুর্মুহু ছবি উঠলো। কয়েক জন পাড়া প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। খাবারের মেনু নাতি নাতনিরাই ঠিক করেছিল । দাদুকে পঞ্চ ব্যঞ্জন দিয়ে সাজিয়ে কাঁসার থালায় খেতে দেওয়া হলো। দাদু খুব খুশি। তারপর সকলের খাওয়া, দাওয়া শেষ হলে দাদুকে বিকালের দিকে মাঝখানে বসিয়ে, কেউ গান গাইলো, কেউ আবৃত্তি করলো।
    তারপর নাতিদের আবদারে দাদুকে কিছু বলতে বলা হলো, দাদু দু’চোখ ভর্তি জল নিয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠলেন, “মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে..” উনি এতটাই আপ্লুত যে আর কোনও কথা বলতে পারলেন না। রমেন বাবুর তিন ছেলেই বলে উঠলেন, “পরের জন্মে যেন তোমার ছেলে হয়েই আসতে পারি বাবা, এই আশির্বাদ করো।” তারপর রমেন বাবুর সাথে বাড়ির সবার ছবি তোলা হলো। ছোট কাকা সৌরভের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “তোর জন্যই এত সুন্দর একটা দিন বাবাকে আমরা উপহার দিতে পারলাম। এইভাবেই আমাদের একান্নবর্তী পরিবারটাকে আগলে রাখিস বাবা। সুখে থাক তোরা সব ভাইবোন এই আশীর্বাদ রইলো।” নিজের প্রশংসা শুনে সৌরভের মুখে তখন চওড়া হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়লো।

  • গল্প

    গল্প – স্নেহের পরশ

    স্নেহের পরশ
    – জয়তী মিত্র

    প্রথম মাসের মাইনে পেয়ে শাশুড়ি মায়ের জন্য একটা জামদানি শাড়ি কিনলো সুমি। জামদানি শাড়ি শাশুড়ি মায়ের খুব পছন্দ। বাড়ি এসে শাশুড়ি মাকে প্রণাম করে শাড়ির প্যাকেটটা ওনার হাতে দিল সুমি আর বললো,”এই নাও মা এটা তোমার উপহার, তোমার জন্যই আজ আমি এই জায়গায় পৌঁছেছি। তোমার অনুপ্রেরণা না পেলে চাকরী পর্যন্ত পৌঁছাতাম না। তুমি আমাকে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছ মা।”
    অনিতা দেবী বৌমাকে আশীর্বাদ করে বললেন, “তুই আরো এগিয়ে যা, আমি তোর সাথে সবসময় আছি।”

    অনিতা দেবী নিজে দেখে তার একমাত্র ছেলের বউ করে নিয়ে এসেছিলেন সুমিকে। ওনার ছেলে সৌরভ একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চ পদে চাকরি করে। বছর দুয়েক হলো অনিতা দেবীর স্বামী মারা গেছেন। মা ছেলের সংসার। অনিতা দেবীর একটা ছোট্ট আঁকার স্কুল আছে। সেখানে তিনি বাচ্চাদের আঁকা শেখান।
    সুমিকে তিনি কখনোই বৌমা ভাবতেন না। নিজের মেয়ে ভাবতেন। আর সুমিকে তিনি তুই বলে ডাকতেন। খুব স্নেহ করতেন সুমিকে। সৌরভ ও সুমিকে খুব ভালোবাসত। উইকেন্ডে ঘুরতে নিয়ে যেত, রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে নিয়ে যেত। বেশ ভালই কাটছিল দিনগুলো। কিন্তু চাকরির নাম শুনলে সৌরভের মাথা গরম হয়ে যেত সৌরভ বলতো, “আমার তো বেশ ভালো স্যালারি, তোমার চাকরির কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি মায়ের সাথে বাড়ীতে রান্না বান্না শেখো, সংসারের কাজ কর্ম শেখো, বাইরে বেরোবার তোমার দরকার নেই।”
    ছেলের এই কথায় অনিতা দেবী রেগে গিয়ে বলতেন,”সুমি চাকরী করবেই, এম এ পাশ করে কি ঘরে বসে থাকবে, তাছাড়া আজকাল যা যুগ পড়েছে প্রত্যেক মেয়ের চাকরির প্রয়োজন আছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মেয়েদের খুব দরকার।” মায়ের এই কথা শুনে সৌরভ রেগে গিয়ে বলতো, “তোমার আস্কারা পেয়ে সুমি মাথায় উঠেছে, যা খুশি করো তোমরা, আমার কিছু বলার নেই।” সুমি এসে শাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তুমি পাশে থাকলে আমি সব পারবো মা। সুমি ভাবে তার শাশুড়ি মা কত আধুনিকমনস্কা। আর তার মা তো খালি বলতো,”এত পড়ে কি হবে! সেই তো রান্নাঘরে কাটাতে হবে।” দুই মায়ের মধ্যে মানসিকতার কত তফাৎ। মনে মনে সুমি ভাবত, সে সত্যিই খুব ভাগ্যবতী, না হলে এমন শাশুড়ি মা পায়।

    দুই, তিন জায়গায় পরীক্ষা দেবার পর স্কুলের চাকরিটা পায় সুমি। শাশুড়ি মা খুব খুশি হয়, সৌরভের খুব একটা ভালো লাগে না। আজকাল সৌরভের সুমির হাতের রান্নাও পছন্দ হয় না। রান্নার প্রতি সুমির খুব আগ্রহ ছিল। শাশুড়ি মায়ের কাছ থেকে অনেক রান্না শিখেছিল। সুমির হাতের “ইলিশ ভাপা” খেতে খুব পছন্দ করত সৌরভ। আজ সৌরভ খাবার টেবিলে বসে চিৎকার করে উঠলো আর বললো, “এটা কি রান্না করেছো সুমি, আজকাল খুব বাজে হচ্ছে তোমার রান্না।” সুমি খেয়ে বললো, “কেন ভালই তো রেঁধেছি, আজ রবিবার, আজ সব পদ আমি রান্না করেছি। আসলে তোমার আজকাল আমার রান্না মুখে রোচে না। গত রবিবার তোমার পছন্দের রুটি আর চিলি চিকেন রান্না করলাম, তুমি বাইরে খেয়ে এলে। তুমি আজকাল আমাকে আর আগের মত ভালোবাসো না।”

    ছেলে বৌমার ঝগড়া শুনে অনিতা দেবী ভাবলেন, তার বান্ধবী রিনা তাহলে ঠিকই বলেছে। সৌরভকে রিনা সুস্মিতা নামের একটি মেয়ের সাথে দুদিন ঘুরতে দেখেছে শপিং মলে। সুস্মিতাকে রিনা চেনে। এই কারণে বৌমাকে আর ভালো লাগছে না ছেলের। আজই এর বিচার করতে হবে। সুমির সাথে ছেলের এই বাজে ব্যাবহার কিছুতেই তিনি বরদাস্ত করবেন না।
    ছেলেকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “সুস্মিতা কে?” ছেলে তো আকাশ থেকে পড়ার ভান করে বললো, “কি সব উল্টো পাল্টা বলছো মা।” অনিতা দেবী বললেন,”আমি ঠিকই বলছি, আমার বান্ধবী রিনা তোদের শপিং মলে দেখেছে। সৌরভ দেখলো, ও ধরা পড়ে গেছে মায়ের কাছে,আর লুকানোর উপায় নেই। মায়ের চাপে বাধ্য হয়ে মুখ খুললো, “সুস্মিতা আর আমি একই কলেজে পড়তাম, দুজনে দুজনকে ভালবাসতাম। কিন্তু কেউ কাউকে সে কথা কোনোদিন বলি নি। আজ চার মাস হলো সুস্মিতা আমাদের অফিসে জয়েন করেছে।” মাঝখানে বহু বছর ওর সাথে যোগাযোগ ছিল না। আর ওর কোনো ফোন নম্বরও আমার কাছে ছিল না। অনেকদিন বাদে অফিসে দেখা।”
    মা ছেলের এই এই কথা শুনে সুমি বললো, “মা তোমার ছেলের সাথে এক সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, আমি কাল আমার বাবা মায়ের কাছে চলে যাব।”
    ” না সুমি তুই কোথাও যাবি না। তুই এই বাড়িতেই থাকবি। আর সৌরভ এই বাড়ি আমার। তুই আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি।” সৌরভ বললো,”সুমির জন্য তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিলে মা!” অনিতা দেবী বললেন,”তুই বিবাহিত হয়ে রাস্তা, ঘাটে প্রেম করে আমার মান সম্মান নষ্ট করবি আর আমি তোকে আদর করবো? সুমিকে আমি দেখে এনেছি, ওর ভালো মন্দ আমাকে দেখতে হবে।” সুমি বললো, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাকে ডিভোর্স দিও। আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম।”
    অনিতা দেবী সুমিকে বললেন, “আজ থেকে তুই আর আমি এই বাড়ীতে থাকবো। আমি আবার তোর বিয়ের ব্যাবস্থা করে তোর নতুন সংসার সাজিয়ে দেব, আজ এই প্রতিজ্ঞা করলাম। আমি তোর মা, তোর সুখে থাকার রাস্তা যে আমাকেই খুঁজে দিতে হবে।” সুমি শাশুড়ি মা-কে ধরে খুব কাঁদল। সৌরভ যে তার স্বামী, এত সহজে কি তাকে ভোলা যায়? অনিতা দেবী বললেন,”কাঁদিস না, তোকে অনেকদূর যেতে হবে, সৌরভ যদি তোকে ভুলে অন্য মেয়ের হাত ধরতে পারে তাহলে তুই কেন ওকে ভুলতে পারবি না। সামনের দিকে তাকা, পিছন দিকে নয়। নে খাবার টেবিলে চল, আমি তোর খাবারের ব্যাবস্থা করছি”
    সুমি বললো,”আসছি মা।”

  • গল্প

    গল্প- ভাই ফোঁটা

    ভাই ফোঁটা
    -জয়তী মিত্র

     

     

    আজ সকাল থেকেই দেবযানীর খুব ব্যস্ততা। ভোর হতেই ভাই ফোঁটার উপহার, বিভিন্ন রকম মিষ্টি নিয়ে ছুটলো অনাথ আশ্রমে। সেখানে তার ভাইয়েরা দিদির থেকে ফোঁটা নেবার জন্যে অপেক্ষা করছে, কখন তাদের দিদি আসবে আর তাদের ফোঁটা দেবে।
    দেবযানী তিন বছর হল এই অনাথ আশ্রমে এসে ভাইদের ফোঁটা দেয়। নিজে একটা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে। বিয়ে হবার পর চার বছর হলো বরের সাথে ওনার কর্মস্থলে আসে দেবযানী। এইখানে এসেই অনেক চেষ্টা করে চাকরিটা পায়।

    দেবযানী বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা সরকারী চাকরি করতেন, মা গৃহবধু। ছোটো থেকেই তার আবদার ছিল মায়ের কাছে একটা ভাই এনে দেবার জন্য। তার স্কুলের বন্ধুরা সবাই ভাই ফোঁটা দিতে পারে, তার ভাই নেই বলে তার আর ফোঁটা দেওয়া হয় না। ভাইফোঁটার দিন আশেপাশের বাড়ি থেকে, উলু ধ্বনি শঙ্খ, ধ্বনি শুনেই তার কান্না শুরু হতো। মাকে বলতো, সবাই ভাইকে ফোঁটা দিচ্ছে। মেয়ের কান্না শুনে মা বললো, যা পাশের বাড়ি থেকে রনিকে ডেকে নিয়ে আয়। ওর মাকে আমি বলেছি তুই ওকে এই বছর থেকে ফোঁটা দিবি। শুনে দেবী কি খুশি। মা, বাবা তাকে দেবী বলেই ডাকতো। ছুটে গিয়ে রনিকে ডেকে এনে তাকে ফোঁটা দেয় দেবী। মা তার নতুন ভাইয়ের জন্য পোলাও, মাংস রান্না করে, বাবা নানারকম মিষ্টি নিয়ে আসে। রনির জন্য নতুন জামা নিয়ে আসে। রনির বোন ছিল না, সেও নতুন মিষ্টি একটা বোন পেয়ে খুব খুশি হয়। সেও বোনকে অনেক চকলেট উপহার দেয়। বেশ ধূমধাম করে ভাই ফোঁটার উৎসব শেষ হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর দেবী রনিকে ফোঁটা দেয়। দুইজনের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কালের নিয়ম ধরে সময় এগিয়ে চলে। রনি এখন কর্মসূত্রে লন্ডনে থাকে।

    দেবযানীরও বিয়ে হয়ে যায়। তার বাবা, মাও আজ নেই। রনির সাথে আজও যোগাযোগ আছে দেবযানীর। মাঝেমাঝেই ফোনে কথা হয়। ভাই ফোঁটার দিন আজও রনি ভিডিও কলে ভার্চুয়াল ফোঁটা নেয় বোনের থেকে, আর উপহারও পাঠিয়ে দেয়।

    দেবযানীর অফিস যাবার পথে একটা অনাথ আশ্রম পড়ে। একদিন সেখানে গিয়ে ছোটো ছেলেগুলোকে দেখে খুব কষ্ট লাগে দেবীর। ওদের তো আপনজন বলতে কেউ নেই। হঠাৎ তার মাথায় আসে এই অনাথ ছেলেগুলোকে ফোঁটা দিলে তো বেশ ভালই হবে। ওরাও একটা দিদি পাবে আর আমিও একসাথে কত ভাই পাবো। যা ভাবা তাই কাজ। দেবীর স্বামী সঞ্জয় খুব উদার মনের মানুষ। দেবীর কাছে তার মনের ইচ্ছার কথা শুনে দেবীকে মত দেয় অনাথ ছেলেদের ফোঁটা দিতে। দেবী তো আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে যায়। সেই থেকে তিন বছর ধরে দেবী এই আশ্রমে ফোঁটা দিতে আসে।
    দেবীকে দেখতে পেয়ে তার ভাইয়েরা একসাথে আনন্দে চিৎকার করে উঠে বলে, ওই তো দিদি এসে গেছে, এইবার আমাদের ফোঁটা হবে। কত উপহার পাব দিদির কাছ থেকে। আজ আশ্রমের চারদিকে শুধু খুশির আমেজ। শুধু ফোঁটাই নয়, দিদি বাজিও এনেছে ভাইদের জন্য। সন্ধ্যার পর সেগুলো ফাটানো শেষ হলে তার পর ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান শেষ হবে।
    দীপাবলীর আলোকে উদ্ভাসিত হোক তার ভাইদের জীবন। এইটুকু আনন্দ ভাইদের দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছে দেবী।

  • গল্প

    গল্প- মুক্তি

    মুক্তি
    – জয়তী মিত্র

     

     

    শোনো রণ আমি আর এক মুহূর্ত এই বাড়ীতে থাকতে পারছি না। তোমার মা, বাবা খুব ভালো মনের মানুষ ওনাদের নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই,কিন্তু ওই যে তোমার পিসি ঠাকুমা, তোমার ঠাকুমা, আর তোমার জেঠিমা এদের নিয়েই আমার সমস্যা। সারাক্ষণ আমার পিছনে পড়ে আছে। বলে কিনা, সারাদিন ঘোমটা দিয়ে থাকতে, তোমার সাথে রাত বারোটার আগে কথা বলা যাবে না, যখন তখন কোথাও যাওয়া যাবে না। নমাসে, ছয়মাসে বাপের বাড়ি যেতে পারবো এইসব নাকি এই বাড়ির নিয়ম। এইগুলো আমাকে মেনে চলতে হবে। এ কোন যুগে পড়ে আছে তোমার বাড়ির লোক। এই সব তো মধ্য যুগীয় বর্বরতার সমান। এই যুগে এইসব মানায় নাকি? এখন ভাবছি তোমাকে ভালোবেসে আমি ভুল করেছি। একগাদা শ্বশুর, শাশুড়ি নিয়ে আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে এই বাড়ীতে। আমি চিরকাল স্বাধীন ভাবে বেঁচেছি আর আজও সেইভাবেই বাঁচতে চাই। এইসব অদ্ভুত নিয়মের বেড়াজালে আমাকে কোনোদিন বাঁধতে পারবে না তোমরা। তাতে যদি তোমার সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয় সেও ভালো। সবে তিন মাস হলো বিয়ে হয়েছে এর মধ্যেই আমি হাঁফিয়ে উঠেছি আর পারছি না। চলো মা-বাবাকে নিয়ে আমরা অন্য কোথাও গিয়ে থাকি। তোমার বাবা-মা আমাকে খুব ভালোবাসেন, ওনাদের আমি হারাতে চাই না।
    রণ সুমিকে বললো, এটা কি করে সম্ভব? আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। দাদুর আমল থেকেই সকলে একসাথে থাকি। সেই পরম্পরা কি কখনো ভাঙ্গা যায়? আর বাবা-মা কোনোদিন এই বাড়ি এই পরিবার ছেড়ে কোথাও যাবে না। ঠাকুমা, জেঠিমার বয়স হয়েছে ওনারা আজ আছেন, কাল নেই একটু মানিয়ে চলো। আস্তে,আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি বাড়ির বড় ছেলে, সদ্য বিয়ে হয়েছে আমি কি তোমাকে নিয়ে আলাদা থাকতে পারি বলো। আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ।
    জানো রণ সেদিন আমার এক বান্ধবীর সাথে কথা হচ্ছিল, আমি এম এ তে ভর্তি হব, তা তোমার জেঠিমা, আমাকে বললেন,’অনেক পড়াশুনা করেছ বৌমা আর করতে হবে না, এবার মন দিয়ে সংসার করো। কদিন বাদে ছেলেপুলের মা হবে তাদের মানুষ করতে হবে। লেখাপড়ার কথা মাথা থেকে হাটাও।’ যে যাই বলুক আমি এম এ পড়বই। মাস্টার্স আমি করবই তাতে যদি এই বাড়ি আমাকে ছাড়তে হয় তাও আছে। মগের মুল্লুক নাকি যে ওনাদের কথামত আমাকে চলতে হবে।
    সুমির যে এই বাড়ির অনুশাসন মানতে খুব অসুবিধা হচ্ছে এটা সুমির শাশুড়ি মা খুব ভালো বুঝতে পারছে। সুমিকে ডেকে একদিন আড়ালে তিনি বললেন, ‘তুই কিছু চিন্তা করিস না মা, আমি সবসময় তোর সাথে আছি, তুই যাতে স্বাধীন ভাবে বাঁচতে প্যারিস তার ব্যবস্থা আমি করে দেবো। কেউ কিছু বুঝতে পারবে না। আমি সারাজীবন এই সংসারে শাশুড়ি মায়েদের নানান নিয়মের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হয়েছি, অসহ্য লাগলেও কেউ আমার দুঃখের কথা শোনে নি কোনোদিন। কিন্তু আজ আমি তোর শাশুড়ি কথা দিচ্ছি, যে কষ্ট আমি সারাজীবন ভোগ করেছি সেটা থেকে আমি তোকে মুক্তি দেবো মা। আমার ছেলেটাকে কিছু বলিস না। ও কি করবে বল, যা করার আমাকেই করতে হবে।’
    রণকে ডেকে তার মা বললেন, ‘তুই সুমিকে নিয়ে তোর অফিসের কাছাকাছি ঘর ভাড়া করে থাক তাহলে তোরা প্রাণ ভরে নিজেদের মত করে বাঁচতে পারবি, আমি আর তোর বাবা গিয়ে তোদের মাঝে মধ্যে দেখে আসবো। একদম চিন্তা করবি না। যা চলে যা, এই বাড়ীতে থাকলে সুমি মার সাথে তোর নিত্যদিন অশান্তি লাগবে। তোর ঠাকুমা, জেঠিমার কথা ওর সহ্য হবে না, তোকে সব কথা নালিশ করবে, আর তোর অশান্তি হবে। সারাদিন অফিস কাজ করার পর নিত্যদিন ঝামেলা ভালো লাগবে না। আমার কথা শোন বাবা, বাড়ীতে বলবি- তোর প্রমোশন হয়েছে, অফিস থেকে ফ্ল্যাট দিচ্ছে, তুই বৌমাকে নিয়ে এইবার থেকে সেইখানে থাকবি। তাতে যে যা বলে বলুক, আমি সেটা বুঝে নেবো।’
    মায়ের কথা মত ছেলে ঘর ঠিক করে বউকে নিয়ে যাবে সেই সময় পিসি ঠাকুমা বললেন, ‘নাতি যাচ্ছে যাক, নাত বউ এই বাড়িতেই থাক।’ সুমির শাশুড়ি মা বললেন, ‘না সেটা হয় না নতুন বিয়ে হয়েছে ওদের। দুজনে একসাথে থাকবে।’
    তারপর সুমির কাছে গিয়ে কানে কানে বললেন, ‘নে আর দেরি করিস না, আজই যা, আমি তোকে মুক্তি দিলাম। তোর সব স্বপ্ন পূরণ কর। ডানা মেলে দুটিতে উড়ে বেড়া।’ আমি আর তোর বাবা গিয়ে তোদের সংসার গুছিয়ে দিয়ে আসব। সুমি শাশুড়ি মা-কে জড়িয়ে ধরে আদর করে বললো, ‘তোমার মত শাশুড়ি মা যেন সব মেয়ে পায়, তুমি শুধু আমার শাশুড়ি মা নও, তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী। আমার আরো একটা মা।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- সেলসম্যান

    সেলসম্যান
    -জয়তী মিত্র

     

     

    সারাদিন দরজায় দরজায় জিনিসপত্র বিক্রি করার পর একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলো সৌরভ। চায়ে চুমুক দিতেই এক নিমেষে তার সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল, এই পাড়াতেই তো রিমিদের বাড়ি ছিল। বহু বছর পর এই পাড়াতে এলাম। যদিও এই পাড়ায় আসার প্রথম অভিজ্ঞতা তার মোটেও ভালো নয়। এত বছর পরেও তার অপমানিত হবার স্মৃতি মনের গভীরে আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে।
    রিমি আর সৌরভ দুজনে একই মাস্টার মহাশয়ের কাছে বাংলা পড়তে যেত। দুজনেই তখন একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। এক জায়গায় পড়ার সুবাদে নোটস আদান প্রদান হতে হতে কখন যে দুজনে ভালোবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছিল, দুজনের কেউ সেটা বুঝতে পারেনি। পড়াশুনার পাশাপাশি চলতে লাগলো চুটিয়ে প্রেম পর্ব। মাস্টার মহাশয়ের বাড়ির কিছু দূরে গঙ্গা নদীর পাড়ে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল। সেখানে গিয়ে তারা মাঝে মধ্যে বসতো, কত রঙিন স্বপ্নের জাল বুনতো। কত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতো। সৌরভ বলতো, দুজনে অনেকদূর পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবে। তখন আর বাড়ির লোকেরা আপত্তি করতে পারবে না।

    মানুষের সব আশা এক জীবনে বাস্তবায়িত হয় না। একদিন দুজনকে একসাথে দেখে রিমির দাদার এক বন্ধু রিমিদের বাড়িতে সব বলে দেয়। শুরু হয় রিমির ওপর নির্যাতন। রিমির বাবা ছিলেন খুব রক্ষণশীল প্রকৃতির, তার বাড়ির মেয়ে পথে ঘাটে ঘুরে প্রেম করে বেড়াচ্ছে এটা তিনি মেনে নিতে পারলেন না। রিমির বাইরে বেরোনো বন্ধ করে দিলেন তিনি। রিমি তো প্রথম কদিন খুব কান্না কাটি করলো। সৌরভও মনে মনে খুব ভেঙে পড়লো।
    একদিন রিমির সাথে দেখা করার জন্য তার বাড়ির কাছে আসতেই রিমির দাদার নজরে পড়ে যায়। পাড়ার সকলের সামনে দুই গালে সপাটে চড় মারে সৌরভকে রিমির দাদা। চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে সৌরভ ফিরে যায় নিজের বাড়িতে।
    তার পর বেশ কয়েক বছর পার হয়ে যায়। রিমির সাথে আর কোনোদিন দেখা হয় নি সৌরভের। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর নাকি রিমিকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল রিমির বাবা। এক বন্ধুর কাছে রিমির বিয়ের কথা শুনেছিল সৌরভ। সৌরভও বি এ পাশ করার পর রাতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতো আর দিনের বেলায় সেলসম্যানের কাজ করতো। সরকারী চাকরীর পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল।

    চা খাওয়া শেষ হলে দোকানের মালিককে রিমির কথা জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে বিয়ের এক বছরের মাথাতে পণ মেটাতে না পারায় পুড়িয়ে মারে রিমিকে।
    এই কথা শুনে সৌরভের চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল পড়তে থাকে। তার রিমিকে শেষ কালে পণের বলি হতে হল।
    একটা ফুলের মত নিষ্পাপ মেয়ের জীবনটা অকালে ঝরে গেল!
    একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো সৌরভ। 

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- ভোজন রসিক

    ভোজন রসিক
    – জয়তী মিত্র

     

     

    পাড়ার মোড়ের কাছে কালুদাকে দেখেই সঞ্জীব বললো, ‘আরে ও কালুদা ভালই হলো তোমার সাথে দেখা হয়ে, সামনের সপ্তাহে আমার ভাইপোর মুখে ভাত, তোমার আর বৌদির নিমন্ত্রন রইলো। কার্ডটা তুমি নাও, বৌদিকে আমি সময় করে বলে আসব। কালুদা বললো,’তোমাকে আর আসতে হবে না, আমি তোমার বৌদিকে বলে দেব।’ নিমন্ত্রণ পেয়ে কালুদা বেজায় খুশী।

    পাড়ার সবাই তাকে কালুদাই ডাকে। সুমিত নামটা সবাই ভুলে গেছে। গায়ের রং এমন কালো যে অন্ধকারে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। একবার তো পাড়ার হারু অন্ধকারে কালুদাকে দেখে ভূত বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। পুরো আবলুস কাঠের মতো গায়ের রং।
    নিমন্ত্রণ বাড়ি পেলে কালুদার মনটা আনন্দে ভরে যায়। রকমারী খাবারের পদগুলো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যখন বয়স কম ছিল তখন তো রীতিমতো খাবারের প্রতিযোগিতায় নামত কালুদা। তার ফার্স্ট প্রাইজ পাওয়া কেউ আটকাতে পারতো না।

    কালুদার ছোটো বেলা কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। কালু দা তখন কলেজে পড়ে। বন্ধুর এক দিদির বিয়েতে এক বালতি রসগোল্লা, কেজি দুই মাংস খেয়েছিল। সেই থেকে গ্রামের কোনো অনুষ্ঠান হলে শুধু কালুদর পেটরোগা বাবার নিমন্ত্রণ থাকত।

    এখন কালুদার বয়স ষাট। এই বয়সে এসেও নোলা যায়নি। কোনো অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রন পেলেই কালুদা বৌদিকে সাথে নিতেন না। নিজে বেশিরভাগ জায়গাতে একাই যাবার চেষ্টা করতেন। কারণ তাকে পাগলের মত খেতে দেখলে বৌদি যেভাবে চোখ পাকাতেন, তাতে তার কাপড়ে চোপড়ে হবার উপক্রম হতো। কালুদার বৌ ছিল খুব জাঁদরেল মহিলা। কালুদাকে সবসময় ধমকিয়ে, চমকিয়ে রাখতো। বৌকে খুব ভয় পেত কালুদা।
    এদিকে কালুদা বৌকে না জানিয়েই নিমন্ত্রণ বাড়ি হাজির। বৌদি সেদিন বাপের বাড়ি গিয়েছিল। বৌদি যখন বাড়ি থেকে ফিরলো, তখন দেখলো পাড়ার দু’টো ছেলে কালুদাকে রিকশায় চাপিয়ে বাড়ি নিয়ে আসছে। কালুদা নিমন্ত্রণ বাড়িতে এত খেয়েছে যে তার আর চলার ক্ষমতা নেই। বয়স যে অনেক বেড়ে গেছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।

    সব শুনে বৌদি বললো ‘কাল থেকে শুধু সেদ্ধ ভাত আর চারা মাছের ঝোল খাবে।’ বৌদির মুখে এইকথা শুনে কালুদার তখন চোখে জল।

    বেশ কদিন বৌয়ের তত্ত্বাবধানে ডায়েট মেনে কালুদার তো অবস্থা খারাপ। হাড়, জিরজিরে চেহারা হয়েছে। নিজেই নিজের দিকে তাকাতে পারছে না। ওদিকে বৌদি মাছ, মাংসের পদ রোজ খেয়ে যাচ্ছেন ইচ্ছা মত। সেদিন খাসির মাংসটা চেখে দেখতে চেয়েছিলেন কালুদা। বৌ এমন ধমকানি দিল ওনার খাবার ইচ্ছাটাই চলে গেলো।
    পরদিন কালুদার বৌ গিয়েছিল বোনের বাড়ি। ফ্রিজে ছিল আগের দিনের মাংস। কালুদাকে আর পায় কে? মাংসের বাটিটা বের করে কিছুক্ষণ ধরে আয়েশ করে মাংসটা সবটাই খেয়ে নিল কালুদা। বৌদি এসে মাংসের বাটি না পেয়ে কালুদাকে শুধু মারতে বাকি রেখেছিল।

  • গল্প

    গল্প- সোয়েটার

    সোয়েটার
    – জয়তী মিত্র

     

     

    আজ সকাল থেকে সুমনা দেবীর খুব মনটা খারাপ। মন খারাপের একমাত্র কারণ তার ছোট্ট ফুটফুটে নাতি। যে এখন কানাডায় থাকে। কোনোদিন তাকে দেখতে পাবে কিনা ভগবানই জানেন। কারণ তার একমাত্র ছেলে বিদেশে পাকাপাকি ভাবে থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। দেশে ফিরতে তার মন চায় না। বিদেশে বিলাস বহুল জীবনে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, নিজের দেশে কি আছে যে এইখানে পচে মরবে? তার এমন ব্রাইট ফিউচার এদেশে থেকে নষ্ট করবে নাকি। ছেলের বিয়ের ছবি, তাদের চার বছর পর সন্তান হবার ছবি দেখে আর ভিডিও কল করেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে সুমনা দেবীকে।
    মাঝে মাঝে ছেলের জন্য খুব কাঁদেন সুমনা দেবী। ওনার স্বামী বিমল বাবু বলেন,”এখন আর কেঁদে কি হবে? খুব তো শখ ছিল ছেলে বিদেশে চাকরি করবে। তোমার শখ তো পূরণ হয়েছে, আর কি চাই। ছেলে বৌমা, আর নাতিকে ভিডিও কল করে দেখেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাও।

    আজ নয় বছর হল রাজদীপ বিদেশে। এতগুলো বছরে একবারও নিজের বাড়ি আসার প্রয়োজন বোধ করেনি। বাবা, মাকেও একবার কি দেখতে ইচ্ছা করে না? এই প্রশ্নটা আজ এই কটা বছরে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে রাজদীপের বাবা-মায়ের মনে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির চাকরি পেয়ে আজ বিদেশের মাটিতে নিজের স্থায়ী বাসস্থান গড়ে নিয়েছে রাজদীপ।
    প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলা, পাড়ার ছোট্ট পুকুরটাতে সবাই মিলে সাঁতার কাটা, সরস্বতী পুজোতে হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলের পূজোর তদারকি করা, প্রথম প্রেমে পড়া, কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেমিকার সাথে সিনেমা দেখা সব এক লহমায় কি করে ভুলে গেল তার ছেলে কিছুতেই মাথাতে আসে না রাজদীপের মায়ের। বিদেশ যাবার আগেই তার ব্রেক আপ হয়ে গেছিলো ভাগ্যিস না হলে মেয়েটাও তার পথ চেয়ে বসে থাকতো। এইখানকার সব কিছুই নাকি ব্যাক ডেটেড।

    বিয়েও করেছে এক বিদেশিনীকে। বৌমাকে চাক্ষুষ দেখার সৌভাগ্য হয়নি সুমনা দেবীর। নাতি হবার আনন্দে আত্নহারা হয়ে গিয়ে ভেবেছিলেন এবার ছেলে ঠিক আসবে, তখন বৌমা আর নাতি দুই দেখা হবে। ওই যাকে বলে রথ দেখা, আর কলা বেচা। কিন্ত সে গুড়েও বালি। ছেলে এখন বিশাল প্রজেক্টের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, বৌমা আর নাতিকে দেখাতে আসা ছেলের পক্ষে সম্ভব নয়।
    নাতি হবার আনন্দে দোকানে গিয়ে উল-কাঁটা কিনে একটা লাল সোয়েটার বুনতে শুরু করেছিলেন সুমনা দেবী। রাজদীপ যখন ছোট ছিল কত সোয়েটার বুনে ছেলেকে পড়াতেন। এতবছর বাদে আবার উল-কাঁটা নিয়ে বেশ কতগুলো সোয়েটার বুনে রাখেন সুমনা দেবী। লাল, নীল, গোলাপী কত রকমের রঙের সোয়েটার। নাতির নাম ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি। ঋজু, নামটা ওনার খুব পছন্দ। কিন্তু ছেলে রেখেছে জ্যাক। বিদেশে থাকে তাই বিদেশী নাম রেখেছে ছেলে। ঋজু নামটা ওই দেশে মানবে না বলে মাকে জানিয়ে ছিল। মা খুব কষ্ট পেয়ে ছিল।
    তারপর আরো তিন বছর কেটে গেছে। ছেলের আর দেশে ফেরার সময় হয় নি। নাতির জন্য বানানো সোয়েটারগুলো বুকে জড়িয়ে শুধু চোখের জল ফেলেন সুমনা দেবী।

  • অণু গল্প

    অণু গল্প- শিক্ষার আলো

    শিক্ষার আলো
    – জয়তী মিত্র

     

     

    শোন লক্ষ্মী কাল থেকে বিল্টুকে কাজ করতে পাঠাবি, বুঝলি। অনেক হইছে তুর বেটার লিখাপড়া। ও সব লিখাপড়া বড়লোক বাবুদের জন্য বুঝলি, ও সব আমাদের মত দিন আনা, দিন খাওয়া লোকের জন্য লয় রে। কাল সকালে মোর সাথে বিল্টু যেন বাবুদের বাড়ি কাজে যায়। আট কেলাস অবধি পড়াশুনা করেছে,আর দরকার নাই রে। পেটের জ্বালা ওই বই-খাতা গুলান নিভাইতে পারবে নি রে।
    পরানের মুখের কথা শুনে লক্ষ্মীর মটকা গেল গরম হয়ে। লক্ষ্মী বললো,”মুই কত কষ্ট করে লোকের বাড়ি কাম করে, চেয়ে চিন্তে বিল্টুকে লিখাপড়া শিখাচ্ছি, আর তুই বাধা দিচ্ছিস। ওইসব অলক্ষুণে কথা একদম বলবিক লাই। আমাদের বিল্টু লিখাপড়া শিখে ওই বাবুদের মত চাকরি করবে, আর তুই বলছিস লিখাপড়া ছারান দিতে। মুই বেঁচে থাকতে এইসব হতে দিব লাই। আমার বল্টু অনেক কেলাস অবধি পড়াশুনা করবে। ওর জন্য আমি ঠিকা কাজ করার সাথে রান্নার কাজও লিয়েছি বাবুদের বাড়িতে। ওই মিত্র বাড়ির বউদিমনি আমাকে বুলেছে- লক্ষ্মী তোর ছেলের পড়াশুনার জন্য টাকা দেব, তুই ছেলেকে পড়া। বৌদি মনির কথাতে মুই অনেকটা ভরসা পেলাম রে।”
    বল্টু বলেছে রাতের বেলা আমাকে পড়াইবেক। মুইও লিখাপড়াটা শিখবো।
    পরান বলে, “তোর পোলা তোরে লিখাপড়া শিখাবে? ওই জন্য তোর আজকাল মুখে বুলি ফুটেছে। শোন লক্ষ্মী- এইসব লিখাপড়ার ভূতটা মাথা থেকে লাবিয়ে দে আর সংসারে মন দে।আজকাল কাজে কর্মে তোর মন নাই, সেদিন আধ পোড়া তরকারি দিলি, মুই কিছু বলিনি বটে, আর যদি এমন করিস পিটিয়ে তোর লিখাপড়ার ভূত তাড়াবো মনে রাখিস।”
    তারপর আস্তে, আস্তে বিল্টু মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ পাশ করলো। ভোরবেলা উঠে পরান যখন কাজে বের হতো, লক্ষ্মী তখন ছেলের কাছে বসতো লিখাপড়া শিখতে।
    লক্ষ্মী এখন লিখতে,পড়তে সব পারে। বস্তির বাচ্চাগুলোকে বিকেলবেলায় লক্ষ্মী পড়ায়। স্বামী পরাণকেও লক্ষ্মী টিপ ছাপ দেবার বদলে সই করতে শিখিয়েছে। পরান এখন আর টিপ ছাপ দেয় না। বস্তির লোকেদের সামনে নিজের নামটা সই করতে পেরে নিজে গর্ববোধ করে লক্ষ্মীকে আদর করে বলে,”লক্ষ্মী লিখাপড়া শিখার যে আনন্দটা আছে আজ বুঝতে পেরেছি রে। তুই সত্যি আমার ঘরের লক্ষ্মী।” বস্তির বাচ্চাগুলোকে অক্ষর শিখিয়ে লক্ষ্মী আজ গর্বিত। এই বয়সে এসে লক্ষ্মী মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ভবিষ্যতে আরো পড়াশোনা করে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখছে লক্ষ্মী। লক্ষ্মীর ছেলে আজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। লক্ষ্মীর অনুপ্রেরণাতেই আজ বস্তির ছেলে মেয়েগুলো শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে।

  • গল্প

    গল্প- খিদে

    খিদে
    – জয়তী মিত্র

     

     

    ঝড়ের পর চার দিন কেটে গেছে। আজ ত্রাণ শিবির থেকে চাঁপা আর একমাত্র ছেলে বল্টুকে নিয়ে ঘরে ফিরে এলো পরান। ঘরের উঠোনের কাছে এসে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো পরান, আর চাঁপা। এতো কষ্ট করে জমানো টাকাতে ঘরের চালে টিন লাগিয়েছিল সেটা আজ দুমড়ে, মুচড়ে পাশের জমিতে পড়ে রয়েছে। এক্ষুনি কী করে এই টিন কিনবে? হাতে তো টাকা নেই।ভাগ্যিস কিছু দরকারী জিনিস,জামাকাপড় টিনের বাক্সটা করে নিয়ে গিয়েছিল, না হলে সেগুলোও যেত।
    চাঁপা বললো,”কিছু টালি কিনে এখন সামাল দিতে হবে। না হলে বর্ষায় আরো খারাপ অবস্থা হবে।” “ভগবান খালি আমাদেরই মারে রে চাঁপা, আমরা গরীব, এটাই আমাদের অপরাধ। যাক আজকের রাতটা এই খোলা আকাশের নিচে কাটিয়ে দেই।কাল ভোর হলে বাবুদের বাড়ি থেকে পাওনা টাকাটা নিয়ে কিছু খাবার আর টালি কিনে নিয়ে আসবো। তুই চিন্তা করিস না।”

    পরান একজন রিকশা চালক। খুব সহজ সরল মানুষ। কোনও নেশা নেই। খুব ভদ্র। সারাদিন রিকশা চালিয়ে আবার সন্ধ্যায় যায় মোড়ের মাথাতে ফাস্ট ফুডের দোকানে কাজ করতে। সবসময় কি করে দুটো টাকা রোজগার করবে সেই চেষ্টা করে।
    চাঁপা বলে, “তোর মত মানুষ পেয়ে মোর জীবন ধন্য রে।”

    গতকাল রাত থেকে চাঁপার শরীর, মন কোনোটাই ভালো না। যার মাথাতে ছাদ নেই, পেটে ভাত নেই তার মন কি ভালো থাকে? পরান বলে, “মন খারাপ না করে বল্টুকে দু’মুঠো চিঁড়ে, গুড় খাইয়ে দে। আর দু’মুঠো শুকনো মুড়ি আমরা খাই।” চাঁপা মুড়িটুকু পরানকে দিয়ে নিজে জল খেয়ে বল্টুকে বুকে জড়িয়ে রাত কাটলো। সকালে উঠে বল্টুকে বললো,”বাবা, কাপড়ের আঁচলে বিস্কুট বাঁধা আছে খা। তোর বাবা খুব ভোরে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গেছে, খাবার কিনে আনলে ভালো করে খাবি।”
    বল্টু বললো, ‘তুমি কি খাবে মা? তোমার তো শরীর খারাপ, রাতে জল খেলে আমি দেখেছি।” চাঁপা বললো, “মায়েদের খিদে পায় না বাবা। আমার খিদে নেই..” বলতে,বলতে দু’চোখ জলে ভরে উঠলো।
    বল্টু ভাবলো, বাবা কখন আসবে খাবার নিয়ে কে জানে, আমাকেই কিছু করতে হবে, না খেলে যে মার আরোও শরীর খারাপ হবে।
    এই সব চিন্তা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বল্টু অনেক দুর গেল। তারপর পাকা রাস্তায় উঠে একটা দোতলা বাড়ির সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজাতেই এক বয়ষ্কা মহিলা বেরিয়ে এলো। বল্টু বললো, “আমাকে কিছু কাজ দেবেন, টাকা দিতে হবে না, খাবার দিলেই হবে।”

    ছেলেটাকে দেখে মহিলার খুব মায়া হলো। মহিলা ভাবলো, কতই বা বয়স হবে ছেলেটার এগারো, কি বারো। আমার নাতির বয়সী। ওকে দিয়ে কি কাজ করানো যায়?
    বাচ্চাটাকে দু’টো রুটি আর তরকারি দিয়ে মহিলা বললো,”তোকে কিছু কাজ করতে হবে না বাবা, এই নে পঞ্চাশ টাকা রাখ, কিছু খাবার কিনবি, এখন রুটি দুটো খেয়ে বাড়ি চলে যা।’
    বাচ্চাটা বললো, “আমাকে কাজ দিন। আমার মা বলেছে বিনা পরিশ্রমে কারোর থেকে কিছু নিতে নেই। কাজ করে তবে কিছু নিতে হয়।”
    মহিলা বললো, “ঠিক আছে, আমার ছোটো বাগানটা তুই ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে দে।” তারপর বাগান পরিষ্কার হলে বল্টু রুটি তরকারিটা প্যাকেটে ভরে নিল। মহিলা বললো, “তুই খেলি না।” বল্টু বললো,”আমার মা কাল থেকে কিছু খায় নি। মাকে খাবারটা দেব।” মহিলার দু’চোখ বেয়ে জল পড়তে লাগলো, মনে মনে উনি ভাবলেন, বল্টুর মা খুব ভাগ্যবতী যে এমন ছেলে পেয়েছে, আমার ছেলে তো বছরে একটা ফোনও করে খোঁজ নেয় না।

    মহিলা বল্টুকে রুটি দু’টো নিজের হাতে খাইয়ে ওর মায়ের জন্য আরো দু’টো রুটি তরকারি দিয়ে বললো,”যা মাকে গিয়ে দে গে। মা যে তোর অপেক্ষায় রয়েছে।”
    বল্টু তারপর বাড়ি গিয়ে মাকে রুটির প্যাকেটটা তুলে দিল।” চাঁপা বল্টুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।
    আর বল্টু তখন রুটির টুকরোগুলো ছিঁড়ে মাকে খাওয়াতে লাগলো। মায়ের খিদে মেটানোর ব্যবস্থা করতে পেরে বল্টু খুব খুশি হলো। 

You cannot copy content of this page