-
কবিতা- নিঃশব্দ শান্তি রমণীর গুণে
নিঃশব্দ শান্তি রমণীর গুণে
-বিকাশ দাস
রোজ জোগাড় করে
তুলে আনতে হয় বেশ কিছু টাটকা ফুল
ঘরের পুজোর ঘরে
শুনেছি ফুলের সুবাস থাকলে ঘরময়
সংসারের ভুল হয় না।
যদিও সংসার সুখের রমণীর গুণে।বৌ এর প্রতিদিনের রুটিন
সকাল সকাল স্নান সেরে সাঁজো কাপড় গা পেড়ে
নিজের হাতে মালা গাঁথা আধো অল্প হাঁটু গেড়ে
ঠিক মাপের হলো কিনা দুচোখে ঘুরিয়ে দেখা
গুনগুনিয়ে গানের দুকলির ধারায় শুশ্রুষামাখা
পায়ের বুড়ো আঙুলের উপর ভর দিয়ে
গোড়ালি যথা সম্ভব উঁচিয়ে
দেওয়ালে পেরেকে আটকানো কাঠের ফ্রেমে তাঁদের
কাগজের তেলশিটে ছবির মাথায় কালকের বাসি মালা ফেলে
আজকের টাটকা মালা ঝুলিয়ে রাখা
যাঁরা অনেক দিন আগেই চলে গেছেন
আমাদের আগামীদিনের অন্ধকার অনেকটা ফর্সা করে
কৌটোর ঝাঁকায় ক্ষয়ক্ষতির মাশুল চুকিয়ে ।যদিও নিঃশব্দ শান্তি রমণীর গুণে।
-
কবিতা- কঠিন ঠাঁই
কঠিন ঠাঁই
-বিকাশ দাস
যুবতী মধ্য শর্বরী
চাঁদকে বলেছিলো আগুনের ঢেলা
না যায় ছোঁয়া না যায় ফেলা।
আধুত অন্ধকার বিকলাঙ্গ বিকালবেলা
দু’পা জড়ানো তোমার নুপুর
শিখেয়েছিলো আমায় পথচলা।
আকাশের ভেতর বর্ষার জল
বুকের ভেতর চোখের জল
ছোটো ছোটো রোদ বৃষ্টি
অনাবিল ভালোলাগার দৃষ্টি।
ভালোবাসা ঘর বাজারে সবজির মধ্যে লুকোনো পোকা
ঘুম শান্তির কাঁচা রাস্তায় ছিটকে আসা ধোকা।
আজ ঘরছাড়া বেশ্যার বাড়ি চল।
সেখানে নাকি নেমেছে চাঁদের পাক ঢল।
সব তীর্থ দেব অরণ্য মরুভূমি;
সূর্য ডোবা বিবর্ণ আকাশ চুমি। -
কবিতা- সুন্দরী বেশ্যা
সুন্দরী বেশ্যা
-বিকাশ দাস
ওরা সূর্য ডুবলে ঘর সাজিয়ে দরজা খুলে থাকে দাঁড়িয়ে
ওরা শরীর জড়ায় ঝলসে কাপড়ে শরীরের আঁচ বাড়িয়ে
ওরা ঘুমোয় কম চোখের মজ্জায়
অনিচ্ছা সম্ভোগ সহ্যের শয্যায়
নগদ গুনে হাতে।ওরা দিনের গোচরে বেশি কালো, রাতের অন্ধকারে ফর্সা
ওরা বাস্তবে শরীর বিছিয়ে সহ্য করে আঘাতের তীক্ষ্ণ বর্শা
সাজের গয়নায় সুন্দরী বেশ্যা
ওরা পায় কম, খোয়ায় বেশি।ওরা নিজের প্রাণের দেরাজে ওরা নিজের মনের দেরাজে
নিজের আসল শরীর লুকিয়ে
এঁটো না হয় জেনে নিজের পুতুল শরীর কষ্ট যন্ত্রণার ভাঁজে
পুরুষের প্রবৃত্তির কাম ভুলিয়ে
বেলোয়ারি কাঁচের সুন্দরী বেশ্যা
ওরা রতি কম, সতী বেশি।ওরা পরের ঘর পুড়িয়ে নিজের ঘর বাঁধতে জানে না
ওরা পুরুষের ঘর বাঁধলে সমাজের বাসিন্দা মানে না
নিষিদ্ধ সন্ধ্যায় সুন্দরী বেশ্যা
ওরা রমণী কম,ঘরণী বেশি।ওরা পায়ের পাতায় আলতা পড়ে মেয়েদের মতো ব্রত কথা পড়ে
ওরা স্নান সেরে পুজো আর্চা করে ঘরের দিনপঞ্জিকার পাতা ধরে
মানুষী সভ্যতায় সুন্দরী বেশ্যা
ওরা নোংরা কম, মাটি বেশি।
ওরা পেটের তাগিদে পেট খোলা রাখে শরীর ভেঙে খায়
ওরা নিরুপায় ‘নিহতাঃপূর্বমেব’ মর্মের স্রোতে তলিয়ে যায়
সময়ের বাগানে সুন্দরী বেশ্যা
ওরা ঘাস কম, দূর্বা বেশি।
ওরা আজও কলঙ্কিত
আমাদেরই চরিত্রের কলঙ্কে।****
(নিহতাঃ পূর্বমেব – আগে থেকেই আমরা সব মরে আছি) -
কবিতা- টেডি ডে শুধু ভালোবাসার
টেডি ডে শুধু ভালোবাসার
-বিকাশ দাসটেডি বিয়ার নিছক খেলনা খেলার আদানপ্রদান নয়।
নরম তুলতুলে পশম কাপড়-চোপড়ের পরিধান নয়।
হাই হ্যালো বলা-কওয়া টুকুর মধ্যবর্তী সম্ভাষণ নয়।
টেডি বিয়ার আবেগের ইতিহাসে ভালোবাসার শ্বাস প্রশ্বাস
প্রিয় জন মানুষের গুণ-দোষের সাথে ভালোথাকার বিশ্বাস।যখন প্রেয়সীর
বিরহ-বিচ্ছেদ ব্যথা বেদনার বাদল
কাঁদে…
মান অভিমান দুঃখ-কষ্টের আদল
বাঁধে…
দাম্পত্য যাপনের অনীহার আমল
সাধে…
টেডি বিয়ার সঙ্গের সঙ্গতের আমোদ আহ্লাদে
এক নিমিষে উধাও।তার অবিরাম জাদুর মোহে
স্পর্শের স্নেহ আদরে সহজে সবকিছু যায় সহে।টেডি ডেতে, টেডি বিয়ার
সবার মনে প্রাণে অন্তরের অন্তর্যামী। ভগবানের চেয়ে অনেক দামি
পোশাক আশাক যদিও লাল নীল সবুজ বেগুনি কমলা হলুদ বাদামি।টেডি বিয়ার শুধু তোমাকে ছুঁয়ে
পেয়েছে জীবন মন খারাপের দিনে
মধুর থেকে মধুর ঠোঁটের হাসি চিনে
মনের মানুষ যাওয়ার ‘দূরত্ব’ বুকে করে ভুলে থাকে
শিশুসুলভ নিষ্পাপ স্বভাব বয়সের সব সংখ্যার বাঁকে।
বুঝতে পারে ভালোবাসার স্পর্শের গোপন অনুভূতি
চোখে মুখে আনন্দবিলাস সম্পর্ক মাখার প্রতিশ্রুতি।তোমাকে নিয়ে
সব দিন আমার টেডি ডে, আশঙ্কার আকাশে সূর্যোদয়
ঘুমের দোদুলে জেগে থাকার কোলে স্বাচ্ছন্দ্য অভয়। -
কবিতা- চকোলেট ডে
চকোলেট ডে
-বিকাশ দাসআরও বেশিক্ষণ সময় নিয়ে
কথার অভ্যন্তরে কথা দিয়ে
হাতের ভেতর হাত রেখে অন্ধকার নিংড়ে
জীবনের শেষ অবধি একসঙ্গে চলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে
আমাকে আসতে বলো তোমার কাছে…দৃষ্টির ভাঁজে
ছড়িয়ে ভালোবাসার উদাম আকাশ-প্রকৃতি
স্বাধীন যাপন চকোলেটের প্রশংসা-স্তুতি
যার অন্তঃস্থলে জীবনের অবাধ-অনুভূতি
নরম কোমল স্বাদ; আমোদের অফুরান প্রমাদ।চকোলেটের এক টুকরো তুমি হাতে তুলে
আমার মুখে এক টুকরো আমি হাতে তুলে
তোমার মুখে
নির্ভীক স্পর্শে ভালোবাসার আবেগের জড়তার গিঁট খুলে।
এক দু’জনের আলিঙ্গন ছুঁয়ে দু’চোখ বুজে ভালোবাসাবাসি
প্রতীক্ষার প্রদীপে ভালোবাসার মনোহর আলোর মুগ্ধকর হাসি
বলতে শুনি ভালো থেকো। হ্যাপি চকোলেট ডে। এবার আসি। -
কবিতা- রোজ ডে
রোজ ডে
-বিকাশ দাস
গোলাপ ভালোবাসার চিহ্ন
যে রঙেরই হোক না কেন
সুখের সূর্যোদয় তার সমস্ত পাতা
দুঃখ বেদনা হৃদয়ের গভীর যেন
ভালোবাসার শাশ্বতখোলা সরলতা।
শুকনো প্রাণের শ্বাস
সুগন্ধ ঘ্রাণের বিশ্বাস
নিশ্চুপ ছোঁয়ার আশ্বাস
বিজ্ঞানের পাতায় যত্নে রাখা।
বেঁচে থাকার ওষুধ স্বপ্নে মাখা।
ঊহ্য শীত শিশিরের ভোরে
রোদের আঁচের নিবিড় ধরে
রঙের কোমলতা আগলে রাখার স্মৃতি।
অনন্তকাল জীবনের উঠোন-ঘরে
মৃত্যু-কোষে বুকভরা ভালোবাসা প্রীতি। -
কবিতা- প্রপোজ ডে
প্রপোজ ডে
-বিকাশ দাস
সূর্য কবিতার অন্তঃস্থলে আকাশের, ভোর জীবনের অরণ্যে।
চাঁদ নিশ্চুপ শব্দ-জ্যোৎস্নার কথার, উত্তর শান্তির শরণ্যে।
স্বপ্নের গভীরে উন্মত্ত মন, ঘুমের নিবিড় দর্শনে
অনেকদূরের নির্জনে মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টির বর্ষণে
হৃদয়ের নিঃসঙ্গতা মনের কথা আলাদা করে বলার জন্য
চাঁদ ডুবতে আসে সাগরে দু’চোখ খুঁজতে আসে অরণ্য।
শেষমেশ সমস্ত সংকোচ ভেঙে ঘরের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে
পৃথিবীর দুয়ার ছেড়ে একাকীত্ব বলতে আসে দু’হাত বাড়িয়ে,
ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় আমাকে, ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় তোমাকে
দু’জনের অন্তরে একটাই ধরণী, কল্পনার অস্তিত্ব বাস্তবতার সরণি
আজীবন সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি, ভালোবেসে সুখদুঃখের অনুভূতি।
আমি কাছে এসে, তুমি কাছে এসে
নিঃস্বতার মধ্যে নির্বিশেষে জড়িয়ে থাকার নিঃশ্বাসে
ঠোঁটের রঙে অজস্র প্রজাপতি ভালোথাকার বিশ্বাসে
প্রতিদিনের চড়াই-উৎরাই শুভেচ্ছার বর্ণমালার রাসে। -
কবিতা- বাবার কাছে কন্যার নিবেদন
বাবার কাছে কন্যার নিবেদন
-বিকাশ দাস
বাবা, মাথা ঠুকে কথা দিলাম
তোমার জীবনের বোঝা হবো না
অভাবের গলার ফাঁস হবো না ।
দেয়াল দেওয়া আঁতুড় ঘরের ভুবন কাঁথায়
দুর্নিবার অনুভবের জীবন মেলার মুহূর্তের দরজা খুলে
আমাকে আসতে দাও সম্মতির নির্জনে
মায়ের প্রসব বেড়া খুলে ।তোমার কঠোর দিনে সমস্ত বিষাদ মুছে
আমি হবো তোমার চিন্তাহরণ নন্দিনী ।
কাজের কন্যা আষ্টেপৃষ্ঠে সংসারের ধারাপাতে
প্রহর জুড়ানো প্রশান্তির নিরাময় নিঃসঙ্গ বিনিদ্র রাতে ।উলসে সম্প্রীতির কামনা দৈবাৎ সুপ্ত হনন ভুলে
আমাকে আসতে দাও প্রত্যয়ের গাহনে
মায়ের জঠর ব্যথা খুলে ।রোজগার কাজ কর্ম ক্লান্তির স্পর্শে তোমার শরীর ঝাঁঝরা হলে
আমি হবো তোমার সান্ধ্য আকাশ ডানামেলে ঘরের দুয়ারে ঢলে ।ফসল তোলার উদ্বেগ জড়িয়ে দু’হাতের বাঁধন খুলে
আমাকে আসতে দাও রক্তের লালিমায়
মায়ের আনন্দ বিহান ফুলে ।আমি জানি পুরুষ পুত্র আগামী দিনের অর্থ বৃত্তির সুত্রধার
সব ঝি কন্যা উদ্বৃত্ত খরচপত্র সময়ের কাঁধে দেনার ভার ।
*** -
কবিতা- খারিজ বাক্যিলাপ
খারিজ বাক্যিলাপ
-বিকাশ দাস
অনেক গাছ পুঁতলাম
সময়মত রোদ জল দিলাম
তোর নদী থৈ থৈ করে আর বাড়লো নাতো ।খুশির গতর দিলাম
বছর বছর পোয়াতি হলাম
তোর সংসার ফলবন্ত-রমণ আর হলো নাতো ।চিঠি পত্তর দিলাম
অশ্রুজলে চোখ ভাসালাম
তোর জ্বালাপোড়ায় দোসর আর পেলি নাতো ।অগাধ উপায় দিলাম
সবদোষ ত্রুটি ঘাড়ে নিলাম
তোর পকেটে সততা খুঁজে আর পেলি নাতো ।কতো পাথর ভাঙলাম
বাঁঝামাটি কেটে ফসল ধরলাম
বুকের পাঁজর ভেঙে হৃদয় আর পেলি নাতো ।সম্পত্তির সিন্দুক দিলাম
সৎসঙ্গতির বাসিন্দা দিলাম
তোর মনুষ্যত্ব জাগান দিতে আর পারলি নাতো ।প্রচুর দৌলত দিলাম
সকালসন্ধ্যে সেলাম ঠুকলাম
তোর খোদার পদচরণ মাটিতে আর পড়লো নাতো ।এখন অবসর দিলাম
সব দরজা দুয়ার খুলে দিলাম
তোর হুইলচেয়ার ছেড়ে উঠতে আর পারলি নাতো । -
কবিতা- তুমি ফিরে যাও
তুমি ফিরে যাও
-বিকাশ দাস
তুমি ফিরে যাও…
যেখানে মাটি কথা বলে
যেখানে বৃষ্টি কথা বলে
নিঃশব্দ অনাবিল ছন্দে
নারী পুরুষ একাকার হলে।
তুমি ফিরে যাও….
যেখানে গাছ গাছালির ছাদে
পাখিরা ঘুমিয়ে পড়ে সোয়াস্তির শয্যায় ।
যেখানে আকাশ সন্ধ্যা দুয়ারে
খিল দিতে ভুল করে লজ্জায়।
কার দোষ বেশি কার কম হিসেবের ভাঙচুর
দেখার ফেনায় চুল ভেজে অস্হিরতায়
নারী পুরুষ একাকার হলে ।
তুমি ফিরে যাও….
যেখানে নিন্দের ছিটেয় জখম আঘাত লাগে
যেখানে প্রেম ভালবাসা অনুরাগ সহজে জাগে
নারী পুরুষ একাকার হলে ।
তুমি ফিরে যাও….
যেখানে বয়সের ভার হারায়না ভরসার আয়না
যেখানে শরীর পোহাই শরীরের আঁচে ষোলো আনা
সমেয়ের মাটিতে রাত-দুপুর
নারী পুরুষ একাকার হলে ।
তুমি ফিরে যাও…
যেখানে বৃষ্টির ভেতর সমস্ত আকাশ পৃথিবীর টানে একাকার
যেখানে জলের দেয়াল ভেঙ্গে ভালবাসার বাস্তুভিটের সমাহার
নুন ভাতে দু’হাতের আদরে
নারী পুরুষ একাকার হলে ।
তুমি ফিরে যাও…
যেখানে দু’চোখ মুদলে নদীর কিনারায় সাগর মেলে
যেখানে ঈশ্বর বহিস্কৃত ধর্মের জাতপাতের রঙ ঢেলে
কর্মের দিনমুজুরি রক্ত ঘামে
নারী পুরুষ একাকার হলে ।