• কবিতা

    ছোটোলোক

    ছোটোলোক
    -মলয় মালী

     

     

    শ্রমিক তুমি,
    তুমি দরিদ্র নিম্নশ্রেনী ।
    আমরা ঘৃণা করি তোমায়,উপহাস করি।
    কিন্তু মনে মনে জানি, এই যে আমার এত আড়ম্বর তোমারই জন্য।
    আমার ওই দালান কোঠা যাতে শুয়ে আমার প্রাণ জুড়ায়
    সে তো তোমারই রক্ত জল করা পরিশ্রম।
    এই যে গাড়ি যাতে চেপে আমি যাই দেশ বিদেশ
    তা তোমার পরিশ্রম।
    যে ভালো ভালো খাবার খাই রোজ
    তোমার ঘাম ঝরানো রোদে পোড়ানো চামড়ার সহ্য ক্ষমতার ফসল।
    তুমি সারাদিন এইসব করো আর উপভোগ করি আমি
    তাইতো তুমি ছোটোলোক।
    আমি নিজের গাড়ি চেপে যখন আরামে চলি পথে
    তুমি ছাদহীন গাড়ির পেছনে ঝুলে চলে যাও পরিবার ছেড়ে
    কোথায় সড়ক ভেঙ্গেছে সাড়তে।
    আমি যখন অফিসে পাঁচ তলায় মত্ত কাজে
    তুমি গ্রাউন্ড ফ্লোরে সারো পিলার
    যাতে আমি ভেঙে না পড়ি।
    আমার রাড়িতে যখন অনুষ্ঠান, তোমার মা, স্ত্রী ফুঁ দেয় উনানে
    রাঁধে পোড়া ভাত।
    যখন আমি পার্টিতে হাতে শ্যাম্পেন
    তুমি গাছতলায় বসে শুকনো চিঁঁড়ে খাও।
    আমি ফেলে দেই ভাত,পচা ফল
    তখন তুমি মাঠে ফলাও ফসল আমার জন্য।
    আমি ক্লান্ত হয়ে হাঁটতে পারিনা। তুমি রিক্সা করে পৌঁছে দাও বাড়ি।
    তাইতো তুমি ছোটোলোক।
    তোমার আমার বিরাট ফারাক।
    আমার ছেলে-মেয়ে খেলে পুতুল নিয়ে, তোমার সন্তান কাঁদে খিদেয়।
    তুমি পুতুল বানাও তখন
    এ সব কার জন্য?
    আমি জানি সব কিন্তু স্বীকার করার সাহস নেই।
    শুধু উপহাস দিয়ে ঢেকে রাখি কৃতজ্ঞতা
    আমরা যে বুদ্ধিমান,বড়লোক।

  • কবিতা

    জারজ

    জারজ
    -মলয় মালী

     

     

    জন্ম আমি নিয়েছি যখন,
    বাবা আমার আছে নিশ্চয়।
    সমাজ তবু করতে বিদ্রুপ,
    কেন আমারে জারজ কয়?
    কর্ণের কি দোষ ছিল মা,
    ফেলে দিয়েছিস নদীর জলে।
    কেন তবে দিয়েছিলি জন্ম,
    এমন নোংরা খেলার ছলে?
    তুই তো এখন রাজরানী মা,
    বাবাও সমাজের বিশিষ্ট।
    আমি একাই অনাথ আশ্রমে,
    তোদের ফেলা উচ্ছিষ্ট ।
    সমাজ তোদের নিয়েছে মেনে,
    নেয়নি শুধু আমাকে।
    বলতে পারিস আমার এমন
    দশার জন্য দায়ী কে?
    ঝোপের আড়ালে ফুর্তি করে
    তৈরি করলি আমার লাশ।
    তোদের রামায়ণ লিখতে তাই
    সাজতে হল কৃত্তিবাস ।
    পারলে আমায় করিস ক্ষমা,
    আমিও তোদের করেছি।
    আর যেন কেউ না হয় অনাথ
    তাই এ কলম ধরেছি।

You cannot copy content of this page