-
আমার পুজো
আমার পুজো
-রমলা মুখার্জীআমার পুজো জলে স্হলে
আমার পুজো অন্তরে…
কবিতার পাতায় পুজো
বাংলা ভাষার মন্তরে।
ছন্দ-ছড়ায় ছড়িয়ে পুজো
লিপি-লেখার আল্পনা…..
শিউলি কাশে নীল আকাশে
সৃষ্টি-সুখের জল্পনা।
আমার পুজো গ্রীষ্মে শীতে
ঋতু বদলে রয়…
জ্যোৎস্না-অমা সকাল দুপুর
বিকেল কথা কয়।
ঝড় বাদলে বর্ষা রাতে
মাদল চারিধারে…..
তোমায় দেখি দু চোখ ভরে
অঝর বারি-ধারে।
আমার পুজো ধূপ ধূনো দীপ
উপাচারে নয়,
বাঁশির তানে মিলন গানে
নিত্য পুজো হয়।
গানের সুরে বিশ্ব ঘুরে
পুজি আমি যেই….
কবিতার কথাকলি
ধরিয়ে দেয় খেই।
গল্প-গাথায় সাজিয়ে ডালা
পুজি তোমায় নিত্য..
সৃষ্টি-সুখ ঘোচায় দুখ
আলোয় ভরায় চিত্ত।
আমার পুজোয় রাঙবে আকাশ
সবুজ যখন মন….
সেই তো তোমায় পরম পাওয়ার
বিরলতম ক্ষণ। -
বিবর্তন
বিবর্তন
-রমলা মুখার্জীআরো কত অপেক্ষা
আরো কত পথ……..
বিবর্তনের রেখায় হেঁটে
জয়সূর্যের রথ।
গতিশীল বর্তনে
কোথায় সে মানুষ?
মুখোশধারী দ্বিপদ দানব
কত কথার ফানুস।
আরো কত রক্তে নেয়ে
সাগর থেকে আকাশ
শোধন হয়ে অক্সিজেনে
ভরবে মাটি, বাতাস।
আরো কত অভিব্যক্তির
আরো কত ধাপে
মুক্ত পাপে আসবে জাতক
বিশ্ব জ্বলে তাপে।
অনন্ত ঋণের বোঝা
আগামীতে শোধ
অবক্ষয়ের পাহাড় ঠেলে
উঠোন ভরা রোদ। -
মন যখন বসন্ত
মন যখন বসন্ত
-রমলা মুখার্জীএই ছেলেটা প্রেমের কাজল পরিয়েছিস দু চোখে
তোর জন্যে লালের ছটা আমার সারা মুখে।
বুকের মাঝে তির্ তির্ তির্ পুলক সারা গায়
শরীর মনে পাগল আমি কেবল তোকে চায়।এই ছেলেটা তুই যে আমার অতল সমুদ্দুর
উথাল পাথাল ঢেউএর দোলায় গুনগুনিয়ে সুর।
সেই সুরেতে ডানা মেলে মন-মাঝি উদাস
তুই ও আমি দুজনাতে তেঁতুল-পাতায় বাস।এই ছেলেটা তোর সঙ্গে ছেড়েছি বাপের ঘর
হিঁদুর মেয়ের হয়েছিস তুই মুসলমানী বর।
যে যা বলে বলুক লোকে পরোয়া করি না
আয়লা সুনামী ভূমিকম্পেও ভয়ে ডরি না।এই ছেলেটা দেখ না চেয়ে মা দিয়েছেন চিঠি
কত দিন পরে ছোঁব ওরে নিজের গাঁয়ের মাটি।
যে মাটিতে লালন-পালন সেকি ভোলা যায়
দু বাবা-মাই বিবাদ ভুলে বলছে, চলে আয়।এই ছেলেটা তোর সঙ্গে চল না গ্রামে যাই
আম-জাম-আতার বনে নতুন করে পাই।
দিঘির জলে পা ডুবিয়ে বসবো দুজনায়-
ভালবাসা এঁকে দেব প্রজাপতির ডানায়।এই ছেলেটা তোর সঙ্গে নদী হব পার…….
লাগলে কাদা মুছে নেব, মানবো না তো হার
গাছের ডালে পা দুলিয়ে শুনবো পাখির কুজন
ছোট্ট একটা ডিঙির ওপর শুধু আমরা দুজন।এই ছেলেটা ভয় নেই রে নতুন আলোর মুখ
সবাই মিলে মিশে গেছি সেই তো আসল সুখ।
কাঁটার বেড়া ডিঙিয়ে ভেঙে এগিয়ে অনেক যাই…….
হিন্দু আর মুসলমানে আলাদা কিছু তো নাই। -
উমা মা আসে শৈশব হাসে
উমা মা আসে শৈশব হাসে
– রমলা মুখার্জীআকাশের ইস্কুলে কালো মেঘ ঘরমুখি….
সোনা-মাখা রোদ-ছটা নীলাকাশে উঁকি ঝুঁকি।
ওরে দেখ সাদা মেঘ এল ‘খ’এ নাচতে…
ফুলো ফুলো তুলো তুলো পোষাকেতে সাজতে।প্রকৃতির ইস্কুলে শিউলিরা ফুটছে…..
তিতলি অলির দল শত মজা লুটছে।
কমলের কানে কানে গানে গানে ভ্রমরা…..
শালুকের দল বলে, “এসেছি গো আমারা।ছেলেদের ইস্কুলে আসেনি ছুটির ক্ষণ..
আগমনী-আগমনে মন ভারি উচাটন।
রঙবাজি তারাবাজি পড়ে আছে ঐ কোনে….
সব কবে রোদে দেবে বল কে তা কে বা জানে?কাশফুল বলে দুলে, ” এসো ছেলে পড়া ফেলে।
পাঁচ দিন তাক্ ধিন্ উড়ি কেন ডানা মেলে”।
পঞ্চমী দুপুরে . রিণি রিণি ঘন্টা……
রাশি রাশি হাসি খুশি বাঁধ ভাঙে মনটা। -
ইন্তেজার
ইন্তেজার
-রমলা মুখার্জীএকটা সাদা পায়রা ওড়াবো চিল-শকুনের ভাগাড়ে……
মৃত – বৎসার কান্না – ভেজা মাটিতে দূষণের বিষ – বাষ্প।
জীবন, পবিত্রতা, সততার
কবিতায় ভরাবো প্রতিটি ল্যাম্পপোষ্ট, আকাশ, বাতাস।
যন্ত্রের যন্ত্রণার ঢেউ শহরের আনাচে – কানাচে……..
বেলা শেষে রক্তিম গোধূলিতে শবের স্তুপ সরিয়ে সবুজের গহীনে হাজার মাইল পথ হাঁটবো…..বারুদের গন্ধে নয়
আমের ঘন ছায়ায়, বকুলের গন্ধে
বিশুদ্ধ অম্লজানে বাঁচতে চাই ।
কোজাগরী পূর্ণিমা বা ঈদের রাতে শান্ত পৃথিবীকে
ইমন – কল্যাণ নয় তো বেহাগে ভাসাতে চাই ।
ইন্তেজার, শুধুই ইন্তেজার সেই দিনটার । -
চোরাবালি থেকে দূরে
চোরাবালি থেকে দূরে
-রমলা মুখার্জীপাখির তেল পালকে জল জমে না, গড়িয়ে যায়…..
কচুপাতার জলবিন্দুরাও
অস্থির, চঞ্চল,
ভীরুরা ভিজতে ভয় পায় ।
তোমার চোরাবালি প্রেমের মত
পিছলে যায়, ধরা দেয় না ।ঝর্ণার স্রোতে মোমের প্রলেপ ভেঙে আমি কাকভেজা…..
চঞ্চুতে তেল নিয়ে দেহে মাখি না-
নই পদ্ম পাতার জল,
প্রেমে উৎসর্গ জীবন
জানে আশাবরি – ইমন ।
জলকণা শুষে নেয় শরীর,
প্রতিটি জীবিত কোষ ।
চোরাবালি থেকে হাঁটি বহুদূরে
সহস্র রাগিনীর সুরে……..
সুঁদুরী – গরাণের গহীনে –
অঝোরে বৃষ্টি ঝরে যেখানে । -
একটা প্রলয়ের প্রতীক্ষায়
একটা প্রলয়ের প্রতীক্ষায়
-রমলা মুখার্জীএকটা বড় ঝড় নামুক পৃথিবীর বুকে-
উড়ে যাক নাশকতা, সন্ত্রাস।
হানাহানির হাজিরা খাতায়
অনুপস্থিতির নীরবতায়
জীবন-মৃত জীব-কূল
শান্তিতে বাঁচুক।
লাল রক্তের বদলে
সবুজ বনের ছায়া নামুক…..
প্রচন্ড বেগে একটা প্রলয় আসুক
ওলট-পালট করে দিক সব
পৃথিবীর জ্বর কমে
শীতলতা ঘিরুক…..
মহাকাশের ময়লা যত
হয়ে যাক সাফ।
ওজনের সব ছ্যাঁদা রিপু হয়ে
লুপ্ত-প্রায় জীবেদের
জীবন জাগাক।
চরম পরিব্যক্তি একটা ঘটুক….
মানুষের জীবন থেকে
লোভ যাক বাদ।
নতুন সে প্রজাতি
পৃথিবীর সব কান্না মুছিয়ে
দ্বিধা,দ্বন্দ্ব,ভয় ঘুচিয়ে
ভালবাসার অক্সিজেনে
প্রতিটা ফুসফুস ভরাক -
বুকের মাঝে
বুকের মাঝে
-রমলা মুখার্জীআত্মীয়স্বজন আর অতিথিদের আগমনে উদিতির ছোট্ট বাড়িটা যেন সানাই-এর সুরের সাথে আনন্দে হাসছে। আজ যে তার মেয়ে ঝুলনের বিয়ে। প্রিয় বান্ধবীর মেয়ের বিয়েতে হিমিকাও দারুণ ব্যস্ত। অনেক কষ্টে সুমনের কাছ থেকে হিমিকা আজকের ছুটিটা আদায় করতে পেরেছে। অভিজ্ঞা বান্ধবীর ঘাড়ে বিয়ের প্রথাগত কাজকর্ম চাপিয়ে উদিতিও নিশ্চিন্ত। গত শ্রাবণেই তো হিমিকার মেয়ে খুশির বিয়ে হল। কত অশান্তি করেই না হোলো! খুশির পছন্দের আকাশ গরীব হলেও সৎ আর অনুভূতিপ্রবণ ছেলে। কিন্তু সুমন কিছুতেই বিয়েতে রাজি ছিল না। অর্থের দম্ভেই সুমন সব সময় ফুটছে,কারুর চাওয়া পাওয়াকে সে মূল্যই দেয় না। ঘর পোড়া গরু হিমিকা কিন্তু খুশিকে ভুল করতে দেয় নি।অনেক লড়াই করে সে খুশির আকাশ ছুঁয়েছে ।হঠাৎ হিমিকার চিন্তার সুতো কেটে যায় একজনের মিষ্টি ডাকে,
-হিমু, আমায় চিনতে পারছ?
-এই ডাক কি ভোলা যায়?
অতীত স্মৃতিতে হারিয়ে যায় হিমিকা, বড় সরকারী অফিসার সুমনের সাথে হিমিকার বাবা যখন হিমিকার বিয়ে ঠিক করলেন তখন গানের শিক্ষক তপনকে প্রত্যাখ্যান করে অনেক সুখের স্বপ্নে বিভোর হয়ে হিমিকা সুমনের গলায় মালা দিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সুমনের ভয়ঙ্কর মেজাজ সামলাতে সামলাতেই হিমিকার এতটা বছর কেটে গেছে ।-কি হল চুপ করে আছো কেন? সত্যিই কি চিনতে পার নি হিমু?
-চিনতে পেরেছি গো, তুমি ছাড়া এত আপন করে আমাকে আর কে ডাকবে বল?
-তুমি কি আর আগের মত গান কর? তোমার সুরেলা কন্ঠের সেই অসাধারণ গান কত দিন শুনিনি গো ।
-আর গান, দিনরাত মেজাজী বরের ফাইফরমাস খাটতে খাটতেই দিন চলে যায় ।
মনে পড়ে যায় হিমিকার তপনের সংগে নানান অনুষ্ঠানে গান করার কথা। কত পরিচিতি তখন হিমিকার,আর নন্দন চত্বরে তপনের সাথে কাটানো প্রেমের দিনগুলো…. সত্যিই সুখ যেন উপছে পড়ত। হিমিকার গাল বেয়ে নেমে আসে জলের ধারা।
-আমায় ক্ষমা করে দাও তপু ।
-ক্ষমা কিসের হিমু। আমাকে সম্পূর্ণ করে বোঝার তোমার এই উপলব্ধি সেটাই তো আমার পরম প্রাপ্তি। দুজনেই দুজনের বুকের মাঝে আছি সেটাই বা কম কিসের বল?