-
কবিতা- ধুকপুক নিঃশ্বাসে
ধুকপুক নিঃশ্বাসে
–রীণা চ্যাটার্জীকথা মতোই দেখা হল অতিমারি শেষে,
বদলে গেছে অনেক কিছুই,
বদলে গেছি তুমি-আমি,
তোমার আমি, আমার তুমি।
অচেনায় ভীত আমাদের সেই চেনা জগৎ-
এখানে এখন মুদ্রাষ্ফীতির প্রচণ্ড তাপে
আধ-কাঁচা ভাতেও মড়ক জাগে।
ক্ষুধাও যেন তীব্র সঙ্কটের মুখোমুখি…
ক্ষুধাকেই বারবার গিলে খেতে চায়!
এমন কথাই কি ছিল পৃথিবী?
প্রতিবার অতিমারি মড়ক জাগাবে!
প্রতিবার? নিত্য নতুন বেশে আসবে ফিরে
অভ্যাসে অভ্যস্ত হতে হতে…
মোচড় দেবে নবান্নের সমীকরণ?
শুধু কিছু পুরনো মন বেঁচে থাকবে
হুতাশনের তাপে-চাপে-ভাপে!
কথা ছিল দেখা হবে…
কথা মতো দেখাও হল…
অচেনায় ভেজা নিস্তব্ধ সময়-
তুমি কি চেয়েছিলে পৃথিবী এমন?
আমি কি চেয়েছিলাম? জানি না,
হয়তো জানা যায় না,
জানতে পারে না কেউই,
কিছু আগ্ৰাসী দৃষ্টি হঠকারিতায়
লুটে নেয় বেঁচে থাকা আশ্বাস।
তবুও জীবন থাকে বেঁচে,
বুকভরা আশা নিয়ে ধুকপুক নিঃশ্বাসে…
সাহসী ডানার ভরে অতিমারি ফিরে আসে। -
মন বড়ো ছোঁয়াচে
মন বড়ো ছোঁয়াচে
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
বেশ কয়েকটি মাস পর ফেরার প্রচেষ্টা- এর মাঝে শত, সহস্র চেষ্টা, ইচ্ছে সব ব্যর্থ হয়েছে। জানি না, এবারেও গুছিয়ে উঠতে পারব? না আবার সব এলোমেলো!
ঘটমান জগতে, ঘটে গেল অনেক কিছুই- কিছুটা জানতে পারলাম, বাকিটা অজান্তেই অজানার খামে বন্দী।
আলাপী মন- আমার আর এক পরিবার- বলতে অপরিসীম এক শান্তি বোধ করতাম। সম্পর্কের আচ্ছাদনে মুড়ে ছিল- ভাই, দাদাভাই, বন্ধু, বোন, দিদিভাই। সম্পর্কের দৃঢ়তা আজও আছে, যারা ভালোবেসে সঙ্গে আছে, তাদের ভালোবাসার উষ্ণতায় টের পাই ভুল ছিল না আমার ভাবনায়। তবে ভাবনার আড়ালেও ছিল কিছু বেনোজল, না কি মুখোশ- ঠিক মতো রূপকে নামকরণ করতে পারলাম না, এ আমার চরম অক্ষমতা। মুখোশ পরে থাকা হয়তো সভ্য যুগের বর্ম, শুধু কখন যেন স্বার্থের তিরে ছিঁড়ে গিয়ে কদর্য, নগ্ন রূপটা ভেসে ওঠে- সেই রূপটাই সম্বোধনের ভাষা বদলে দেয় এক লহমায়, পরিবারের পরিভাষায় ছেদ টেনে দেয়, মনটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। মনের এই চরম দুঃসময়ে আমার পরম বন্ধু, সুহৃদ, প্রিয় কবি অমল দাস সযত্নে আগলে রেখেছে আলাপী মন-এর পথচলা। কখনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি আমার কাজ আমি করছি না ‘কেন’? এইখানে মানুষ চেনায় ভুল হয়নি- এই পরম পাওয়া।মনের কথা বললে শেষ হয় না, বড়ো ছোঁয়াচে- কথায় কথায় নাকেকাঁদুনি।
গ্ৰীষ্ম, বর্ষা, শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের সন্ধ্যায় উৎসবের আমেজে আমরা কেমন আছি? জানতে, জানাতে খুব ইচ্ছে করছে। আচ্ছা, এই যে উৎসব পর্ব পেরিয়ে এলাম ঢাক, বাদ্যি, কাশ, পদ্ম, জবা, আলতা, সিঁদুর প্রদীপ, বাজি, ভিড়, হুল্লোড় সবকিছু নিয়ে উৎসবকে সবাই প্রাণঢালা আনন্দে বরণ করে নিতে পারল তো? পারলেই ভালো। যারা পারেনি, তাদের কথা ভাবার সময় বা দায় নিয়ে কি হবে? একবেলার সোহাগী খাবারে তো পিচুটি ঘষা চোখগুলো বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছে ফটো তুলতে- আনন্দ!
পেতে জানালেই হল, যে জানে না- দোষ তার। ঠিক বললাম তো বন্ধুরা!হৈমন্তী শিশিরের শিরশিরে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে। ভালো থাকা, ভালোবাসা পরস্পর জুড়ে থাক- এইটুকুই ঐকান্তিক কামনা।
-
ছলনায় মঙ্গল
ছলনায় মঙ্গল
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
“দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি
সত্য বলে আমি তবে কোন পথে ঢুকি?”খুব পরিচিত কথা বাঙলা মাধ্যমের সব ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষকমহলের কাছে। ভাবসম্প্রসারণের ভাব সম্প্রসারিত করতে অভ্যাসের কলমে কত শব্দের সুড়সুড়ানি।
ক্রমে পেরিয়ে যায় পরীক্ষার চৌকাঠ, পরে কাউকে অভ্যাস করতে দেখলেই মন ঠিক একবার মনে মনে আওড়ে নেয়। কিন্তু দ্ধার কি খোলে? মনে হয় না। তাই সত্য আজও বাইরে অপেক্ষায়। আমাদের সমাজের কান্ডারী নেতাদের, আপাতদৃষ্টিতে নজরে আসা বুদ্ধিজীবীদের দেখে সেই কথাটাই মনে হচ্ছে। নাহলে কিসের এতো অবক্ষয়? একটা ছোট্ট আয়না কি নেই, না কি নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার কোনো প্রয়োজন নেই? সত্য বাইরে অপেক্ষায় বাকি থাকল ভ্রম! সে তো লোহার বাসর ঘরেও সাপের উপস্থিতি আটকানো যায়নি। ভ্রমের বাসর ঘরটাই তো মন। দ্বার বন্ধ করে তাকে তো আরো গভীর আলিঙ্গনে আপন করে নেওয়াই তো রীতি। তাই হয়ে চলেছে ক্রমাগত, ক্রমান্বয়ে… ছলনার মঙ্গলকামনায়।
সমাজের ছবি-প্রতিছবি সব মনে হয় ছোট্ট মনটার মধ্যে অজান্তেই এঁকে দেওয়া হয়। আর আমরা চর্চিত শিক্ষায় বড়ো হয়ে উঠি প্রকৃত অর্থ অনুধাবন না করে। মনের মধ্যে এঁকে দেওয়া চিত্রগুলি নিজের মতো করে বেরঙীন হয়ে যায়। ভ্রমের পথের পথিক হয়ে জীবনটা বেশ কেটেই যায়। সত্যকে চেনা হয় না, জানা হয় না… সময় ঘড়ি ঘন্টা বাজিয়ে দেয়।
জৈষ্ঠ্যের প্রথম দিনে ভয়াবহ উষ্ণ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।
-
দিন বদলের পালায়
দিন বদলের পালায়
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
ধর্মের নামে বাদী-বিবাদী-র নতুন রূপে রূপসী আমার দেশ, আমার বাংলা, আমার জন্মভূমি, কর্মভূমি। জন্মযোগ, কর্মযোগ সব ধর্মীয় মেরুকরণের পথ দেখাচ্ছে। আমরা দেখছি- কারণ আমরা নিরীহ সংসারী নাগরিক। সংসারের বেড়াজালে জড়িয়ে পেঁচিয়ে পা খালি পেছনেই টেনে নিচ্ছি, এগোনোর ভয় মনের মধ্যে মাকড়সার জাল বুনছে। তবুও মাকড়সার জাল সরিয়ে মনটা মাঝে মাঝেই প্রশ্ন তোলে, ধর্ম দেখতে কেমন? ধর্মের রঙ কি? ধর্মের আহার কি? ধর্মের বাহার! আসলে বর্তমানে ধর্ম তো সবটাই রাজনৈতিক মস্তিষ্কপ্রসূত। শুধু বর্তমানকে দোষ দিয়ে লাভ নেই- রাজনৈতিক রঙ মেখে ধর্ম আগাগোড়াই চলছে, চলবেও। এখন শুধু উলঙ্গপনা ভর করেছে। একে অপরকে কতোটা আঘাত করতে পারবে হয়তো সেই পথেই মুষ্ঠিযোগ সফলতা খুঁজে পাবে। তাই তো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মানবতার বন্ধন, ভাষার শালীনতা, সম্বোধনের ঐতিহ্য।
বদলের যুগ এসেছে, বদলাচ্ছে চোখের সামনে সম্পর্কের সমীকরণ, স্নিগ্ধতা, পারস্পরিক স্নেহ-শ্রদ্ধার সূত্রটা বেশ নিম্নগামী, সহমর্মিতা হারাচ্ছে নিত্য… তবুও মন বলছে মানবিকতা আছে বলেই আজও পৃথিবীতে ভারসাম্য আছে। তাই কালের মেঘ কেটে গেলে আবার হাসবে ভরসার সূর্য।
উষ্ণতাবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। তবুও উৎসবের আমেজ ঠিক আসে, ঋতু বদলের পালায়। পঞ্জিকা মতে আজ বর্ষবরণের দ্বিতীয় দিন। নবীনের আহ্বানে জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
-
কবিতা- কিস্তিমাত
কিস্তিমাত
-রীণা চ্যাটার্জীবাড়িগুলো সব বদলে ফেলেছে ছাঁচ,
সদর-উঠোন মুছে দিয়ে উঠেছে পৃথক পাঁচ,
সারা পাড়া জুড়ে ওঠে না রাতের আওয়াজ,
তবুও মৃদু কড়ানাড়া মাঝ রাতে
ভেসে আসে মাঝে মাঝে,
“অবনী বাড়ি আছো?”
জানো না বুঝি ‘অবনী’ হয়েছে নিখোঁজ?
তবু তার খোঁজে নিঃঝুম তোলপাড়,
বেইমান জাত রাতের আঁধারেই ভেক ধরে
মুখোশের আড়ালে অবনী-কে খুঁজে যায়।লুকিয়েছে অবনী, হারিয়ে যাবে বলে,
সেই কথা পথ জানে আর জানে অবনীর প্রাণ, সংগ্ৰাম ছিল মুঠোবন্দী ডোরে…
রাতের পৃথিবীকে চিনে নিতে যতটুকু দেরী,
নিখোঁজ হয়েছে পথকে সঙ্গী করে,
অবনী ফেলে গেছে কথা দোরে,
অবনী চলে গেছে কাক ভোরে।
অবনী মিশে আছে অভিযাত্রিকের ভিড়ে।শুনছো ছদ্মবেশী, হয়েছে তোমার দেরী,
অনেক দেরী- ফিরে যাও এবার..
রাতঘুম আর নষ্ট করো না কড়া নেড়ে,
মুখোশ বদলেও হেরে গেছ তোমরা,
লক্ষ তারার ভিড়ে বেঁচে আছে আজও সে-
কিস্তিমাতের কিসমতে জিতে গেছে অবনী।(‘অবনী’ এক প্রতীকী চরিত্র রূপে ব্যবহার করা হয়েছে। যে সমাজের নগ্ন রূপের রহস্য ও ষড়যন্ত্র জানতে পেরে হারিয়ে বাঁচতে চেয়েছে নতুন পরিচয়ে। যদিও শ্রদ্ধেয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতা ‘অবনী বাড়ি আছো’- র মূল চরিত্রটির নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তবে তা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক অর্থে। তবুও অজান্তেই কারোর ভাবাবেগের আঘাতের কারণ হলে ক্ষমাপ্রার্থী)
-
নিরপেক্ষতা
নিরপেক্ষতা
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
‘নিরপেক্ষতা’ আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ একটি শব্দ। এও সর্বজনবিদিত যারা নিরেপক্ষ থাকতে পচ্ছন্দ করে তারাও আদ্যপান্ত নিরীহ। তারা ঝড়ঝাপ্টা ঝরা পতার মতো ঝেড়ে ফেলে জীবনের সুখী গৃহকোণে আবদ্ধ হয়ে যায় অনায়াসে। একটা দন্ডী কেটে নেয় খুব সুন্দর যুক্তি দিয়ে- ‘আমার তো কিছু নেই, আমি কেন কিছু বলব! আমার কাছে সবাই সমান’ কথাটা এইভাবে ভাবতে গেলে যার পায়ে কাঁচ ফোটেনি সে ধন্য ধন্য করে উঠবে, আর যার ফুটেছে? সেই জানে নিরপেক্ষতা শব্দটা কি অসম্ভব রকমের বিষাক্ত! জীবনের অর্থটাই বদলে যায়, বদলে যায় সম্পর্কের সমীকরণ- কেউ যখন সত্যি জেনেও নিরপেক্ষতায় ছদ্মবেশী হয়ে যায়!
সত্যি করে ভাবতে গেলে নিরপেক্ষতা নিরাপদ হলেও নিরীহ কতোটা? আসল কথা নিরপেক্ষতা হয়তো একটা মুখোশ- যা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নিখুঁত করে বানানো। নাহলে সত্যকে সত্য বলে মানতে, আর মিথ্যেকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পিঠের ওই গোল গোল টুকরো হাড়ের গঠনটা অনেক মজবুত হতে হয়। বিকৃত বা বিক্রিত মনের কাজ নয়। যার মজবুত সে বড়ো বদ, মুখরা- আরো কত বিশেষণ! কিন্তু সময়ে বড়ো প্রয়োজনীয় ওই মানুষগুলো যারা শিরদাঁড়া নিয়ে অনায়াসেই সত্যের মুখোমুখি হতে পারে। বিপদের দিনে মনে হয় এমন একটা নির্ভরযোগ্য লোক যদি পাশে থাকত, যে সমাজের বুকে সত্যের প্রতিচ্ছবিটা তুলে ধরত। দুর্ভাগ্যবশত সবার কাপলে জোটে না। তাই সত্যিটা অধরা থেকে যায় আর মিথ্যে প্রবাদী বচনে জিতে যায়- ‘চোরের মায়ের বড় গলা’। রামকৃষ্ণ দেব তো বলেই গেছেন- যার যেমন ভাব, তার তেমন লাভ।
লাভের পারানি গুনতে গুনতে জীবনটা কেটে যাবে।চৈত্রের প্রথম সন্ধ্যা, কালবৈশাখীর পূর্বাভাস থাকলেও চৈতালি আসে কি না সেটাই অপেক্ষার। যে এলোমেলো হাওয়া আর সোঁদা গন্ধ ছড়িয়ে জুড়িয়ে দিয়ে যাবে অপেক্ষার কয়েকটি প্রহর।
চৈতালি শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সকলের জন্য আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে। -
কবিতা- নিদ্রায় মগ্ন
নিদ্রায় মগ্ন
-রীণা চ্যাটার্জীশুনতে চেয়েছি কতবার… কত কথা
বলেছিলে কোনো কথা? কখনো?
মনে তো পড়ে না আবছা দূরের স্বরে’ও
বলিরেখা ঢেকে দিয়ে গেছে হয়তো!ভ্রান্তির শহরে অচেনা পথিক হাঁটে,
দৃষ্টির আঁশে অস্বচ্ছ ঘষা স্বপ্ন-
কলরব ওঠে নীরবতার নৈবেদ্য ঘিরে,
দেবহীন গৃহে আরতির ব্যর্থ বাদ্য।মনের সাথে উলঙ্গ তরজা চলে,
হারজিত কিছু নগ্নতা ফেরি করে,
ক্লান্তির বিষুবে সময় পেরিয়ে গেলে’ও
ব্যস্ততার দাপটে অপেক্ষা জাবর কাটে।ঘোর লাগা চোখে ঘুম আসে আর যায়
বৃষ্টি-কুহকে অবারিত খোলা দরবার,
ভুল করে যদি ভোলা মন প্রশ্ন শুধায়?
চোখে চোখ রেখে উত্তর পেতে চায়?পড়ে থাকবে অষ্ফুট তোমার প্রশ্ন,
ফেলে রেখে যাব আমার নির্বাক দৃষ্টি,
নৈঃশব্দ ছুঁয়ে সময়ের সীমানা এলে
নিথর নিদ্রায় মগ্ন আমার পৃথিবী। -
আজ তবে এইটুকু থাক
আজ তবে এইটুকু থাক…
–রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
শুরুটা আজ একটু অন্যরকম। সেদিন ছিল শিব চতুর্দশীর পুণ্যলগ্ন। দু’পক্ষ কাল পার করে প্রথম সম্পাদকীয়–
(আমার ইচ্ছা প্রকাশ
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
দু’পক্ষ কাল পার করে এলো সবাকার “আলাপী মন”। “আলাপী মন” আমার ইচ্ছার প্রকাশ। সাহিত্যের খুঁটিনাটি, খড়কুটো মূল্যবান করে রাখার আশা সাহিত্যের আঙিনায়। সবসময়ের সবক্ষেত্রেই দোসর আমার একমাত্র আত্মজা পরম সহিষ্ণুতায় মেল বন্ধন করালো আমার ইচ্ছা “আলাপী মন” এ। কৃতজ্ঞ আমার প্রিয় সাহিত্যিক বন্ধু অমল বাবুর কাছে, যাঁর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের আঙিনা গুণীজনদের সমাহারে সেজে উঠতো না। তিনি পরম বিশ্বাস, ভরসা দিয়ে হাত ধরেছেন “আলাপী মন”এর। সাজিয়ে দিয়েছেন অনেক পরিশ্রমে সাহিত্য কুসুম দিয়ে আমাদের আঙিনা। কৃতজ্ঞ আমি সকল লেখক লেখিকার কাছে যারা প্রথম দিন থেকেই আমাদের সাথী- স্বজন সাথী। অনেক দ্বিধা নিয়ে শুরু হয়েছিল পথ চলা, কালের বাণী কি আমাদের জানা নেই…তবে যাঁদের সহযোগিতা জন্ম লগ্ন থেকে আমরা পেলাম তাঁদের সাহিত্য আলাপন আগামীতেও আমাদের সমৃদ্ধ করবে এই আশায় থাকলাম।
সকল লেখক লেখিকার সাহিত্য রচনায় বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। উৎকর্ষতার বিচারে দুঃসাহস নিয়ে নয় কিছু রচনা মনে ছাপ ফেলেছে…’পঙ্গুত্বের জয়’, ‘দায়িত্ব’, ‘বসন্ত আমার গঙ্গাজল’, ‘ওই মেয়ে’, ‘স্মৃতিপট’ নাম নিয়ে বোধহয় তালিকা বৃদ্ধি পাবে, তাই সবাইকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।
কুশল কামনা করি সবার জন্য।)
প্রথমটুকু স্মৃতিচারণা। ইচ্ছে হল ফিরে দেখি একবার- পেরিয়ে এলাম পাঁচটি বসন্ত। শিখলাম অনেক কিছুই, জানলাম অনেক কিছু। ভুলভ্রান্তি শোধরানোর চেষ্টা তো অবশ্যই করেছি, জানি না কতোটা পেরেছি।
সার্থকতা- এ এক অমোঘ প্রশ্ন। তবে পথ চলতে চলতে মুখ-মুখোশের তফাৎ চিনেছি। এও জেনেছি- মুখোশ খুলবেই, ও ঢেকে রাখার নয়। তাই মুখের মুখোশী মুখের হাসিও দেখেছি, কষ্ট যে পাইনি তা নয়। তবে আজকাল সহ্য হয়ে গেছে। নম্রতা দেখেছি, ঔদ্ধত্য দেখেছি- তবে আমার জানি না কেন ছোট্ট থেকে মনে হয় প্রকৃত কলম সর্বদা নতমুখী। কলমে প্রতিবাদ সাজে, বিক্ষোভ সাজে কিন্তু ঔদ্ধত্য! কে জানে! তবে আজও অমলিন মুখের হাসি, অকৃত্রিম গলার স্বরে বড়ো শান্তি পাই। শুরু থেকে আজকের দিন পর্যন্ত যাঁরা আমাদের হাত ভালোবাসার বন্ধনে বেধে রেখেছেন তাঁদের কাছে আলাপী মন কৃতজ্ঞ। কারণ মনটুকু ভরসা করেই দিন কাটছে- মনের আলাপ বন্ধ হলে সেদিন? সে হয়তো ইচ্ছের ইচ্ছেমৃত্যু। বাকী দেহ তো নশ্বর…
ফাল্গুনী শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।
-
কয়েকটি রবিবার
কয়েকটি রবিবার
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
আজকের দুনিয়ায় নতুন ঢেউ উঠেছে- সামাজিক নানা মাধ্যমে পুরুষের কান্না (নাকি কান্না বললাম না, ওতে নারীর একছত্র অধিকার) শোনা যাচ্ছে। পুরুষ জাতি যে বড়ো অত্যাচারিত- তা কবিতা, কথকতা, গল্প, ভাষণে বেশ ফলাও করে বলা হচ্ছে, সমমনস্ক সমর্থকরা সমর্থনের বন্যায় (অবশ্যই man made বন্যা, বলতে দ্বিধা নেই) ভাসিয়ে দিচ্ছেন। দায়িত্ব আর কর্তব্যবোধে নুইয়ে পড়া কাঁধ নিয়ে ফ্যাকাসে জীবন-যৌবন নিয়ে বাছাদের বড়ো কষ্ট…
সত্যিই তো একজন সত্যিকারের পুরুষের যে অনেক দায়িত্ব- তা অস্বীকার করার বা তর্ক করার মতো মুর্খতা মোটেই শোভা পায়না। কিন্তু সত্যিকারের পুরুষ কজন! সে বিস্ময় থেকে মনের নিষ্কৃতি নেই।
সামাজিক মাধ্যমের তর্ক ছেড়ে একটু সাংসারিক প্রেক্ষাপটে চোখ রাখি। পুরু সর তোলা দুধ, ঘি, মাখন, ছানা, কাঁটা ছাড়া মাছের পেটি সে সব তো ভাঁড়ারের কথা, মা-ঠাকুমার ভালোবাসা- ও নিয়ে কথা হবে না। যে যার ভাগ্যে খায়…
আরও একটু গভীরে– দাম্পত্য সুখের ফসল সন্তান। প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে দেখুন মহামান্যরা একবার, চোখের সব জল শুকিয়ে যাবে- এ আমার কথা নয়, চিলেকোঠার পাশে কানে কানে বলা দুঃখের কথা, পরম্পরায় ভেসে চলেছে। আর ওই যে বিশেষ চারটি দিন? অশ্লীল শোনাবে বললে তাই না? চুপচাপ সহ্য করতে হয় কিছু যন্ত্রণা মুখে হাসি নিয়ে- জানতে দিতে নেই। এমন শিক্ষাই দিতে হয় মেয়েকে মা’র- তাঁর মা-ও তো দিয়েছিলেন। বয়স পেরিয়ে যায় আজকের মা কালকের ঠাকুমা-দিদিমা হয়ে যায়। তখন নতুন মেয়ের নতুন যন্ত্রণার দিন তাঁদের কাছেও বেহায়াপনা মনে হয়।
এ তো সব মেয়েদের নারী হয়ে ওঠার গল্প।
নারীর সংসার, জীবনের পাঠ- পৌরাণিক কাহিনি বিক্রম-বেতালের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই যে বেতাল রাজার পিঠে চড়ে বলল- সমস্ত রাস্তা মুখ বন্ধ করে চলতে হবে। মুখ খুললেই ছেড়ে চলে যাবে। পিঠে বোঝা চেপে গেল, গল্প শোনার পাঠ শুরু হল, তার থেকে কি শিখতে পারল শেষে তা বলতে হবে, না বললেই খন্ড খন্ড হয়ে যাবার হুমকি। যেই মুখ খুলল- সঙ্গে সঙ্গে আবার শর্তভঙ্গের দায় চেপে গেল। ছেড়ে গেল সেদিনের বহু কষ্টে পেরোনো পথটুকু। আবার নতুন ভোরের অপেক্ষায়…
সংসারে যেদিন মুখ খুলবে সেদিন আত্মীয়-পরিচিতের মুখগুলি আর চেনা যাবে না। আয়নাও অচেনা লাগবে…
আজকের নারী, আজকের পুরুষ- কি চায়, কি বোঝে, কিভাবে চলবে সে তাদের ইচ্ছে, তাদের দায়। তবে আমার কটা বিশুদ্ধ রবিবার চাই- একটা শীতের লেপমুড়ি দেওয়া রবিবার, একটা বর্ষায় ভেজা রবিবারে ধোঁয়া ওঠা উষ্ণ তরল পানীয় চাই, রবিবারের গ্ৰীষ্মের শুকনো দুপুর চাই, চাই কবিতার সঙ্গে একান্তে এক রবিবার, চাই নির্ভেজাল পুরুষোচিত আয়েসী রবিবার। বাকি সব চুলোয় যাক- জন্মজন্মান্তরে নারী জনম আপন করে নেব, শুধু কয়েকটি রবিবারের বিনিময়ে, বড়ো লোভ জাগে পুরুষালি রবিবারে।নতুন বছরের হিমেল হাওয়ায় মিশে থাকা মিঠে রোদ্দুরের উষ্ণ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।
(সব কথা সবার জন্য যেমন নয়, আবার সব কথা সবার সহ্য হবে, এমনও নয়- তবে বিতর্ক কাম্য নয়, কারণ এ নিতান্তই মনের কথা)
-
কবিতা- বন্ধু
বন্ধু
-রীণা চ্যাটার্জীবন্ধু…
জ্ঞান পরিখায় শিখে নেওয়া শব্দ;
একটি শব্দের মাঝে হাজার সোপান
অর্থবহ.. অর্থহীনতার শমিত শিখায়
যেমন যে টুকু জোটে..
ভাগ্যের হাতে হাতে..
খুঁজছি, বন্ধু পাইনি তোমায়।বন্ধু..
শুধুই পরিচয়? একসাথে পথচলা?
ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া..
সূত্রের বহমান ধর্মে- দিনের শেষে
কখনো অচেনা বা স্বার্থের খোলসে
মুখছবি চিনতে পারা? জরিপে
খুঁজেছি, বন্ধু পাইনি তোমায়।বন্ধু..
খুঁজছি আবেগে, গভীর আবেশে
ঘ্রাণে, প্রাণে, নতুনে-পুরাণে..
হাত বাড়ানো স্বার্থের আভাসে
পাই নি খুঁজে, বিবশ আমি..
বয়ে চলা জীবনের খাঁজে খাঁজে
বন্ধু, খুঁজে চলেছি তোমায়।বন্ধু..
খুঁজেছিলে কোনোদিন আমায়?
ভুল করে? বা ভ্রান্তিবিলাসে!
না কি ‘বন্ধু’ শুধুই কথার কথা?
যায় না পাওয়া জীবন পথে,
কেবল আকাশ কুসুম চাওয়া!
বন্ধু, খুঁজছি তবুও জীবন কিনারায়।