• কবিতা

    কবিতা- একাল-সেকাল

    একাল-সেকাল
    – শংকর হালদার

     

    পড়তে পড়তে-
    পড়ন্তি বেলার অবসান।
    রচনার মগডালে ঝিমানো গোধূলি আলো
    মিলিয়ে আসে পরবর্তী প্রত্যাশা নিয়ে।
    যুগের একাল সেকাল-
    কাহিনীর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে উপভোগ করি
    সে এক অন্যদিন।
    চোখের পাতায় জমাট ইতিহাস
    লিপিবদ্ধ করি অনায়াসে।
    স্মৃতির ভাঁজে লুকানো যত-
    পুরোনো দিনের ইতিকথা,
    যেখানে মন্থর জীবন জুড়ে
    বেঁচে থাকার অগ্রিম সংগ্রাম!
    আর পরিবর্তনের হ্যাঁচকা টানে
    ঘরসুদ্ধ ইতিহাস বদলে যায়
    জোড়ালো আলোয় ডানা ভিজিয়ে।
    সে এক একালের মর্মকথা।

  • কবিতা

    কবিতা- স্বাগত বর্ষা

    স্বাগত বর্ষা
    – শংকর হালদার

     

    বিশ্বাস বারুদ ঝাঁঝালো বোলে
    প্রীতির দাবি নিয়ে কাছে আসি নানা অছিলায়
    তব গর্ভ ফুঁড়ে বেড়ে ওঠা আমার,
    তাই অধিকারের দাবি রাখি জননী আবদারে।
    তব হাতছানি’তে রূপ বদলায় প্রকৃতি।
    স্বপ্ন ছড়ানো তব আঙিনা জুড়ে পক্ষীর কলরব
    পুষ্পের বাসর শয্যা আর,
    আনন্দে আন্দোলিত তটিনী বেদনার স্বরলিপি ভুলে
    রচনা করে এক নতুন অধ্যায়।
    যেখানে ভাষার ফোয়ারা খুশির ঢেউ তুলে
    উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায় সবুজের বারান্দা জুড়ে।
    ভেসে আসে পল্লী’র কবি কথা
    ভেসে আসে পল্লী গানের সুরেলা ছন্দ
    দ্বার হতে দ্বার…
    স্নেহ মায়া মমতা গোপন রাখে আপন পরিচয়
    আর ভালবাসার নীরব ধারা হয়ে নেমে আসে
    ধরনি’র বুকে।
    আজও তুমি অমৃত ধারার স্পর্শে গর্ভবতী-
    রূপবতী লাস্যময়ী এক নারী।
    স্বাগত বর্ষারানী আপন করুনা ধারার…
    তব আগমনে স্বপ্ন ডিঙায় ভাসে
    তপ্ত দিনে’র কুঞ্চিত প্রাণ…
    আরোও সবুজ হতে সবুজাভ বর্ণ ধারণে…

  • কবিতা

    কবিতা- ‘ঘর’

    ঘর
    -শংকর হালদার

     

    ঘর হল আসা যাওয়া’র প্রতীকী চন্দ্রবিন্দু
    যেখানে মায়া মমতার ঝোপগুলো শিকড় নিয়েছে দৃঢ় পায়ে,
    আর মন খারাপের খড়কুটো আঁকড়ে থাকে
    ঘর’কে ঘিরে ।

    ঘর বলতে কান্না হাসি’র খুনসুঁটি
    ঘর বলতে যেখানে অনেক প্রাণের মেলা
    অনেক আলাপচারিতা …

    স্বপ্নগুলো ডেকে নিয়ে আসা গভীর ভালবাসায়-
    যেখানে জন্ম নেয় নতুন প্রাণ,
    ভালবাসার দান হিসেবে।

    ঘর বলতে ছায়া ঘেরা উঠান
    আঁধার নেমে আসে আপন নিয়মে,
    যেখানে তুলসী তলায় দ্বীপের আলোয় শঙ্খ বেজে ওঠে ।

    ঘর বলতে গাঁয়ের শেষে সবুজে ঢাকা বাড়ি
    যেখানে মাথা গোঁজার সুখ আছে,
    আর দুঃখগুলোর ভাগাভাগি….

    ঘর বলতে জীর্ণ ঘাটে মনের কথা বলা
    যেখানে বিকেল হলে ফুল ফুটে যায় মনে,
    আর সবুজ ঘাসে দু’পা রেখে চলা ।

    ঘর বলতে সবাই’কে নিয়ে একই সুরে বাঁচা ।

  • কবিতা

    কবিতা- সত্যের বহিঃপ্রকাশ

    সত্যের বহিঃপ্রকাশ
    – শংকর হালদার

     

    প্রভাতে শুভ্র মেঘের উড়ো চিঠি
    তপ্ত ফাগুনে পিপাসার এক বিন্দু নীর।
    শরতে পেঁজা তুলোর আনাগোনা
    মৃদু মলয়ে কাশের উদ্দাম নৃত্য
    বাতাসে ভর কোরে শিউলির পায়চারী-
    এসব দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয় বর্ষার কালো মেঘ।

    শিরায় শিরায় আনন্দের শিহরণ
    সবুজের সমারোহ ভাবিয়ে তোলে এক নব্য ভাবনায়,
    যেখানে মলিনতার ম্লান ইতিহাস
    ম্লান হয়ে যায় নিমিষে।

    স্মৃতিপটে স্বপ্নের পাতা বাহার
    বসন্তের ঔরসে জন্ম নেয়…
    না ভাবা আশাতীত অতীত।

    বৈষম্যের বেদনার খোলা দরজা
    নিঃসঙ্গতায় ফেলে অশ্রু,
    দিকে দিকে বিভেদের সীমানা মাথা চাড়া দেয়,
    অহরহ আঁচড় টানে তীক্ষ্ম ধারালো নখে।
    হাজার জলদ রাশি ফুঁড়ে ওঠে
    উৎসের সন্ধানী চোখ।

    প্রকৃতির নিরলস সাহচর্যে পরিপূর্ণ সমাজ
    কিন্তু, সমাজ স্বার্থের পরকাষ্ঠা,
    কামরাঙার সংকীর্ণ পরিচয় বিপথগামী হলেও
    সত্যের পরম্পরা অবিচল পথ দেখায়
    দু’ বাহু তুলে…

  • কবিতা

    কবিতা- ছদ্মবেশী

    ছদ্মবেশী
    . -শংকর হালদার

     

    জীবনটা যেন এক রাজপথ,
    রূপ রস গন্ধ যেটুকু থাকার তা মাটিতে মিশেছে
    হিংস্র দৃষ্টির তৃষ্ণা মেটাতে ।
    খাতা ভরা একমুখী লেনদেন গুণের গা ঘেঁষে
    সংখ্যার গুণিতক নামতার মান রাখে,
    ওরা সমাজ ধারক বাহক শ্রম ঝড়ে সারা গা বেয়ে।
    নুনের অ-মূল্য হিসাব জমা থাকে পথের ধূলিকনায়…
    জমাট ইস্টক প্রস্তর খন্ডে,
    ওরা নিরব অশ্রু ঝড়ায়
    কেবল গলি দিয়ে মনটাকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া…
    তবু কি মুক্তির উপায় রুদ্ধ কারাগার, দীর্ঘ নিশ্বাস!
    বুক ভরা আর্তনাদ কেউ কি তা শুনতে পায়!
    শিখাহীন প্রাণটুকু আলোক খোঁজে
    চোখের পাতায় মরীচিকার স্বপ্ন
    বুকের খোপে ক্রিড়া করে ধুকধুক প্রাণ …
    চাপা পড়ে স্বার্থান্বেষী কূটনৈতিক করাল চক্রে।
    দেওয়া নেওয়ার হিসাব নিকাশ ফিরে দেখে নিও
    যেদিন গদির স্বপ্ন ফুরাবে,
    সেদিন মুখোশ ধারীর রক্তাক্ত ছিন্নশির পদতলে…

    কাহিনী কেবল কাহিনী হয়ে থাকে
    ইতিকথার ইতি টানে এমন এক বহুরূপী সমাজ ।

  • কবিতা

    কবিতা- জীবন সংগ্রাম

    জীবন সংগ্রাম
    – শংকর হালদার

    গহন অন্ধকূপে সংগ্রামী জীবন শুরু
    কোটি কোটি শুক্রাণু’র পরাজয়ের তিলকে
    ঘোষিত হয়েছে আপনার বিজয় বার্তা,
    তখন ছিল’না কোনো অবয়ব।
    সেই সংগ্রামী বীর তুমি আজকের সমাজে।
    তবে পরাজয়ের গ্লানি মাখা ভয়ার্ত চিত্তে পশ্চাতে কেন!
    নীরব পাষাণের মতো সংগ্রাম বিমুখ …
    জীবন তরঙ্গ আছড়ে পড়ে নদী তটে অক্ষত রেখে।
    জীবনে সন্তরণ প্রতিযোগীর বিজয়ী বীর তুমি।
    অ-থই সলিলে শ্যাওলার ভাসমান প্রাণ …
    দৃঢ় মূলে আঁকড়ে ভূমি ঊর্ধ্ব গগন দেখো ঝাঁঝালো আলোয়,
    জলদে’র বঙ্কিম স্মৃতি বাঁ হাতে সরিয়ে
    অভীষ্ট পূরণে নিক্ষেপ কর লক্ষ্যের বাণ
    সেই সংগ্রামী বীর তুমি।
    প্রলয়ের মুখে বিদ্রোহী চেতনায় উঠিয়ে নাও বৈঠা,
    সংগ্রামী চেতনায় এগিয়ে যাও পূর্বের স্মৃতি সম্মুখ রেখে,
    রণ সজ্জায় সজ্জিত তুমি
    পঞ্চানেন্দ্রিয় পূর্ণ অবয়ব ও অমূল্য শিরে
    সেই সংগ্রামী বীর তুমি।
    দশদিক ভেবে নাও করায়ত্ত মুক্তো প্রাঙ্গণ
    থেমে যেয়ো না সাফল্যের সীমানা ছুঁতে
    পশ্চাতে শৈবাল রাশি…
    এ সংগ্রাম জীবন সংগ্রাম, বেঁচে থাকার প্রেরণা
    যেখানে মুক্তির পথ খোঁজা বিনাশের নয়।
    যখন স্বার্থের লেলিহান শিখা উঠবে চরমে
    যখন বক্রদৃষ্টি কোনে কামনার ছাপ হামাগুড়ি দেয়….
    সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে,
    নিশ্চিত তুমি একজন দলছুট সৈনিক, সংগ্রামী বীর নয় ।

  • কবিতা

    কবিতা- যুগের নীতি

    যুগের নীতি
    – শংকর হালদার

     

    অঙ্কুরোদগমে’র পর অঙ্কুরোদগম নিয়মের ঘূর্ণাবর্তে,
    কেবলমাত্র খোলস খানা ফেলে রেখে ।
    রহস্যের উম্মোচন রহস্যের প্রতিকৃতি তুলে ধরা।
    ফেলে আসা স্মৃতিগুলো স্মৃতির মোড়কে মুড়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

    নতুনের আগমন নতুনকে সমাহিত করে ।
    ঝোড়ে যাওয়া পাতাগুলো ফিরে আসে না
    দাবি দাওয়া নিয়ে ।
    বরঞ্চ ভূখা ঞ্জানের খাবার যোগায় কয়েক- কালের জন্য ।
    কিন্তু, এ-কালের হৃদয়ে ছবি আঁকার ঢের লাইন
    এঁকে ও আঁকে না কেউ পড়ে থাকে গরিমার ছাপ ।

    চিনবে না আমাকে ছেলের পোষাকে মেয়ে হতে পারি,
    দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি বেপরোয়া হাসিতে চলে গেল চেনা অচেনা ভিড় ঠেলে।
    বায়সের হাত ধরে পিকের বংশ লাভ
    এমন-ই নীতি অনীতি’তে ভরে ওঠে সমাজ।
    সবুজের সবুজাভ ঘিরে নিপীড়নের আন্দোলন।
    গোধূলির বুক চিরে ভেসে ওঠে যত দুঃস্বপ্ন,
    হেতা সেথা ছড়িয়ে পড়ে বিবেকের ছিন্নভিন্ন রূপ
    ঝিমধরা চোখে ঘুম আসে ঘনঘন ।
    অশুভ আত্মা শ্বাস নেয় কোন্দরে কোন্দরে
    কল্পলোকের ইতিকথা ধরা পড়ে বাস্তব ভূমিতে।

    ধর্মের হামাগুড়ি পথে অ-ধর্মের আস্ফালন তরঙ্গ
    একে একে ঢেকে দেয় ব্যাপন প্রক্রিয়ায়।
    ক্ষণিকের মোহপথে নিরাশার সংকেত রেখা টানে দীর্ঘশ্বাসে,
    সময়ের সম্পর্ক ধরা দেয় সম্পর্কের আবর্তনে
    কালের নীতির করাল গ্রাস পিষে মারে পদে
    পদে
    তবুও চাওয়া পাওয়ার প্রত্যাশায় কামড়ে থাকে ভূমি।

  • কবিতা

    কবিতা- অবহেলিত নারী

    অবহেলিত নারী
    – শংকর হালদার

     

    সবুজের কোনো এক প্রান্তরে, অলি-গলি বা রাজপথ বুকে,
    আলেয়ার ন্যায় আবির্ভাব ঘটে বেহায়া চ্যানেল, ও সংবাদ কর্মী’র।
    ভাষার সাম্যতা হারিয়ে মেলে ধরে জনসমক্ষে
    প্রজাপতির মতো বিচিত্র ডানা।
    জল ভাতের ন্যায় বলাৎকার হয় নির্মল কমল পাপড়ি।
    জর্জরিত অর্জুন প্রশ্ন বানে
    বাঁধ ভাঙা অশ্রুতে প্লাবিত দু’কূল
    হরিণী চাওনিতে শত প্রার্থনা আর বোবা কান্না গোপন।
    দশ’পা পিছোলেও এগিয়ে আসে’না এক পা,
    ছলনা’র সমবেদনা জ্ঞাপন করে সমগোত্রীয়’রা।
    আসে প্রশাসন, আসে পৌরপিতা, পৌরমাতা
    অকাজের তমসায় ঢেকে যায় গোটা ইতিহাস।

    চিল,শকুন জনতার রং মেখে কৌতুক নাটিকা দেখে।

    অন্ধসমাজ বন্ধ্যাত্ব প্রশাসন।

    ঘাই মারে সমাজের কোঠরে কোঠরে পিপাসার্ত শের।

    অবহেলিত সমাজ চোখে বাসি পাপড়ির ন্যায়
    ঝরে যায় প্রতিনিয়ত।
    ভানু বিধূ তারকাপুঞ্জের মাঝে ওঠে’না. আলোড়ন,
    থাকে না প্রতিবাদ।
    সন্ন্যাসী আইন কানুন কেবল মুছে যায় একটা নাম খাতা থেকে।

  • কবিতা

    কবিতা- জীবন মানে

    জীবন মানে
    . -শংকর হালদার

     

    জীবন মানে এগিয়ে চলা,
    জীবন মানে সময়ের সাথে কথা বলা ।
    জীবন মানে থেমে থাকা নয় ।

    জীবন মানে বেঁচে থাকার গান,
    জীবন মানে সবুজের আহ্বান।
    জীবন মানে বিকিয়ে দেওয়া নয় ।

    জীবন মানে গোলাপের হাসি,
    জীবন মানে জোছনার শশী ।
    জীবন মানে পাংশু তো নয় ।

    জীবন মানে ফোটা না ফোটা ফুল,
    জীবন মানে নদীর দুকুল ।
    জীবন মানে জলরাশি নয় ।

    জীবন মানে হারিয়ে পাওয়া,
    জীবন মানে ঝড়ে যাওয়া ।
    জীবন মানে মরুভূমি নয় ।

  • কবিতা

    কবিতা- বিদ্রোহী

    বিদ্রোহী
    – শংকর হালদার

    মুছে ফেলেছি ডায়েরি থেকে কলম ও ব-কলম. এর নীতিগুলো…
    রাজপথ ছেড়ে সবুজ ঘাসে পা রেখেছি নিঃশর্তে মেনে নিয়েছি সব নীতি,
    ভেদাভেদ ভুলে ফুল ভেবে লিপ্ত হয়েছি. আলিঙ্গনে ।
    গঙ্গার পবিত্র বারি সিঞ্চনে নিরপেক্ষতার মন্ত্র. নেবো…
    তোমাদের কাছে ।
    প্রয়োজনে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি ।
    অসঙ্গতি রেখে সঙ্গতির মালা গেঁথে বিলিয়ে. দেবো…
    তোমাদের মাঝে ।
    যারা এখনও সংযত হতে পারোনি মোহিনী
    আবর্তন থেকে ,
    যারা এখনও সংযত হতে পারোনি ঈর্শ্বার
    গণ্ডি পেরিয়ে, স্বপ্নের আধুলি জমা থাক আপন ড্রয়ারে।
    বিনিময় চালু থাক ভাব ও ভালবাসার।
    পুজোর অর্ঘ্য ভেবে লেপে নেব সারা শরীরে
    দু’হাতে ভোরে ।
    বিষাদের তিক্ততা মুছে সাম্যের গান শোনাবো,
    যেখানে কেউ কোনোদিন ঈর্শ্বার কথা ভাবে’নি,
    কেউ যদি সুযোগের আড়ি পেতে
    বিষের বিম বাজায় … বর্ষার মজা খালের বিদ্রোহ করবো শুরু ।
    সন্ন্যাসী পরনে যদি কেউ আঘাত হানে
    শর্ত ভেঙে …
    বারুদের মতো নিমিষে বিদ্রোহ করতে পারি।
    ক্ষণিকের বিদ্রোহী হয়ে উঠতে পারি …

You cannot copy content of this page