অণু গল্প- বোন

বোন– শক্তি পুরকাইত   জানলার আড়াল থেকে সেদিন শ্রুতি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছিল হাতে তালি দেওয়া। পাশের বাড়ির হরিপদ মন্ডলের ছেলেকে নাচাতে এসে সেই প্রথম দেখল ঢোল বাজিয়ে কেমন করে নাচতে হয়। গান গাইতে হয়। সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল মাসিদের রং ঢং দেখবে বলে। চোখে চোখ পড়তে ওর খবর নিয়ে যায়, ‘মেয়েটা কাদের বাড়ির!’ সে […]

অণু গল্প – মাছি

অনুগল্প -মাছি-শক্তি পুরকাইত   ঘোষালদের বাড়ি আবার একটা শোকের ছায়া এসে পড়লো। গোটা বাড়ি কান্নায় ভেঙে পড়েছে। ঘোষাল বুড়োর একমাত্র ছেলের ডেড বডিটা সবে এসে নামিয়ে দিয়ে গেল শববাহী কাঁচের গাড়ি। উঠোনে শোয়ানো সদ্য মর্গ থেকে আসা ছেলে সুদীপ ঘোষালের মৃতদেহ। এতদিনের আত্ম অহংকার সব ভেঙে চুরমার করে দিল তার। ছেলেকে নিয়ে এত গর্ব করা […]

অণু গল্প- লন্ঠন

লন্ঠন– শক্তি পুরকাইত   আঃ আর পারছি না, ছেড়ে দাও! ও এসে পড়বে, ছেড়ে দাও! তখনও অন্ধকার রাতের চাঁদের আলোয় ফর্সা নিটোল স্তনের উপর মুখ দিয়ে রনজয়। এই সুযোগ আর কখনো আসবে না। একুশের যৌবনপ্রবনা শিউলিকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। বুকের একখন্ড শাড়ির আঁচল নৌকার পাঠাতনে পড়ে আছে। ঘুমন্ত শরীর বার বার রনজয়ের হাতের সমস্ত আঙুল […]

অনুগল্প- ডাক

ডাক-শক্তি পুরকাইত   বিপ্লবী অমূল্য প্রামানিকের ফাঁসি হয়ে গেছে। দেবজিতের চোখে তার মুখটা বার বার ভেসে উঠছে।জেলের ভিতর সে ঘুমোতে পারে না। উস্ পাশ করে। এক- এক করে সব কয়েদিরা ঘুমিয়ে পড়েছে। ইস্কুল পড়া ছাত্র সে দিন পিস্তল হাতে নিয়ে ছুটে ছিল ইংরেজ সাহেবকে মারবে বলে। টার্গেট গুলি করা।প্রথম গুলির শব্দ শুনেছিল সে। তারপর মুখে […]

অনুগল্প- ভাত

ভাত – শক্তি পুরকাইত দাদা শুনছ, একটু বাইরে আসবে প্রধান সাহেব ডেকেছে! দরজার বাইরে চেনা কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে ভাতের থালা থেকে খেতে খেতে উঠে পড়ে আকাশ। মাখানো ভাতের থালা ঢাকা দিয়ে দরজা খোলে। রহিম, মেঘনাথ, সুরেশ দাঁড়িয়ে। সে জিজ্ঞাসা করে, এতরাতে প্রধানসাহেব কেন ডাকল? তারা বলল, কিছুই জানি না! আকাশের মনের ভিতর একটা সংশয় বাসা […]

অণুগল্প- ঘুংঘুর নদীর পানি

ঘুংঘুর নদীর পানি– শক্তি পুরকাইত   বর্ষা শেষ হতে চলল, আকাশে এক ফোঁটাও বৃষ্টি নেই। ঘুংঘুর নদী শুকিয়ে কাঠ। মাটি হাঁ হয়ে আছে। প্রতিবেশীদের চোখে জল। একফোঁটা বৃষ্টির জন্য মানুষের এমন হয়, সওকত মিঞা এ বছর তা সাক্ষী । প্রতিবেশীদের বিপদ পড়লে সে পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, এটা নতুন নয়। আগা গোড়াই সে করে আসে। গ্রামে […]

অণুগল্প- ছায়া

ছায়া– শক্তি পুরকাইত ‘অকালে মায়ের মাথাটা খেয়ে, আমার হয়েছে যত জ্বালা! বিশ্বরূপকে বার বার বলেছিলুম, এই মা মরা মেয়েটার মুখ চেয়ে একটা বিয়ে কর। আমার তো বয়েস হচ্ছে, ওকে কে দেখবে, কে মানুষ করবে!’ জানলার ফাঁক দিয়ে এতক্ষণ ঠাকুমার কথাগুলো বার বার মনে করছিল, লীনা। ঠাকুমা ওকে বলতো তোকে বিয়ে দিয়েই তবে আমি দু’চোখের পাতা […]

অনুগল্প- বাঁক

বাঁক– শক্তি পুরকাইত   বাঁশের তৈরি লম্বা একটা বাঁক। সহজেই বেঁকে যায় বলে নাম বাঁক। তার নিচে ঝুলতে থাকে দু-একটা মাটির ভাঁড়। ভাঁড়ে বাবা মহাদেবের মাথায় ঢালার জন্য নদী থেকে তুলে আনা জল। মধুশ্রী বাঁক কাঁধে নিয়ে হাঁটতে থাকে। ‘বোম্ – বোম্ – বোম্’ বলতে বলতে। সজিত নাসিংহোমে ভর্তি, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। মুখে মধুশ্রী… […]

অনুগল্প- আন্দোলন

আন্দোলন-শক্তি পুরকাইত   নাম- রেহেনা বিবি, বয়স- সাতাশ বছর। দ্বিতীয় লাশটার মুখ থেকে কাপড় সরায় সুতনু রায়। হরিদেব পুর থানায় মাস দু’য়েক আগে এসেছে। লাশটা দেখে চমকে ওঠে। বাচ্চাটা যে ভাবে পুড়েছে, তা ভাবা যায় না। চোখের সামনে দাউ -দাউ করে জ্বলছে গোটা বস্তি। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে কেউ বাদ যায়নি। এ-ও ছুটেছে। কেউ সন্তান […]

অনুগল্প- ইছামতির কান্না

ইছামতির কান্না-শক্তি পুরকাইত   ‘কানাই, এ কানাই..’চেনা কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কানাই নৌকা বাইতে বাইতে ঘাটে আসে। সবুজ রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে পার্বতী। মাথার দু’পাশে চুল লাল ফিতে দিয়ে বিনুনি। কানাই নৌকা বেঁধে দিয়ে উপরে ওঠে। সোজা গিয়ে পার্বতীর পিছনে এসে দাঁড়ায়।-‘বল,কী হয়েছে, অমন চিৎকার করছিস কেন? চল না, আজ নৌকা নিয়ে ঘুরতে যাই। না, আজ […]