-
অণু গল্প- আজকের দূর্গা
আজকের দূর্গা
-শক্তি পুরকাইতকাঠের বোঝাটা মাথায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দূর্গা লক্ষ্য করে কেউ একজন তার দিকে এগিয়ে আসছে। বেলা পড়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। তাই সামান্য সামান্য অন্ধকার হওয়ায় দ্রুত পা চালাতে থাকে সে। গ্রামের মেয়ে-মদ্দরা ফিরে গেছে যে যার ঘরে। দূর্গাও ঘরমুখো। স্বামী একবছর হল ঘরছাড়া। পুলিশ আজও তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। দূর্গা পঞ্চায়াতের এক’শ দিনের কাজে নাম লিখিয়েছে। গ্রামের রাস্তার কাজ করে সংসার চালায়। ছায়াটা ক্রমশ আরো তার দিকে এগিয়ে আসছে। দূর্গা ভয় ভয় করে হাঁটতে থাকে। কাঠের বোঝা মাথায়। দূর্গা পড়ে যায়। রজতবাবু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে তার সুডৌল শরীর। সে এ পঞ্চায়েতের প্রধান। দূর্গার বুকের কাপড়টা মাটিতে পড়ে যা। রজতবাবু, দূর্গার বুকের কাপড়টা ধরে টানতে থাকে। দূর্গা চিৎকার করে ওঠে- ‘কাছে আসবি না শয়তান, ছেড়ে দে’! রজতবাবু কাপড়টা আরো জোরে জোরে টানতে থাকে। দূর্গার সমস্ত কাপড় খুলে পড়ে। সে চিৎকার করে বলতে থাকে, ছেড়ে দে শয়তান, ছেড়ে দে…! দূর্গা কাঠের বোঝা থেকে কাটারি হাতে নিয়ে রণমূর্তি ধারণ করে। রজতবাবু তার হাতের কাটারিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সে এগিয়ে যায়। দূর্গা সঙ্গে সঙ্গে রজতবাবুর গলায় এক কোপ বসায়। রজতবাবু মাটিতে পড়ে যায়। দূর্গা আবার এক কোপ বসায়। কিছুক্ষণের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে যায় রজতবাবুর শরীর। দূর গাঁ থেকে ভেসে আসে, মা দূর্গার ঢাকের বাদ্যি । দূর্গা রক্তমাখা কাটারি হাতে নিয়ে থানার দিকে রওনা হয় ।
-
অনুগল্প-অমর রহে
অমর রহে…
– শক্তি পুরকাইতহাবিবপুর গ্রামের মাঠ পেরোলে দেখা যায়, দখিনা বাতাসে খপ্ খপ্ করে উড়ে চলেছে একটা দীর্ঘ পতাকা। তার নীচে ইট দিয়ে গাঁথা শহীদ বেদী। তাতে জ্বলজ্বল করছে লেখাটা ‘শহীদ পলাশ মন্ডল ‘ অমর রহে…। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ওদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে, স্ত্রীকে চাকরি দেবে। দেখতে দেখতে একবছর কেটে গেছে। কেউ এসে এক গেলাস জল পর্যন্ত দেয় নি। বাবা হারানো ছোট ছোট দুই ছেলের মুখ চেয়ে মিনতি পরের বাড়িতে রান্নার কাজ করে বেড়ায়। আজ এই অঞ্চলের প্রধান হায়দার আলি আসবেন শহীদ-বেদীতে মালা দিতে। মিনতি জানলা খুলতেই দেখতে পেল বিশাল দীর্ঘ একটা মিছিল। সে দেখল ওটা মিছিল নয়, এক বছর আগে খুন হয়ে যাওয়া রক্তার্ত তার স্বামীর শবদেহ। মিনতির দু’চোখ বেয়ে নেমে এল ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু। দূর থেকে শুনতে পেল কে যেন শ্লোগান দিয়ে উঠল ‘ শহীদ পলাশ মন্ডল অমর রহে …’
-
কবিতা- “চাঁদ”
চাঁদ
-শক্তি পুরকাইতছোটবেলায় কান্না ভোলাতে
মা ডাকত আয়, আয় …এখন উঠোনো দাঁড়িয়ে
ছেলেকে দেখানোর জন্য
বউ ডাকে আয়, আয় …আমি গাছ গাছালি পেরিয়ে
সাদা ভাতের গন্ধে ছুটে আসি রোজ ।দেখি আমার বউয়ের উপছে পড়া
হাসির মত জ্যোৎস্না লেগে আছে
মাটির দাওয়ায়।আর দূরে আজও
কপালে ধাবড়া টিপ পরে
আবছা দাঁড়িয়ে থাকে কে –যত কাছে যাই
ধূ ধূ প্রান্তরগুলো মনে হয়,বড় আপনজন।
আমাদের সংসারের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে
আজীবন রাত জেগে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে খেয়ালী চাঁদ।