• গল্প

    গল্প_হলেও_সত্যি

    গল্প_হলেও_সত্যি
     -শানজানা আলম

    রোকেয়ার সকাল থেকে মনটা অস্থির লাগছে। আয়াশকে কোল থেকে নামাতে ইচ্ছে করছে না। ওর একটু কাশি হচ্ছে। আশরাফ চাচার কাছ থেকে হোমিও ওষুধ নিয়ে আসতে হবে। ঘরের কাজ কর্মও পড়ে আছে। মন লাগছে না। অরিন খেলছে পাশের রুমে। রোকেয়া উঁকি দিয়ে দেখে এলো। শাশুড়ির ঘরেও উঁকি দিল। নামাজ পড়ছেন। এখন গেলে ভালো হতো। থাক, সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যার দিকে গিয়ে আসলেই হবে, রোকেয়া মনে মনে ভাবলো। আজিমকে একটা ফোন দেই। ওকে বললেও হয়।
    আজিমকে ফোনে পাওয়া গেল না। ব্যস্ত আছে। বিকেলে কথা বললেই হবে।
    অরিনের বয়স ৪। আয়াশের ৫মাস, একটু বসতে পারে সবে। রোকেয়া রান্না ঘরে গিয়ে বাকি কাজগুলো শেষ করলো। অরিনকে খাওয়ালো। শাশুড়িকে খেতে দিল। কিন্তু আজ নিজের খেতে ইচ্ছে করছে না। কেমন যেন অস্থির লাগছে।
    বিকেলে আজিম ফোন দিল। রাতে ফিরতে ১০ টা বেজে যাবে। তখন নিচে নেমে ওষুধটা নিয়ে এসে রোকেয়া মসজিদের সামনে থাকবে। একসাথে বাসায় ফিরবে। কিছুটা সময় হাঁটা যাবে। আজকাল নিজেদের জন্য কোন সময়ই পাওয়া যায় না। ছুটির দিনগুলোতেও বাইরে গেলে বাচ্চাদের সময় দিতে হয়।
    রাত সাড়ে নয়’টার দিকে আজিম ফোন দিয়ে রোকেয়াকে আশরাফ চাচার চেম্বারে যেতে বললো। রোকেয়া ‘রেডি’ হয়ে নামতে গেল, অরিন জড়িয়ে ধরলো, আম্মু আমিও যাব। না মা, দীদুমনির কাছে বসো, আয়াশ ছোট্ট না। কাঁদবে তো, আমি আইসক্রিম নিয়ে আসবো তোমার জন্য। এবার কাজ হল। অরিনের চাচ্চু আরিফও এসে গেছে বাসায়। বললো, ভাবী আমি যাই, রোকেয়া বললো না, আমার একটু কাজ আছে। একটু লজ্জাও পেল। আরিফ বুঝতে পারলো। বললো আচ্ছা, আমি আছি ওদের সাথে। আপনি যান।
    রোকেয়া বের হতে গিয়ে দরজায় একটু ধাক্কা খেল। ওর শাশুড়ি বললো ‘ মা, একটু দাড়িয়ে যাও। ‘রোকেয়া দাঁড়ালো না। রাত বাড়ছে। সময় নষ্ট করা যায় না এখন। ও বের হয়ে গেল।

     

    করিম সাহেবের আজ অফিস থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল। কাল সকালে প্রভাতফেরীতে যেতে হবে। অফিসে ফুল-টুল গুছিয়ে রেখে আসতে সময় লাগলো। কাজল, কাঁকন ফোন দিয়েছে দু’ তিন বার। ওরা আব্বা না ফিরলে খেতে বসে না রাতে। সারাদিন পরে রাতের বেলাই আব্বা আম্মাকে নিয়ে বসা হয়। কাজল এবার ভার্সিটিতে ভর্তি হলো। কাঁকন এবার ক্লাশ টেনে, এস.এস.সি. দিবে সামনে। মেয়ে দু’টো বড় হয়ে গেল। বিয়ের কথা মনে উঠলেই করিম সাহেবের বুক কেমন করে ওঠে, চোখ ভিজে যায়। আবার ফোন বাজছে। কাঁকনের মা ফোন করেছে।
    -হ্যাঁ, কাঁকনের মা, এই তো চলে এসেছি। অল্প কিছু বাকি। মসজিদের আগেই আছি, জ্যামে। ফোন শেষ করে পকেটে রাখলেন তিনি ।

    বাবুর দাঁতে ব্যাথা কয়েক দিন ধরে। মাড়ির একটা দাঁত তুলে ফেলতে হবে। অফিসের পর সময়ই পায় না। আজকে পাওয়া গেল। তাও সারা ঢাকায় জ্যাম। একুশে ফেব্রুয়ারি বলে অনেকগুলো রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। মা ফোন দিচ্ছে।
    -মা, আমার আসতে একটু দেরী হবে। ডেন্টিস্ট এর কাছে যাবো। তুমি একটু স্যুপ বানিয়ে রেখো। আজ ভাত খেতে পারবো না তো।
    ফোন রেখে চেম্বার এ ঢুকলো বাবু।

     

    আকাশের আজ রোগীর চাপ নেই। শুধু রাত ১০ টায় একজন পেশেন্ট আসবে। সাধারণত এত রাত করে আকাশ কাজ করে না, ছেলেটা সময় পাচ্ছে না। কাল আবার সব বন্ধ। রুমির সাথে দেখা করবে কাল। তাই এপয়েন্টমেন্ট আজ রাতেই দিয়েছে। রুমির বাসায় বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলতে যেতে হবে। মেয়েটা অনেক দিন অপেক্ষা করে আছে। এসব ভাবতে ভাবতে বাবু আকাশের চেম্বারে ঢুকলো। আগেই সব রেডি করা ছিল। আকাশ ল্যাবে ঢুকে শুরু করে বাবুর ডেন্টাল সার্জারি।

    অনেকক্ষণ ধরে সাকিবের ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। সালেহা উঁকি দিলেন। সাকিব ওয়াশরুমে। কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরেছে। ছেলে তার বড়ই আদরের। আজ চিতই পিঠা ভিজিয়েছেন। ছেলের পছন্দ। ছেলের বাবা খায়নি, সাকিব ফিরলে একসাথে খাবেন বলে। সাকিব ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল নুরুর ফোন, ৫ টা মিসড কল। নুরু এলাকার ফ্রেন্ড। ক্লাশ শুরু হওয়ার পর ওদের সাথে তেমন দেখাই হয় না এখন।
    ফোন ব্যাক করতেই নুরুর গলা,
    -কি মামমা, ভাবে আছোস মনে অয়, আমগোরে তোহ গোনোই না!!!
    -আরে না বল, মাত্রই আইলাম ক্যাম্পাস থিক্কা।
    -তুমি মামমা আমগোরে ক্যাম্পাস চিনাও! বড়লোকের লগে ওডা বওয়া তোমার!
    -শোনো বাববু, আইসা পরো, মসজিদের সামনের হোটেলে ব্যপক কাচ্চি করে। আইজ মাইরা আসি।
    – দোস্ত আমি মাত্র ঢুকলাম।
    -আরে আসো দোস্তো, সজিবরে ডাকছি, ও কায়েসের বাইকে আইতাছে। তুমি আহো,কাসেমের দোকান থিক্কা আমারে পিক কইরা চলো যাই।
    -আম্মা চিল্লাইবো দোস্ত,
    -খালাম্মারে আমি কমুনে। আহো আহো।
    সাকিব ফোন রেখে আবার টিশার্ট গায়ে দেয়।
    সালেহা আবার এসে জিজ্ঞেস করে, কই যাও এখন আবার?
    -আম্মা নুরু ডাকতাসে।
    সালেহা চিনে ওদের। ছোটবেলা থেকেই ওরা দোস্ত।
    -রাতে কি তাইলে খাবি না বাসায়?? পিঠা ভিজাইছিলাম আজকে?!
    -খাবো আম্মা, এই মসজিদের সামনে যাবো। সাড়ে দশটার মধ্যেই আসবো। আইসা একসাথে খাবোনে।
    -আচ্ছা আব্বা রাত কইরো না বেশি।
    -সাকিব বের হয়ে গেল বাইক নিয়ে নয়টার দিকে।
    বেশি দূরে না, ফিরতে রাত হবে না।

    আজিম এসে দাঁড়ায় মসজিদের কাছে, রোকেয়া চলে আসবে। অরিন অপেক্ষা করে আছে মা আইসক্রিম নিয়ে আসবে।
    কাজল কাঁকন বসে আছে, বাবা ফিরবে কখন।
    বাবুর মা স্যুপ চড়িয়ে টিভি ছেড়ে বসেন। ছেলে ফিরলে ডিনার করবেন।
    রুমি অপেক্ষা করে, আকাশ সার্জারি শেষ করে ফোন দিবো।
    সাকিবের বাবা, মা অপেক্ষায় থাকেন, সাকিব ফিরলে একসাথে পিঠা খাবেন।

    ওরা যখন সবাই অপেক্ষায়, আমি তখন ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ ব্রেকিং নিউজ, “চকবাজারে সিলিন্ডার ব্রাস্ট থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট”

    রোকেয়া, করিম সাহেব, বাবু, আকাশ, সাকিব কেউ সে রাতে বাড়ি ফিরতে পারেনি। চকবাজারে মসজিদের সামনে সিলিন্ডার ব্রাস্ট হয়ে আগুনটা লাগে দশটা বিশের কিছু আগে পরে। ওরা সবাই তখন সেখানে। রোকেয়া হোমিও চেম্বারে, করিম সাহেব রিকসায়, বাবু আর আকাশ ডেন্টাল এর ল্যাবে, সাকিব,নুরু, কায়েস সজীব বাইকে, রেস্টুরেন্টের সামনে। ওদের সবাইকে
    পরদিন সনাক্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল এর মর্গে।
    …..কিছু অপেক্ষা হয় অন্তহীন।

  • গল্প

    প্রত্যাবর্তন

    প্রত্যাবর্তন

    -শানজানা আলাম

     

     

    শুভমিতা যখন রায়চৌধুরী বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন দুপুরের রোদের তেজ কমেছে। বাড়িটা জরাজীর্ণ হয়ে গিয়েছে একেবারেই। শুভমিতার পূর্বপুরুষদের বাড়ি, শুভমিতার বুকের মধ্যে একটা কাঁপন লাগে, কোথাও যেন একটা চিনচিনে ব্যাথা নাড়া দেয়। বাড়ির সামনে সাইনবোর্ড লাগানো ‘বাহাউদ্দীন ম্যানশন’। পাথরে খোদাই করা ‘রায়চৌধুরী বাড়ি’ এর উপর জোর করে বসানো হয়েছে যেন। বাড়ির সামনের গেটটা একেবারে ভেঙে গেছে। রডের গেট লাগানো হয়েছে এখন। তাতে শ্রীবৃদ্ধি হয়নি মোটেও। গেট দিয়ে ঢুকতেই ঘুঁটে আর খড়কুটোর মিশ্র গন্ধ নাকে লাগে। গেটের পড়েই হাতালঘরের মতো, হোগলা দিয়ে বেড়া দেয়া। দু’টো গরুর জন্য খড়কুটো দেয়া। গরু দু’টো আধভাঙা শুয়ে জাবর কাটছে। তারপরেই শানের ঘাট বাঁধানো পুকুর। এ পুকুর উন্মুক্ত সবার চানের জন্য। ঘাটের অবস্থাও জরাজীর্ণ। কেউ সিমেন্ট দিয়ে সারাই করেছে মনে হয়। হাতালঘর, পুকুর পেরিয়ে বাড়ির মেইন কম্পাউন্ড। বেশ বড়োসড়ো একটা মাঠ৷ মাঠের কোণায় রায়চৌধুরী বাড়ি। মেইন বাড়ির পাশেই মন্দির। বাড়ি আর মন্দিরের মাঝামাঝিতে একটা কুল বরই গাছ। ছোটবেলায় ছাদ থেকে হাত দিয়ে বরই পারতো শুভমিতা। কত লোকজন কোলাহল, এখন এত চুপচাপ, শুনশান লাগছে চারপাশ। হয়তো নস্টালজিয়ায় কানে শব্দ ঢুকছে না। এখন যে অনুভূতি হচ্ছে, সেটা শুভমিতার অচেনা। এখানে ফেরার কোন ইচ্ছে বা টান তার ছিল না। কলকাতার সল্টলেকের বিশাল ফ্লাটবাড়ি বা বন্ধুবান্ধব, হইচই নিয়ে শুভ ভালোই ছিল। বাদ সাধলো ঠাম্মু। তিনি শুভমিতাকে পাঠালেন পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি দেখে আসতে। শুভর চোখে তিনি দেখবেন। সাতাত্তর বছরে আর কলকাতা থেকে বাগেরহাটের এতদূর এসে ভিটেমাটি দেখার সামর্থ তার শরীরে নেই। তাই শুভকে পাঠালেন একটু দেখে আসতে। মা অবশ্য বারণ করেছিল। তবে বাবা কিছু বলেননি। তিনি শুভকে বড় করেছন শক্ত করে। যে মেয়ে দিল্লি কলকাতা মুম্বাই অনায়সে যাতায়াত করে, সে দু’দশ দিন বাংলাদেশ ঘুরে যেতেই পারে।তাছাড়া স্থানীয় কলেজের শিক্ষক, তার ছোটবেলার বন্ধু যাদব বাবুর বাড়ি রয়েছে, সেখানে শুভ যত্নেই থাকবে। যেমনটি তারা যত্ন করেছন ওরা কলকাতায় এলে। শুভমিতার বাবা শশাঙ্ক রায়চৌধুরীর ধারণা নির্ভুল ছিল। আসার পর থেকে মৌলি কাকীমা যার পর নাই যত্ন করছেন।
    শুভমিতা সামনের দিকে এগুলো। মাঠে ছোট ছোট বাচ্চারা খালি গায়ে খেলছে। দু’ তিনটা ছাগল চড়ে বেরাচ্ছে। মাঠের কোনায় রক্তজবার ঝাড়টা আছে এখনো। আগের মতোই। পাশেই তুলসীমঞ্চ। মা ঠাম্মু এই রক্তজবা সকাল সন্ধ্যায় ঠাকুরের পায়ে দিতেন।
    বাড়ির নিচতলায় কয়েকজন মহিলা বসে গল্প করছে। এরা কি এবাড়ির কেউ! হয়তো দুপুরের খাওয়া শেষে বসেছে একসাথে। নিচতলায় ছিল ছয় সাতটা বড় বড় ঘর। দোতলায় চারটা। ছাদের সিড়ির পাশে ছোট ছোট ঘর ছিল দু’ তিনটে। ছাদের ঘরে তখন কেউ থাকতো না। সুপুরি, নারকেল, ধান, শষ্য রাখা হতো। দোতলায় থাকা মা, বাবা, ঠাম্মু, ছোটকা, শুভমিতা আর সার্থক, শুভর ছোট ভাই। নিচতলায় ছিল পাক ঘর, ডাইনিং, বাবার চেম্বার আর এমনি দু’টো রুম। জ্ঞাতি আত্মীয় স্বজন এলে থাকতো। চাকর বাকর, আর আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী, বাবার বন্ধু, মক্কেল সবাই ছিল আসা যাওয়ার উপর। বাবা এডভোকেট ছিলেন এখানে। শুভর দাদুও ছিলেন ডাকসাইটে উকিল। বাবা আর ছোটকা কলকাতায় গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
    যে মহিলারা বসে গল্প করছিলেন তারা শুভর পোশাক আশাক দেখে একে অপরকে খোঁচাতে লাগলেন। সত্যি, এখানে এখনো মানুষ পোশাক নিয়ে কথা বলে। সামান্য টপস আর জিন্স সহজে গ্রহণযোগ্য হয় না। শুভমিতা জানালো, আমি পূজা, এ বাড়িটা একসময় আমদের ছিল। এবার কৌতুহল মিটল। এদের একজন নিচতলার একটা রুমে ভাড়া থাকে। বাকিরা আসপাশের। নিচতলার রুমগুলো ভাড়া দেয়া!! তিন চার ফ্যামিলির কাছে!!! শুভমিতা প্রমোদ গুনল। এ বাড়ির বর্তমান ভাড়াটে তাকে দোতলায় নিয়ে গেল। আসবাবপত্র আগের মতো কিছুই নেই। শুধু বাবার চেম্বারের বড় টেবিলটা দোতলায় দেখতে পেল। দোতলায় ও দু’টো পরিবার থাকে। বাহাউদ্দীন বেপারী আর বউ বাচ্চা নিয়ে থাকেন এক পাশে। শুভ নিজের পরিচয় দিয়ে বাড়িটা ঘুরে দেখতে চাইল। বাহাউদ্দীন তেমন খুশী মনে না হলেও দেখতে দিলেন৷ তখন বেশ সস্তায় কিনেছিলেন পুরো বাড়ি,জমি। ২০০১ সালে সরকারের পরিবর্তনের সময় হিন্দুরা কিছুটা চাপে ছিল এলাকায়। গ্রাম এলাকায় আজ এর মেয়েকে, কাল ওর মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এখানে তেমন সমস্যা না হলেও শশাঙ্ক বাবু আর থাকতে চাইলেন না। এ সম্পত্তি কেনার মতো লোক কম ছিল না, কিন্তু জানাজানি হলে অন্য সমস্যা। তাই গোপনে গোপনে সব দলিল, চুক্তিপত্র হয়ে গেল। তারপর একদিন সপরিবারে ভারতে চলে গেলেন শশাঙ্ক রায়চৌধুরী। আর ফিরলেন না। তার কয়েকদিন পরে কাগজপত্র প্রমাণ সমেত নিয়ে বাহাউদ্দীন দখল নিলো সমস্ত বাড়িটা।
    শুভমিতা ঘরগুলো দেখছিলো। এই যে এখানে একটা আলমারি ছিল, মায়ের একটা বড় আয়না ছিল। ঠাম্মির খাটটা ছিল অনেক উঁচু। কিছুই নেই। লোকাল রড, স্টিলের শোকেস, মেহগনি কাঠের রঙ করা খাট, এ বাড়ির সাথে কিছুই মানায় না। একটা জরীর তাজমহল টানানো, ওয়ালমেট, একেবারেই বেমানান। শুভমিতা ছাদে চলে এলো। এখানে ঠাম্মু বরই আর চালতা শুকাতো। আর এখানে কুমড়োর বরি। শুভ ওই কোনায় খেলত। ভাই তখনো হয়নি। ওরা যখন চলে যায়, ভাইয়ের তখন ৮মাস বয়স, শুভর ৯বছর। এইখানে হাত দিয়ে কুল বরই পাওয়া যেত, সরস্বতী পুজোর আগে মা বরই খেতে দিতো না। ছাদের পাশে দাঁড়ালো শুভমিতা। বরই গাছের ডালগুলো কাটা।
    মন্দির
    টা দেখা যাচ্ছে। দুর্গাপুজোয় যে কি ধুমধাম হতো। মা, ঠাম্মু চওড়া লালপেরে শাড়ি পরে অঞ্জলি দিতেন। কপালে জ্বলজ্বল করতো টকটকে লাল সিঁদুর টিপ, পায়ে আলতা।
    আর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোয় ভোগ রান্না হতো বিশাল বড়ো হাড়িতে, খিচুড়ি আর সবজি।
    পাঁচ রকমের নাড়ু বানানো হতো। জ্ঞাতি আত্মীয় স্বজন সবাই আসতো।
    সন্ধ্যা হয়ে আসছে। শুভ নিচে নামলো। কিছু ছবি তুলে নিল আস্তে আস্তে।
    মন্দিরে এখনো পুজো হয়। শুভমিতা ঠাকুরকে প্রণাম করে বের হয়ে গেল।
    পিছনে রইলো তার ফেলে আসা শৈশব স্মৃতি।

    এখনকার অবস্থা ঠাম্মুকে না বললেও হবে। ঠাম্মু, তুমি যেমন রেখে গিয়েছো, সব কিছু তেমনি আছে। কিচ্ছু পালটায়নি।
    শুধু সময় এগিয়েছে।

    কিছু মিথ্যে যদি বুড়ো মানুষটাকে একটু শান্তি দেয়, দিক না।

You cannot copy content of this page