-
অনুরাগী মন
অনুরাগী মন
–শিবানী গুপ্ত
দমকা এলোমেলো হাওয়ায়।
স্মৃতির পাতা ওড়ে- – – –
ছবির প’রে ছবিরা হাত ধরে পাশাপাশি
আমার দিকে—–পলকহীন!
বুঝতে পারি, কি সব না বলা কথারা বেদনায়
অন্তর্লীন আমার ভাবনা চিন্তারা পাক খাচ্ছে
স্মৃতিময় ধূসর ফেলে আসা –
জীবনের বেদন ভরা বিপন্ন অধ্যায়ে- – –
নিছক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাওয়া সামারের অবকাশে—
কি দারুণ থ্রীল! হৈ–চৈ-হুল্লোড়-
বন্ধুদের সাথে সমুদ্দুরে চান করার দুর্বার স্পৃহা
নুলিয়ার হাতটা ছুটে গেল সহসা-
বন্ধুদের আতঙ্কে দমবন্ধচীৎকার সর্বনাশ!
ডুবে গেল যে—–
প্রবলঢেউ আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল
আচমকা দু’টো বলিষ্ঠ বাহু
আমার দেহবল্লরীকে সযত্নপ্রয়াসে তীরে-
বালুকাবেলায়নিয়েরাখলো জ্ঞান ছিলোনা,
তাই, পরে যখন সব শুনলাম——–
ত্রাণকর্তা দেবদূত টিকে দেখার তীব্র ইচ্ছে জাগলো —–
তোমার মুখের স্নিগ্ধ হাসি,
তোমার চোখের তারায়-
অপার মুগ্ধতার ছায়া —
আমায়—বাকহীন করে সেই দিনের–
সেই -অনুপমক্ষণ!
সেই-নির্নিমেষঅপলকনিরীক্ষণ পলকে গড়ে ওঠা হৃদয়ের—
অচ্ছেদ্য বন্ধন!
যেন, যুগাতীতের সেতু রচনা করে দিল
কথার পিঠে কথারা মালা সাজে কি মধুর!
কি আবেগিক! তারপর!
পাতারা পতপত উড়ছে—– স্মৃতির দ্রাঘিমারেখা জুড়ে–
বিদায়ের বিষন্নলগ্ন সমাগত
তুমি অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলে নিটোল সম্পর্কের নিগূঢ় ভিত!
আসবে, ফিরে আমারই কাছে ফাগুনের শুভবার্তা নিয়ে
বসন্তের কোকিলার মধু মাখাসুর বিরহে কাতর–
কুহু-কুহু তানে কেন?
সে শুধু জানে —— প্রতীক্ষার পথ চেয়ে থাকা
আমার ব্যাকুল তিয়াসী অনুরাগী মন!
-
অন্তর্লীন
অন্তর্লীন
-গুপ্ত শিবানী
প্রতিপল রক্তক্ষরণ !
যন্ত্রণার অভিব্যক্তিহীন
অবিরল ধারাপাত
বয়ে যাওয়া আঁখিপাত
এখন, তেজপাতা
তীব্রদাহে বক্ষজুড়ে
কেবলি রক্তক্ষরণ !
মনের ভেতরে ——
অদ্ভুততরো ইচ্ছে–
ঘুড়ি প্রতিবাদে সোচ্চার!
মন দিব্যি বসে পড়লো
হাঁটু মুড়ে — হৃদয় ভূমি তে
ইচ্ছের তুলি আলতো করে
রক্তে ডুবে থাকা বক্ষে ছুঁয়ে ছুঁয়ে
এঁকে চললো অব্যক্ত ব্যথার সাতকাহন!
রক্তের আখরে আখরে সাজে
সুচীভেদ্য যাপনকথা!
আগুনের মতো জ্বলজ্বল করছে
নিরুচ্চার রক্তাক্ত চিত্রকলা
এক বিস্ময়কর রক্তিম কাব্যমালা!
এ চিত্র সমাহার অন্তর্লীনই থাকবে
এ বেদনাবিধুর ছবি -একান্ত আপনার!
এ বেদনা——–অব্যক্ত—অদৃশ্য!
এ শুধুমাত্র —-কালের সাক্ষী!
এর নিবাস—–অন্তর্লীন !
-
গোলাপ বালা
গোলাপ বালা
-শিবানী গুপ্ত
রানাঘাট লোক্যাল ট্রেনটা চাকদহ স্টেশনে থামতেই আমি উৎসুক। আমার চঞ্চল চোখদুটো আতিঁপাতি খুঁজে ফেরে অতি সুকুমার লাবনীঢলঢলে একটি মুখ। যার আয়তচোখের কাচে জলের স্বচ্ছতা, বিশ্বের সরলতা যার মুখের পরতে পরতে পরিস্ফুট। এদিক -ওদিকে চোখদুটো সার্চলাইটের মতোচরকি কেটে চলেছে, শুধুমাত্র একখানি পেলব মুখশ্রী। কি ব্যাপার! কাউকে তো দেখছিনা! এমনতো হবার কথা না, খবর তো দিয়েছিলাম, আমার যাবার সংকেত দিয়ে, তবে! স্টেশনে গাড়িটা প্রতিদিন পাঁচমিনিটের জন্য থামে, সময়তো হয়ে এলো, এখুনি ট্রেনটা চাকদহ থেকে বেড়িয়ে যাবে। কেমন আঁকুপাকু করে ওঠে মনটা, তবেকি, কোন সমস্যা এসে পড়লো! তাইকি আসতে পারছে না? বলেছিলাম, আমি রানাঘাট লোক্যাল ধরে কৃষ্ণনগর যাবো, কখন যাবো তাও বলেছিলাম। শুধু ওকে একটিবার চোখের দেখা দেখবো বলেইনা এপথে আসা—- রেলে লাউডস্পীকারে ট্রেন ছাড়ার সংকেত ঘোষনা হচ্ছে——– একটা অস্থির উচাটনের ঢেউ, একটা অদ্ভুত কষ্টের তীব্র মোচড় টের পাচ্ছি বুকের ভেতর, নিরাশার বালুচরে কি তবে কোন মরুদ্যান নেই! আমি কি খুব বেশী প্রত্যাশা করে ফেলেছি! হয়তো, আমারই অবিমৃষ্যকারিতার ফলশ্রুতি—- ট্রেন হুঁইসেল দিল। বেপরোয়া গোয়ার্তুমিই করে বসলাম কি, এতোবেশী প্রত্যাশা করা কি সমুচিত হলো! একটা ঝাকুনী দিয়ে মন্থর গতিতে ট্রেন চলতে সুরু করতেই বেপরোয়া অবুঝ চোখদুটো বুঝি ঝাপসা হতে যাচ্ছিল — এ্যাই যে, শুনছেন?প্লিজ ,একটু শুনুন —— ট্রেনের গতি তখনও শ্লথ, প্ল্যাটফর্ম চত্বর পেরোয়নি, অতি চেনা সুরেলা কন্ঠের ডাকে চমকে ওঠে জানালার দিকে তাকাতেই মনটা ফুলেল সুবাসে বিভোর —-সোমা! তুমি! ছুটতে ছুটতেই হাত বাড়িয়ে দেয় সোমা—নাও,আজকের দিনে এরচাইতে বড়ো কিছুনেই, তাই, এটাই তোমাকে দিতে এলাম, ধরো —– আমার সমস্ত অন্তর আলোকময়। ।দু’হাত বাড়িয়ে দিলাম অজান্তেই। ট্রেনের বেগ বাড়ার সাথে সাথেক্রমশঃ চারপাশে দৃশ্যাবলী, দোকানপাট, ঝুপরী, এমনকি সোমাও দৃষ্টিসীমার বাইরে —— এবার চোখ সেঁটে থাকে হাতের অঞ্জলিতে ধরে রাখা জিনিষটার দিকে,-একি! এতো টকটকে একটি লালগোলাপ! মুগ্ধতায় নিমেষে মনের আকাশে অনুরাগের রামধনু ঝলসে ওঠে, ওমা, তাইতো, আজতো গোলাপ দিবস! টকটকে লাল গোলাপের কবোষ্ণ নরম গালে আমার অনুরাগের চুম্বন এঁকে দিই পরম সোহাগে় এ যে আমার, একান্তই আমার গোলাপ বালা়।