• কবিতা

    পাখি তুই পারবি উড়ে যেতে

    পাখি তুই পারবি উড়ে যেতে
    -শুভঙ্কর অধিকারী

     

     

    পাখি তুই পারবি উড়ে যেতে
    অচেনা সেই পথটি চিনে চিনে,
    যে পথ ধরে এসে ছিলি তুই
    আছে কি সে সব কথা মনে!

    যদি দিই মুক্ত করে তোকে
    আমার এই বন্দী খাঁচা হতে,
    পারবি তো তোর ছোট্ট ডানা মেলে
    একা একা উড়ে যেতে দিগন্তেতে!

    তবেই আমি উড়িয়ে দেব তোকে
    দূরের ওই নীল আকাশের বুকে,
    থাকিস তখন নিজের ইচ্ছে মত
    থাকিস তখন নিজের মনের সুখে!

    খুঁজে নিয়ে তোর মনের মানুষটিকে
    বাঁধিস তখন আপন সুখের ঘর
    না হয় আমি থাকবো আগের মতই
    খুঁজে নেব না পাওয়া উত্তর!

    ইচ্ছে হলে আসিস যখন খুশি
    না হয় আসিস পথটি ভুলে,
    তবেই তোকে যেতে দেব আমি
    মায়ার এই শক্ত বাঁধন খুলে!

    পরলে মনে খুঁজব তখন তোকে
    সুদূর ঐ নীল আকাশের ঝিলে,
    তাও যদি না পাই দেখা তোর
    খাঁচার পানে রইবো দুচোখ মেলে!

  • কবিতা

    মর্ডান হয়েছে দেশ

    মর্ডান হয়েছে দেশ
    – শুভঙ্কর অধিকারী

     

     

    দেশটা যে ভাই বদলে গিয়েছে মর্ডান হয়েছে বেশ!
    জন্মলগ্ন থেকেই শুরু হয়ে গেছে শীর্ষ স্থানের রেস!
    শিশুর পিঠে বইয়ের বোঝা যেন হিসাব কষে মনে
    হতেই হবে সবার প্রথম সেটা শিশু মনটাও জানে!
    বাংলা মাধ্যম চলে না যে আজ ইংরেজি টাই বেস্ট
    দেশটা যে ভাই বদলে গিয়েছে মর্ডান হয়েছে বেশ!

     

    খেলাধূলাটা আর হয় না মাঠে স্মার্ট ফোনেতেই চলে
    মুখোমুখি কেউ হয় না যে আর মেসেজই কথা বলে!
    প্রতিবাদ আর লোকোহিত কাজ হোয়াটসাপ ফেইসবুকে
    এসির হওয়ায় বন্দী জীবনে মানুষ রয়েছে সুখে!
    সৌখিন যাপনে প্রকৃতি দূষণে দুনিয়াটা হবে শেষ?
    দেশটা যে ভাই বদলে গিয়েছে মর্ডান হয়েছে বেশ!

     

    উৎসবের রেয়াজে আধুনিক সাজে প্রতিমা, থিমেতে নজরকাড়া
    কোটি কোটি টাকা ওড়ে মনোরঞ্জনে তবু পথেতে সর্বহারা!
    আনন্দ মানেই যে রাতভর পার্টি হইহুল্লোড় সুরা পানে
    অবাধে প্রবেশ অবৈধ নেশার কবলে শরীর মনে ও প্রাণে!
    হৃদয় কাঁপানো ডিজের সংগীত খোঁজে আধুনিকতার উন্মেষ
    দেশটা যে ভাই বদলে গিয়েছে মর্ডান হয়েছে বেশ!

     

    হাল ফ্যাশন এসেছে মিডিল ক্লাসেও ভুলেছে ঐতিহ্যের সাজ
    আধুনিক সমাজে নারী উন্নতির শিখরে সরিয়ে ঘোমটার লাজ!
    ট্যাটু ছুঁয়ে গেছে গোপন অঙ্গে পোষাক হয়েছে ছোটো
    প্রকাশ্যে শরীর প্রদর্শনীতে ভেসেছে বিজ্ঞাপনীতে ফায়দা লোটও!
    ভ্রূণ কন্যা খুনে কি ঘুমিয়ে সমাজ কবে জাগ্রত হবে গোটাদেশ?

    দেশটা যে ভাই বদলে গিয়েছে মর্ডান হয়েছে বেশ!

     

    কংক্রিটের তলে হারিয়ে গিয়েছে সোঁদা মাটির গন্ধ
    আকাশ ছোঁয়া ইমারতের গ্রাসে মানুষের দম বন্ধ!
    একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে খানখান ফ্লাটেতে সুখী মন
    আধুনিকতা আজ আহারে বিহারে বিদেশী অনুকরণ!
    প্রযুক্তির ভরে এগিয়ে চলেছে মানুষ ডিজিট্যাল হলো দেশ
    মানুষ আজ উন্নতির শিখরে মর্ডান হয়েছে বেশ!

     

    প্রাকৃতিক দুর্যোগে অকাল মৃত্যুতে মানুষ পায়না ভয়,
    রোগ ব্যাধিকে উন্নতর প্রযুক্তির হাতে বিজ্ঞান করেছে জয়!
    তবুও কেন যে মানুষ শিক্ষার অভাবে ছুটে যায় ঝাড়ফুঁকে!
    ডাইনি অপবাদে আজও পিটিয়ে হত্যা, বিশ্বাস করে অলৌকিকে!
    কিসের এত ধর্মীয় রেষারেষি, হানাহানি কিসের ধার্মিক বিদ্বেষ?
    সত্যিই দেশটা যে ভাই বদলে গিয়েছে মর্ডান হয়েছে বেশ!

     

    কুসংস্কারের আঁধার মুছে উঠুক জেগে শিক্ষা জ্ঞানের আলো!
    ভেদাভেদ সকল ভুলিয়ে দিয়ে এবার মনের প্রদীপ জ্বালো!
    স্বার্থ ত্যাগের মাঝে ঐক্য সাধনে এগিয়ে চলো সবে,
    বিশ্বের দরবারে এদেশ আবারও সেরা শিরোপা পাবে!
    আধুনিতকতার স্পর্শে শালীনতার বাঁধনে মানবিকতার উন্মেষ!
    ভাষা বর্ণ জাতিভেদও উন্নত শিরে মর্ডান হবে দেশ!!

  • কবিতা

    প্রথম গোলাপ

    প্রথম গোলাপ
    -শুভঙ্কর অধিকারী

     

     

    অনিমেষ,
    তোমার দেওয়া গোলাপটি রেখেছি আপন করে,
    আজও ডাইরির পাতার মাঝে রেখেছি যত্ন করে!
    হ্যা অনিমেষ! তোমার দেওয়া সেই গোলাপ!
    তাতে প্রথম প্রেমের আবেগ মেশানো উচ্ছাস
    তখন আমার ফার্স্ট ইয়ার বেঙ্গলিতে অনার্স!

    হাজার স্বপ্ন দু’চোখ বিভোর নতুন ভোরের খোঁজে
    তোমার সাথে প্রথম দেখা সেদিনই ছিল প্রথম কলেজে!
    সিড়ির ধাপে ওঠানামার মাঝে হঠাৎ চোখাচোখি,
    হাজার ভিড়ের মাঝে ও তবু তোমায় খুঁজতে থাকি!
    মনের মাঝে উথাল পাথাল অচেনা এক ঢেউ,
    প্রথম ভালোলাগার স্পর্শ পেলাম তবু জানলো নাতো কেউ!
    তোমার তখন লাস্ট ইয়ার বাকি ছিল ক’টা মাস
    তখন আমার ফার্স্ট ইয়ার বেঙ্গলিতে অনার্স!

    অল্প অল্প কথার মাঝেই আলাপ হল জাগলো মনে আশা
    তখন থেকেই তোমায় নিয়ে আঁকছে ছবি আমার ভালোবাসা!
    ক্লাস কামাই করে তোমার সাথেই হত কথার ফুলঝুরি
    কখন যে মন হারিয়ে যেত তোমার সুরেলা গানে!
    কত সময় পার হয়ে যেত সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে
    অনিমেষ! সে সব দিন গুলো কি রেখেছ তুমি মনে!
    তোমার তখন কলেজও শেষের দিকে বাকি ছিল কটা ক্লাস!
    তখন আমার ফার্স্ট ইয়ার বেঙ্গলিতে অনার্স!

    অনিমেষ!
    কলেজের শেষ দিনটা কি আজ তোমার মনে আছে,
    সে দিনটা ছিল যে বহু প্রতীক্ষিত আমার কাছে!
    গোলাপ দিয়ে শেষ বিকেলে করেছিলে প্রেম নিবেদন
    সেই কৃষ্ণচূড়ার তলে
    মুখ লুকিয়ে তোমার বুকে ভাসিয়ে ছিলাম সেদিন
    আমার আঁখি জলে!
    সেই থেকে পথ চলা শুরু তোমারই হাত ধরে
    হয়ে গেছে বছর কুড়ি পার,
    ভালোবাসার পরশে প্রেমের বাঁধনে বাঁধা
    তোমার আমার স্বপ্নের সংসার!
    তবু যত বার দেখি সেই গোলাপ খানি
    ফিরে পাই যেন সেদিনের উচ্ছাস,
    যখন আমার ফার্স্ট ইয়ার বেঙ্গলিতে অনার্স!

  • কবিতা

    বিবেক

    বিবেক
    -শুভঙ্কর অধিকারী

     

     

    বিবেক তুমি কি সেখানে আছো!

    বাতাস যেখানে করে না প্রবেশ সেই কাঁচের
    নিশ্ছিদ্র দেহের মাঝে তুমি কি করছো বসবাস!
    দম বন্ধ হয়ে আসে না তোমার কভু
    তোমার বুঝি ঘাড়ের উপর পড়ে না নিঃশ্বাস!
    যেথায় স্বার্থপরতা বিরাজ করেছে অহর্নিশি
    সততা যেখানে বিকিয়ে গিয়েছে অর্থের তরে
    নির্লজ্জের মত বাড়িয়ে দেওয়া হাতের তালু মাঝে
    মনুষ্যত্ব যেখানে নিথর নীরব হয়েই শুধু মরে!

    বিবেক তুমি কি সেখানে আছো!

    উই পোকাতে খাচ্ছে কুরে কুরে সকল আইনি কেতাব
    যেমনি করে ঝাঁঝরা হওয়া নিকোটিনে হৃদপিণ্ড!
    কালো পর্দায় ঢেকে রাখা চোখে অন্ধ সেজে থেকে
    যেখানে অর্থের পরিমাপে হেলে পড়ে বিচারের মানদণ্ড!
    জোকের মত অবিরত রক্ত শোষণে স্ফীত হয়ে মৃত
    তবু ধারালো দাঁত আর নখের মাঝে তাজা রক্তের ছাপ!
    জীবন যেখানে কেনাবেচা হয় অতিরিক্ত অর্থের লোভে
    কারো চোখের জলেও হয় না যে মনে কোনোই অনুতাপ!

    বিবেক তুমি কি সেখানে আছো!

    বিলাসিতার মাঝে আরামে আয়েশে জীবন তরী বাহিত যেখানে
    বায়োস মেলাতে কা-কা স্বরে যারা খুঁটে খুঁটে খায় অন্ন!
    উপড়ি আয়ের পাহাড়ে, আহারে-বিহারে তবু থাকে সাধু বেশে
    অগাধ অর্থে থরে থরে ভরে আত্মসাতে পাপের কলস হয়েছে পূর্ণ!
    লাশের পাহাড়ে ইমারত গড়ে, মাটির প্রতিমাকে স্বর্ণেতে মুড়ে
    অর্থের সম্ভারে দম্ভের কারাগারে যারা হতে চায় দেবতুল্য!
    সাজিয়ে প্রণামির থালি, দিয়ে শত পশুবলি দেব-দেবী করতে ধন্য
    স্বার্থ পূরণে অর্থ লেহনে ধূলায় লুঠিছে সততার মূল্য!!

    বিবেক তুমি কি সেখানে আছো?

    যেথা চোখের আড়ালে কখনওবা টেবিলের তলে হয়ে যায় লেনদেন
    সম্মানের চেয়ারে কলমের আঁচড় যেথা কালিমা লিপ্ত অহরহ
    শিক্ষার কাঠামোতে ঘুণের বাসা! আঁধার ঘনালো বুঝি আগামীতে
    সরষের ভিতরে ভূত অদ্ভূত চিতায় জ্বলছে প্রতিবাদীর শবদাহ!
    বিবেক তুমি কি সেখানে আছো?সেই দেহে কি জ্বলছো তুমি!
    নাকি ঘুষের কবলে নিজেকে বিকিয়ে কুলুপ এঁটেছো মুখে!
    সাদা কালোর ফিকে আলোয় বেঁচে থাকুক মনের আশা
    শুভ অশুভের মেলবন্ধনে বোধদয় হোক থাকুক সকলে সুখে!!

  • কবিতা

    ভালোবাসার খোঁজে

    ভালোবাসার খোঁজে
    -শুভঙ্কর অধিকারী

     

     

    ভালোবাসা আজ কামার্ত চোখে শরীরী ভাঁজে খোঁজে
    সে শরীর যতই কালো হোক!
    কিন্তু কেউ আর খোঁজ রাখেনি কবির দেখা কৃষ্ণকলির
    সেই কালো হরিণ চোখ!!
    কৃষ্ণকলির আর যায় না মাঠে একা একা
    যতই ডাকুক শ্যামলা দুটি গাই!
    পাছে একলা পেয়ে ভালোবাসার নামটি করে
    যদি কেউ শরীর খুবলে খায়!!

    চায়ের পেয়ালায় তপ্ত স্বাদে বনলতার সাথে মাঝে মাঝে
    মুখোমুখি নয় পাশাপাশি আজ কেবিনের নিরালায়!
    বিদিশার নিশা চুলের মাঝে নাক ডুবিয়ে প্রেমিক খোঁজে
    ভালোবাসার গন্ধ আর মেতে ওঠে শরীরী খেলায়!!
    নখের আঁচড় বুকে এঁকে দেয় ভালোবাসার গভীরতা
    রক্তাক্ত অধর শুষে নিতে চায়, ভালোবাসার মানে!
    তৃষ্ণার্ত দেহ দিশেহারা হয়ে হাতরে বেরায় আর্ত শীৎকারে
    তবু হৃদয় মাঝে আসেনা যে কেউ, হৃদয়ের সন্ধানে!!

    বেণীমাধব, ভালোবাসার কোমল স্পর্শ কি আজও খোঁজো!
    তোমার মনে পড়ে সেই মালতী স্কুলের সেই মেয়েটিকে!
    আর হয়তো পরে না তোমার মনে!
    ব্যাস্ত বুঝি আপন সংসার জীবনে!
    কিন্তু সেই মেয়ে আজ সেলাই দিদিমণি। নষ্ট মেয়ে নয়!
    জানো, সেই সরল দুটি চোখ আজও খোঁজে তোমায়
    থমকে দাঁড়ায়, মাঝ রাস্তায় তোমার কথা ভেবে
    হঠাৎ এসে চমকে দিয়ে আপন করে নেবে!!!

You cannot copy content of this page