• সম্পাদকীয়

    অভিসন্ধির আড়ালে..!

    অভিসন্ধির আড়ালে..!
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,

    ‘বরণ আর পুর্তি’ এর মাঝেই আরো একটা বছর সমাপ্তির দোরে। ২০২০ ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়ে গেল চেতনায়। নতুন কয়েকটি শব্দ জীবনের অস্তিত্বের মাঝে স্থান জুড়ে নিয়েছে- যার সাথে পরিচয় ও পরিচিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন। সঙ্কটের আর এক নাম ২০২০- সহ্যের সীমানা পেরিয়ে চোখ রাঙানি প্রকৃতির। প্রকৃতির রোষানলে বিশ্ব জুড়ে একটাই শব্দ বড়ো প্রিয় সবার মনে- ‘রক্ষ মাম.. রক্ষ মাম..’ আরো একবার যেন মন্থন হলো বিশ্ব জুড়ে। হলাহল শুধু হলাহল সারাটা বছর জুড়ে, অমৃতের সন্ধান চলছে। অমৃত কলস (ভ্যাকসিন) হয়তো উঠেও আসছে ধীরে ধীরে। তবে এবারেও মন্থন শেষের অভিসন্ধি মেঘের আড়ালে। কিভাবে কার পাতে পড়বে.. সবটাই গুরুবর্গের অভিসন্ধির খেলা।

    একটি গ্ৰাম্যগল্পের উপসংহার- “ও ঠাওরমশাই আগে বলতি হয় তো..ছেরাদ্দ এদ্দুর গড়াবে জানলি আর এট্রু বেশি নিইক্যে রাখতুম..” সেও এক ভাগাভাগির গল্প। শাশুড়ি মা’র মুখে শোনা। গল্পটা অন্য একদিন- আপাতত বর্তমানে অমৃত বন্টন অভিসন্ধির শ্রাদ্ধ কতোদূর গড়াবে জানা নেই, তাই না নিকনোর আপশোষ মনে রেখেও লাভ নেই। অপেক্ষা থাকুক সবার পাতে পড়বে অমৃত। আরো একবার ত্রাসমুক্ত পৃথিবী দেখবো আমরা হাতে হাত দিয়ে- স্পর্শ বাঁচিয়ে নয়, বেড়াজাল ভেঙে স্পর্শের সম্পূর্ণ উষ্ণতা নিয়ে বাঁচবো আমরা।

    যাঁরা নিরলস সেবা দিয়ে গেলেন আমাদের এই অতি সঙ্কট সময়ে তাঁদের জন্য অন্তহীন কৃতজ্ঞতা।

    হেমন্তের হাত ধরেই শীতের হিমেল শুভেচ্ছা ও নববর্ষের আগাম শুভকামনা আলাপী মনের পক্ষ থেকে সবার জন্য।

  • সম্পাদকীয়

    পরিসংখ্যান কতোটা সত্যি বলে?

    পরিসংখ্যান কতোটা সত্যি বলে?
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    শক্তির আবাহন, সমৃদ্ধির পূজন, আলোর উৎসব সব কিছু মিটে গেল সময়মতো। এবারে মহামারী কালীন পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন-আদালত-পুজো-ক্লাব- জনতা- জনমত অনেক চাপান- উতোর ঘুরে ফিরে বারবার এসেছে উৎসব আবহে। কেউ বা সহমত, কেউ বা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
    ব্যক্তিগত অভিরুচি। হয়তো সেইরকম অভিরুচির বশবর্তী হয়ে অনেকে অনেক রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- তার একটি ছোট্ট ঘটনা জানাতে বা শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের সাথে ভাগ করে নিতে খুব ইচ্ছে করছে।

    মহামান্য হাইকোর্টের রায়- প্রশাসনের প্রদেয় অনুদানের প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ অর্থ মহামারী কালীন সতর্কতা ও সচেতনতার জন্য ক্লাবকর্তাদের স্যানিটাইজার, মাস্ক খাতে ব্যয় হবে। তারপর কিভাবে কোথায় কি হয়েছে তার তথ্য জানাতে হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ- কত জল মিশিয়ে আদালতে পেশ হবে সে তো জানা কথা।

    তবুও এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী- পূর্ব কলকাতার বিখ্যাত একটি পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা। একাধারে তিনি নির্বাচিত বিধায়ক ও মাননীয় মন্ত্রী। তাঁর তহবিল মারফৎ স্যানিটাইজার ও মাস্ক না কি তাঁর বিধানসভার অন্তর্গত সমস্ত পুজো কমিটির মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে জনসাধারণের জন্য। সাধু উদ্যোগ নিঃসন্দেহে।

    এইবার পুজো কমিটির কথা- যাঁরা বা যে পুজো কমিটি ওই অনুদান পেয়েছেন, তাঁরা কি করলেন?
    সবার কথা জানা নেই, কিন্তু একটি কেন্দ্রীয় সরকারী আবাসনের এ্যসোসিয়েশন বা পুজো কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আবাসিকরা পুজোর চাঁদা দিয়েছেন শুধুমাত্র তাঁরাই ওই স্যানিটাইজার বা মাস্ক পাবেন এবং অবশ্যই সাক্ষরের বিনিময়ে। ঠিক এইখানেই অবাধ্য মন বিরোধী হয়ে উঠলো। একটি ঘটনার পিছনে শত প্রশ্ন..সরকারী আবাসন যখন বলা বাহুল্য নানা জাতি, নানা ধর্মের বসবাস, তাঁদের উৎসবও ভিন্ন। তাই দুর্গা পুজোয় চাঁদা দেওয়া বা না দেওয়া সম্পূর্ণ তাঁদের ব্যক্তিস্বাধীনতা। কিন্তু জনতহবিল থেকে প্রাপ্ত উক্ত জিনিসে অধিকার তো সার্বজনীন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে। তাহলে এই সিদ্ধান্ত কতোটা অবমাননার ও স্বৈরাচারী ভাবলেই বিতৃষ্ণায় ভরে যাচ্ছে মন, কারণ আমাদের পরিবার থেকে এইবারেও চাঁদা দেওয়া হয়েছে প্রতিবারের মতো অর্থাৎ আমি বা আমরা এই অন্যায় সিদ্ধান্তের অজান্তেই সমর্থনকারী। জানি না ঠিক কতজন আবাসিক এটা নিয়ে ভেবেছেন? অনেকেই সাক্ষরের বিনিময়ে প্রাপ্যটুকু বুঝে নিয়ে দোর বন্ধ করেছেন। যিনি বা যে পরিবার চাঁদা দেন নি, তাঁদের সাক্ষরের সুযোগটাও রাখে নি পুজো কমিটি। ছিঃ, আসলে আমরা কাউকে নিয়ে ভাবতে ভুলে গেছি- কারো অবমাননায় পাশ এড়াতে শিখে গেছি। নিজেদের অপমানটাই বা কতটুকু বুঝতে পারি কে জানে?

    এখানেই সংঘাত নিজের সাথে এবং অবশ্যই সেই অর্বাচীনদের সাথে। স্বভাবের কারণেই প্রতিবাদ করেছি- তা অবশ্যই একলা চলো রীতিতে, পাশে পাবার মতো মেরুদন্ড সোজা করে চলার লোক আর পেলাম কবে? কারণ মানুষ প্রতিবাদ জানায় না ভদ্রবেশী ছলনাশ্রয়ী চাঁদার জুলুমবাজদের সামনে, হেসে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করে।

    চাঁদার দাবিতে অনেক ঘটনা সামনে আসে- বেকার ছেলে, নেশাখোর বিভিন্ন আখ্যা দিই আমরা তাদের। হ্যাঁ, তাদের সামনেও আমরা প্রতিবাদ করি না ভয়ে- তাদের জুলুমবাজির শিকার মৃত্যুর মুখোমুখি হয় অনেক সময়। আর ভদ্রলোকেদের জুলুমবাজিতে মনের মরণ হয়- মনের মৃত্যুর যে হিসাব হয় না। আর তাই মুখোশধারীরা কলার তুলে চলার সাহস পায় সারা জীবন।
    স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের এই পরিসংখ্যান তো মহামান্য আদালত তো পাবেন না- না কি রোগ জাতি-ধর্মের ব্যবধানে বদলে গেল? ভাবতে অবাক লাগছে এঁরা সরকারী কর্মচারী। ছিঃ.. এতো হীনমন্যতা!
    উৎসবের আবহ এবার বড়ো করুণ ছিল, তার সাথে বিতৃষ্ণা দোসর অর্বাচীনদের মাঝে বাস করার ফল।

    হৈমন্তী শুভেচ্ছা সকল প্রিয় ও শ্রদ্ধেয়জনকে। শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    উপলব্ধি..

    উপলব্ধি..
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,

    চেতনা-মানবিকতা-অনুভব-উপলব্ধি সব কিছুই নতুন করে নতুন রূপে ধরা দিয়েছে আমাদের কাছে এই বছরে। শুরুটা হয়তো ঠিক এমনটা ছিল না, শেষটা কেমন হবে তাও জানা নেই। পায়ে পায়ে পেরিয়ে এলাম দশ মাস- আর বাকি দুই। মনে বড়ো আশা, বিশেই শেষ হবে বিষ।
    মহামায়া আসছেন- আবার নতুন করে মনটাকে মায়ায় জড়িয়ে নিতে। সবটাই মায়া- তাই বোধহয় সহজেই ভোলা যায়। কিন্তু সত্যিই কি ভোলা যায়? না কি স্মৃতির আবরণে সাময়িক বিস্মরণ।
    ভুলে যাবো কি? সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সব বন্ধ রাখতে হবে। মানুষের জন্য মানুষকে দূরে থাকতে হবে। একরাশ দুশ্চিন্তা আর ভয় নিয়ে দিনরাত কেটেছে, কাটছে। স্কুল, কলেজ, অফিস সব বাড়িতেই- ‘অনলাইন ক্লাস’, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ সব নতুন ব্যবস্থা, নতুন সিদ্ধান্ত এসেছে জীবন সচল রাখতে। পরিসংখ্যান যাই বলুক- সমস্ত ক্ষয়-ক্ষতি স্বীকার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা চলছে। সফলতা? জানা নেই। ব্যাতিক্রম শুধু, জরুরী পরিষেবা। জরুরী পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষরা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সুস্থ রাখার অসম যুদ্ধে সংগ্ৰাম করে যাচ্ছেন। তাঁদের জীবন, ছুটি, পরিবার, হাসি, আহ্লাদ, আনন্দ সব পরিষেবার চড়া মূল্যে বন্ধক। কবে ফেরত? কতজনের ফেরত হিসেব হবে? হবে হয়তো আরো একটি নতুন পরিসংখ্যান।
    সংক্রমণ এড়াতে বন্ধ সব ধর্মের দেবালয়ের দ্বার। অতন্দ্র প্রহরায় খোলা শুধু মানব সেবা-মন্দির (হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র)। সেখানে দেব-দেবীরা নিরলস সেবা দিয়ে চলেছেন। এই মন্দিরে দেবতা সেবা নেন না- আতুর জনেরা সেবা প্রাপ্তির পর করজোড়ে চোখের জলে এখানে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। পরম শ্রদ্ধায়, বিশ্বাসে, ভরসায়। দেব-দেবী বড়ো প্রাণময়, সচল এখানে- সেবা ধর্ম একটি মাত্র ধর্ম। বড়ো পবিত্র স্থান।
    পাথর, ধাতুর মুর্তির দেবালয় নির্মাণে তহবিল গঠন হয়- ভীষণ বিলাসীতায়, দরাজ হৃদয়ে, উদাত্ত ঘোষণায় উদ্বোধন হয়, কোনো অভাব, কার্পণ্য সেখানে নেই। অথচ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তহবিল গঠনে সময়ের চাকা ঘুরে যায়, লাল ফিতের বাঁধনে। অতিমারীও কি চেনাতে পারবে আসল মন্দির-প্রকৃত দেবতা! কে জানে আমরা কবে বুঝবো! আদৌ কি বুঝবো? রাজনীতি…
    মৃৎময়ীর বন্দনায় মেতে ওঠার আগে একবার কি ভাববো না মানুষরূপী ভগবানের কথা। আমাদের সচেতনতা হয়তো ওনাদের একটু স্বস্তি, একটু বিশ্রাম দিতে পারে। বাকি? জানা নেই.. শুধু ভয় আছে একরাশ।

    সকল স্বজন সাথী সাহিত্যিক, পাঠক বন্ধুদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা পথ চলার সাথী হওয়ার জন্য।

    শারদীয়ার অগ্ৰিম শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    অন্য পৃথিবী

    অন্য পৃথিবী

    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,

         অভিজ্ঞতা একটা সময় গল্প হয়। একজনের মুখ থেকে আর একজনের মুখে.. ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ে তার সুবাস- অভিজ্ঞতার সুবাস।

    এমনি এক অভিজ্ঞতার গল্প খুব বলতে ইচ্ছে করছে। না, অভিজ্ঞতা আমার নয়- আমারো শোনা গল্প। অভিজ্ঞতা যাঁর, তাঁর মুখ থেকেই শোনা, আমার কাছে হয়তো একটি গল্প। ‘কোরাস’ একটি এন.জি.ও-র প্রধান উদ্যোক্তা- পল্লব ব্যানার্জী। কথা হচ্ছিলো তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে- জানতে চাইছিলাম তাঁর কাছে, বলছিলেন অনেক কিছুই। জানতে পারছিলাম অসহায় মানুষগুলোর কথা। হঠাৎ পাশে একটি স্থানীয় মানুষ এসে দাঁড়ালেন চোখে সম্ভ্রম, কৃতজ্ঞ দৃষ্টির মিশেল চাহনী। বেশভূষা, চোখমুখ বলছিলো ভালো নেই উনি। পল্লব বাবু জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মেয়ে কেমন এখন? ঘাড় নাড়লেন মানুষটি, চোখের কোলে জল। পল্লব বাবু বললেন, কোনো অসুবিধা হলে সাথে সাথেই বলবে আমাকে।

    মেয়েটির ক্যান্সার- চলনশক্তি নেই। বস্তির গুমোট ঘর থেকে বেরোতে পারতো না- কাঁদতো। পল্লব বাবু একটি হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছিলেন ওকে। তাতে বসে ওর বাইরে আসা। উনি বলছিলেন, সে যে বাচ্চা মেয়েটির কি আনন্দ.. আপনাদের বোঝাতে পারবো না। মারণ রোগের সাথে বেশীদিন যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই ওই ছোট্ট শরীরে, তবুও বাইরের হাওয়া, আলো মেয়েটিকে রোজ নতুন করে আনন্দ দেয়। চোখে জল তো আমাদেরও এলো। সেই প্রসঙ্গে উনি আরো একটি ঘটনা বললেন। ঝড় বিধ্বস্ত সুন্দরবনে ত্রাণ নিয়ে গেছিলেন ওঁরা। সেখানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন বললেন তেমন বললেন একটি মধ্য ত্রিশের মহিলার কথা। কোমর থেকে পা অব্দি নাড়াতে পারেন না, গৃহবন্দী প্রায় কয়েক বছর। ওখানের স্থানীয় ছেলেদের অনুরোধে একটি হুইল চেয়ার নিয়ে গেছিলেন তিনি। সারাদিনের ধকল, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা, রাজনৈতিক তরজায় ক্লান্ত শরীরে ওই ভদ্রমহিলার দরজার সামনে দাঁড়ান। হুইল চেয়ারটিতে তার পরিবারের লোকেরা তাকে বসিয়ে দেয়- একসাথে হাসি-কান্না দুই তার চোখে মুখে মাখামাখি হয়ে গেছিল। শিশুর মতো পাক খাচ্ছিলেন চেয়ারে বসে। পল্লব বাবু বললেন- একটি মার্সিডিজ কেনার আনন্দ ফিকে হয়ে যায় জানেন এই ছোট ছোট খুশীগুলোর কাছে।

    গঙ্গার ধারে সন্ধ্যার নিভন্ত আলোতেও জ্বলজ্বল করছিলো তাঁর চোখ অনন্য প্রাপ্তিতে। মনে হচ্ছিলো সেই মুহূর্তে ঈশ্বর মানে আশা, ঈশ্বরবাদী মানে আশাবাদী- ধর্ম, জাতি, সামাজিক ভেদাভেদের অনেক উর্ধ্বে। স্বার্থের দুনিয়ায়, জনপ্রিয়তার কাঙাল দুনিয়ায়, আত্মম্ভরিতায় ব্যস্ত দুনিয়ায় এ যেন এক অন্য পৃথিবী।  মনের ঝুলিতে আরো এক প্রাপ্তি সেইদিন।

    ফিরে আসি আলাপী মনের কথায়- নতুন কিছু বন্ধু আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের প্রয়াস, ভালোবাসা, পরিবারের একজন হয়ে ওঠার মুহূর্তগুলোতে মনে হচ্ছে আমরা আবার কবে এক হবো এক ছাদের তলায়- শুরু হবে হাসি গল্পের পালা। পুরোনো, নতুনের ভালোবাসার এই মেলবন্ধনে আবদ্ধ থাকতে চাই আজীবন- এই বন্ধনের নাম হোক আলাপী মন।

    ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা, শুভকামনা নিরন্তর।

  • সম্পাদকীয়

    এ..লো..মে..লো…

    এ..লো..মে..লো…
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    অসহযোগ চলছে কলম আর মনের। সংঘাত- বাস্তবে আর ভাবনায়। পরিস্থিতি বিচার করার ক্ষমতা সাময়িক ভাবে হয়তো বা অগোছালো- এলোমেলো। তবুও চলছে দিন, রাত আসছে- নীরবতা হাত ধরছে।
    আরো কতো দূরে মুক্তির আলো- অজানা।
    মুক্তি? কে জানে কোন মুক্তি আমাদের কাম্য।
    ভয়- ভাবনাহীন একটা দিন, নাকি শেষ দিনের সূর্য? যে সূর্য আর তাপের ভয় দেখাতে পারবে না। তাপহীন দিনের জৈবিক শীতলতা- স্থবিরতা সেই মুক্তিই কি কাম্য? না কি অগোচরে এই স্থবির শীতলতা থেকেই পালাতে চেয়ে মুক্তি খোঁজে ভয়ার্ত মন।
    হাজারো প্রশ্নের ভিড়- আকাশের তারারা চেনায় পথ? আসে পুষ্পরথ? না কি সবটাই ধোঁয়া আর ফাঁকি। তবে পার-আনি! সারা জীবনের সঞ্চয়? সুখ-দুঃখ, পাপ-পুণ্য? বোধ- বুদ্ধি- চেতনা!

    জীবন বেসাতি দেখে মৃতের আঙিনায়। মহাজন- হরিজন- মহাজন, পরিক্রমা শেষ, সব বলা শেষ.. একটা জীবন যুদ্ধের শেষে- সম্পর্কের আল্পনা পড়ে থাকে‌। থেকে যায় বাকি শুধু খেলাশেষের জয়ের হাততালি। কুড়িয়ে নেওয়ার পালা। এপার- ওপার… অসহায় শীতলতা! নাহ্, আসলে মৃত্যু খুব স্বার্থপর।

    আকাশটা বড়ো মেঘলা- মনের আকাশ। গুমোট..বৃষ্টি হলেও মেঘ কাটছে না। অহেতুক কথার মেঘে শুধু ভারাক্রান্ত হয়েই উঠছে ক্রমাগত।

    সময় সব থেকে বড় চিকিৎসক, ধৈর্য্য মহৌষধ। আশা থাক সময়ের হাত ধরেই ফিরে আসবে সব আবার- আনন্দ, হাসি, কলতান..

    আলাপী মন- এর সকল সাথীদের কাছে কৃতজ্ঞতা বিনি সুতোর মালার মতো পরিবারকে এক সূত্রে গেঁথে রাখার জন্য।
    আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আলাপী মনের পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    অধরা মন্ত্র..

    অধরা মন্ত্র..
    -রীণা চ্যাটার্জী

    শুরু হয়.. শেষ হয়। শেষ থেকে শুরু? নাকি শুরু থেকে শেষ! কোথায় আমরা? আমরা মানব জাতি? মানব সভ্যতা? মানবতা? কেমন যেন‌ পঙ্কিলতা ঘিরে রেখেছে- চারপাশ বড়ো কর্দমাক্ত। হাঁফ ধরে যাচ্ছে রোজের প্রতিবাদী অধ্যাবসায়ে।
    ছোটোবেলায় ঠাকুমার মুখে শোনা- ‘আমার ছেলে ছেলেটি ঘোরে যেন লাঠিমটি, তোমার ছেলে? ছেলেটা ঘোরে যেন বাঁদরটা..’ ‘আমি-তুমি’র আঞ্চলিক প্রবাদ। অক্ষরে অক্ষরে সত্যি মনে হয়, যখন দেখি আমার নীতি নীতিটি সত্য সুরের গীতি’টি, তোমার নীতি নীতিটা হবে কবে ইতি’টা?’
    প্রশ্ন জাগে মনে, মানবতা-মানবিকতা-নীতি- আচার-আচরণ সব কিছু সঠিক প্রমাণ করে কি বিশেষ কোনো রঙ-দল-পতাকা? আমার বা আমাদের রঙ- দল-পতাকার সাথে চলতে পারলে তবেই তুমি বা তোমরা সঠিক- শিক্ষিত-নীতিবাদী-মানবদরদী? নাহলেই আঙুল তুলবো তোমার সবকিছুতে?
    ঠিক যেন, আমাদের পতাকা, দল, নীতির বিরুদ্ধ হলেই তোমাদের সব ভুল। ভ্রান্তিতে ভরা তোমার শিক্ষা-নীতি-বিশ্বাস, অজ্ঞানতা তোমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাই তোমরা চুপ করে থাকবে- নাহলে বক্তব্যের আঁচড়ে, কামড়ে ক্ষত-বিক্ষত করে দেবো তোমাদের অস্তিত্ব।
    এই কঠিন- অচেনা সময়েও নীতির জয়জয়কার। দুুঃখ এই কঠিন সময়েেও শুধু মাত্র মনুষ্যত্বের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব নিয়ে আমরা নীতি বর্জন করতে পারলাম না। বিচ্ছিন্ন নীতির দ্বীপ হয়ে থেকে গেলাম। মানবতার মহামন্ত্র অধরা থেকে গেল। ভয় লাগে, এই কি শেষ- এরপর উত্থান তো.. না কি পতনের শুরু?
    উত্তর সময়ের গর্ভে- অপেক্ষার আবহে মনের বাস এখন..
    কথাও যেন এখন যোজন যোজন দূর- স্বাভাবিক জীবনের জন্য প্রতিটি মুহূর্তের অপেক্ষা। ধৈর্য্যের পরীক্ষা সচেতন প্রতিটি মানুষের জন্য।
    আগামীর শুভেচ্ছা, শুভকামনা সকলের জন্য আলাপী মন- এর পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    বিকৃত ব্যর্থ স্তম্ভ..!

    বিকৃত ব্যর্থ স্তম্ভ..!
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    সময়টা বড়োই অস্থির বর্তমানে, অস্থিরতার মাঝে আমরাই বা আর স্থির থাকি কি করে? আমরাও বড়ো অস্থির হয়ে উঠছি। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, সহিষ্ণুতা হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও সর্বসংহা হয়ে মন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বালির বাঁধ দিয়ে- কিন্তু কতদিন সম্ভব? প্রয়োজনই বা আর কতদিনের কে জানে? জীবন ভীষণ সস্তা এখন- কান পাতলেই শুনি তার.. পদধ্বনি। সকাল- সন্ধ্যায় এক সংবাদ- আক্রান্ত আরো..আরো.. আতঙ্ক গ্ৰাস করছে ক্রমশঃ।
    সংবাদ পরিবেশনা সেও যেন আরো ভয়ানক আতঙ্ক..মনে যেন আরো আতঙ্কের সৃষ্টি করছে নিত্যনতুন। কিভাবে, কোন ভঙ্গীমায় সংবাদ পরিবেশন করছেন আপনারা একটু ভাবছেন কি? গণতন্ত্রের চতুর্থ ও অপরিহার্য স্তম্ভ! আপনাদের উপস্থাপনা, সংযোজন- বিয়োজন সব কেমন হৃদয়হীনতার সাক্ষ্য দিচ্ছে, দিয়ে চলেছে ক্রমাগত। সবটাই কেমন যেন ব্যবসায়িক দিক- কিন্তু সংবাদ মাধ্যম বা পরিবেশনা কি সত্যিই শুধুই ব্যবসায়িক দিক আর বিজ্ঞাপনের চমক? তার জন্যই কি ঘন্টায় ঘন্টায় আপডেট?
    সে সংবাদের সারবত্তা থাক বা না থাক? ভুলে ভরা, ভ্রান্তিতে গড়া চমকপ্রদ খবর, রোগ- ভোগ, শঙ্কা- ঝঞ্ছা সবেতেই বেমানান ভঙ্গী? আকস্মিক হৃদয়বিদারক মৃত্যুর সংবাদ বলতেও গলার স্বরে যেন বিজ্ঞাপনী ঝলক। অবশ্য বিজ্ঞাপন তো বটেই- কারণ সাথে সাথেই আপনারা এটা বলতে ভোলেন‌ না আপনাদের কৃতিত্ব- এই সংবাদ আপনাদের চ্যানেল প্রথম প্রকাশ করছে, আর তার পুনঃ পুনঃ নির্লজ্জ প্রচার।
    মনে পড়ে যায় দূরদর্শনের সাড়ে সাতটার সংবাদ। পনেরো মিনিটের উপস্থাপনা- অপেক্ষা থাকতো সারাদিনের। বাড়ির ভাবগম্ভীর বয়ঃজ্যেষ্ঠ বনেদীয়ানা ও সাবেকি প্রথায় বিশ্বাসী কর্তাব্যক্তিরাও ওই সময়টায় দূরদর্শনের পর্দার সামনে থাকতেন। সংবাদ পাঠক/ পাঠিকার গলার স্বরের সাথে পরিবেশ বদলে যেত। একটি শোকবার্তা প্রকাশের বাচনভঙ্গীতে মনটাও গুমরে উঠতো। সবটাই অতীত, কারণ সেখানেও এখন নানা ফিতের ফাঁসে শুধুই ফিতে কাটার অপ্রয়োজনীয় প্রচার। স্বাধীনতা- সেখানে অনেকটাই যেন সংসারে গিন্নীমায়ের চাল বের করে দেওয়ার মতো কুক্ষিগত। অবশ্য তবুও তাঁদের বাচনভঙ্গি আজো বিকৃত হয়ে যায় নি- এটুকুই স্বস্তি।
    আর আপনারা দশ- শত- সহস্র- লক্ষ মৃত্যু সংখ্যা হাত- পা, চোখের নাটুকে ভঙ্গীতে অবলীলায় প্রকাশ করে চলেছেন! এক সাথেই মুচমুচে সস্তা রাজনৈতিক তরজা- সমালোচনার ঝড় তুলছেন নির্লজ্জের মতো।
    আর যাঁরা সত্যি কথা বলতে, সত্যি সংবাদ প্রকাশ করতে জীবন বাজি রেখে সংবাদ সংগ্ৰহ করছেন- তাঁদের খবর প্রকাশ্যে আসছে না কারণ সংবাদ এখন প্রশাসন অনুমোদিত অনুচ্ছেদ, আর তাই তাঁরা তাঁদের সংবাদের সাথেই হয় কারাগারের পেছনে না হয় রক্তচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছেন।
    সংবাদ ফেরিওয়ালারা একটু সততা আর সাহসী মনোভাব নিয়ে ভাববেন- চার স্তম্ভের একটি স্তম্ভ যদি ভেঙে পড়ে, তবে আমাদের গণতন্ত্রও ভেঙে পড়বে। অবশ্য গণতন্ত্র আর কতটা বাকি আছে, সেটাও সংখ্যাতীত অঙ্কের প্রশ্ন চিহ্নের সম্মুখীন আজ…

    আগামীর ঐকান্তিক শুভকামনা আলাপী মন-এর পক্ষ থেকে পরিবারের সকলের জন্য। অপেক্ষা‌ রাখি আমরা ধৈর্য্যের হাত ধরে- এর বেশী কিছু বলার ভাষা বোধহয় আজ আর কারোর কাছেই নেই।

  • সম্পাদকীয়

    “খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে..”

    খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে..”
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    অবতারণাহীন রোজনামচা বিগত কয়েক দিনের। হয়তো বেঁচে যাবো, কিংবা থাকবো না এই পৃথিবীর মাঝে। অসুস্থ পৃথিবীতে বড়ো ভয় এখন, আতঙ্ক ছেয়ে আছে মনে। অদ্ভুত এক সময়ে যখন সবসময় মনকে বোঝাতে হয়- ভালো হবে সবকিছু.. ভালো হবেই। তবুও মনে একটা ‘কিন্তু’ থেকে যায়। থেকে যায় অবিশ্বাস।
    ভেবেছিলাম অজানা- অচেনা পর্বটা পুরোনো সুখস্মৃতির জালে জড়িয়ে কাটিয়ে দেবো। হচ্ছে না, আর সম্ভব হচ্ছে না। এখন মনে হচ্ছে.. প্রিয়জনের মুখ দেখি না কতদিন। কত কাজ পড়ে আছে.. কিন্তু কতোটা পথ আরো আছে সেটাই জানা নেই।

    শিখলাম-দেখলাম নতুন অনেক কিছু, গণ্ডীবদ্ধ জীবনে- সকালটা ধরা দেয় কি সুন্দর মায়াবী প্রকৃতির হাত ধরে। পাখী-গাছ- আকাশ সব নিয়ে প্রকৃতি রোজ যেন নব উদ্যোমে সেজে উঠছে। মন খারাপের মাঝে অন্যরকম ভালোলাগা। তবে কি অসুস্থ প্রকৃতিকে সুস্থ করতেই পৃথিবীর এই অসুখের সাজ? মানব সভ্যতার নৃসংশতার তাণ্ডবের মাঝে অঘোষিত, অসম যুদ্ধ। কেমন আছো পৃথিবী তুমি? খুব জানতে ইচ্ছে করে। কবির অঙ্গীকারের দায়বদ্ধতা নিয়ে এ পৃথিবীকে নবজাতকের বাসযোগ্য করে যাবে তো? আমরা পারিনি মনে রাখতে। ক্ষমতা, লড়াই, দ্বন্দ্বের জের টানতে এতো ব্যস্ত ছিলাম যে, ভবিষ্যতের কথা ভুলে ছিলাম। ভুলে ছিলাম সহ্যের সীমা আছে। তার পরিণাম কি আজকের অসহায় জীবন যাপন? পরিণতি? জানা নেই। মনে হচ্ছে হয়তো বিজ্ঞান একটা প্রচেষ্টা, অসীম জ্ঞানের ভাণ্ডার কিন্তু তারও পরিধি আছে, সীমাবদ্ধতা আছে। অপরদিকে আছে এক অমোঘ শক্তি, তার কাছে আমাদের সম্পূর্ণ মানব সমাজের গর্ব, অহঙ্কারকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া শুধুই এক খেলা। কবির উপলব্ধিতে:
    “খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে/ প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা
    নিরজনে প্রভু নিরজনে।”
    শুভ হোক আগামী। আলাপী মনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সকলের জন্য।

  • সম্পাদকীয়

    পৃথিবী আবার শান্ত হবে..

    পৃথিবী আবার শান্ত হবে..
    – রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    অতীত- বর্তমান- ভবিষ্যত কালের এই তিনের আবর্তে জীবন চলছে, জগৎ চলছে। অতীত স্মৃতির কোলাজ। ভবিষ্যত বাঁচে আশা-ভরসার স্বপ্ন দু’ চোখে নিয়ে। আর বর্তমানের সাথে বেঁচে থাকার কথা, সমসাময়িক হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখ ভীষণ ভাবে জীবন্ত। এড়িয়ে যাবার উপায় নেই কোনোমতেই। গুরুদেবের কথায়,”মনেরে আজ কহ যে, ভালো- মন্দ যাহা কিছু আসুক সত্যকে লও সহজে..” কিন্তু আজকের বর্তমান! বড়ো অজানা আতঙ্কের। ভয় লাগছে বর্তমানে, তবুও ভবিষ্যতের চোখ জুড়ে থাক আশার আলো।

    আশ্চর্যজনক ভাবে বিশ্বপ্রকৃতিও যেন এই বর্তমানের আবরণ খুলে রেখে ফিরে গেছে নিজের সুন্দর অতীতে। পশু- পাখী, নদ- নদী যেন আবার আগের মতো হাসছে, খেলছে। প্রতিদিনের ভোর রাত যেন মায়াবী চোখ মেলে চায়। সেই মায়াবী আলো ঘেরা ভোরে বন্দী মনটাও চাইছে ফিরে যেতে সেই অতীতে- যেখানে মায়ের আঁচল ছিল একান্ত আশ্রয়। মায়ের গলার স্বরে ছিল দুরন্ত প্রশয়। সঙ্গীসাথীদের সাথে কাটিয়ে আসা চঞ্চল কৈশোর বেলা- লুকোচুরি, কাটাকাটি, ছু কিত্…কিত্.. সবকিছু যেন দু’ হাতের মুঠোয় ধরতে ইচ্ছে করছে। বৈশাখী অলস দুপুর, গল্পের বই সাথে বড়দিদার আচার, আমসত্ত্ব। টক- মিষ্টি সব স্মৃতি ঘুরছে মনের চোরাগলিতে। শীতের দুপুরে রোদে বসে ঠাকুমার কাছে মহাভারত, রামায়নের গল্প শোনা। সন্ধ্যায় বাবার কাছে পড়াশোনা।
    সারাদিনের হুটোপুটির শেষে ক্লান্ত হয়ে আবার মায়ের আঁচলে ফিরে আসা। সব মা যেন আঁচল পেতে বসে থাকেন, তাঁর শিশুর শৈশব- কৈশোর আঁচল বন্দী করে রেখে দিতে। সন্তান তো পাখীদের মতোই। বড়ো হলেই নিজের বাসা গড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর ‘মা’? ‘মা’ তখন তাঁর আঁচল থেকে ঘ্রাণ নেন তাঁর সন্তানের। তাই আমরা যতোই বড়ো হয়ে যাই না কেন, মায়ের আঁচলে আমাদের শৈশব মাখা থাকে। মায়ের চোখে কখনো তার সন্তান বড়ো হয় না। ‘মা’ আমাদের চিরদিনের অমলিন আশ্রয়।
    থেমে যেতে ইচ্ছে করছে সেই ফেলা আসা দিনগুলোতে। যখন বর্তমান আর জীবন মিলেমিশে চলতো চেনা সঙ্গীর মতো। কিন্তু আজকের অজানা বর্তমানে চোখ মেলতে বড়ো ভয়। শুধু একটাই কথা বিশ্বাসী মন্ত্র আজ মনের গহীনে, “একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে.. “
    যাঁরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পৃথিবী শান্ত করার কাজে ব্রতী হয়েছেন এই দুঃসময়ে- অন্তরের সবটুকু শ্রদ্ধা নিবেদন করি। ঈশ্বর মানি- তাই তাঁর কাছেই প্রার্থনা জানাই, তোমার সাহসী সন্তানদের তুমি রক্ষা করো।
    আলাপী মনের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই আন্তরিক ভালোবাসা, শুভকামনা। শুভ হোক আগামী।

  • সম্পাদকীয়

    লজ্জার প্রতিধ্বনি

    লজ্জার প্রতিধ্বনি
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    গর্বিত আমরা বাঙালী, তাই। গর্ব আমাদের গুরুদেবের দেওয়া বুলি আজো আমাদের প্রাণের সুধা, মনের ক্ষুধা, ক্লান্তিতে নিদ্রা। না, ওনার লেখা সম্পূর্ণ জানতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি- এই কথা বলার স্পর্ধা নেই। তবুও গুরুদেব মিশে আছেন আমাদের রক্তে- মজ্জায়- আত্মায়। আমাদের আত্মার আত্মীয়। তাঁর বাণী ধ্বনিত হয় আমাদের চেতনায়- ভালোবাসা, বিরহ, শোক- তাপ, উৎসব আবহে সকল অনুভূতির মাঝে।

    তবে বর্তমান বড়োই ব্যস্ত ‘নাম-বিদ্রোহ’ দিয়ে অন্য চর্চায়। হ্যাঁ, বিদ্রোহ বা বিরোধীতার নাম নিয়ে, বিশ্বকবির নাম বন্ধনী নিয়ে সেই গুরুদেবের কলমের শরণাপন্ন মুষ্টিমেয় কাঙাল বাঙালী। অবশ্যই কাঙাল। জনপ্রিয়তার কাঙাল, খুব সহজেই শ্লীল- অশ্লীলের সীমারেখা বিসর্জন দিয়ে সমাজে শব্দের জীবাণু ছড়িয়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র পরিচিতি পাবার জন্য। কারণ গুরুদেবের কিছু কথা, কিছু শব্দ, কিছু ছন্দের বাস আমাদের মননে- সেই শব্দ, সেই সুর অশ্লীলতা স্পর্শ করলে আমরা ঘৃণায় হোক, বিরক্তিতে হোক, লজ্জায় হোক, ক্রোধের বশে হোক একবার ফিরে তাকাবোই। সেখানেই এই চটুল মানসিকতার সার্থকতা। অশ্লীলতা- নগ্নতা চার দেওয়ালের সীমাবদ্ধতা ছেড়ে যখন বাইরে পা রাখে- তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না এদের আসল উদ্দেশ্য। তার্কিক সমর্থকরা প্রশ্ন তুলবেন, “এই কথাগুলো কি রবীন্দ্রনাথের পৈত্রিক সম্পত্তি.. যে আর কেউ বলতে পারবে না।”
    নাহ্, পৈত্রিক সম্পত্তি না, ওটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি- রচয়িতা সত্ত্বাধিকারী। কারণ এখন সোস্যাল মিডিয়ায় দু’মিনিট চোখ রাখলেই চারটি লেখা চোখের সামনে আসবে। লেখার বিষয়বস্তু বা কলমের দক্ষতার পরিচয় দেখতে পাওয়া না গেলেও নীচে লেখা দেখা যায় “সম্পূর্ণ সত্ত্ব সংরক্ষিত’ “কপিরাইট” ইত্যাদি প্রভৃতি। অবশ্যই রচয়িতার অধিকার সবার আগে। কিন্তু ওনাদের আছে আর বিশ্ববন্দিত গুরুদেবের নেই? এটা কেমন কথা হলো? তর্ক করবো না, তবে নিজের লেখা সম্বন্ধে গুরুদেবের নিজস্ব মতামতটুকুই অন্তত তুলে ধরার চেষ্টা তো করা যেতেই পারে তাঁর মতামতকে সম্মান জানাতে। বিশিষ্ট আইনজীবী জানকীনাথ বসুকে লেখা একটি চিঠি, “আমার গান ইচ্ছামত ভঙ্গি দিয়ে গেয়ে থাকেন, তাতে তাদের স্বরূপ নষ্ট হয় সন্দেহ নেই। গায়কের কণ্ঠের উপর রচয়িতার জোর খাটে না, সুতরাং ধৈর্য্য ধরে থাকা ছাড়া অন্য পথ নেই। আজকালকার অনেক রেডিয়োগায়কও অহংকার করে বলে থাকেন তাঁরা আমার গানের উন্নতি করে থাকেন। মনে মনে বলি পরের গানের উন্নতি সাধনে প্রতিভার অপব্যয় না করে নিজের গানের রচনায় মন দিলে তাঁরা ধন্য হতে পারেন। সংসারে যদি উপদ্রব করতেই হয় তবে হিটলার প্রভৃতির ন্যায় নিজের নামের জোরে করাই ভালো।” (তথ্যসূত্র- সঙ্গীতচিন্তা,২০ ডিসেম্বর,১৯৩৮)
    নিজের নাম? হায় রে, আমাদের প্রভাতের উজ্জ্বল আলোটাই মনে হয় কলঙ্কিত হয়ে গেল। নাম তো আর অভিভাবকরা ভবিষ্যত ভেবে রাখেন না। ওটা যে ভালোবাসা ও আদরের পরিচয়। তাই কিছু অপাঙক্তেয় নিয়ে চলতেই হয় আমাদের। কবিগুরুর কথায়
    “ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে/ ধ্বনি কাছে ঋণী সে যে পাছে ধরা পড়ে” আর তো কোনো উপায় নেই, তাই গুরুদেবের বাণীতেই খুঁজে নিলাম আমরা সান্ত্বনা।

    সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো “আলাপী মন” এর দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশ অনুষ্ঠান। উপস্থিত সকল বরেণ্য, শ্রদ্ধেয় অতিথিদের আন্তরিক ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ভালোবেসে আমাদের পারিবারিক সূত্রে গেঁথে দেবার জন্য। যাঁরা আসতে পারেন নি, ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে তাঁদের সবাইকে ভবিষ্যতে আমাদের মাঝে পাবো, এই আশা রাখি।

    আলাপী মনের পক্ষ থেকে নিরন্তর শুভেচ্ছা, শুভকামনা।

<p>You cannot copy content of this page</p>