-
শুভকামনা আগামীর
শুভকামনা আগামীর
–রীণা চ্যাটার্জী
ফিরে দেখার দ্বিতীয় বর্ষ, পথ চলার দ্বিতীয় বর্ষ। “আলাপী মন” ওয়েব ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় বর্ষ।
দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা নিয়ে কলম যখন কথা বলে স্পর্ধায়, আঁচড়ে ভরিয়ে তোলে খাতার পাতা- মনের কথা প্রকাশ পায় অবলীলায়। তখন অভিজ্ঞতা, আবেগ, আবেদন, নিবেদন, ব্যথা সব বাঙ্ময় হয়ে ওঠে কলমের স্পর্শে। আর স্পর্ধা-স্পর্শ সব কিছুর অন্তরালে থাকে দৃষ্টি- চেতনার উন্মেষে চোখ মেলে চাওয়া। কবিগুরুর কথায়, “আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি… বাহির পানে চোখ মেলেছি, হৃদয় মাঝে চাই নি..” ভীষণভাবে আলোড়িত করে যায় গুরুদেবের বলে যাওয়া এই জীবনবোধ। সত্যিই তো ‘হৃদয় মাঝে চাইলে’ই চেতনার উন্মেষ- নিজেকে চেনা, সমাজকে জানা পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণ করা- সবকিছুই সহজ হয়ে যায়। সাহিত্যিক্যের সাহিত্য সৃষ্টির হাত ধরে সমাজের লয়-ক্ষয়, পরিবর্তন, প্রতিবাদ, প্রতিশোধ, সময়ের সরণী মাঝে রেখে যাওয়া প্রতিলিপি। আজকের সাহিত্য সম্ভার ভবিষ্যত দিনে অতীতের সামাজিক দর্পণ।
“প্রতিশ্রুতি”র দৃঢ়তায় “বোধন”এর শুভ বোধে আলাপী মন এগিয়ে চলেছে। পূর্বসূরীদের সহযোগীতা, আশ্বাসের সাথে উত্তরসূরীদের ভালোবাসার হাত ধরে। খুব মনে পড়ে প্রথম দিনের পথ চলার কথা। দুই থেকে দশ স্বজনসাথী নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। বিমুখ করেন নি আমরা নতুন বলে। সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের প্রিয়, শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিকরা তাঁদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতার হাত ধরে। আজ তাঁদের কেউ কেউ আমাদের সাথে আছেন, “আলাপী মন”এর পথ চলার নিত্য সঙ্গী হয়ে। কেউ কেউ সাথে নেই, হাত ছেড়েছেন অবহেলায় বা ব্যস্ততায়- সবাকার কলমের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি বিনম্র শ্রদ্ধায়।
বসন্ত দোরগোড়ায়- আবীরের রঙীন, বন-পলাশের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা “আলাপী মন- সাহিত্যের আঙিনা”র পক্ষ থেকে। আশায়, ভালোবাসায়, আশীষে শুভ হোক আগামী..
-
.. তবুও একটু ভাবুন
.. তবুও একটু ভাবুন
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
স্তব্ধতা ভর করেছে মনে, বুকের ওপর একরাশ দমচাপা কষ্ট, কলম ভেবে পায় না কি লিখবে.. কি লিখবে না.. কারণ বোধহয় অসহায়তা। একটু যখন বড়ো হলাম, মা বলতো, “আগে মা হ’ তবে বুঝবি..” না আমি বা আমরা বোধহয় আমাদের সন্তানদের এই কথা বলতে পারবো না, অন্তত বোধসম্পন্ন অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের এই কথা বলতে পারবেন না। আমরা অভিভাবকরা যে আশঙ্কা আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি, কি করে ওদেরও বলি– ওদেরও হোক এই অভিজ্ঞতা।
ওরা (ছাত্রছাত্রীরা) কিছু বলবে না, শুধু লেখাপড়া করবে। মেরুদন্ডহীন সরীসৃপ তৈরী হবে। এটাই বোধহয় প্রশাসনের ইচ্ছে, রাষ্ট্রবাদীদের ইচ্ছে, কিছু বিশিষ্ট নাগরিকদের ইচ্ছে। বিদ্রোহ বা বিপ্লব ধারণাটাই বদলে গেছে সমূলে, তাই এখন ছাত্রবিক্ষোভের নতুন নাম ‘দেশদ্রোহিতা’। কিন্তু আগামী যে ওদের.. আজকের পোঁতা বিষবৃক্ষের ফল যে ওদের ভবিষ্যতের পথে কাঁটা ছড়াবে, সেটা বলার কি অধিকার ওদের নেই?
ওরা যা করছে সব অন্যায়, অভিনয়, শয়তানি, সাজানো, মিথ্যে। আর ওরা এতোই তুখোড় ভন্ড যে ওদের সাজানো মিথ্যে শয়তানির অন্যায় অভিনয়ের কাছে ক্ষমতার শিরোমণিরা হার মেনে শুধু মাত্র একটু শক্ত হাতে সামলানোর চেষ্টা করছেন.. এর বেশী কিছু নয়।
রক্ত নাকি রঙ পরীক্ষার দাবী করছেন। বা দু’দিনেই মাথার ফেট্টি ছোট্ট হবার প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতির কথা মাথায় না রেখেই। অনেকেই মন্তব্য করছেন ছাত্ররা পড়তে গেছে পড়াশোনা করুক, সবেতেই মাথা গলানোর কি দরকার, বা কেউ বলছেন সুখে থাকতে ভূতে কিলোয়। কেউ বা ছাত্রদের বয়সের প্রশ্ন তুলছেন- প্রথমে বয়সের প্রসঙ্গে বলি, আমরাই কিন্তু কথাপ্রসঙ্গে জ্ঞান দিই শেখার কোনো বয়স নেই, তাহলে ছাত্রাবস্থার সীমারেখা কি দিয়ে টানা হয়? আর শুধু পড়াশোনা করে যাদের শান্ত থাকতে বলা হচ্ছে, তাদের যে পড়ানো হয়েছে,
“আঠেরো বছর বয়স কি দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি
আঠেরো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি…”
তাই আঠেরো এগোয়, “..সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে..” হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা সবাই জানি আঠেরো মানে এক প্রতীকি বয়েস- তারুণ্যের প্রতীক। আর তাই “..তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা..” নিয়ে “..এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো..”
তর্কে মাতি আমরা, তর্কের সুর উত্তেজিত হতে হতে উত্তপ্ত হয়ে উঠুক। ঘরে বসে নিরাপত্তার বেষ্টনীতে বসে সোস্যাল মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলি- আর সন্দেহের তির ছুঁড়ে দিই ওদের দিকে। থামুন একটি বার- একবারের জন্য নাহয় ভেবে দেখুন, ওরা সবাই আমাদের সন্তান- নিজের নাহলেও আত্মীয়, প্রতিবেশী, পরিচিত কারোর। বুকটা কিরকম ধড়ফড় করে উঠলো না? হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি হচ্ছে কি? সব ভুলে মনে হচ্ছে না ছুটে যাই, গিয়ে দেখি কেমন আছে প্রিয় মুখটা, হয়তো বা খুব আদরের মুখটা? এবার একবারো কি মনে হলো ওটা রক্ত না রঙ? মনে এলো? ওরা শয়তান! না, মনে হবে না- হতে পারে না। কারণ নিজের সন্তানকে সবাই চেনে- তারা ঠিক কেমন? কোন পরিস্থিতিতে কেমন কাজ করতে পারে!
বিশ্বাস করতে কিম্বা হয়তো মনে করতে ভুলে গেছি আমরা যুগ যুগ ধরে বিপ্লবের কান্ডারী কারা? মনে রেখেছি হয়তো স্মৃতির পাতায় মহান বিপ্লবীদের- ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং, বাঘাযতীনদের নাম। মালা পড়াই ছবিতে, গল্প শুনি- শুধু ওঁদের বয়সটা ভুলে গেছি।
ভাববেন নাকি একবার ওঁদের বয়সের কথা?
ওঁরা ছিলেন বলে আমরা স্বাধীন ভারতের নাগরিক, ওঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন তাই অত্যাচারীর গদি টলেছিল, ওঁরা ভেবেছিলেন, ভাবতে শিখিয়েছিলেন।
আমাদের সন্তানরাও আজ আমাদের ভাবতে শেখাচ্ছে, একটু ভাবি সবাই। নাহলে হাজার যতীন জন্মাবে বাঘাযতীন আর হবে না।
ভগৎ সিং নামের সাথেই থেকে যাবে। রাম- রহিমের ফাঁদে ক্ষুদিরাম হারিয়ে যাবে। নরেন্দ্র জন্মাবে, বিখ্যাতও হবে দেশজোড়া নামে- কিন্তু বিবেকানন্দ আমরা পাবো না। তাই সন্দেহ নিয়ে নয় ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে ওদের পাশে কি দাঁড়ানো যায় না? ওদের এই অসম, দুঃসাহসী লড়াইয়ে ওদের বলা যায় না- আমরা আছি পাশে বিশ্বাসের হাত বাড়িয়ে দিয়ে, অপেক্ষা করছি ওদের জন্য আহ্লাদী কোলের মিঠে ঘ্রাণ নিয়ে। যদি ভুলও হয়- অবিশ্বাস নয়, সঠিক পথ বলে দিতে আমরা যেন পাশে থাকি।জানি, অনেকেই হাসবেন। হাসুন, ঠোঁট বেঁকিয়ে ব্যঙ্গের হাসি। অসুবিধা নেই। ফুরসৎ হলেই না হয় ভাববেন- ওই ভিড়ে হাঁটা, রক্তাক্ত সাহসী বাচ্চারা আমার, আমাদের। দেখবেন অন্য বোধ, অন্য ভাষা আসবেই- অবশ্যই যদি ভাবতে খুব দেরী হয়ে না যায়- আজকের সময় যে ভীষণ অস্থির …
অস্থিরতা ভরা সময়ে সকল কলমকে কুর্ণিশ জানাই।
সকল স্বজন সাথী সাহিত্যিক, পাঠকদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আলাপী মন- এর পক্ষ থেকে।
-
শেষ কোথায়…?
শেষ কোথায়…?
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
ভীষণ অচেনা, অস্থির সময়ের মুখোমুখি আমরা- ভারতবাসীরা। বলা, শোনা সবকিছুই এখন বোধের অতীত। ভালো- মন্দ মুখোমুখি যূযুধান এই মুহূর্তে। ভবিষ্যতের গর্ভে লুকিয়ে আছে উত্তর। কিন্তু বর্তমান? সে যে অস্তিত্বের সঙ্কটে ধুঁকছে! পরিত্রাণের পথ খুঁজছে, প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে উত্তরের আশায় ভবিষ্যত প্রজন্ম অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বর্তমানের দিকে তাকিয়ে। আমরা কি উত্তর দেব? নিজেরাই তো জানি না। আমরা ধ্বংস লীলায় মেতে রেখে যেতে পারবো না মনে হয় ওদের জন্য কিছুই। ওরা কারা? ওরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, ওরা আমাদেরই উত্তরসূরী। শিশুর বাসযোগ্য ভূমি, শ্বাস নেবার নির্মল বাতাস, শিক্ষা, জীবিকা, মানবিকতা সব কিছু নিলামে তুলে দিয়েছি স্বার্থপরের মতো এক একটা ভুল সিদ্ধান্তের দিকে হাত বাড়িয়ে, আর অবোধ সমর্থনে। রাজনীতি দেখেছি- কদর্য, বিকৃত রাজনীতি। বিদ্বজ্জন দেখেছি- যাঁরা বিক্রিত বিদ্বজ্জন, সংখ্যায় বেড়েই চলেছেন। ধর্ম এখন- ধারণ না করে, মরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অসহিষ্ণুতা- রোজ নতুন নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দিচ্ছে। অধিকার- জানা নেই ক্ষমতার হাত রাতের আঁধারে কতোটা ছিনিয়ে নেবে! সকালে উঠে দেখবো আর নেই আমার/ আমাদের অধিকার, ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বাস, ভরসা- এখন প্রায় লুপ্তপ্রায় একটি শব্দ। অভিধানে অর্থ খুঁজতে হবে অদূর ভবিষ্যতে। অত্যাচার? বড়ো পরিচিত শব্দ এখন। নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসে মিশে জানিয়ে যায় “আছি” তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কোথায় পালাবে? নিস্তার নেই।
সব দোষ কিন্তু আমাদের, কারণ আমরা সবসময় নিজেদের বাঁচিয়ে, অন্যের দিকে আঙুল তুলেছি নির্দ্বিধায়। ঘুলঘুলি দিয়ে লুকিয়ে দেখেছি, “আমার গায়ে হাত লাগে নি তো.. ” কিন্তু কতোদিন আরো কতোদিন এইভাবে? তবুও সাহসী হতে পারি না, ভয়ে- শঙ্কায়। স্রোতের আবহে ভেসে স্যোসাল মিডিয়ায় সমর্থনে সামিল হয়ে যাই, বিক্ষোভের দুই বুলি দিয়ে প্রতিবাদ জানাই। গণহত্যা, বা হত্যাকাণ্ডের সমর্থন জানাই- শেষ অবধি ভেবে দেখি না সত্য আসলে কি? দেখার সময় কোথায়? আবার একটি গণধর্ষণের মৌন মিছিলের মোমবাতি আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অপরাধ তো আর একটা নয়- শত, সহস্র, সবেতেই থাকতে হবে বিদ্রোহে, বিক্ষোভে, আন্দোলনে, সমর্থনে- প্রতিবাদে। আবার ভুলে যেতেও হবে। কারণ? সংবিধান, আইন, বিচার ব্যবস্থার উপর অসহায় আত্মসমর্পণ। দু’ চোখ বাঁধা মাননীয় আইন দেবীর দাঁড়ি- পাল্লা অজান্তেই হেলে আছে। কবে যে চোখ খুলবেন!
আরো এক প্রকার গণশত্রু আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলি সব সময় নানান হাতে গরম খবর নিয়ে তৈরী,”শিরোনামে”, “ফটাফট”, “সবার আগে”, “এক ঝলকে”- ওদের দায়িত্ব শেষ, টি.আর.পি. হাই, রোজগারের ঝুলি পূর্ণ। আবার আগুন জ্বললেই চলে আসবে- ততক্ষণ পুরোনো খবর, “চোখ রাখুন আরো একবার..” সাথে বিজ্ঞাপন। নিত্য চোখমুখের একই অভিব্যক্তি নিয়ে শিক্ষা থেকে বীক্ষা, আগুন থেকে খুন, বর্ষণ থেকে ধর্ষণ, গুণ থেকে ভাগ, খেলা আর মেলা, সত্যির ওপর রঙ ছড়িয়ে, মিথ্যের প্রলেপ দিয়ে শুনিয়ে যাবে- “সঙ্গে থাকুন দেখতে থাকুন” অশান্ত আবহের জন্য এরা কিন্তু দায়ী কম নয় কোনো অংশেই।
আসলে আমরা কেউ বুঝতে পারি না, আমাদের আসল কর্তব্য কি? দেশ জ্বলছে, পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে, আগামী প্রজন্মের ঠাঁই কোথায় জানি না- আমাদের দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনায়কদের ওইসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। ভবিষ্যতের জন্য না ভেবে তৈরী করে যাচ্ছেন বিভেদনীতি, অশান্তির আবহ। শেষ কোথায়? শেষ নেই..কবির কথা মনে পড়ে যায়, “এতগুলো শতাব্দী পেরিয়ে গেল, মানুষ না তবু ছেলেমানুষ রয়ে গেল..” তখন উনি ছেলেমানুষী ভেবেছিলেন, কিন্তু আজ আমাদের মাঝে থাকলে হয়তো সংশোধন করে বলতেন- এতগুলো শতাব্দী পেরিয়ে গেল, মানুষ অত্যাচারী আর অত্যাচারিত- দু’দলে ভাগ হয়ে গেল, কিছুতেই মানুষ হতে পারলো না..
এটাই খুব সত্যি কথা, “ধর্মগুলো সব রূপকথা…..তারা গর্জন বিলাসী, অনুভব করতে পারে না ঐক্যতান..” ভার নেমে আসে মনে, দু’চোখে অন্ধকারের মাঝেও আশার আলো জ্বালিয়ে রাখি- জয় হবে একদিন মানবতার, মনুষ্যত্বের।
গর্জন উঠছে কলমে মানবতার দরজায় আঘাত হানতে, সফল হোক এই আশা থাকলো।
মন ছোঁয়া কিছু কলমের কথা- “মালতী”, “জীবিতের নামাবলী”, “নাগরিকত্ব”, “বাস্তবতা”, “মৌনতার ভাষা”, “অপরাধী”, “সারপ্রাইজ”, “ঠিকানা”, “সময় সরণী”, “কাশ্মীরি ভাই”, “অশুভ যাত্রা” ও আরো বেশ কিছু কলম।
সকল পাঠক, স্বজন সাথী সাহিত্যিকদের কৃতজ্ঞতা, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আলাপী মনের পক্ষ থেকে। -
নিতান্তই অর্বাচীন..
নিতান্তই অর্বাচীন..
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
কিছু কিছু কথা বলা সোজা, না কি কথা শোনা সোজা! মনে এই একটা প্রশ্ন ঝড় তুলেছে বেশ কয়েক দিন ধরে।
এক একটা কথা যেন এক একটা বোমা। মুখ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই ফাটবে। হয় হাসিয়ে মারবে, না হয় কাঁদিয়ে ছাড়বে। হতবাক করে দেওয়া তো খুব সোজা, ওতে কথা লাগে না, ভাবভঙ্গী দেখলেই মাথা ঘুরে যায়, আর কাজ করে না। সবাই বিজ্ঞ, সব জেনে কথা বলছে, যাকে বলে বেদবাক্য- ভুল হতেই পারে না।
হ্যাঁ, ঠিকই, আমাদের দেশের বিখ্যাত, ‘সু’যোগ্য, ‘স্ব”নামধন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কথাই বলতে চাইছি। আসলে ক্ষমতার হাতে মাইক্রোফোন এলে বোধহয় কি বলতে চাইছে ভেবে দেখার প্রয়োজন পড়ে না। মঞ্চ আর মাইক্রোফোনের যুগলবন্দীতে ক্ষমতা যা খুশী বলতে পারে। তাই কেউ ইতিহাস বিকৃতির ভার নিয়েছেন, কেউ বা নতুন করে ভূগোল শেখাচ্ছেন, তো কেউ সাহিত্যের উদোর পিন্ডি কার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন সেটা নিজেই জানেন না, কিন্তু চাপিয়ে ছাড়ছেন। আর ধর্মীয় কান্ডারীরা ধর্মের চাল আর রাজনীতির ডালে সমাজে দুষ্পাচ্য খিচুড়ি বানাচ্ছেন। জনতা খাচ্ছে, বদহজমও হচ্ছে। হতে বাধ্য, পরিপাক নাহলে যা হয়। আড়ালে উদগীরণ করছে। আবার খাচ্ছে, খেতে বাধ্য- সুবোধ অনুগামীরা খেতে বাধ্য করছে, নাহলে কিন্তু ঘোর সংশয়.. হাতে লাঠি, লাল চোখ, ঘরের চালে আগুন আরো আরো অনেক কিছু।ধর্ম, শাস্ত্র, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন ছাড়াও এঁরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বক্তব্য রাখতেও যে সমান পারদর্শী তার প্রমাণ বারবার দিয়েছেন। কেউ বলেছেন বিশ্ব উষ্ণায়ন ভ্রান্ত ধারণা, তো কেউ সদ্যোজাত মানব শিশুর নূন্যতম স্বাভাবিক ওজনের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন সহস্রের গণিতে। আবার কেউ বা বয়সজনিত, রোগ জর্জরিত নেতার মৃত্যুতে বিরোধী দলের ‘বান মারার’ ক্ষমতা তুলে ধরে চিকিৎসা শাস্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ‘কালা জাদু’র মহিমা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন অবলীলায়। হায় রে, স্বর্গীয় নেতা-নেত্রীর মৃত্যুতে শোক পালন করবো? না জীবিতের কথা শুনে কপাল চাপড়াবো!
আবার অতি সম্প্রতি গো-‘মাতা’য় এদেশ-বিদেশের চৌকাঠ লাগিয়ে সম্পর্কের মা- মাসি বানিয়ে, গো দুগ্ধের গুণমান নির্ধারণ করে, গো- মাতার শরীরে স্বর্ণ উৎপাদনকারী অঙ্গটিও আবিষ্কার করে ফেলেছেন। সোনা যখন আবিস্কৃত প্রায় (কারণ এর সপক্ষে বিজ্ঞাপনী বিজ্ঞানীরা ও অনুরাগী মাধ্যমগুলো যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ আনতে তৎপর। যেভাবেই থাক, আছে তো রে বাবা। নেতার বক্তব্য বলে কথা, যুক্তি থাকতেই হবে) এবার বোধহয় নিক্তি মেপে গো-দুগ্ধ বিক্রয় হবে। বেদম বেহায়া মনে আবার প্রশ্ন জাগে, তাতেও কি যথারীতি ‘সোনা সঞ্চিত গো দুগ্ধ’ নিঃস্ব করে নিঃসরণ করে নেওয়া হবে, আলালের ঘরে দুলালের ফেলে ছড়িয়ে খাবার জন্য, কিংবা পাথরের দেবতার অভিষেকের পর নর্দমায় গড়িয়ে দেওয়ার জন্য? না কি মাননীয় নেতার বক্তব্যের খাতিরে সোনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার জন্য সঞ্চয় করা হবে ভবিষ্যতের ঘরে? যদি সঞ্চয় নীতি শুরু হয়, তাহলে বেচারা বাছুরগুলো অত্যন্ত মাতৃদুগ্ধের কিঞ্চিত আস্বাদ পেলেও পেতে পারে। তাহলে আর শুকনো গলায় খড়-বিচুলির ভরসায় থাকতে হয় না। তবে মানুষ কি এতোটা অধিকার ছেড়ে দিতে রাজী হবে? গো- দুগ্ধের ওপর যে মানব সন্তানের অধিকার বাছুরের মাতৃদুগ্ধের অধিকারের থেকে বেশী।
এখানে আর একটা বিষয় না বলেও পারছি না। পাথর, আর ধাতু প্রতিমাকে দূষণ প্রতিরোধে মুখবন্ধনী পরানো হচ্ছে। বেশ কয়েকটি পার্বনের পার্বনী- অতিদূষণ। মুখবন্ধনী পরানো- ওটা যে কোন বিষয়ের ছাই-ভস্ম ঠিক বুঝতে পারি নি।
মাননীয় ‘হুতোম পেঁচা’ যদি আজ জীবিত থাকতেন, সারাজীবনের একান্ন টিকি’র সঞ্চয় উনি মনে হয় এক এক দিনেই সম্পূর্ণ করে ফেলতেন। শেষে হয়তো আর রাখার জায়গা পেতেন না। ওহোঃ এনাদের তো আবার স্বার্থ ছাড়া টিকি’ও খুঁজে পাওয়া যায় না। যাই হোক কিছু একটা কাটার জন্য সে ঠিক খুঁজে নেওয়া যেত- মোট কথা সংগ্ৰহ বাড়তো খুব শীঘ্রই, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর প্রতিটি সংগ্ৰহের নীচে একটি কথার উল্লেখ থাকতো- “নিতান্তই অর্বাচীন..”
মনে হতেই পারে সাহিত্যের পাতায় রাজনৈতিক কথা কেন? আত্মপক্ষ সমর্থনে একটি কথাই বলতে পারি, বর্তমানে যা রাজনৈতিক ভবিষ্যতে সেটাই সামাজিক। বর্তমানের নথি ভবিষ্যতের জন্য রেখে যাওয়ার দায় থেকেই যায়।
মনছোঁয়া কিছু কলমের কথা- ‘সরণ’ ‘কালিপূজার রাত’, ‘নেফিলিম’, ‘স্তব্ধ দহন’, ‘সাবস্টিউট’, ‘তিনকন্যা’, ‘ছন্দপতন’, ‘সে দিনের কথা’, ‘পরিণতি’, তাছাড়াও মনের কোণে রেশ রেখে দেওয়া আরো বেশ কিছু লেখা। কৃতজ্ঞ আলাপী মন সকল স্বজন সাথী সাহিত্য বন্ধুর কাছে, তাঁদের কলমের কাছে।
হেমন্ত আসে না বহুকাল, দোরগোড়ায় মুখ দেখিয়ে চলে যায়। তবুও মনে আশা এবার হয়তো আসবে। আশার হাতে হাত রেখে হৈমন্তী শুভেচ্ছা সবার জন্য।
-
অনুভব ব্যক্তিগত
অনুভব ব্যক্তিগত
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
সদ্য সমাপ্ত শারদীয়ার ঐকান্তিক শুভেছা, প্রাণভরা ভালোবাসা, শুভকামনা জানাই ‘আলাপী মন’এর পক্ষ থেকে।
শারদীয়ার এক অনন্য উন্মাদনা থাকে বাঙালীর মনে, শারদ সংখ্যা। বইপ্রেমীদের, পাঠকদের মনের রসদ জোগান দিতে প্রকাশক, সাহিত্যিকরা ব্যস্ত রাত জাগেন অনেকদিন আগে থেকে। প্রকাশক ও সাহিত্যিক। সাহিত্য জগতের দুই প্রধান সত্ত্বা। সাহিত্যিকের কলম, প্রকাশকের প্রকাশনা- দুইয়ের মেলবন্ধনে সাহিত্যজগত এগিয়ে চলে সমান্তরালে।
একজন আপন মেধা, সৃজনশীলতার ডালি ভরিয়ে রাখে তো অপরজন ডালির ফুল সাজিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করে সাহিত্যের করকমলে। সৌহার্দ্য, সৌজন্যে পরিপূর্ণ মধুরতার সম্পর্ক। সাহিত্যিকের লেখা- প্রকাশকের বিপণী। ঊৎকষর্তার দায় থাকে এক পক্ষের তো অপর পক্ষের দায়িত্ব থাকে লেখার গুণমান বিচার করে, তাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে প্রচ্ছদ বন্ধনে পাঠকের কাছে তুলে ধরা। সাহিত্যিক ও পাঠকের মাঝে সেতু রচনার কারিগর প্রকাশক। তথাকথিত অনেক নামীদামী প্রকাশকের মাঝে ছোট ছোট প্রকাশকরাও তাঁদের সাধ্যমত প্রচেষ্টায়– মনে আনন্দ, উদ্দীপনার সাথে প্রচ্ছদের বন্ধনে নিয়ে আসেন সাহিত্য সম্ভার। নতুন লেখক, নতুন প্রকাশক- এইখানে লেখকের মেধার প্রাপ্তি হয়তো একটি সৌজন্য সংখ্যা। “হয়তো” কথাটি এইজন্যই উল্লেখ করছি কারণ বর্তমানে সামাজিক মাধ্যামে প্রচারিত বেশ কিছু বিজ্ঞাপন। সেখানে লেখকদের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করা হয়। শর্ত থাকে, নির্দিষ্ট অর্থমূল্যের বিনিময়ে একটি বা একাধিক লেখা অথবা পত্রিকার নির্দিষ্ট কয়েকটি সংখ্যা বাধ্যতামূলকভাবে কিনে নেওয়া। ঘুরিয়ে নাসিকা প্রদর্শন! মুদ্রণের ব্যয়ভার লেখকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। প্রকাশক বা সম্পাদকের দায়িত্ব কি শুধুই মুদ্রণে প্রকাশ? যা কিনা আগে বা পরে প্রকাশক/ সম্পাদকের পরিকল্পনা অনুযায়ী লেখকদের নিজেদেরকেই কিনে নিতে হবে! নূন্যতম একটি সৌজন্য সংখ্যা কি লেখকের সাম্মানিক প্রাপ্তি হতে পারে না?
কিছুদিন আগেই আর একটি বিজ্ঞাপন নজরে এলো। সৌজন্য সংখ্যা না পেলে যদি লেখকরা লেখা দিতে না চান তাহলে “ছোটো ছোটো” প্রকাশকরা কি করবেন? ছোটো ছোটো পত্রিকার কি হবে? ভবিষ্যত কি? ভবিষ্যত ভাবার দায়িত্ব কার? প্রকাশক/ সম্পাদক,নাকি লেখকের? যাঁর লেখা তাঁর কাছেই বেচবেন, এমন প্রকাশকের কতটা প্রয়োজনীয়তা আছে? প্রকাশকরা অবশ্যই ব্যবসা করবেন। কিন্তু “যার শিল, তারই নোড়া, তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া!” না করে অন্যভাবেও তো তহবিল গঠন করা যেতে পারে। নাহলে লেখকের প্রাপ্তি? সেটাও একটু ভাবুন মহামান্যরা। কারণ শুধুমাত্র পদাধিকারী হলেই হয়ে যায় না, কিছু নৈতিক দায়িত্বও তো থাকে।
অনুভব সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, সেটুকুই আজকের কলমে। -
একটি অধ্যায় ও অবশেষ
একটি অধ্যায় ও অবশেষ
–রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
অধ্যায়- অবশেষ- বিতর্ক।
অধ্যায়- ৩৭০ ধারা একটি বহু আলোচিত, আলোড়িত অধ্যায় বিগত কয়েক দশকের। এই ধারায়, বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী একটি স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য। বিশেষ সুবিধা ভোগী একটি রাজ্য। ভারতের অন্তর্ভুক্তিতে থাকলেও পৃথক সংবিধান, পৃথক পতাকা, পৃথক আইন। পৃথক রাজনৈতিক সমীকরণের সামঝোতা।অবশেষ- সেও তুমুল সমালোচিত। মাননীয় ঐতিহাসিক, আইনজ্ঞরা তো আছেন এর চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য। ওনাদের বিশ্লেষণ আমাদের তথ্য সমৃদ্ধ করবে। আর আছে বিস্তর রাজনৈতিক চাপান- উতোর। “ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো” সংখ্যায় অবশ্যই বেশী। সংবিধান বিরোধী পন্থা অবলম্বন, ওখানকার নাগরিকদের মতামতের প্রাধান্য, অধিকার খর্ব, নেতা থেকে নৈতিক ব্যক্তিত্ব সবাই কেমন একসুরে গাইলো শুধুমাত্র কি বিরোধীতা করার জন্য? নাহলে এই ধারার অন্তর্ভুক্তি কি সম্পূর্ণ সংবিধান মেনে করেছিলেন আমাদের পূর্বসূরী নেতারা? রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, ‘না’। অন্তর্ভুক্তি যদি প্রকৃত সংবিধান মেনে না হয়, তবে অবশেষে আপত্তি কোথায়? নাগরিক মতামত? অন্তর্ভুক্তির সময় ভারতবাসীর মতামত নেওয়া হয়েছিল? জনসাধারণের প্রদেয় করের অর্থ বিশেষ এবং বেশী করে দিতে কতোটা রাজী তারা? তবে অবশেষে কেন সুবিধা ভোগী রাজ্যের নাগরিক মতামত গুরুত্বপূর্ণ হবে? শুধুই বিরোধীতা করার জন্য? সেই যে বলে, “যার বিয়ে তার হুঁশ নেই- পাড়াপড়শীর ঘুম নেই”, আমাদের পড়শী রাষ্ট্রের ঠিক সেই দশা। ভারত তার নিজের আওতার ভেতরে কি করবে, তা নিয়ে ওনার বা ওনাদের এতো মতামত, এতো গাত্রদাহ, হুঙ্কার, হুমকি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দরবার! কেন? কিসের জন্য? কোন ক্ষমতা বলে? পড়শী রাষ্ট্রের এই অহেতুক তান্ডবের মধ্যে আমাদের দেশের নেতা, বিরোধী- মনস্ক ব্যক্তিরা আগুন উসকে দেন তাঁদের মন্তব্যের দয়া-দাক্ষিণ্যে। পড়শী দেশের বিতাড়িত নির্যাতিতা নোবেল বিজয়ী খুব সতর্কতার সঙ্গে আবেদন করেন, শান্তি বজায় রাখতে। ঠিক তখনই আমাদের দেশের নোবেল জয়ী বর্ষীয়ান নাগরিক মন্তব্য করেন ‘অবশেষের’ বৈধতা নিয়ে, প্ররোচিত করেন উস্কানিমূলক মন্তব্যে। উনিও কি শান্তির বাণী দিতে পারতেন না? দেন নি- উদ্দেশ্য কি শুধু মাত্র বিরোধীতা? বিরোধীতার জনপ্রিয়তা? “বিভীষণ” এর বদনাম বোধহয় ঘুচবে না কোনোদিন ভারতের ইতিহাসে।
বিতর্ক- থাকবেই। ওটা যে বড়ো প্রিয়। কিছুর প্রয়োজন নেই, সময় হাতে থাকলেই হলো। সংবাদ মাধ্যম, সোস্যাল মাধ্যম তো এই ব্যাপারে সবসময় পৌরহিত্যে প্রস্তুত। জনপ্রিয়তা বোধহয় এদের মূল উদ্দেশ্য, সঠিক সংবাদ পরিবেশন থেকে অনেক দূরে বাস। তাই বিতর্কের জন্ম দিতে থাকুক ওরা ওদের রুজি রোজগারের জন্য। যাঁদের কাজ নেই, তাঁরাও তর্কে মাতুন। বেশ সময় কাটবে। তবুও একবার একটু ভেবে দেখবেন- কাশ্মীর বিশেষ সুবিধা নিয়ে কতোটা ভালো ছিল? ওখানকার সাধারণ নাগরিকদের উন্নতি প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ কোন খাতে ব্যয় হতো? যদি সত্যিই ভালো থাকতো তবে ওখানে সাধারণ জনজীবন কেন ছিল না? ওখানকার কিশোরদের কোন মন্ত্রে দীক্ষা নিতে বাধ্য করা হতো? আর সব থেকে বড় কথা পড়শী দেশের কেন এতো গাত্রদাহ? বিশেষ সুবিধার লোভনীয় ফল ওরা ঘুরপথে ব্যবহার করে আমাদের উদ্দেশ্যেই বিষবৃক্ষ রচনা করতো না তো? তবে তো ভারত- কাশ্মীরে ৩৭০, গড্ডালিকা প্রবাহ! হিতাহিত বিচার করার কোনো দায়িত্ব কি নেই? ভাবলে মন্দ হতো না- কারণ “কাশ্মীর” ভালো ছিল না, আমরা সবাই জানি সে কথা। তাই নতুন পথে হেঁটে দেখতে আপত্তি কোথায়? ভালো না হলে- না হয় আবার আন্দোলনে নামা যাবে। বিরোধীতা সে তো ‘পথের সাথী’ থাকলোই আন্দোলনের দোসর হয়ে। এখন ক্ষণিক বিরতি- ভেবে দেখার।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আলাপী মন’ ওয়েব ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় মুদ্রণ ও প্রথম শারদ সংকলন প্রকাশ অনুষ্ঠান অবনীন্দ্রনাথ সভাঘরে। সাহিত্যিকদের লেখনীতে সমৃদ্ধ হয়েছে ‘বোধন’। সাহিত্য আসরের আলোচনায় অনন্য রূপ নিয়েছিল শারদ অনুষ্ঠান। কৃতজ্ঞ ‘আলাপী মন’ সকলের কাছে।
শুভেচ্ছা, শুভকামনা সবার জন্য। আগামী শুভ হোক। -
প্রশ্ন- তাঁবেদারী?
প্রশ্ন- তাঁবেদারী?
– রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
‘বারান্দায় রোদ্দুর…… তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই’ নাহ্, আর কারো না বর্ষারাণীর কথাই বলছি। পাড়া- পড়শীর আঙিনা ভেসে যাওয়ার সংবাদ শোনা গেলেও, আমার/ আমাদের আঙিনা ভিজলো না মোটে। আসে নি অঝোর বর্ষা। আমারো আর কবিগুরুর হাত ধরে বলা হয়ে ওঠেনি, “এমনি দিনে তারে বলা যায়, এমনি ঘনঘোর বরষায়….. বাদল ঝরোঝরে তপনহীন ঘন তমসায়…”। কোথাও অতিবৃষ্টি, বন্যা, দুর্যোগে নাজেহাল তো কোথাও অনাবৃষ্টি, দহন, খরা- চাতকের মতো বৃষ্টির অপেক্ষায় দিন-প্রহর গোনার পালা। প্রকৃতির খামখেয়ালীপনা যেন মনে হয়েছে বৈষম্যমূলক বৈমাতৃক আচরণ। আবহাওয়া দপ্তর, পূর্বাভাস, আশা- ভরসার মাঝেই বর্ষাকাল শেষ হয়ে এলো প্রায়। এখন মন গুমরে বলে, “ওকে ধরিলে তো ধরা দেবে না, ওকে দাও ছেড়ে দাও ছেড়ে…”
এরই মাঝে গুটি গুটি পায়ের পদধ্বনি শরৎসুন্দরীর- রোদ মেঘের যুগলবন্দী। মনে আশা ক্রমে মিটবে দহন জ্বালা। শরৎ মানে উৎসব, আনন্দের পরিবেশ। বাঙালীর প্রিয়, প্রধান উৎসব শারদীয়া দুর্গোৎসব।
পূরাণ মতে- শরৎকালে, রাবণ তথা অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য শ্রীরাম শক্তির আরাধনা করেছিলেন। শক্তি পূজার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই, যুদ্ধে সাফল্যের মনস্কামনায় করেছিলেন দেবীর বোধন- তাই এই পূজো ‘অ-কাল বোধন’ নামেও প্রচলিত। কালক্রমে ‘অ-কাল বোধন’ হয়ে ওঠে জনপ্রিয় উৎসব। কোথাও নবরাত্রি, কোথাও ‘দশেরা’ আর আমাদের বাঙ্গালীদের ভীষণ প্রিয়, আকাঙ্খিত শ্রী শ্রী দূর্গা পূজা। ষষ্ঠী থেকে দশমী নানান পূজা বিধির মাধ্যমে ভক্তি (বর্তমানে যদিও বাহ্যিক আচরণ, বিলাসবহুল ব্যবস্থার প্রতিযোগিতা) সহকারে পালন করা হয়।
তাহলে এটা বলতেই পারি যে আমরা শ্রী রামের পূজোর স্বীকৃতি স্বরূপ শারদীয়া উৎসব পালন করি। অথচ এখন নতুন কথা শুনি বাঙলার বিজ্ঞ- বিদ্বান জনেদের মুখে, ‘বাঙলা রাম সংস্কৃতিতে, রাম ধ্বনিতে অভ্যস্ত নয়।’ বেশ বিস্ময় জাগানো কথাই বটে- উৎসব কেন পালন করি সে বিষয়ে আমরা তাহলে অজ্ঞ!
দায়টা কাদের এই অজ্ঞতার? উৎসব, সংস্কৃতির উৎস- ইতিহাস যদি পূর্বসূরীরা ভুলে যান বা ভুলতে চান, তাহলে উত্তরসূরীদের ঝুলিতে কি দিয়ে যাবেন? অন্তঃসারশূন্য বাহ্যিক উৎসব বিলাসিতা?
রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের স্বার্থে ভুল তথ্যের গলাবাজি করুক, তাদের কথা ছেড়ে দিলাম। কারণ তাদের কেউ স্বদেশে ঠাকুর ফেলে বিদেশি ঠাকুরে (মতবাদে) বিশ্বাসী, প্রশ্ন- বাঙলা কি এই বিদেশী মতবাদে অভ্যস্ত ছিল? কেউ কেউ ভুল তথ্যের সিরিজেই মঞ্চ কাঁপিয়ে হাততালির লহর তোলেন, প্রশ্ন- বাঙলা কি এতেও অভ্যস্ত ছিল? তাই রাজনৈতিক দলগুলির নৈতিকতা, দায়বদ্ধতার প্রশ্ন রাখলাম না। কিন্তু আপনারা বিদ্বজনেরা? হাততালি দেবার আগে, পক্ষে- বিপক্ষে মঞ্চ কাঁপানোর আগে… নিরপেক্ষতার দায় থাকেই আপনাদের। নাহলে যে আপনাদের যোগ্যতা প্রশ্নচিহ্নের দাবী করে- শুধুই তাঁবেদারী?
সজাগ কলম চেতনা উন্মেষের দায় নিয়ে এগিয়ে চলেছে। মন ছোঁয়া কিছু কলমের কথা- ‘শুধু তোমার জন্য’, ‘মধুচন্দ্রিমা’, ‘গরিব সিরাজ, নিঃস্ব বেগম’, ‘সমর্পন’, ‘অচেনা মিছিল’, ‘কতটা পথ চললে পথিক’, ‘ভাগ্যের পরিহাস’, ‘স্মৃতিরাও বাসি হয়’, ‘শুকনো কেস’, আলোকবর্তিকা’, ‘একলা চলো র..’, ‘প্রতীক্ষার ইচ্ছে’, ‘ক্ষুধার্ত’, ‘ভৈরবী রাগে’, ‘জিয়নকাঠি’, ‘বাঁক’, ‘পরগাছা’, ‘স্বার্থপর’।
শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ‘আলাপী মন’-এর পক্ষ থেকে সকল সাহিত্যিক বন্ধু, পাঠকবৃন্দের কাছে। -
মূল্য মাঝে জীবনবোধ
মূল্য মাঝে জীবনবোধ
-রীণা চ্যাটার্জী“নক্ষত্রখচিত কালো আকাশে মুখ তুলিয়া বলিল, আল্লা! আমাকে যত খুশি সাজা দিয়ো, কিন্তু মহেশ আমার তেষ্টা নিয়ে মরেচে। তরে চরে খাবার এতটুকু জমি কেউ রাখে নি। যে তোমার দেওয়া মাঠের ঘাস, তোমার দেওয়া তেষ্টার জল তাকে খেতে দেয় নি, তার কসুর তুমি যেন কখনো মাপ ক’রো না।” (“মহেশ”- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
খুব মনে পড়ছে এই কথাগুলো বেশ কয়েক দিন ধরেই। নাহ্ ‘গফুরে’র প্রার্থনা ওপরে কোনো ভাবেই পৌঁছায় নি তা বলাবাহুল্য।
কিছুদিন আগে সফরকালে দেখলাম বেশ কিছু জরা জীর্ণ গবাদিপশু। হাড় জিরজিরে পাঁজর গোনা যায় এমন অবস্থায় রুক্ষ জমিতে ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চেহারা চোখে পড়েছে ঠিকই কিন্তু দূর থেকে চোখ দেখতে পাইনি, তাই চোখে জলের ধারা ছিল কি? না, ঠিক বলতে পারলাম না। তবে চেতনা বলে গেল, ‘মহেশ’রা কাঁদে- কান্নার সাক্ষ্য দেয় ওদের পাঁজর গোনা চেহারা। ‘মহেশ’-দের মালিকের নাম গফুর, কাশিম নাকি হরিপদ বা কালিপদ জানা নেই- কিন্তু ‘মহেশ’রা মালিকের জাত চেনে না, স্পর্শ বোঝে। আর ওদের মালিকরা অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, জোতদার, জমিদার সবার থেকে ওদের সন্তান স্নেহে আগলে রাখার আপ্রাণ অসম যুদ্ধ চালিয়ে যায় সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। জাত, ধর্ম, বর্ণ সবকিছু তুচ্ছ ওদের এই আত্মিক টানের কাছে। তর্করত্নরা অহঙ্কারী জ্ঞানের ঝুলি নিয়ে এগিয়ে আসে, নির্লজ্জ স্বরূপ উন্মোচিত হলেও লজ্জিত হয় না কখনো। এরা ধর্মের কাণ্ডারি! আর মানবতা?
জমিদার থেকে পেয়াদা ক্ষমতার আষ্ফালন দেখায় নিরীহ অর্ধভুক্ত, অভুক্ত ‘গফুর- মহেশ’ এর উপর। উন্নাসিক দাম্ভিকতায় এরা ন্যায়ের কাণ্ডারি! আর মানবতা?
না- ওই পাঠশালা তো এদের জন্য নয়। তবে যুগ যুগ ধরে ‘তর্করত্ন- জমিদার- পেয়াদা’ আছে, থাকবে। শুধু খানিকটা রূপের হেরফের হয়েছে, হবে।
‘মহেশ’ রক্ত অশ্রু নিয়ে মরবে সহ্যের সীমা অতিক্রম করে। আর গফুর? ওরা তো হারিয়েই যায়। আমিনা? ওদের গল্প তো নতুন কিছু নয়। শহুরে বাবুরা আবার তর্কে মাতবেন- ‘মেয়েরা এখন অনেক স্বাধীন’, ‘মেয়েরা এখন অনেক ভালো আছে’, ‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু’। আর গ্ৰামীণ মাতব্বরেরা বলবেন- ‘মেয়েমানুষের (!) আবার কিসের কথা?’ ইত্যাদি… প্রভৃতি…তাই অব্যক্ত থাক আমিনার প্রসঙ্গ।
‘গফুর’দের সামান্য দাবী সমাজ স্পর্ধা মনে করে। ওরা খেতে পেলো কি না! বা জীবনের নূন্যতম প্রয়োজন- টুকুও মিটলো কি না কারোর দেখার সময় নেই। কিন্তু ওদের ন্যায়-অন্যায়ের বিচারের জন্য সমাজপতিরা সদাজাগ্রত। ওদের ঘরের আব্রু থেকে সম্মান সব আত্মসাৎ করার জন্যও সমাজপতিদের ব্যগ্ৰতার নির্লজ্জতা চোখে পড়ার মতো। তবে সমাজপতিদের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। এরা তো মূল্যবোধ জলাঞ্জলী দিয়ে তৈরী করা জীবন বোধে বাঁচে।
‘গফুর’ রা কিছুদিন বাঁচে, বাঁচার চেষ্টা করে সব অন্যায় মেনে নিয়ে। সমাজের আরোপিত সব মূল্য নিঃশর্তে চোকাবার দায় নিয়ে, মূল্য মেটাবার মূল্যবোধ যে ওদের জীবন বোধ!
তারপর সবশেষে একদিন হারিয়ে যায়।
বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ‘মহেশ’ গল্পের সুস্পষ্ট উদাহরণ মনে হয়। সমাজপতিরা সুযোগ আর স্বার্থের খেলায় ‘মঞ্চ’ ব্যবহার করে জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। তার জেরে ‘মহেশ, গফুর, আমিনা’- মরছে, হারাচ্ছে, মানিয়ে নিচ্ছে।ফিরে আসি মন ছোঁয়া কিছু কলমের কথায় – ‘হাজারো স্বপ্নের শব’, ‘দৃষ্টি’, ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘ভূতের ভাবনা’, ‘আমার আমি কই’, ‘মৃত্যুর মাঝে’, ‘কে সেই মেয়েটি’, ‘উত্তীর্ণ’, ‘তোর জন্য’, ‘শাস্তি’, ‘ভীষ্ম সংবাদ’, ‘বাঙলার দূর্গা’।
অতিবৃষ্টি- অনাবৃষ্টি মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালী আচরণ নিয়ে চলছে এই বছরের ‘বর্ষা-পালা’।
খামখেয়ালী মৌসুমী বায়ুর হাত ধরেই সকলের জন্য বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ শুভেচ্ছা, শুভকামনা, ভালোবাসা রইলো আলাপী মনের পক্ষ থেকে। চিরন্তন হোক কলমের পথচলা। -
জন্মাবে আবার… প্রয়োজনে বারবার
জন্মাবে আবার… প্রয়োজনে বারবার
-রীণা চ্যাটার্জী…,
ভাবতেও লজ্জা লাগছে আপাত নিরীহ একটা বুলি, জয়ধ্বনি লেগে কেমন করে যে ‘গালাগালি’ হয়ে গেল! তা নাহয় তর্ক ধর্মের কারণে মেনে নিলাম “হলো”, কিন্তু তার প্রতিবাদ এতো অশালীন! এতো দাম্ভিক! প্রতিশোধ এতো কুরুচিপূর্ণ ব্যবহারে!আমাদের সংবিধান আমাদের হাতে গোনা যে কয়টি মৌলিক অধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে বাক্ স্বাধীনতা মনে হয় আছে! (মনে হয় বলতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে আজকাল। না,না- বয়সের কারণে নয়। সাংবিধানিক পদাধিকারীদের পেশী আষ্ফালন দেখে) আর মনে হয় আরো একটা কথা কারোর ভাবাবেগে বা শরীরে আঘাত না করে স্বাধীন ধর্মাচরণ করার অধিকারও বিধিসম্মত সার্বভৌম রাষ্ট্রে।
স্বাধীনতার বেশ কয়েক দশক পেরিয়ে এসে আমদের যেন নতুন করে সব শিখতে হবে আবার। রাজনৈতিক পেশী আষ্ফালনের হাত ধরে আবার কি পরাধীনতা নবরূপে আসছে! মতবিরোধ থাকবে- সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছাত্র থেকে সাংবাদিক কোনো স্বার্থ বিরোধী প্রশ্ন সামনে আনলেই তাঁদের ‘বিরোধী দলের দালাল’, ‘উগ্ৰপন্থী’ আখ্যা দেওয়া- এটা কি গণতন্ত্র! মতবিরোধ হলেই শত্রুতা, অশালীনতা, রক্ত ঝরানো, ভিটে ছাড়া করে দেওয়া, আগুন লাগানো- এটাই কি গণতন্ত্র? বিরোধী দলীয় নেতা নেত্রীদের অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করা, তাদের সমাবেশে অযৌক্তিক বাঁধা দেওয়া, ধাঁধার পথে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা- এটাই গণতন্ত্র? ভিন্ন রাজ্যের সাংবিধানিক পদাধিকারীরা রাজ্যে আসতে চাইলে তাঁদের সম্বর্ধনা দেওয়া অনেক দূর, অবতরণের অনুমতি না দেওয়া বারবার, প্রকাশ্যে অপমান করা- এটাই গণতন্ত্র? এটাই কি বাঙলার নতুন সৌজন্য বোধ? একটি ‘সাথী’ বাহার রাজ্য- যে রাজ্যে স্বাস্থ্য নেই, শিক্ষা নেই, ন্যায় নেই,কর্ম নেই সেই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে একটি সন্তানকে মানুষ করার কতো কষ্ট জানেন? অভিভাবকরা কষ্ট করে বড়ো করেও যখন সন্তানের জীবন সংগ্রামের পাহাড় প্রমাণ চাপ মুখ বুজে সহ্য করে, সেই কষ্ট জানেন? কারোর সন্তানকে গলা হেঁকে অবলীলায় ‘বখাটে’ সম্বোধনের অনৈতিক অধিকার কে দিল? এতো স্পর্ধা? এটাই বুঝি গণতন্ত্র! নাকি পরিবর্তিত স্বঘোষিত গণতন্ত্র? এই পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? উন্নয়নের কথা শিকেয় তোলা থাক- সে স্বাদ সবাই পায় নি। পরিবর্তনের নামে ক্ষমতা চেয়েছিলেন সেটা আজ স্পষ্ট, এবং সেই ক্ষমতা ধরে রাখার আপ্রাণ নির্লজ্জ প্রয়াসের সাক্ষী আজকের আতঙ্কিত পশ্চিমবঙ্গ।
পশ্চিমবঙ্গ পরিবর্তন চেয়েছিল, ভুল করেছিল? হ্যাঁ, ভুলই করেছিল- আজ আর বলতে দ্বিধা নেই। আমরা ধর্মঘট, কর্মবিরতি, সমাবেশ, মোড়ে মোড়ে অবস্থান কর্মসূচিতে বেশ শান্তিতে পাশ কাটিয়ে যেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু নগ্ন হয়ে যায় নি বিশ্বের দরবারে। ভদ্রতার আবরণে সৌজন্য বোধটুকু ছিল তখনো, এইভাবে নিঃস্ব করে দেয়নি। স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার আড়ালে আবডালে হলেও ছিল। ধর্মাচরণ, সংস্কৃতি কোনো কিছুর প্রকাশে এখনকার মতো উদ্দামতা যেমন ছিল না, কারো ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম পালনে, সংস্কৃতি উদযাপনে বাঁধাও ছিল না। নন্দন চত্বর থেকে শুরু করে আদালত প্রাঙ্গন, শিক্ষাঙ্গন, হাসপাতাল পরিখা, ছাত্র, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিল্পী, চাকরীপ্রার্থী- সব, সবার সুরক্ষা, আবেদন এতো বিশ্রী দাম্ভিকতা দেখে নি। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল- ‘পরিবর্তনের স্বপ্ন’ এর মোড়কে। স্বপ্নের মোহ ভেঙ্গে দিয়ে মোড়ক খুলে সৌজন্যতা বোধ হারিয়ে আজকের পরিবর্তন সম্পূর্ণ ব্যর্থ, ঊলঙ্গ।
পশ্চিমবঙ্গবাসী পরিবর্তনের নেশায় আবারো বদল চাইলো এই লোকসভা নির্বাচনে। কিন্তু যেন মনে হলো শুধু রঙ বদল হলো, বদলার নামাবলী এক থেকে গেল। পুরোহিত, মন্ত্র, উপাচার একই থেকে গেল পরিবর্তন যজ্ঞে। ক্ষত- বিক্ষত, ক্লান্ত আমরা যে রক্তাক্ত হতে চাই না আর। মহামান্যরা রাজনীতি করুন অসুবিধা নেই- তবে একটু ভাবুন আমাদের কথা। আমরা কর্ম চাই, দিনের শেষে সন্তানদের সুরক্ষিত দেখতে চাই। ঘরের চাল ভাঙা আমাদের সয়ে গেছে, ওই টুকরো জ্যোৎস্নায় আমরা শান্তির স্বপ্ন দেখতে চাই, দয়া করে আমাদের ভাঙা চালে আগুন আর দেবেন না। আমরা আজো শুধু একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই ।
আপনারা মুখ লুকিয়ে মুখোশের আড়ালে রাজনীতি করুন, রঙ বদলান। পরিস্থিতি, পরিবেশ বিষিয়ে তুলুন ‘বহিরাগত” মলাটে। আপনাদের নোংরা রাজনীতির হাত থেকে শুধু শান্তি পাবার, পরিত্রাণের উপায় আমাদের বলে দিন। নিজেদের এইটুকু দায়িত্ব পালনের দায়বদ্ধতা আপনাদের আছে, বাঙলার জনগণের কাছে। নাহলে হয়তো এমন দিন পরিবর্তনের আসতে পারে, যেদিন কোনো রঙ ছাড়াই সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনাদের বদলার পাঠ পড়াতে শুরু করতে পারেন। সেদিন মুখোশের আড়ালে পিঠ বাঁচাতে মনে হয় পারবেন না- ভুলে যাবেন না বাঙলার কোলে জন্মেছে বহু অগ্নি সন্তান। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে জন্মাবে আবার… প্রয়োজনে বারবার।
আলাপী মনে’র স্বজন সাথীদের কলমে এখন জমে আছে চাপা কান্না, আছে বিদ্রোহ, আছে প্রতিবাদ, কালিতে লেগেছে বারুদের গন্ধ। আজ যা রাজনৈতিক, ভবিষ্যতে এটাই সামাজিক প্রতিচ্ছবি- প্রতিবাদী কলমের হাত ধরে ‘আলাপী মন’ সাক্ষী হয়ে থাকলো আগামীর সমাজের কাছে। কৃতজ্ঞতা রইলো আলাপী মনের পক্ষ থেকে।
উষ্ণতার সীমা ছাড়িয়ে আমরা দহন জ্বালায় বিপর্যস্ত। তপ্ত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো সকলের জন্য। -
গ্লানির খোলা পাতা
গ্লানির খোলা পাতা
-রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
হতবাক মনের কলম আঁচড় কাটতে পারছে না আর। শুধু ভাবছি আর কতো? আরো কতো? শালীনতা বোধ কি আমাদের হারিয়ে গেছে? নাকি পরিভাষা বদলে গেছে। আঙুল তুলে দোষারোপ আমাদের কাছে এক অতি সহজ পন্থা- সব দায় এড়ানোর জন্য। গত ১৪ই মে ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক পরিস্থিতির মাঝে বাঙালীর ঈশ্বর ( বিদ্যাসাগর) খণ্ডিত হলেন। প্রতিবাদ হলো, ধিক্বারে ভরে গেল সামাজিক মাধ্যম। যথারীতি একে অপরকে দোষারোপ, বিরোধীতা, যুক্তির ধাঁধা, মিছিল, জমায়েত, প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবী সব হলো একে একে। বেশ কিছুদিনের চর্বিত চর্বন। সংবাদ মাধ্যমের নির্লজ্জতা বেশ অর্থবহ ইঙ্গিত দিল বিকিয়ে যাবার। রাজনীতি (?) হচ্ছে, হবে, চলতে থাকুক…
একটু ফিরে তাকাই নিজেদের দিকে? কোনো দল নয়, কোনো রঙ নয়, সাধারণ খুব সাধারণ ভাবে ভাবি কারোর দিকে আঙুল না তুলে। যাদের হাত ধরে ঝামেলার সূত্রপাত তারা তো আমাদের সন্তান। আমাদের অভিভাবকরা যেমন আমাদের মনের গভীরে মনীষীদের জন্য সম্মানের বীজ পুঁতে দিয়েছিলেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দলীয় রঙের উর্ধ্বে উঠে আমাদের শিখিয়েছিলেন এঁদের জীবন দর্শন। বলেছিলেন এঁদের স্মৃতি রক্ষা আমাদের কর্তব্য। এঁদের অবমাননা চরম অন্যায়। সেই শিক্ষাটুকু মননে রেখে আমাদের চেতনা রক্তাক্ত হয়েছে, হচ্ছে বারবার। কিন্তু আমরা এই প্রজন্মের অভিভাবকরা সেই মূল্যবোধ কতটুকু দিতে পেরেছি আমাদের সন্তানদের? কতটা সম্মান, শ্রদ্ধা করতে শিখিয়েছি ওদের? বিদেশী ভাবধারার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের, আমাদের ভারতের গৌরবময় ইতিহাস, সংস্কৃতির, দর্শন কতোটা শেখাতে পেরেছি ওদের, যে ওরা রক্ষা করবে ‘আমাদের’ উজ্জ্বল অতীত, আমাদের মনীষীদের। পারিনি আমরা তাই তো আমরা আজ রক্তাক্ত চেতনার ভার বয়ে চলি, তাতে তো আমাদের কর্মফলের দোষ, নৈতিক পরাজয় আমাদের পিছু ছাড়ে না..
কোনো রাজনৈতিক দল তো আমাদের সন্তানদের জন্ম দেয়নি, কিন্তু তাদের নীতি দিয়ে দত্তক নিয়ে নিয়েছে। তাই আমাদের সন্তানদের আজ প্রথম পরিচয় ‘ও ওই দলের কর্মী, সমর্থক।’ তারপরেই তরজা শুরু হয়ে যায় “আমরা-ওরা”। আমাদের নীতিবোধের বাঁধন যদি গভীরে যেত আমাদের সন্তানরা আজ কেউ রাজনৈতিক সন্তান হয়ে যেত না। দোষ, লজ্জা, হতাশার দায় নিতে যে আমাদেরও হবে, সেই কথা মনে রেখে বিতর্ক দূরে রেখে উত্তপ্ত পরিবেশের থেকে একটু সরে আগামীর জন্য একটা সুস্থ দিনের সূচনায় কি অঙ্গীকারবদ্ধ হতে পারি না? আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের গৌরবময় ইতিহাস রক্ষা করার জন্য। ভিন্ন মতামত তো থাকবেই, শুধু ইতিহাস যেন বিকৃত না হয়, আগামীর ইতিহাস যতটা কম কলঙ্কিত করা যায়- সেই আদর্শ সামনে রেখে কি আমরা নমনীয় হতে পারি না?মন ছোঁয়া কিছু কলমের কথায়-“নিম্নবিত্ত”, “দৌড়”,”ভগ্ন-ব্রিজ”, “গরম চা”, “বনলতা”, “সুর”, “নারী কথা”, “আমরাই নীলকন্ঠ”, “সম্পর্কের টানাপোড়েন”, “অভিলাষ”।
কালবৈশাখীর আসা না আসার দোলাচলে নিত্য দগ্ধ দিনের উষ্ণ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা ‘আলাপী মনে”র পক্ষ থেকে সকল স্বজনসাথী ও পাঠকবৃন্দকে।