• সম্পাদকীয়

    উৎসবে ‘গণতন্ত্র’

    উৎসবে ‘গণতন্ত্র’

    -রীণা চ্যাটার্জী

    বর্ষবরণের উৎসব পালন করে আমরা আগামী নতুন বর্ষকে বরণ করে নিলাম সাড়ম্বরে। নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানাই।
    আর এক মহৎ উৎসবে ব্যস্ত জনগণ, জন প্রতিনিধি, সরকারি আমলা, কর্মচারী, কলেজ পড়ুয়ারা। গণতন্ত্রের মহোৎসব’ হলো গত ও আগামী কয়েকদিনের বিশেষ আলোচ্য বিষয়। সরগরম সমস্ত মাধ্যম নিজের নিজের মত প্রকাশে, নিজেদের দেওয়া তথ্যের নির্ভুল প্রমাণের দাবীতে। আর সংবাদ মাধ্যমগুলি তো যথেষ্ট তৎপর বিক্রিত, বিকৃত সংবাদ পরিবেশনের প্রতিযোগিতায়। লক্ষ্য কি? ঠিক জানা নেই কারো। সঠিক-বেঠিক বিচারের প্রয়োজন নেই, ন্যায়-নীতির দায়বদ্ধতা নেই। শুধুমাত্র ক্ষমতায় আসীন যাঁরা, তাঁদের মনোরঞ্জনের তাগিদ, বিরাগভাজন হবার ভয়ে- প্রয়োজনীয় সংবাদ আড়ালে রাখার নির্লজ্জ প্রয়াসে রোজের ছাপানো হরফ, রঙীন ছবি– নিত্যদিনের ক্রোড়পত্রে।

    তর্ক- বিতর্ক, প্রতিশ্রুতির ঝুলি, সাফল্যের মিথ্যা কিছু শেখানো বুলি, চোখে ধূলো দেওয়ার কারসাজি এ তো আমাদের গণতান্ত্রিক মহোৎসবের নৈবেদ্য। সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়ে চলেছে ভিন্ন ভিন্ন মোড়কে গত সত্তরোর্ধ্ব সব গণতান্ত্রিক মহোৎসবে। মাঝে উপাচার অবশ্যই আছে। যেমন হঠাৎ করে উৎসবে যোগদানকারী প্রতীকের মুখোশধারীরা একেবারে মাটির মানুষ হয়ে ধরা দেবেন। তেমন কেউ কেউ আবার কল্পনায় কল্পতরু হয়ে উঠবেন। ভয়ে, ভালোবাসায়, ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবেই হোক , “তোরা যে যা বলিস ভাই জনগণ তোর ভোটটা আমার চাইই…” এই একটি মন্ত্র কিন্তু সবার, সব রাজনৈতিক দলের, রঙের, প্রতীকের। মন্ত্রের সাধন নয়তো শরীর পাতন। আহা রে! এতো মহানুভবতা দেখে বিশ্বাস যেন আপনি ধরা দিয়ে যায়- এবার আর বদল না হয়ে উপায় নেই। একবার (এই দল) ক্ষমতায় এলেই আমাদের সুখ, সমৃদ্ধি, উন্নতি, প্রগতি আটকাবে কে? হায় রে! আমরা সব জানি সব বুঝি তবুও ভুলে যাই, “যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ” এ যে প্রতিফলিত পরীক্ষিত সত্য।
    নতুন নতুন অনেক রকম প্রচার মাধ্যম হয়েছে এখন। তাই খবর এখন হাতে গরম! কোন প্রতিনিধির কি কি আছে? কোন প্রতিনিধি কি কি বললেন? কি পড়লেন? কিসে চড়লেন? এমন কি সকাল, দুপুরের (রাতেরটা আড়ালেই থাকে, ওটা যে ব্যক্তিগত) আহারটুকুও লিপিবদ্ধ করে সামনে হাজির। মহামান্যরা জানেন কি? যেখানে প্রচারে যাচ্ছেন সেখানে, যাদের কাছে ভোট ভিক্ষা করছেন তারা অনেকেই একবেলার পেট ভরে খাবার যোগাড় করতেও হিমশিম খায়! খাবার তালিকা সেই সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে কখনো কেউ শোনেওনি। আপনাদের মনে থাকে- ভোট হয়ে গেলে এদের কথা? মনে রেখে লাভ কি? ওদের কাজ তো একদিনের, তার জন্য তো পরিচয় পত্রটুকু ঠিক থাকলেই তো হলো। ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ… !’
    আরো অবাক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ইচ্ছামত মতো এখন খোলস ছাড়ে, রঙ বদলায়। নীতি কোথায়? কিসের ভিত্তিতে? জনগণের রায়ের মোহর লাগিয়ে লাভ কি তবে? সবটাই প্রহসনের মহোৎসব বললে খুব ভুল বলা হবে কি?


    আরো হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে, ক্রোধে, অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে নির্বাচনী বিধি, প্রক্রিয়া, প্রতিক্রিয়া সব চলবে দফায় দফায়। শেষে ফলাফল আসুক রফায় দফায়। আমরা থাকলাম অসহায় অপেক্ষায়।

    আলাপী মনে প্রকাশিত মন ছোঁয়া কিছু কলম ‘ছন্দ পতন’, ‘আঁধারে আলো’, ‘লক্ষ্মীছাড়া মেয়ে’, ‘উপহার’, ‘মালো পাড়ার বিটি’, ‘হিসেব’, ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, ‘দ্বেষী বিদ্বেষী’, ‘প্রতিশোধ’, ‘দূরত্ব’, ‘ইচ্ছেপূরণ’ প্রভৃতি
    শুভ আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো সকলের জন্য ‘আলাপী মনে’র পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    দুর্ভাগ্যের দুর্ভোগ

    দুর্ভাগ্যের দুর্ভোগ

    -রীণা চ্যাটার্জী

    সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যু দিনে পালিত হয় “ভ্যালেন্টাইন ডে”- ভালোবাসা দিবস। রাজার নির্দেশ অমান্য করে নীরব বিদ্রোহে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি- ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতে মিলন উন্মুখ যুগলের ধর্মীয় বন্ধনে পৌরহিত্য করতেন। তাই তৎকালীন যুদ্ধপ্রেমিক রোমান সম্রাটের রোষানলে পড়ে মৃত্যু দণ্ডাদেশে প্রাণ হারান তিনি এই দিনে। আমরা পালন করি সাড়ম্বরে ভালোবাসা দিবস! আর ঠিক সেই বিশেষ দিনটিতে ভারতবর্ষ রক্তাক্ত হলো, বীর সন্তানের রক্তে পিচ্ছিল হলো আমাদের জন্মভূমি। অতর্কিত সন্ত্রাসবাদী হানায় স্তব্ধ দেশ। বিদেশ থেকেও ভেসে এলো ধিক্কার ধ্বনি। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অমানবিক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার অভিযোগে তোলপাড় হলো দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহল। মুখর হলো সামাজিক মাধ্যম। বিশিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের বিশেষ বিশেষ মতবিনিময়- মতবিরোধ চললো পর্যায়ক্রমে। যথারীতি সরকার ও বিরোধী পক্ষের চাপান-উতোর চললো ‘ইঞ্চি’ মেপে দফায় দফায়। সংখ্যা, পরিসংখ্যান, তথ্য সব বিতর্কের কেন্দ্রে। অনুগামীরাও তরজায় নামলেন নানা শ্লোগান নিয়ে।

    এরমধ্যে একটি বিশেষ প্রশ্ন উঠেছে ওঁদের ‘শহীদ’ কেন বলা হবে? যুক্তি- তাহলে কর্মরত অবস্থায় যে কারোর মৃত্যু হলে সেই শহীদ হবে। দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের যে এদেশের বিদগ্ধ জনেরাও এই প্রশ্নে সামিল হলেন। ‘শহীদে’র সংজ্ঞা কি ভুলে গেলেন মাননীয়রা! যাঁরা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসতে পারেন না, মৃত্যুবরণ করেন তাঁরাই ‘শহীদ’। আর সৈনিকরা যখন উর্দি পড়েন সেই মুহূর্ত থেকেই ওরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকেন। যুদ্ধ হোক বা না হোক। দেশমাতার সেবায় ব্রতী এই মানুষদের বেতনভুগী কর্মচারী বলার মতো অসংযত, অপ্রয়োজনীয়, অন্যায় মনে হয় না আর কিছু হতে পারে। আর সেনাবাহিনীর কর্মের সাথে অন্য কর্মের তুলনা করার ধৃষ্টতা নাই বা করলাম আমরা, সর্বসংহা এই মানুষদের জন্য থাকুক না মন ভরে শুধু সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
    ২৭শে ফেব্রুয়ারি থেকে ১লা মার্চ আবার এক পরীক্ষার শুরু, প্রতীক্ষার শুরু। আর এক বীর সন্তান শত্রুর ঘেরাটোপে। অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠলো বুক। অতীতের নৃশংস ইতিহাস মনে পড়ে যাচ্ছিল বারবার। মনে হচ্ছিল কতোটা বীভৎসতার মধ্যে আছে? কতো নৃশংস হয়েছে ওই দুর্বৃত্তরা? কেমন আছে আমার সন্তান? হ্যাঁ, বড়ো দুঃসাহসিক স্পর্ধায় আর ভীষণ মমতায়, অনেক গর্বে বললাম ‘আমার সন্তান’– “অভিনন্দন” তখন সবার, আমাদের সবার সন্তান। তখনো চলছিল তর্কের কাজিয়া– ভালো লাগছিল না। আমার মতো ঘরে ঘরে মা সেদিন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছে। অসংখ্য বোন তার ভাইয়ের হাতে রাখীর বন্ধনের শর্তের কথা ভেবে বুক বেঁধেছে। সহস্র সন্তান তার বাবার নিরাপত্তায় উৎকন্ঠার প্রহর গুনেছে।

    চলার পথে যুক্ত হয়েছি অনেক সৈনিক পরিবারের সাথে, খুব কাছ থেকে দেখেছি তাদের দিন-রাত, সুখ-দুঃখ। দেখেছি কর্মে যোগ দিতে যাবার আগে একধারে তাদের মানসিক দৃঢ়তা, কর্তব্যপরায়ণতা। অন্যধারে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা অজানা উদ্বেগ পরিবারের সবার। যাত্রার ঠিক আগে মুখে থাকে হাসি, ভালো থাকার সতর্কবাণী, ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি আর চোখে থাকে উদ্বেগের প্রশ্ন। স্তব্ধ হয়ে যায় জীবন ওদের অনেক সময়, যখন খবর পায় না তাদের মা, বোন, প্রিয়া, সন্তান। চোখের জল ফেলে না কেউ অমঙ্গলের আশঙ্কায়- শুকনো খরস্রোতা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাতায়নে। বাতাসে ভেসে আসুক সুখবর এই আশায়। তাই নিতে পারে না মন অহেতুক এইসব তর্ক, স্বার্থের নোংরামি, রাজনৈতিক মুনাফা, ভোটের গণিত। দুর্ভাগা দেশ আমাদের, দিতে পারলো না বীর সন্তানদের যোগ্য প্রাপ্য সম্মান। হতভাগ্য আমরা তাই-বুঝলাম না কাদের জন্য আমরা সুরক্ষিত। কিছু কিছু কর্মের মূল্য বিনিময় বিচার করা ধৃষ্টতা, মানতে পারলাম না সবাই। একমত হতে পারলাম না দুর্ভাগ্য আমাদের।

    আমাদের প্রিয় স্বজন সাথীরা তাঁদের কলমের কান্নার কথা,গর্জে ওঠার কাহিনী সব কিছুর সাক্ষী রাখতে ‘আলাপী মনে’ দিয়েছিলেন তাঁদের রচনা। কিছু কিছু লেখায় ছিল হিংসা মিশ্রিত প্রতিবাদ। সেক্ষেত্রে এই বিশেষ বিষয়ে লেখা প্রকাশিত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ক্ষমাপ্রার্থী। তাই বিশেষ কলমের প্রসঙ্গ সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া শ্রেয় মনে করি।

    শুভকামনা, শুভেচ্ছা সবার জন্য আলাপী মনের পক্ষ থেকে।।

  • সম্পাদকীয়

    ধর্মের বিড়ম্বনা

    ধর্মের বিড়ম্বনা

    রীণা চ্যাটার্জী

    ক্ষণিকের যাত্রা পথে দেখলাম ধর্মের গুঁতো। কোথায় ধর্ম? খুঁজে পেলাম না, দেখলাম ধর্মের নামে হুড়োহুড়ি। কারো ব্যক্তিগত জীবনের আপৎকালীন সুবিধা পেতে অসুবিধা হলো, কোনো শিশু অনভ্যস্ত পরিবেশে অসহায় কান্নায় মুখর হলো- তবে এটা বলা উচিত নয়,কারণ- এগুলি তো কোনো অসুবিধাই নয়, ধর্মের নামে নাকি সব সইতে হয়। যতোই হোক কুম্ভ মেলা! শাহী স্নান! পুণ্যলোভী তীর্থযাত্রী বলে কথা! মানিয়ে নেওয়া আমাদের ধর্ম, আবশ্যকীয় কর্ম।
    কিন্তু প্রতিবাদী মনের প্রশ্ন থেকেই যায়- একটি দ্রুতগামী দুরপাল্লার ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণীর সংরক্ষিত কামরায় এই অযাচিত ভিড়ের দায়ভার সহ্য করার কতোটুকু দায়িত্ব ওই কামরার যাত্রীদের ছিল? রেল কর্তৃপক্ষ কিসের ভিত্তিতে তা ‘সংরক্ষিত’ বলে দাবী করে মূল্য ধার্য করলো? মূল্য নির্ধারিত করার পর সংরক্ষিত রাখার দায় কি তাদের নেই? এই পরিস্থিতি তো ‘জরুরী অবস্থা’ নয় সংবিধান মতে, তবে কেন কিনে নেওয়া এই স্বাধীনতার অধিকারটুকু অসম্মতিতে হস্তান্তরিত হলো? সংরক্ষণের মূল্য দেবার পর এ কেমন সংরক্ষণ– যেখানে কিছু অসৎ রেল পুলিশ কর্মীর বাঁ হাতের কারসাজি দিয়ে নিজের নিজের অর্থভাগ্য স্ফীত করে তোলেন অন্যের অসুবিধার বিনিময়ে? প্রশ্ন থেকেই যায় ওনারা কি জানতেন, ওই তীর্থযাত্রীদের মাঝে মিশে নেই ‘অন্য পথযাত্রী’ (সন্ত্রাসে দীক্ষিত যারা)! তাহলে নিরাপত্তা কিসের ভিত্তিতে? জানি এই প্রশ্নের মীমাংসা নেই, হবেও না। চলবে.. চলতে থাকবে। আমরা শুধু সাক্ষী থেকে যাবো সময়ের, পরিস্থিতির। আরো অবাক হয়ে যাই দলে দলে চলেছে পুণ্যের আশায়- অবগুণ্ঠনবতী, অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। গঙ্গা স্নানে পাপ স্খলন হবে– হোক গঙ্গা দূষিত, পরিবেশ দূষিত। ধর্মপ্রাণারা বলবেন সগৌরবে “একদিনে কিছু হয় না।” সেই বিখ্যাত গানের কলি আজ বড়ো উপযুক্ত “নৈতিকতার স্খলন দেখেও–মানবতার পতন দেখেও- নির্লজ্জ অলসভাবে বইছো কেন?… নিঃশব্দে নীরবে- ওগঙ্গা তুমি- ও গঙ্গা বইছো কেন” এই আর্তিটুকুই আজ আমাদের সহায়।
    মন ছোঁয়া কিছু কলম, “নদী তুমি কার”, “ফিরে আসা”, “রোষের কারণ”, “আর্তনাদ”, “সৃষ্টি কল্প”, “সাঁকো”, “চেনা”, “অনুরণন”, “প্রলয়”, “ধ্বংসের মুখোমুখি”, “একতারা”, “কবি সম্মেলন” ইত্যাদি।
    শুভ আগামীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সকল স্বজন সাথী, সকল পাঠকবৃন্দকে ‘আলাপী মনে’-র পক্ষ থেকে।

  • সম্পাদকীয়

    উৎসবের বর্ষবরণ

    উৎসবের বর্ষবরণ

    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,

    আরো একটি নতুন বর্ষবরণের সাক্ষী আমরা। গানে, বাজনায় আলোর বন্যায়, শব্দবাজির সমারোহে পুরাতনকে বিদায় জানালাম নাকি নতুনকে বরণ করে নিলাম? এইটুকু স্পষ্ট বোঝা গেল আনন্দ উৎসব হলো– নিয়ম মেনে। পরের দিনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উঠে এলো দূষণ পরিসংখ্যান। কতোটা শব্দদূষণ, কতোটা বায়ুদূষণ। পরিবেশবিদরা চিন্তিত হলেন দূষিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আমারা সংবাদপত্রে চোখ রেখে কেউ হাসলাম, কেউ ভ্রু কুঁচকোলাম। সাবধানীদের কপালে ভাঁজ পড়লো। তার্কিকরা বললেন দৃঢ় কণ্ঠে “একদিন তো! তাই বলে আনন্দ করবোনা? বাচ্চারা আনন্দ করবে না! এতে কতো গরীবের রুজি রোজগার হচ্ছে”- বেশ যুক্তিপূর্ণ কথাই বটে! অস্বীকার করি কোন পথে? গরীব-দরদী হলে তো আর কিছু বলার থাকে না, কিন্তু এই গরীব দরদীরা কেন গরীবদের কথা অন্যভাবে ভাবতে পারেন না? জানা নেই। ভবিষ্যতের কথা, অসুস্থ মানুষের কথা, নবজাতকের কথা সব বাদ দিলাম। নিজের সন্তানের জন্য এই উৎসবসামগ্ৰী যাঁরা বিকিকিনি করেন, তাঁরা কি নিজের সন্তানের ভয়াবহ ভবিষ্যতের কথা ভাবেন! ভাবতে পারলে মনে হয় না এই ক্ষতিকর আনন্দে মেতে উঠতে পারতেন। আশা রাখতে ক্ষতি নেই, আগামীর অভিভাবকরা এই বিষয়ে যত্নশীল হবেন। দূষণমুক্ত হবে ভবিষ্যত আনন্দ উৎসব।

    কালের নিয়মে হলেও আমরা হারিয়েছি সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের অনেক শ্রদ্ধেয় কান্ডারীদের। যাঁদের অভিভাবকত্বের ছায়ায় আমরা বড়ো নিশ্চিন্ত ছিলাম.. ছন্দপতনের ধ্বনি বড়ো বেদনাদায়ক। ব্যাথাতুর মনে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করি।

    আলাপী মনে সাহিত্য আলাপনে কিছু মন ছোঁয়া কলম, ‘ইত্যবসায় তিন’, ‘চলে যেতে হবে’, ‘একান্তে তোমার জন্য’, ‘ভালো থেকো স্মৃতি’, ‘পুনর্বারের প্রতীক্ষায়’, ‘ন কাঠা’, ও আরো অনেক। কৃতজ্ঞতা স্বীকার সকল পাঠকবৃন্দ ও স্বজন সাথীর কাছে। শুভেচ্ছা, শুভকামনা রইলো নিরন্তর।

  • সম্পাদকীয়

    মায়াবী রোদ্দুরে

    মায়াবী রোদ্দুরে
    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    পূবালী হাওয়ার দাপট, উত্তুরে হাওয়ার কাঁপন, শিশির, কুয়াশা সবকিছুই একসাথে জানান দিয়ে যাচ্ছে, ‘আসছে, শীত আসছে..।’ প্রকৃতিও সাজতে শুরু করেছে রঙবাহারী ফুলের সম্ভারে। বিরক্তিকর একঘেয়ে তীব্র বায়স ধ্বনির সাথে শোনা যাচ্ছে সুমিষ্ট কাকলী। পরিযায়ী পাখির আগমনে,কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে পরিবেশ। সরীসৃপেরা ওৎ পেতে নিঃশব্দে আনাচে কানাচে শিকারের আশায়… উদরপূর্তির পালা সাঙ্গ করে নিরাপদ আস্তানায় শীতঘুম আর প্রজনন চক্রের পর্ব শুরু। সৃষ্টির এ এক অদ্ভুত লীলা, ছন্দে ছন্দে যেন রচিত প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ… অলিখিত সুরে গাঁথা।
    পাখীর ডানার ওমের মতো বড়ো আদুরে, ভীষণ মায়াবী শীতের দুপুরবেলা। মিঠে রোদ্দুরে মন পেতে চায় অনেক কিছু, খোঁজে একটু উষ্ণতা। পেতে ইচ্ছে করে কখনো না পাওয়া অনুভূতি সঞ্চয়ের ডালিতে ভরে নিতে, যা কিছুটা গল্পে পড়া, সিনেমায় দেখা।
    ভাবতে ভালো লাগে হয়তো বা আমি একটি শিশু …পুকুর পাড়ে বসে জলে নুড়ি ফেলে চলেছি আনমনে, আর চুপ করে বসে দেখে যাচ্ছি জলে তরঙ্গ তৈরী হওয়া, আর মিলিয়ে যাওয়া। নাহয় এক গাছের গোড়ায় মিঠে রোদে বসে আনমনে দেখে যাচ্ছি অনেক কিছু। দূরে চলে যাওয়া হঠাৎ পথিককে, ভেসে আসছে নানান পাখীর ডাক, ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার শব্দ শাখে শাখে..শীতের দিনের আলোটুকু ঝুপ করে সরে যাওয়ার আগে অনিচ্ছুক মনটাকে ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়া, পাখীর বাসায় ফেরার মতো।
    কখনো বা মন চায় প্রিয়জনের হাত ধরে সীমানা পেরিয়ে হারিয়ে যেতে, নীরবে নিভৃতে তাকে নিজের করে পেতে। আবার ফেলে আসা অতীত ও হাতছানি দেয় কল্পজগৎ ছেড়ে…কলেজের সেই দিনগুলো… অকারণ হেঁটে চলা, অপ্রয়োজনীয় কতো কথাকেই অতি প্রয়োজনীয় করে তোলা, আড়চোখে দেখা নেওয়া মায়াবী দুপুরের রঙীন দৃশ্যপট। কখনো বা সেই ছোটবেলার সাথীদের সাথে জটলায় বসে নানান কথা-গল্পে আর রকমারী মুখরোচকে মশগুল হয়ে দুপুর পেরিয়ে বিকেলের হাত ধরা। কিংবা সেই ছোট্ট বেলার পুতুল খেলার সংসার… রোদে বসে মিছে গৃহিণীপনা। মা, ঠাকুমার সংসারের অনুকরণে সাজিয়ে তোলা ক্ষণিকের সংসার…টুকরো কথায় আর অপটূ কর্মদক্ষতায়। ‘পুতুল খেলা’, ‘মায়ের সংসার’ মনে করিয়ে দিলো মায়ের স্নেহ, আদর, ভালোবাসা। মায়ের আঁচল ধরে চলা… শত ব্যস্ততার মাঝেও মায়ের প্রশয়ের হাসি, নির্ভয়ের, নির্ভরতার আশ্বাস। কোনো তুলনা, কোনো ভাষা হয় না পৃথিবীতে মায়ের স্পর্শের উষ্ণতার, মায়ের স্নেহের শীতলতার। বিশ্ব প্রকৃতির অনন্য রূপ ‘মা’, শিশুর এক পরম পাওয়া। বড়ো স্মৃতি মেদুরতায় অস্থির হয়ে পড়ছে মন আজ। সব…সব পাওয়া, চাওয়া যেন একাকার হয়ে যাচ্ছে….

    বাস্তবের রেশ ধরে ভালোলাগা, মন ছোঁয়া কিছু লেখার কথা…’শবর’, ‘মন্দ ভালোবাসা’, ‘উপহার’, ‘মমি’, ‘কেয়ার অফ ফুটপাত’, ‘আধুনিক মরণ’, ‘হেমন্তের চিত্রপটে’, ‘কাশ্মীর’, ‘বৃষ্টিকণা হয়ে…’, ‘পলাশগড়ের পিশাচ’, ‘চলমান শব’, আরো বেশ কিছু মন ছোঁয়া কলম।
    কৃতজ্ঞতায় আলাপী মন সকল স্বজন সাথী, পাঠকদের কাছে।
    শীতকালে বাঙালীর অতি প্রিয় নলেন গুড়ের স্বাদ,সুবাস। আলাপী মনের পক্ষ থেকে সুবাসিত নলেনের মিষ্টি শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

  • সম্পাদকীয়

    দলছুট প্রশ্নেরা!

    দলছুট  প্রশ্নেরা

    -রীণা চ্যাটার্জী

     

     

    সুধী,

    শরৎ কালের বিদায় বেলায় শুনি উৎসবের বিসর্জন ধ্বনি। উৎসবপ্রিয় জনজীবন কর্মব্যস্ততার ছন্দে ফিরে আসছে স্বাভাবিক ভাবেই। দেশ জুড়ে নানান পূজা-পার্বণ পালিত হলো বিগত পক্ষকালব্যাপী। শুভেচ্ছা, শুভকামনা, অভিনন্দন সব কিছুর সাথেই এসেছে হৃদয় বিদারক শোকবার্তা। মুহুর্তে উৎসবের আবহ থমকে গেছে। একটি রেল দুর্ঘটনায় মৃত এক লহমায় বেশ কিছু জীবন… শোকাবহ পরিবেশ। আমরা তর্জনী তুললাম একে অপরের দিকে। কেন হলো? কিভাবে হলো এ গতানুগতিক প্রশ্ন থাকবে, থাকবেই।
    তদন্ত কমিটি গঠিত হবে, নিষ্ফল তদন্ত হবে। হোক… যদি দলছুটের মতো অন্যরকম ভাবি?
    দুর্ঘটনার স্থানটি কি আদৌ সার্বজনীন উৎসব জমায়েতের জন্য নিরাপদ ছিল? গতিশীল একটি ট্রেন কি তার ইচ্ছেমতো গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? বিজ্ঞান কি বলে! সময়, দৃশ্যমানতা কিছুই কি নির্ভর করে না? যেখানে নিত্যনৈমিত্তিক ট্রেন চলাচলের সময় নির্ধারণ করা থাকে সেই স্থানে একটি সার্বজনীন উৎসব জমায়েতের আয়োজন হয় কোন যুক্তিতে? সাধারন জ্ঞান কি বলে! ক্ষমতার আস্ফালন? ধর্মের নামে রঞ্জিত করে বাহুবল প্রদর্শন? ধর্ম কি চায়! ধর্ম, ক্ষমতা দুইয়ের মোহে অন্ধ হয়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পরবর্তী সময়ের বিপদের আশঙ্কার কথা কিছুই কি আয়োজকদের ভাবনায় অগ্ৰাধিকার পায় না? সামাজিকতা কি জানে! আয়োজকদের কি স্থান,কাল বিবেচনার কোনো দায় থাকে না? দায়িত্ব বোধ কিরকম! যাঁরা শিশু পরিবারসহ কোনো উৎসবে যোগ দিতে যাবেন, তাঁরাও কি কোনো কিছুই না ভেবে সেই স্থানে জমায়েত হবেন? ধর্মান্ধতায়, উৎসবের আমেজে কি পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় আসবে না? কতোটা অসহায়! যদি তাঁদের উপর জমায়েত হবার জন্য আয়োজকদের তর্জনী নির্দেশ থাকে, তাহলে কিছুই বলার নেই, দুর্ভাগ্য আমাদের… অসহায়ত্ব। নাহলে শুধুই অন্ধ ধর্মাচরণ! আর কতোদিন! কেন?

    সাহিত্য আলাপনে সুসজ্জিত ‘আলাপী মন’ সাহিত্যের আঙিনা। ‘জল-শব্দ’, ‘যদি ফোটে ব্রহ্মকমল’, ‘উষ্ণতার খোঁজে’, ‘অনুভূতি’, ‘বানান বিভ্রাট’, ‘একটা অকাল বোধন’, ‘উপলব্ধি’, ‘সফল সরণী’, ‘বোধন’ (রেহানা দেবনাথ), ‘শেষ পৃষ্ঠায়’, ‘কালচক্র’, ‘ঠিকানা’, ‘বাইপাস ও বিয়ারের ক্যান’, ‘উত্তাপহীন মন’ আরো বেশ কিছু কলমের ছোঁয়ায সমৃদ্ধ ‘আলাপী মন’।

    কাশের দোলার মাতন থেমে তিরিতিরি কাঁপন ধরিয়ে পাতায় পাতায় হেমন্তের মৃদু পদসঞ্চার। পাঠক বন্ধু, স্বজন সাথীদের জানাই হৈমন্তী শুভেচ্ছা, শুভকামনা।

  • সম্পাদকীয়

    শারদীয়ার শুভেচ্ছা

    শারদীয়ার শুভেচ্ছা

    -রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    দেবীপক্ষের সপ্তমী তিথি আজ। গতকাল দেবীর বোধন পর্ব সমাপনে আজ নবপত্রিকা স্নান ও বরণের মাধ্যমে দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিনের প্রারম্ভ। উৎসবের সার্বজনীন আমেজ সবদিকে। আকাশ বাতাস মুখরিত মন্ত্রোচ্চারণ, চণ্ডীপাঠের সুরে। প্রকৃতিও সেজেছে কাশফুলের দোলায়, আকাশে রৌদ্র মেঘের দুরন্ত খেলায়। আলোর বন্যায়, মানুষের ঢলে উৎসবের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনায়, শারদীয়া শুভেচ্ছা বিনিময় বার্তায় ধ্বনি মুখরিত বারোয়ারি পুজা প্রাঙ্গণ।

    উৎসব, বিলাসিতা, প্রাচুর্যে নিত্যদিনের পরিচিত ছবিরা মুখ লুকিয়ে রেখেছে এই কয়দিন। অবশ্য এখন কলমের কালি আঁক কাটে, “তোমার দুর্গা… আমার দুর্গা…”। একটাই অর্থবহন করে ‘লুকিয়ে রাখা মুখ’ গুলোকে নিয়ে কিছুটা আলোচনা, আর সমবেদনা জানানো। জানি এই ভাবনাটা দুঃসাহস প্রকাশ … তাও বলি, পূজিত দুর্গা কি সত্যি শক্তির প্রতীক, তাঁর শক্তি প্রকাশ কতোটা তাঁর ইচ্ছাধীন? তিনি সন্তানসহ মাতৃরূপে পূজিতা। সত্যিই কি কোনো ‘মা’ পারেন তাঁর সন্তানের কষ্ট দেখতে, মনে তো হয় ‘না’। তবে কেন “আমার দুর্গা….. তোমার দুর্গা”? কেন? তাঁর ইচ্ছা বা মতানুসারে তাঁর আবাহন বা বিসর্জন কিছু হয়? কিছু কিছু মন্ত্রোচ্চারণে যেভাবে দেবীর অঙ্গ সৌষ্ঠব, রূপের বর্ণনা করা হয় কোনো মা’কে কি তাঁর সন্তান সেই দৃষ্টিতে আরাধনা করে? সারমর্মটুকু উপলব্ধি করলে প্রশ্ন জাগে কেন তবে “আমার দুর্গা… তোমার দুর্গা ..” ? যে অশ্লীলতা, কদর্য নৃত্য পরিবেশনায় তাঁর বিসর্জন সমারোহ দেখি লজ্জার আবরণ ঘিরে ধরে। তিনি নাকি পিত্রালয়ে আসেন এই ক’দিন ‘কন্যারূপে’। ‘মা’, ‘মেয়ের’ বিদায় বেলায় তো চোখ অশ্রু সজল হয়ে ওঠার কথা, বিদায়ের ক্ষণে এই উন্মাদনার সমারোহের অর্থ খুঁজে পাইনা। মনে হয় দেবী আরাধনায় সবলতার, সক্ষমতার, প্রতিযোগিতার আস্ফালন চলে। মণ্ডপ আলোকিতা, সজ্জিতা দুর্গাও শুধু শ্রীবৃদ্ধির জন্য সেই স্থানে…, মৃন্ময়ী নয় মৃৎময়ী হয়ে।

    দুর্গা যারই হোক, যেমনই হোক না কেন, জীবন সংগ্রামের লড়াই দুর্গার ব্যক্তিগত। পাশে থাকার অঙ্গীকার করি ভালোবাসা দিয়ে, মনে আশা রাখি সে যেন কোনো বিকৃত লালসার শিকার হয়ে তার কঠিন সংগ্ৰাম থেকে ছিটকে যেতে বাধ্য না হয়। মনের অতল গভীরে এই আশ্বাস, বিশ্বাস রেখে প্রথাগত ভাবে জানাই শুভেচ্ছা।

    ভালোলাগার, ভালোবাসার কলমে–’নীলঞ্জনাকে গানে বেঁধো না’, ‘অশান্ত সময়’, ‘একটা অকাল বোধন’, ‘বদলাবে’, ‘পথে নামার ডাক’, ‘সাহিত্যাকাশের পিলসুজ’, ‘বর্ণন’, ‘বোধন’, ‘নিষ্ঠুর সমাজ’, ‘অকৃতজ্ঞ’, ‘প্রাপ্তবয়স্ক’, ‘এক টুকরো স্বাধীনতা’।

    আলাপী মনের পক্ষ থেকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা সকলের জন্য। কৃতজ্ঞতা স্বীকার সকল স্বজন সাথী ও পাঠকদের কাছে। কুশল কামনা সবার জন্য।

  • সম্পাদকীয়

    প্রলয়ের পথে

    প্রলয়ের পথে
    – রীণা চ্যাটার্জী

    সুধী,
    ক্ষয়ের লয়ে, প্রলয়ের ছন্দে প্রকৃতির উন্মত্ত ধারায় ক্ষয়িষ্ণু হয়ে চলেছে সৃষ্টি। প্রকৃতির খামখেয়ালী তালে হার মানছে যুক্তি, প্রযুক্তি। উন্মত্ততার বলি হয়ে যাচ্ছে অগুণতি প্রাণ, সভ্যতা, সংস্কৃতি। বিপদ যেন অজানা নিত্যনতুন অতিথি, আশঙ্কার খোলা চিঠি নিয়ে সর্বদা প্রস্তুত… তার আড়ম্বর বা অনাড়ম্বর আগমনে সদা ত্রস্ত আমরা। তবে এটাও ঠিক প্রকৃতির এই বেতালা উন্মত্ততায় আমরাও দায় এড়াতে পারি না… প্রকৃতির ক্ষিপ্ত রূপের রহস্য অনেকটাই আমাদের জীবনধারার বিশৃঙ্খলার বীজের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। নূন্যতম চাহিদার নিবারণ করতে প্রকৃতির সাবলীলতায় প্রথম পড়ানো হয়েছিল শৃঙ্খল। নিরাপত্তা আর জীবনধারণের প্রয়োজন মিটিয়ে আমরা বিলাসিতার প্রাচুর্যে প্রয়োজনের সীমারেখা অতিক্রম করে এগিয়ে গেলাম দিন প্রতিদিন। বিজ্ঞানের দান অকাতরে নিতে বদ্ধপরিকর আমরা প্রকৃতিকে হেলায় দূরে সরিয়ে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সুবিধাভোগী হয়ে উঠেছি। আমরাও যে বড়ো অসহায় যুগোপযোগী হতে হলে যে বিজ্ঞানের দান বরণ না করে নিলে উপায় দেখি না, আবার বিজ্ঞানের সাবধান বাণী মেনে দোষী সাব্যস্ত আমরাই। তাই প্রকৃতির লয়-প্রলয়ের ধ্বনিতেই চিহ্নিত হতে চলেছে হয়তো আগামীর ধ্বংসের ঠিকানা….. দায়,তরজা মেনে নিয়ে আমরা অবুঝ ক্রীড়ানক সেই শেষ ঠিকানার অপেক্ষায়।

    স্বজন সাথীদের সাহিত্য কুসুমে কুসুমিত আলাপী মনের সাহিত্য অঙ্গন। নতুন চিন্তাধারার প্রকাশে কিছু লেখনীতে শিহরিত হয়েছি, ভেবেছি সত্যিই সমাজ যদি এইভাবে বদলে যেত? হয়তো কালের নিয়মে যাবেও… আশাটুকু থাক।
    মনছোঁয়া কিছু রচনা…’স্বজন ভজন’, ‘আবহে হতাশাতন্ত্র’, ‘জন্মদিন’, ‘ভেনাস দেবী’, ‘মোরা ভাই-ভাই’, ‘চুপ’, ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন’,’ভালোবাসার কাছে নতজানু’, প্রবন্ধ ‘ভালো থেকো’, ‘পথে নামার ডাক’, ‘ফ্লাইওভার’, ‘অন্যরকম ভালোবাসা’।

    কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা সকল স্বজন সাথী,পাঠক বন্ধুদের। কুশল কামনায় চিরন্তন।

  • সম্পাদকীয়

    লজ্জার অনিশ্চয়তা

    লজ্জার অনিশ্চয়তা
    – রীণা চ্যাটার্জী

     

     

    • সুধী,

      সমাজ সচেতনতা গড়ছে আজ নতুন রূপকে, স্বার্থের মোড়কে, ক্ষমতার প্রাবল্যে, অস্তিত্ব জাহির করার অন্ধ উন্মাদনায়। মানবতা, সহিষ্ণুতা,ধর্ম, বিবেক, জীবন সবকিছুই রাজনীতির ফাঁদে অসহায়, অস্তিত্বের সঙ্কটে। ক্ষমতাবলে তৈরী করে দেওয়া কিছু নিয়মের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য করা, মানবিতার দায় এড়াতে ‘উন্নয়নের খসড়া’ তৈরী করে দৈনন্দিন জীবনে চাপিয়ে দেওয়া …. স্বৈরাচারের চরম নিদর্শন।শরণার্থী,সন্ত্রাসবাদ, অনুপ্রবেশকারী,আতঙ্কবাদ শব্দগুলো সমার্থক হয়ে উঠেছে… আমরা স্বাভাবিক প্রশ্ন করি, ‘এরা কেন?’ প্রশ্ন রাখি না ,’কেমন করে?’ বলি না ‘ওরাও মানুষ’, ভাবিনা,’কি করে হলো?’ একটি ‘গণপ্রজাতান্ত্রিক’ (1971সালে) ঘোষিত রাষ্ট্র কেন স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ দশকের গোড়ায় এসেও তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ!! কেন সেই রাষ্ট্রের সংখ্যালঘুরা আজো শরণার্থী (অনুপ্রবেশকারী)? একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের কাছে তো এ চরম লজ্জার। কেউ কি শখ করে শরণার্থী হতে চায় অনিশ্চয়তার পথে পা দিয়ে… প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচতে চাওয়া অনুপ্রবেশকারীদের আতঙ্কবাদের দীক্ষা কারা দিচ্ছে? কারা বাধ্য করছে? এদের অসহায়ত্ব নিয়ে স্বার্থের খেলা খেলছে কারা? সত্যিই কি অজানা? কখনো কখনো সত্যিকারের দুর্বৃত্তরা অনুপ্রবেশকারীর মুখোশের আড়ালে আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে। নিরীহদের চিহ্নিত করার উপায় তো নেই। দেশ-বিদেশের প্রমুখ নেতৃবৃন্দদের সৌজন্য সাক্ষাতকার, চুক্তি বিনিময়, স্বাক্ষর, স্বীকৃতি সব হয় পর্যায়ক্রমে, কিন্তু এই নিরীহ নির্যাতিত মানুষেরা সযত্নে বঞ্চিত হয় যদিও এক শ্রেণীর সুবিধা ভোগীরা তাদের উদ্দেশ্য ও স্বার্থ পূরণকরে চলে অবলীলায়। রাজনীতির প্রয়োজনে, ধর্মের দাবীতে বঞ্চিত মানুষদের পরিচয় বদলে যায়। রাজনীতির প্রয়োজনে উন্নয়নের গন্ধে এদের উৎখাতের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। ‘উন্নয়নের’ অর্থ,লক্ষ্য, অন্য আজ ‘উৎখাত’। মানবাধিকার (মৌলিক অধিকার) নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচারের এ লজ্জা আজ কোথায় লুকাই!

      ‌বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের লেখায় অনুপ্রাণিত,’সর্বহারার দেশ’ ,’শরণার্থী’। কবিপ্রণামে সমৃদ্ধ ‘তুমি ছাড়া নাই’, ‘আজ মুক্তির দিন’। দৈনন্দিন রচনায় মনছোঁয়া কিছু লেখা– ‘মতলবী মন’, ‘আত্মকথন’, ‘অন্দরমহলের চারুলতা’,’অচেনা’, ‘রূপান্তর’,’মিষ্টি’, ‘আরো একবার ভিজবো’, ‘ এক ফালি চাঁদ’, ‘নাগরিক’,’ যদি খোঁজো’ আরো বেশ কিছু রচনা।

      কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা সকল স্বজন সাথী ও পাঠকের জন্য। কুশল কামনা করি সবার জন্য।

  • সম্পাদকীয়

    আকাঙ্খার বর্ষা

    আকাঙ্খার বর্ষা

    -রীণা চ্যাটার্জী

     

    সুধী,
    বসন্তে ফুলের রঙ, গ্ৰীষ্মে ফলের সুবাস বিতরনে রিক্ত তপ্ত ধরিত্রীর নব প্রাণ সঞ্চারে মৌসুমীর ক্রোড়ে বর্ষার বিচরণ প্রশস্ত চরাচরে। দিগন্ত জুড়ে নানান মেঘের আনাগোনা… কোথাও যেন জলভারে ভারাক্রান্ত, কোথাও বা কালিমায় ছেয়ে তমসাচ্ছন্ন করে তুলেছে, কোথাও বা বজ্রনিনাদে প্রতুলতা ঘোষণা করে চলেছে, পৃথিবীর বুকে অঝোরে ঝরে নিঃশেষ হতে চায় ..ভারমুক্ত হবার তাড়নায়। কখনো চলেছে ঝিরিঝিরি অক্লান্ত বর্ষণ, কখনো বা মল্লারে আকুল রজনী। মেঘ-বৃষ্টির নানা রূপের অস্তিত্বের প্রকাশে আমরা বিমোহিত, কখনো উচ্ছ্বসিত, কখনো বা সন্ত্রস্ত। বর্ষার স্পর্শে সিক্ত প্রকৃতিও সেজে উঠছে… শ্যামলীমায় ভরা তারুণ্যের অপরূপ রূপ লাবণ্যে। তবুও কোথাও যেন ভয় আছে ছন্দ পতনের–বর্ষার বিমুখতা বেশ ভাবায় …কখন যে তার স্বাভাবিক ছন্দ ভুলে রুক্ষ হয়ে উঠবে তপ্ত উন্নাসিকতায়! তেমনি কখনো বা তার অতিরিক্ত ধারায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে করাল গ্ৰাসে সম্পদ, বন্ধন সব ছিন্ন করে দিয়ে… এ যেন আমাদের জীবনের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি– নানা ঘাতে-প্রতিঘাতে, রূপে-ছন্দে, অপেক্ষায়-আশায় ভরা প্রতিটি জীবন। এগিয়ে চলেছে প্রতিটি দিন নিত্য নতুন রূপে… কখনো নিশ্চয়তা নিয়ে নিচ্ছি আমরা শান্তির নিঃশ্বাস, কখনো বা অনিশ্চয়তা নিয়েই আমরা সমাধানের পথ খুঁজে চলেছি। শেষ নেই এই অনন্ত খোঁজের, অন্তহীন আশ্বাস, বিশ্বাস, অপেক্ষার, আশার– অপরিসীম উপলব্ধি মিশে আছে আদি থেকে অন্তিম লগ্নে…
    আলাপী মনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা স্বজন সাথী ও তার পাঠকদের জন্য। স্বজন সাথীদের রচনা সম্ভারে সাজানো আলাপী মনের দৈনন্দিন – ‘সান্ধ্য বৃষ্টি’,’ঠিকানার খোঁজে’,’লালায়িত অক্ষরে’,’যে খুশী গুলো এখনও হারায়নি’,’অন্তরাল’, ‘মিলন অভিলাষ’,’তফাত’,’ছোট্ট দাবী’, ‘কৃষ্ণচূড়া’,’বহ্নি শিখা,’ ‘অলিখিত প্রেম’ …. উৎকর্ষতার বিচার করার দুঃসাহস নয়, মনে অনুরণিত হওয়া আরো অনেক রচনা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে।
    শুভকামনা সবার জন্য।

You cannot copy content of this page