-
মুখোশের আড়ালে
মুখোশের আড়ালে
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
লেখার চেষ্টা করছি মনের কথা অনেক কিছুই বহুক্ষণ থেকে, কিন্তু মন, কলম কেউ সাড়া দিচ্ছে না, সব কিছু নির্বাক, স্তব্ধ হয়ে আছে… আঁক কাটছে না। নির্বাক মন আজ শুধু কিছু নির্লজ্জ মুখের মিথ্যাচারের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে ছিন্নভিন্ন করে দিতে চাইছে। নির্লজ্জ মুখগুলি যারা ক্ষমতার অলিন্দে বসে নির্লিপ্ত হয়ে নিজেদের সত্ত্বা বিক্রি করছেন কখনো বা অর্থের বিনিময়ে, কখনো বা স্বার্থসিদ্ধির বশবর্তী হয়ে। চোরাবালি তৈরী করে দিচ্ছেন অসহায় সাধারণ মানুষের জন্য, যাদের মুখোশের আড়ালে বিকিকিনি করার ক্ষমতা নেই। কখনো অনুভব এমনো হচ্ছে যেন হাত,পা,মুখ বেঁধে জলে ডুবছি, কিছু বলার, করার নেই… ডুবছি আমরা, ডুবেই চলেছি। সাঁতরানোর উপায় পাই না হাত পা বাঁধা, কন্ঠরোধ করে দেওয়া হয়েছে মুখ বেঁধে (কেউ যেন জানতে না পারে)- নির্বাক মন, অসহায় অশ্রু তখন এই অবিচারে ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দিহান হয়ে ওঠে, কারণ ডোবার আগে বহুদিনের বিশ্বাসে বিশ্বাসী মন সেই পরম করুণাময়কেই বারবার আহ্বান করে উদ্ধার করার জন্য।
মুখোশধারীরা নিজেদের স্বার্থে মৃত্যুর মিছিল তৈরী করে, মৃত্যুকে কখনো সংবাদ শিরোনাম করে তোলে, কখনো বা ভীষণ অবহেলায় বলে ‘সামান্য ঘটনা'(???) এ তো গেল দেহজ মৃত্যু। মানুষ হাহাকার করে প্রিয়জন হারানোর বেদনায়, কিছু মানুষ পাশে এসে সাহায্যের আশ্বাস (?) দেয়, কিছু মানুষ পর্যালোচনা, সমালোচনায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে।
কিন্তু মানসিক মৃত্যুও হচ্ছে মুখোশধারীদের (আমলাতন্ত্র) হাত ধরে নিত্য। ভীষণ সুপরিকল্পিতভাবে ছলনার আশ্রয়ে মানসিক মৃত্যু উপহার দেন ওঁনারা আমাদের। মরে যাওয়া বিদগ্ধ মন নির্বাসন নেয় সমাজ থেকে, নিজেকে সরিয়ে নিয়ে… একাকীত্বের আশ্রয় খোঁজে। অজানা মানুষ যে শুধু উত্তর জানতে চায়, সহজ সমাধানের উপায় বলতে চায় কিংবা অবিশ্বাসী চোখে তাকায় – শুধু যারা মরে তারাই জানে এর উত্তর নেই, সমাধান নেই, সব পথ বেঁধে মুখোশধারীরা ছলনার খেলায় নামে। ‘প্রশ্ন’ ? হ্যাঁ মরে যাওয়া মনগুলিও অবিরত সেই প্রশ্ন আবর্তিত হতে থাকে অবিরাম।
মেধা, পরিশ্রম, প্রচেষ্টা সর্বোপরি সততা আজ আঁতুড়েই দেহ রাখছে। মুখোশধারীরা সমাজ অলঙ্কৃত করছে বিভিন্ন সভায়, নানা সমাজ সংস্কারক (!!) ঘোষণায়… জানতেও পারছেনা কেউ এদের স্বরূপ, এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। শুধু বিদগ্ধ মনেরা নীরবে তীব্র চীৎকার করছে,’আর কতো?’ ‘আর কেন?’ বিতৃষ্ণায় কাঁদে তথাকথিত ‘সিস্টেম’এর অপ্রত্যাশিত নিষ্ঠুর আঘাতে। কোনো সাজা, শাস্তি কোনোভাবেই কি হবে না এই মুখোশধারীদের??
আলাপী মনের পক্ষ থেকে স্বজনসাথী ও সকল পাঠকের জন্য অপরিসীম কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। মন আকৃষ্ট করা কিছু রচনা ‘প্রশ্ন’, ‘বন্ধু…শুধু তোমার জন্য’, ‘এই কি কবিতা’,’যেতে হবে নিকেতনে’,’জোয়ার ভাঁটা’,’বঙ্কুবাবুর বিয়ে’। আগামী দিনেও সবার সহযোগিতার আশা রাখলাম।
শুভকামনা রইলো সবার জন্য। -
সত্যান্বেষীর সন্ধানে
সত্যান্বেষীর সন্ধানে
–রীণা চ্যাটার্জীসুধী,
বৈশাখের আহ্বান সুসম্পন্ন করে আমরা বরণ করে নিলাম প্রচন্ড দাবদাহ আর ক্ষণিক অস্বস্তি ভুলানো কালবৈশাখী। কালবৈশাখীর আসার আশা-নিরাশার দোলায়, সে কখনো আসছে কখনো বা পথ হারিয়ে ফেলছে। রেখে যাচ্ছে অস্বস্তিকর পরিবেশ, দহনে দগ্ধ অশান্ত ক্ষণ।
শুধু অবাহাওয়া নয়, ভীষণ অশান্ত আবহে আছি আমরা সবাই। ‘অশান্ত’ ‘অশ্রদ্ধা’ ‘অন্যায়’ ‘অবজ্ঞা’ ‘অশ্লীলতা’ ‘অসংযম’ ‘অহংকার’ ‘অসততা’ সব যেন ভিড় করে আছে আমাদের চারপাশে। এই আবহে আমরা আসল ঘটনা জানা, বোঝার আগেই অভিযোগ আর অভিব্যক্তি প্রকাশে প্রতিবাদী হয়ে উঠছি। সেই প্রতিবাদের ভিন্ন আঙ্গিকের ভয়ঙ্কর রূপে আড়ালে চলে যাচ্ছে (ভীত???) বাদী-বিবাদী। থেকে যাচ্ছে শুধু প্রতিবাদের মোড়কে যুযুধান দুই পক্ষ, তাদের তির্যক মন্তব্যের তার্কিক অভিব্যক্তি ও তাদের একান্ত অনুগামীরা। এই প্রতিবাদের প্রতিযোগীদের সত্য অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা সম্পর্কে, কিংবা নিপীড়িতের পাশে থেকে তাদের উপকার করার সদিচ্ছা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়।
এমন অনেক ঘটনা আমাদের চোখের সামনে প্রতিনিয়ত হচ্ছে। রাস্তায় আকস্মিক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া মুমূর্ষু রোগী, মহিলাদের শ্লীলতাহানি আরো অজস্র ঘটনাই আমরা প্রাণভয়ে, মানভয়ে,,সময় অভাবে (অজুহাতে) এড়িয়েই যাই। এড়িয়ে যাবার অছিলায় বিবেক দংশন হয় বলেও মনে হয় না। অথচ কারোর ব্যক্তিগত আচার ব্যবহার নির্দ্বিধায় চোখ মেলে দেখে ‘উত্তেজিত’ হয়ে ‘শালীনতার’ মানের বিচারে বিধ্বংসী হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠতে মান, সময় সব সুলভ হয়ে যায়। বিধ্বংসী আচারণ ছাড়া কি অন্য উপায় থাকে না? এই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায় মানদন্ডের (উত্তেজিত) বিচারকদের কাছে।
এই ‘অশান্ত’ আবহে অসহায়ত্ব যেন গ্ৰাস করছে আমাদের। শ্রদ্ধেয় মানিক বাবু আমাদের যে সেই বুদ্ধিদীপ্ত দু’টি চোখের অন্তর্ভেদী দৃষ্টির ‘ফেলূ মিত্তির’ মহাশয়কে আজ ভীষণ প্রয়োজন। যাঁর সত্যান্বেষী মন তাঁর ‘মগজাস্ত্র’ ব্যবহারে অনায়াসে মিথ্যারোপ, মিথ্যাচারের জাল ছিঁড়ে সত্য উন্মোচিত করবে, তাতে রটনা সংবাদ পরিবেশিত বন্ধ হবে। সত্য উন্মোচনে হয়তো আমরা পেতে পারি শান্ত, সুন্দর, সংযত আবহ। হ্যাঁ, বোধহয় আমাদের সংবাদ মাধ্যমে সত্যিকারের ‘সত্যান্বেষী’ প্রয়োজন।
নানান বিরূপতায় মন আজ বিদীর্ণ সবার। তার মাঝেও স্বজন সাথীরা আমাদের সাথে থেকেছেন, কলম ব্যক্ত করেছেন নানা ব্যথা, কথা… কৃতজ্ঞ আলাপী মন তাঁদের কাছে। ‘লহ প্রণাম’,’অবক্ষয়’,’তুফান চাই বারেবারে’,’একটি প্রতারণা’,’অভিযাত্রী’, ‘সুমনের লাল প্রীতি’, ‘তারুণ্যের স্পর্ধা’ ‘দেখেছ কখনও’ ‘শুভ দিন’ ….মুগ্ধতার ছোঁয়ায়। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি মাননীয় সাহিত্যিক শ্রীঅরুণ কর মহাশয়ের কাছে -তাঁর কলমে সমৃদ্ধ করেছেন আলাপী মনকে।
সবার জন্য কুশলতার শুভকামনা রইলো। -
শুভেচ্ছাস্পর্শে বর্ষবরণ
শুভেচ্ছাস্পর্শে বর্ষবরণ
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
ফাগুন চৈতীর শেষ,ঋতুরাজের বিদায়ী বার্তা নিয়ে পঞ্জিকা মতে আজ গ্ৰীষ্মের আরম্ভ। বাঙালীর ‘শুভ নববর্ষ’। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ’র হাত ধরে আমরা পেরিয়ে এলাম একটি বছর। বড়ো মধুর, ভীষণ প্রিয়, আত্মার আত্মীয় নববর্ষ উৎসব আমাদের কাছে। গ্ৰীষ্মের দাবদাহের প্রারম্ভে একটি উৎসব পালন। বৈশাখ মাসের আর এক নাম আমাদের কাছে ‘রবি মাস’…শুধু কবিগুরুর জন্ম মাস নয়,
আমরা নববর্ষকে বরণ করি তাঁর অগণিত অমর সাহিত্য সৃষ্টির সম্ভারে। তাঁর রচিত গান, গল্প, আবৃত্তি আলাপনে মুখর হয়ে ওঠে আমাদের বর্ষ বরণ উৎসব।
পুরোনো বছরের সাথে দূরীভূত হোক অশুভ সকল রিপু…ভয়ভীতি, শঙ্কা, হিংস্রতা, শত্রুতা হারিয়ে যাক আমাদের দিনলিপির অভিধান থেকে। আত্মার শুদ্ধতায়, চেতনার জাগরণে, মনের শুভ দীপিকার আরতিতে প্রারম্ভ হোক শুভ পয়লা বৈশাখ ১৪২৫(1425)।
সকল সাহিত্যিক বন্ধুর রচনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই, পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞ আলাপী-মন। যে রচনা একাধিকবার পড়তে বাধ্য করেছে আমায়…’অনুকরণ‘, ‘ক্ষুধার মাতৃভাষা‘, ‘বলি‘, ‘অথঃ দ্রৌপদী কথা‘, ‘যান্ত্রিক‘, ‘প্রতিশ্রুতি‘, ‘চৈতি হাওয়া‘, ‘লজ্জা‘, ‘ইচ্ছে তর্পণ‘, ‘আমার শব্দরা‘…আরো বেশ কয়েকটি। ছোটোবেলা ফিরে এসেছে ‘রামধনু রঙ‘ -এর হাত ধরে।
আলাপী-মনের পক্ষ থেকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা সকল স্বজন সাথী ও সুহৃদকে। কুশল কামনা সবার জন্য। -
আমার ইচ্ছা প্রকাশ
আমার ইচ্ছা প্রকাশ
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
দু’পক্ষ কাল পার করে এলো সবাকার “আলাপী মন”। “আলাপী মন” আমার ইচ্ছার প্রকাশ। সাহিত্যের খুঁটিনাটি, খড়কুটো মূল্যবান করে রাখার আশা সাহিত্যের আঙিনায়। সবসময়ের সবক্ষেত্রেই দোসর আমার একমাত্র আত্মজা পরম সহিষ্ণুতায় মেল বন্ধন করালো আমার ইচ্ছা “আলাপী মন” এ। কৃতজ্ঞ আমার প্রিয় সাহিত্যিক বন্ধু অমল বাবুর কাছে, যাঁর সহযোগিতা ছাড়া আমাদের আঙিনা গুণীজনদের সমাহারে সেজে উঠতো না। তিনি পরম বিশ্বাস, ভরসা দিয়ে হাত ধরেছেন “আলাপী মন”এর। সাজিয়ে দিয়েছেন অনেক পরিশ্রমে সাহিত্য কুসুম দিয়ে আমাদের আঙিনা। কৃতজ্ঞ আমি সকল লেখক লেখিকার কাছে যারা প্রথম দিন থেকেই আমাদের সাথী- স্বজন সাথী। অনেক দ্বিধা নিয়ে শুরু হয়েছিল পথ চলা, কালের বাণী কি আমাদের জানা নেই…তবে যাঁদের সহযোগিতা জন্ম লগ্ন থেকে আমরা পেলাম তাঁদের সাহিত্য আলাপন আগামীতেও আমাদের সমৃদ্ধ করবে এই আশায় থাকলাম।
সকল লেখক লেখিকার সাহিত্য রচনায় বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। উৎকর্ষতার বিচারে দুঃসাহস নিয়ে নয় কিছু রচনা মনে ছাপ ফেলেছে…’পঙ্গুত্বের জয়‘, ‘দায়িত্ব‘, ‘বসন্ত আমার গঙ্গাজল‘, ‘ওই মেয়ে‘, ‘স্মৃতিপট‘ নাম নিয়ে বোধহয় তালিকা বৃদ্ধি পাবে, তাই সবাই কে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই।
কুশল কামনা করি সবার জন্য।