কবিতা- পাপাচার

পাপাচার– সুজিত চট্টোপাধ্যায়     এই দ্যাখো পুণ্যতোয়াপাপধোয়া গঙ্গা।এই দ্যাখো পবিত্র স্বর্গঘাটহর কি পৌরি, হরিদ্বার। হিমবাহ বাহিত বহমানা শীতলতাতীব্র স্রোতশীলা জননী গঙ্গোত্রী। এসো অবগাহন করি,এসো পূণ্য অর্জন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করিজয় জগদীশ হরে, গঙ্গা মাতা কি জয়। এইবার.. সিক্ত উন্মুক্ত বুকে হাত রাখোউচ্চারণ করো, পবিত্র সৎ বিশ্বাসে…আমি পবিত্র, নিষ্পাপ, অকলুষ, নিষ্কাম। একি কুণ্ঠিত কেন? করো উচ্চারণজটাজুট, […]

গল্প- চামচিকে

চামচিকে– সুজিত চট্টোপাধ্যায়   কি সর্বনাশ। যে ভয় পাই ঠিক সেটাই হলো। ওরে কমলা, কোথায় গেলি রে, শিগগির আয়।কমলা এ বাড়ির পুরনো কাজের বউ। অনেকদিন থাকার ফলে প্রায় নিজের লোকের মতো হয়ে গেছে। কুটনো কোটা ফেলে কমলা দৌড়ে এলো, গিন্নির ঘরে।কি হয়েছে গো মা।গিন্নি ভয়ে আধমরা। চোখ মুখ কুঁচকে ভাঙা গলায় চিৎকার করে উঠলেন,,ঝাঁটাটা নিয়ে […]

গল্প- অচল কয়েন

অচল কয়েন– সুজিত চট্টোপাধ্যায়   আজকাল কি হয়েছে কে জানে, ছোট্ট সাইজের একটাকার কয়েন কেউ নিতে চায় না। অনেকদিন যাবৎ মানিব্যাগে পড়ে আছে। চালাবার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু সফল হয়নি মালতী। কিন্তু ওতো নিয়েছিলো, কে কখন কোন ফাঁকে গছিয়ে দিয়েছে। মালতী আয়ার কাজ করে আয় করে। ওর কাছে টাকার মূল্য অনেক। হলেই বা একটাকা, তাই বা […]

অণু গল্প- শীতলপাটি

শীতলপাটি– সুজিত চ্যাটার্জি   ঠাকুমা, ঠাকুমাই রয়ে গেল। কিছুতেই আপডেট করা গেল না।সেই রামপ্রসাদী, সেই কে.এল.সায়গল. সেই.. বোঝালেও বুঝবে না, ওসব এখন আর চলেনা। তাঁবাদি হয়ে গেছে।যেখানেই যাই ঠাকুমাকে বলে যাই। অভ্যেস। ঠাকুমা..পুরুলিয়া যাচ্ছি। দু’দিন পরে ফিরবো।ঠাকুমা ফোকলা। হেসে বললো-যা, ঘুরে আয়, ভালো জায়গা।যাচ্ছি অফিসের কাজে, ‘যা ঘুরে আয়’। কাজ আর ঘুরে বেড়ানো এক নয়, […]

রম্য- ঠাকুরঘর

ঠাকুরঘর– সুজিত চট্টোপাধ্যায়   ঠাকুরঘর তো নয়, যেন দশকর্মভাণ্ডার। তেত্রিশ কোটি দেবী দেবতার আবাসস্থল। মাসমাইনে পুরুতঠাকুর দু’বেলা নিয়ম করে আসেন, পুজো সারেন, শাঁখ ঘন্টা ফুল তুলসী গঙ্গাজল নৈবেদ্য, আয়োজন ভালোই।বুলিবুলি, মেয়ের ঘরের নাতনী। মাত্র আট বছর বয়স। ভারী দুষ্টু।ও দাদু, দাদু, রোজরোজ কার পুজো হয় গো?দাদু স্বামীজীর লেখা, কর্মযোগ পড়ছিলেন।গম্ভীরমুখে বললেন, ওই সব ঠাকুর দেবতাদের […]

কবিতা- আশা

আশা– সুজিত চ্যাটার্জি   কতো সহজেই পাল্টে ফেলি ঘরকতো সহজেই পাল্টে ফেলি জামা,অতীতের যাবতীয় ভাষা কিংবা ভালবাসা। প্রতিশ্রুতির কাদামাটি, স্বপ্ন ঘাঁটাঘাঁটিঅকারণ হাসা, শকুনির পাশা,শ্মশান চণ্ডালের চিতা সাজা। তবুও আশা, হয়তো আসবে ভোরবন্ধন রাখীডোর, সৃষ্টির নব চেতনায়আলি আকবর মূর্ছনায়নব্য ভাবনার মিলিত জয়গান।

কবিতা- বৈষম্য

বৈষম্য– সুজিত চ্যাটার্জি    চল গান শোনাইশ্যামাসংগীত, না নাঅতুলপ্রসাদ, নাহ থাক,চল ঘুড়ি ওড়াই, সেই ভালো। আকাশও নাকি ভাড়া খাটে, সত্যি?বিক্রিও হয়, বলিস কি, সত্যি?গ্রহ উপগ্রহের প্রতিবেশী মানুষের যান।সেখানে তো ওপরওয়ালার ঘর,মানুষ এতো উঁচুতে? ভালো বেশ ভালো। কিন্তু মাটিতে, মাটিতে কি বাপ,মানুষ এতো নিচুতে, আঁধারে, অজ্ঞানেএতো বৈষম্য? কেন রে বাপ?বুক কাঁপে।বাদ দে সব, চল মাঠে চল,না […]

অণু গল্প -একাকিত্ব

একাকিত্ব-সুজিত চ্যাটার্জি   ভোলেবাবা পার করেগা।বাঁকের দুমাথায় দুটো জল ভর্তি কলসি টাঙানো। গনশা চলেছে বাবার মাথায় জল ঢালতে। শ্রাবণ মাস এলো, আর বাই উঠলো। উদোম পায়ে ছুট ছুট ছুট। কাটুক ফাটুক কুছ পরোয়া নেই। কদম কদম বাড়ায়ে চল। পুণ্যি পুণ্যি, বাবার মাথায় জল ঢাললেই অঢেল পুণ্যি। এতো পুণ্যি রাখবি কোথায় গনশা? গনশার বুড়ো বাপ সন্ধ্যে […]

অণু গল্প- যাত্রা নাস্তি

যাত্রা নাস্তি– সুজিত চ্যাটার্জি    বদ্রীনারায়ন থেকে হরিদ্বার ফিরবো। বাসের টিকিট আগেই নেওয়া ছিল। সপরিবার ভ্রমণ, তাই ব্যবস্থা পাকা রাখাই নিরাপদ।সকাল সাতটায় বাস ছাড়লো। বদ্রীনারায়নের নৈসর্গিক মায়াময় বিচিত্র শোভা আমৃত্যু থাকবে মননে, আর নিলাম আশীর্বাদ, জগৎ রক্ষাকারী শ্রীবিষ্ণু নারায়ণের কাছে।প্রায় বিশ কিলোমিটার যাবার পর হঠাৎই বাস দাঁড়িয়ে পড়লো। কি ব্যাপার ? বাস বিগড়েছে।ঘন্টা খানেক টানাহেঁচড়ার […]

কবিতা- বন্ধ মনের দরজা

বন্ধ মনের দরজা– সুজিত চ্যাটার্জি   দরজা খোলো, দরজা খোলো ।কে তুমি ?বিবেক এখানে, দরজা খোলো।কাকে ডাকছো বিবেক?তুমি, তোমাকে।ওটা তো আমার নাম, আমি কোথায়?খোঁজ করো, খোঁজো মনের দরজায়।শত সহস্র দরজা মনেরকোথায় খুঁজবো, বিবেক?ভুল, মতিভ্রম।দরজা একটাই, মনের দরজা। মনের দরজাটা হাট করে খুলে দাও কবি,ওখানেই আলো, ওখানেই অমাবস্যা।ওখানেই হিমবাহ, ওখানেই পারিজাত।ওখানেই বিদ্বেষ, ওখানেই ভালবাসা। এই তো, […]