• কবিতা

    মহিষাসুর

    মহিষাসুর
    -সুনন্দ মন্ডল

     

     

    তোমার তেজে জ্বলছে মর্ত্য
    তোমার বীর্যে ভীত দেব।
    তুমি ত্রাতা মুক্তি দাতা
    তুমি অসুর কুলের বৈভব।

     

    তোমার সাহস সিংহ সমান
    দেবরাজ ছাড়ে নিজ আসন
    উর্বশীও হাতছাড়া তাঁর
    কাঁপে স্বর্গ কাঁপে ত্রিভুবন।

     

    তপস্যা তোমার কঠোর প্রাণে
    বর পেলে ব্রহ্মার হাতে।
    হুংকার ছড়াও আকাশ ব্যাপী
    বাতাসে কাশ ফোটাও তাতে।

     

    দুর্গা সেতো অপরিচিতা
    তোমার জন্যই তাঁকে জানি।
    তোমার বধে বিশ্বলোকে
    পুরান গাথায় মা’কে চিনি।

     

    দেবী রূপে পূজি তাঁকে
    তুমিও তো নও কম কিছু।
    আসুরিক শক্তি, পরাক্রম হাসি
    তুমিও পেলে ঠাঁই তাঁরই নিচু।

  • কবিতা

    খুচরো প্রেম, বোধ আর অবোধের খেলা

    খুচরো প্রেম, বোধ আর অবোধের খেলা
    -সুনন্দ মন্ডল

    আমি তখন ষোলো
    সবে মাধ্যমিক পাস করেছি।
    বুঝতাম না প্রেম কী?
    শুধু গল্পের বইয়ে প্রেম খুঁজেছি,
    পড়েছি কবিতা, নাটক আর কিছু শায়েরী
    বন্দি থেকেছি ঘরের চার দেওয়ালে।
    হঠাৎ একদিন পুকুরে চান করতে গেলাম,
    ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল জল ও জলের গভীর
    আর জলের ঢেউ ছুঁলো পা।
    শ্যাওলা ভরা জল টেনে টেনে পুকুরটা
    মনে হলো প্রেম নিবেদন করলো!
    পা ধরে বলতে চাইলো কাতর হয়ে,
    “ভালোবাসি, ভালোবাসি”।
    আমি বুঝিনি সেই প্রার্থনা
    অবজ্ঞা ভরে সে-ডাক উপেক্ষা করে নিজের বোধ বিসর্জন দিয়েছিলাম।

    একদিন নদীর ধারে বেড়াতে গেলাম।
    তখন হয়তো সবে একুশে!
    নদীর ধারের হাওয়া সারা বিকেলময় গায়ে মেখে,
    সন্ধ্যার অবসন্ন পৃথিবীর দোলনায়
    যখন ঘাটে নামলাম
    নদীর জল ছুঁয়ে স্নিগ্ধ শীতলতা অনুভব করলাম।
    শরীরে শিহরণ বয়ে গেল
    সেও যে প্রেম!
    চিৎকার করে বলতে চাইলাম,
    ‘ও নদীরে, আমি তোকেই ভালোবাসি’
    হয়তো সেও ভালোবাসতে চেয়েছিল!
    কিন্তু সব বাধা কেটে কেটে সামনের পথে পা বাড়াল খুঁজে নিল জীবনের ঠিকানা।
    স্রোত তার দুর্বার
    তন্বী নদীর কাছে,
    বড়ই নির্বোধ লাগল আমাকে।

    যখন ছিলাম পঁচিশ!
    কলেজ থেকেই গিয়েছিলাম পুরী
    দর্শনে চোখ জুড়িয়েছিল,
    সমুদ্রের রূপে মুগ্ধ হয়েছিলাম,
    আজও ভেসে আছে তারায়।
    হোটেল থেকে বেরিয়ে খুব কাছাকাছি এলাম তার
    সেও মাথা দুলিয়ে স্বাগত জানালো আমাকে।
    আমি অবনত হয়ে তাকে ছুঁলাম,
    অনন্য অনুভূতি, অজানা প্রেমের বাতাস দিলাম।
    হঠাৎই একটা ঢেউ এসে,
    শরীর ভিজিয়ে দিল বিনা অনুমতিতে!
    লবনাক্ত জলের ছাঁট চোখ-মুখ-হাত-পায়ের
    আঢাকা জায়গায় চুমু এঁকে দিল যত্ন করেই।
    বুঝিনি সে চুমুর জ্বালা আজও বয়ে বেড়াতে হবে,
    বুঝিনি সে প্রেম নয়!
    প্রেমিকার রূপে আসেনি কোনদিনই সে
    জ্ঞানগর্ভা জলধারিণী ক্রুর ছলনায়
    আমার বোধের বারোটা বাজিয়েছিল
    গিলে ফেলেছিল আমার প্রেমিক সত্তা।

    হতে পারে আমার ‘খুচরো প্রেম’
    বোধ আর অবোধের খেলা খেলতে খেলতে
    কান্নার জলে বিদায় নিয়েছিলাম চিরদিনের মত।
    সমস্ত দুঃখ, ব্যথা মনের গভীরে জমে আছে এখনো
    যা বুঝিনি, অবশ্য বুঝতেও চাইনি!
    কেউ নিজে থেকে ধরা দিলে আপন করতে হয়।
    এখন বুঝি আমার নিজের চাওয়া কোনোদিন না পাওয়াও হতে পারে।

  • কবিতা

    পেন্ডুলাম

    পেন্ডুলাম
    -সুনন্দ মন্ডল

     

     

    পেন্ডুলামের কাঁটায় আটকে সময়।
    সূত্র গাঁথা অবিবেচকের কাহিনীতে।
    বিরহ কিংবা ভালোবাসা! মাপকাঠি
    ক্রমশ জড়ায় জটিল জটিল তত্ত্বে।

     

    বর্তমানের বাংলায় দেখি চরমতা
    থমকে বিশ্ব এই নিয়মের অংকে!
    মিডিয়ার চাপাচাপি হয়তো বা উস্কানি
    ভীতি বুকে চেপে দিন বাঁধা! রাত নিশঙ্কে।

     

    ডাস্টার মোছা বোর্ডে। লেখার সাদা ছাপ।
    রক্ত দিয়েই হোক আঁকা শেষ মিছিল।
    বীজের পচন, চারা রোপনের ক্রমতা
    কলমের দানি থেকেও ফুরাক রিফিল!

     

    ঘোড়া ডিঙিয়েই ঘাস খেতে শিখে গেছি,
    কে আছিস? আছে বিপদের কিছু ডালপালা!
    সপাটে সমূলে উৎখাত। হাতে সাবধানী।
    নিয়ে আয় তোরা জয়ের মুকুট আর মালা।

<p>You cannot copy content of this page</p>