• কবিতা

    পরিবর্তন

    পরিবর্তন
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী

     

     

    কালের আবর্তনে প্রতিনিয়ত নিজেকে ভাঙছি….
    নিজেকে ভাঙছি আর নতুন করে গড়ছি

    বারবার নিজেকে ভাঙা আর গড়ার খেলায় নিজেকে নিয়োজিত করছি….

    পুরনো যা কিছু বদলে ফেলে নতুনের সাথে নব সাজে সেজে উঠছি…..

    যত পাচ্ছি তত হারাচ্ছিও_

    পাচ্ছি স্বাধীনতা,হারাচ্ছি মানবিকতা_

    আয়েশে ডুবে যাচ্ছি,পরিশ্রমের বোঝা কমিয়ে রোগের স্বীকার হচ্ছি…

    শান্তি হারিয়ে ফেলছি, জড়িয়ে ধরছে হিংসা,কুটিলতা…

    পাপবোধ চলে যাচ্ছে হৃদয় থেকে,অহঙ্কারে বেঁধে ফেলেছে চারদিক…

    বিভৎস লোলুপতা গ্রাস করেছে চারপাশ থেকে…

    লোভ,লালসার হাহাকারে সরল জীবনযাপন হারিয়ে গেছে আগুনের লেলিহান শিখায়…

    মানুষ আজ মানুষ নেই, সবাই মেরুদণ্ডহীন
    সরীসৃপ এর মত…

    অন্যায়,অবিচার ভেঙে ওঠো মানুষ!জাগো মানুষ!
    কলুষ হৃদয় হতে জেগে ওঠো প্রাণ
    ভুলে যত মান অভিমান।

  • কবিতা

    লড়াই

    লড়াই
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্তী

     

     

    লড়াই… লড়াই….লড়াই!

    সারাটা জীবন ধরে শুধু বেঁচে থাকার লড়াই,

    অধিকারের লড়াই…সিংহাসনের লড়াই…

    লড়াই ক্ষমতার…পদতলে পিষ্ঠ করার লড়াই…

    ক্ষমতা যার হাতে,শাসন তারই হাতে…

    যার হাতে ক্ষমতা, সে বলবান…

    অত্যাচার সেই করবে…

    তাই সিংহাসনের জন্য যুগ যুগান্তর লড়াই

    ক্ষমতার জন্য… মারামারি,লাঠালাঠি,খুনোখুনি…

    হিংসা,লোভ,লালসা… রক্তের নদী বয়ে যায়…

    মায়া,মমতা ছিন্ন করে, আপন হয় পর…

    সবাই রাজা হতে চায়…উচ্ছাসন চায়…

    প্রজা হলে ক্ষতি কি?

    সিংহাসনে না হোক, আসন না হয় মাটিতেই থাক !

    সন্ত্রাস তো হবেনা ! রক্তের নদী তো বইবে না!

  • কবিতা

    পথ অনেক দুর

    পথ অনেক দুর
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্তী

     

     

    যোজন যোজন পথ হেঁটে গন্তব্যের দেখা মেলে না
    মাইল ফলক এর পর মাইল ফলক পেরিয়ে যায়
    লক্ষ্য গন্তব্যের থেকে অনেক দূরে

    নদীর জলে সাঁতরে সহজ পথ পাওয়ার চেষ্টা করি
    গাংচিল এসে রাস্তা বন্ধ করে দেয়

    অন্য পথ ধরি, সে পথ জঙ্গল আর পাথরে ভরা
    নুড়ি পাথর সরিয়ে, জঙ্গল কেটে তবে পথ মসৃণ করতে হয়

    মসৃণ, ফুল ছড়ানো পথের দেখা কোথাও পাই না

    জীবনের শেষ কিনারে এসে এমন একটা পথ পেলাম,
    আকাশের দূত এর মত এসে কে যেনো খুলে দিয়ে গেল পথের ঠিকানা
    দুর থেকে এক আলোকরশ্মি দেখা যায়
    দিগন্ত ছুঁয়ে, ওই সে পথের ঠিকানা।

  • কবিতা

    এসেছে শীতের বেলা

    এসেছে শীতের বেলা
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী

    অবশেষে শীত এলো বহু অপেক্ষার পরে
    ভোরের হৈমন্তী হাওয়া,সূর্য্য টাকে চাওয়া বেশি করে
    মাঠে কচি ঘাসে শিশির বিন্দু,শীতের পরশ
    শুকনো পাতা ঝরায় মর্মর ধ্বনি, ত্বক খস খস
    মন ছুটে যায় বাহির পানে,কুয়াশায় মাঠ ঘোলা
    অগ্রহায়ণের সোনালী ধানের ঢেউ এর দোলা
    মিষ্টি তাজা খেজুর রসের আস্বাদ,
    ঘরে ঘরে হেমন্ত লক্ষ্মী,পৌষ পার্বণের গন্ধ
    বাংলার গ্রামের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব,আনন্দ।

    দুউউউউরে কাদের দল বেঁধে আগুন পোহানো
    মাঠে শোনা যায় রাখালিয়া বাঁশির সুর,মন মাতানো
    ছুটে চলে একপাল কচি মেষ শাবক
    ওদের পিছে পিছে ছুটি,,,,,,
    বাউল আমার গান ধরেছে একতারা টায়
    দীঘির জলে সাদা হাঁসের দল আর শালুখ ফোটায়
    মাছরাঙা টুপ করে ডুব দেয় জলে,সকালে
    গাছগুলি সব একা, একা,ফাঁকা,,,,,,
    পদতলে শুকনো পাতার বিছানা করে রেখেছে
    যেনো তুলি দিয়ে ছবিটি আঁকা,,,,,,,
    দীঘির ঘাটে স্নান সেরে কাঁপতে কাঁপতে
    গ্রামের আল পথে ঘরে চলে গ্রামের বউ
    খড় বোঝাই গরুর গাড়ি চলেছে আপন মনে
    ঝাঁকা ঝাঁকা সবজি নিয়ে হাটে চলেছে কেউ

    শীত এসেছে সবাই দেখি রঙিন শীতের পোশাক
    কারুর বা পোশাক ই নেই ,কাঁপছে শীতে ঠক ঠক
    অনেক দূরে রেলের লাইন,শুনছি ট্রেনের বাঁশি
    শীতের সকাল হাট বাজারে সবজি রাশি রাশি
    কুমোর কেমন মাটি দিয়ে গড়ছে থালা বাটি
    খেজুর রসে জ্বাল দিয়ে, গুড় হচ্ছে খাঁটি
    শীতের লেপ,কম্বল আর শীতের গরম জামা
    পাটালি গুড় আর বাদাম চাকতি শুকায় ধামা ধামা
    নতুন গুড়ের মোয়া,আর পিঠে পুলির স্বাদে
    দুপুর বেলায় কমলা লেবু রোদে বসে ছাতে।

  • কবিতা

    নারী তুমি চিরো দুখিনী

    নারী তুমি চিরো দুখিনী
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী

     

     

    তোমার প্রতিনিয়ত অবহেলা, মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও বেশি
    তোমার আনুগত্য উপভোগ করি, অবহেলা সইতে পারি না

    তুমি ভাবো আমি তোমার অনুগত বলে, আমাকে যেমন খুশি ব্যবহার করবে?
    অনুগত হই তোমাকে ভালোবাসি বলে, তোমাকে শ্রদ্ধা করি বলে পুরুষ!

    এটা তোমার ভালোবাসা না, তোমার অহংকার!
    তোমার পৌরুষত্ব ফলাও তুমি পুরুষ!

    যে নারীর তুমি বশবর্তী,যে নারী তোমার জননী,
    যে নারী তোমার স্ত্রী,যে নারী তোমার কন্যা,তার কাছে তুমি পৌরুষত্ব ফলাও?

    যে মাতৃ গর্ভ হতে জন্ম তোমার, যে স্ত্রী র সন্তানের পিতা তুমি,
    যে কন্যা তোমার ঔরস জাত, সেই নারীকে পায়ে মাড়াও তুমি কাপুরুষ!

    যে নারীকে তুমি সহধর্মিণী করেছ, যে নারী তোমার অর্ধাঙ্গিনী,
    যার তুমি অন্ন,বস্ত্রের ভার নিয়েছ,
    সেই অন্ন তুমি তোমার স্ত্রীকে মুখে তুলে দাও দয়ার দান ভেবে?
    ব্যঞ্জনকে ভরিয়ে তোলো বাক্য ব্যঞ্জনা দিয়ে!!

    আমাদের দেশে এমন অনেক নারী আছেন
    যারা সেই অন্ন মুখে তোলেন চোখের জলে
    এ তোমার অহংকার পুরুষ! এ তোমার অহংকার!

    নারী জীবন যখন শেষ হয়, তখনও তার চিন্তা থাকে,
    তার স্বামীর দিকে,তার সন্তানের দিকে,তার সংসারের দিকে।

    যে পুরুষ নারীকে জর্জরিত করেছে প্রহারে,প্রহারে,
    বাক্যবাণে,অন্তরে,বাহিরে তার দিকে!

    স্বাধীনতার এতো বছর পরেও!
    আর কবে তোমার চেতনা হবে পুরুষ!!

  • কবিতা

    রঙের মেলা

    রঙের মেলা
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী

    রক্তের রঙ লাল, তাতে আছে শত্রুতা
    সূর্যের রঙ লাল, তাতে আছে শুধু তেজ
    সিঁদুরের রঙ লাল, তাতে আছে ভালোবাসা
    আগুনের রঙ লাল ,তাতে আছে উষ্ণতা।

    আকাশের রঙ নীল, তাতে আছে গভীরতা
    বেদনার রঙ নীল, তাতে আছে নীরবতা
    কৃষ্ণর রঙ নীল, তাতে আছে নির্ভরতা
    নীল পদ্ম ও আছে, তাতে আছে স্বচ্ছতা।

    গাছের পাতা সবুজ, তাতে রয়েছে যে প্রাণ
    দূর্বা ঘাস ও সবুজ, সেতো পায়ের নিচেই ম্লান
    পান্না সেতো সবুজ, সেতো গৌরবের মণি
    আঁধার রাতে জোনাক, সেতো সবুজ আলো খা।

    হলুদ যখন গাছের পাতা, ঝরে পড়ে হায়
    হলুদ জলে মুখটি দেখে, উমা আমার যায়
    হলুদ বিনা রান্না যেন, বেরঙা ব্যঞ্জন
    হলুদ পাকা ধানের শীষে, কি মনোরঞ্জন।

    কালো সেতো আঁধার কালো, ঘন অন্ধকার
    কালো যখন কালী হয়, রূপের কি বাহার
    কাজল কালো নয়ণ দেখে, প্রাণ করে আনচান
    কৃষ্ণ কালো, রাধার সাথে এমন যুগল বন্ধন।

  • কবিতা

    সম্পর্ক

    সম্পর্ক
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী

     

     

    দিনে দিনে চেনা সম্পর্কের ছবিগুলো
    অচেনা হয়ে যায়,আবছা হয় দুর থেকে দূরে
    দূরত্ব হতে হতে মিলিয়ে যায় সম্পর্কের রেখা
    স্মৃতির সোনার খাঁচায় থাকে সোনালী দিনের ছবিগুলো,

    সেগুলোও কেমন ঝাপসা হয়ে আসে,সম্পর্কের তিক্ত স্বাদ নিয়ে

    বড়ো নাজুক এই সম্পর্কগুলো, একবার তেতো হলে আর মিঠে স্বাদ ফিরে পায় না
    হিংসা মানুষকে নিচে নামিয়ে দেয়,
    ভালোবাসা হারিয়ে ফেলে তার অস্তিত্ব,,
    কি আছে? সব ই তো পড়ে থাকবে,চলে যেতে হবে সব ফেলে,তবু কেনো এতো ঈর্ষা

    কালে কালে হিংসার কালো ধোঁয়ায় কলুষিত হচ্ছে এই পৃথিবী,,কেউ ভালো নেই,কেউ ভালো নেই,,,কত ব্যস্ত হয়েছে মানুষ? কেনো এতো ব্যস্ততা? মানুষে মানুষে
    সখ্যতা হারিয়েছে, হারিয়েছে প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্ক, ভালো, মন্দ জ্ঞান হারিয়েছে

    মানুষ, লোভ, লালসায়, লেলিহান অগ্নি শিখার মতো, জ্বলছে সম্পর্ক।

  • কবিতা

    মাগো কত কষ্ট তোমার

    মাগো কত কষ্ট তোমার
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী

     

     

    মাগো এ তোমার কেমন ছেলে?
    নাইবা পেটে জন্ম দিলে?
    একবারও কি পড়লো না তার মায়ের কথা মনে মনে?
    ধিক শত ধিক সন্তানেরে! যারা এমন কর্ম করে!
    মানুষ! নাকি পশুর অধম?
    মায়ের যারা রক্ত খেলে!!
    লজ্জা! এযে লজ্জা আমার!!
    লজ্জা সে যে সকল মায়ের!!
    লজ্জা সকল নারী জাতির!
    এমন ছেলে পেটে ধরে!!

    পুরুষ! তুমি কেমন পুরুষ?
    কারুর বাবা,কারুর স্বামী,কারুর ছেলে
    নারী শুধুই ভোগের জিনিস?
    নাকি শুধুই মাংস ডেলা
    ছোট, বড়ো, কুঁড়ি, বুড়ি
    কারুর ই তো নেই যে ছাড়া
    মনুষ্যত্ব হারিয়েছে আজ
    মূল্যবোধ আজ মূল্যহীন ই
    এমনতরো লোলুপতা!
    বৃদ্ধা মায়েও পায়না ছাড়া!!
    হ্যাঁ ভগবান বলবো কি আর
    ধরিত্রী মা দু ফাঁক হও
    তোমার মাঝে লুকাই নিজে
    সীতার মত সকল নারী
    নিজের মরণ খুঁজুক নিজে
    পৃথিবী হোক নারী হীনা
    শূন্য হোক এই পৃথিবী!!

  • কবিতা

    দুর্গা

    দুর্গা
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী

     

     

    তোমার দুর্গা সোনার কাপড়
    আমার দুর্গা ভিখারিনী বেশে
    তোমার দুর্গা কোটি টাকা দাম
    আমার দুর্গা বন্যায় ভাসে।

     

    তোমার দুর্গা আনন্দ মুখর
    আমার দুর্গা চোখ জলে ভরে
    তোমার দুর্গা মনোহারী ভোগ
    আমার দুর্গা অনাহারে মরে।

     

    তোমার দুর্গা কম্পিটিশন
    দেশ,বিদেশের মেডেল পাবে
    আমার দুর্গা ভেবে হয় রান
    কি করে দুমুঠো চাল যোগা।

     

    তোমার দুর্গা আলো ঝলমল
    আমার দুর্গা লম্ফর আলো
    তোমার দুর্গা রূপ উজ্বল
    আমার দুর্গা কষ্টের কালো।

  • কবিতা

    আমরা নারী

    আমরা নারী
    -সুপ্রিয়া চক্রবর্ত্তী

     

     

    আমরা নারী,আমরা পারি,আমরা সব পারি
    আমরা লোড়ি,আমরা গড়ি, আমরা ভুবন ভরি
    আমরা হলাম বীরাঙ্গনা, মাতঙ্গিনি,ঝাঁসির রানী
    আমরা হলাম জননী আর আমরা ভুবন মোহিনী
    আমরা যেমন সোহিনী,তেমন অসুর দলনী
    আমরা হলাম ধরিত্রী মা,সুজলা,সুফলা,
    জননী
    আমরা হলাম শক্তি রূপিনি,আমরা স্নেহদায়িনি
    আমরা কন্যা,আমরা ভগিনী,আমরা চির
    মাতৃ রূপিনী
    কখনও আমরা শক্তি দায়িনি,কখনও শঙ্কা নাশিনী
    কখনও আমরা লাস্যময়ী,কখনও আমরা
    দয়াময়ী
    কখনও আমরা পালিকা,সেবিকা,কখনও
    আমরা প্রেমময়ী
    আমরা নারী,আমরা শক্তি,আমরা সর্বংসহা
    আমরা পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী,আমরা সংসার শোভা

You cannot copy content of this page