-
কবিতা- মনমোহিনী
মনমোহিনী
-সুবিনয় হালদারপুঞ্জিভূত ক্ষোভের লাভা গাদাগাদা
তুঁষে চাপা ধিকধিকিয়ে জ্বলছিল সে বুকে-,
নীল আকাশে তারা গুলো মিটিমিটি
চাঁদেরহাটে ভোগবিলাসে জ্যোৎস্না মেখে-
চুপিচুপি দিব্যি ছিলো স্বর্গ সুখে ;
আয়েশ করে দুষ্টু ছেলে ছলেবলে-
খাচ্ছিল পঞ্চ-ব্যঞ্জন বৃদ্ধাঙ্গুল চেটে !মনমোহিনী ছদ্মবেশী অমৃত কলস হাতে
বিলিয়ে দিলো সকল সুধা নৈরাজ্যের হাটে ;
রাহু কেতু জলের তোড়ে গেঁড়ি গেলা গিলে
উদ্ভ্রান্ত পোষ্য স্তাবক চাটুকার পঞ্চভূতে মিলে,
বিষিয়ে দিয়ে নিভিয়ে দিলো গোকুল অন্ধকারে !দাপিয়ে বেড়ায় হিংস্র প্রায় ভস্মাসুর শতশত
সদলবলে কসাই সেজে ভালোবাসে কত
সুযোগ বুঝে মারছে কোপ নিচ্ছে লুটে সর্বস্ব !আরো কতটা সময় ধরে থাকবি-রে সব নিশ্চুপ ;
আর কতটা গভীর তলে- কালো প্রহর কামড়ে খেলে
খুলবে তবেই সাঙ্গ প্রাণে দয়াদানের মৌন মুখ !চোখ চেয়ে সব অন্ধ সেজে থাকিসনে আর
সব বুঝে সব শুনে সবাই মিছে কেন সাথ ;
তাই চুপিচুপি শক্ত মনে চোয়াল চাপা কণ্ঠস্বর
সমবেত পদধ্বনি বজ্র মুষ্টি আওয়াজ কর । -
গল্প- একা’দশী তিথি
একা’দশী তিথি
-সুবিনয় হালদারচতুর্থ প্রহর শেষে ঊষালগ্নে উদ্ভাসিত হতে থাকে পৃথিবী।
নিশি সমাপন মুহূর্ত জানান দেয় পাখিদের সমবেত কিচিরমিচির ডাক আর আজানের আওয়াজ।
মা’ ষষ্ঠীর শঙ্খধ্বনিতে সকাল-সকাল তড়িঘড়ি বিছানা ছেড়ে তৈরী হয়ে নেয় একা’দশী, আজ তার আর্য্য-ভূমিতে সংস্কৃতি যজ্ঞের পৌরোহিত্য করতে হবে।
সেখানে তার পরিচিত বহু মানুষজন আসবে, নমোনমো দুগ্গাদুগ্গা করে আত্মপ্রত্যয়ে বেড়িয়ে পরে একা’দশী।সেখানেই সেদিন প্রথম দেখা- তিথি ; পঞ্চমীদির সাথে ছোটবোন দ্বিতির হাত ধরে এসেছিল ওখানে।
দিদি’ই তাকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেয়-, বাক্য বিনিময় হয় সামান্য কিছু- ব্যাস এইটুকু।
তারপর ধীরেধীরে দামোদরে জোয়ার আসে! কোটালে ভেসে যায় সবকিছু কিন্তু তিথি সেটা বোঝেনি কখনোই!
তবুও আসে, জানান দেয় সে আছে !
তিথির মেজ বোন অষ্টমী খুব সুন্দরী। মনে সংগোপনে লালিতপালিত কামিনীকাঞ্চন শোভিত যা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষীত !
আসাযাওয়া গভীর হতে গভীরতর হতে থাকে। দিন যায়- বছর ঘুরে বছর আসে আর যায়- ; উত্তর থেকে দক্ষিণায়ন অতিবাহিত হয় কত কিন্তু উত্তর মেলেনি আজো !বসন্তের পরন্ত বৈকালে ঝরাপাতায় ফাগুন হাওয়ায় মর্মরধ্বনির সাথে কোকিলের ডাক শুনে নেচেছিল মন !
চেতনা পুরে প্রেরণা’ এসে জাগিয়েছিল সাদা খামে হলুদ ছোঁয়ার অনুভূতি !
তড়িঘড়ি ছুটে গিয়েছিলো- এক মায়াবী আলোর উৎস সন্ধানে ;
তার’ই জন্যে সে অপেক্ষা করছিলো- অনেকটা সময় ধরে, রাস্তার পাশে গাছের তলায় এক যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে।
পথচলতি কত মানুষ- কত ব্যস্ততা- বাস গাড়ির হর্ণ এর বিকট আওয়াজ- দুষিত আবহাওয়া- সব কিছু উপেক্ষা করে !
সমস্ত বাধা অতিক্রম করে হন্তদন্ত হয়ে ঘামে-নেয়ে একসা শরীরে একা’দশী তিথির সামনে দাঁড়ালো- ;
অন্যমনস্ক তিথি যেন রূপকথার দেশে মায়াবী পরী,
কী বলবে- ও যেন নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিলো-না !সুন্দর পরিপাট্য বেশভূষায় বেশ লাগছে ।
একা’দশীকে এইভাবে বোকা স্ট্যাচুর মতো হাঁ-করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও উঠে দাঁড়িয়ে বললো- চলো- অনেক দেরি হয়ে গেছে ! বলে সটান রাস্তার ধার ধরে হাঁটতে থাকলো !
একা’দশী তখন ওর কাছে গিয়ে আলতো স্বরে বললো- তোমাকে-না আজ খুব সুন্দর লাগছে ।
ধ্যাৎ,মোটেই না- ; কী-যে বলো-না- আজকাল ; বলে- শরৎ মেঘের ওড়না উড়িয়ে একটু লাজুক হাসি হেসে এগিয়ে চললো-,
অগত্যা সে-ও ওর পিছু-পিছু হাঁটতে থাকলো !মোড়ের বাম দিক ঘুরে একটু এগিয়ে একটা অটোরিকশা রিজার্ভ করলো । ও কিছু জিগ্যেস করার আগেই সে বললো- ওঠো ;
একা’দশী আগে উঠে বসার পর সে তার একেবারে পাশে- গায়ে গা-ঠেকিয়ে গেটের দিকে বসলো ।অটোরিকশা চলতে থাকলো একা’দশীর নাজানা গন্তব্যে !
হাওয়ায় তিথির চুল গুলো ঠোঁট স্পর্শ করে উড়ে এসে পরছে একা’দশীর মুখে আর তিথির মেয়েলি গন্ধে তার নিশ্বাসে প্রশ্বাসে এক পারিজাতের নরম স্নিগ্ধতা ভরিয়ে দিচ্ছে !
তার শাড়ির আঁচলটা বারবার উড়ে এসে ওর মুখমণ্ডলটা ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে, ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীরে কেউ যেন একটা কাশফুল দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছে !তিথির ঘোরে আচ্ছন্ন একা’দশী শুধু মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতেই থাকে ! হাল্কা লাজুক হাসি আর চোখেমুখে উজ্জ্বল আভার উপস্থিতি ভরে উঠেছে তিথি ।
কোন কথা বলছেনা দেখে সে জিগ্যেস করতে যাবে- ঠিক সেই সময় তিথি বলে উঠলো- এই দাঁড়াও- দাঁড়াও এখানে ।নেমে পড়লো দুজনে । ভাড়াটা বের করার আগেই তিথি চালকের পারিশ্রমিক মিটিয়ে দিয়ে একা’দশীর দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় বললো- চলো- সামনের ওইখানে আমরা যাবো !
দেখলো দূরে একটা বড় বিল্ডিং আর তার গেটের বাইরে ইংরেজিতে লেখা- The Asylum .
-
কবিতা- ভেল্কিবাজি
ভেল্কিবাজি
–সুবিনয় হালদারমধ্যযুগের বর্বরতা হার মেনেছে ঘাড়
অশ্রুজলে ঘাট হয়েছে
সমস্বরে এবার তোল আওয়াজ,
শালতি চড়ে বালতি ভরো
গুল্তি ছুড়ে গিঁট্টি কষে দাবিয়ে রাখো
আব্রু নিয়ে খেলা করে পালিয়ে কেন গেলি ?
টপাটপ রোষানলে উল্কি-
ভেল্কিবাজির কল্কি রে ভাই
ভেল্কিবাজির কল্কি !আগুনের ফুলকি ওড়ে
ফুলকি ওড়ে- ওই-
অন্ধকারে কালের ঘরে ত্রাসের নাচন
রণ-রঙ্গে সাজছে মাতন
দুর্গন্ধে বাতাস কেন ভরলি ?
চারিদিকে ধিকধিকিয়ে জ্বলছে যত চুল্লী ;
ভেল্কিবাজির কল্কি রে ভাই
ভেল্কিবাজির কল্কি !দুল্কিচালে খিল্লি মারে অসভ্যতার পাল্কী
লকলকিয়ে জিভের লালা
টসটসিয়ে লোভের ক্ষুধা গলি-,
বুলবুলিদের মাঠের ফসল জবরদখল
নিত্য রাতে হাঁড়িকাঠে হচ্ছে কেবল বলি ;
ভেল্কিবাজির কল্কি রে ভাই
ভেল্কিবাজির কল্কি !সাত বেয়ারা সাত সমুদ্র মিলেমিশে এক
সবাই কেমন ঘুপটি মেরে সুপ্ত মনে
করছে রে ভাই বাস,
ভেল্কিবাজির গিল্লি গিলে
গুপ্তধনে আয়েশ করে দিব্যি আছেন স্যার ;
ঝুল্কি তালে তাল মিলিয়ে জাগছে এবার পল্লী
ভেল্কিবাজির কল্কি রে ভাই-
ভেল্কিবাজির কল্কি ! -
কবিতা- অভিমুখ
অভিমুখ
-সুবিনয় হালদারপাইন গাছে আইন ঝুলে চোখ বুজিয়ে দোলে
খবর হলো মিথ্যে কথা আনন্দে বর্তমান ভয়ে ;
সবাই কেমন ভীড় করে সব দেখছে সদলবলে !ফুসুরফাসুর গুজুরগুজুর নানান মুখে ঘোরে
ঠিক ভুল বুঝিনে বাপু পট্টি খুলে শক্ত তুমি হলে,
শ’কৌরব থাকতো বেঁচে গৌরবে দীর্ঘায়ু ধরে !তুমি ভাবছ কেউ বোঝেনা গুলিয়ে দিলেই হলো
ঘোলা জলে সাঁতার কাটবে ওরা আমি শুধুই খাবো ;
লড়িয়ে দিয়ে বিলিয়ে দেবো কিলিয়ে নেবো অন্য পথে
আহাম্মক মূর্খ যারা তাদের কাছে এটাই অনেক !সেই ছকে ছকবাজিটা চলছিলো বেশ বেগে
হঠাৎ করে শনিরদশা ব্রহ্ম রূপে প্রজা-পতি এসে
অভি-মুখটা ঘুরিয়ে দিলো চোখ পাকিয়ে রেগে !মায়ায় ভরা এসংসারে আমিও তো মানুষ
জ্বালিয়ে দিয়ে উড়িয়ে দেবো জালিয়াতির ফানুস ;
একটু আধটু ভুলভ্রান্তি হয়েই থাকে সবার
তা বলে কী ছেড়ে দেবো পুরানো অভ্যাস ?এই-না বলে আওয়াজ তুলে হাঁক দিলেন তিনি
সবার সেরা সবুজ ঘেরা আমার মাতৃভূমি । -
কবিতা- ঠোঁটকাটা
ঠোঁটকাটা
-সুবিনয় হালদারসব জিনিস দেখতে পাওয়া
সব জিনিস শুনতে পাওয়া
নিজেকে নিজে এক-বুক নদী কষ্টে হাবুডুবু খাওয়ার সামিল !
সেই সঙ্গে শত্রুর সংখ্যা অহেতুক বৃদ্ধিতে জীবন্ত আত্মাকে চক্রবূহ্যে ঘেরাটোপে আবদ্ধ করে,
নিজেকে কাঁটাতারে টুকরো-টুকরো ক্ষতবিক্ষত রক্তক্ষরণে ভাসানো !
বিশেষ করে যদি আপনি সব কিছু বুঝতে পারেন-
ধরে ফেলতে পারা- অনুভব করতে পারার বিলুপ্তপ্রায় শ্রেণীর অংশ হয়ে থাকেন,
তাহলে আপনার কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নেই-
এই বলে দিলুম ।
এরপরও যদি আপনি ঠোঁটকাটা হন
সবার সামনে সত্য বিবেককে মান্যতা দিয়ে অকপট ভাবে ভাব-ভালোবাসা দেখিয়ে কণ্ঠ চর্চা করেন-,
তাহলে জানবেন আপনার মহাপ্রস্থানের দিন আগত !
এর জন্য অবশ্যই আপনার জন্য একটা পুরস্কার জুটবে-
তা হলো- তিরস্কার কিংবা উপহাস !
সে আপনি মানুন আর নাই মানুন ।
তাই আগ-বাড়িয়ে প্রতিকূলগামী না হয়ে অনুকূল-গামী হয়ে মচ্ছবে সামিল হোন আর কৃষ্ণ ভজন করুন ;
দেখবেন মানসিক শান্তি পাবেন
“যে তৃষা জাগিলে তোমারে হারাবো সে তৃষা আমার জাগায়না,
যে ভালোবাসার তোমারে ভুলিবো সে ভালোবাসায় ভোলায়না “ -
কবিতা- বৈশিষ্ট্য
বৈশিষ্ট্য
-সুবিনয় হালদারজাতির সাথে জ্ঞাতি মিলে
খেলছে রঙের খেলা ;
ভূত ভবিষ্যৎ সব রসাতলে
ভিক্ষা করে দু-বেলা !বর্তমান যেন লেঙরে চলে
নবীন ক্ষেতে সরষে চাষ,
শিক্ষা ভাঙে যাঁতাকলে
কীটপতঙ্গের পৌষ মাস !চলছে দৌরাত্ম্য মিষ্টিমুখে জয়
সৃষ্টিসুখে উল্লাসে ভয়
বিকিয়ে গেলে ভালো ;
না-দিলে সব নিকিয়ে নেবে
দূতেরা কিলো-কিলো !কণ্ঠ খুললে বন্ধ হবে
ছন্দপতন সুর তাল লয়,
দ্বন্দ্ব মনে যাত্রা ভঙ্গ
জনস্রোতে নিশ্চয় !ভুল বুঝিয়ে আখের গোছান
তোমায় দিয়ে উচ্ছিষ্ট,
কলুরবলদ গাধা হয়ে ঘুরে যান
এটাই ওদের বৈশিষ্ট্য । -
গল্প- ওরা দুজনে
ওরা দুজনে
-সুবিনয় হালদারদেবা আর কান্তি বাল্য বন্ধু । একেবারে জোড়েরপায়রা । যেমন ডাকাবুকো তেমনি সাহস, পরিশ্রমীও বটে । দিন-খাটা দিন-আনা পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাই পড়াশোনার পাশাপাশি হাতখরচার পয়সা জোগাড় করতে দুজনেই বিভিন্ন সময়ে এর-ওর জনমজুরের কাজ করে দু-এক-পয়সা রোজগার করতো । তা থেকে মা-বাবার কাছে বেশীটা দিয়ে বাকিটা নিজেদের কাছে রাখতো । যে কাজটাতে তারা হাত দিতো একেবারে নিষ্ঠার সাথে শেষ করতো । এতটুকু ফাঁকি ছিলোনা তাতে । শিস বাজিয়ে গান করতে করতে ইয়ার্কির ছলে তারা কঠিন কাজকে খুব সহজই শেষ করে দম নিতো, মনে হতো যেন কঠোর পরিশ্রমের কাজ তাদের কাছে বাঁহাতের খেল্ । সে মাটি কাটা অথবা মাটি কোপানো হোক, মাঠে তোলা-ভাঙা, রোয়া, ধান কাটা, ঝাড়া, বওয়া কিংবা গাছে ওঠা- যেকোনো কাজই- এক কথায় জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ- সবেতেই একেবারে সিদ্ধহস্ত । মাঝেমাঝে অবসর সময়ে খেলার মাঠে আসতো-, গামছার খুুঁটে মুড়ি বেঁধে নিয়ে কাঁচা পিঁয়াজ আর লঙ্কা চিবোতে চিবোতে । তাতে হাত গলিয়ে ভাগ বসাতে আমরাও কসুর করতামনা । টিভিতে খেলা সিনেমা দেখার খুব ঝোঁক ছিলো । সেই সময় গ্রামে হাতে গোণা দু-একটা বাড়িতে এ্যান্টেনা যুক্ত টিভি ছিলো, তাও আবার সাদাকালো-, ব্যাটারিচালিত । ফুটবল ক্রিকেট খেলা হলে তো কথাই নেই-, সব কাজ ফেলে আগেভাগে বাড়িতে এসে হাজির । গল্প আড্ডা ইয়ার্কি ফাজলামি হতো প্রচুর, আর যেদিন তেমন কাজকর্ম থাকতো-না সেদিন খেলার মাঠে খেলতে হাজির হয়ে যেতো তারা । খু্ব ভালো হা-ডু-ডু খেলতো-, ভালো ব্যাক খেলতো । অসম্ভব শক্তি হওয়ায় কাদামাঠে তাদের টপকে বল নিয়ে গোল করা প্রায় অসম্ভব ছিলো । খোরোকালে মাঠে ধান উঠে গেলে তাদেরকেই আমরা ক্রিকেট খেলার পিচ করে দিতে বলতাম এবং তারা করেও দিতো খুব সুন্দর ভাবে ।
সেই সময় তখনো গ্রামে বৈদ্যুতিকের আলো আসেনি । বিনোদন বলতে শীতকালে মাঠে ষোল মি.মি.’র স্ক্রিন প্রোজেক্টরে ওঠা সিনেমা আর বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে গ্রামে-গ্রামে ভি.ডি.ও. ! যার বেশীরভাগই চলতো জেনারেটরে ।
এমনি একদিন সকালবেলা দেখি দুজনে ধানকাটার কাজ করছে রাস্তার ধারে চেয়ারম্যানদের জমিতে । আমাকে দেখে বললো- কই-রে-ভাই- কোথায় যাচ্ছিস্ ? শোন-না-এদিকে, একটা কথা বলি । আজ বৈকালের পর একজায়গায় যাবি ?
কোথায়-?
ভি.ডি.ও. দেখতে হাটখোলায়- !
ওরে- বাব্বা- ; পাগল নাকি ?
সে তো যমের দুয়ার- ; তাও আবার সন্ধ্যেবেলায়, ওখানে আমি মরে গেলেও যাবোনা ! তোরা যাচ্ছিস্ যা তবে আমি বলি কী- যাসনা ভাই !হাটখোলা জায়গাটা আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ঘণ্টাখানেকের বেশী পায়ে হাঁটা পথ । দুটো গ্রাম টপকে মেঠো রাস্তা ধরে যেতে হবে । রাস্তার দু-ধারে শুধু ধান-জলা আর আলের ধারে-ধারে বাবলাগাছ, খেজুর গাছ । কোথাও আবার দূরে তালগাছের সারি । সে গুলো পেরিয়ে মাঝে একটা খুব বড় ঘন বাঁশ বন পরবে, তার মধ্যে দিয়ে পথ । দিনের বেলায় আমি কয়েকবার সাইকেল নিয়ে সিনিয়র দাদাদের সাথে গিয়েছি ক্রিকেট খেলতে । প্রথমবারের অভিজ্ঞতা- উফ্ কী-আর বলবো- ; সে যেন এক ভয়ানক ব্যাপার ! বাঁশ বন শুরু হওয়ার বেশ কিছুটা আগে আলি আর কেষ্টদা বললো- ভাই, সাইকেল থামা । নেমে পর । একটু হেঁটে হেঁটে যাই চল্ । অনেকক্ষণ হলো সাইকেল চালিয়ে এসেছি-, কোমর’টা একেবারে ধরে গেছে ; একটু ছাড়িয়ে নেওয়া যাক্ ! সবাই কিন্তু পাশাপাশি একেবারে সারিবদ্ধভাবে যাবো- যাতে করে প্রত্যেকে একে অপরের সংস্পর্শে থাকি আর দেখতেও ভালো লাগবে । কী বলিস ভাই ? আমি বললাম- সে ঠিক আছে- কিন্তু কতক্ষণ- ? ওরা বললো- এই মিনিট দশ-কুড়ি-! ভাই- এই-ভাই- রাগ করিসনা, সবার- ভালোর জন্য বলছি ! সাইকেল থাকতে এ্যাতোক্ষন হাঁটবো-? আমি বললাম, কেন- ? কীসের জন্যে বলছো জানিনা কিন্তু– ; আর কিন্তু করিসনা ভাই- যেমনটা বললো- সে রকম সব এগোতে থাক্- গোঁসাই’খুড়ো, ইন্দ্রদা একটু যেন কেমন সুরে বললো ! মনে যেন একটা খটকা লাগলো ! সামান্য কিছুক্ষণ উদাস মনে মুখটা গোমড়া করে সবার সাথে হেঁটে চলেছি, চারপাশে ডাঙা জমি আর বিভিন্ন গাছপালায় ভরা ! একটু পরে একটা জোড়া বট-অশ্বত্থ গাছে মোড়া ভাঙা মন্দির তলা, বেশ বড় এলাকা জুড়ে, তার পাশ থেকে রাস্তা’টা চলে গেছে । কেমন যেন একটা ছমছমে ভাব ! চলতে-চলতে ডানপাশে দেখি বেশ বড়-ধরনে একটা পুকুর, তার বেশীরভাগই কচুরিপানাতে ভরা । পুকুরের রাস্তার দিকের অংশে পুরানো শানবাঁধানো ঘাটের ভগ্নাবশেষ এখনো অবশিষ্ট রয়ে গেছে ! মনে হলো যেন বহুপুরোনো কোনো জমিদারদের সময়কার । চারিদিকে আম জাম কাঁঠাল খিড়িসগাছে ভরা জঙ্গলের ফাঁক থেকে আবছা চোখে পরে একটা বড় বাড়ির ভাঙাচোরা অংশ, এর ঠিক পরেই বাঁদিকে রাস্তা ঘুরে গিয়ে দেখি একেবারে অন্ধকার- শুধু বাঁশগাছ আর বাঁশগাছ-! এতোটাই ঘন আর দীর্ঘ যে সূর্যের আলোও ঠিকঠাক প্রবেশ করেনা ! একটু আগে হেঁটে আসা নিয়ে কথাবার্তা এবার সব যেন জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল ! নন্দ বললো- কী-রে- কেমন লাগছে ? আমি’তো একেবারে ভয়ে কাঁটা ; আমার গায়ের লোমকূপ গুলো সব খাড়া হয়ে উঠেছে ! মুখে কে যেন কুলুপ এঁটে দিয়েছে ! সকাল নটা দশটায় যদি এই অবস্থা হয় তাহলে— আমি ভাবতেই পারছিনা ! এমন সময় সামান্য ঠাণ্ডা হাওয়া শরীর স্পর্শ করতে না করতেই দেখি চারিদিকে কড়মড় – মড়মড় শব্দ আর তার সাথে-সাথে ডাকপাখি, বাদুর, বক ও অন্যান্য পাখিদের সমবেত কলরব আর ডানা ঝাপটানো- যেন আভাস দেয় একটা মায়াবী ভয়ার্ত পরিবেশ ! কেষ্ট’দা বললো- বুঝলি এবার কেন হেঁটে যাচ্ছি ? ওই বাঁশ বনের রাস্তা পার হয়ে সাইকেলে চেপে যখন হাটখোলা গ্রামে প্রবেশ করি তখন আমাদের খেলা শুরু হওয়ার জন্য মাইকে ডাকাডাকি চলছে ।
এমন এক জায়গায় ওরা দুজনে নাকি সন্ধ্যার পর ভি.ডি.ও. দেখতে যাবে- ; কল্পনা করা যায় ! কথামত যথারীতি সন্ধ্যার পর দেবা আর কান্তি হাটখোলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো- বারবার নিষেধ করা স্বত্ত্বেও ! প্রথম গ্রামের মাঝামাঝি এসে একটা দোকানে হুড়ুমভাজা কিনে চিবোতে চিবোতে আবার হাঁটা লাগালো । দ্বিতীয় গ্রামের একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে একটু বসে চা বিস্কুট খেতে-খেতে গল্পে-গল্পে ওরা যে হাটখোলায় ভি.ডি.ও. দেখতে যাচ্ছে যেইনা বলেছে- ; ওমনি ওখানে উপস্থিত দু-চারজন মানুষ আঁৎকে উঠলো ! সবাই অবাক হয়ে বলে- বলো-কী-তোমরা ? বয়স্ক দোকানদার বললো- দ্যাখো ছেলে বাড়ি ফিরে যাও ; তোমাদের ভালোর জন্যেই বলছি- । দেখুন কাকা, আমরা দুজনে যখন যেটা করবো ভাবি তখন সেটা করেই ছাড়ি, তোমার কত হলো বলো ? দাম মিটিয়ে ওরা দুজনে যখন উঠে দাঁড়ালো তখন চা দোকানের রেডিওতে স্থানীয় সংবাদ শেষ হয়ে “চাষী ভাইদের বলছি” আসর শুরু হয়েছে অর্থাৎ আটটা শোয়া’আটা হবে । চা খেয়ে একটু চাঙ্গা হয়ে ওরা দুজনে পুনরায় হাঁটা শুরু করলো । জনপ্রাণী-হীন মেঠো রাস্তায় ওরা শুধু দুজন হেঁটে চলেছে ! দূরের তালগাছ গুলো অন্ধকারে রণপা’র মতো দাঁড়িয়ে এক একটা যমরাজ-বর্গ এবং বাদায় কিছু কাটা কিছু শুয়ে পরা দাঁড়িয়ে থাকা ধানগাছ সব জনসাধারণ আর আলের ধারে-ধারে বাবলাগাছ খেজুর গাছ গুলো যেন সব যমদূতদের পর্যায়ক্রমিক শ্রেণী ! হাঁটতে হাঁটতে ভাঙা মন্দিরতলার কাছে আসতেই ওরা নাকি শুনতে পেল কারা যেন কথাবার্তা বলতে বলতে চলে যাচ্ছে ! ওরা ভাবলো ওদের মতো অন্য কেউ হয়তো ভি.ডি.ও. দেখতে যাচ্ছে ! তারপর যখন ওই পুকুরটার কাছে এলো তখন ওদের মনে হলো শানের ঘাট হতে কেউ বা কারা যেন বাগানের ভিতর পড়ো বাড়িটার দিকে চলাফেরা করছে ! ওরা ভাবলো নেশাখোররা কেউ হবে হয়তো ! তারপর সেই বাঁশ বন- যেখানে পৌঁছে ওরা আর পথ দেখতে পাচ্ছেনা ! তবুও ওরা এক-পা দু-পা অনুমান করে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতে থাকলো শিস বাজিয়ে গান করতে করতে ! কিছুক্ষণ এইভাবে চলার পর হঠাৎ ওদের মনে হলো এইরে সেই ভাঙা মন্দিরতলাতে আবার এসে গেছি- ; এটা কিরকম হলো ? এইসব সাতপাঁচ চিন্তা করছে এমন সময় কান্তি দেখে ভাঙা মন্দির-তলা থেকে একজন বেড়িয়ে রাস্তায় উঠছে ! দেবার হাতটা ধরে বললো- চল্ বন্ধু, ওই লোকটার পিছুপিছু যাই তাহলে মনে হয় ঠিক রাস্তা পাবো ! সামনের মূর্তিটা যখন শানের ঘাটের কাছে তখন ভিতরের ওই পোড়ো বাড়ি হতে আরো একজন বেড়িয়ে এসে তার সাথে যোগ দিলো ; তারপর ওরা দুজনে এগিয়ে চললো বাঁশবনের রাস্তায় হাটখোলার দিকে । ওরাও দুজনে যথারীতি ওদেরকে অনুসরণ করতে থাকলো, দুজনের থেকে দুজনার দূরত্ব মেরেকেটে ন’দশ মিটার হবে কিন্তু এতোটাই অন্ধকারের ঘনত্ব যে কেউ কাউকে ঠিকমতো দেখতেই পাচ্ছেনা ! কান্তি গলাটা একটু খেঁকরে নিয়ে বললো- ও-দাদা, একটু দাঁড়ান-না, কোনো উত্তর নেই ! তখন দেবা শিস দিয়ে একটা টোন্ করলো তার সাথে-সাথেই সামনে হতে ঠিক একই টোনে প্রতুত্তোর ভেসে এলো ! কান্তি তখন শিস দিয়ে বলার চেষ্টা করলো- ভি.ডি.ও. দেখতে যাচ্ছেন ? শিসের মাধ্যমে উত্তর এলো- হ্যাঁ ! বেশ কিছুক্ষণ এইভাবে যাবার পর হটাৎ সামনের ওই দুজনকে এরা আর ঠাহর করতে পারেনা ! আশ্চর্য- ; দেবা বললো- যা অন্ধকার ঘোড়ার ডিম দেখতে পাবি ? যেমন যাচ্ছি তেমন চলতে থাক্ ! ওইভাবে বেশ অনেকক্ষণ চলার পর দেখে ওরা দুজনে একটা বাদা বনের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ! অনেক দূরে লাইটের একটা আভা খুব ক্ষীণ দেখা যাচ্ছে কিন্তু ওখানে যাবে কিভাবে ? অগত্যা আবার পিছনের দিকে হাঁটা লাগালো ! এরকম করে বাঁশবনটা প্রায় চড়কি-পাক খেলো ঘন্টার পর ঘণ্টা ! ওদেরই অজান্তে ওরা অন্ধকারে হাতরাতে হাতরাতে কখন যে বাঁশবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছে টেরও পায়নি । গ্রামের একজন লোক ফাঁকের দিকে লন্ঠন হাতে বের হয়েছিলো প্রাকৃতিক কর্ম সারতে হঠাৎ ওরা দুজন দেখতে পায় । তখন ওদের দুজনকে দেখে তো সেই লোকটার আত্মারাম খাঁচা ! ওরা জিগ্যেস করলো দাদা এখানে ভি.ডি.ও. টা কোথায় হচ্ছে ? লোকটা তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো- তোমরা কারা- ; কোথা থেকে আসছো ? ভি.ডি.ও. তো মনে হয় প্রায় শেষের পথে ! এখন তো ভোর হতে চললো । ওরা দুজনে সব ঘটনা সবিস্তারে বললো ওই লোকটাকে । শুনে তো লোকটা অবাক ; তারপর বললো- তোমরা আজ খুব জোর বেঁচে গেছো, মনে হয় তোমাদের রাস খুব ভারী, সাহসও প্রচণ্ড ! তা-নাহলে কেউ এই রাস্তায় রাতে আসে ?
-
ভৌতিক গল্প- জন্মেনজয়ের শ্মশান জাগানো
জন্মেনজয়ের শ্মশান জাগানো
-সুবিনয় হালদারছোটবেলা থেকে বিনয় মেধাবী ছেলে হিসাবে পরিচিত। সাহসী বুদ্ধিমানও বটে। সবকিছু সে যুক্তি দিয়ে বিচার করে তারপর যেটা ঠিক বলে মনে হতো সেটাই করত। এরজন্য তাকে অবশ্য পরবর্তী জীবনে অনেক মূল্য চোকাতে হয়। বিধিবাম, তার হাতে তো সবকিছু ছিলোনা! তাই সে আজো অপাংক্তেয় থেকে গেছে তথাকথিত সমাজ থেকে-, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়পরিজন থেকে কারন অন্যেরা যেখানে রকেট গতিতে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে সেখানে সে তার মূল্যবোধ আঁকড়ে যেই তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে গেছে।
নদী লাগোয়া চন্দনপুর গ্রাম ও তার একেবারেই গাঘেঁষা কুন্দনপুর গ্রাম। দুই গ্রামকে প্রধান খাল হতে ভাগ হয়ে যাওয়া পতিত-খাল বিভক্ত করেছে। নোনাজল বয়ে যাওয়ায় খালে মাছ চিংড়ি কাঙড়া ভালোই হতো। ফলে এলাকার প্রচুর মানুষ পাটা মেরে অর্থাৎ বাঁধ দিয়ে, জাল ফেলে, ছিপ ফেলে মাছ চিংড়ি কাঙড়া ধরত সকাল বিকাল। চন্দনপুর আর কুন্দনপুর গ্রামের একেবারে পূর্বপ্রান্তের শেষে যেখানে পতিত-খাল বাঁক নিয়ে বাজারের দিকে চলে গেছে সেখানে একটা শ্মশান আছে। পতিত-খালের পাড় ধরে একটা মেঠো রাস্তা কুন্দনপুর বাজারের ১-নং. গেট হতে চন্দনপুর গ্রামে ঢুকেছে- শ্মশানের ওপর দিয়ে, মুসলিম পাড়া হয়ে আলিদের বাড়ির সামনে কবরস্থানের পাশদিয়ে ঠাকুর-তলায়। রাস্তার একধারে বাঁশবন, বড়বড় খিড়িসগাছ, শেওড়াগাছ, কৎবেল গাছ ও অন্যান্য গাছের ঘন জঙ্গল ঝুঁকে পরেছে খালের দিকে আর তার মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা শুনশান মেঠো রাস্তা। খোরোকালে অর্থাৎ শুকনো মরশুমে গ্রামের অনেক লোকজন দিনের বেলা ওই রাস্তা ব্যবহার করতো। মেঠো রাস্তার ধারে অর্থাৎ শ্মশান যেখানে শুরু হচ্ছে সেখানে একটা ঘর, না ঠিক ঘর-না মন্দির বলাই শ্রেয়! তার ভিতরে মুখ বন্ধকরা তিন চারটে হাঁড়ি! বিনয় একবার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে সেটা দেখেছে এবং গল্পে-গল্পে শুনেছে যে ওই হাঁড়ির কোনো একটার মধ্যে নাকি সুপারি আছে, আর যে ওটাকে ঘোর অমাবস্যাতিথির রাতে হাঁড়ির মুখের ঢাকা সরিয়ে নিয়ে আসবে সে নাকি বিশাল ধনীব্যক্তি হয়ে যাবে! তার অধীনে ভূতের রাজা থাকবে! মন্দিরের পিছনে বৃহৎ এলাকা জুড়ে একটা সুবিশাল বটগাছ। বটগাছের ঝুড়ি নেমে অনেক গুলো মোটা কাণ্ড চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, দেখলে মনে হবে- যেন বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটা অংশ। খালের এপারে আর-একটা রাস্তা চন্দনপুর গ্রামের ভিতর হতে ঠাকুর-তলা হয়ে কুন্দনপুর বাজারের ঠিক মাঝে গিয়ে যুক্ত হয়েছে। এই রাস্তার অনতিদূরে মাঠের মাঝখানে অর্থাৎ পতিত-খালের এপারে শ্মশান হতে খুবই অল্প দূরত্বে একটা পোতা ছিলো। উঁচু একটা মাটির ঢিবি। ঢিবিটা বেশ কয়েক মিটার জায়গা জুড়ে। এখানে কোনো নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে মারা গেলে পুঁতে দেওয়া হতো। বড়বড় শিমূল গাছ, নিমগাছ, কদমগাছ, অশ্বত্থ গাছে ভরে ছিলো এই পোতা। গ্রামের গরু ছাগলও মারা গেলে এই পোতার একধারে পুঁতে দিতো গ্রামবাসীরা। লোকে বলাবলি করতো যে গভীর রাতে নাকি এই পোতা হতে একটা আলো ওই শ্মশানে যাতায়াত করে! ভরসন্ধ্যাতেও অর্থাৎ আটটা নটার সময় কয়েকজন গ্রামবাসী নাকি ওই আলো দেখেছে! অনেকে আবার বলে সন্ধ্যার পর প্রায়শই মানুষের মতো কে যেন আওয়াজ করে ডাকে! ঠাকুরতলা থেকে তাস, ক্যারাম খেলে রাতে যখন একা-একা বাড়ি ফিরত বিনয় তখন কয়েকবার সে ওই ডাক শুনেছে! সন্ধ্যার পর তাই ওই রাস্তায় গ্রামবাসীরা খুব একটা হাঁটে-না! বলতে গেলে একদমই কেউ যাতায়াত করতো না । কুন্দনপুর গ্রামে আর বাজারে বৈদ্যুতিকের আলো থাকলেও চন্দনপুর গ্রামে ঢোকার দুটো রাস্তাতে এবং চন্দনপুর গ্রামে কিন্তু তখনও কোনো বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা ছিলোনা! কেরোসিন তেলের হ্যারিকেন লন্ঠন’ই ভরসা, সঙ্গে দু-ব্যাটারি, তিন-ব্যাটারির EVEREADY টর্চ লাইট।
বিনয় যখন জুনিয়র হাই স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে সবে হাই স্কুলে পা রেখেছে, একদিন সন্ধ্যার পর ঠাকুর-তলার খেলার মাঠে বল খেলার পরিসমাপ্তির পর বন্ধুবান্ধবদের সাথে বসে গল্প আড্ডা মারছে এমন সময় কথায় কথায় ডাকু বলল- কুন্দনপুরে শ্মশানের রাস্তা দিয়ে রাতে তেমন কেউ আসা-যাওয়া করেনা ! তোদের মধ্যে কেউ ওই রাস্তা দিয়ে গিয়ে শ্মশানের হাঁড়ি থেকে সুপারি আনতে পারবি ? খুব তো বড় বড় বিঞ্জান- যুক্তিবাদী- সাহসের কথা বলিস! দেখি তোদের কেমন দম! বিনয় বলল- তুই বলে দে কোন্ হাঁড়িটার মধ্যে আছে-, আমি নিয়ে আসছি ! ব্যাস-, সবাই চুপ! কারোর মুখে আর সাড়া নেই! ঠিক তখনই বিবেক স্বরূপ তরুণ বলল- এই না- না- একদম না, ওসব করার দরকার নেই! কোথায় হিতে বিপরীত হয়ে যাবে- এসব আলোচনা ছাড়। ডাকু একটু গ্যাঁ গুঁ করে বলল- আচ্ছা ওটা থাক্ তবে তুই আমার এই গামছাটা শ্মশানে ফেলে আসতে পারবি ? তাহলে জানবো তোর কলজের জোর আছে ! বিনয় বলল- যদি পারি তবে তুই সবাইকে রসগোল্লা খাওয়াবি ? ডাকু বলল- হ্যাঁ খাওয়াবো। থমথমে গুমোট আবহাওয়ায় হঠাৎ মাঠে একটা ঠাণ্ডা দমকা হাওয়া ধুলোবালি উড়িয়ে বয়ে গেলো! গুনো বলল- দ্যাখ, তোদের কথা ওখানে পৌঁছে গেছে! আমি ভাই এসবের মধ্যে নেই! ভাণ্ডু তোতলাতে তোতলাতে বলল- বি-বি- বিনয়, বা-বা-বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কি-কি-কিন্তু! বিনয় উঠে দাঁড়িয়ে বলল- তু-তু-তুই থাম্ ? ঠিক আছে, আমি একটু ঘর থেকে ঘুরে আসছি, তোরা কেউ যাবিনা এখানেই থাক্। বলে সটান ঘরে গিয়ে হাত-পা-মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেস হয়ে নিলো। তারপর এক কাপ চা খেয়ে একটা দু-ব্যাটারির টর্চ পকেটে পুরে তৈরী হয়ে সোজা ঠাকুরতলাতে হাজির। তখন সবাই সেখানে উল্টোপাল্টা কথা বলাবলি করছে। বিনয় এসে তাদের সাথে যোগ দিয়ে ডাকুকে বলল- দে গামছাটা দে। মিনমিনে সঙ্গে-সঙ্গে বত্রিশপাটি বের করে বলে উঠল- কীরে বিনয়, ঘরে থেকে তাবিজ-ফাবিজ নিয়ে এলি না-কি ? তা বেশ! তাহলে কী ভাবলি মানে আদৌ চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছিস তো বন্ধু ? না-কি- শুধুই লম্বা-চওড়া কথা বলে বাজিমাত করে দিতে চাইছিস! সবাই তখন এ-ওর মুখ দেখাদেখি করে বিনয়ের দিকে তাকাচ্ছে।
ডাকুর কাছ থেকে টাকলু মামা গামছাটা নিয়ে একটু তিরস্কার একটু অবহেলার হাসি হেসে বিনয়ের হাতে গামছাটা দিলো আর বলল- দেখিস ভাগ্না সাবধান- Best of Luck। ততক্ষণে এই ব্যাপারটা অনেকেই জেনে গেছে। বিনয় গামছা নিয়ে ঠাকুরের দিকে মুখ করে একটা প্রণাম ঠুকে রওনা দিলো। ঠাকুর ঘরের দালানের ঘড়িতে তখন রাত আটটার ঘণ্টা বাজছে।
ঘন-অন্ধকারে চারদিক ঢেকে গেছে। শুধু দূরে গাছপালা ঝোপঝাড়ের ফাঁক থেকে দু-একটা বাড়ির লণ্ঠনের ক্ষীণ আলো চোখে পড়ছে! ঝিঁঝিঁপোকার ডাক আর মাঝে-মাঝে জোনাকির আলো এলাকার চারপাশ মায়াবী করে তুলেছে। বিনয় আলিদের কবরস্থানের কাছাকাছি যখন দূরে থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে এলো আর সঙ্গে সঙ্গে আলিদের পাড়ার কুকুরদের সদলবলে চিৎকার। কবরস্থান অতিক্রম করে বিনয় হেঁটে চলেছে সামনের দিকে। আজিজদের ঘর টপকে বিনয় পতিত খালের মেঠো রাস্তায় উঠতেই গামছাটা বাম হাতে তাল করে মুঠো করে নিলো আর ডান হাতটা পকেটের টর্চ লাইটে রেখে এগোতে থাকলো। বাঁশ বনের কাছাকাছি আসতে বিনয়ের গা-টা যেন ছ্যাঁক করে উঠল! শীতল হাওয়ার স্পর্শে সমস্ত শরীরের লোমকূপ কাঁটা মেরে শিহরণ দেওয়ার সাথে-সাথেই হঠাৎ সামনে থেকে একটা কালো ছায়া রাস্তা পার হয়ে দ্রুতবেগে বিচ্ছিরী শব্দ করে চলে গেলো! বিনয় থমকে দাঁড়ালো। তখনি সে যেন টের পেলো তার আশেপাশে অন্য কিছুর উপস্থিতি! বাঁশ গাছের হেল-দোল, শেওড়াগাছ খিড়িসগাছ কৎবেল গাছে দৌড়ঝাঁপ ! ভয় একটু পেল ঠিকই কিন্তু সে দমবার পাত্র নয়। নিজেকে নিজে বোঝাতে লাগলো মনেমনে। এইসব সাতপাঁচ ভাবছে আর খুব ধীরগতিতে একটু একটু এগিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় বিনয়ের মনে হলো কেউ যেন উল্টো দিক হতে হেঁটে আসছে তার দিকে! বিনয় ভাবল যাইহোক একজনকে অন্ততপক্ষে দেখতে পাওয়া গেলো। শোনা কথা বেশীরভাগই যে ভুল হয়, আজ সে তার চাক্ষুষ প্রমান। বিনয়ের মনের জোর একটু বেড়ে গেলো। আবছা অন্ধকারে এগিয়ে চলা বিনয় কিছুতেই বুঝতে পারছেনা মূর্তিটা আদৌ আসছে না দাঁড়িয়ে আছে! মনে খটকা লাগলো! একবার ভাবল টর্চ লাইটটা বের করে মারবে! পরক্ষণে মনে হলো না- থাক্। এরই মধ্যে মূর্তিটা কাছাকাছি চলে এসেছে কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছেনা আসলে এটা কে ? এমনকি মূর্তিটার সাথে যখন তার পাশ কাটাকাটি হচ্ছে তখনো না! প্রবল ইচ্ছেতে জিগ্যেস করতে গেল- কে সৌগৎ চাচা ? কিন্তু বিনয়ের গলা থেকে কোনো আওয়াজই বের হলোনা, আশ্চর্য! পিছনে তাকানো বারণ এটা সে ঠাকুরমশাই এর কাছে শুনেছে। তাই সে সম্মুখ পানে চেয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে কী ছিলো ওটা! প্রকৃত মানুষ নাকি শুধুই ছায়া! খানিকক্ষণ পর আবার ধীর-স্থির মাথা ঠাণ্ডা রেখে এগিয়ে চলল বিনয়। শ্মশানের কাছাকাছি সবে সে এসেছে এমন সময় বিনয় দেখল- যেন কেউ খালে জাল ফেলছে! অন্ধকারে ভালো করে দেখা যাচ্ছেনা ঠিকই কিন্তু জাল ফেলার শব্দটা সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে! আরো কাছে আসতে সে খালের নীচে একটা মানুষের অবয়ব দেখতে পেল! না দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসতেই ডানহাতি শ্মশান আর সেই মন্দির। বিনয় চকিতে একটিবার তাকিয়ে বাম হাতে তাল করা সেই গামছাটা খালের দিকে হাল্কা করে ছুঁড়ে দিলো। সে দেখল খালের ধারে বড়বড় উলু-ঘাসে সেটা আটকে গেছে, জলে পরেনি। ঠিক তখনি শুনতে পেল সেই আওয়াজ- আয়- আয়-! বিনয়ের সাড়া শরীর ঝাঙ্কার মেরে উঠলো। প্রচণ্ড ভয়ে ঘামতে শুরু করেছে সে। কান মাথা ঝাঁ-ঝাঁ করছে। তার মনে হচ্ছে এক্ষুনি এক দৌড়ে কুন্দনপুর বাজারে পালাবে! পরক্ষণে মনে হলো- কী সব ভুলভাল ভাবছে- শুনছে- সে! একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে পুনরায় ওই আওয়াজটা শোনার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সে আওয়াজটা পরিষ্কার আবার শুনতে পেলো! এবার তার মনে হলো কেউ যেন মন্দিরের ভিতর হতে আওয়াজ করছে! একবার সে ভাবল- গিয়ে দেখবে আসলে ব্যাপারটা কী! কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো না থাক্! দোটানায় সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। কিন্তু তার মতো একজন যুক্তিবাদী ছেলে এতো কাছে এসে এভাবে হেরে যাবে ? তাই ভয়ে ভয়ে অদম্য সাহসের ওপর ভর করে সে মন্দিরের দিকে গুটি-গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে থাকলো আর পকেটের টর্চ লাইটটা বের করে ডান হাতে শক্ত করে বাগিয়ে ধরল। মন্দিরের যতো কাছে সে যাচ্ছে ততোই স্পষ্ট হতে লাগলো আওয়াজ! গুটি-গুটি পায়ে সে মন্দিরের সিঁড়িতে উঠে খুব আস্তে দরজার একটা পাল্লা ঠেলে যেই টর্চ লাইটটা জ্বেলেছে অমনি একজন জমকালো ভুঁড়িওয়ালা উলঙ্গ মূর্তি তার দিকে বড়বড় নাটানাটা চোখ করে কটমট করে তাকিয়ে আছে! আলোর ছটা তার চোখেমুখে পরতে বিনয়ের তো আত্মারাম খাঁচা! একি ? এতো আমাদের কুন্দনপুরের জন্মেনজয় মামা! বড়বড় চুল দাড়ি আর সাদা ধুতি পাঞ্জাবী পরে ঘুরে বেড়ায়। বিয়েথা করেনি। লোকে অনেকে অনেক কথা বলাবলি করতো তাকে নিয়ে! কিন্তু এখানে এভাবে তাকে দেখবে, বিনয় কল্পনাও করতে পারেনি! হয়তো তিনি-ও তাই! সেই মুহূর্তে কিছু বুঝে ওঠার আগে বিনয় আমতাআমতা করে বলে উঠলো- জন্মেনজয় মামা-, তুমি-? উল্টো দিক হতে গম্ভীর কন্ঠে উত্তর এলো-, হ্যাঁ- আমি-। তুই এখানে কী করছিস ? বলতে বলতে এক কোনে হেঁটে এগিয়ে গিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখা ধুতি পাঞ্জাবী পরছে-, বিনয় দেখল এটাই সুযোগে। ভাবা যা কাজ তা- সবে হাঁড়ির ঢাকা সরাতে যাবে হঠাৎ তার হাতটা কে যেন চেপে ধরল! বুকটা ধক্ করে উঠল- ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে জন্মেনজয় মামা। বিনয়কে টেনে এনে মন্দিরের সিঁড়িতে বসলো তারপর বলতে লাগলো- বিনয়, ওই যে চারটে হাঁড়ি দেখলি, এর কোনো একটার মধ্যে সুপারি আছে কিন্তু সেটা আমিও জানিনা। আজ আমি দশটা বছর ধরে সাধনা করছি, শুধু কোন্ হাঁড়িটার মধ্যে সেই সুপারিটা আছে সেটা জানবার জন্য! কারন যদি আমি সুপারি বিহীন হাঁড়ির ঢাকা খুলে ফেলি আমার মৃত্যু অবধারিত! তাই আমি প্রতি রাতে শ্মশান জাগাই! ভূত প্রেতদের সর্দারকে তুষ্ট করতে! আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে এভাবে তোর মতো দেখেনি ভাগ্না। সত্যি তোর বুকেরপাটা আছে। তুই আমাকে কথাদে ভাগ্না-, এই তোর হাত ধরে আমি বলছি- তুই যে আজ আমাকে এভাবে দেখলি কাউকে বলবিনা-। বিনয় বলল- ঠিক আছে বোলব-না। দেখ্ ভাগ্না, তু্ই কিন্তু এই অমাবস্যার রাতে শ্মশান মন্দিরে দাঁড়িয়ে কথা দিলি। বিনয় বলল- আচ্ছা জন্মেনজয় মামা, এই যে সবাই বলে ভূত প্রেত ; আদৌ কী এগুলো বাস্তবে আছে ? জন্মেনজয় মামা শান্ত নম্র স্বরে বলল- আছে আবার নেই-ও! পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে যে জয় করতে পারবে তার কাছে সবই তুচ্ছ। আজ আর সাধনা হবেনা। তুই এগিয়ে চল্ আমি সব গোছগাছ করে পরে আসছি।
বিনয় যুুদ্ধ জয়ের মেজাজে আস্তে আস্তে বেড়িয়ে কুন্দনপুর ১-নং. গেট হয়ে বাজারে এসে পৌঁছল যখন তখন রাত বেশ অনেকটা হয়ে গেছে। বিনয়ের ফিরতে অনেক দেরি হচ্ছে দেখে ডাকু বিবেক ভাণ্ডু স্বরূপ কুন্দনপুর বাজারের কাছাকাছি দলবেঁধে লাইট হাতে এগিয়ে এসেছে। সামনাসামনি হতেই সবাই একটা স্বস্তির হাসি হেসে ডাকু বলল- তুই একদম বিচ্চু ঢ্যামনা ছেলে। এখানে বসে সময় কাটিয়ে আমাদেরকে বোঝাচ্ছিস তুই শ্মশান ঘুরে গামছা ফেলে তর্কে জিতে যাবি! ওসব রসগোল্লা ফসুগোল্লা হবেনা এই বলে দিলুম। তখন ভাণ্ডু তোতলাতে তোতলাতে জিগ্যেস করলো- কী-কী-কী-রে বিনয়, ভূ-ভূ-ভূ- ভূত দে-খেছিস ?
-
কবিতা- সত্যা
সত্যা
সুবিনয় হালদারএক বাহুতে খড়গ তোমার
অন্য দিকে সান্ত্বনা,
রুদ্র অভয় ভঙ্গিমা ;
জুজু দেখিয়ে অজুহাতে
করছ তুমি হরিলুঠের বন্দনা !তোমার প্রজা হদ্দ বোকা
খাচ্ছে ধোঁকা জন্মকাল ;
অসুর কূলের পোয়াবারো
তুমিই নাকি তাদের ঢাল !দু-চোখেতে গঙ্গা দেখি
এক বুকেতে জ্বালা,
অন্য মুখের শব্দ গুলো
নিঃশব্দে মারছে চাবুক দুবেলা !মুণ্ডমালার মুণ্ড-গুলো খিলখিলিয়ে হাসে
সমস্বরে বলছে ওরা হৃদয়-পুরে আছে ;
খাদ্য যখন রক্ত হয় ভক্তরাই ঝরা-
সত্যা শুধুই বলবে হেসে তোরাই ঘাটের মরা !যখন মনের ভাবনা গুলো
জুড়তে গিয়ে অকূল ভবের কলা,
চিন্তা করে পাইনা ভেবে
এই জীবনে যোগবিয়োগের খেলা !দশদিকেতে উঠছে আওয়াজ
সত্যা নাকি সবজান্তা-
এই তন্ত্র এই মন্ত্র আর চলবেনা !
শক্ত হাতে ধরতে হবে
উচ্চ কন্ঠে সমস্বরে চিৎকারে
দুর্বিত্তের দুষ্কর্মের ভর্ৎসনা,
রক্তবীজের ছলনা
বিপ্লবের এই আঙিনা । -
কবিতা- গোবর্ধন
গোবর্ধন
সুবিনয় হালদারবলি-ও- জনগণ গোবর্ধন
বুঝবে কবে শুনি ?
ভুল বুঝিয়ে গুল খাইয়ে
আখের গছায় বামী
খাচ্ছে শুধুই ননি !চোখের সামনে হচ্ছে যেটা
একেবারেই যা-তা
আসল কথা নয়তো সেটা
ফলছে হাতে-নাতে,
যোগের সঙ্গে বিয়োগ পালা
ভাগের বেলায় মন্দ বেটা
গুণ করে জাল বুনি ;
ভাত পায়না বাণী !বলি- ও সভ্যতা যাচ্ছ কোথা
জনার্দনের জন্য হেতা
অনেক কিছুই পাবে ;
হাতে লক্ষ্মী পাচ্ছে ভাতা
তুমি বললেই হবে ?
নাক সিটকে গাল ফেটকে
চোখ বুজিয়ে হুড়মুড়িয়ে
নিজেই শুধু খাবে ?এখানে সব ক্লান্ত ভাবে
ভ্রান্ত মনে শান্তির সাথে থাকে
উদভ্রান্তের মতো চলে ;
ফুসফুসীয়ে কানভাঙালেই হবে ?
ধীরে-ধীরে হচ্ছে ঠিক
যদিও অনেক বেঠিক
তবুও দেখি-,
ধিকধিকিয়ে আগের চেয়ে
সারছে চতুর্দিক ;
ও-জনগণ- গোবর্ধন
একটু তোল শির ।।