• কবিতা

    কবিতা- ভয়সমগ্ৰ-১১

    Anthophobia – Fear of flowers

    ভয়সমগ্ৰ ১১

    Anthophobia – Fear of flowers
    -সোমনাথ বেনিয়া

     

    সুন্দরকে ভয় কেন, দ্বিধাহীন বলো
    নিষ্ঠুর যে, সেও কেমন যেন শান্ত, সম্মোহিত
    মৌতাতে মেতে কচি ডানার শব্দে শিহরিত বাতাস
    শিশিরের সঙ্গে আলিঙ্গন লুকিয়ে দেখে ঈশ্বর
    বিধাতার চরণে অকালপ্রয়াণ হাসি মুখে থাকে
    হয়তো রেণুর দোষ, মিলনের কথা ভুলে গেলে
    নিজেকে কোথাও সুন্দর ভাবো, তুলনায় আনো
    ঠোঁটের উপর আনন্দের উচ্ছল তরঙ্গ খেলে যাবে
    বুঝে নাও নমনীয়তার অনিন্দ‍্যসুন্দর কাহিনী
    দৃষ্টির ভিতর রাখে সৃষ্টির রূপকথা
    কোনো আতঙ্ক নয়, প্রকৃতির গন্ধশয‍্যা মনোময়
    স্পর্শ নিয়ে অন্তরের আলোর সরণে রাখো পদক্ষেপ …

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- চানাচুর

    চানাচুর
    – সোমনাথ বেনিয়া

     

     

    খেলতে-খেলতে বাবার শরীরে মেয়ে অসাবধানতাবশত পেনসিলের শিষ ফুটিয়ে দেয় এবং সেই ক্ষত স্থান থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। বাবা মেয়ের এই কর্মকাণ্ডে ভয়ানক রেগে গিয়ে তাকে চড় মারতে উদ‍্যত হতেই মেয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। এদিকে মেয়ের কান্না শুনে মা ছুটে আসে এবং সমস্ত ব‍্যাপার শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে।
    এখন সেই বাবা বুঝলো দু-জন মিলে যদি মেয়ের উপর রাগ প্রকাশ করি তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সে এই পরিবেশকে হালকা করার জন‍্য মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে বললো – ও তেমন কিছু হয়নি। খেলতে গেলে ওরম একটু লাগে।
    এই বলে সে হেসে ফেললো। তার হাসি দেখে মেয়ে হাসলো এবং মায়ের‌ও রাগ পড়ে গিয়ে ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এমন সময় সেই বাবা বলে, আমরা এখন চানাচুর, মুড়ি হলেই জমে যাবে।

    এই শুনে মা ও মেয়ে দু-জনে অবাক।

    তাদের অবাক হ‌ওয়া দেখে সে বলে- কী ভুল বললাম। এই দেখো আমার হাতের রক্ত যার স্বাদ টক। মেয়ের চোখের জল যার স্বাদ নোনতা। তোমার রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ যা আসলে ঝাল। আর আমাদের তিনজনের হাসি যা হলো মিষ্টি। সুতরাং চানাচুরের স্বাদ হলো কিনা …

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- তৃষ্ণা

    তৃষ্ণা
    – সোমনাথ বেনিয়া

     

     

    স্থান চেন্নাই। পুলক আর সুকান্ত গেছে রেলের পরীক্ষা দিতে। তারা যে হোটেলে উঠলো সেখানে পরিচয় হলো অবনীর সঙ্গে। অবনী থাকে সোদপুরে আর পুলক ও সুকান্ত বেলঘড়িয়ায়। ফলত প্রবাসে স্বজাতির লোক পেয়ে দু-পক্ষ‌ই আনন্দিত। নির্দিষ্ট দিনে তিনজনের পরীক্ষা হলো। কাকতালীয় ভাবে এক‌ই স্কুলে। ফলত একসঙ্গে যাওয়া, আশা এবং থাকায় তাদের মধ‍্যে সাময়িক ভালোলাগার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
    পরীক্ষার পরের দিন অবনীর বাড়ির ফেরার টিকিট। ওরা তার দু-দিন পরে ফিরবে। ফেরার রাতে অবনী ট্রেনে বসে আছে। সুকান্তর মন খারাপ না হলেও পুলক আর অবনীর মন কিছুটা উদাস হয়ে আছে। ক্ষণিকের ভালোলাগা অনেক সময় মায়া রেখে যায়। হঠাৎ অবনী বলে – আমাকে একটা জলের বোতল এনে দেবে।
    – হ‍্যাঁ বলেই পুলক দোকানের দিকে দৌড়ালো।
    জল আনতে পুলকের কিছুটা দেরি হচ্ছে দেখে সুকান্ত তাকে খুঁজতে বের হলো। ট্রেনের হর্ন বেজেছে। দেখা গেল পুলক হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এসে অবনীর হাতে জলের বোতল তুলে দিয়ে বললো – টাকা লাগবে না।
    এদিকে সুকান্ত এদিক-সেদিক ঘুরে পুলকে শেষে দেখতে পেয়ে ধমক লাগালো কারণ তারা সঙ্গে করে তাদের টিকিট আনেনি। যদি চেকার ধরতো! পুলক বুঝতে পারে। তবু তার আনন্দ যে সে অবনীর তৃষ্ণায় জল দিতে পেরেছে কিন্তু পুলকের চোখে-মুখে বিচ্ছেদের যে তৃষ্ণা জেগে আছে তা হয়ত সুকান্ত বুঝতে পারলো না …

  • অণু গল্প

    অণুগল্প- দেওয়াল

    দেওয়াল
    – সোমনাথ বেনিয়া

     

     

    ছেলেটি একটি বেসরকারী কোম্পানিতে কাজ করে। ইদানীং তার কাজের রিপোর্ট খারাপের দিকে যাচ্ছে কারণ তার জন্মগত শারীরিক ত্রুটির জন‍্য। বাইরে থেকে খুব একটা বোঝা না গেলেও সে মেরুদণ্ডের ডিফর্মেটিসে সব সময় একটা যন্ত্রণা অনুভব করে। প্রথম-প্রথম এতটা শরীর খারাপ অনুভব করেনি কিন্তু যতদিন যাচ্ছে তার এই সমস‍্যা নানান অসুবিধ সৃষ্টি করছে। যেমন কোনো কিছুতে হেলান দিয়ে বসলে তার একটু আরাম হয়। কিন্তু সব সময় তা পাবে কোথায়। সহকর্মীদের সাথে গল্প করতে গেলে তাদের অনেকেই চেয়ার ছেড়ে দেয় বসার জন‍্য। কিন্তু বাসে-ট্রামে তো আর তা হবে না কারণ সে তো ফিজিক‍্যালি হ‍্যান্ডিক‍্যাপ্টড নয়। সমস‍্যা তো ভিতরে। কে বাইরে থেকে বুঝবে যতক্ষণ না বলা হয়। এখন লোকে অনেক চালাক হয়ে গেছে, বললে, বলবে – যেই বাসে উঠলো, অমনি শরীর খারাপ হয়ে গেল। সে আবার বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। ফলত কিছুটা ফাঁকা বাস দেখে উঠে, রাস্তা ভেঙে-ভেঙে বাড়িতে ফেরে। এতে ভালোই খরচ বাড়ে যাতায়াতের ক্ষেত্রে। কিন্তু তাকে এটা করতে হয় বাড়ির একমাত্র রোজগেরে বলে।
    একটা সময় দাঁড়ালো যে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হলো। শারীরিক সমস‍্যায় তার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল। উর্দ্ধতন কতৃপক্ষ সব রকম চেষ্টা করেছিল যাতে চাকরিটা থাকে কিন্তু সে তো শয‍্যাশায়ী হয়ে পড়লো। এখন উপায়! সহকর্মী বন্ধুদের বলতো – আমার তো জন্মলগ্ন থেকেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে আছে। আর কী হবে? এখন সংসার চালাতে গিয়ে তার ব‌উকে কাজে নামতে হলো। কিন্তু তার ব‌উয়ের ভালো-ভালো সাজগোজ ও ঘন ঘন ফোন আসায় সে বুঝেছিল এখন শুধু শরীর নয়, নিজের মনটাও দেওয়ালে ঠেকে গেছে …

You cannot copy content of this page