-
কবিতা- মেয়েটা
মেয়েটা
-অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ)
মেয়েটা ভালো হতে চেয়েছিল।
মেয়েটা স্বপ্ন দেখেছিল,
মেয়েটা ভাবতে শিখেছিল।
মেয়েটা কিছু করতে চেয়েছিল।
মেয়েটা বাঁচতে চেয়েছিল,
মানুষের সেবা করতে চেয়েছিল।
মেয়েটা শতশত পুরুষের মাঝে
মাথা উঁচু করে লড়তে চেয়েছিল।
তবু মেয়েটা কেন হেরে গেল?
কতগুলো নোংরা হাত তাকে ভালো হতে দিল না।
মেয়েটার স্বপ্নগুলোকে ভেঙে মুচড়ে দিল।
মেয়েটার দিকে এগিয়ে আসছে অসংখ্য বিষধর সাপ।
না না হেরে গেলে হবে না।
রুখে দাঁড়াতে হবে।
একা মেয়েটা, বড্ড একা।
তবু সে লড়তে চেয়েছিল।
তবু সে কষ্ট ভুলে জিততে চেয়েছিল।
তবু-মেয়েটা কেন হেরে গেল?
এ হার মেয়েটার একার নয়।
এ লজ্জা মেয়েটার একার নয়।
মেয়েটা আর পাবে না ভয়।
সে জিতবে, করবেই জয়।
মেয়েটা আর কাঁদবে না
মেয়েটা লড়বে নিজের জন্য।
লড়তেই হবে আর সবার জন্য।
হোক সে বড়ো ক্লান্ত।
হোক সে একা-
তবু মেয়েটা লড়বে।
এগিয়ে যাবে সূর্যালোকের দিকে।
আগামী ভবিষ্যতের অপেক্ষায়। -
অণু কবিতা-হেঁটে যাচ্ছি
হেঁটে যাচ্ছি
-তীর্থঙ্কর সুমিতকত সকাল এভাবে নষ্ট হতে হতে
মুছে গেছে আলোর বিকেলে
অনন্ত যাত্রার পদাবলী
লেখা আছে তোমার ইচ্ছে কথায়
তুমি ডানা মেললে
অভূত প্রাণশক্তি ফিরে পায়
আমার ভালোবাসার কথন
মনে না রাখা তোর্সার বুকে
সবুজ খামে ভেসে গিয়েছিলো
কত অজানার আত্মহননএখন শুধুই মেঘ বৃষ্টি আর কালিন্দীর জল…
আমি হেঁটে যাচ্ছি ক্রমশঃ
-
কবিতা- অ-সময়
অ-সময়
সুমিত মোদকধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে অতি পরিচিত কথাগুলি;
বদলে যাচ্ছে চেনা-জানা মানুষ, মনুষ্যত্ব;এক পা এক পা করে সামনের দিকে
যারা এগিয়ে গিয়ে ছিল মৌন মিছিলে
তারা আর ফিরে আসেনি;
এসে ছিল একটি নিখোঁজ তালিকা;
সে তালিকা এতটাই বড় ছিল যে,
নামটুকুও খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে;শব্দের জন্য চিৎকার,
ভাষার জন্য উল্লাস,
নাকি শুধুই পাপের প্রায়শ্চিত্ত!
ঠিক বুঝে উঠতে পারে না দেহাতি মানুষ সকল;
একটু একটু করে ভেঙে পড়ছে পুরানো স্মৃতি বিজড়িত
ভালবাসার সৌধগুলি;মন খুলে কথা না বলতে বলতে কি
মৌন হয়ে যাবে পরবর্তী সময়!
না কি শেষ বেলায় মুখ ফিরিয়ে নেবে
ডুবন্ত সূর্যের আলো থেকে!অ-সময়, তুমি কি পেয়ে গেছো অমরত্ব নিজের কাছে!
-
গল্প- অ্যাই পালা, ভগবান আসছে
অ্যাই পালা, ভগবান আসছে
সুনির্মল বসুলোকটাকে সব বাচ্চারাই ভারী ভয় পেত। গায়ে নীল রঙের হাফ হাতা একটা বাঙালি শার্ট। পরনে ধুতি। বাঁ হাতে একটা ছোট বাক্স। ডান হাতে সর্বক্ষণ একটা ধূমায়মান সিগারেট। অদ্ভুত তাঁর সিগারেট টানার ভঙ্গি। ছোটখাটো চেহারা। মাথায় খাড়া খাড়া চুল। একটু মোটা গোঁফ। মাথার চুল কাঁচা পাকা হলেও, গোঁফটা একেবারে কুচকুচে কালো।
পথের মোড়ে তাঁকে দেখা গেলেই, সবাই বলতো, অ্যাই পালা, ভগবান আসছে।
সে আসলে পেশায় নাপিত নাম- নরসুন্দর ভগবান দাস। পাড়ার লক্করবাজ চ্যাংড়ারা বলতো, ভগবান দাসের ইটালিয়ান সেলুন। ইটের উপর বাচ্চাদের বসিয়ে ভগবান চুল ছেঁটে দিত। মাথার সামনের দিকে ফুলের মতো
সামান্য বড় চুল রেখে, বাকি পেছনের অংশে সবটাই সে জল দিয়ে হাতের যন্ত্রপাতির সাহায্যে সবটাই চেঁছে দিত।ভগবানের বাড়ি বালিয়াতে। ওখানে ওর বউ দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকে। মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। মেয়ের নাম দুলারী। হবু জামাইয়ের খেতির কারবার আছে। বড় ছেলে জীবনলাল হাটে সবজি বিক্রি করে। ছোট ছেলে পবনলাল সিক্স ক্লাসে পড়ে। সপ্তাহে সপ্তাহে ভগবান পরিবারের জন্য বাড়িতে টাকা পাঠায়। সে বছরে দুবার বাড়িতে যায়। তখন সবার জন্য কলকাতা থেকে নতুন জামা কাপড় কিনে নিয়ে যায়। দিন পনেরো থেকে আবার এখানে কাজের জায়গায় ফিরে আসে।
যখন ছোট ছিলাম, ভগবান নির্বিচারে আমার চুল কেটে দিত। খুব মন খারাপ হতো আমার। চুল বড় থাকলে, মা বলতেন, তুই বড় চুল রাখছিস, দাঁড়া,তোর বাবাকে বলবো? বড় হবার পর,আমার নিজের বড় চুল রাখবার পেছনে আসল প্রতিবাদ ছিল সেখানেই। কিন্তু সেই ছোট্টবেলায় লোকটাকে খুব সমীহ করতাম।
দুষ্টুমি করলে, মায়েরা বলতেন, ভগবানকে ডাকবো নাকি? সঙ্গে সঙ্গে অনিচ্ছা সত্ত্বেও, বেশি বেশি ভাত খেতে হতো।মা হেসে বলতেন, এইতো সবটা খেলি। কার পেট ভরলো, আমার না তোর?
তখন একটু বড় হচ্ছি। ক্লাস এইটে পড়ি। ইটের উপর বসে আছি। পাশে বাবা দাঁড়িয়ে ভগবানকে বলছেন, কেটে ছোট করে দাও। কানের উপর চুল, সখি সখি ভাব, আমার মোটেই পছন্দ নয়। ভগবান মনে মনে খুশি হচ্ছে। চুল ছোট করায় তাঁর বড় আনন্দ। একটু বড় হতেই, চুল কাটতে কাটতে ভগবান আমাদের অনেক নীতি শিক্ষা দিত।একদিন আমাকে বলল, বাবু, জীবনে ঘোড়ার মতো হবে, কখনো গাধা হবে না।
-কেন?
-সোসাইটিতে গাধার কোন মান সম্মান নেই। হ্যাঁ, যদি ঘোড়া হতে পারো, তাহলে লোকের কাজ থেকে রেসপেক্ট পাবে।বাংলায় কথা বলবার সময়, ভগবানের ডায়লগে মাঝে মাঝে ইংরেজি শব্দ বেরিয়ে আসতো। তার পেছনে অবশ্য কারণ আছে। বাটা ফ্যাক্টরির ম্যানেজার মিঃ বারতোস থেকে শুরু করে মিঃ ওয়াটসন, মিস্টার চিচেক ভ্যালেন্টা, মিঃ ভেরোল, মিঃ লেডেন, মিঃ জন বেক, মিঃ ভবতোষ সেন চৌধুরী, মিঃ ভি, লিপনার, সবাই চুল, দাড়ি কাটবার জন্য ভগবানের শরণাপন্ন হতেন। ভগবান তখন সাহেবদের বাড়ি উপস্থিত হয়ে তাঁদের চুল দাড়ি কামাতেন। সেই সুবাদে মাঝে মাঝে ইংরেজি শব্দ ভগবানের মুখে উচ্চারিত হতো। মুড ভালো থাকলে, ভগবান তাঁর ছেলেদের গল্প শোনাতো। বড় ছেলে বেশি লিখাপড়া করেনি। ছোট ছেলেকে শেষ পর্যন্ত লিখাপড়া করাবার ইচ্ছে ভগবানের।
দিন বদলে গেল। সত্তর দশক এলো। যাদের এক সময় চুল কেটেছে ভগবান, তারা বড় হয়ে গেল।
কলেজে পড়তে গেল। কেউ কেউ মস্তান হিসেবে পরিচিত হলো।হেবো মাস্তানি করে পয়সা করলো। তাঁর কোমরে দেশি পিস্তল সব সময় গোঁজা থাকে। চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সে রিভলবার নাচায়। সে এখন এই অঞ্চলের ত্রাস। একলা পুলিশ তাঁর মুখোমুখি হতে চায় না। ওসি সুবর্ণ সরকার একদিন জীপ থেকে নেমে বলেছিলেন- বড্ড তেল বেড়েছে দেখছি তোর। খুব জলদি তোকে তুলে নেব।
হেবো রিভলবার নাচিয়ে বলেছে- আগের ওসিও ওই এক ডায়লগ দিয়েছিল। আমার সামনে কোনদিন খাপ খুলতে পারে নি।
একদিন হেবোর সঙ্গে মুখোমুখি ভগবানের দেখা।ভগবানের ঘাড়ে হাত রেখে হেবো বললো- কেমন আছো গুরু?
ভগবান ওর হাত সরিয়ে দিয়ে বললও-তোর বাপ আমাকে দাদা বলে ডাকে, ছোটবেলায় আমাকে দেখলে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলতিস, এখন আমাকে গুরু বলছিস? আচ্ছা, কলিকাল!দেশে অস্থিরতা শুরু হল। কোম্পানি ছোট হয়ে আসছে। কর্মীদের ছাটাই করে দেওয়া হচ্ছে। চুল দাড়ি কেটে নিজে খেয়ে বাড়িতে আর টাকা পাঠানো যায় না। খুব বিপদে পড়ে গেল ভগবান।
তারপর একদিন আমাদের মফস্বল শহর ছেড়ে নিজের দেশের বাড়িতে চলে গেল। আমরা কেউ ভগবানকে মনে রাখি নি। প্রথম প্রথম কয়েকদিন চায়ের ঠেকে ভগবানকে নিয়ে আলোচনা হতো। তারপর স্মৃতির পাতা থেকে ছোটবেলার সেই ভয় পাওয়া মানুষটাকে আমরা সম্পূর্ণ ভুলে গেলাম।
বেশ কয়েক বছর পর আমি তখন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বালিয়াতে ব্রিজ বানাবার কাজে গিয়েছি। অনেকদিন ধরে কনস্ট্রাকশন এর কাজ চলছিল। একদিন হঠাৎ দেখি, ভগবান রাস্তা ধরে খুঁড়িয়ে হেঁটে আসছে। ওর পিঠটা কুঁজো হয়ে গেছে। পায়ে ছেঁড়া চটি। পরনে ময়লা পোশাক। মাথার সব চুল সাদা হয়ে গেছে। গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।
ভগবান আমাকে চিনতে পারেনি। আমি চিনতে পেরেছিলাম। সামনে গিয়ে বললাম- ভগবানদা, কেমন আছো তুমি?
-ভালো নেই। বউ মারা গেল। ছেলেরা বিয়ে করে বউ নিয়ে হাওয়া।
-আমাকে চিনতে পারছো?
-হা হা। তুমি ফোরম্যান দত্ত বাবুর ছেলে।
– তোমার সংসার কিভাবে চলে?
-হাত কাজ নাই। কাজ করবার সামর্থ্য নাই। বড্ড বুড়ো হয়ে গেছি। ভগবানের কন্ঠে অসহায়তার সুর। আমার মনে পড়লো, সেই ছোট্টবেলায় আমরা সবাই এই মানুষটাকে দেখলে, ভয়ে একেবারে সিঁটিয়ে যেতাম।-তোমাকে কেউ দেখে না?
-মেয়ে দ্যাখে।
ছেলেরা?
-আরে না না। আমি ছেলেদের পড়ালিখার জন্য পয়সা খরচা করেছিলাম। মেয়ের জন্য কিছু করিনি। আমি চারটে পাঁচশো টাকার নোট ভগবানের হাতে গুঁজে দিলাম।ভগবান বললো- আমার কথা মনে আছে তাহলে! তুমি ঘোড়া হয়েছো, ভাগ্যিস গাধা হওনি! তারপর খুঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওর বাড়ির দিকে গলির প্রান্তে মিলিয়ে গেল। সেই শৈশবের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একজন মানুষ আজ আমার সঙ্গে কেমন আশ্চর্যভাবে আমাকে দেখা দিয়ে গেলেন। সেদিনের ভগবানের আশ্চর্য দাপটের সঙ্গে আজকের মন ভেঙ্গে যাওয়া মানুষটার কিছু মাত্র মিল, আমি দেখতে পেলাম না।
মহুয়া গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমি জীবনের প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি হলাম। সময়, কাকে যে কিভাবে জীবন যন্ত্রণার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়, তা আগে থেকে আন্দাজ করা যায় না।
ভগবান গলির মোড়ে মিলিয়ে যেতেই, আমি কেমন ঘোরের মধ্যে নিজের মনে বলে ফেললাম, ভালো থেকো, তুমি ভালো থেকো, ভগবানদা।তারপর মনে মনে আবার বললাম, তোমাকে ভালো থাকতেই হবে, তা না হলে, তোমরা চলে গেলে, আমার ছোটবেলার স্মৃতিগুলো সেই সঙ্গে চলে যাবে যে!
-
কমলার স্মৃতিচারণ
কমলার স্মৃতিচারণ
–মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ
কুন্তল ছিল কমলার একমাত্র সন্তান,
শৈশব থেকেই বাপ হারা ছেলেকে নিয়ে লড়াইটা ছিল কমলার!
দিনের পর দিন বাবুদের বাড়ি ঘর মুছে,কাপড় কেচে,বাসন মেজে চলতো কমলার সংসার।
পড়াশোনার প্রতি ভারি মনযোগ ছিল কুন্তলের।কমলা তা ভালোই বুঝতে পারতো—-
তাইতো রাতের পর রাত জেগে,ঠোঙা বানিয়ে দিয়ে আসত কাক ডাকা ভোরে।
কমলার জীবনের কষ্টের কাহিনীর অন্তর্গত ছিল কুন্তল, সবই ছিল তাকেই ঘিরে—–
অভাবের সংসারে মা-ছেলের একটাই স্বপ্ন,
একদিন এ আঁধার কাটিয়ে রবির কিরণ এসে পড়বে জানালার এপারে,
তাদের স্পর্শ করে যাবে সোনালি রোদের ছটাক,,,,বহু বছর কেটে গেছে——
আজ কমলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে মা-ছেলের পুরোনো স্মৃতিচারণ করছে।আজ আর সংসারে অভাব নেই,
কুন্তল আজ সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত,সে যে আজ বড়ো অফিসে চাকরি করে।
আজ কুন্তল বিবাহিত,নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছে।
তবে এতটুকু শান্তি নেই,ওদের বিবাহিত জীবনে—–
যত যুদ্ধ যেন বৃদ্ধা কমলাকে ঘিরে……
পাশের ঘরে প্রতিনিয়ত ছেলে-বউ এর অশান্তি যে চরমে…
শুনতে শুনতে কমলা দগ্ধে মরে!
যুদ্ধ যে চলে পাশের ঘরে!
আর যে সহ্য হয়না—-কি কাজে লাগে উনি আমার?
কতোবার বলেছি,এসব দায়িত্ব আমি ঘাড়ে নিতে পারবনা…পারবনা…পারবনা…
শুধু বসে বসে অন্নের ধ্বংস ছাড়া আর কি আছে ?রুনা তোমাকে কত্তো বার বলেছি! মা কে ওভাবে বলবেনা।
তুমিতো জানো,মা কতো কষ্ট করে আমাকে বড়ো করেছে,
মানুষ করেছে!সে তো সব্বাই করে কুন্তল,
এটা তো ওনাদের দায়িত্ব…
আলটিমেটলি,ওনারা তোমাকে জন্ম দিয়েছে।সেটাই তো বোঝাতে চাইছি রুনা….
উনি আমাকে জন্ম দিয়েছে,উনি যে আমার মা!
আমি ছাড়া কে দেখবে মাকে ?
এটাও কি আমার দায়িত্ব না!!প্লিজ কুন্তল,
এক্সকিউজ দিওনা…
কালই আমি রনিতকে নিয়ে বাপির কাছে যাচ্ছি!রুনা…
থাক,,,অনেক হয়েছে,
তুমি থাকো তোমার বৃদ্ধা মা কে নিয়ে—–পাশের ঘর থেকে কমলা ছুটে এসে!
বাবু!
শুনেছি বৃদ্ধাশ্রমে নাকি আমার মতন অনেকে থাকেন,
দেখনা বাবা!
আমাকে একবার ওখানে রেখে আয় না!
এমনিতেও সারাটাদিন একঘরে থাকতে আমারও ভালো লাগে না,
শুনেছি ওখানে সবাই খুব ভালো থাকে!
তুই নাহলে মাঝেমধ্যে গিয়ে একটু দেখে আসিস!!!মা তুমি শেষে বৃদ্ধাশ্রমে…
তাতে কি হয়েছে বাবা!
আমিতো তোমার হৃদয় থেকে দূরে যাচ্ছি না!
এতো বছর তো আমরা একসাথেই ছিলাম,
আজ একটু নিজের সংসারে মন দাও…..
তুমি না বাবা হয়েছ,,,,
মনের মতন করে সন্তান মানুষ করো,
আমি যে আজ আছি ,কাল নেই…..
ওদেরকে সাথে নিয়েই যে তোমাকে বাকিটা পথ চলতে হবে বাবা……!তবে তোমার বাকিটা পথ বুঝি ওই বৃদ্ধা আ….
আমি জানি তুমি আমার লক্ষ্মী ছেলে!
এবার আমার একটা ব্যবস্থা করো বাবা!
যত তাড়াতাড়ি পারো…মা…..
হ্যাঁ বাবা আমি সব সময়ই তোমার সাথে থাকবো!
নীরবে চোখের জল মুছে ঘরে গেল কমলা!
কুন্তলের বুকের হাহাকার বুঝি শুনতে পায়নি রুনা!সত্যিই এবার বুঝি বিদায় দেবার পালা—-
এবার বুঝি সূর্য ডোবার পালা—- -
অন্দরমহলের চারুলতা
অন্দরমহলের চারুলতা
-সানজিদা শোভাঅন্দরমহলে যে চারুলতার বাস…
তার চারপাশটা বিষণ্ণতা প্রকষ্ঠের বেরাজালে ঘেরা..
সে এক বিষন্নময়ী…
চঞ্চলা হরিনীর ন্যায় ছিলো তাহার কৈশোরকাল..
দাপিয়ে বেরোতো পুরো পাড়া।
চারুলতার সুলভ ছিলো সত্যতায় পরিপূর্ণ,
লেখাপড়ায় বেশ পটু…
মেয়ে মানুষ বলে কথা,
সমাজের অন্দরমহলে তাহারা বন্দিনী..
চঞ্চলতা স্বভাবে থাকলেও
তাহাদের লাল শাড়ীর শিকল বেঁধে দেয়া হয়।
চারুলতাও প্রকৃতির নিয়মে যৌবনে পা রাখলো একদিন!
তাকেও বেঁধে দেয়া হলো অন্দর মহলের লাল শিকলে..
এখন তার জীবন ঐ চারটি দেয়াল আর কিছু সংখ্যক লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ..
বাহিরে না বেরনোর করা নির্দেশ ..
বাপের বাড়ী যাইবারও তাহার নেই অনুমতি,
পন দিয়া কিনিয়া লইয়াছেন যে তারে তাহার স্বামী।
সে এখন আর চঞ্চলা হরিনী নয়..
এখন সে এক অন্দরমমহলের বন্দিনী…
যার চারপাশটা বিষন্নতার মরুভুমি। -
ঈর্ষান্বিত
ঈর্ষান্বিত
-সানজিদা শোভারোজ ঠিক ভোরে নিয়ম করে আমার প্রিয় বার্তাটা মুঠো ফোনে পাঠিয়ে দিবি ক্ষন…
ওটাই যে আমার সারাদিনের অক্সিজেন।
রোজ সকাল গড়িয়ে দুপুর নামবে যখন
আমার চোখে আর চোখে দৃষ্টি রাখবি ক্ষন…
ওটাই যে আমার তোমাতে বিভোর হবার ক্ষন।
রোজ দ্বিপ্রহরে আমার ফোনে নিয়ম করে ঘন্টা বাজাবি
নয়তো তোর সঙ্গে আমার চলবে মন কষাকষি।
রোজ বিকেলের হাওয়া তোকে এক ঝলক নিয়ম করে দেখতে দিবি আমায়…
নয়তো বিষন্নতায় ডুববে আমার হৃদয়…
বেলা শেষে রোজ সন্ধ্যা হবে যখন..
লোকের ভীড়ে কর্ম ব্যস্ত হবি তুই তখন..
আমি তখন একলা ঘরে তোকে নিয়ে নীল কাব্য করবো চয়ন…
রোজ রাত্রিরে তোর নীড়ে ফিরবি যখন…
তোর কন্ঠ স্বরে..
আমার সারাদিনের অপেক্ষার দহন কিছুটা নিভবে তখন
তবে বুকে ভেতরটা ঈর্ষান্বিত হবে এই ভেবে…
কেনো আমার প্রতিটা রাত্র হলোনা তোর বুকেতে শয়ন। -
অপ্রত্যাশিত চিঠি -পর্ব ১/৮
অপ্রত্যাশিত চিঠি
-রুদ্র প্রসাদ
( ০১ )কয়েক দিন হল, একটানা বৃষ্টি হয়ে চলেছে । আজও সকাল থেকে আকাশের মুখ ভার । সারারাত এক নাগাড়ে ঝরার পরও বিরাম নেই । এখনও টিপ্-টিপ্ করে পড়ে চলেছে । আর এই রকম আবহাওয়ার সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং । সোলার এনার্জির আর কতটুকু ক্ষমতা !এমন একটা মনোরম সকালকেও উপভোগ করতে পারছিলেন না প্রৌঢ় ভদ্রলোকটি । পঁচাত্তর পেরিয়েছেন বেশ কিছুদিন হল, কিন্তু মাঝারি উচ্চতার নির্মেদ শরীরে এখনও সেভাবে থাবা বসাতে পারেনি সময় । কাজ নিয়েই মেতে আছেন নিজের খেয়ালে । বয়সের ভারে পাতলা হয়ে আসা ব্যাকব্রাশ করা কাঁচাপাকা চুল আর পরিচ্ছন্ন – পরিপাটি পোশাকে সদা প্রাণোচ্ছল মানুষটার আজ হঠাৎ হল টা কি !!! দুদিন হল দাড়ি কামাতে ভুলে গেছেন । খাওয়া – দাওয়া সারছেন অন্যমনস্কভাবে । নিজের প্রিয় আরাম কেদারাটায় বসেও ভেতরে ভেতরে ছটপট করছিলেন তিনি । সুন্দর সকালের আপাত শান্ত প্রকৃতির বৃষ্টিভেজা অনুপম রূপ, বা সাউণ্ড সিস্টেমে বাজতে থাকা পছন্দের রবীন্দ্রসঙ্গীত, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায় ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল …’ – কোনও কিছুই কাঙ্ক্ষিত মানসিক শান্তি দিতে পারছিল না । মাঝেমাঝেই উঠে ঘরময় পায়চারি করছিলেন অস্থিরভাবে আর সময়ে সময়ে শক্ত হয়ে উঠছিল বয়সের সাথে চারটে দাঁত হারানো চোয়াল দুটো । কখনও নিষ্ফল আক্রোশে মুঠো করছেন আঙুল । কোনওভাবেই অস্বস্তিটা ভুলতে পারছেন না । বেশ কিছু সময় একভাবে বসে থাকার পর উঠলেন, মনস্থির করে গলা তুলে ডাক দিলেন, “হরি, এই হরি” ।মিউজিক সিস্টেমটা বন্ধ করতে করতেই হাজির হরি । দেখে আশ্বস্ত হলেন, সেই কর্মজীবনে প্রায় সমবয়সী সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন একে, এই অবসরোত্তর জীবনে এখনও একমাত্র বিশ্বস্ত ও অনুগত সহচর, মেদিনীপুরের এই রাখহরি মন্ডল – আজও টিকে আছে । বললেন, ‘জলখাবার আর চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে, গরম করে নিয়ে আয় ।”হরি চলে যাবার পর নিজের বন্ধ কম্পিউটারটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে হেসে ফেললেন, আসলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও আজকালের সোশ্যাল মিডিয়াতে অভ্যস্ত নন তিনি, বড়জোর ই-মেলটুকু করতে পারেন । বেশি কিছু করতে ইচ্ছে তাঁর করে না, নাহলে হয়ত আজকের দিনে যোগাযোগ অনেক সুবিধাজনক হত । ভদ্রলোক এবার গিয়ে বসলেন নিজের লেখার জায়গায়, না চাইতেই কিছু ব্যক্তিবিশেষ বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্যপ্রার্থী হতে হয় বলে চিঠিপত্র নিয়মিত লিখতে হয় তাঁকে, লিখতে বসে নিজের ভাবনায় ডুবে গেলেন ভদ্রলোক, আবারও জুড়িয়ে গেল হরির গরম করে দিয়ে যাওয়া চা – জলখাবার । সময় গড়িয়ে চলল ।এক সময় লেখা শেষ করে খাম বন্ধ করতে করতে হরিকে ডাকলেন । হরি এলে বললেন, “এগুলো খুব জরুরী চিঠি । তাড়াতাড়ি যা, আজকের ডাকে দেওয়া চাই । দুটোর মধ্যে রেজিস্ট্রি করে দিবি, বুঝেছিস ।”চিঠিপত্র নিয়ে হরির চলে যাওয়ার পথে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আনমনে ভাবতে লাগলেন, ‘চিঠিটা সময়মতো পৌঁছাবে তো ? আবেদন কার্যকর ঠিক সময়মতো হবে তো ? অতিবিলম্ব না হয়ে যায় ।’অন্যমনস্কভাবে দৈনন্দিন কাজকর্ম শেষ করে রাতে শুতে গিয়েও মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগল ভাবনাগুলো, ‘চিঠিটা সময়মতো পৌঁছাবে তো ? সাহায্য আসবে তো ? না এলে কি করণীয় …..’। এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন । হঠাৎ অস্পষ্ট শব্দে ঘুম ভেঙে গেল তাঁর, আবছায়ায় বুঝতে পারলেন ঘরের ভেতর দু-তিনজন লোক কিছু যেন খুঁজে চলেছে । ধড়ফড় করে উঠে বসতে গিয়ে শুনতে পেলেন, “উঠে পড়েছেন দেখছি । ভালোই হল, এবার বলে ফেলুন জিনিসটা কোথায় রেখেছেন । তাহলে আর কষ্ট করে খুঁজতে হয় না” । বিছানা হাতড়ে বুঝলেন টর্চলাইটটা বিছানায় নেই । ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ ঘরের মধ্যেকার সোলারের আলোটা জ্বালালো । আলোয় সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখতে পেয়ে সবিস্ময়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, “এ কি ! তুই ! এখন এখানে ….!!!!”( ০২ )সদাই কর্মচঞ্চল লবনহ্রদের অফিসে দিনের শেষবেলায় হাতের কাজ মোটামুটি শেষ করে নিজের ডেস্কে বসেই মোবাইলে গেম খেলছিলাম । ওদিকে আমাদের গ্রুপ লিডার অপূর্বদা লিস্ট বানাচ্ছিলেন । আগামী বুধবার অফিসেরই এক সহকর্মীর ( ডিপার্টমেন্ট আলাদা হলেও সখ্যতা আছে ) বিয়ে, কে কে যাবেন, কি উপহার দেওয়া হবে ইত্যাদি আলোচনা হচ্ছিল । হঠাৎ পাশের ডেস্ক থেকে পৌষালী বলল, “রুদ্র, তুই কি পরবি ? শেরওয়ানী পরিস, তোকে বেশ মানাবে ।”মোবাইল থেকে মুখ তুলে বললাম, “ক্ষেপেছিস ! আমার যা চেহারা, তাতে ওসব পরলে পুরো কাকতাড়ুয়া লাগবে ।” দেখলাম কথাটা শুনে কৃষ্ণাদি তাঁর সেই বিখ্যাত হাসিটা দিয়ে নিজের ডেস্কের দিকে হাঁটা দিলেন । অন্যদিকে দেখি, গোলাপ না অর্কিড – কিসের তোড়া ভালো হবে, সেই নিয়ে শিব শঙ্করদা আর ভূষণদার ভেতর চাপান-উতোর চলছে । একটু সুখটানের আশায় অমল, অশোক আর প্রদীপদার সাথে বেরতেই যাব, এমন সময়ই পেছনে ধনঞ্জয়দার বিখ্যাত গলা, “এই যে, পটলডাঙার চারমূর্তি, বলি সব চললেন কোথায় ?”অশোক বলল, “দাদা, আপনারা প্ল্যানিংটা করুন, আমরা এই দু-মিনিটে আসছি ।”ধনঞ্জয়দা গম্ভীর হয়ে বললেন, “এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে । আপনাদের মুখাগ্নি পরে করলেও চলবে ।” কি আর করা যায়, বিরস বদনে ফিরে এলাম । দেখি পৌষালী মুখ টিপে টিপে হাসছে ।যাই হ’ক, শেষ পর্যন্ত ঠিক হ’ল, কেনাকাটার দায়িত্ব কৃষ্ণাদি আর পৌষালীর, খরচ যা হবে পরে হিসাব করে সকলে সমান ভাগে ভাগ করে নিলেই চলবে, বাকিদের সময়ে পৌঁছে গেলেই হবে ।মনে মনে একটা মতলব ভেঁজে ডিপার্টমেন্টাল হেড সুধাংশু স্যারের কেবিনে গিয়ে কথাটা বলতে, স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বললেন, “বিয়েবাড়িতে যেতে চাইছ না ? … হুঁ … ঠিক আছে । তবে শুক্রবার যেন ডুব মেরো না ।” ঘাড় নেড়ে বাইরে এলাম । শেষে যখন সকলে বেরতে যাবে এমন সময় অপূর্বদা গলা তুলে বললেন, “সবাই ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবেন আশা করছি ।”আমার পাশ থেকে অমল ফুট কাটল, “না হলে ফ্লাইটটা মিস হয়ে যাবে !”পাশ থেকে প্রদীপদা অস্ফুটে শুধু, “হুঁ” – বলে থেমে গেলেন । হাসি-ঠাট্টা করতে করতে আমরা অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম ।( ০৩ )পার্কিং থেকে বাইকটা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ভাবছিলাম, অযাচিতভাবে বেশ কয়েকদিন ছুটি পাওয়া গেল, শনি-রবি এমনিতে ছুটি, সোমবার – জন্মাষ্টমী, মঙ্গলবার – স্বাধীনতা দিবস, বুধবার – বিয়েবাড়ি, বৃহস্পতিবার – বৌভাত — সব মিলিয়ে ছ-দিন । বাড়িতে আমি একা, মা-বাবা বোনের বাড়িতে, ভাইও বাইরে – কি করা যায় …।ফেরার পথে সাবওয়ে থেকে বাটার নান আর চিলি চিকেন নিয়ে নিলাম । রাতে খেতে বসে মনে হ’ল, কোথাও একটা ঘুরে আসতে পারলে মন্দ হত না । ভাবতে ভাবতেই গত সপ্তাহে আসা একটা চিঠির কথা মনে পড়ল, ছিলাম না বলে নিচে সিকিওরিটির লোকেরা নিয়ে রেখেছিল, পরে পেয়েছিলাম বটে, তবে দেখা হয়নি । তারপর কাজের চাপে বেমালুম ভুলে গিয়েছি । খাওয়ার পর বেশ কিছু সময় খোঁজার পর চিঠিটা পেলাম, দেখি প্রেরক – শ্রী শুভ্রাংশু শেখর ভৌমিক । মনে পড়ে গেল এক উচ্ছল চিরতরুণ মানুষের কথা । বোটানিস্ট ভদ্রলোক আমার স্বর্গীয় দাদুর বন্ধু । অকৃতদার মানুষটির সাথে দীর্ঘকাল যোগাযোগ করা হয়নি ভেবেই লজ্জিত হলাম । এতদিন পর কি মনে করে চিঠি লিখলেন, ভাবতে ভাবতে চিঠিটা খাম থেকে বের করলাম । মনে মনে বয়স হিসেব করে হাতের লেখার তারিফ না করে পারলাম না, লিখেছেন …,“স্নেহাস্পদেষু বড় দাদুভাই,আশা করি পরম মঙ্গলময়ের অশেষ কৃপায় সপরিবারে কুশলে রয়েছ । দীর্ঘদিনের নীরবতার কারণ হিসাবে বলি, পারিপার্শ্বিক নানাবিধ কারণবশতঃ যোগাযোগ হয়নি । অভিমান কিছুটা আছে বটে, তবে অভিযোগ নেই । আমি আর হরি বহাল তবিয়তে, কোনোক্রমে এখনও টিকে আছি ।গত কয়েকদিন যাবত তোমার কথা খুব মনে পড়ছে । একবার এসে ঘুরে যাও । আমার পক্ষে এদের সান্নিধ্য ছেড়ে বেরোনো মুশকিল । বয়সও হয়েছে, আজ আছি – কাল নেই । জরুরী অনেক কিছু আছে, জনান্তিকে বলার মতো । তোমার ছবি তোলা আর অ্যাডভেঞ্চারের নেশা যদি এখনও আগের মতো থাকে, চলে এসো, মস্তিষ্কের পুষ্টি হবে ।ঈশ্বরের কাছে তোমার মঙ্গল ও সার্বিক উন্নতি প্রার্থনা করি । তোমার মা-বাবা-ভাই-বোন — সকলকে আমার শুভেচ্ছা দিও ।সত্ত্বর সাক্ষাৎ হবে, বৃদ্ধকে নিরাশ করবে না, এই আশা করি ।আশীর্বাদান্তে,ইতি,তোমার গাছ দাদু,শুভ্রাংশু শেখর ভৌমিক ।৬ই আগস্ট ২০১৭পুনশ্চঃ যেখানেই দেখিবে ……”চিঠিটা পড়ে আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম, সম্বিত ফিরল মোবাইলের আওয়াজে । মায়ের ফোন – কি করছি, কি খেয়েছি ইত্যাদি হাজারো প্রশ্নবাণ সামলে চিঠির কথা বললাম । এ ও বললাম যে, কাল যাব । দেখলাম সম্মতি সহজেই পাওয়া গেল । মায়ের সাথে কথা বলে ঘুমোতে গিয়েও পুরোনো কথাই ভাবছিলাম । অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে দাদুর সাথে ।সকাল থেকে উঠেই একটা অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করছিলাম, অনেকদিন পর আবার একা একা কোথাও যাচ্ছি । প্রাতরাশ সেরে ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম । ফার্স্ট এড আর এমার্জেন্সী কিটটা পরীক্ষা করে দেখলাম ঠিকই আছে । কাজ গুছিয়ে সাড়ে এগারটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম । প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে বাইকটা পরিচিত সার্ভিস সেন্টারে জমা করে দিলাম । চায়না টাউনে দুপুরের খাওয়া সেরে দুটোর সময় বাসে উঠলাম, ধর্মতলা থেকে । গন্তব্য – তাজপুর । জানালার ধারে বসার পেয়ে ইয়ারপ্লাগ গুঁজে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথায় চিঠির কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছিল ।
to be continued…
Chapter 2 (Coming soon, 21st April, 18) -
লেখলিপি
লেখলিপি
-রুদ্র প্রসাদধীর পদসঞ্চারে সময়ের অমোঘ লয়সারণী বেয়ে,
দিনপঞ্জির পাতা উল্টে সবকিছু চলছে এগিয়ে ।
কালক্ষয় প্রতি পদে পদে, বন্ধুর পথ যে অচেনা,
কত কিছুই রহস্যে ঘেরা, রয়ে গেছে অজানা ।
সন্ত্রস্ত, আচ্ছন্ন সবই অশান্ত আবহের অনুপনে,
ঘনঘোর তমসাচ্ছন্ন নিশীথ আবৃত অতিগোপনে ।
জাত-ধর্ম-সাম্যের নেশায় ধ্বস্ত মনের বিকাশ,
সম্ভ্রম বিকিয়েই কুলীন, শালীনতার বহিঃপ্রকাশ !
ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর, ক্রমান্বয়ে ক্ষয়িষ্ণু আয়ু,
জর্জরিত দূষিত হলাহলে নিষ্পেষিত শ্বাস বায়ু ।
চাহিদা প্রবল, স্বকীয়তা যে সব হারানোর সাজে,
স্তুপীকৃত জঞ্জালে আজ ফেরা কিসের খোঁজে !
অস্তিত্ব বিরাজে দেখ সুদূর পরাহত কষ্টকল্পসুখে,
বিগত স্মৃতিপট ভারাক্রান্ত ক্লান্তিতে আর দুঃখে ।
দুর্বার অশনি সদম্ভে গরজে মেঘের বাঁকে বাঁকে,
আপন প্রতারিত হয়ে চলে মিথ্যা ছলনার ফাঁকে ।
রিপুর আদিম তাড়নায় কিছু স্পৃহা অবদমিত ;
দিশাহারা অবরুদ্ধ পাখি সংকটে ভীত, শঙ্কিত ।
সুপ্ত বিবেক সংযমহীন লোলুপ লালসার ফাঁদে,
দলিত-মথিত গলিত ভ্রষ্ট আবেগ ডুকরে কাঁদে ।
তবুও ঔৎসুক্য চরমে, অসার অপেক্ষায় উন্মুখ;
মানসপটে যতনে লালিত স্নিগ্ধ প্রিয়জনের মুখ ।
উষ্ণতাহীন নগ্ন উগ্রতার তীব্রতায় দেহ মন ক্লান্ত,
স্নেহ-ভালবাসার শীতল সুহৃদ পরশে হবে শান্ত ।
সময়ের চাকা ঘোরে, চলবে সদাই আপন গতিতে,
কিছু কথা, কিছু ব্যথা, ভাস্বর অমলিন স্মৃতিতে ।
ছোট থেকে বড় হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া,
মিলিয়ে-মিলে হিসাবনিকাশ যত চাওয়া-পাওয়া ।
খুঁজে ফেরা সঠিক পথে একটু আলোর নিশানা,
সত্তা হারিয়ে উজান বেয়ে দেখা আপন ঠিকানা ।
নূতনের আগমনে আশা, মিটে যাবে আঁধারখানি,
ঘুচে যাবে যত দূরত্ব, বৈরিতা, স্ব-দ্বেষ আর গ্লানি ।
সাফল্য-ব্যর্থতার ভেদাভেদ ভুলে মেলাব সবারে,
সৌহার্দ্যের আলোক শিখা জ্বলবে হৃদমাঝারে ।
নূতনের সূচনা দিগন্তে সোনালি আভা সহকারে,
নূতন পাতায় লেখা হবে আচারে আর ব্যবহারে ।
আগামীর চিরন্তন আশায় উড়িয়ে নিজ ধ্বজা…,
নবারুণচ্ছ্বটায় আলোকিত, উদ্ভাসিত হবে শ্রীজা ।
উদিত ভানু জাগতিক রীতে হবে অস্তগামী সাঁঝে,
প্রেম-প্রীতির বইবে জোয়ার সবার মনের ভাঁজে ।
দোলাচলহীন, শুভ হবে সবার, এই হোক প্রার্থনা,
জীবনের খাতায় হল আরও একটি সনের সূচনা ।
সুখ-শান্তি-প্রগতি সাথে মিলেমিশে হোক কথা বলা,
সৌভ্রাতৃত্বের অঙ্গীকারে সুমধুর হোক সকলের পথচলা ।। -
কবিতায়-আমি
কবিতায়-আমি
-শর্মিষ্ঠা শেঠযখন আমি থাকবো না আর…এই পৃথিবীতে,
থেকে যাবে শুধু…লেখা আমার কবিতাগুলোI এলোমেলো হয়ে টেবিলের ওপর…কিংবা থাকবে মুখ লুকিয়ে তোমার সেই ছোট্ট কাঠের আলমারির ভিতরll
আমাদের সেই হাতে গড়া সংসার
তার সুখ -দুঃখের স্মৃতি
যখন পরবে তোমার মনে…
আমার লেখা কবিতা গুলো জানান দেবে
আমি যেন আছি তোমার কাছে llবলবো না আর তোমাকে কিছু…
বলবে আমার কবিতা গুলো
শুনবে তখন তুমি মৌন মুগ্ধ হয়ে
ফেলে আসা সেই সুখ- দুঃখের কাহিনীগুলো llআর হবেনা দেখা আমাদের
পাবে দেখা শুধু কবিতা গুলোর
আকাশে বাতাসে খবরের কাগজে
কিংবা বইয়ের পাতায়…
বেড়াবো তখন ভেসে আমি
মিথ্যে তখন খুঁজবে আমায় হেথা হোথা…
…অন্য কোনোখানে ll