• কবিতা

    সেও বলে গেল

    সেও বলে গেল
    -স্বপন কুমার রায়

    মাঝে মাঝে অদৃশ্য হয়ে ঢুকে পড়ি
    তোমাদের ষড়যন্ত্রে ;
    পলাশীর বিশ্বাসঘাতক কঙ্কালগুলি তখন লজ্জায়
    ফিসফিস করে ,
    যাবার সময় আমার বিস্ফোরিত মানব আত্মা
    রেখেছিলাম ,গোপন অন্ধকার কুঠুরিতে

    যেন,কখন জানি লখীন্দরের মৃত্যুর আগে
    মনসা আমার আত্মা গিলে ফেলে ;
    ফিরে এসে ছুঁয়ে দেখি গোপন কুঠুরি অভিশাপে ভর্তি ;
    আমাকে তাড়া করে নিয়ে বেড়ায়
    হূল ফোটান অজস্র স্বাধীন বোলতা,

    দেশ বিক্রির দালাল আমি —
    আমাকে আর সইতে পারে না আমারি দেশের মাটি,

    আমার বৃত্তের বেষ্টনি স্বাধীন সংঘবদ্ধ প্রতিবাদী হাত
    আমি নদীকে একটু দাঁড়াতে বলি,—
    সে তখন আরও ভয়ার্ত মূর্তি
    আমি সূর্যের আলোগুলো ধরতে চাই, —

    সে তখন আমাকে পোড়াতে চায়

    আমি বাতাসে ভয়ে ভয়ে কান পাতি ,—-
    সে তখন আমার উপর গরম নিঃশ্বাস ফেলে !

    আমি ভোরের অপেক্ষা করি ,
    ভোরের সুমিষ্ট পাখিটিও কর্কশ সুরে আমাকে শাসিয়ে গেল ,
    দ্বাদশীর ম্লান জোছনা আমার শিয়রে মৃত্যু
    —– সে কথাই বলল !

  • কবিতা

    গণতন্ত্রের নামাবলি

    গণতন্ত্রের নামাবলি
    -স্বপন কুমার রায়

     

     

    চারদিকে অবিশ্বাস্য গণতন্ত্রের আস্ফালন
    তালিমারা গণতন্ত্রের ফাঁকগলে চোরা রক্ত স্রোত,
    হবু রাজা গবু মন্ত্রীর হরবোলা মুখে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি
    যেন উদ্যত নাগিনীর বিষাক্ত ছোবলে
    কেড়ে নেয় সুশীল প্রাণ ,
    আজ প্রান্তিক মানুষ গণতন্ত্রের বাজারে পণ্য
    ক্রেতা বিক্রেতার সম্পর্কে সামন্ততন্ত্র ;
    যেন স্বাধিকার কেড়ে নেয় দেশ বিক্রির দালালের মতোই নগ্ন নির্লজ্জ হাত ,
    ধর্মের সন্তান রক্তমাখা দাঁতের কুটিল হিংস্রতায়
    বাঘ নখ উঁচিয়ে , গিলে ফেলে —–
    নিস্পাপ যিশু আর অহিংস বুদ্ধের আত্মা
    নাকের শ্বাস প্রশ্বাসের গরম বাতাসে ঝলসে যায়
    শিশু থেকে বৃদ্ধা ;

    গণতন্ত্রের নামাবলি বিনা পুঁজির ব্যবসা ফাঁদে
    চারদিকে বুভুক্ষ মানুষের আর্তনাদ ; দুঃসহ বেকারত্ব বাড়তে থাকে ;
    গণতন্ত্রের ফাঁক গলে ; এ কোন নব্য রাজতন্ত্র ?

    স্বদেশ রাজার রক্তে নাদির শাহের
    অর্থললোপ বরবর্তা
    যেন সাম্রাজ্যবাদীর পৈশাচিক রক্ত নেশায় বীভৎসতা
    আজও নারীর অধিকার সংরক্ষণেও ; পুরুষের ব্যভিচার
    কামুক ভালোবাসার পরতে পরতে নিষ্ঠুরতা
    সবার অলক্ষ্যে গুমরে কাঁদে কুমারী মা ;
    চরম মাৎস্যন্যায় অবসানে ,
    মা তুমি —
    প্রজাপুঞ্জ গোপালের জন্ম দিতে পারনা ?

    শুধু সময়ের অপেক্ষা ; —–
    অসহ্য বেকারত্বের দহনে পুড়ে যাবে নব্য       রাজতন্ত্রের চামড়া ,
    বাতাস হবে ক্ষীপ্ত
    সূর্য হয়ে উঠবে তেজ দীপ্ত
    পুড়ে যাবে তোমাদের কৃত্রিম হৃৎপিন্ড
    ছাই হবে দশেহারা রাবণ ;
    শান্তির জোছনায় ফুটপাতে জন্ম নেবে
    অজস্র যিশু আর বুদ্ধের আত্মা !

    আমি যেন না দেখি গীতাকে শপথ করে ধর্মকে অপবিত্র
    ভোরের আজানে মৃত সূর্যের জন্ম
    সবুজের গালিচায় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ;
    আমার মায়ের শরীরে আবারও যেন না লাগে কলঙ্ক  ;
    অধমৃত আত্মার চোখ ঠিকরে জ্বলে উঠুক
    বিদ্রোহী সত্তা
    হৃদপিন্ডের স্পন্দনে ধ্বনিত হোক মানব বন্ধন ,
    প্রতিবাদের ভাষায় গর্জে উঠুক স্বাধিকার ;
    আমি আমৃত্যু পেতে চাই জন্ম অধিকার
    —— এই আমার দৃঢ় অঙ্গীকার |

You cannot copy content of this page