প্রবন্ধ

নারী শূন্য হোক ধরিত্রী

নারী শূন্য হোক ধরিত্রী
– রীণা চ্যাটার্জী

 

 

যে পেলব কোমলতার স্পর্শে অনুভূত হয় ঐশ্বরিক অস্তিত্ব, মন ভরে যায় এক অপূর্ব পবিত্রতায়, সেই শিশু প্রাণ আজ বিপন্ন – শিশু কন্যাকে নারীরূপে দেখছে নারী মাংসাশী নরপশুরা! কেন জানা নেই ! কোনো সুস্থ মানুষের কাছে নেই এই প্রশ্নের উত্তর, শুধু বিস্ময় জাগে কি করে পারলো? কেমন করে!! শুধুই কি বিকৃত মানসিকতা!!
দু’টি কচি হাত যখন জড়াতে চায় পরম নির্ভরতায়, চায় নিশ্চিত আশ্রয়, মমতা… পায় না সেই নির্ভরতার আশ্বাস, কখনো কখনো সঙ্কটে বিপন্ন সেই কচি প্রাণ। একটি শিশুকন্যার অভিভাবক বা তার পরিবার কোন নির্ভরতায় ছাড়বে তাকে সমাজের ক্রোড়ে? কোন পোষাক? কোন শরীরী প্রদর্শনে শিশুরা বিকৃত মানসিকতার শিকার?
স্নেহময় স্পর্শে যে জীবন পরিপূর্ণতা লাভ করতো, মুকুলেই ঝরে যাচ্ছে নিষ্ঠুর, লালসার প্রতীক হয়ে। যাদের ঠোঁটের আধো আধো বুলি আহ্লাদে মাতিয়ে দিতো মন, সেই ঠোঁট অপরিণত, অসময়ের যন্ত্রণায় বিষাক্ত নীল হয়ে উঠছে। যে অঙ্গ বিজ্ঞান, ঈশ্বর কারোর কাছে পরিপূর্ণ গঠন পায়নি, তাও নখের আঁচড়, দাঁতের কামড়ে, অত্যাচারের নিষ্পেষণে ক্ষত- বিক্ষত হয়ে… শেষে একটি অতি ক্লান্ত শেষ নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচার মাশুল গুণে পরিত্রাণ পাচ্ছে….
কোন দুঃসাহস নিয়ে এই বিষয়ে ভাবতে,বা লিখতে বসলাম জানিনা। বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছে, স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে কলম, শিউরে উঠছে মন নৃশংসতার আতঙ্কে।
ক্ষমা করিস রে ‘ মা’ তোরা… দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা পারিনি তোদের পৃথিবীর বুকে সুরক্ষিত রেখে, হাসি খেলায় জীবন বিকশিত করে দিতে। পারিনি শিশু থেকে নারীর পরিপূর্ণ রূপ দিতে… কিছু বোঝার,বলার আগেই ‘ধর্ষিতা’! কোন গঠনে কোন অপরাধে ? নির্ধারিত হলো না .. যারা ‘ধর্ষিতার’ দায়িত্ব নারীর পোশাক, ব্যবহারের উপর ন্যস্ত করে, নারীদের সতর্ক করে সাবধান হতে, তাঁদের কাছে না হয় প্রশ্ন রাখলাম… সমাধান? জানা নেই।
এটা ঠিক প্রতিবাদের ঝড় উঠছে প্রতিবার বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমে নতুন করে নানাভাবে, নানা ভাষায় কখনো বা শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে। চলছে আলোচনা, ধিক্কার, বিতর্ক– উঠছে নানা প্রসঙ্গ ‘ধর্মের নামে’, ‘রাজনীতির নামে’ … উপকারিতা কি হচ্ছে?? আরো বিক্ষত হচ্ছে …
পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হচ্ছে,’ এই রাজ্যে অন্য রাজ্যের তুলনায় কম’, ‘এই দেশে কম অন্য দেশের থেকে’, ‘ এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি অতীতেও ছিল সংবাদ মাধ্যমের জন্য নাকি বেশী আলোচিত হচ্ছে…’ ইত্যাদি, প্রভৃতি বহু মতামত। অদ্ভুত!! দেশের সুযোগ্য প্রশাসকরা আপনারা তো অনেক নীতি গ্রহণ করেন, অনেক আইনের বদল চেয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু করেন, রাতারাতি ক্ষমতার উষ্ণায়নে বিশেষ বিশেষ ঘোষণায় শুভচিন্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, ( তাতে সাধারণ মানুষের সুবিধা অসুবিধা কতটা হয় সেটি একটি বিশাল প্রশ্ন) এই মর্মান্তিক নিষ্ঠুরতার দিকে একটু ভাবুন না রাতারাতি কিছু… অসুবিধা নেই এতেও আপনারা বিখ্যাত হবেন, মনে হয় তাতে সমালোচিত না হয়ে আদর্শ হয়ে উঠবেন। এমন কিছু করা কি যায় না যাতে ভয় পেয়ে শিউরে উঠবে এই নরাধম পশুর দল। আসুক না হয়, জরুরী ভিত্তিতে একটি আইন… পুরোনো আইন ছেড়ে, যে আইনে ‘নাবালক’ অছিলায় ছাড়া পেয়ে যায় “নাবালক ধর্ষক”! কর্মটি নরাধম বিকৃত পুরুষাকারের, শাস্তি নাবালকের!! এদের হয়ে আবার মানবতার ধ্বজা উঠবে দিকে দিকে, আইনজ্ঞরা নানা রকম ফাঁক ফন্দী বের করে আনবেন, এদের শান্তি মুকুবের জন্য, বছরের পর বছর পার হয়ে যাবে। ক্ষুধার্ত,অর্ধক্ষুধার্ত ভারবাহী দেশে এরা একাধিক বছর কারাগারে থেকে যায় ভরপেটে মানবিক বিচারের আশায়।
পরিসংখ্যান, ইতিহাস,আইন, বিচার, আলোচনা সব থেকে সরে এসে একটি প্রশ্ন আবারো জাগছে মনে–”নরাধম পশু”!! পশু সমাজের সাথেও তুলনায় বিবেচিত হবার যোগ্যতা আছে এদের?? পশু সমাজেও কি নারী বা শিশুরা এই নির্যাতনের শিকার?? মনে হয় না… তবে পশুদের এই সারিতে রেখে তাদের অপমান করি কেন? ” পাশবিক বলপ্রয়োগ” শুধু এই শব্দের উপর ভিত্তি করে?
যাঁরা কন্যা ভ্রুণ হত্যা করেন তাঁরাও অপরাধী, মনে হয়, না হয় তাঁদের দলেই নাম লেখাই , সবাই কয়েকটি বছর….. যাতে শুনতে না হয় ন’ মাস,তিন বছর,পাঁচ বছর “ধর্ষিতা”। থেমে থাক না হয় কয়েকটি বছর কন্যার জন্ম দান– ক্রমশঃ বেড়ে যাক এই পরিসংখ্যান। বহু যন্ত্রণায় বিদীর্ণ মন আজ এই জঘন্য অপরাধে অপরাধী হতে চেয়ে বলছে “হোক”… তাতে অন্তত “নাবালিকা ধর্ষণ” কথাটি যদি মুছে যায়। আইন করে না হোক, মানবিকতা দিয়েও না হোক, নিষ্ঠুরতা দিয়েই মোছার চেষ্টা করি এই নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা।
নারী শূন্য হয়ে যাক ধরিত্রী … দেখো সমাজ তাতে যদি কলঙ্কমুক্ত হতে পারো।

Loading

2 Comments

  • Anonymous

    এক অসামান্য প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেছেন লেখনীর মাধ্যমে, সত্যিই তো এই ঘৃণ্যতার কি শেষ নেই? যদি উত্তর নেই হয় তবে পৃথিবী নারী শূন্য হোক দেখুক সমাজ কিসে সুখ আর কিসে অসুখ!

    • রীণা চ্যাটার্জী

      অসুখে ভারাক্রান্ত সমাজ,সুখ? খোঁজার চেষ্টা বৃথা।চরম নিষ্ঠুরতার হাত ধরলে যদি কলঙ্কমুক্ত হয় সমাজ… ভাষা জানা নেই বন্ধু।

Leave a Reply to AnonymousCancel reply

You cannot copy content of this page