গল্প

দুর্গন্ধ

দুর্গন্ধ

-অমল দাস

 

শীত শুরু হয়েছে। চারিদিকে উষ্ণ আমেজ ।আবার বনভোজনের মাস এই ডিসেম্বর-জানুয়ারি । আজকাল যারা যেদিকে যেভাবে পারছে বেরিয়ে পড়ছে শৈত্য আমেজ উপভোগের জন্য। গত রাতেই হঠাৎ একটা ফোন এসেছিল। ও প্রান্ত থেকে শুধু বললো, কাল পিকনিক আছে স্যার আসতে হবে!

-এই…. কালই হবে, আর আজ রাতে আমকে বলছো আসতেই হবে! এত শর্ট টাইমে হয় নাকি?

-“ উ কইলে চলবে না কত্তা! আইতে কইছি আইতে হইব”। ওপ্রান্তের বক্তা একটু রসিকতা করেই বললো।

আসলে ফোনটা আশিসের তরফ থেকে তাপসকে করা হয়েছিল। তাপস কলকাতার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী। আশিস মফঃস্বলের, হুগলীর মগরার। তাপস আশিসের দিদির দেওর। দুজনই প্রায় সমবয়সী, বত্রিশ তেত্রিশ এর আশেপাশে। বিয়ে কারো হয়নি বা ভাগ্যের চাকা এখনো ঘোরেনি বলা যায়। সম্পর্কে বিয়াই, তাই ইয়ার্কি মশকরা চলে খুব রসিয়ে কষিয়ে।

-এই .. আশিস প্লিজ আমাকে বাদ দিয়ে। আমার কাল অন্য প্রোগ্রাম আছে, আমি যেতে পারবো না!

-‘প্রোগ্রাম… ইসের মধ্যে ভরে রাখো, ও কথা আমি শুনুম না স্যার, আইতে কইছি এইডাই শেষ বচন। আর যদি অন্যথা হয় তবে ……( ড্যাশ) খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।’ ড্যাশটা দেয়া হয় স্রোতার ইচ্ছে খুশি গালি বসিয়ে নেওয়ার জন্য। আফটার অল ডেমোক্র্যাটিক কান্ট্রি বলে কথা। তাই এই অধিকারটা একমাত্র স্রোতার জন্যই রাখলো আশিস।

তাপসের কপালে চিন্তার ভাঁজ। না যাওয়ার জন্য নয়, সে তৈরি নেই, সকালে বেরতে হবে তাই চিন্তা, এখন রাত ন’টা। টিউশন থেকে এই সময় ভাইঝি হৃদি এসে হাজির। সে এবার ‘হায়ার সেকেন্ডারি এক্সাম’ দেবে। তাপসকে একটু এলোমেলো দেখে কৌতূহল হলো -কাকা কি হলো? টেন্স্‌ মনে হচ্ছে খুব! অঘটন ঘটেছে ? কাকিমা বকেছে বুঝি..?

-এটা কোন কথা হলো সোনা! জানো তো তোমার কোন কাকিমা নেই তাও…

-হুম জানি জানি! ওপারার ঐযে সীতা না গীতা …

এবার তাপস একটু নরম হয়ে গেল – না… গো সোনা মা… তেমন কিছুই না, হলে তোমাকে বলবো না তা হয়…? তোমার মামা ফোন করেছিল, কাল সকালেই  পিকনিকে যেতে বলছে তাই…!

-ওহ্‌! (যেন উৎসাহ কৌতূহল হারিয়ে গেল) নো চিন্তা ডু ফুর্তি? যাও যাও মামা ডেকেছে যখন তোমার যাওয়াই উচিৎ। আফটার অল তোমরা হলে…. না মানে, ঘ… রে… র… লোক…! এই বলে হৃদি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।

সকালে হাওড়া ষ্টেশনে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে কোন মতে ছুটতে ছুটতে গিয়ে ট্রেনে উঠলো তাপস। ট্রেন ফাঁকাই ছিল, বিশেষ ভিড় সকালে আপ ট্রেনে থাকে না। তার উপর আবার শীতের সকাল। এতো সকালে হয়তো অর্ধেক বাংলা জেগেই ওঠেনি। ব্যাগ থেকে মোবাইলের হেড ফোন বার করে, কানে গুঁজে, চোখ বন্ধ করে মান্নাদের গান শুনতে শুনতে অনেকটা পথ চলে এসেছে। যখন চোখ খুললো তখন পাশে দুই ভদ্রলোক এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন। তাঁদের কথাবার্তা আলাপ আলোচনা থেকে বোঝা গেল এরা উদীয়মান বা একটু পরিচিতি পাওয়া কবি সাহিত্যিক। তাঁদের কাছে আসা একটা ফোনের সুত্র ধরে আরও জানা গেল, এঁরা কালনায় কোন এক সাহিত্য অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। তাপস যেমন গান ভালোবাসে তেমনি সাহিত্যেও তার অল্পবিস্তর অনুরাগ আছে। সে আলোচনা শুনতে শুনতেই তাঁদের নামের সাথে পরিচিত হয়ে গেল। একজন সুবোধ বাবু, একজন রত্নেশ বাবু, একজন মহিলা তিনি সীমা ম্যাডাম।

অল্প-বিস্তর সাহিত্য আলোচনার পরিবেশেই সকালের এই কামরা জমে উঠেছে। আরও অনেক যাত্রী আছে এখনে। যে যার মত বসে আছে শীতের পোশাক জড়িয়ে। কারো কারো মুখও দেখা যাচ্ছে না। দু-এক জন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে। ট্রেন ফাঁকা থাক বা ভিড়, এই গেট ম্যান ট্রেনে থাকবেই থাকবে। বাঁশবেড়িয়া ট্রেন ছাড়তেই হঠাৎ সীমার এক অবজ্ঞার কণ্ঠ ভেসে ওঠে।  তখন সুবোধ বাবু সুকান্ত ভট্টাচার্যের কালজয়ী কবিতা ছাড়পত্র পাঠ করে আবৃতির মহড়া দিচ্ছেন-

“….. চলে যাব তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ

প্রাণপনে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল

এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-

নব জাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার!…”

পাঠ শেষ হয়নি সেই মুহূর্তেই কাব্যের সুতলি ছিঁড়ে সীমা বলে ওঠেন- কেমন একটা বিকট গন্ধ আসছে না সুবোধ বাবু?

যদিও চাদর, মাফলার, রূমাল, জড়িয়েই আছে সবাই। তবুও এ কথা শুনেতেই যারা গন্ধ পেল, তারা এদিক ওদিক তাকিয়ে নাক ঢাকতে লাগলো। গন্ধ পেল কি না বোঝা গেল না। ব্যাপারটা এইরকম! কেউ একজন বলছে- এ ব্যাটা তোর কান চিলে নিয়ে গেলো। তখন কানে হাত না দিয়েই সে ব্যাটা চিলের পিছনে ছুটতে লাগলো। এখানের পরিস্থিতি কতকটা তেমনই।

সুবোধ একটু গলা উচিয়ে গেটের কাছে দু একজন যারা দাঁড়িয়ে ছিল, তাঁদের কাছে জানতে চাইলেন- দাদা কিসের গন্ধ বলুন তো ?

এক জন বললো – একটা বাচ্ছা ময়লা বস্তা নিয়ে উঠেছে। সেখান থেকেই গন্ধ আসছে।

রত্নেশ একটু জোর কণ্ঠেই বললেন – কি দাদা ওই নোংরা নিয়ে আপনারা ওকে এইখানে উঠতে দিলেন?

সীমা বললেন- বেশ ভালই আসছিলাম এতক্ষণ, এখন এই দুর্গন্ধ নিতে নিতে কত দূর যেতে হবে কি জানি! অসহ্য! আমার তো কেমন জানি গা গোলাচ্ছে…।

ট্রেনের কেউ এই নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখাল না । তাপসও চুপ করে আবার গান শুনতে লাগলো। আর মনে মনে ভাবলো ‘এমন কিছু গন্ধ আসছে না! কেন মিছি মিছি এঁরা উৎকণ্ঠা দেখাচ্ছে কে জানে!’

সুবোধ সীমাকে আশ্বস্ত করে বললেন- দাঁড়ান আমি একটা ব্যবস্থা করছি! এই বলে তিনি উঠে দরজার কাছে গেলেন। সেখানে অতি সাধারণ ছাপোষা একটি বালক বয়স ১৩-১৪ হবে , গায়ে শীতের নূন্যতম পোশাকও নেই নোংরার বস্তাটা জড়িয়েই কোন মতে জড়সড় হয়ে বসে আছে।

সুবোধ ভারি গলায় বললেন – এই ছেলে! কোথায় যাবি? আর এই জেনারেল কামরায় নোংরা নিয়ে উঠেছিস কেন ? আর কোন কামরা পেলি না?

ছেলেটি হয়তো একটু ভীত হলো। সাড়া দিলো না । সাড়া দেবেই বা কি করে? সমাজের ঔদ্ধত্যের কাছে, ক্ষমতাবানের কাছে তো নিম্ন শ্রেণীরা, দুর্বলরা মাথা নত করেই থাকে। হয়তো সে ভাবলো অন্যায় করেছি। বা ভাবলো ট্রেনে ওঠা তো অপরাধ নয়। সে চুপ করে বসে রইল।

অভব্যতার সাথে ছেলেটির মাথায় একটা নাড়া দিয়ে সুবোধ আবার জিজ্ঞাস করলেন- কথা বলছিস না যে, এই নোংরা নিয়ে এখানে কেন উঠেছিস। যেখানেই যাস, সামনের ষ্টেশনে নেমে যাবি।

ছেলেটি আবার চুপ থাকলো, এদিকে ঘুরে ছিল, সে এবার বাইরের দিকে ঘুরে তাকালো।

সুবোধ ধৈর্য হারিয়ে রাগী সুরে বললেন- কিরে কথা কানে যাচ্ছে না বুঝি? এইটুকু ছেলের সাহস দেখো! তোকে যেন আর এই কামরায় দেখি না বলে দিলাম।

এবার হয়তো ছেলেটির স্বভিমানে লেগেছিল! আর লাগবেই বা না কেন? সে ছোট বলে! না জঞ্জাল নিয়ে ঘোরে বলে! কতক্ষণ সে অন্যের অযাচিত ঔদ্ধত্য চুপ করে সইবে! সে সটান সাড়া দিলো, ‘হাম কেন নামবে ? হাম তো ভিতর মে না… দরজা মে আছি।

ছেলটি বাঙালি নয় ওর কথা শুনে বোঝাগেল।

-ও তুই বাঙালি না! ভিন জাতি? আবার মুখের উপরে কথা! নামতে বলেছি… নামবি।

-‘না হামি নামবে না’!

-নামবি! নয়তো হাত ধরে টেনে ফেলে দেব। বলতে বলতেই সুবোধ ছেলেটির হাত ধরে তুলে একটা জোর ঝাকুনি দিলো।

ছেলেটি ‘ছোড়… ছোড়..’ বলে শরীরের একটা মোর দিতেই গায়ের নোংরা সুবোধের প্যান্টে গিয়ে লাগে। তাতেই তাঁর রক্তচক্ষু, সপাটে এক চড়।

– ছা-গ-ল প্যান্টটা ময়লা করে দিলি! সুবোধ রাগে গজগজ।

সীমা উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন- বেশ করেছেন সুবোধদা! বেশ করেছেন! এই জানোয়ারগুলি লাথ না খেলে সোজা হয় না।

এই সব দৃশ্য সবাই হাঁ করে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। ছেলেটি কান্না করছে দেখে তাপস আর চুপ থাকতে পারলো না, উঠেই বললো -কেমন মহিলা আপনি? ওইটুকু বাচ্চার গায়ে হাত তুলছে, আপনি আনন্দে উৎফুল্য হয়ে নাচছেন! বেশ বলছেন..! দেখে তো ভদ্র ঘরের মনে হয়! ঘরে ছেলে মেয়ে নেই আপনার?

রত্নেস এবার ডিফেন্সে করতে এগিয়ে এসে বললেন- আপনার কি হয়েছে মহাশয়, আপনার মাথা ব্যথা কেন ? চুপ করে বসে থাকুন।

-থামুন মশায়! মাথা থাকলে ব্যথা হয়। আর চুপ থাকবো… না মুখ ভাঙবো… সেটা দেখবেন পরে। দৃঢ় গলায় বললো তাপস।এবার গেটের কাছে এগিয়ে গিয়ে সুবোধকে শুধাল- আপনি কেমন মানুষ? ওইটুকু বাচ্চার গায়ে হাত দিতে বাধলো না!

– দাদা আপনি এই জানোয়ারদের তরফদারি করবেন না। সুবোধ বললেন।

– ওকে জানোয়ারের মত দেখছেন আপনি? আমি তো আপনাতে সেই রূপ দেখছি।

একথা সুবোধের আঁতে লাগে। ঘুরেই তাপসকে চোখ রাঙিয়ে বলেন- মুখ সামলে কথা বলুন। সহ্যের বাঁধ ভাঙবেন না!

রত্নেসও সিট ছেড়ে উঠে আসে তর্ক করতে।- আপনি মশায় গায়ে পড়ে কেন ঝগড়া করছেন? যান… আপনার সিটে যান আপনি।

তাপস বলল- সহ্যের বাঁধ কি করে ভাঙে সেটাও আমি দেখি! আর যাব! নিশ্চয়ই যাব! কিন্তু এটাও নিশ্চিত করে যাব… এই ছেলে এখান থেকে নামবে না! আর আপনারা ওকে বিরক্ত করবেন না!

নামতেই হবে ওকে , না নামলে হাত ধরে টেনে নামিয়ে দেবো। ও আমার পোশাকটা নষ্ট করলো।

-পোশাকটা বাইরে নোংরা হয়েছে মশাই! ধুলে চলে যাবে! মনের নোংরাটা কি করবেন?

-অযথা বাতেলা দেবেন না আপনি! ভালোয় ভালোয় বলি….

-দেবো! অন্যায় হচ্ছে, বাতেলা… লাগলে হাতের জোরও…

-আপনি হুমকি দিচ্ছেন ?

-একশবার! ছেলেটির গায়ে আপনি হাত দিন আবার, দেখুন কি হয়।

রত্নেশ আর একটু এগিয়ে তেড়ে আসে- এই ব্যাটা কি হয়েছে কি? তোর এতো বাধছে কেন।ভদ্রতার সব রেখা পার করে সোজা আপনি থেকে একেবারে তুই তুকারিতে।

এই কথার পরই এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন – কি বলেছেন আপনি, মেজাজ দেখাচ্ছেন কাকে? অনেকক্ষণ ধরে শুনছি, আর আপনাদের এই ভণ্ডামি সহ্য করা যাচ্ছে না।

এরপরই এক-দুই করে আরও কয়েকজনকে তাপস নিজের পক্ষে পেয়ে গেলো। ভিড়ের একজন বলেই দিলো- আপনি আর একবার হাত লাগান! আপনাকে এখানেই ভাঙবো। অভদ্রতার একটা সীমা থাকা উচিৎ। সমস্ত লোক গন্ধ সহ্য করে গেলো! আর ওনার যত মাথা ব্যাথা!

অবস্থা বেগতিক দেখে সীমা ডাকলেন- রত্নেসদা! সুবোধদা! চলে আসুন! এদের নীচ  মানসিকতার সঙ্গে লড়াই করে পারবেন না।চলে আসুন….

সকলেই এ কথায় ক্ষিপ্ত হলো। উল্টোপাল্টা বলতে লাগলো। তাপস এবার খুব দ্রুত এগিয়ে গেলো সীমার দিকে। হাত নাড়িয়ে বলতে লাগলো – নীচ দেখছেন ? খুব উচ্চ বুঝি আপনারা? এদিকে সাহিত্য সভায় যাচ্ছেন, ওদিকে মানব প্রেমের বিন্দু বিসর্গও নেই আপনাদের! একটু আগেই জঞ্জাল সরিয়ে শিশুর বাসযোগ্য করছিলেন না…? সে ভাব গেল কোথায়? বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে? আপনারাই না লেখনীর মাধ্যমে সমাজকে দিশা দেখান, আপনারাই তো কলমে মানুষের ব্যথা তুলে ধরেন, শিশু শ্রমের বিরোধিতা করেন। শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করেন,  অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তো… সে প্রতিবাদ, সে প্রেম, সে শিক্ষা এখানে কই? না কি সবই লাইম লাইটের জন্য? আর বাস্তবের সম্মুখে এতো ক্রূর..!যদি সব ছোট্ট শিশু ভালবাসতে না পারেন! একচোখে না দেখতে পারেন তবে সাহিত্যের নামে বিদ্ধজন সেজে ভণ্ডামি না করলেই পারেন।

সীমা বা তার সঙ্গীরা আর কোন কথা বলতে পারলেন না। সবার সামনে গভীর অপমান বোধে চুপ মেরে বসে গেলেন কামরার মধ্যে।

তাপস একটু থেমে আবার বললো- যে ছেলেটিকে মারলেন আপনারা, যে নোংরা কুড়োয়, সে ওই করেই পেট ভরে পরিবারের ও তার নিজের। এদের মুখে তো খাবার তুলে দিতে পারবেন না কোন দিন! শিক্ষাও দিতে পারবেন না! যেটা পারবেন তা হলো ঘৃণা ছড়াতে, মানুষকে কীভাবে ঘৃণার চোখে দেখতে হয়, হেয় করতে হয়, পদানত করতে হয়, কীভাবে জাত-পাত বিচার করতে হয়। একবারও ভেবে দেখেন নি, এরাই সমাজ পরিচ্ছনের প্রথম কাজটা নৈপুণ্য ও দক্ষতার সাথে করে। আমার আপনার চারিপাশের বর্জ্য পরিষ্কার করে। ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বচ্ছ অভিযান সরকার করে ঠিকই কিন্তু বাড়ির আশেপাশের নোংরা, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য, বোতল,  এরাই পরিষ্কার করে, সরকার নয়। চোখ তুলে দেখেছেন কখন এই অচ্ছুৎ সমাজের মানুষই সর্ব প্রথম আপনার এলাকা পরিষ্কারে এগিয়ে আসে। এই নীচের শ্রম আছে বলেই উচ্চের সমাজ সুন্দর। এই শ্রম আছে বলেই চলার পথ মসৃণ হয়। এরপর একটু ধিক্কার সুর দিয়ে বললো-  যাক আপনাদের আর কি বলবো, আপনারা বিদ্ধজনেরা বুঝেও যখন অবুঝ আর না বলাই ভালো।

তাপসের এই কথার পর সাহিত্যিক টিম আর রা-শব্দ করলেন না। আশেপাশের কয়েকজন তাপসকে সাধুবাদ দিলেন ‘বেশ বলেছেন দাদা, ধন্যবাদ আপনাকে।এদের এভাবেই আয়না দেখানো উচিৎ’।

তাপস গেটের কাছে সরে এসে দাঁড়িয়ে রইল সমাজের প্রতি একরাশ ক্ষোভ আর  অভিমান নিয়ে! আর ভিতরে গেলো না। কামরা কিছুক্ষণ প্রায় চুপচাপ। এরই মধ্যে তার গন্তব্য আসতেই নেমে পড়ে ট্রেন থেকে। ষ্টেশনেই আশিস দাঁড়িয়ে ছিল। তাপসকে একটু উদাসী উৎসাহহীন দেখাতেই স্বভাব ভঙ্গিতে সে জানতে চাইল- ‘কি হইল কত্তা চুপ ক্যান? এভাবে জোর দিয়া ডাকছি বুল্লাই কি খুশি হওনায়?’

তাপস এবার একটু মুচকি হেসে উত্তর দিলো- না গো আশিস.. তেমন কিছু নয় ট্রেনে একটা ঝামেলায় মুড অফ হয়ে গেল।

আশিস বিস্ময় সূচক মুখমণ্ডল নিয়ে তাকাতেই তাপস মাথার এলোচুল ঠিক করতে করতে বললো- তেমন কিছু নয়! চলো পিকনিক স্পটে সব বলবো।

 

Loading

2 Comments

  • জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদী

    বাহ, সুন্দর সমাজ দর্পন, সত্যিই আমরা বেশীর ভাগ ই মুখেই গরীব দরদি, কিন্তু আদপে এমন ব্যবহার ই করে থাকে সময় কালে। ভালো লাগলো….

    • অমল

      ধন্যবাদ বন্ধু, একরাশ শুভেচ্ছা রইল, ভালো থাকবেন।

Leave a Reply to জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদীCancel reply

You cannot copy content of this page