কিন্তু এই আমি

কিন্তু এই আমি
-অযান্ত্রিক

তোমারা কবিতা লেখো, রঙিন জামা পরে পার্কে, কবিসভায় যাও,
সুদৃশ্য হোটেলে মোমবাতি আলোয় রাত্রি-আহার, প্রায় উন্মুক্তা সঙ্গিনী,
চটুল নেশাকীর্ণ হাসিতে গিলে নেয় কবিতা বীর্য, জানি সেটাও।
কিন্তু, এই আমি,
সাতাশ লক্ষ শব্দের ধর্ষণের পরেও একটা পছন্দের শব্দ লিখতে পারিনি।

বন্ধুরা, তোমরা যারা আধুনিক কবি, তোমাদের কলমে অযুত শব্দের খনি,
মনের মতো শব্দের কি সহজ ব্যবহার, সাজাও সনেটে। সাজাও পয়ারে,
অথবা অমৃতাক্ষরে, সে সব কবিতার রথ হাততালি কুড়ায় মানুষের দরবারে।
কিন্তু, এই আমি,
শব্দের অনাহারে ভুগী, কলমে যক্ষার কাশি ওঠে, মনের মতো শব্দ খুঁজি, যখনি।

বাসে ট্রামে রাস্তায় চিৎকার করে ছুড়ে দিতে পারি শব্দ “আকাশ বাতাস নদী নারী”
কেউ বারণ করে না, কেউ শোনেও না সেই সব শব্দ, সেই সব বৃথা উচ্চারণে,
চারপাশে বোদ্ধার চোখ, চেখে দেখে তোমাদেরই শব্দের নির্যাস আর কল্পনা গোনে।

কিন্তু, এই আমি,
সহস্র অযুত কোটি শব্দের ভীড়ে, মনের শব্দ “প্রতিবাদ”খুঁজলে, ফিরে পাই শব্দের মহামারী।

যেখানে তোমাদের ভীড়ের কবি সভা, সেখানে পৌঁছে দিতে চাই কিছু নিরক্ষর লোক,
যাদের জমি খয়রাত হয়েছে মহাজনের খাতায়, আঙুলের ছাপে, প্রেমিকার মতো,
তোমাদের মহার্ঘ্য কবিতার উৎসবে শাসকের উত্তরীয় ঢেকে দেয় অগুনতি ক্ষত।
মানুষের রক্তের মতো শব্দ “প্রতিবাদ” পানপাত্রের তলানিতে ডুবে থাকে মুক্তি আরোক।
কিন্তু এই আমি,
কলমের শুষ্ক প্রতিভাসে হারিয়ে যাই, আঁকড়ে ধরতে গেলে,
বালির মতো, সরে সরে যায় মনের মতো স্রোত,
নিস্তব্ধতা ছাড়া কিছুই থাকে না হাতে পারে।
শুধু এক নির্বাক কলমের হাহাকার।

Loading

Leave A Comment