ভ্রুণ
-অমরেশ কুমার
চারিদিক বালুরাশি শুষ্কমরু প্রান্তর
পড়িয়া রহে ক্ষুদ্র এক বীজ বালির উপর ।
দিন যায় , রাত যায়
বীজ মধ্যস্থ ভ্রুনের জন্ম সময় হয়
বাহির হইতে আসে ডাক ,
” হইয়াছে ভোর ভাঙাও , ভাঙাও হে তোমার ঘুমের ঘোর ” ।
কানে যায় তাহার ,
কে, কে দিলো এ হাঁক তাহারে —
মনে মনে ভাবে ,
রহিয়াছি আবদ্ধ , বাহির হইলে উন্মুক্ত।
না, না, আর ঘুম নয়; হইতে হইবে উদয়।
তাই, ভয় হয় মনে, কী হয় কখনে
বাহির হইলে পাইবো কী আলো,
পাইবো কি জলের ছোঁয়া
নাকি পাইবো আরো অন্ধকারের মায়া ।
অবশেষে সূর্যরশ্মি ,বীজে আসিয়া পড়ে
প্রতিসৃত আলোকরশ্মি ভ্রুণকে আলোকিত করে ।
ভ্রুন কহে ,
কোথা থেকে এলো এ আলো
অন্ধকার দূর যে হলো ।
পুনঃরায় শোনে ,
এসো ভ্রুন এসো, বাহিরে এসো
হয়েছে সময় , ঘুম ভঙ্গিবার
নাহি সময় আর চুপ থাকিবার ;
আমরা, তোমার বন্ধু মোরা
বাহিরে এলে দেখিতে পাইবে, এ বিশ্বজোড়া ।
আনন্দ , উৎসাহে ভ্রুণ কহে ,
বাহির হইবো ,অন্ধকার হইতে
ঘুচাইবো আজই এ অন্ধ জীবৎদশা ।
মাথা তুলিয়া, ফাটাইল যবনিকা
ঘুচিল অন্ধকার, দেখিল আলোর নিশানা;
নাহি ক্ষুদ্র ঘর তাহার আর এ জীবনে
ছড়াইয়া সে পড়িয়াছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে ।
নামিল জীবনে, সূর্যের প্রখর আঘাত
কী ভাবে লড়িবে সে বিরুদ্ধ তব এ সংঘাত;
পুড়ে ছারকার হয়ে যায় ,
প্রতিকুল এ পরিবেশে
শতশত আঘাতে লুটায়ে পড়ে
প্রকৃতির পাদদেশে ।
আঘাত, যন্ত্রনা সহিতে না পেরে —
বীজমধ্যে পুনরায় লুকাইবার চেষ্টা করে
কিন্তু, হায় ! বৃথা প্রচেষ্টা
লুকাইতে না পারে ;
যে যবনিকা ফাটিয়ে যায়
সে কি পুনরায় জোড়া যায় ?
নিরুপায় হয়ে ,
মৃদুস্বরে করুণ ভাবে কয় ,
হে ঈশ্বর ,
তোমারই ভরসায় আশা লয়ে
আনন্দে আত্মহারা হয়ে
নতুন পথের ঠিকানা খুঁজিলাম ;
অথচ, তুমি চুপচাপ শুধু
দেখিতেছো বোবা হয়ে ।
আমি এক ছোট ভ্রুণ
ছোট্ট চারাগাছ
আসিতে আহবান করিয়া
কী সুখ দিলে আজ ?
জন্মকালে জন্মস্থানে
দিলে ক্ষণ-শান্তি
পরক্ষণেই কেড়ে নিয়ে
জীবনে নামলে অশান্তি ।
কে বা বলেছিল তোমায়
আমায় ডাকিতে
ছিলাম যে বেশ
শান্তির ঘুম ঘুমাইয়ে ।
কিছুপরে , সে যেন শোনে
কে যেন তারে ডাকে
কতক্ষণ থাকিবে ঘুমাইয়ে
ও ছোট্ট কুঁড়েঘরে?
বাহির চাহিয়া দেখো ,
কত বিশাল এ প্রকৃতি
জন্মাইবার সাথে সাথে
হওয়া কী যায় বনস্পতি?
কত পরিশ্রম, কত প্রচেষ্টার পর
হওয়া যায় প্রতিষ্টিত।
আর, তুমি; জন্মাইয়া,
বাড়িবার আগেই মরিবে ভাবিলে ?
কেন তবে যন্ত্রনা পোহাতে
যবনিকা ভেদ করিলে ।
ওহে বন্ধু , জাগো ,ওঠো
আমি যে রহিয়াছি তোমারই সাথে
ছাড়িবোনা কখনো তোমার পিছু
থাকিব সর্বদা দিনে রাতে ।
রহিয়াছি দূরে ,
নাহি আছি পাছে
তবুও আমার বিদার আলো
ছড়াইয়া দেব তোমারই কাছে ,
দাও ছড়াইয়া দাও , তোমারই ছায়া
এ প্রকৃতির বুকে
কতশত নিরুপায় মানুষ আশ্রয় লইবে
মনেরই সুখে ।।