মানুষ হতে চাই
-জ্যোৎস্না ভট্টাচার্য ত্রিবেদী
আমি একটি বৃক্ষ হতে চাই
পত্রে পুষ্পে ফুলে ফলে ভরভরন্ত,
সবুজের সমাহার যার সর্ব অঙ্গে-
প্রতিটি শাখায় যার পাখীর কূজন,
অসংখ্য, অগণিত পক্ষীশাবকের আশ্রয়।
যার মিষ্টি ছায়ায় রৌদ্রদগ্ধ ক্লান্ত পথিকের নিবিড় শান্তি।
নিজের সমস্ত কিছু উজাড় করে জীব কূলের পেট ভরায়, মন ভরায়, আশ্রয় দেয়-
তেমনই এক ‘বৃক্ষ’ হতে চাই।।
আমি একটি নদী হতে চাই-
সুদূর পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে এসে সশব্দে আছড়ে পড়বো সমতলে–
শহরের পর শহর, গ্রাম কে গ্রাম ভাসিয়ে নিয়ে বয়ে চলবো-
আমার দু’ ধারে গড়ে উঠবে জনবসতি
আমার স্পর্শে আশেপাশের সমস্ত মাঠ ভরে উঠবে ফসলে ।
প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহে, আমার সুশীতল জল তৃষ্ণা মেটাবে হাজারো জীবের- আমার
কুলুকুলু রবে, বয়ে চলার মূর্ছনায় বিভোর হবে কবিকূল..
আমি তাই নদী হতে চাই।।
আমি এক আকাশ হতে চাই-
বিশাল, সুনীল, গভীর, গম্ভীর এক আকাশ।
যার কাছে জাতি, ধর্ম, নারী, পুরুষ, গরীব, আমীর কোনো কিছুই আলাদা নয়।
সবাই সমান, সব ই সমান।
সবাইকেই সে তার নিচে আশ্রয় দেয়-
হাজারো, লক্ষ্য কোটি নক্ষত্রের আস্তানা-
সূর্যকেও যে বুকে ধরে, আবার চাঁদকেও যে ফেলে দেয় না।
ঝলমলে দিন অথবা অন্ধকার রাত, দুই সমান যার –
আমি সেই আকাশ হতে চাই।।
আমি এক বিশাল পর্বত হতে চাই-
সীমাহীন ঔদ্ধত্যে, অসীম উচ্চতায়, ধীর, শান্ত, গম্ভীর স্থিতধী যে ধ্যানরত তপস্বীর মতো-
যার খাঁজে খাঁজে অসংখ্য জীব জানোয়ার মানুষ পায় আশ্রয়, খাদ্য।
যাকে দেখে দূর থেকে শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ায় সবাই–
আমি তেমনই এক পর্বত হতে চাই।।
আমি ধরিত্রী হতে চাই-
সর্বংসহা মাতৃরূপা ধরিত্রী-
শস্যশ্যামলা, সুজলা সুফলা –
সন্তানের দেওয়া হাজারো অবহেলা অনাদরেও অমলিন-
ক্ষমাশীল অন্তরে সমস্ত অন্যায় সয়ে যাওয়া,
এবং তারপরেও সমস্ত জীব জগত কে হাসিমুখে ধারন করা…
তুলনাহীন যে ধরিত্রী –
আমি সেই ধরিত্রী হতে চাই।।
আমি জ্বলন্ত এক সূর্য হতে চাই-
প্রতিনিয়ত নিজেকে নিঃশেষে জ্বালিয়ে,
অনবরত নিজেরই তাপে দগ্ধ হতে হতে সমগ্র পৃথিবীকে আলো ও উষ্ণতায় ভরিয়ে রাখে যে-
যার অভাবে পৃথিবী অন্ধকার, সমগ্র জীব জগত প্রাণহীন, সেই সূর্য, জ্বলন্ত- প্রজ্বলিত-
যে না থাকলে এই ধরা নিষ্প্রাণ মরুভূমি, যার অভাবে জমি ফসল ফলাবে না, যে না থাকলে পাখী গাইতে ভুলে যাবে, যার অভাবে বৃষ্টি ঝরবে না, মেঘেরা জমাট বেঁধে আকাশেই ঝুলে থাকবে।
আমি তেমন ই সূর্য এক হতে চাই।।
আমি এক মানুষ হতে চাই
বৃক্ষের মতো, অনেকের আশ্রয় স্থল, ক্লান্তির অবসান, ভুখা পেটের রসদ-
নদীর মতো তৃষ্ণার শান্তি, ভূমিকে শষ্য শ্যামলা বানানোর মদতগার-
আকাশের মতো উদার, বিশাল, চিন্তা ভাবনায়, বিচার বুদ্ধিতে- পর্বতের মতো সুউচ্চ, স্থির, ধৈর্যশীল, ধরিত্রীর মতো সর্বংসহা, ক্ষমাশীল-
সূর্যের মতো জ্বলন্ত, যা কিছুকেই পোড়ায় না, নষ্টও করে না শুধু সৃষ্টিতে সাহায্য করে –
আমি তেমন ই এক মানুষ হতে চাই-
এক সত্যিকারের মা- নু- ষ….।।
Khubi sundor kobita porey mon vorey gelo
ধন্যবাদ
দারুণ কল্পনা!!
Bhalo laglo Jyotsna.