অণু গল্প

সুখের সংসার

সুখের সংসার
-রেহানা দেবনাথ

 

 

সাইরা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না! তার জন্মদাত্রী মা আজ তাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলছে! এই মায়ের ভরসায় এক বছর আগে দুই সন্তানের হাত ধরে পাঁচ বছরের সংসার স্বামীর ঘর ত্যাগ করেছিল। ফুলশয্যার দিন থেকেই ওমরের যৌন অত্যাচারের শিকার হয় সাইরা। সবাই বলেছিল তাকে ফুলশয্যায় রাত মেয়েদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকে! তারও স্মরণীয় হয়ে আছে বিভীষিকার রাত হিসেবে। সাইরা মনে মনে কত ভালোবাসার ছবি এঁকেছিল নতুন স্বামীকে নিয়ে কিন্তু ওমর ঘরে ঢুকেই নতুন বউয়ের সঙ্গে যে পৈশাচিক পদ্ধতিতে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, তাতে সাইরার সব ভালোবাসা স্বপ্নগুলো দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে গিয়েছিল!

তারপর থেকে প্রতিনিয়িত দিনে রাতে চলত ওমরের যৌন খিদে মেটানোর বিভিন্ন পদ্ধতি তাতে সাইরার কোনো অজুহাত, আপত্তি চলত না!বাধা দিলে কপালে জুটত অকথ্য গালাগালি আর মারধোর।

ওমরের ওই একটা জিনিস ছাড়া আর সব কিছু ভালো ছিল। খেতে পরতে দেওয়া, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, সবার সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার!
তাই সাইরা প্রথমদিকে লজ্জাবশত না বললেও পরে যখন দুই বৌদিদের কথাগুলো বললে তারা হেসে কথা গুলো উড়িয়ে দেয়। তারা বলেছিল সবদিক ভালো দেখলে তো আর চলে না জামাইতো সবদিক দিয়ে ভালো না হয় চাহিদাটা একটু বেশি তা মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মেছ যখন একটু সহ্য করে নিতে হবে।
তারপর থেকে আর কাউকে সে দুঃখের কথা বলে নি।
পাঁচ বছরের জীবনে দু’টি বাচ্ছার জন্ম দিয়েছে আর তিনবার গর্ভপাত হয়ে গেছে ওমরের যৌন খিদে মেটাতে গিয়ে। শরীরের গুপ্তাঙ্গে রোগে বাসা বেঁধেছে তবুও তার রেহাই নেই!
ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে এইভাবেই চলতে থাকলে খুব শিগগিরই সাইরার ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে তাতেও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই ওমরের!
বাধ্য হয়ে সাইরা তার মাকে সমস্ত কিছু জানায় আর বাপের বাড়ি চলে আসে।

মাস খানেক পর থেকেই দাদারা জোর করে স্বামীর কাছে ফিরে যাবার জন্য। আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীরা স্বামীছাড়া সুখের সংসার ভাঙা খারাপ মেয়ে বলে নিন্দে করে।

সাইরার দাদারা তার মাকে বলেছে ছেলেদের সুখের সংসারে থেকে যদি বাকিটা জীবন কাটাতে চাও তাহলে মেয়েকে ঘর থেকে বিদেয় করো !সেই কথা শুনে, 
সাইরা কাঁদতে কাঁদতে দুই ছেলে মেয়ের হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে কোন পথ সে বেছে নেবে? একটি তার স্বামীর ঘর যাবার পথ যেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে নারীদেহ খাদক অন্য আরেকটি অজানা পথ সেখানে ভালো মন্দ কি অপেক্ষা করে আছে সে জানে না… 

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page