একুশের ভাষা
-ডঃ নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
যে ভাষায় প্রথম ডেকেছি মাকে, “মা, মাগো, আমার মা-
যে ভাষা বলে মেখেছি জীবনে, প্রথম রবির কিরণ,
যে ভাষাতে প্রথম চিনেছি, জ্ঞানের মহা আকর,
সেই তো আমার মাতৃভাষা, আদরের মহা রতন।
সে বাংলাভাষা দিল মর্যাদা, রুধিরের বন্যায়
বাঙ্ময় সে একটি সকাল,অমর একুশে ফেব্রুয়ারি-
আগুন ঝরে আমার প্রাণের, একুশে ফেব্রুয়ারি।।
সেই ভাষাতেই রবিঠাকুর, কান্তকবি, অতুল-
দ্বিজেন্দ্রলাল, জসীমুদ্দিন, বিভূতি, নজরুল-
উড়িয়েছে বিজয় কেতন, বিশ্বের দরবারে-
মাতৃভাষায় হীরক দ্যুতি,
চারুকলা, নৃত্য গীতের সুরে।
সে বাংলাভাষা দিল মর্যাদা, রুধিরের বন্যায়
বাঙ্ময় সে একটি সকাল, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি-
আগুন ঝরে আমার প্রাণের, একুশে ফেব্রুয়ারি।।
পদ্মা,মেঘনা, ধলেশ্বরী,বুড়িগঙ্গা, যে ভাষা বলেছে এতকাল-
একই ভাবে ব’লে, হিল্লোল ওঠে,
কংসাবতী, তিস্তার জলে, দামোদর, গঙ্গায়।
বারেবারে দেখি নতুন করে, সেই সোনার বঙ্গদেশ-
ময়না, টিয়া, দোয়েল, শঙ্খচিলে, আজও নয়ন নির্নিমেষ।
সে বাংলাভাষা দিল মর্যাদা, রুধিরের বন্যায়
বাঙ্ময় সে একটি সকাল, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি-
আগুন ঝরে আমার প্রাণের, একুশে ফেব্রুয়ারি।।
জব্বার,রফিক, বরকত, আরও শত বীরের, জীবন বলিদানে-
বাংলাভাষা, বিশ্বে সেদিন রণজয়ী হয়ে, বসেছে সিংহাসনে।
বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি, সোনালি আখরে লেখা দিন শুধু নয়-
তামাম বিশ্বে, মর্যাদা, সন্মানে,
বাংলাভাষাই সেদিন, দেখালো সূর্যোদয়।।
সে বাংলাভাষা দিল মর্যাদা, রুধিরের বন্যায় ;
বাঙ্ময় সেই একটি সকাল, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি-
আগুন ঝরে, আমার প্রাণের একুশে ফেব্রুয়ারি।
এই বাংলাকে আমি প্রতিদিন, দেখি যে নতুন করে–
স্বপ্ন, শ্বাসে জড়িয়ে মননে, দিন ছুঁয়ে, রাত, ভোরে।
বারেবারে তাই এই বাংলায় ফিরে আসি যেন, আবার নতুন জন্মদিনে;
সোনার বাংলায় সেই ভাষা বুকে,
বাঁঁচবো আবার জীবনের নক্সীকাঁথা বুনে।
সে বাংলাভাষা দিল মর্যাদা, রুধিরের বন্যায়
বাঙ্ময় সে একটি সকাল, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি,
আগুন ঝরে প্রাণে আমার, একুশে ফেব্রুয়ারি।