কবিতা

মালো পাড়ার বিটি

মালো পাড়ার বিটি
-সত্যদেব পতি

 

মালো পাড়ার গলির ভিতর আমার বাপের ভিটা,
মা টো সেই কবেই ম’লৌ মনেও নাইকৌ সিটা!
বড়জ্যাঠা মস্ত সিয়ান বলে পাড়া লুকে-
জ্যেঠিও তাই কথা দিয়ে শাসন করে চখে।

বাবা আমার মেজছিলা সাধাসিধা মন,
শুনেছি ঐ জ্যেঠির লেগে মায়ের হয়েছে মরণ!
ছুটুকাকা পড়ালেখায় দিল ক’ টা পাশ-
বাপটা তখন রিস্কা চালায় করেছে হাঁসফাঁস…
পয়সাগুলান খরচা করে দুটা ভাইয়ের ল্যাগে
রোগের ওষুধ নাই পাইলো তাই মাটো গেল ভ্যেগে।

আমার তখন বয়েস কতৌ? বছর দুটেক ছিল –
মায়ের মরায় বড় জ্যেঠি বেজায় খুশি প্যাল,
ঘরে ছিল এনেক ভেড়ী দুধও দিথ গাদা
সিটোই খ্যাতম উদরপুরে চলথ না তো কাঁদা।

সকাল থেকেন কাজ কম্মে বাপের সময় নাই…
দিনের পরে রাত্যের বেলি একটু দেখা পাই,
পেঁরাই গেল ললেকলে যেমনি পাঁচটা বছর..
গায়ের মাথা আসেঁ বললেক বেশ হয়েছে গতর,
কালকে থেকে যেতি হবেক ঘর কামন্যার কাজ
ভুলতে হবেক সকল কিছুই ছাড়তে হবেক লাজ।

ছুটুকাকা আগৈল খুলে বৈলল্য উচৌঁ গলা,
সময় ইখন বৈদলে গ্যাছে ইখান থ্যাকান পালা-
বাবু ব্যৈলাক এত দিম্যাক কথায় কুড়্যাঁয় পাওয়া?
মালোর বিটি বাবুর ঘরে ই করবে আশা যাওয়া।

কথার প্যাঁচ টা জ্যানথ ভালো ই আমার ছুটুকাকা,
সেদিন বাবু ঘুরেই গ্যাল প্যালো আগুন ছ্যাঁকা-
ছুটুকাকা বললৌ খুকি আমার সঙ্গে চল
ইস্কুলে তুর নাম লেখাবো পড়বি কি না বল?
স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম কাকার মতন হবৌ
সিটাও ইবার সত্যি করেই লুকে দেখায় দিব।

পিঁরায় গ্যালৌ কটা বছর কতৌ উঠান পড়ন,
ছুটুকাকা পড়াঁ নিয়ে খুব কৈরথ যতন-
আটটা বছর ইস্কুলটায় সবাই চিনে গ্যাছে
হেডমাষ্টার রতন বাবু ডাইকলো সেদিন কাছে!
বললৌ মুকে আদর করে একটু বেশী পড়
তুখে দিঁয়ে মালো পাড়ায় তুলবো শিক্ষা ঝড়।

কসম নিয়ে করলি শুরু পড়াশুনার কাজ
ঐ জগতে একলা যেন গ্যড়বো এক সমাজ-
সরকারি পাশ ভালোই দিলাম কতৌ কাগজে ছবি,
মোড়ল বাবু মন্ত্রী নেতা সবাই তখন কবি…

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page