বিশ্বাসঘাতক

বিশ্বাসঘাতক
-শুভ্রা বাড়ৈ

 

আমার পঞ্চেন্দ্রিয়রা সক্রিয়
খুশির জোয়ারে ভেসে যাওয়া মন, দেহ উদ্বেলিত প্রাণ।
শীতের শেষ বিকেলে কিছুটা উষ্ণতা পাবার আসায় ফার জড়ানো।
মন্দিরে চলছিল সন্ধ্যা আরতির প্রস্তুতি।
তোমার পছন্দের রঙ সমুদ্রনীল শাড়িতে, আভরণ হীন,
হাতে তোমার ভালবাসার রজনীগন্ধার গুচ্ছ।
সলজ্জ চাহনিতে ছিল সমর্পণের আয়োজন।
কত বছর পরে বঁধুয়া আমায়
নেবে ডেকে নতুন করে নতুন আমিকে।

চলেছি একা সেই পথে, যে পথে ডেকেছে আমার ভালাবাসা।
পথ তুমি এতো দীর্ঘ কেন?
ঐ তো পূর্ণিমার চাঁদ হেসে উঠেছে
আমাদের পুনর্মিলন দেখার আশায়।
আমার চোখের তারারা কেন এতো চঞ্চল?
মন তুমি শান্ত হ‌ও।

কে আসে ধীর পায়ে?তুমি এসেছো?
কতদিন পর আমার শাজিদ
তোমায় দেখছি নয়ন ভ’রে।
কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপ এতো দৃপ্ত কেন?
এ কিসের দ‍্যোতনা!!
শাজিদ, তোমার হাসিটা কিন্তু এক‌ই আছে।
কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের সাইড ব‍্যাগ,
আমার জন‍্য বুঝি কোনো উপহার?
এক‌ই সরলরেখার বিপরীত গতিপথে
হেঁটে এসে পৌছোই তোমার মুখোমুখি।
আবেগে কম্পমান দেহ,মন।
একটা কাচের বোতলে হলদে তরল
শাজিদ তোমার মজা করার স্বভাবটা এখনো যায়নি বুঝি?
অকাল হোলিতে মাতাবে?
বুঝেছি অসময়ে আমায় ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে তুলবে।

তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ… চোখে মুখে এতো জ্বালা কেন?
আমায় বাঁচাও শাজিদ… তোমার ভালোবাসার হোলির রঙে
এতো জ্বালা কেন?
তোমায় দেখতে পাচ্ছিনা কেন?
তীব্র জ্বালার আর্ত চিৎকার..
মন্দিরের কাঁসর ঘন্টার শব্দে
চাপা পড়ে যায় বাঁচার আর্তি।

এখন আমি হাসপাতাল ফেরৎ ক্ষতবিক্ষত মুখ।
চোখের তারারাতো হারিয়ে গেছে গাঢ় অন্ধকারে,
ভালোবাসার উপহারে সেজে উঠেছি আমি।

স্মৃতির সরনী বেয়ে পিছিয়ে গেল মন কতকগুলি বছর
তুমি কদর্য,নগ্নতা,বহুগামিতাকে ভালোবেসে সুখ চেয়েছিলে।
সেই স্বাধীনতা আমার কাছে ছিল বিষাক্ত গ‍্যাসভর্তি
একটা গ‍্যাস চেম্বার।
আমি চেয়েছিলাম শুধু একবুক ভালোবাসা,শান্তি,স্বস্তি
আর বিশ্বাসের বাতাবরণ।
অন্ধভাবে ভালোবেসে ছিলাম।
ভেবেছিলাম সব শুধরে তুমি ফিরে এলে
তাইতো নতুন আশায় ছুটে গেলাম তোমার কাছে।

আমার এই মুখবিকৃতি তো
তোমার বিকৃত মনের প্রতিচ্ছবি শাজিদ
তোমার ছোঁড়া আ্যসিড আমার মনকে তো ছুঁতে পারেনি।
অবিকৃত এই মন নিয়ে আমি এগিয়ে চলবো সামনে
আমি হেরে যাব না
এই পৃথিবীর কোণায় কোণায় আমি জানিয়ে দিতে চাই

তোমাদের এই বিকৃত কামনার রূপকে।
আমার মনের ক্ষত থেকে বেড়িয়ে আসে
কিছু গলিত লাভা যা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে
ছারখার করে দেয় প্রতি মুহূর্তে।
গলার কাছে এসে দলা পাকায়,
শুধু বের হয়ে আসে অস্ফুট একটি শব্দ
“বিশ্বাসঘাতক”।।

Loading

One thought on “বিশ্বাসঘাতক

Leave A Comment